সিরাজগঞ্জে সালিশ বসিয়ে ২ নারীকে সমাজচ্যুত
সিরাজগঞ্জ তাড়াশে মিথ্যা ও চরিত্রের ত্রুটি আছে এমন অভিযোগ এনে দুই নারীকে এক সপ্তাহ ধরে সমাজচ্যুত করে রাখার ঘটনা ঘটেছে। ইউপি সদস্য গোলাম মোস্তফা ও গ্রামপ্রধানরা সালিশ বসিয়ে তাদের সমাজচ্যুত করেন। ১৬ সেপ্টেম্বর উপজেলার তালম ইউনিয়নের গাবরগাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, সমাজচ্যুত করায় ওই নারীরা গ্রামবাসীর কারো সঙ্গে কথা বলতে পারছেন না। কোনো বাড়িতে বা বাজারেও যেতে পারছে না। এ ছাড়া গ্রামের পক্ষ থেকে পাহারা বসিয়ে পরিবারটির ওপর নজরদারিও করা হচ্ছে। এ অবস্থায় তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাড়াশ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নূরে আলম জানান, এ ঘটনার সত্যতা রয়েছে। পাশাপাশি ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টির সুরাহার জন্য গ্রামবাসীদের বলে এসেছি। তবে সুরাহা না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, উপজেলার গাবরগাড়ি গ্রামে পরস্পর স্বজন দুই নারী রাত করে বাড়ি ফেরেন। আবার মাঝেমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যান, যা চারিত্রিক ক্রটির অংশ হিসেবে তুলে ধরে প্রায় দুই মাস আগে গাবরগাড়ি গ্রামের গ্রামপ্রধানদের কাছে এ রকম অভিযোগ করেন ইউপি সদস্য গোলাম মোস্তফা। পরে এ নিয়ে ওই গ্রামের মো. জয়নাল মন্ডলের উঠানে একটি সালিশ বৈঠক বসে। সেখানে ইউপি সদস্য গোলাম মোস্তফা, গ্রামপ্রধান আলতাব হোসেন, মোজাম্মেল হক মন্টু, জুয়েল রানাসহ প্রায় শতাধিক গ্রামবাসী উপস্থিত ছিলেন। সেই সালিশে আলোচনা শেষে দুই নারীর চরিত্রে ত্রুটি আছে এমন অভিযোগ এনে তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়। পাশাপাশি তাদের দুজনকে ২০ হাজার করে ৪০ হাজার টাকা জরিমানার ঘোষণা দেন গ্রামপ্রধানরা। স্থানীয়রা জানায়, দীর্ঘ সময়েও অভিযুক্ত দুই নারীর একজনও জরিমানার টাকা পরিশোধ করেনি। আর এতে ক্ষুব্ধ হয়ে গ্রামপ্রধানদের অপমান করা হয়েছে এমন অভিযোগ এনে আবারও গত ১৬ সেপ্টেম্বর একই স্থানে গ্রাম্য সালিশ বৈঠক বসে। সেখানে জরিমানার টাকা পরিশোধ না করায় অভিযুক্ত দুই নারীর পরিবারকে সমাজচ্যুত ঘোষণা দিয়ে তাদের সঙ্গে গ্রামবাসীদের কথা বলা, মেলামেশা এবং কারো বাড়ি দিয়ে যাতায়াত না করার নির্দেশ করেন। এমনকি সমাজচ্যুত দুই নারীর একজনকে মায়ের সঙ্গে যাতে কথা বলতে না পারে এ জন্য একজন পাহারাদারও নিয়োগ করা হয়েছে। এরপর থেকে ওই দুই নারী পরিবারসহ সমাজচ্যুত হয়ে মানবতার জীবনযাপন করতে থাকেন। এদিকে এরই মধ্যে গত তিন দিন আগে এক নারী জরিমানার ২০ হাজার টাকার মধ্যে ১০ হাজার টাকা গ্রামপ্রধানদের কাছে প্রদান করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এতে সন্তুষ্ট হয়ে গ্রামপ্রধানরা সে নারীর সমাজচ্যুতের আদেশ শিথিল করেন। কিন্তু অপর আরেক নারী জরিমানার টাকা না দেওয়ায় সমাজচ্যুতের নির্দেশ বহাল রাখা হয়। ভুক্তভোগী এক নারী জানান, সমাজচ্যুত হওয়ার পর থেকে তিনিও তার পরিবারের সদস্যরা বাড়ি থেকে বের হয়ে কোনো স্বজনের বাড়িতে যেতে পারছেন না। আবার গ্রামবাসীরা তাদের সঙ্গে কথা বলেন না। এমনকি তার মায়ের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন না। ইউপি সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, গ্রামের কিছু নিয়ম থাকে। সেটা না মানায় তাদের সমাজচ্যুত করা হয়েছিল। তাদের একজন ক্ষমা চাওয়ায় তার সমাজচ্যুতের নির্দেশ শিথিল করা হয়েছে। অপর নারী গ্রামপ্রধানদের কাছে এসে ক্ষমা চাইলে তার সমাজচ্যুতের নির্দেষও শিথিল করা হবে। তবে তালম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবদুল খালেক বলেন, বিষয়টি অমানবিক। আমি শোনার পর ওই ইউপি সদস্যকে ডেকে দ্রুত মীমাংসার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। এ প্রসঙ্গে তাড়াশ থানার ওসি মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি জানার পর ঘটস্থলে থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নূরে আলমকে পাঠানো হয়েছিল। আর সমাজচ্যুতের বিষয়টি মিমাংসা করার জন্য গ্রামপ্রধানদের বলা হয়েছে। তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. সোহেল রানা বলেন, ঘটনাটি জানার পর ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যকে দ্রুত সমাধান করার জন্য বলে দিয়েছি।
২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
X