কঙ্কাল তুলে কবরস্থানে সবজি চাষ
হবিগঞ্জের মাধবপুরে কবরস্থান দখল ও কঙ্কাল তুলে সবজি চাষ করার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মৃতদের স্বজন ও এলাকাবাসীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়নের কমলপুর গ্রামের বজলু মিয়া বৈধ দলিল না থাকা সত্ত্বেও কবরস্থান দখল করে সবজি চাষ করেছেন। এ ঘটনায় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন স্থানীয়রা। জানা গেছে, কয়েক যুগ আগে আব্দুল মাওলা নামে একজন স্থানীয় কমলপুর মৌজায় ৯ শতক  জায়গা কবরস্থান হিসেবে দান করলে তা রেকর্ড হয়। এসএ রেকর্ডে এটি কবরস্থান হিসেবে রেকর্ড রয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, এ কবরস্থানে কমলপুর গ্রামের রফিক মিয়ার ভাগনে সজীব মিয়া ও তার চাচা শাহজাহান মিয়া, আব্দুল হাসিমের দুই ছেলে আনিস ও হামিদ, মতলব মিয়ার মেয়ে মর্জিনা বেগম, মুমিন মিয়ার শাশুড়ির কবর রয়েছে। এ ছাড়া কয়েকজন শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবরসহ অসংখ্য মানুষের কবর রয়েছে কবরস্থানটিতে। কবরস্থানে সবজি লাগানো অত্যন্ত রুচিবিবর্জিত কাজ। জেনে কেউ ওই সবজি খাবে না। কবরস্থানের বর্তমান দখলদার বজলু মিয়া বলেন, এটি একাধিক বিক্রির মাধ্যমে আমার কাছে এসেছে। এটি কবরস্থান নয় বরং আমার মালিকানাধীন কৃষিজমি। স্থানীয় বাসিন্দা রফিক মিয়া বলেন, এখানে আমার ভাগনে ও চাচার কবর রয়েছে। এরা তাদের কঙ্কাল তুলে ফেলে দিয়ে চাষাবাদ করছে। এরা জঘন্য কাজ করছে। এটি দখলমুক্ত না হলে আমরা তীব্র আন্দোলনের ডাক দেব। আমরা এর বিচার চাই। স্থানটিতে শতাধিক কবরও রয়েছে। চৌমুহনী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান সোহাগ বলেন, আমরা আইনশৃঙ্খলা সভায় কবরস্থান উদ্ধারে জোরালো প্রস্তাব রাখব।
০২ জুলাই, ২০২৪

তীব্র গরমে যে ৫ সবজি না খাওয়াই ভালো
প্রচণ্ড গরমে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। অসহনীয় গরমে কয়েকটি সবজি থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। না হলে ডিহাইড্রেশন থেকে শুরু করে গ্যাস, অ্যাসিডিটি, ডায়ারিয়াসহ নানা সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা থাকে। চলুন জেনে নেওয়া যাক গরমে কোন সবজিগুলো এড়িয়ে চলা ভালো- বেলমরিচ অনেকেই নিরামিষ রান্নাবান্নায় বেলমরিচ ব্যবহার করে থাকেন। তা ছাড়া সালাদ তৈরিতেও বেলমরিচ থাকে। বেলমরিচ উপকারী হলেও হজম হতে সময় নেয়। তাই গরমে সহজপাচ্য খাবার খাওয়া জরুরি। সেই কারণেই বেলমরিচ খেতে নিষেধ করা হয়। না হলে হজমে গোলমাল বেড়ে যেতে পারে। মুলা মুলা সবজি অনেকেই পছন্দ করেন না কিন্তু মুলার উপকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার উপায় নেই। উপকারী হলেও মুলা গরমে না খাওয়াই শ্রেয়। তীব্র গরমে মুলা না খাওয়ায় ভালো। কারণ এই সবজি শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে। ফলে পেট গরম হয়ে নানা রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। পেঁয়াজ পেঁয়াজ ছাড়া রান্নার কথা চিন্তা করা যায় না। রান্নায় স্বাদ আনতে পেঁয়াজের ভূমিকা অনবদ্য। তবে পেঁয়াজ দিয়ে রান্না করা সুস্বাদু খাবার প্রতিদিন খেলে পেট গরম হতে পারে। তবে সালাদ হিসেবে কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়া যেতে পারে। কারণ কাঁচা পেঁয়াজ শরীর ঠান্ডা রাখে। রসুন রসুনের গুনাগুন বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। রসুনের কারণে যেকোনো সাধারণ রান্নার স্বাদ অসাধারণ হয়ে ওঠে। তবে রসুন গরমে যত কম খাওয়া যায়, ততই ভালো। রসুন শরীর গরম করে তোলে। শীতকালে রসুন খাওয়া যতটা স্বস্তির, গরমে ঠিক ততটাই অস্বস্তির হয়ে উঠতে পারে।  কুমড়া পাঁচমিশালি তরকারি রান্না করতে কুমড়ার জুড়ি নেই। তবে গরমে কুমড়া বেশি খাওয়া ঠিক হবে না। কুমড়াতে রয়েছে অতি উচ্চ মাত্রার কার্বোহাইড্রেট, যা সহজে হজম হয় না। তাই তীব্র গরমে কুমড়া কম খেতে হবে। না হলে পেটে গোলমাল হতে পারে।   
