দেশে রাজনীতির সুষ্ঠু পরিবেশ নেই : মুজিবুল হক চুন্নু 
দেশে রাজনীতির কোনো সুষ্ঠু পরিবেশ নেই বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু। রোববার (২ জুন) সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টির কাকরাইলস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি। জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, দেশে কোনো সুষ্ঠু রাজনীতির পরিবেশ নেই। শাসক দলের টাকা, প্রশাসনের দৌরাত্ম্য, দলীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দুর্বৃত্তায়নে অন্যকোনো দল টিকে থাকতে পারছে না। বর্তমানে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা এত টাকা খরচ করছে তার সামনে অন্যকোনো প্রার্থী দাঁড়ানোর মতো সাহস ও ক্ষমতা নেই।   তিনি বলেন, ব্যাংকের টাকা লুটপাট হয়ে গেছে, ব্যাংক খালি। সাবেক অর্থমন্ত্রীসহ চারজন এমপির স্ত্রী-কন্যাদের নামে রিক্রুটিং এজেন্সি করে ম্যানপাওয়ার লাইসেন্স করেছেন। মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য সরকার ৭০-৮০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা সত্ত্বেও রিক্রুটিং এজেন্সি ৬-৭ লাখ টাকা নেওয়ার পরও ভুক্তভোগীদের মালয়েশিয়া পাঠাতে পারেনি। এসব রিক্রুটিং এজেন্সি নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।  বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ বলেন, সাবেক আইজিপি সারা দেশের আলোচিত ব্যক্তি কীভাবে ৭০-৮০ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে তুলে দেশান্তরী হলেন, তাও আবার স্বপরিবারে প্রকাশ্যে ইমিগ্রেশন দিয়ে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কীভাবে বলেন আমরা জানি না।   তিনি বলেন, বিদ্যুৎ খাতে হরিলুট হচ্ছে। উৎপাদন ৮ হাজার মেগাওয়াট, প্রয়োজন ১৪ হাজার মেগাওয়াট। ২৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জরিমানা দেন ৪৬ হাজার কোটি টাকা, জরিমানা দেওয়ার টাকা আছে কিন্তু বিদ্যুৎ কেনার টাকা নাই। কোনো সেন্ডিকেট সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।   মহাসচিব আরও বলেন, মানুষ এখন যাবে কোথায়? মানুষ এত কষ্ট সহ্য করতে পারছে না। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশের জন্য ভালো কিছু করতে পারেনি। তাই বিকল্প একটি দল দেশ পরিচালনার জন্য খুঁজছে। পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের উন্নয়নের কথা স্মরণ করে জি এম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির কথা ভাবছে। এ সময় জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির ফরম বিতরণের শুভ উদ্বোধন করেন তিনি।  জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির আহ্বায়ক আলমগীর সিকদার লোটনের সভাপতিত্বে এবং জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সদস্য সচিব মো. হেলাল উদ্দিনের সঞ্চালনায় ফরম বিতরণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব অ্যাড. মো. রেজাউল ইসলাম ভূঞা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য জহিরুল আলম রুবেল, ভাইস-চেয়ারম্যান সালাহ্ উদ্দিন আহমেদ মুক্তি, সাংগঠনিক সম্পাদক নির্মল চন্দ্র দাস, এ বি এম লিয়াকত হোসেন চাকলাদার, মো. হুমায়ুন খান, দপ্তর সম্পাদক সুলতান মাহমুদ, এম এ রাজ্জাক খান, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিরু, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক এম এ সোবহান, মো. নজরুল ইসলাম, আবু সাদেক বাদল, যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম, সমরেশ মণ্ডল মানিক, যুগ্ম ধর্মবিষয়ক সম্পাদক হাফেজ কারি ইছারুহুল্লাহ আসিফ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য নূরুচ্ছাফা সরকার, জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক নেতাদের মধ্যে গোলাম মোস্তফা, লোকমান ভূঁইয়া রাজু, ফারুক আহমেদ, শাহজাহান মিয়া, মঞ্জুর ভূঁইয়া, ডাক্তার আলফাজ উদ্দিন, শাহ মাইনুল ইসলাম আলমগীর, ইকবাল আহমেদ, জাহিদুল ইসলাম, ইউসুফ, জাতীয় ছাত্রসমাজের সভাপতি মো. আল মামুন, জাতীয় মটর শ্রমিক পার্টির আহ্বায়ক মো. মেহেদী হাসান শিপন, সদস্য সচিব আব্দুর রহিম প্রমুখ। 
০২ জুন, ২০২৪

দুর্ধর্ষ চরমপন্থির অনেকেই রাজনীতির ছত্রছায়ায়
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এক সময়ের আলোচিত গোপন রাজনৈতিক দলগুলোর ‘চরমপন্থি’ নেতার অনেকেই এখন হয়ে উঠেছেন প্রকাশ্য রাজনীতির দাপুটে চরিত্র। কেউ কেউ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। দলীয় সমর্থনে হয়েছেন জনপ্রতিনিধিও। তবে রাজনীতিতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় পুরোনো পন্থা কাজে লাগাতে পিছপা হন না তাদের অনেকেই। ওই অঞ্চলের অন্তত দুই ডজন রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে চরমপন্থি গ্রুপগুলোর সরাসরি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে তথ্য রয়েছে পুলিশের কাছে। একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাও দিনদুপুরে খুন হয়েছেন চরমপন্থিদের হাতে। প্রতিপক্ষকে দমনের কাজে এসব চরমপন্থিকে ব্যবহার করেন রাজনৈতিক নেতারা। আবার কখনো চরমপন্থি নেতা নিজেই বনে গেছেন রাজনীতিবিদ। আবার এক সময় মানুষের কাছে ত্রাস হিসেবে পরিচিত শীর্ষ চরমপন্থি নেতা এখন প্রতিষ্ঠিত ঠিকাদার। খুলনায় চরমপন্থিদের উত্থান: ১৯৭১ সালে ভারতের চারু মজুমদারের অনুসারীরা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে নকশালবাড়ী আন্দোলন শুরু করে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টিসহ নানা নামে তারা সশস্ত্র তৎপরতা চালায়। তবে আদর্শিক বা স্বার্থের দ্বন্দ্বে এই গ্রুপগুলোতে ভাঙন ছিল নিয়মিত ব্যাপার। কেউ কেউ বাম রাজনীতির তাত্ত্বিক