শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪, ২২ আষাঢ় ১৪৩১
ডালপুরি বেচেই চলে ১৩ জনের সংসার
প্রতিদিন সকাল থেকে দোকানের চারপাশে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় শুরু হয়। কেউ বলেন, ‘আমাকে ৮টা পুরি দাও’, কেউ বলেন, ‘আমাকে ১০টা পুরি পার্সেল করে দাও’। ‘দিচ্ছি ‘দিচ্ছি’ বলতে বলতে ক্রেতাদের সামনে দুই হাত আর মুখ চলে ৫৪ বছর বয়সি জুলহাজ হোসেনের। ডালপুরি বিক্রি করেই চলে তার ১৩ সদস্যের সংসার। ১৯৮৮ সালে প্রতি পিস ডালপুরি ৫০ পয়সা করে বিক্রি শুরু করেন এই বিক্রেতা। আস্তে আস্তে দাম বাড়তে বাড়তে এখন এই ডালপুরির দাম হয়েছে ১০ টাকা। দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার নতুন বাজার বড় মসজিদের বাম পাশে জুলহাজের দোকান। তার বাড়ি পৌরসভার রেলস্টেশন চত্বর এলাকায়। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত দোকানটি খোলা থাকে। ডালপুরির এ দোকানটি বেশ পরিচিতি পেয়েছে। সেই সঙ্গে বিক্রিও বেশ ভালো। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ এই দোকানে ডালপুরি খেতে আসেন। ডালপুরির সঙ্গে জুলহাজ হোসেন ক্রেতাদের প্লেটে তুলে দেন মজাদার তেঁতুলের সস। দোকানের কাজে তাকে সহযোগিতার জন্য রয়েছেন পাঁচজন কর্মচারী।  প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ১০০০ থেকে ১৫০০ ডালপুরি বিক্রি করেন জুলহাজ হোসেন। তবে শুক্রবার তার দোকান সাপ্তাহিক ছুটি হিসেবে বন্ধ থাকে। প্রতিটি ডালপুরির  দাম ১০ টাকা। আয় বাড়াতে ডালপুরির পাশাপাশি তিনি পরোটা ও রোল বিক্রি করেন। প্রতিদিন তিনি প্রায় ১৫ হাজার টাকার বেশি ডালপুরি বিক্রি করেন। খরচ বাদ দিয়ে তার মোটামুটি লাভ থাকে। লাভের টাকায় ১৩ জন লোকের সংসার চালান জুলহাজ হোসেন।  জুলহাজ হোসেন জানান, ডালপুরি তৈরি ও সুস্বাদু করতে আদা, রসুন, মসলা, টেস্টি লবণ ও জিরা ব্যবহার করেন তিনি।  জুলহাজ হোসেনের দোকানে ডালপুরি খেতে এসেছেন একইর মঙ্গলপুর গ্রামের বুলবুলি বেগম। তিনি বলেন, আমরা বিরামপুর এলে জুলহাজ ভাইয়ের দোকানে ডালপুরি খাই। ডালপুরি ও ডালপুরির সঙ্গে যে সস দেওয়া হয় তা খুবই মজাদার।   বিরামপুরের পাশের উপজেলা নবাবগঞ্জ থেকে আসা সিরাজুল চৌধুরী বলেন, বিরামপুরে ডালপুরি খেতে আসছি। ডালপুরির সঙ্গে সসও খুব মজা হয়েছে। বিরামপুরে যতবার আসি এই দোকানে ডালপুরি না খেয়ে যাই না। দোকানটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, তাই ডালপুরি খেতে আরও ভালো লাগে। বিরামপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র লিয়াকত আলী সরকার টুটুল বলেন, জুলহাজ হোসেনের দোকানে ডালপুরি খেতে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন আসেন। এলাকায় ডালপুরির বেশ সুনাম রয়েছে। মাঝে মাঝে আমিও ডালপুরি খেয়ে বাসার জন্য নিয়ে যাই।
১০ ঘণ্টা আগে

পরোটা বিক্রি করে চলে হোসনে আরার ৮ জনের সংসার
প্রতিদিন বিকাল হলেই দোকানের টেবিলের চারপাশে লেগে থাকে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন ভোজন রসিকরা। তাদের লক্ষ্য থাকে বিকেলে এসে বিভিন্ন ভর্তার মিশেলে আলু-পরোটা খাওয়া। বিকেল হতেই ভোজন রসিকদের পদচারণায় জমে উঠে দিনাজপুর জেলার বিরামপুর রেলস্টেশনের দক্ষিণে অবস্থিত হোসেনে আরা বেওয়ার আলুপরোটা ও পেঁয়াজুর দোকান। হোসেনে আরা বেওয়া পৌরসভার কাজীপাড়ার বাসিন্দা। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা কিংবা ১০টা পর্যন্ত চলে কেনাবেচা। সুস্বাদু হওয়ায় আলুপরোটার দোকানটি বেশ পরিচিতি পেয়েছে। সেই সঙ্গে বিক্রিও হচ্ছে বেশ ভালো। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে অনেক মানুষ এ দোকানে খেতে আসেন।  আলুপরোটার সঙ্গে হোসেনে আরা বেগম ক্রেতাদের প্লেটে তুলে দেন বাদাম, তিল, শর্ষে, কাঁচামরিচ, ধনিয়া, শসা ও শুঁটকিসহ পাঁচ মিশালি ভর্তা। দোকানের কাজে তাকে সহযোগিতা করেন তার নাতি রাব্বি হোসেন। আর যখন দোকানে ক্রেতার ভিড় বেড়ে যায় তখন হোসেনে আরার ছেলে শাহাবুদ্দিন দোকানে এসে তাদের সহযোগিতা করেন। জানা গেছে, প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ৭০০-৮০০ আলুপরোটা বিক্রি করেন হোসেনে আরা বেগম। শুক্রবার বেশি আলুপরোটা বিক্রি হয়। প্রতিটি আলুপরোটার দাম ১৫ টাকা। আয় বাড়াতে আলুপরোটার পাশাপাশি কয়েক মাস ধরে দোকানে পেঁয়াজু বিক্রি করা হচ্ছে।  