১৪ জুন, ২০২৪

ছাগলে সবজি খাওয়ায় সংঘর্ষ, যুবকের মৃত্যু
সিলেটের কানাইঘাটে ছাগলে সবজি খাওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আহত শাহিন আহমদ (২৭) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মঙ্গলবার (১১ জুন) সকালে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন কানাইঘাট থানার ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার। নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, গত রোববার দুপুর ১২টার দিকে জয়ফৌদ কাজিরগ্রামের আনছার আলীর ছেলে সুলেমানের সবজি ক্ষেতে একই গ্রামের বর্তমান ইউপি সদস্য নাজিম উদ্দিনের চাচাতো ভাই বিলাল আহমদের ছাগল বাগানের সবজি খেয়ে ক্ষতি করে। এ সময় সুলেমান ছাগলটিকে তাড়িয়ে নিয়ে বিলাল আহমদের বাড়িতে গেলে কথাকাটাকাটির জেরে বিলাল আহমদের বাড়ির লোকজন সুলেমানকে মারধর করেন। সুলেমান তার চাচাতো ভাই আবু বক্করকে ঘটনাটি জানালে আবু বক্কর স্থানীয় সড়কের বাজারে গিয়ে বিলাল আহমদের চাচাতো ভাই স্থানীয় ইউপি সদস্য নাজিম উদ্দিনের কাছে বিচার দেন। স্থানীয়রা আরও জানান, এতে ইউপি সদস্য নাজিম উদ্দিন ও তার পরিবারের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে দেশীয় লাঠি-সোটা নিয়ে আবু বক্করের ওপর হামলা চালালে তিনি প্রাণের ভয়ে দৌড়ে গিয়ে শাহজাহান কমপ্লেক্সের একটি দোকানে গিয়ে আশ্রয় নেন। বাজারে অবস্থানরত আবু বক্করের ভাই গরু ব্যবসায়ী শাহিন আহমদ তার পরিবারের আরও কয়েকজন হামলাকারীদের হাত থেকে আবু বক্করকে বাঁচাতে এগিয়ে যান। তখন ইউপি সদস্য নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে তার বাড়ির লোকজন ধারালো দা, রুইল, রড, লাঠি-সোটা নিয়ে শাহিন আহমদ ও তার ভাইদের ওপর অতর্কিত হামলা চালালে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে গুরুতর আহত শাহিন আহমদকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সকালে মারা যান। নিহতের বড় ভাই আবু বক্করসহ পরিবারের লোকজন জানান, বিগত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ইউপি সদস্য পদে নাজিম উদ্দিনকে তারা ভোট না দেওয়ায় নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর ইউপি সদস্য নাজিম উদ্দিন তাদের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। সবজি ক্ষেত ছাগলে খাওয়ার পর বিচার প্রার্থী হওয়ায় ইউপি সদস্য নাজিম উদ্দিন ক্ষিপ্ত হয়ে পূর্ব আক্রোশে হামলা চালায়। তারা শাহিন আহমদ হত্যাকাণ্ডে মূল আসামি নাজিম উদ্দিনসহ হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করার দাবি জানান। কানাইঘাট থানার ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার বলেন, সংঘর্ষে নিহত শাহিন আহমদের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত আছে। ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
১২ জুন, ২০২৪

কমমূল্যে সবজি বিক্রয় করায় ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা
নোয়াখালীর চাটখিলে কমমূল্যে বিভিন্ন সবজি বিক্রয় করার কারণে বাজারের কিছু সবজি ব্যবসায়ী ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (৪ জুন) উপজেলার পৌরবাজারে এই ঘটনা ঘটে। হামলার শিকার সবজি ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন পলাশ অভিযোগ করে বলেন, ‘দুপুরের আগে বাজারের ২০ থেকে ২৫ জন সবজি ব্যবসায়ী আমাদের ওপর হামলা করেন। তারা আমাদের একটি ভ্যানে হামলা করে । আমরা কেন কম মূল্যে সবজি বিক্রয় করি; এজন্য আমাদেরকে গালমন্দ করে আমাদের মালামাল ছুড়ে ফেলে। এতে আমাদের সবজিও নষ্ট হয়। আমাদের ড্রাইভার তাদের এসব কর্মকাণ্ড মোবাইলে ভিডিও করতে গেলে তালে কিল ঘুষি মারে। আমরা ইউএনওর কাছে গিয়ে বিকেলে অভিযোগ করে এসেছি।’ স্থানীয়রা জানান, গত ৭-৮ মাস ধরে ভ্যান, পিকাপ এবং অস্থায়ীভাবে বিভিন্নস্থানে বসে এ ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় সবজি বাজারের খুচরা মূল্যের চেয়ে অনেকটা কম মূল্যে  বিক্রয় করে আসছেন। যে কারণে কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছেমতো সবজির মূল্য বাড়াতে পারেনি এবং দাম অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। স্থানীয় চাটখিল পৌরবাবাজারের এক ক্রেতা এইচ এম নিউটন বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের কারণে আমরা বাজার থেকে গত মাসগুলোতে কম মূল্যে সবজি কিনে খেয়েছি। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা হয়তো এটা মেনে নিতে পারছেন না। আমরা ন্যায় বিচার চাই।' চাটখিল পৌরবাজারের সভাপতি ও চাটখিল পৌরসভার মেয়র ভিপি নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘আমি অভিযোগ না পেলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও দেখেছি। তবে বাজারের ব্যবসায়ীরা ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদেরকে বাজারে এসে দোকানঘরে বসে ব্যবসা করার অনুরোধ করতে সেখানে গিয়েছিলেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। তাদের কারো কোনো অভিযোগ থাকলে বাজারের দায়িত্বে যারা আছেন, তাদের কাছে বলতে পারত। বাজারের দায়িত্বশীলরা ব্যবস্থা নিত।’
০৪ জুন, ২০২৪

বাড়ি ফেরা হলো না সবজি ব্যবসায়ীর
দিনাজপুরের খানসামায় ব্যাটারিচালিত ভ্যান ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে আরাফাত আলী মন্ডল নামে এক সবজি ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। শনিবার (১৮ মে) রাত ১১টায়  উপজেলা পরিষদের মূল ফটকের পাশে জেলা পরিষদ ডাকবাংলোর কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে।  নিহত আরাফাত আলী মন্ডল উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের হলদিপাড়ার বাসিন্দা। প্রত্যক্ষদর্শী আল ইমরান খান কালবেলাকে বলেন, বৃষ্টি আসার আগে হঠাৎ শব্দ শুনে রাস্তায় গিয়ে দেখি একটা ভ্যান উল্টে আছে। ভ্যানচালককে ওঠাতে গিয়ে দেখি নিচে মোটরসাইকেলসহ আরাফাত ভাই। তিনি বাইক নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। এরপর আমি চিৎকার করে সবাইকে ডাকি। লোকজন ছুটে এসে ওনাকে উদ্ধার করি। তিনি বলেন, প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় কোনো গাড়ি ছিল না যে ওনাকে হাসপাতাল নিয়ে যাব। এরপর ফায়ার সার্ভিসকে ফোন দেই। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে ওনাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আর ভ্যানচালককে নীলফামারী জেলার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খানসামা থানার ওসি মো. মোজাহারুল ইসলাম কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, দুর্ঘটনাটি মর্মান্তিক এবং বেদনাদায়ক। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। তদন্তসাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
১৯ মে, ২০২৪

পরিত্যক্ত সবজি থেকে পলিথিন, কলাগাছের তন্তু থেকে প্লাস্টিক তৈরি
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী ক্ষুদে বিজ্ঞানী সাজ্জাদুল ইসলাম কলা গাছের তন্তুকে বিশেষায়িত করে প্লাস্টিক, কার্বন ও সিলিকন পণ্যের বিকল্প ব্যবহারযোগ্য পরিবেশ বান্ধব পণ্য তৈরির ফরমুলা আবিস্কার করেছে। একই সঙ্গে সে পঁচা বা অব্যবহৃত সবজীর শেতসার থেকে তৈরি করেছে পঁচনযোগ্য পলিথিন। তার দাবি এটি পরিবেশ বান্ধব এবং অনেকটা সাশ্রয়ী। পরিবেশ বান্ধব পলিথিনের জন্য সে ব্যবহার করেছে বাজারের পরিত্যাক্ত সবজি থেকে সংগ্রহকৃত শেতসার, অ্যাসিটিক এসিড ও গ্লিসারল। মোট দ্রবনের ২৫ শতাংশ গ্লিসারল ২৫ শতাংশ এসিটিক এসিড ও ২৫/৩০  শতাংশ পানি ও বাকিটা সবজির শেতসার। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার ফল ও সবজি অপচয় হয়। এ অপচয়কৃত শস্য থেকে প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার যোগ্য পণ্য তৈরি করা হলে দেশের অর্থনীতিতে আসতে পারে বড় একটা পরিবর্তন এবং কমে আসবে পরিবেশ দূষণ। আর কলাগাছ যেহেতু একবার ফল দেয়ার পর কেটে ফেলে দিতে হয়। তাই কৃষককে অল্প মুল্য দিয়ে তা সংগ্রহ করে এটা দিয়ে প্লাস্টিক, কার্বন ও সিলিকন পণ্যের বিকল্প ব্যবহারযোগ্য পরিবেশ বান্ধব পণ্য তৈরি করা সম্ভব হবে। ইতোপূর্বে সাজ্জাদুল ‘বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা-২০২৪’ এ মৌলভীবাজার জেলা পর্যায়ে বছরের সেরা মেধাবী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। সে জানায়, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সে তার গবেষণা আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। সাজ্জাদুলের বাবা একজন দরিদ্র কৃষক। তার বাবার পক্ষে তার গবেষণার খরচ চালানো সম্ভব নয়। তাই তার এ কাজের উৎসাহ অর্থনৈতিক কারণে সামনের দিকে এগুচ্ছে না। এ মেধাবী ক্ষুদে বিজ্ঞানীকে সরকার কিংবা হৃদয়বান কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্টান পৃষ্টপোষকতা করলে তার দ্বারা ভালো কিছু আবিস্কার আশা করেন তার শিক্ষকরা।   সাজ্জাদুল ইসলাম জানান, শুধু টাইলস নয় তার আবিষ্কৃত কাঁচামাল দিয়ে প্লাস্টিক, কার্বন ও সিলিকনে তৈরি প্লাস্টিকের আসবাবপত্র, টিন, টাইলস ও কার্বনের তৈরি মোটরযানের যন্ত্রাংশের বিকল্প হিসেবে কলাগাছের তন্তু ব্যবহার করা সম্ভব। এমনকি বুলেট প্রুফ দরজা জানালাও তৈরী করা সম্ভব। তার আবিষ্কৃত কাঁচামালে ৬৫ শতাংশ কলাগাছের তন্তু ও ৩৫ শতাংশ রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার হয়েছে। তার আবিস্কৃত প্লাস্টিক পণ্য উচ্চ তাপে গলিয়ে সহজেই রাসায়নিক দ্রব্য ও কলাগাছের তন্তু আলাধা করা য়ায়। আর সবজির শেতসার থেকে তৈরি পলিথিন মাটিতে ১ মাসে ও পানিতে ৩ মাসে পঁচে যাবে। যা মাটির জন্য হবে জৈব সার ও পানিতে হবে মৎস্য খাদ্য। শ্রীমঙ্গল সরকারী কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক হৃদয় কুমার ভৌমিক জানান, তাদের কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাজ্জাদুল কলাগাছের সেলুলোজ সমৃদ্ধ তন্তু এর হাইডোঅক্সাইড ও রেজিন ব্যবহার করে একটুকরো টাইলস তৈরি করে এবং আলুর শেতসার থেকে পলিথিন তৈরি করে এনে দেখায়। পরে আমরা সরকারী কলেজের ল্যাবে তাকে এটি করে দেখানোর আহ্বান জানালে, মঙ্গলবার কলেজের ল্যাবে এই দুই পণ্য তৈরি করে। এ সময় কলেজের অন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তা দেখে। তিনি বলেন, সে যে কাঁচামাল ব্যবহার করেছে তা পরিবেশের ভারসাম্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আরও অধিক গবেষণায় এটি ভালো কোন আবিস্কার হতে পারে। কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক রোমান মিয়া বলেন, যেহেতু এর প্রধান কাঁচামাল কলাগাছ থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং কলাগাছ সহজলভ্য তাই এটির ব্যবহারে গ্লাস ফাইবার ও কার্বন ফাইবারের প্রয়োগ কমবে। আর তার আবিস্কৃত এ পলিথিন পরিবেশের উপর অপছনশীল পলিথিনের প্রভাব কমাবে।  সাজ্জাদুলের মাধ্যমিক বিদ্যালয় শ্রীমঙ্গল মহাজেরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ও বর্তমান হুগলিয়া হাজী মনছব উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কামরুল হাছান জানান, ছোট বেলা থেকেই সাজ্জাদুলের বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিস্কারে ছিল কৌতুহল। এ থেকেই বিভিন্ন কিছু আবিস্কারে তার মনোযোগ আসে। সাজ্জাদুল ইতোমধ্যে কলাগাছের তন্তুকে ব্যবহার করে তৈরি করেছে টাইলস আর অব্যবহৃত সবজীর শেতসার থেকে তৈরি করেছে পরিবেশ বান্ধব পলিথিন।  