অবস্থান ধরে রাখলেও বিচ্যুত হয়ে পড়ে অনেকেই। আদর্শিক অবস্থানের পরিবর্তে অস্ত্র ব্যবহার করে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীগত লাভের দিকে ঝুঁকে পড়ে কেউ কেউ। এরাই বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। নব্বই দশকের শুরু থেকে খুলনা অঞ্চলে বেশ কয়েকটি চরমপন্থি সংগঠন বেপরোয়া হয়ে ওঠে। হত্যা, চাঁদাবাজি, লুটতরাজ ছিল তখনকার নিত্যদিনের ঘটনা। এর মধ্যে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি, বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি, পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল) জনযুদ্ধ, নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টিসহ কয়েকটি দলের বেপরোয়া কার্যক্রম মানুষকে দিশেহারা করে তুলেছিল। নব্বই দশকে আদালত চত্বর থেকে ফিল্মি স্টাইলে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির ক্যাডার তপন ওরফে দাদা তপনকে ছিনিয়ে নেওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের তৎপরতা শুরু হয়। এরপর তার নেতৃত্বে জনযুদ্ধ নামে আরেকটি চরমপন্থি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। একসময় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে তপনের মৃত্যু হয়। অন্যদিকে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক নেতা আব্দুর রশিদ মালিথা ওরফে তাপু খুলনার বেশ কয়েকটি উপজেলা নিয়ে তাদের তৎপরতা চালান। তিনিও একসময় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। এরপর ওই সংগঠনের তাত্ত্বিক নেতা মোফাখখার চৌধুরী ওরফে মধু বাবু পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। ডুমুরিয়া উপজেলার মনোরঞ্জন গোসাই ওরফে মৃণাল আশির দশকে চরমপন্থি সংগঠনে যোগ দিলেও ১৫-১৬ বছর পর বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলেন। তিনি এবং তার সহযোগী আলম ভারতে পুলিশের হাতে নিহত হন। তবে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খুলনা অঞ্চলে বড় ধরনের অভিযান পরিচালনা করে অনেকটাই কোণঠাসা করে ফেলে এই চরমপন্থিদের। আওয়ামী লীগেই বেশি ভিড়ছে চরমপন্থিরা: ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে সম্প্রতি ভারতে নৃশংসভাবে খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার সৈয়দ আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চরমপন্থি নেটওয়ার্কের অন্যতম শীর্ষ নেতা। এলাকাবাসীর কাছে এক আতঙ্কের নাম শিমুল। এলাকাবাসী বলছেন, রাজশাহীতে থাকাকালীন শিমুলের যাতায়াত ছিল ঝিনাইদহে। সেখানে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল-জনযুদ্ধ) শীর্ষ নেতা আব্দুর রশিদ মালিথা ওরফে দাদা তপনের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। একাধিকবার জেল খাটার কারণে লেখাপড়া বন্ধ করে চরমপন্থি দলে যোগ দেন শিমুল। দায়িত্ব পান খুলনা অঞ্চলের। এরপর তিনি ও তার পরিবারের অন্য সদস্যরা হয়ে ওঠেন আরও বেপরোয়া। শিমুলের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমীন মুক্তা খুলনা জেলা পরিষদের সদস্য। এ ছাড়া তার আপন ভাই চরমপন্থি দলের এক সময়কার নেতা শিপলু ভূঁইয়া এখন খুলনার ফুলতলা উপজেলার দামোদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি ২০১৬ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় তার পরিচয় পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (জনযুদ্ধ) খুলনার আঞ্চলিক নেতা। চরমপন্থিদের নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার ওই তালিকার ৩ নম্বরে রয়েছে শিপলু ভূঁইয়ার নাম। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ প্রায় এক ডজন মামলা রয়েছে। একটি মামলায় তার ৩২ বছরের সাজাও হয়েছে। শিপলু ভূঁইয়া ইউপি চেয়ারম্যান হওয়ার পর ভাই শিমুলের পাসপোর্টে বসিয়ে দেওয়া হয় আমানুল্লাহ নামটি। ভুয়া পাসপোর্ট তৈরি করতে ওই নামে জাতীয় পরিচয়পত্রও বানিয়ে নেন শিমুল। আমানুল্লাহ নামের পাসপোর্ট ব্যবহার করেই তিনি ভারতে যাওয়া-আসা করতেন। শিমুল থেকে আমানুল্লাহ হয়ে ওঠা এবং কীভাবে তিনি ভুয়া পাসপোর্ট ও ভুয়া এনআইডি তৈরি করলেন—এগুলোই এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে বড় প্রশ্ন। ২০১৯ সালে শিপলু ভূঁইয়ার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তখন তিনি দাবি করেছিলেন, তার ভাই শিমুল ভূঁইয়া চরমপন্থি দলে জড়িত ছিলেন। তাকেও সেই দলে নেওয়ার চেষ্টা করলেও তিনি যাননি। জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত এসএম মোস্তফা রশীদী সুজার হাত ধরে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ফুলতলা উপজেলার তালিকাভুক্ত চরমপন্থিদের মধ্যে ১০ থেকে ১৫ জন এখন শিপলুর সঙ্গে আছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার শিপলু ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। ডুমুরিয়া উপজেলার চরমপন্থিদের তালিকার ২১ নম্বরে আছে অজয় সরকারের নাম। বর্তমানে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে হয়েছেন খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক। দলীয় সমর্থনে জেলা পরিষদের সদস্য হয়েছেন তিনি। নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য অজয় সরকারের চরমপন্থি যোগাযোগ খুলনায় ওপেন সিক্রেট। অজয় সরকার বলেন, ‘২০০৩-০৪ সাল থেকে আমাকে চরমপন্থি বলা হচ্ছে। আসলে আমি সেভাবে কখনো জড়িত ছিলাম না। জামায়াত এই প্রচার করছে।’ অজয় সরকার বলেন, আমি আওয়ামী লীগ ও এলাকার মানুষের জন্য কাজ করছি, কাজ করে যাব। চরমপন্থিদের তালিকার ১০ নম্বরে আছে রফিক জোয়ারদারের নাম। তিনি এখন ডুমুরিয়া উপজেলায় একটি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ওই তালিকার ১২ নম্বরে থাকা শফিকুল ইসলাম এখন ডুমুরিয়া উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক। খুলনা নগরীর দৌলতপুর দেয়ানা এলাকার গাজী কামরুল ইসলাম নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতা। তিনি হত্যাসহ বেশ কয়েকটি মামলার আসামি। দীর্ঘদিন জেল খেটে জামিনে বেরিয়ে এখন নিজ বাড়িতে থাকেন। গাজী কামরুল সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী এবং সংরক্ষিত সাংসদ মন্নুজান সুফিয়ানের অনুসারী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। চরমপন্থিদের আওয়ামী লীগে যোগদানের ব্যাপারে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিত অধিকারী কালবেলাকে বলেন, ‘তাদের নাম আগে তালিকায় ছিল কি না আমি জানি না। সুতরাং এ ব্যাপারে আমার কোনো বক্তব্য নেই।’ খুলনা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘নানান লেবাসে অনেকের রাজনীতিতে আসার ব্যাপারে আমরাও বিভিন্ন সময় শুনেছি। পুলিশ সর্বদা সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। জেলার মানুষের শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের জন্য কোনো সমস্যা নেই।’ চরমপন্থি মুকুল প্রতিষ্ঠিত ঠিকাদার: আমিনুল ইসলাম মুকুল ৯০ দশকের শীর্ষ চরমপন্থি সন্ত্রাসী। শ্রমজীবী মুক্তি আন্দোলন থেকে গণমুক্তিফৌজের জনক তিনি। খুনখারাবির রাজনীতিতেও পটু। জাসদ গণবাহিনী তার প্রধান শত্রু হলেও এসব বাহিনীর অস্তিত্ব এখন নেই বললেই চলে। ২০০৪ সালের পর থেকে পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি, বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি, এমএল জনযুদ্ধ, কিংবা এমএল লাল পতাকার মতো অসংখ্য বাহিনী দমন করতে সক্ষম হয় র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বন্দুকযুদ্ধে শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুর পর ওইসব সংগঠনের নাম-নিশানাও মুছে যায়। তবে ওই দলগুলোর অনেক নেতা কিংবা সদস্য ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে চলে আসেন। হামিদুল রাশিদুল, গামা, মফিজদের মতো বাহিনীপ্রধানরা নিহত হলেও তাদের অনুসারীদের অনেকেই রয়ে যান। কারও কারও সংগ্রহে থাকা অস্ত্রশস্ত্রও তাদের নিয়ন্ত্রণেই থেকে গেছে। তাদের অনেকে পুরোনো পথ ছেড়ে প্রকাশ্য রাজনীতিতে এলেও সশস্ত্র লাইন ধরে রেখেছেন। টেন্ডারবাজি, হাট-ঘাট দখলসহ নানা ক্ষেত্রে চলছে সেই শক্তির ব্যবহার। চরমপন্থি নেতা আমিনুল ইসলাম মুকুল দেশের বাইরে আছেন। কিন্তু কুষ্টিয়া অঞ্চলে এখনো রয়ে গেছে তার প্রভাব। সৈকত এন্টারপ্রাইজের নামে তার রয়েছে ঠিকাদারি লাইসেন্স। ওই নামেই পরিচালিত হয় বিভিন্ন দপ্তরের ঠিকাদারি কাজ। বিশেষ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডে, বিএডিসি, শিক্ষা প্রকৌশল, এলজিইডিতে একচেটিয়ে আধিপত্য তার। একেক অফিসে একেকজনের দায়িত্ব দেওয়া আছে। মুকুল দেশের বাইরে অবস্থান করলেও ঠিকাদারি কাজের নিয়ন্ত্রণ তিনিই করেন। এভাবেই হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন বলে ধারণা করা হয়। তিনি এখন সামাজিক কর্মকাণ্ডেও যুক্ত হয়েছেন। তার টাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। কথিত আছে, মুকুলের এসব কাজে সহযোগী ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতারা। বিনিময়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া থেকে শুরু করে হাট-ঘাট দখলে ব্যবহার করেন তাদের। শুধু মুকুলই নয়, এক সময়ের চরমপন্থি দলের অধিকাংশ নেতা কিংবা সদস্যই বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় রয়েছেন। জাহাঙ্গীর কবির লিপ্টনও একজন ভয়ংকর সন্ত্রাসী। একসময় মুকুল শাহীনের ঘনিষ্ঠ সহচর থাকলেও তার এক আত্মীয় বকুল সওদাগর খুনের দায়ে মুকুলের সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয়। তারপর থেকেই প্রকাশ্যে অবস্থান নেয় লিপ্টন। মুকুলের অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন মাধ্যমে মুকুলকে হত্যার চেষ্টা করেও সফল হননি। একপর্যায়ে ভোল পাল্টে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত তাতে খুব বেশি সুবিধা করতে পারেননি। জানা গেছে, মুকুল নিজে সরাসরি রাজনীতি না করলেও ছাত্রলীগ ও যুবলীগের শতাধিক নেতাকর্মীকে নিয়ন্ত্রণ করেন। সরকারি দলের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও এরা মূলত মুকুলের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেন।
২৪ মে, ২০২৪

রাজনীতির বাণিজ্যিকীকরণ
গতকাল বুধবার উপজেলা নির্বাচনের প্রথম পর্ব শেষ হলো। এবারের উপজেলা নির্বাচন চার পর্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথম পর্বে ১৩৯টি উপজেলায় ভোট হলো। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কাউকে এবার দলীয় প্রতীক দেয়নি। ফলে প্রতিটি উপজেলায় দলের মধ্যে উন্মুক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। দল থেকে যে কেউ দাঁড়াতে পারবে, তবে মন্ত্রী-এমপিদের নিকট স্বজনরা যেন না দাঁড়ায়—দলের এ নির্দেশনাকে পাত্তা দেননি অনেক মন্ত্রী-এমপি। দলীয়ভাবে নির্বাচন হচ্ছে না, কিন্তু দল এত তৎপর কেন? একটি স্থানীয় নির্বাচন কেন্দ্র করে এত উত্তেজনাইবা কেন? কারণ হলো, ক্ষমতা ও অর্থ। এই প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে প্রায় ৭০ শতাংশ চেয়ারম্যান প্রার্থী ব্যবসায়ী। তাদের মধ্যে ৯৩ জনের এক কোটি টাকারও বেশি অস্থাবর ও তরল সম্পদ রয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানানো হয়। বলা হচ্ছে, মানুষ ভোটের প্রতি আগ্রহ কমিয়ে ফেলেছে, ভালো রাজনৈতিক চর্চা নেই, কিন্তু এরপরও রাজনীতির প্রতি একটা ভয়ংকর মোহ বা আকর্ষণ তৈরি হয়েছে। কারণ রাজনীতিই এখন ‘ভালো’ জীবিকা। যদি কেউ বিত্তশালী হতে চান, সমাজের সর্বনাশ করে