প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০টি পেঁয়াজু বিক্রি হয়। প্রতিটি পেঁয়াজুর দাম পাঁচ টাকা। এতে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার টাকা বেশি বিক্রি হয়। আলুপরোটা বিক্রির আয়েই ছেলের বউ, দুই নাতি, নাতবউ, নাতিদের দুই ছেলেসহ আটজনের সংসার চলে। আলুপরোটার দোকানে কাজের ফাঁকে জানতে চাইলে হোসেনে আরা বেগম কালবেলাকে বলেন, আলুপরোটা তৈরি ও সুস্বাদু করতে আদা, রসুন, মসলা, টেস্টি লবণ ও জিরা ব্যবহার করি। আলুপরোটা তৈরিতে প্রতিদিন আধা মণ আলু ও দেড়মণ আটা লাগে। তিনি বলেন, প্রতিদিন সকালে বাড়িতে মেয়ে, দুই নাতবউ মিলে আলু, আটা ও বিভিন্ন ধরনের মসলা মেখে খামির তৈরি করেন। দুপুরে চার-পাঁচ প্রকারের ভর্তা তৈরি করেন। পরে বিকেলে দোকানে আলুপরোটা তৈরি করে বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০টি পরোটা বিক্রি হয়। পরোটা বিক্রির আয় দিয়েই চলে আমার সংসারের আটজনের ভরণপোষণ। হোসেন আরা আরও বলেন, আমার স্বামী ইসরাইল হোসেন খুলনায় একটি জুটমিলে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে পক্ষাঘাতগ্রস্ত (প্যারালাইসিস) হয়ে তিনি মারা যান। এর পর থেকে ছেলে আনোয়ার হোসেনকে নিয়েই চলে বেঁচে থাকার লড়াই। ছেলে বড় হলে বেঁচে থাকার অবলম্বন খুঁজে পাই। আমার কাছ থেকে ছেলেও আলুপরোটা বানানো শিখেছেন। লড়াই করে যাচ্ছি বলে আজ জমজমাট হয়েছে আমার আলুপরোটার ব্যবসা। আলুপরোটা খেতে এসেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা এডুকেশন বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার। তিনি কালবেলাকে বলেন, আমি নানির বাড়িতে বেড়াতে এসে আলুপরোটার কথা শুনে খেতে এসেছি। খুব সুস্বাদু, খেতে মজাদার এ আলুপরোটা। বিশেষ করে এর সঙ্গে ভর্তা মিশিয়ে খেলে বেশি মজা লাগে।  দিওড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক মন্ডলের শ্বশুর আবু তাহের বলেন, দুই পিচ আলুপরোটা খেলাম, বেশ মজাদার ও সুস্বাদু। মাঝে মাঝে এখানে আলুপরোটা খেতে আসি।  বিরামপুরের পার্শ্ববর্তী উপজেলা নবাবগঞ্জ থেকে আসা আমরুজ্জামান বলেন, বিরামপুরে আলুপরোটা খেতে এসেছি। আলুপরোটার সঙ্গে বাদাম ভর্তা, মরিচের ভর্তা খেয়েছি, এখানকার আলুপরোটার স্বাদ অন্যরকম।  বিরামপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র বকুল হোসেন বলেন, হোসেন আরা বেগমের দোকানে আলুপরোটা খেতে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন রেলস্টেশনে আসেন। এলাকায় তার আলুপরোটার বেশ সুনাম রয়েছে। হোসেনে আরা বেগম যদি পৌরসভা থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা চান, তাহলে তাকে সহযোগিতা করা হবে।
১৫ জুন, ২০২৪

শ্যালিকাকে স্ত্রী ভেবে ১১ মাস সংসার করলেন শাকিল, অতঃপর...
বিয়ের ১১ মাসের মাথায় তালাকের কাগজ হাতে পান মোহাম্মদ শাকিল। সুখের সংসারে হঠাৎ স্ত্রীর কাছ পক্ষ থেকে তালাকনামা পেয়ে যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে তার। আরও বড়সড় ধাক্কা খান যখন দেখেন তালাক তাকে স্ত্রী আয়েশা দেননি, দিয়েছেন তার বড় বোন সুরাইয়া। অদ্ভুত এমন এক সমস্যায় পড়ে ব্যাপারটা পরিষ্কার হতে গিয়ে কাবিননামা তুলে দেখতে পান, তিনি আসলে বিয়েটা সুরাইয়াকেই  করেছিলেন। আজব এই ঘটনা ঘটেছে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নে। কাগজে-কলমে যার সঙ্গে শাকিলের বিয়ে হয়েছে, সেই সুরাইয়ার রয়েছে স্বামী ও ২ সন্তান। তাই ভুল শুধরে তাকেও ঘরে নিয়ে আসা সম্ভব নয়। ওদিকে, সংসার করলেও আয়েশার সঙ্গে তো বিয়েই হয়নি। এমন গোলমেলে পরিস্থিতিতে তালাকের কাগজ গ্রহণ করতে রাজি নন শাকিল। এ বিষয়ে মোহাম্মদ শাকিল বলেন, আয়েশাকে বিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। তার বদলে বিবাহ সম্পন্ন হয় সুরাইয়ার সঙ্গে। সে সম্পর্কে ‍আমরা জেঠস।  তবে ঘর-সংসার করেছি আয়েশার সঙ্গে। আয়েশা আমার সংসার ছেড়ে চলে গেছে। এখন সুরাইয়া আমাকে তালাকনামা পাঠিয়েছেন। ওরা ইচ্ছাকৃতভাবে জালিয়াতি করেছেন। পরিবারসহ আমার মানসম্মান নষ্ট হয়েছে। সেই সঙ্গে আমি আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমি এর বিচার চাই। শাকিলের বাবা জয়নাল খান বলেন, বিবাহের সময় কাজীকে যে জন্মনিবন্ধন দেওয়া হয়েছে ওনি তা দেখেই লিখেছেন। আমি ছেলের বউকে তার বাড়ি থেকে কয়েকবার আনতে গেলেও তারা দেয়নি। পরে কাবিননামা তুলে দেখে ছেলের বউয়ের নাম সুরাইয়া লেখা আছে। কনের মা বিবি হাজেরা বলেন, কাবিনে সুরাইয়া নাম লেখা হয়েছে। যে কাবিননামা করেছেন তার কারণে এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। আর এ বিষয়ে সুরাইয়া বলেন, আমার সংসারে দুই সন্তান আছে। কাবিন আয়েশার নামে করার কথা থাকলেও তা আমার নামে করা হয়েছে। কাজীর কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে। এদিকে, বিষয়টা খতিয়ে দেখলে বোঝা যায়, ভুল কিংবা ইচ্ছাকৃত যাই হোক না কেন, এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে মেয়ের পরিবারের কারণে। যদিও মেয়ের পরিবার সেটা স্বীকার না করে দোষ চাপাতে চায় কাজীর ঘাড়ে। আর কাজীর বক্তব্য হলো, তাকে যা লিখতে বলা হয়েছে, তিনি তাই লিখেছেন। এখানে তার কোনো দোষ নেই। মেয়ের মা এবং কাজী পরস্পরের ওপর দোষ চাপালেও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিয়ের সময় আয়েশার বয়স ১৮ না হওয়ায় কাজীর পরামর্শে বড় মেয়ে সুরাইয়ার জন্মনিবন্ধন দিয়ে ছোট মেয়ের বিয়ে পড়ানো হয়েছে। এতে সায় ছিল পরিবারেরও।