শ্রীমঙ্গল সরকারী কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক বিজন চন্দ্র দেবনাথ জানান, যেহেতু এর প্রধান কাঁচামাল কলাগাছ থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং কলাগাছ সহজলভ্য তাই এটির ব্যবহারে গ্লাস ফাইবার ও কার্বন ফাইবারের প্রয়োগ কমবে। এতে পরিবেশের উপর অপছনশীল প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার কমবে।  সাজ্জাদুল ইসলাম জানায়, কলাগাছের তন্তু থেকে তৈরি এই কঠিন যৌগ তৈরি করতে তার সর্বোচ্চ ৬৫ ভাগ তন্তু দিলে এর মধ্যে রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রণ হবে। সে জানায়, তার তৈরি টাইলসের ওজন পায় ৩০০ গ্রাম। যার মধ্যে ২০০ গ্রাম কলাগাছের তন্তু ও হাইডোঅক্সাইড ৬০ গ্রাম ও রেজিন ৪০ গ্রাম। সে জানায় রেজিন ব্যবহার করে দীর্ঘ সময় ধরে যেন এটি না পঁচে এবং হাইডোঅক্সাইড রেজিনের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী অবস্থান প্রদান করে।  সাজ্জাদুলের বাবার নাম মো. নজরুল ইসলাম। তিনি একজন কৃষক। সাজ্জাদুল শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের মহাজেরাবাদ গ্রামে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেন।
১৪ মে, ২০২৪

দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সবজি বিক্রেতা খুন
সিলেটে ছুরিকাঘাতে ভাসমান সবজি বিক্রেতা মোহাম্মদ আলী নামে এক তরুণ খুন হয়েছেন। শুক্রবার (৩ মে) সন্ধ্যায় নগরীর ছড়ারপাড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত মোহাম্মদ আলী কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুরের বাসিন্দা। তিনি সিলেট নগরীর ছড়ারপাড় এলাকার রাহাত মিয়ার কলোনিতে বসবাস করতেন। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মঈন উদ্দিন শিপন বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন। জানা গেছে, মোহাম্মদ আলী একজন ভাসমান সবজি বিক্রেতা। শুক্রবার বিকেলে কিছু দুর্বৃত্ত চালিবন্দর ভৈরব মন্দির সংলগ্ন এলাকায় তাকে ছুরিকাঘাতের পরে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ওসি মঈন উদ্দিন শিপন বলেন, দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে আলী নামে এক তরুণ খুন হয়েছে। আমরা ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। আসামিদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
০৩ মে, ২০২৪

সবজি বিক্রির টাকায় মসজিদ বানালেন বৃদ্ধ
বিভিন্ন এলাকায় ভ্যান গাড়িতে করে সবজি বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে মসজিদ বানিয়েছেন হারুন অর রশীদ হাওলাদার (৬৮)। তিনি ঝালকাঠি সদর উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের রামপুর এলাকার মৃত মেনাজ উদ্দিন হাওলাদারের ছেলে। জানা যায়, ত্রিশ বছর ধরে ঝালকাঠি শহরের বিভিন্ন জায়গায় ভ্যান গাড়িতে করে সবজি বিক্রি করেন তিনি। এটাই তার জীবিকা নির্বাহের একমাত্র মাধ্যম। পরিবারে সদস্য ছয়জন। তার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল সবজি বিক্রি করার টাকা জমিয়ে একদিন তিনি হজ পালন করবেন। সঙ্গে দেশে একটি মসজিদও নির্মাণ করবেন। তাই কষ্ট করে অল্প অল্প করে কিছু টাকা জমিয়েছিলেন তিনি। হারুন অর রশীদ একদিন ভেবে দেখলেন যদি তিনি হজ করেন তাহলে তার একার সওয়াব হবে। কিন্তু যদি তিনি একটা মসজিদ নির্মাণ করেন তাহলে এলাকার সবাই সেখানে নামাজ পড়তে পারবেন।  