নির্লজ্জভাবে অর্থ উপার্জন করতে চান, তাহলে সেটা রাজনীতি করেই সম্ভব। যদি কোনোভাবে একবার ভোটে জেতা যায়, তাহলে তো অর্থ উপার্জনের অগাধ সুযোগ। রাজনীতি, তাও যদি শাসক দলের রাজনীতি হয়, তাহলে সঙ্গে থাকবে রাজনৈতিক ক্ষমতা, অগাধ ‘মাতব্বরি’র লাইসেন্স, সব কুকর্ম ধুয়ে-মুছে সাফ করার ব্যবস্থা। আর কুকর্ম করলেইবা মনে রাখছে কে? এমনিতেই জনসাধারণের স্মৃতিশক্তি স্বল্পকালীন। দু-চার টাকা হাতে ধরিয়ে দিলেই তারা খুশি। এ-হেন রাজনীতি থেকে কে দূরে থাকতে চায়? আমরা কথায় কথায় বলি, ভালো ও শিক্ষিত মানুষের রাজনীতিতে আসা উচিত। তাতে রাজনৈতিক জগতের গুণগত উন্নতিসাধন হবে আর রাজনৈতিক দলগুলো দেশের স্বার্থে যথাযথ ও ঠিক পদক্ষেপ করতে পারবে। সমস্যা হলো, রাজনীতির উন্নতিসাধন তো দূরস্থান, বর্তমান রাজনীতির দুরবস্থা এমন যে, ভদ্রলোকের জন্য তা চারিত্রিক ও নৈতিক অবনমনের কারণ হতে পারে। রাজনীতির মূল কথা একটি আদর্শকে লালন করে ক্ষমতায় যাওয়া। ক্ষমতায় গিয়ে ওই আদর্শ বাস্তবায়ন। আদর্শ বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনকল্যাণ করা। মানুষের উপকার করা। কিন্তু এগুলো অনেক অনেক দিন আগের কথা। সেদিন এখন আর নেই। এখন যারা রাজনীতিতে আসেন তারা অধিকাংশই আখের গোছাতে আসেন। এজন্যই রাজনীতির মাঠে এখন ব্যবসায়ীদের রাজত্ব বা রাজনীতিকদের মধ্যে ব্যবসা দখলের অদম্য আগ্রহ। যারা ব্যাপক সমালোচনা করছেন, যারা দুঃখবোধ করছেন যে রাজনীতি আর প্রকৃত রাজনৈতিক নেতাদের হাতে থাকছে না, তারা তা করতেই পারেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ব্যবসার মধ্যে রাজনীতি নিজেই বিলীন হয়ে গেছে। টাকা দিয়ে মনোনয়ন কেনা গেলে ব্যবসায়ীরা কেন রাজনীতি করবেন না? কিংবা রাজনীতি করে সব ব্যবসা হাতিয়ে নেওয়া সম্ভব হলে কেন তারা দূরে থাকবেন? টাকা দিয়ে সবকিছু কেনাবেচা করা গেলে প্রার্থীদের কেন করা যাবে না? এ কারণেই মনোনয়নবাণিজ্য বাড়ছে, কারণ বেশি বেশি করে ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে ঢুকছেন বা রাজনীতিবিদরা ব্যবসা দখলে নিচ্ছেন। বছরের পর বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, আমাদের রাজনীতিকদের পেছনে ফেলে শিল্পপতি ও বড় ব্যবসায়ীরা সংসদে আসছেন। এখন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোও বাদ যাচ্ছে না। একটা প্রশ্ন হতে পারে যে, ব্যবসায়ীরা কেন ফুলটাইম রাজনীতির কাজে আসছেন? তাহলে ব্যবসা দেখে কে? সুবিধা আসলে অন্য জায়গায়। ক্ষমতার রাজনীতিতে ঢুকে পড়তে পারলেই শুধু সুবিধা আর সুবিধা। সংসদ সদস্য হলে বিনাশুল্কে গাড়ি আমদানিসহ নানা রকমের সরকারি সুবিধা। কিন্তু এটুকুর জন্য শুধু নয়, মর্যাদা বাড়ে কিন্তু তার চেয়ে বেশি বাড়ে ক্ষমতা। নিজেরাই আইনপ্রণেতা, তাই নিজেদের মতো করে আইন প্রণয়ন ও সংশোধন করতে পারেন তারা। স্থানীয় সরকার কাঠামো দখলেও সেই মানসিকতাই কাজ করছে। উন্নয়নের সব কাজ তাদের দখলে থাকবে আর কারও নয়। ক্ষমতা পাওয়া গেল, বাণিজ্য সুবিধা আরও বাড়ল। টিআইবি যে তথ্য উপস্থাপন করল দেখা যাচ্ছে, একজন প্রার্থীর আয় ১০ বছরে ১৮ হাজার গুণ বেড়েছে। এরকম করে অনেক জনপ্রতিনিধির আয়ই অস্বাভাবিক বেড়েছে। তবে হলফনামায় সঠিক তথ্য দেওয়া হয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে বলে মনে করে টিআইবি। কারণ অনেক প্রার্থী আয় খুবই কম দেখিয়েছেন। অনেক প্রার্থীর সম্পদ বৈধ আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না, তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে বলেও মনে করে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এত এত ধনী ব্যক্তির আগমন অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। উন্নয়নকাজ আছে। রাস্তা নির্মাণ, ব্রিজ নির্মাণ, হাসপাতাল নির্মাণ, সরকারি কেনাকাটা আছে। ঠিকাদার চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে যাবেন। আগে এরকম গণ্যমান্যদের বাসায় মানুষ যেত ফল-মিষ্টি নিয়ে। অনেকে মাছ, মুরগি, কিছু সবজি। এখন ডিজিটাল বাংলাদেশে টাকাই সবচেয়ে বড় উপহার। টাকার বিনিময়ে টেন্ডার নিয়ে আলোচনা হয়, ভাগবাটোয়ারা চূড়ান্ত হয়। দেশে যে কেউই রাজনীতিতে আসতে পারেন। তবে রাজনীতিতে কোন পেশার লোকজনের দাপট বাড়ছে বা রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ কাদের হাতে চলে যাচ্ছে সেটা অবশ্যই আলোচনা, পর্যালোচনা ও গবেষণার বিষয়। দেশের গণতন্ত্রের মান, অবস্থা ও এর ভবিষ্যতের সঙ্গে এর সম্পর্ক। সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ অনেক দিন আগে এমন একটা মন্তব্য করে বলেছিলেন, ‘রাজনীতি এখন ব্যবসায়ীদের পকেটে চলে গেছে। এটি অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশের সংসদের ৮০ ভাগই ব্যবসায়ী।’ সংসদ আইন প্রণয়নকারী সংস্থা। সংসদ সদস্যদের প্রধান কাজ আইন প্রণয়ন করা। কিন্তু এখন সংসদ সদস্যদের প্রধান কাজ ঠিকাদারের মতো যার যার এলাকায় ব্রিজ, রাস্তাঘাট করা আর নিজস্ব ব্যবসা সম্প্রসারণ করা। পিছিয়ে থাকতে চান না স্থানীয় পর্যায়ের ধনীরাও এবং তাদের বড় অংশটাই নব্য ধনিক শ্রেণির। আগেই বলেছি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনীতি করার অধিকার যে কারোরই আছে। ব্যবসায়ীদেরও আছে। সমস্যা হয় তখন, যখন পুরো রাজনীতিই ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যায়। দেশের রাজনীতি ও গণতন্ত্রের জন্য এটি ভালো লক্ষণ নয়। রাজনৈতিক দলগুলো এর পৃষ্ঠপোষকতা করতে গিয়ে দেশে প্রকৃত রাজনীতিকের সংখ্যা কমিয়ে ফেলছে। রাজনীতিতে যোগ দিয়েই ব্যবসায়ীরা সহজে পদ ও মনোনয়ন পেয়ে যাচ্ছেন। ব্যবসায়ীদের শক্তি তাদের টাকা-পয়সা। নির্বাচনের খরচ দিনে দিনে যত বেড়েছে, নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে ব্যবসায়ীদের দামও তত বেড়েছে। দলগুলোতে মনোনয়নবাণিজ্যের