১২ জুন, ২০২৪

জীবন দিয়ে হলেও ৬ স্ত্রীকে নিয়ে সংসার করতে চান রবিজুল
একই ছাদের নিচে ৭ স্ত্রী নিয়ে বসবাস করা কুষ্টিয়ার ভাইরাল রবিজুল নিয়ে যেন আলোচনা শেষ নেই। মাঝে মধ্যেই সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে তিনি। মাস চারেক আগে ৬ষ্ঠ স্ত্রী স্বেচ্ছায় সংসার ছেড়ে বাবার বাড়ি চলে গেলেও এবার দুই স্ত্রীকে নিয়ে ফের আলোচনার টেবিলে রবিজুল। স্থানীয় মাতব্বররা ইসলামী শরীয়াহ মতে ৪ স্ত্রীর অধিক বিয়ে জায়েজ নয় মর্মে ফতোয়া জারি একই সঙ্গে দুই স্ত্রীকে তালাক দিতে বাধ্য করার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয় তাকে।  শনিবার (৮ জুন) সকাল ১০টায় স্থানীয় ২২ মাতব্বরের সমন্বয়ে এমন কড়া সিদ্ধান্ত আসে। পরে দুই স্ত্রীকে এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। বৈঠকে দুই স্ত্রী ও তাদের স্বামী রবিজুল ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্রধান মাতব্বর নাজিম মন্ডল।  এ বিষয়ে রবিজুল বলেন, আমি আমার স্ত্রীদের খুব ভালোবাসি, তাদের সংসারে ৫টি সন্তানও রয়েছে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আজীবন একসঙ্গে থাকতে চাই। কোনো ষড়যন্ত্রকারী, প্রভাবশালী আমাদের বন্ধন ছিন্ন করতে পারবে না। জীবন দিয়ে হলেও তাদের রক্ষা করব। সবার সম্মতিতে ৭টি বিয়ে করলেও সুখেই সংসার করছিলাম। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী মাতব্বররা আমাদের বিয়েকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেননি। ৪টির অধিক স্ত্রী রাখতে পারব না মর্মে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত শনিবার হঠাৎ আমার পঞ্চম এবং সপ্তম স্ত্রীকে তলব করেন মাতব্বররা। পাটিকাবাড়ি বাজারে ভরা মজলিসে তারা আমাকে দুই স্ত্রীকে তালাক দিতে বলেন। চাপে পড়ে তারা এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বের হয়।  রবিজুল আরও বলেন, আমার সব স্ত্রীর পরিবারই অত্যন্ত গরিব। তারা আমার সঙ্গে সুখেই সংসার করছিল। দু’দিন অসহায়ের মতো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেরিয়েছে। বাধ্য হয়ে আইনের আশ্রয় নিতে থানা পুলিশের শরণাপন্ন হয় তারা। কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা পুলিশে স্বামীর কাছে ফিরতে এবং একই সঙ্গে প্রভাবশালী মাতব্বরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অভিযোগও দায়ের করেন। ওই অভিযোগ আমলে নিয়ে শেষ পর্যন্ত ইবি থানা পুলিশ তাদের আমার কাছে নিয়ে আসে। তারা এখন আমার বাড়িতেই সংসার করছে।  তিনি বলেন, স্থানীয় লিটন মন্ডল, আওয়ামী লীগ নেতা সফর উদ্দিনসহ মাতব্বররা আমাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করেছে। তাদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। এদিকে আলোচনায় আসা দুই স্ত্রী বলেন, আমাদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা হয়েছে। স্বামী রবিজুল আমাদের অনেক ভালোবাসেন। সম্মানের সঙ্গে সংসার করছেন তারা। কোনো পরিস্থিতিতে কেউই আমাদের আলাদা করতে পারবে না। আমরা সবাই বোনের মতো একসঙ্গে সংসার করছি।  অন্যদিকে রবিজুলের দুই স্ত্রীকে জোরপূর্বক বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়ে বৈঠকের প্রধান নাজিম মন্ডল বলেন, ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক চার স্ত্রীর বেশি রাখার বিধান নেই। সামাজিকভাবে বসে আমরা তাই বোঝাতে চেয়েছিলাম।  রবিজুল তার দুই স্ত্রীকে তালাক দেবেন বলে নিজেই অঙ্গীকার করেছেন। আমরা তাকে বাধ্য বা মারধর করিনি।   বৈঠকে উপস্থিত পাটিকাবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সফর উদ্দিন বলেন, এটা অবৈধ বিয়ে। আমরা তাকে বাধ্য করিনি। তার দুই স্ত্রী মেনে নিয়েই বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। তাদের কাবিন ও খোরপোশ বাবদ দুই লাখ টাকাও দেওয়া হয়েছে।  একাধিক বিয়ের ব্যাপারে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কুষ্টিয়ার উপপরিচালক হেলাল উজ জামান বলেন, শরীয়াহ অনুযায়ী শর্ত সাপেক্ষে  বৈধভাবে কোনো ব্যক্তি সর্বোচ্চ চারটি বিয়ে করতে পারেন। এজন্য আগের সব স্ত্রীর অনুমতি নিতে হবে। দাম্পত্য জীবনে সব স্ত্রীর সমঅধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো স্ত্রী গ্রহণের বিধান নেই।  