যেই চিন্তা সেই কাজ। জমানো টাকা দিয়ে তিনি জমি কিনে নির্মাণ করলেন শাহী জামে মসজিদ। হারুন বলেন, সবজি বিক্রি করে অল্প অল্প টাকা জমিয়ে রামপুর এলাকায় জমি কিনি। এরপর সেখানে একটি জামে মসজিদ নির্মাণ করেছি। ওই এলাকার আশপাশের কোনো গ্রামে মসজিদ না থাকায় সবাইকে বাউকাঠি বাজারের মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করতে হয়। বৃষ্টির মৌসুমে এলাকার মুসল্লিদের নামাজ পড়তে বাউকাঠি বাজারের মসজিদে যেতে কষ্ট হয়। অনেকেই যায় না। বাড়িতেই নামাজ পড়ে। তাই চিন্তা করলাম হজে না গিয়ে সেই টাকা দিয়ে এই এলাকার মানুষের জন্য মসজিদ নির্মাণ করি। তাতে এই এলাকার মানুষের কষ্ট কম হবে। তিনি আরও বলেন, শুরু থেকে এই মসজিদ নির্মাণের জন্য কোনো মানুষের সহযোগিতা নেওয়া হয়নি। জমি কেনা থেকে মসজিদ নির্মাণ সবকিছুই আমার টাকায় করেছি। এখনো মসজিদের অনেক কাজ বাকি আছে। মসজিদের টাইলস, অজুখানা, পুকুরে ঘাটলা, ফ্যান, মাইক, মসজিদের সামনে একটা বারান্দার কাজ বাকি আছে। এছাড়া হুজুরের থাকার জন্য একটা রুম করতে হবে। যদি কেউ সহযোগিতা করে, তাহলে মসজিদের বাকি কাজগুলো করতে পারব।  মসজিদের পাশে বাচ্চাদের জন্য একটা মাদ্রাসা নির্মাণ করতে চান তিনি। তিনি বলেন, আশা আছে সবকিছুই করব, বাকিটা আল্লাহ ভরসা।  এ বিষয়ে ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আক্কাস আলী তালুকদার বলেন, আমার ওয়ার্ডে মুসলিম পরিবার কম থাকায় এই এলাকায় মসজিদ নেই। তাই হারুন ভাই সবজি বিক্রি করে কিছু টাকা জমিয়ে জমি কিনে একটা মসজিদ নির্মাণ করছেন। এখনো মসজিদের অনেক কাজ বাকি আছে। যদি কেউ সহযোগিতা করত তাহলে কাজ সম্পূর্ণ করা সম্ভব হতো। মসজিদের মুসল্লি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এই এলাকার আশপাশে কোনো মসজিদ নেই। যে মসজিদ আছে সেখানে নামাজ পড়তে যেতে আসতে ২০ টাকা গাড়ি ভাড়া লাগে। হারুন ভাই আমাদের এখানে মসজিদ নির্মাণ করায় আমাদের এলাকার মানুষের নামাজ পড়তে যেতে আর কষ্ট হবে না গাড়ি ভাড়াও যাবে না। ঝালকাঠি ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল কাইয়ুম বলেন, সবজি বিক্রির টাকায় জমি কিনে মসজিদ নির্মাণ করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি। তার মতো একজন সবজি বিক্রেতা হয়েও মসজিদ নির্মাণ করেছেন। এটা আসলেই একটি ভালো উদ্যোগ। আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। নবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মজিবুল হক বলেন, মসজিদটি তিনি ব্যক্তিগতভাবে তৈরি করেছেন। এখানে আমাদের পরিষদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা সম্ভব না। ওখানে মসজিদ নির্মাণ না করে তার পেছনে ২০০ গজ দূরে একটা পাঞ্জেগানা মসজিদ (ছোট কাঠের তৈরি একটি মসজিদ) আছে সেট পুনরায় নির্মাণ করলে ভালো হতো।
১৩ এপ্রিল, ২০২৪

সাভারে চায়না গ্রাম; সবজি চাষেই ভাগ্য ফিরেছে অনেকের
ঢাকার অদূরে সাভারের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের মেইটকা গ্রামে চাইনিজ সবজি চাষে ভাগ্য বদলেছে পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র কুব্বাদ হোসেন অভিসহ স্থানীয় বেশ কয়েকজনের। কোনোরকম উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়াই চাইনিজ সবজি চাষে সফলতা পেয়ে খুশি এসব তরুণ কৃষকরা। তাদের উৎপাদিত এসব সবজির বার্ষিক মূল্য প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এসব সবজি ক্ষুদ্র পরিসরে রপ্তানি হয় বিদেশেও। আর এতেই এই এলাকা এখন পরিচিতি পেয়েছে চায়না গ্রাম নামে। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, চট্টগ্রামসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন স্থানে বাজার সৃষ্টি হওয়ায় এই সবজি চাষে আগ্রহ পাচ্ছেন কৃষকরা। আর তাই বিষমুক্ত সবজি সংগ্রহ করে তা ভোক্তার কাছে সহজেই সতেজভাবে পৌঁছে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। দেশে চায়নিজ খাবারের জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা বাড়তে থাকে এসব সবজির। তাই সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ও বাজারে চাহিদা অনুযায়ী কৃষকরা নিজে