সংস্কৃতিও শুরু হয়েছে এসব কারণেই। ব্যবসায়ীরা রাজনীতি করতে এসে দেখেছেন, রাজনীতি করলে ব্যবসায় সুবিধা মেলে। সবকিছুই হাতের মুঠোয় চলে আসে। এমন পরিস্থিতি ব্যবসায়ীদের রাজনীতিতে আসতে উৎসাহিত করবে, এটাই তো স্বাভাবিক। এমন অবস্থা যখন স্বাভাবিক তখন কী করে ঠেকিয়ে রাখা যাবে তাদের স্রোত? এক দলের ব্যবসায়ীর সঙ্গে আরেক দলের ব্যবসায়ী সাংসদের দারুণ যোগাযোগ। সাধারণ মানুষ নিজেদের মতো করে দল আর পছন্দের নেতানেত্রীকে নিয়ে নিরন্তর মেতে থাকেন রাজনৈতিক বচসায়। আর মানুষের আড়ালে ক্ষমতার অলিন্দে চলে এক অন্তহীন সম্পর্কের আদানপ্রদান। এর পুরোটাই আসলে শুধু পাওয়ার জন্য, দেশকে, দেশের মানুষকে কিছু দেওয়ার জন্য নয়। অনেক দিন ধরে আমরা রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন কথাটা শুনে আসছি। এখন পুরোটাই হলো রাজনীতির বাণিজ্যিকীকরণ। একটা শ্রেণি খুব সফলভাবে বাংলাদেশের রাজনীতিকে ব্যয়বহুল করে ফেলেছেন। ফলে সাধারণ মানুষের, সৎ মানুষের রাজনীতি কঠিন হয়ে পড়েছে। দেশে যেখানে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জন্য কোটি কোটি টাকা লাগে, সেখানে কোন সৎ মানুষটা রাজনীতি করতে আসবেন বা পারবেন? এ পরিস্থিতি থেকে বের না হলে পুঁজিবাদের কাছে রাজনীতিবিদদের অবস্থা আরও দুর্বল হবে। দেশ রাজনৈতিক ব্যবস্থা ব্যয়বহুল হওয়া আটকাতে না পারলে ব্যবসায়ীরাই নেতা হবেন বা রাজনীতিকরা ব্যবসাটাই করবেন, জনসেবা ভুলে যাবেন। লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও সমাজ বিশ্লেষক
০৯ মে, ২০২৪

রাজনীতির নেতৃত্ব দিতে চায় ‘রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন’
গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন আগামীতে দেশের ‘দিশাহীন’ রাজনীতির নেতৃত্ব দিবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন দলটির প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম। শুক্রবার (৩ মে) বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের উদ্যোগে এক সংবর্ধনা ও আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেনি তিনি। হাসনাত কাইয়ূম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় রয়েছে। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অচিরেই এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করবে এবং একটি জনগণের সরকার ও রাষ্ট্র কায়েম করবে। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনে সদ্য যোগদানকৃত নেতা-কর্মীদের সম্মানে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে যোগদানকৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন- ভাসানী অনুসারী পরিষদের সাবেক সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজু, রাজনীতিক ও পরিবেশ কর্মী ফরিদুল ইসলাম, রেল, নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি রৌমারী শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কে এম শামসুল আলম, কুড়িগ্রামের রৌমারির শৈলমারি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিনু, নারীনেত্রী মনোয়ারা রহমান,  কুড়িগ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম সাজু, নাট্যনির্মাতা নিয়াজ মাহমুদ, বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলনের জামালপুরের অনিছুর রহমান, ঢাকার আওলাদ হোসেন, পাবনার মিল্টন চৌধুরী, বগুড়ার হাবীবুর রহমান অনিক, মো. শাহিন হোসেন ও শিপন আহমেদ, সাতক্ষীরার আলমগীর হোসেন, চট্টগ্রামের সাজিদুর রহমান রিংকু, ২৮ অক্টোবর পুলিশি হামলায় আহত মো. ইয়াকুব হোসেন, শ্রমিক নেত্রী মিলি বেগম প্রমুখ। অনুষ্ঠানের শুরুতে তাদেরকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেন হাসনাত কাইয়ূমের নেতৃত্বে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির নেতৃবৃন্দ।  নতুন যোগদানকারী সদস্য হাবিবুর রহমান রিজু বলেন, বাংলাদেশ আজ দিশাহীন। জনগণ আজ হতাশ। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন একমাত্র সংগঠন যারা আশা দেখাচ্ছে, তাদের কোনো কায়েমি স্বার্থ নেই। তাই আমি এই দলে যোগ দিয়েছি। একসঙ্গে কাজ করে আমরা রাষ্ট্র সংস্কার করব ইনশাআল্লাহ। পরিবেশ আন্দোলনের সংগঠক এবং নতুন যোগদানকারী ফরিদুল ইসলাম বলেন, প্রাণ-প্রকৃতির সর্বনাশ করছে সরকার। নদীগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। রক্ত দেব, তবু নদী মরতে দেব না। রাষ্ট্র সংস্কারকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। রৌমারির শৈলমারি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিনু বলেন, দলগুলো ব্যক্তিতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র, গোষ্ঠীর সীমানায় আবদ্ধ। ২০ কোটি মানুষকে ধারণ করার মতো গণতান্ত্রিক কোনো দল বাংলাদেশে নেই। দেশে বর্তমানে দুঃশাসন চলছে। এই অবস্থা বেশিদিন চলতে দেব না আমরা।  বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ আজ ব্যর্থ হতে চলেছে। তাই দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ করতে হবে তরুণদের। শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত এই সংগ্রামে থাকব।  রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক ইমরান ইমন বলেন, আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ডামি সরকারকে বিদায় করব। জনগণের প্রতিনিধিই দেশ চালাবে। আজকে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন সেই চ্যালেঞ্জ নিচ্ছে। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের রাজনৈতিক সমন্বয়ক ফরিদুল হকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্র সংস্কার যুব আন্দোলনের সমন্বয়ক মাশকুর রাতুল, রাষ্ট্র সংস্কার শ্রমিক আন্দোলনের সহ-সভাপতি সোহেল সিকদার, বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শেখ নাসির উদ্দীন, জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য রাজশাহী বিভাগের সমন্বয়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ জামাল কাদেরী, চট্টগ্রাম বিভাগের সমন্বয়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল্লাহ মহিউদ্দিন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। এর আগে সকালে রাজধানীর তোপখানা রোডের মেহেরবা প্লাজায় দলের প্রধান কার্যালয়ে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আগামী ২৯-৩০ নভেম্বর দলের প্রথম জাতীয় কাউন্সিল আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