এ বিষয়ে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পার্থ প্রতীম শীল বলেন, দুই পক্ষের সমঝোতার বিষয়টি ভিন্ন। কিন্তু জোর জবরদস্তির কোনো সুযোগ নেই। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ওসি মামুন রহমান বলেন, রোববার রাত ৯টার দিকে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ি ইউনিয়ন থেকে দু’জন নারী জোরপূর্বক বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে বলে থানায় অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন। এমনকি শারীরিকভাবেও তাদের লাঞ্ছিত করা হয় । স্থানীয় কিছু মানুষের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেন তারা। তাদের চাওয়া বাড়িতে স্বামীর সংসারে যেতে চান। এ বিষয়ে রোববার (৯ জুন) রাতেই তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। তারা ভালো আছে বলে জানান তিনি।  স্থানীয় মাতব্বরের সমন্বয়ে সেই বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন পাটিকাবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান সফর উদ্দিন, লিটন মন্ডল, মাজিলা দারুস সুন্নাহ বহুমুখী মাদ্রাসার মুহতামিম হাফেজ মাওলনা মুফতি আলমগীর হোসাইন, পাটিকাবাড়ী বায়তুল আমান জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মীর শফিকুল ইসলাম, পাটিকাবাড়ী  হেফজখানা ও বহুমুখী মাদ্রাসার শিক্ষক মিজানুর রহমান, মাজিলা পশ্চিমপাড়া দারুলউলুম হাফিজীয়া ক্বারিয়ানা মাদ্রাসার মুহতামিম কারি মশিউর রহমান প্রমুখ। বৈঠকে শরিয়াহ অনুযায়ী চারজনের অধিক স্ত্রী রাখার বিধান না থাকার ইসলামী ব্যাখা দেন মুহতামিম হাফেজ মুফতি আলমগীর হোসাইন।
১০ জুন, ২০২৪

শান মেশিনের প্যাডেলে চলে ষাটোর্ধ মোহাম্মদ আলীর সংসার
দরজায় কড়া নাড়ছে কোরবানির ঈদ। আর কোরবানির ঈদ মানেই মাংস কাটাকাটির মহোৎসব। তাই এ সময় পুরোনো বঁটি, চাকু কিংবা দা আগে থেকে ধার বা শান দিয়ে ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হয়। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ততা বেড়েছে এ পেশায় নিয়োজিত কারিগরদের। বিশেষ করে কাঁধে শান মেশিন নিয়ে শহরের অলিতে গলিতে হাঁক দিতে দেখা যাচ্ছে শান কারিগরদের। ভ্রাম্যমাণ এ সকল কারিগররা শান মেশিন কাঁধে চেপে ঘুরে বেড়ায় প্রতিটি পাড়া মহল্লায় ও হাট বাজারে। এভাবে কাঁধে শান মেশিন চেপে ৩৮ বছর ধরে শান দেওয়ার কাজ করে সংসার চালিয়ে আসছেন ষাটোর্ধ বয়সী মোহাম্মদ আলী। সরেজমিনে দেখা যায়, মোহাম্মদ আলী শান দেওয়া মেশিনের প্যাডেল পা দিয়ে সজোরে ঘুরিয়ে শান দিচ্ছে। এতে একটি পাথরের প্লেট সজোরে ঘুরাতে হচ্ছে তাকে। ঘূর্ণায়মান ওই পাথরের প্লেটের কার্নিশে লোহার চাকু, দা ও কাঁচি স্পর্শ করলে ঘর্ষণে ধার উঠে যায়। এ সময় ঘর্ষণের ফলে আগুনের ফুলকিও বের হয়। এভাবে দুই পায়ে প্যাডেল ঘোরানোর কাজ খুবই পরিশ্রমের। শান কারিগর মোহাম্মদ আলী কালবেলাকে বলেন, এ শান মেশিনে প্রতিটি পাড়া মহল্লায় এবং বিভিন্ন হাট বাজারে ঘুরে শান দেওয়ার কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়েই কষ্টে চলে পরিবারের ভরণপোষণ। পাঁচজনের পরিবারে নেই মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও। তাই হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলা থেকে এসে আবাস গড়েছি কুমিল্লার গোমতী নদীর পাড়ে ছোট্ট ঝুপড়ি ঘরে। ২৫ বছর বয়স থেকেই একটি শান দেওয়া মেশিন কাট দিয়ে তৈরি করে শুরু করেছি মরচে ধরা পুরানো কাঁচি,দা ও চাকুতে ধার ওঠানোর কাজ।  তিনি বলেন, কোরবানির ঈদে অনেক পশু জবাই হয়। এ সময় প্রায় প্রতিটি পরিবারেই ছুরি, বঁটি, শিলপাটা ধার দেওয়ার হিড়িক পড়ে। ফলে বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে কোরবানির ঈদের আগের কয়েকদিন আয়ও ভালো হয়। অন্য সময় ৩০ টাকা নেওয়া হলেও এখন ছুরি ধার করতে ৫০ টাকা নিচ্ছি। অন্যগুলো ১০০ টাকা। কোরবানির ঈদের আগে প্রতিদিন গড়ে ১২০০ টাকার মতো আয় হয়।  এ শান কারিগর আরও বলেন, কিন্তু ঈদের পর এ আয় অর্ধেকে নেমে আসে। এ আয় দিয়েই চলছে পরিবারের ভরণপোষণ। এ বয়সে এসে শান দেওয়ার কাজ করতে ইচ্ছে করে না। অন্য কোনো কাজও জানা নেই। মরার আগ পর্যন্ত শান দেওয়ার কাজ করে বাঁচতে হবে। শরীর না কুলালেও জীবিকার তাগিদে শান দেওয়া মেশিনের প্যাডেল ঘোরাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। টমছমব্রিজ এলাকার বাসিন্দা আমিমুল এহসান বলেন, আমাদের এলাকার অনেক পরিবারের দা-বঁটি মেশিনের মাধ্যমে শান দেওয়া হয়। দা-বটি বাজারে নিতে ঝামেলা। তাই শান দেওয়া লোক বাসার সামনে আসলে তাদের কাছ থেকে দা-বঁটি শান দেই। এতে একটু ঝামেলা কম হয়। শান ওয়ালারা বঁটি শান দিতে নেন ৫০ টাকা, ছুরি ২০ টাকা, ছাপাতি ১০০ টাকা, শিলপাটা ১০০ টাকা।
১০ জুন, ২০২৪

প্রাণে বাঁচতে সবাই পালালেও সংসার ছাড়েন না ‘মা’
