গাজীপুরে দুই পোশাক কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ
গাজীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে দুটি পোশাক কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। বুধবার (২৭ মার্চ) সকালে স্থানীয় টিআরজেড গার্মেন্টস ও ক্রস লাইন কারখানায় কয়েক হাজার শ্রমিক দাবি আদায়ে কর্মবিরতি করে বিক্ষোভ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে শিল্প পুলিশ। পুলিশ ও আন্দোলনরত শ্রমিক সূত্রে জানা গেছে, সকালে গাছা এলাকায় টিআরজেড গার্মেন্টসের অন্তত ২০০০ শ্রমিক তাদের দুই মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে কারখানার সামনে অবস্থান করে বিক্ষোভ শুরু করে। তবে এ সময় কারখানা কর্তৃপক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি। এর আগে গত ২১ মার্চ শ্রমিকরা আন্দোলনে নামলে তাদের বেতন পরিশোধের জন্য ২৭ মার্চ তারিখ ঘোষণা করে মালিকপক্ষ। তখন কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের ছয়দিনের ছুটি ঘোষণা করে নোটিশ দেয়। আন্দোলনরত শ্রমিকরা বলেন, তাদের দুই মাসের বকেয়া বেতন পাওনা রয়েছে। কিন্তু মালিকপক্ষ বেতন, ভাতা ও  ঈদ বোনাস না দিয়ে টালবাহানা করছে। বুধবার তাদের বেতন ভাতা পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু মালিকপক্ষ কয়েকবার তারিখ দিয়েও তাদের কথা রাখছে না। তাই বাধ্য হয়ে তাদের আন্দোলনে নামতে হয়েছে। এদিকে, বকেয়া তিন মাসের বেতনের দাবিতে টঙ্গী এলাকায় কর্মবিরতি করে বিক্ষোভ করছে ক্রস লাইন কারখানার শ্রমিকরা। সকাল থেকে কারখানা এলাকায় তারা এ আন্দোলন করছে। গাজীপুর শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মোশাররফ হোসেন  বলেন, সকালে শ্রমিকদের দুই মাসের এবং স্টাফদের তিন মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকরা আন্দোলনে নামে। বিষয়টি সমাধানে মালিকপক্ষ ও বিজিএমইএর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
২৭ মার্চ, ২০২৪

ঈদে শ্রমিক অসন্তোষ হবে না
তৈরি পোশাক শিল্প শ্রমিকদের নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা করা হয় গত বছরের নভেম্বরে। ৫৬ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ডিসেম্বরে বাস্তবায়নের পর এবার প্রথম ঈদ উদযাপন করছেন শ্রমিকরা। এ নিয়ে মালিকপক্ষ কিছুটা অর্থ চাপে থাকলেও প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে খাতসংশ্লিষ্ট সমিতির পক্ষ থেকে সদস্যদের মার্চের বেতন ও ঈদের বোনাস বিষয়ে সুবিধা-অসুবিধা জানাতে বলা হয়েছে। তবে বাড়তি টাকা পরিশোধে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নগদ সহায়তার অর্থ ছাড় দিতে অনুরোধ জানিয়েছেন মালিকরা। পাশাপাশি শ্রমিক সংগঠন ও শ্রমিকদের সহযোগিতা আশা করছেন। শ্রমিক নেতারা বলছেন, সম্প্রতি সরকার, মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে সভা হয়েছে। কোনো শ্রমিক বেতন-বোনাস ছাড়া না বাড়ি যাবেন না বলে সভায় আশ্বস্ত করেছেন মালিকরা। কোথাও সমস্যা হলেই তা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়া ঈদের আগেই শ্রমিকদের প্রাপ্য মজুরি ও বোনাস পরিশোধের জন্য কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। আগামী ১ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত সভা থেকে পরবর্তী নির্দেশনা দেওয়া হবে বলেও জানা গেছে। শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ২২ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরির দাবি থাকলেও ব্যাপক আন্দোলনের মধ্যে তা ৮ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। শ্রমিক পক্ষের কাঙ্ক্ষিত মজুরি নির্ধারণ না হলেও আগের ৭ গ্রেড থেকে তিনটি বিলুপ্ত করে ৪ গ্রেডে মোট ৬২ শ্রেণির শ্রমিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। নতুন বেতন কাঠামোয় শিক্ষানবিশ শ্রমিকদের চতুর্থ গ্রেডে বেতন সাড়ে ১২ হাজার টাকা। এ ছাড়া প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় গ্রেড বা অভিজ্ঞ শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম গ্রেডে ২৮৫ টাকা বেড়ে হয় ১৫ হাজার ৩৫ টাকা। দ্বিতীয় গ্রেডে ১২৩ টাকা বেড়ে ১৪ হাজার ২৭৩ এবং চতুর্থ গ্রেড বিলুপ্ত করে তৃতীয় গ্রেডের সমান অর্থাৎ ১৩ হাজার ৫৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিজিএমইএর ফারুক হাসান কালবেলাকে বলেন, সবার সহযোগিতা থাকলে ঈদে কোনো সমস্যা বা অসন্তোষের আশঙ্কা নেই। তবে নতুন মজুরি কাঠামোর জন্য মালিকদের ওপর বাড়তি চাপ রয়েছে। এজন্য আমরা ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংককে আটকে থাকা নগদ সহায়তার টাকা ছাড়ের জন্য বিশেষ অনুরোধ জানাচ্ছি। কোনো কারখানায় যেন সমস্যা না হয়, সে বিষয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখা হচ্ছে। আরেকটি বিষয় হলো, শ্রমিকদের ছুটি। এটিও নিয়মতান্ত্রিকভাবে হবে। আমরা চাই, শ্রমিক ভাইবোনরা যেন আত্মীয়দের সঙ্গে ভালো সময় কাটাতে পারেন, সেক্ষেত্রে মালিকরা আন্তরিকতার সঙ্গে তাদের ছুটি সমন্বয় করেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। আশা করছি, শ্রমিকরা যথা সময়ে প্রত্যাশিত বেতন-বোনাস পাবেন। দু-একটি কারখানায় সমস্যা থাকলে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে। শ্রমিক নেতা সিরাজুল ইসলাম রনি কালবেলাকে জানান, মজুরি বৃদ্ধির হার বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে পুরোপরি সামঞ্জস্য না হলেও শ্রমিকরা কাজ করছেন। সামনে ঈদ। আশা করছি, মালিকপক্ষ শ্রমিকদের সব পাওনা ঈদের আগেই পরিশোধ করবেন। এরই মধ্যে সরকার ও মালিকপক্ষ আমাদের এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছে। আরেকটি বিষয়, ঈদ কেন্দ্র করে যেন কোনো শ্রমিক চাকরি না হারান। বিষয়টিতে সরকারের পক্ষ থেকেও কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
২৫ মার্চ, ২০২৪

নির্বাচন, শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে আগ্রহ ইইউ প্রতিনিধিদলের
বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, পোশাক খাতে চলমান শ্রমিক অসন্তোষ ও শ্রম অধিকার এবং সার্বিকভাবে মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছে ঢাকায় সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদল। গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সঙ্গে বৈঠক করে তারা এসব বিষয়ে আগ্রহ দেখান। মুখ্য সচিব তাদের কাছে সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন। একই দিন প্রতিনিধিদলটি তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে ইইউ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন ইউরোপিয়ান এক্সটারনাল অ্যাকশন সার্ভিসের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর পাওলা পামপালোনি। বৈঠকে ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি উপস্থিত ছিলেন। মুখ্য সচিবের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়বস্তু তুলে ধরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মুখ্য সচিব শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য গৃহীত বিভিন্ন ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রতিনিধিদলকে অবহিত করেন। চলমান আন্দোলন নিয়ে তিনি জানান, এ জন্য শ্রমিকরা দায়ী নয় এবং এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। একটি মহল নির্বাচনের আগে নিরীহ শ্রমিকদের ব্যবহার করে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। মুখ্য সচিব জানান, মানবাধিকার, শ্রমাধিকার ও কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিজিএমইএর সঙ্গে বৈঠকে প্রতিনিধিদলটি ট্রেড ইউনিয়ন পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চায়। আর শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে আলোচনা করেন। সফররত প্রতিনিধিদলটি কারখানা মালিক ও শ্রমিক নেতাদের জানান, ইইউ চায় বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক অব্যাহত থাকুক এবং আরও বিকশিত হোক। প্রতিনিধিদলটি আজ বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী ও শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবে। বাণিজ্য সচিব, পররাষ্ট্র সচিব এবং শ্রম সচিবের সঙ্গেও পৃথক বৈঠক করবে দলটি।
১৫ নভেম্বর, ২০২৩
X