০৩ মে, ২০২৪

ঢাবি থেকে কিছু রাজনীতির ব্যাঙ বের হয়েছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে কিছু রাজনীতির ব্যাঙ বের হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।  মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) ঢাবির টিএসসি প্রাঙ্গণে ছাত্রলীগের আয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ঈদ উপহার বিতরণ অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি।  পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি অবাক বিস্ময়ে দেখি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার জন্য আন্দোলন হয়। আর প্রশাসন সেটি মেনেও নেয়। এটা কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নয়, এটি হঠকারী সিদ্ধান্ত।   তিনি বলেন, আদালতের রায় এসেছে। ছাত্রলীগকে বলব সেখানে যেন নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি হয়, হিংসার রাজনীতি না হয়। পড়াশোনার কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কিছু রাজনীতির ব্যাঙ বের হয়েছে। ছাত্রলীগকে বলব, তাদের থেকে সাবধান থাকতে।  এ সময় তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের যারা মেট্রোরেলের বিরোধিতা করেছিলেন, তাদের টিকিট কেটে মেট্রোরেলে ঘোরানোর অনুরোধ করছি ছাত্রলীগকে। 
০৯ এপ্রিল, ২০২৪

ছাত্রলীগের নির্যাতন থেকে নিস্তার পেতে বুয়েটে শিক্ষার্থীরা রাজনীতির বিরুদ্ধে : ছাত্রদল
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর উদ্ভূত পরিস্থিতি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মনে করে, ছাত্রলীগের প্রাণঘাতী নির্যাতন থেকে নিস্তার পেতেই বুয়েটের শিক্ষার্থীরা বুয়েটে ছাত্রলীগের রাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।  বুধবার (৩ এপ্রিল) ডিআরইউ সাগর-রুনির মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব লিখিত বক্তব্য এসব কথা বলেন।  তিনি বলেন, শহীদ আবরার ফাহাদকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে খুন করার পরে মুষ্টিমেয় দুই একজন বাদে বুয়েটের সব শিক্ষার্থী সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। যদিও ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে নিরাপত্তার অভাবে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার কথা বলেছে। ছাত্রদল মনে করে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের আপাত দৃষ্টিতে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে যে অবস্থান তার একক দায়ভার বাংলাদেশ ছাত্রলীগের। তিনি আরও বলেন- ছাত্রলীগ দীর্ঘদিন ধরে খুনি, ধর্ষক, নারী নির্যাতনকারী, প্রশ্নফাঁসকারী, মাদকব্যবসায়ী এবং টেন্ডারবাজদের অভয়ারণ্য। দেশপ্রেমিক মেধাবী শিক্ষার্থী শহীদ আবরার ফাহাদকে হত্যা করে তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সব সীমা অতিক্রম করেছে। একইসঙ্গে দেশের ছাত্ররাজনীতির ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে। বুয়েটে ছাত্রলীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পরে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা স্বস্তি এবং নিরাপত্তা লাভ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, বুয়েটসহ সারা দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ টর্চার সেল গড়ে তুলেছে। শহীদ আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পরে বুয়েটের টর্চার সেলগুলো বন্ধ হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি কলেজগুলোর হলে ছাত্রলীগের টর্চার সেলে নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্টরুমে ছাত্রদের মারধর করার শতাধিক ঘটনা বিভিন্ন সময়ে জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ছাত্রদলের সভাপতি বলেন, বুয়েটে ছাত্রলীগের কার্যক্রম চালু করার পদক্ষেপ বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। বুয়েটের শিক্ষার্থীরা এখন শঙ্কিত এই কারণে, ছাত্রলীগের কার্যক্রম পুনরায় চালু হলে তাদের পড়াশোনা এবং ক্লাস পরীক্ষা বাদ দিয়ে ছাত্রলীগের মিছিল-মিটিং, গেস্টরুমে হাজিরা দিতে হবে। তাদের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করলে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হবে। রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ছাত্ররাজনীতি চালু করতে  হলে সব রাজনৈতিক সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করা আবশ্যক। ক্যাম্পাসে এবং হলে সব রাজনৈতিক সংগঠনকে অবাধে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানোর সুযোগ দিতে হবে। সব শিক্ষার্থীকে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু এসবের কোনো কিছু না করে ছাত্রলীগের সভাপতিসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে রাতের আঁধারে মিটিং করে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক (ডিএসডব্লিউ) ছাত্রলীগের দখলদারিত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার ষড়যন্ত্রে শামিল হয়েছে। ভবিষ্যতে বুয়েটের কোনো শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হলে তার দায়দায়িত্ব ছাত্রলীগকে এবং বুয়েটের প্রশাসনকে বহন করতে হবে। এ সময়  তিনি বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ক্যাম্পাসে অপরাজনীতির বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন। ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির বলেন- দেশ এখন গভীর সংকটে। ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে নিকৃষ্টতম হত্যা করেছে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। ছাত্রলীগ আবারও আদালতের রায় নিয়ে ছাত্ররাজনীতি করার যে অপচেষ্টা চালাচ্ছে তা ছাত্ররাজনীতির জন্য কলংকজনক ঘটনা। আমরা আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু আদালত বুয়েট প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মতের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম, সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান, দপ্তর সম্পাদক (সহসভাপতি) জাহাঙ্গীর প্রধান, প্রচার সম্পাদক শরীফ প্রধান শুভ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন প্রমুখ।
০৩ এপ্রিল, ২০২৪

সুস্থধারার রাজনীতির চর্চায় ছাত্র সংসদের বিকল্প নেই : ছাত্র ইউনিয়ন
নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজনের মধ্য দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সুস্থ ধারার ছাত্র রাজনীতির প্রচলন করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। সুস্থ ধারার রাজনীতি চর্চায় এর বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছে সংগঠনটি। মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি দীপক শীল এবং সাধারণ সম্পাদক মাহির শাহরিয়ার রেজা এক যৌথ বিবৃতিতে এই দাবি জানান।   বিবৃতিতে তারা বলেন, দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস এবং দখলদারিত্ব কায়েম রয়েছে। ছাত্রলীগের দখলদারিত্বের কারণে অন্যান্য ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় কাজ করতে পারছে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ছাত্রলীগের সন্ত্রাস এবং দখলদারিত্বের অবসান ঘটাতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার সুযোগ করে দিতে হবে। এজন্য প্রয়োজন ছাত্র সংসদ নির্বাচন। তিনি বলেন, নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজনের মধ্য দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় সুস্থ ধারার ছাত্র রাজনীতির প্রচলন করতে হবে। ছাত্র সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা শিক্ষার্থীদের সমস্যা, দাবিদাওয়া এবং অধিকার রক্ষায় কাজ করবে। নেতারা বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্র রাজনীতি বন্ধের জোর দাবি রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যেই বলেছি ছাত্র রাজনীতি বন্ধ কোনো সমাধান নয়, বরং সন্ত্রাসী এবং সাম্প্রদায়িক সংগঠনের কার্যক্রমে বিধিনিষেধ আরোপ করে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজনের মধ্য দিয়ে বুয়েটে সুস্থ ধারার রাজনীতির চর্চা করতে হবে। এর ভেতর দিয়ে শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিকশিত হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটসহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে। নেতারা আরও বলেন, শুধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা সরকারি কলেজগুলোতে নয়, দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলোতেও ছাত্রসংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার সুযোগ করে দিতে হবে। অপরাজনীতির বিরুদ্ধে সুস্থ ধারার রাজনীতির বিকাশ ঘটাতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কোনো বিকল্প নাই। তবে সব ছাত্র সংগঠনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনকে ব্যবহার করে নির্বাচনে কারচুপির চেষ্টা করা হলে তা প্রতিহত করা হবে। নেতারা অবিলম্বে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন এবং নির্বাচনের পূর্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় সব ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিতের দাবি জানান।  
০২ এপ্রিল, ২০২৪

বুয়েটে অন্ধকার রাজনীতির চাষাবাদ হচ্ছে: সাদ্দাম
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) প্রশাসনকে উদ্দেশ করে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেছেন, আপনারা রাজনীতি বন্ধ করার নামে অন্ধকারের রাজনীতির চাষাবাদ শুরু করেছেন। বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ, অথচ সেখানে নিষিদ্ধ রাজনীতির নমুনা প্রত্যেক ক্ষণে ক্ষণে আমরা দেখতে পাচ্ছি। গতকাল রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘মৌলবাদী গোষ্ঠীর কালোছায়া থেকে মুক্ত করে বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতির দাবিতে এবং বুয়েট কর্তৃক গৃহীত অসাংবিধানিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে’ ছাত্রলীগ আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। সাদ্দাম হোসেন বলেন, শুধু বুয়েট কেন, পৃথিবীর যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার অধিকার আমাদের রয়েছে; তরুণদের মিথস্ক্রিয়া করার অধিকার রয়েছে। বরং আপনারাই (বুয়েট প্রশাসন) তো অধিকার বন্ধ করে দিয়েছেন। ছেলেমেয়েদের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার ও রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনা প্রকাশের অধিকার বন্ধ করে রেখেছেন। বুয়েট শিক্ষার্থী রাব্বির সিট বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে সাদ্দাম হোসেন বলেন, যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে সংখ্যায় যদি সে একজন হয়, আমরা তার কথা মেনে নেব। রাব্বি যদি বুয়েটে একা লড়াই করে, স্বাধীনতাবিরোধী-মৌলবাদী-জঙ্গিবাদ শক্তির প্রেতাত্মারা যতজনই হোক, রাব্বির জন্য, ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য, মৌলিক মানবাধিকারের জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগ লড়াই করে যাবে। ছাত্রলীগ সভাপতি আরও বলেন, রাব্বির সিট বাতিল হয়েছে একমাত্র ছাত্রলীগ করার কারণে। বুয়েটের ভিসিকে আমরা বলব যে, টাঙ্গুয়ার হাওরে জঙ্গিদের মিটিং করার জন্য, ইসলামী ছাত্রশিবিরের মিটিং করার জন্য, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য ৩৪ জন শিক্ষার্থীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তার করেছিল, তাদের নামে মামলাও হয়েছিল, সেই রাষ্ট্রবিরোধী আসামিরা কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বহাল তবিয়তে ক্লাস করছে, পরীক্ষা দিচ্ছে। আর তারা এখন ঠিক করছে, কারা ক্লাস করবে, পরীক্ষা দেবে বা দেবে না। এটা আমরা মানতে পারি না। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনানের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শাখার নেতারা বক্তব্য দেন।
০১ এপ্রিল, ২০২৪

বুয়েটে নিষিদ্ধ রাজনীতির নমুনা ক্ষণে ক্ষণে দেখতে পাচ্ছি : সাদ্দাম
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আপনারা রাজনীতি বন্ধ করার নামে অন্ধকারের রাজনীতির চাষাবাদ শুরু করেছেন। বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ অথচ সেখানে নিষিদ্ধ রাজনীতির নমুনা প্রত্যেক ক্ষণে ক্ষণে আমরা দেখতে পাচ্ছি।  রোববার (৩১ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতির দাবিতে ছাত্রলীগ আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, শুধু বুয়েট কেন পৃথিবীর যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার অধিকার আমাদের রয়েছে। তরুণদের মিথস্ক্রিয়া করার অধিকার রয়েছে। বরং আপনারাই তো অধিকার বন্ধ করে দিয়েছেন। ছেলেমেয়েদের স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকার ও রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনা প্রকাশের অধিকার আপনারা বন্ধ করে রেখেছেন। বুয়েট শিক্ষার্থী রাব্বির সিট বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে সাদ্দাম হোসেন বলেন, যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে সংখ্যায় যদি সে একজন হয়, আমরা তার কথা মেনে নেব। রাব্বি যদি বুয়েটে একা লড়াই করে, স্বাধীনতাবিরোধী-মৌলবাদী-জঙ্গিবাদী শক্তির প্রেতাত্তারা যতজনই হোক, রাব্বির জন্য, ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য, মৌলিক মানবাধিকারের জন্য, সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগ লড়াই করে যাবে। কী অপরাধ করেছে আমাদের রাব্বি? তার অপরাধ ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে যাদের অধিকার রক্ষার জন্য আমাদের পিতার লড়াই করে গেছেন, তাদের মাঝে ইফতার বিতরণ করেছে। স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচিতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেছে, এগুলোই রাব্বির অপরাধ। এজন্যই তার সিট বাতিল করা হয়েছে। এই দেশের মানুষের ভোট এবং ভাতের অধিকার রক্ষার জন্য যে সংগঠনের নেতাকর্মীরা লড়াই করেছে, সেই সংগঠনের কর্মী হওয়ার কারণে কাউকে যদি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়, সেই এলাকাকেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।  ছাত্রলীগ সভাপতি আরও বলেন, রাব্বির সিট বাতিল হয়েছে একমাত্র ছাত্রলীগ করার কারণে। বুয়েটের ভিসিকে আমরা বলব, টাঙ্গুয়ার হাওরে জঙ্গিদের মিটিং করার জন্য, ইসলামী ছাত্রশিবিরের মিটিং করার জন্য, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য ৩৪ জন শিক্ষার্থীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করেছিল, তাদের নামে মামলাও হয়েছিল। সেই রাষ্ট্রবিরোধী আসামিরা কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বহাল তবিয়তে ক্লাস করছে, পরীক্ষা দিচ্ছে। আর তারা এখন ঠিক করছে, কারা ক্লাস করবে, পরীক্ষা দেবে বা দিবে না। এটা আমরা মানতে পারি না। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনানের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর ছাত্রলীগের নেতারাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বক্তব্য দেন। প্রসঙ্গত, গত ২৭ মার্চ রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও দপ্তর সম্পাদকসহ অনেকেই বিশাল বহর নিয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। তাদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বি। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পরও বুয়েটে এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে নতুন করে রাজনীতি শুরুর পাঁয়তারা হিসেবে দেখছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। যার প্রেক্ষিতে, ক্যাম্পাসে পুনরায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হওয়া ও নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে আন্দোলন শুরু করেন তারা। এ প্রেক্ষিতে গত শুক্রবার রাতে বুয়েট উপাচার্যের নির্দেশক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. ফোরকান উদ্দিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রলীগকে সহযোগিতায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বির হলের সিট বাতিল, তদন্ত কমিটি গঠন ও তদন্ত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম চলমান থাকার কথা জানানো হয়।
৩১ মার্চ, ২০২৪
X