ঘূর্ণিঝড় এলেই আতঙ্কে থাকেন দেশের উপকূল অঞ্চলের বাসিন্দারা। আতঙ্কের মাঝেও ছেলে সন্তানকে আগলে রাখতে ব্যস্ত থাকেন মায়েরা। ঝড়ের তীব্রতার মাঝে সবাই বাড়িঘর ছেড়ে চলে যেতে চাইলেও যেতে চান না শুধু মা। পরম মায়ায় ভিটেমাটি আগলে সেখানে অবস্থান করেন তারা। শুধু উপকূল অঞ্চলের বাসিন্দারাই জানেন ঘূর্ণিঝড় কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগে মায়েরা কতটা কষ্ট করে থাকেন। ঘূর্ণিঝড়ে তীব্র বাতাসে বাড়িঘরের ছাদ, টিন, আসবাবপত্র উড়িয়ে নিয়ে গেলেও শেষ অবলম্বনটুকু টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেন যিনি- তিনি হলেন মা। মায়ের ভালোবাসা সবসময়ই অতুলনীয়। ঝড়, বৃষ্টি রোদে সবাই নিজেদের টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও মায়েরা সবাইকে নিয়ে টিকে থাকতে চান। বাংলাদেশ আঘাত হানা শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়গুলোর প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। সেগুলোর ক্ষত এতটাই তীব্র হয় যে, পরবর্তীতে সেখানে ফের বসবাস উপযোগী করতে কয়েক বছর সময় লেগে যায় সেখানকার বাসিন্দাদের। তবে উপকূলীয় অঞ্চলের এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে বেশিরভাগ নারীরা আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে চান না। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি বা সিপিপির স্বেচ্ছাসেবীরা বলছেন, বেশিরভাগ নারীরা অসেচতন। বারবার বলার পরও তারা আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চান না। উল্লেখ্য, রোববার (২৬ মে) সন্ধ্যায় বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে দেশের উপকূলবর্তী অঞ্চল। প্রায় ৭ ঘণ্টাব্যাপী প্রচণ্ড শক্তির ঘূর্ণিঝড়ে প্লাবিত এবং তছনছ হয়ে গেছে বহু জনপদ, ঘরবাড়ি, বেড়িবাঁধ, গাছপালা, মাছের ঘের, ফসলের ক্ষেত, দোকানপাট, বাতিল হয়েছে বিমানের বহু ফ্লাইট। সোমবার (২৮ মে) সকাল পর্যন্ত রাজধানীসহ সাত জেলায় প্রাণহানি ঘটেছে অন্তত ১৬ জনের। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ১৯ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১০৭টি উপজেলার সাড়ে ৩৭ লাখ মানুষ। পৌনে ৩ কোটি গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ছেদ পড়েছে। ১৫ হাজার মোবাইল টাওয়ার নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৮৩টি ঘরবাড়ি। এ ছাড়া আংশিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৯২টি ঘরবাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলো হলো- সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরিশাল, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, ফেনী, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও যশোর। রিমালের আঘাতে মারা যাওয়াদের মধ্যে রয়েছে- ঢাকায় ৪, ভোলায় ৩, বরিশালে ৩, পটুয়াখালীতে ২, খুলনা, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় একজন করে মোট ১২ জন। রিমালের প্রভাবে রাজধানীতে বৃষ্টির মধ্যে বিদ্যুৎস্পর্শে আলাদা ঘটনায় নারীসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে এই ঘটনা ঘটে। মৃতরা হলেন- খিলগাঁও রিয়াজবাগ এলাকার রিকশার গ্যারেজে বিদ্যুৎস্পর্শ হওয়া রাকিব (২৫), খিলগাঁও সিপাহিবাগে রাস্তায় জমে থাকা পানির মধ্যে বিদ্যুৎস্পর্শ হওয়া মরিয়ম বেগম (৪৫), যাত্রাবাড়ীতে টিনের প্রাচীর স্পর্শ করে বিদ্যুৎস্পর্শ হওয়া লিজা আক্তার (১৬) ও অপরজন বাড্ডার বাসিন্দা। তার নাম-পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ভোলায় বসতঘরে গাছ পড়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলার লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চরউম্মেদ ইউনিয়নে তীব্র বাতাসে টিনের ঘরে গাছ পড়ে মনেজা (৫৪) নামে একজনের মৃত্যু হয়। গাছের ডাল পড়ে জেলার বোরহানউদ্দিনে সাচড়া ৬নং ওয়ার্ডে জাহাঙ্গীর (৫০) নামে আরেকজন ও দৌলতখান পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডে বসতঘরে গাছ পড়ে মাইশা নামের ৪ বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে শওকত মোড়ল (৬৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। পটুয়াখালীতে জোয়ারের পানিতে ডুবে মো. শরীফ (২৭) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া বাউফলে ঘরের নিচে চাপা পড়ে করিম খানের (৬২) মৃত্যু হয়েছে। বরিশালে রিমালের প্রভাবে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন একটি বিল্ডিংয়ের ৩য় তলার দেয়াল ধসে লোকমান হোটেলের মালিকসহ ২ জন মারা গেছেন। তারা হলেন- লোকমান (৫৫) ও মোকলেস (২৫)। এ ছাড়া জালাল সিকদার নামের আরও একজন মারা গেছেন। কুমিল্লা নগরীতে নির্মাণাধীন একটি ভবনের দেয়াল ধসে সাইফুল ইসলাম সাগর (১২) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল ধসে এক যুবক মারা গেছেন। যুবকের নাম সাইফুল ইসলাম হৃদয় (২৬)। খুলনায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে তীব্র বাতাস ও বৃষ্টিতে ঘরের ওপর গাছ উপড়ে পড়ে লালচাঁদ মোড়ল (৩৬) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