করছেন এই সবজি চাষ ও অন্যকে দিয়ে যাচ্ছেন উৎসাহ। সাভারের তেঁতুলঝোড়ার দক্ষিণ মেইটকা ও ভাকুর্তা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা আদি পেশা কৃষিকে ধরে রেখেছিল ধান চাষের মাধ্যমে। কিন্তু কালের বিবর্তনে তারা অল্প সময়ে ফসল আসার মাধ্যম হিসেবে বেছে নেয় সবজি চাষকে। ক্রমান্বয়ে তা বিভিন্ন চায়না সবজি চাষের দিকে মোড় নেয়। আর যার হাত ধরে এসব সবজির চাষাবাদ শুরু হয় তিনি কোব্বাত হোসাইন অভি, ২০০৪ সালে মাত্র পাঁচ বিঘা জমিতে বেবীকর্ণ নামে এক প্রকার চাইনিজ সবজি ও দেশীয় সবজি আবাদের মাধ্যমে চাষাবাদ শুরু করলেও বর্তমানে ২০০ বিঘার উপরে জমিতে ব্রোকলি, রেড ক্যাবেজ, ক্যাপসিক্যাম, লেটুস, স্যালোরি, থাই জিনজার, পার্সলি, বিটরুট, সুইটকন, বেবিকর্নসহ রং-বেরঙের প্রায় ২৬ প্রজাতির চাইনিজ সবজির চাষাবাদ করছেন। ফলে একদিকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন অভি, অন্যদিকে তার প্রতিষ্ঠিত কৃষক বাংলা এগ্রো প্রোডাক্ট নামের প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে প্রায় শখানেক শ্রমিকের। বয়সে তরুণ ও শিক্ষিত এই কৃষক একদিকে যেমন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন অন্যদিকে স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন জাতীয় পর্যায়ের বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড অ্যাওয়ার্ড, দীপ্ত কৃষি অ্যাওয়ার্ড সহ সরকারি ও বেসরকারি একাধিক পুরস্কার। তরুণ এই উদ্যোক্তা মনে করছেন এসব সবজি যদি বড় পরিসরে বিদেশে রপ্তানির সুযোগ করে দেওয়া হয় তাহলে বছরে এ খাত থেকে কয়েক কুটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। এ ব্যাপারে কুব্বাদ হোসেন কালবেলাকে বলেন, আমার বাবা একজন ভেটেনারি চিকিৎসক ছিলেন এর পাশাপাশি তিনি বাড়িতে গরুর খামার করেছিলেন সেই খামারের গরুর খাবারের জন্য বোনা ভুট্টা ক্ষেতে পাওয়া ছোট ভুট্টাগুলো (বেবিকর্ন) একদিন বিক্রির জন্য রাজধানীর গুলশান কাঁচা বাজারে নিয়ে যাই। সেখানে গিয়ে আরও অনেক প্রকার বিদেশি সবজির সাথে পরিচিত হই। সেই থেকেই এসব বিদেশি সবজি চাষের প্রতি আমার আগ্রহ জন্মায়। এসব সবজি আমাদের দেশীয় সবজির চেয়ে অধিক মূল্যে বিক্রি করে আমারা দিগুন মুনাফার মুখ দেখি। তবে আমাদের এখানে পর্যাপ্ত গ্রিন হাউস,  পলিশেড  হাউস, ন্যাটহাউস  সংরক্ষণের জন্য বড় পরিসরে কোল্ড স্টোরেজের অভাবে সবজি চাষ ও বিক্রির ক্ষেত্রে কিছুটা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। এদিকে কোব্বাদ হোসাইন অভির দেখাদেখি দক্ষিণ মেইটকাসহ ঐ এলাকার আশপাশের একাধিক গ্রামের তরুণ ও  শিক্ষিত বেকাররা  বিদেশি এসব সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছেন।  উচ্চমূল্যের এ ফসলগুলোতে বিঘাপ্রতি উৎপাদন খরচ প্রায় ৩০ হাজার টাকা হলেও বিক্রি করেন উৎপাদন খরচের প্রায় দ্বিগুণ দামে। সাভার উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মোছা. ঈশরাত জাহান বলেন, আমরা সম্ভাবনাময় এই খাতটির প্রসারে সর্বাত্মক সহযোগিতার পাশাপাশি অন্যদের উদ্বুদ্ধ করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আধুনিক কৃষির সকল সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে এসব মূল্যবান সবজি চাষ করে স্থানীয়ভাবে চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও এসব সবজি রপ্তানি করা সম্ভব। আর এতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতে পারে লাখো বেকারের।
১৬ মার্চ, ২০২৪

লবণাক্ত জমিতেও বছরে ৫-৬ কোটি টাকার সবজি চাষ
