ওম বিড়লা ফের লোকসভার স্পিকার
ভারতের অষ্টাদশ লোকসভার প্রথম অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে গতকাল কণ্ঠভোটে স্পিকার নির্বাচিত হন বিজেপির ওম বিড়লা। সর্বশেষ লোকসভায়ও তিনি স্পিকার ছিলেন। নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের সদস্যরাও অভিনন্দন জানান। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী তাকে স্পিকারের আসনে নিয়ে গিয়ে বসান। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে করমর্দন করেন রাহুল। এটি ভারতের সাম্প্রতিক ইতিহাসে বেশ বিরল দৃশ্য। এতে করে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সম্প্রীতির একটা আবহ তৈরি হলেও সে ধারণা ভেঙে যেতে বেশি সময় লাগেনি। কারণ এরপরই নবনির্বাচিত স্পিকারের একটি বিবৃতি নিয়ে অধিবেশনে শুরু হয় তুমুল হট্টগোল। মুলতবি ঘোষণা করা হয় অধিবেশন। খবর এনডিটিভির। গতকাল বুধবার সকাল ১১টায় লোকসভা অধিবেশনের শুরুতে কণ্ঠভোটে স্পিকার নির্বাচিত হন রাজস্থানের কোটা-বুন্দি কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত বিজেপি প্রার্থী ওম বিড়লা। সপ্তদশ লোকসভায়ও তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন সর্বসম্মতভাবে। এবার জিতলেন ভোটাভুটির মধ্য দিয়ে। বিরোধী প্রার্থী কে সুরেশকে কণ্ঠভোটে হারান তিনি। প্রথা অনুযায়ী স্পিকার নির্বাচন এবার সর্বসম্মতভাবে হয়নি। ডেপুটি স্পিকারের পদ বিরোধীদের দেওয়া হবে—সরকার সেই আশ্বাস না দেওয়ায় বিরোধীরা এই নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছিলেন। কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, কণ্ঠভোটের পর বিরোধীরা ‘ডিভিশন’ দাবি করেননি। অর্থাৎ কোন পক্ষে কতজনের সমর্থন রয়েছে, তা জানতে কাগজে ভোট দেওয়ার দাবি জানাননি। ফলে কণ্ঠভোটেই ওম বিড়লাকে জয়ী ঘোষণা করেন প্রোটেম স্পিকার মহতাব। এরপরই ভারতের সাম্প্রতিক ইতিহাসে এক বিরল দৃশ্য দেখা যায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও সংসদীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজুর সঙ্গে বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধীও ওম বিড়লাকে তার আসনে পৌঁছে দেন। সবাই সদ্য নির্বাচিত স্পিকারকে অভিনন্দন জানান। প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে করমর্দন করেন এবারের লোকসভায় বিরোধী নেতার দায়িত্ব নেওয়া রাহুল গান্ধী। লোকসভায় সম্প্রীতির এ দৃশ্য দেখে সবাই যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। কিন্তু সেই স্বস্তি উধাও হয়ে গেল কিছুক্ষণ পরই। অভিনন্দন পর্ব শেষ হওয়ার পর ওম বিড়লা ১৯৭৫ সালে জারি হওয়া জরুরি অবস্থার উল্লেখ করে এক দীর্ঘ বিবৃতি পাঠ করেন। তাতে কীভাবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ব্যক্তিস্বাধীনতা ও মানবাধিকার হরণ করেছিলেন, দেশকে জেলখানা বানিয়ে দিয়েছিলেন, বাবাসাহেব আম্বেদকরের তৈরি সংবিধান পদে পদে লঙ্ঘন করেছিলেন, সেসব বিস্তারিত উল্লেখ করে তাকে ‘স্বৈরাচারী’ আখ্যা দেন এবং ওই সময়কে দেশের ইতিহাসের ‘কালো অধ্যায়’ বলে বর্ণনা করেন। কংগ্রেসকে আক্রমণ করে স্পিকার বলেন, সে সময় তারা জোর করে বন্ধ্যত্ব করিয়েছিল। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা যাতে আদালতে যেতে না পারেন, তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সংবাদপত্রের ওপর জারি করা হয়েছিল যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা। আট মিনিটের দীর্ঘ বিবৃতি পাঠ শেষে জরুরি অবস্থা জারির বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণের পর স্পিকার সেই সময় প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দুই মিনিট নীরবতা পালনের ডাক দেন। তার পরই সারা দিনের মতো মুলতবি করে দেন লোকসভা। স্পিকার বিবৃতি পাঠ শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই বিরোধীরা তীব্র প্রতিবাদ করতে থাকেন। শুরু হয় স্লোগান। স্পিকার ও সরকারের মনোভাবের কড়া নিন্দা করে কংগ্রেসসহ বিরোধী সদস্যরা বলতে থাকেন, ৫০ বছর আগের ঘটনা টেনে এই সরকার তাদের অঘোষিত জরুরি অবস্থা চাপা দিতে চাইছে। জরুরি অবস্থায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে নীরবতা পালনে সরকার পক্ষের সদস্যরা উঠে দাঁড়ালেও বিরোধীরা প্রতিবাদে মুখর থাকেন। ১৫ সেকেন্ড নীরবতা পালন করেই স্পিকার ওম বিড়লা সারা দিনের মতো অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করেন। স্পিকারের ওই বিবৃতির পর এটা স্পষ্ট যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সবাইকে নিয়ে দেশ পরিচালনার যে বার্তা প্রথম দিন দিয়েছিলেন, তা মূলত কথার কথা। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় সরকার যে অনেক নমনীয় থাকবে, সে ধারণাও ভুল।
২৭ জুন, ২০২৪
X