২৮ মে, ২০২৪

রাতের অন্ধকারে মাছ ধরে সংসার চালান ৪ বোন
ডিঙি নৌকায় ভেসে খালে-বিলে ও নদীতে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করেন হাছান মোল্লার চার মেয়ে। তাদের বাড়ি বরগুনার তালতলী উপজেলার নিওপাড়া গ্রামে। শুধু মাছ শিকার করেই সংসার চলে তাদের। কখনো হাত দিয়ে, কখনো বড়শি দিয়ে, আবার কখনো জাল দিয়ে মাছ ধরেন তারা। এভাবেই দিনরাত পরিশ্রম করে সংসার চালাচ্ছেন চার বোন। বাবার অভাবের সংসারে চার বোন খরস্রোতা পায়রা নদীতে মাছ শিকার শুরু করেন। স্বামীর সংসারে গিয়েও মাছ ধরে চালাতে হয় সংসার। দরিদ্র পরিবারে চার বোনের বিয়ে হলেও কেবল সংসারই বড় হয়েছে তাদের। ভাগ্য ফেরেনি কারও। তাই বাধ্য হয়েই সংসারের হাল ধরতে বড়শি দিয়ে মাছ ধরাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তারা। এভাবেই ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বড়শি দিয়ে মাছ ধরছেন ৪ বোন। সময়ের স্রোতে তাদের এখন বয়স বেড়েছে। আগের মত আর পরিশ্রমও করতে পারেন না। একসময় লোকলজ্জার ভয়ে রাতে মাছ শিকার করে সংসার চালালেও এখন দিনে মাছ ধরেও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। নদীতে আগের মত আর মাছ ধরা না পড়ায় আয় কমে গেছে অনেক। সারাদিন বড়শি নিয়ে বসে থেকেও ২০০-৩০০ টাকার মাছও ধরতে পারেন না তারা। স্থানীয়রা বলছেন, অভাবের তাড়নায় বাবার ঘর থেকেই চার বোন দারিদ্রের সাথে সংগ্রাম করে বড় হয়েছেন। তিনবেলা খাবার যোগাতে মাছ ধরে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেই নিজের সংসারসহ বাবার ভরণপোষণের দায়িত্বও পালন করেছেন। ছোটবেলা থেকে মাছ শিকার করলেও ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি চার বোনের। তাইতো ভাগ্যের ওপর আক্ষেপ রেখে পরন্ত বয়সে তাদের একটাই চাওয়া, সন্তানরা কখনও যেন তাদের মতো ক্ষুধার যন্ত্রণা না ভোগে।
২৫ মে, ২০২৪

বড়শিতে মাছ ধরে চলে ৪ বোনের সংসার
বরগুনার তালতলী উপজেলার নিউপাড়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক হাচেন মোল্লা। রাহিমা বেগম, হালিমা বেগম, ফাতেমা বেগম ও জরিনা বেগম নামে তার চার মেয়ে। স্ত্রী ও চার মেয়ে নিয়ে ছয়জনের সংসার হাচেন মোল্লার। তার আয় দিয়ে এতজনের সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়ার অবস্থা ছিল তাদের। প্রায় অনাহারে-অর্ধাহারে থাকতে হতো। বাবার অভাবের সংসারে চার বোন বাধ্য হয়ে খরস্রোতা পায়রা নদীতে মাছ শিকার শুরু করেন। পরে স্বামীর সংসারে গিয়েও চলে মাছ ধরা। নৌকা নিয়ে নদীতে গিয়ে কখনো জাল দিয়ে, কখনো বড়শি দিয়ে চলে তাদের মাছ শিকার। সেই মাছ বাজারে বিক্রি করে চলে তাদের সংসার। এভাবেই সংসার চালাতে ৪০ বছরেরও বেশি সময় বড়শি দিয়ে মাছ ধরছেন তারা। চার বোন জানান, একসময় চার বোন লোকলজ্জার ভয়ে রাতে মাছ শিকার করেছি। পরে দিনে মাছ শিকার করা শুরু করি। আগে নদীতে মাছ বেশি ধরা পড়ত। একদিকে বড়শি অন্যদিকে জাল। এখন মাছ কম তাই আয়ও তেমন নেই। এখন কোনো দিন ২০০-৩০০ টাকার মাছ ধরতে পারি। কোনো দিন আরও কম। ৬২ বছর বয়সী হালিমা বেগম বলেন, মেয়ের ভরণপোষণ দিতে না পারায় বাবা অল্প বয়সে আামকে বিয়ে দেন। তবে সেই বিয়ে সুখের হয়নি। ছোটবেলা থেকে অভাবের মধ্যে বড় হইছি। অভাবের সঙ্গে বাবা ১১ বছর বয়সে বিয়ে দিছে। স্বামীর ঘরে গিয়ে দেখি অভাব পিছু ছাড়ে না। এরপর থেকে শুরু করলাম বড়শি দিয়া নদীতে মাছ ধরা। সেই থেকে আজ পর্যন্ত মাছ ধরি। মাছ শিকার ও সেই মাছ বিক্রি করে ছেলেমেয়েদের তিন বেলা খাবার ‍জুটিয়েছি। এ মাছ ধরেই ছেলেমেয়েদের বড় করেছি। তাদের খাবারের কষ্ট পাইতে দেই নাই আমরা।  আরেক বোন ফাতেমা বেগম বলেন, একটা সময় আমরা বোনেরা যখন মাছ ধরতাম তখন এলাকার মানুষ হাসাহাসি করত। কিন্তু এখন প্রশংসা করেন। আমার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। স্বামী অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। আমি নিউপাড়া থেকে খরস্রোতা পায়রা নদী হয়ে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বড়শি ফেলে মাছ শিকার করেছি। জরিনা বেগম বলেন, স্বামীর একার আয়ে সংসার চলত না। তাই বোনদের সঙ্গে মাছ শিকারে যেতাম। আর এখন স্বামী প্যারালাইসিস হয়ে অচল। আমার আয়েই চলে সংসার। ছোটবেলা থেকে মাছ শিকার করলেও ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। তবে আগে যে অনাহারে থাকতাম এখন আর না খেয়ে থাকতে হয় না। নিজে অনাহারে থেকে ক্ষুধার যন্ত্রণা বুঝেছি। তাই সন্তানদের কখনো ক্ষুধার যন্ত্রণা বুঝতে দেইনি। তিনি বলেন, মাছ ধরে দুই সন্তানকে লেখাপড়া শিখিয়েছি। মেয়েদেরও বিয়ে দিয়েছি। ছেলে জমিতে চাষাবাদ করে সংসার চালান। তবে স্বামী আর আমার কথা চিন্তা করে এখনো মাছ শিকার করছি। স্থানীয়রা বলেন, তারা চার বোন। মাছ শিকার করে জীবন কাটল তাদের। তবে সন্তানদের নৈতিক শিক্ষা দিতে পেরেছেন। তারা সবাই সমাজের সবার সঙ্গে মিলেমিশে চলেন। সৎভাবে জীবনযাপন করেন।