বরগুনার তালতলী উপজেলার সওদাগরপাড়া গ্রামে কৃষিজমিতে লবণাক্ততার কারণে এক সময়ে শুধু বর্ষা মৌসুমে ধান উৎপাদনই হতো। বছরের বাকিটা সময় দিনমজুরি দিয়েই সংসার চালাতেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু এখন সেখানে বছরব্যাপী নানা ধরনের সবজি চাষ হচ্ছে। তাদের উৎপাদিত সবজির মূল্য পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকার বেশি। এতে স্বাবলম্বী হয়েছেন দুই শতাধিক পরিবার, ফিরেছে সুদিন। স্থানীয় কৃষকরা জানান, শুধু বর্ষা মৌসুমে ধানচাষ করে তেমন লাভবান না হওয়ায় দশ বছর আগে শাহাদাত মাতুব্বর নামে এক কৃষক সবজি চাষ করে সফলতা পান। তার সাফল্য দেখে ধীরে ধীরে গ্রামের অন্যান্য কৃষক পরিবারও সবজি চাষের পথে হাঁটেন। এখন বছরজুড়ে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেন তারা। এখন এই গ্রামে প্রায় ৮০০ হেক্টর জমিতে চলে সবজি চাষ। তারা আরও জানান, তাদের উৎপাদিত সবজি উপজেলার চাহিদা পূরণ করে বরিশাল, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। পদ্মা সেতুর কারণে এখন গ্রাম ঘুরে পাইকাররা ক্ষেত থেকে সবজি সংগ্রহ করে চালান করেন বড় বড় বাজারে।   সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সবুজে সবুজে ভরে উঠছে মাঠ। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে শোভা পাচ্ছে সারি সারি লাউ, শিম, মরিচ, করলা, মুলা, বেগুন, কুমড়া, টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, শসা, গোলআলু, মিষ্টি আলুসহ বিভিন্ন শাকসবজিতে ভরে উঠেছে ক্ষেত।‌ মাঠে মাঠে এসব ফসল পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। কাক ডাকা ভোরে কৃষকেরা কোদাল, নিড়ানি, বালতি, স্প্রে মেশিন ইত্যাদি নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন। আবার নারী শ্রমিকরা সবজি তুলছেন আর পুরুষ শ্রমিকরা প্যাকেটজাত করে গাড়িতে তুলছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে এ কর্মযজ্ঞ। সওদাগর পাড়া গ্রামের কৃষক সোলাইমান বলেন, এক সময় এই গ্রামের নারীরা কাজ করত না। তখন শুধু ধান চাষ হতো। সে সময় প্রায় ঘরেই ছিল অভাব-অনটন। এখন এই গ্রামে বছরজুড়ে সবজি চাষ করার কারণে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও মাঠে কাজ করে। এতে অভাব ঘুচে গেছে এ গ্রামের চাষিদের। সওদাগর পাড়া গ্রামের কৃষক ছগির মিয়া বলেন, আগে এই জমিতে ধান চাষ করতাম লবণাক্ততার কারণে তেমন লাভবান না হওয়ায় এখন সবজি চাষ করছি। এ মৌসুমে ১ বিঘা জমিতে সীম ও মরিচ চাষ করেছি। তাতে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বিক্রি করে পেয়েছি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সবজি চাষি টুটুল মিয়া বলেন, এই মৌসুমে ৩ বিঘা জমিতে সবজি চাষ করেছি। তাতে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৪ লাখ টাকার বিক্রি করেছি। সার, কীটনাশক ও বীজের দাম আগে থেকে অনেক বেশি। এতে করে আমাদের আবাদের খরচ বেড়ে গেছে। তবে বাজারদর ও ফলন ভালো হওয়ায় খরচ বাদ দিয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। সওদাগর পাড়া আদর্শ কৃষি সমিতির সভাপতি মো. শাহদাত মাতুব্বর বলেন, এই গ্রাম থেকে প্রতিদিন ৮০০-১০০০ মণ সবজি বরিশাল, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাচ্ছে। পদ্মা সেতুর কারণে পাইকাররা ক্ষেত থেকে সবজি সংগ্রহ করে চালান করেন বড় বড় বাজারে। গত বছর এ গ্রাম থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকার সবজি বিক্রি হয়েছে। এ বছর বাজারদর ও ফলন ভালো হওয়ায় ৬ কোটি টাকার বেশি বিক্রি হবে। তিনি আরও বলেন, কৃষি বিভাগ যদি আমাদের সবজিগুলো বিদেশে রপ্তানি করার সুযোগ করে দিত তাহলে আমরা আরও বেশি লাভবান হতাম। তালতলী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা মো. রাসেল বলেন, এ বছর তালতলীতে ৮০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। সবজি চাষে প্রদর্শনী ও প্রণোদনার মাধ্যমে সহযোগিতা করা হচ্ছে। সবজি থেকে এ বছর কৃষকরা ভালো মুনাফা অর্জন করবে। ফসল উৎপাদনে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
X