২২ মে, ২০২৪

কুঁচিয়া বিক্রি করে সংসার চালান খোকন
এক সময় কৃষি কাজ করতেন রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার টিঅ্যান্ডটি মোড় এলাকার বাসিন্দা খোকন বিশ্বাস। কৃষি কাজ করে সংসারের টানাপড়নের মধ্যে সবার ভরণপোষণ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তিনি। তাই কৃষি কাজের পাশাপাশি শুরু করেন কুঁচিয়া শিকার। সেই থেকে ২২ বছর ধরে কুঁচিয়া বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। সম্প্রতি জাজিরা উপজেলার সেনেরচর মোল্লা কান্দি এলাকার একটি নালায় কুঁচিয়া খুঁজছেন খোকন বিশ্বাস। পেয়েছেনও কয়েকটি। সেখানে গিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে।  জানতে চাইলে তিনি কালবেলাকে বলেন, এক সময় কৃষি কাজ করেছি। বেশি আয়-রোজগার করতেই কুঁচিয়া শিকার শুরু করি। প্রায় দুই যুগ ধরে হাওর, ডোবা ও পুকুরসহ বিভিন্ন স্থানে কুঁচিয়া ধরে সংসার চালাই। পরিবারের সবার ভরণপোষণ চলে প্রাকৃতিক উৎসের এ কুঁচিয়া মাছ ধরেই। ফাল্গুন মাস থেকে মূলত কুঁচিয়া ধরার অভিযান শুরু হয়। চলে আশ্বিন মাস পর্যন্ত।  তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দিনে ৫/৬ কেজি কুঁচিয়া ধরতে পারি। অন্য পেশার চেয়ে এ পেশায় ভালো আয় হচ্ছে বিদেশে কুঁচিয়ার অনেক চাহিদা। দামও অনেক বেশি। কেজি ৩১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কুইচা বিক্রি করে ভালোই সংসার চলছে। খোকন বিশ্বাস আরও বলেন, দেশের প্রায় সব স্বাদুপানির জলাশয়েই যেমন- বিল, হাওর-বাঁওড়, ডোবা-নালায় কুঁচিয়া মাছ পাওয়া যায়। পানির অগভীর ও তীরবর্তী অংশ ও পাড়ে মাটির গর্তে এ মাছ থাকে। আগে অনেক পরিমাণে কুঁচিয়া পাওয়া যেত। বর্তমানে কুঁচিয়া অনেক কমে গেছে। জাজিরা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. রেজাউল শরীফ কালবেলাকে বলেন, প্রাকৃতিকভাবে জলাশয়, ডোবা বা পুকুরে প্রচুর কুঁইচা জন্মায়। বিদেশে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আর এসব কুঁইচা শিকার করে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করছেন। এতে বেকারত্ব দূর করাও সম্ভব। তবে যেসব কুইচা প্রাকৃতিকভাবে জলাশয়ে জন্ম নেয় এগুলো এখন বিলুপ্তপ্রায়। জাজিরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাদিয়া ইসলাম লুনা কালবেলাকে বলেন, কুইচা মাছ ধরে বিক্রি করে অনেকেই অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। বিদেশে এর চাহিদা ব্যাপক। বাণিজ্যিকভাবে কুঁইচা চাষ করা গেলেও সরকারি উদ্যোগে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করা হলে জাতীয় অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকার পাশাপাশি কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে।
২০ মে, ২০২৪

অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে দাঁড়িয়ে আলোকিত করছেন ডুবন্ত সংসার
নারী মানে একজন মা, কন্যা, বোনসহ বিভিন্ন সম্পর্কের বন্ধন। এ সম্পর্কের মাঝে আছে অনেক মধুরতা, আবেগ, আনন্দ ও সুখের ছায়া। আবার এই নারীরাই অর্থনৈতিক মুক্তির তাগিদে প্রতিদিন ঘরে-বাইরে নিরলস সংগ্রাম করছেন স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য। আজ সাফল্যের পতাকা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন নারীরা। এই এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে রয়েছে অনেক শ্রম-ত্যাগ-সাহসিকতার গল্প। ফাতেমা বেগম একটি নাম একটি সংগ্রামী জীবনের আলোকিত গল্প, কখনো হারিয়ে না যাওয়া মায়ের জীবন্ত এক ছবি। ফাতেমা শত হতাশা নিয়ে বেঁচে থাকা একজন অদম্য নারী, যিনি হতাশায় ডুবে না থেকে বারবার উঠে দাড়িয়েছেন এক নতুন উদ্যমে নিয়ে। ফাতেমা ভোরের সূর্যের মতো আলোকিত করেছেন অসহায় স্বামীর ডুবন্ত সংসার। ফাতেমা একাধারে একজন স্ত্রী, একজন মা। তিনি নিজে হাসতে জানেন না কিন্তু চার মেয়েকে হাসতে শিখিয়েছেন। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে দাঁড়িয়ে হিমালয়ের পর্বতসম দুঃখ থাকা সত্ত্বেও নিজে কখনো দুঃখের জলে হারিয়ে যাননি। শত কষ্টের মাঝেও একজন যোদ্ধার মতো করে শুধু যুদ্ধ করে গেছেন। জীবনে কখনো সুখ খুঁজতে যাননি শুধু দুঃখগুলো সঙ্গী করে এগিয়ে গেছেন। ফাতেমা শুধুমাত্র তার সংসার ও তার মেয়েদের মাঝে সুখ খুজেছেন। ফাতেমা সুখ পাখিটা কখনো খুজে পেয়েছেন কিন্তু ছুতে পারেননি শুধু অপেক্ষায় আছেন সেই পাখির। যাকে তিনি একদিন ছুয়ে দেখবেন আর নিজের মতো করে লালন-পালন করবেন। ফাতেমা বেগমের স্বামী খলিলুর রহমান ও চার মেয়েকে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার দক্ষিণ ইউনিয়নের হীরাপুর গ্রামে বসবাস করেন। যে গ্রামটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্ত লাগোয়া একটি গ্রাম। অসুস্থ স্বামী খলিলুর রহমান পেশায় একজন রিকশা চালক। অভাবের সংসার তাই কখনো নিজের টাকায় একটি রিকশার মালিক হতে পারেনি। মানুষের রিকশা ভাড়ায় চালান, মালিকের টাকা দিয়ে বাকি যা থাকে তাই নিয়ে বাড়ি ফেরেন। তার ওপর নিজের অসুস্থতার জন্য নিয়মিত রিকশাও চালাতে পারেন না। অসুস্থ খলিলুর রহমানকে নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। অভাবের সংসার তার ওপর এই ওষুধ যেন এক আতংকের নাম। ফাতেমা বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শশুড়ের রেখে যাওয়া সামান্য জায়গাতে দোচালা একটি মাটির ঘর যা ফাতেমার একমাত্র সম্বল। অসুস্থ স্বামীর সংসারে অভাব অনটনের কথা চিন্তা করে তিনি একটি সেলাই মেশিন কিনে প্রতিবেশিদের কাপড়-চোপড় সেলাই করেন।  ঈদের সময় যখন কাজ বেশি থাকে তখন সারাদিন সংসারের কাজ সেড়ে রাত জেগে কাপড় সেলাই করেন। পাশাপাশি হাসঁ-মুরগি পালন করেন আবার কখনো অন্যের জায়গায় সবজি চাষ করেন। এত পরিশ্রম করেও ফাতেমা কখনো সংসার, সন্তানদের প্রতি বিরক্ত হননি। ফাতেমাকে ক্লান্তি কখনো দমিয়ে রাখতে পারেনি। এভাবেই চলছে ফাতেমার পথ চলা, কখন গন্তব্যে পৌঁছাবে তা তিনি নিজে কখনো বলতে পারেনি। তবে এটুকু ফাতেমা জানে যে তাকে আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। তিনি পথ যদি দুর্গম পাহাড় কিংবা বিশাল জলরাশির এক নদী কিংবা অন্ধকারাচ্ছন্ন কোন পথ সে যাই হোক। ফাতেমা ক্লান্ত হয়ে চলতে জানে কিন্তু ক্লান্ত হয়ে বসে থাকতে জানেনা। আরও দেখা যায়, ফাতেমা বেগম ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বাবার দৈন্নতার সংসারে খুব বেশি লেখাপড়া করতে পারেনি। নিজের প্রচেষ্টায় কোন রকমে এসএসসি পর্যন্ত গিয়ে থেমে যেতে হয়েছিল। তাই তিনি তার মেয়েদের লেখাপড়ার ব্যপারে খুবই সচেতন। তার ৪ মেয়ে। অভাবের সংসারেও মেয়েদের পড়ালেখা চালিয়ে যান। সন্তানদের নিয়ে ফাতেমা স্বপ্ন দেখে একদিন তার মেয়েরা লেখাপড়া করে চাকরি করবে। নিজেদেরকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করবে। আর সেই স্বপ্নই ফাতেমার মাঝে এক নতুন আশার প্রদীপ জ্বালায়। ফাতেমার চার মেয়ে, বড় মেয়ে সাবিনা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মাষ্টার্স শেষ করে কিছুদিন নিজের বিদ্যাপীঠ হীরাপুর শহীদ নোয়াব মেমোরিয়্যাল উচ্চ বিদ্যালয়ে চুক্তি ভিত্তিক শিক্ষকতা করছেন। বর্তমানে একটি এজেন্ট ব্যাংকে কর্মরত। দ্বিতীয় মেয়ে মাহমুদা চিনাইর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অর্নাস কলেজ থেকে অনার্স শেষ করে বর্তমানে একটি ইউনিয়ন পরিষদের সহকারী সচিব পদে কর্মরত। তৃতীয় মেয়ে ফারজানা চিনাইর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অনার্স কলেজে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত এবং চতুর্থ মেয়ে সানজিদা হীরাপুর শহীদ নোয়াব মেমোরিয়্যাল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। অদম্য এ নারী গত ২০২১ সালে সফল জননীর স্বীকৃতিস্বরূপ উপজেলা মহিলা অধিদপ্তর থেকে জয়িতা নির্বাচিত হন।  হীরাপুর শহীদ নোয়াব মেমোরিয়্যাল উচ্চ বিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক এসএম রফিকুল ইসলাম বলেন, ফাতেমার চার মেয়েই আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থী। তারা ছাত্রী হিসেবে খুবই মেধাবী ও পরিশ্রমি। তারা ক্লাসে সবসময় মনযোগী ছিল ও স্কুলের বার্ষিক পরিক্ষাগুলোতে তাদের স্থান সবসময় সেরাদের মধ্যে ছিল। সর্বোপরি তারা আমাদের স্কুলের গর্ব। ফাতেমা বেগমের বিষয়ে আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. আয়েত আলী বলেন, ফাতেমা বেগম অবিরাম জীবন যুদ্ধে হার না মানা এক নারী তিনি। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে প্রতিনিয়ত বেঁচে আছেন। ফাতেমা বেগম অনেক কষ্ট করে সংসার সামলে মেয়েদেরকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। মেয়েরা কষ্ট করে অনেকদূর এগিয়ে গেছে। ফাতেমা বেগম একজন সফল নারী, সফল মা। নারীদের জন্য তিনি একজন অনুপ্রেরণা।
১০ মে, ২০২৪
X