মহাকাশ জয়ের প্রতিযোগিতা এবং বাংলাদেশ
‘আয় আয় চাঁদ মামা’ অথবা ‘সূর্য্যি মামা জাগার আগে উঠব আমি জেগে’ এ ধরনের সাহিত্য এবং সংস্কৃতি এটাই প্রমাণ করে যে মহাকাশ এবং মহাকাশে অবস্থিত বিভিন্ন উপগ্রহ, নক্ষত্র সবকিছুই আমাদের অত্যন্ত প্রিয়। মহাকাশের রহস্য সব সময় মানব জাতিকে আকর্ষণ করলেও ১৯৫৭ সালের আগ পর্যন্ত এখানে কেউ পদচারণা করতে পারেনি। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘স্পুটনিক’ মহাকাশযানের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে ১৯৬৯ সালে নীল আমস্ট্রং দের চাঁদে অবতরণের মাধ্যমে তৎকালীন মহাকাশ প্রতিযোগিতার সমাপ্তি ঘটে। মার্কিনীদের চন্দ্র অভিযানের পর প্রায় ৫০ বছর কেউ আর চাঁদে যায়নি। তবে এর মধ্যে আমেরিকা, রাশিয়া, চীন ও জাপান সহ অনেক দেশই মহাকাশে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখে।  এরই ধারাবাহিকতায় গণচীন ২০২০ সালে চাঁদের পৃষ্ঠে  এবং জাপান ‘রিয়ুগূ’ নামক একটি উল্কাপিন্ডে সাফল্যের সাথে রোবটের মাধ্যমে অবতরণ করে নমুনা সংগ্রহ করে। সংগৃহীত নমুনা বিচার-বিশ্লেষণ করে ২০২২ সালে চাঁদে এবং উল্কাপিণ্ডে দুই জায়গাতেই পানি এবং বিভিন্ন ধরনের মূল্যবান খনিজ পদার্থের উপস্থিতি নিশ্চিত করে। চীন এবং জাপানের এই আবিষ্কারের ফলে মহাকাশ সম্বন্ধে মানবজাতির ধারণা সম্পূর্ণরূপে পাল্টে যায়। ফলশ্রুতিতে, অর্ধ শতকের বেশি সময়ের পর আবারও নতুন করে মহাকাশ প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো। নতুন এই মহাকাশ প্রতিযোগিতা পুরনো প্রতিযোগিতা থেকে একটু ভিন্নতর। বিগত শতাব্দীতে স্নায়ুযদ্ধের সমাপ্তির পর পরিবর্তিত ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন মেরুকরণের আবির্ভাব হয়। এর পাশাপাশি এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক সামর্থ্য উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়, যার ফলে নিত্য নতুন অংশীদার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছে। একই সাথে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে মহাকাশ গবেষণা এবং অনুসন্ধান অনেকটাই সহজ এবং তুলনামূলক ভাবে সহজলভ্য হয়ে পড়ে। এ সকল কারণে মহাকাশ জয়ের এই প্রতিযোগিতা অত্যন্ত জটিল সমীকরণে এসে দাঁড়ায়। কারণ এই প্রতিযোগিতায় যেই জয়লাভ করবে সে মহাকাশ থেকে আহরিত দুর্লভ খনিজ পদার্থ ব্যবহার করে নিত্যনতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করবে যেটি ব্যবহার করে সে ক্রমান্বয়ে শক্তিশালী হবে এবং অন্যদের উপর প্রভুত্ব খাটানোর সক্ষমতা অর্জন করবে। মহাকাশ প্রতিযোগিতার বিষয়টি সামগ্রিকভাবে অনুধাবন করার জন্য মহাকাশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা পেক্ষাপট বিবেচনা করা অত্যন্ত জরুরী। মহাকাশকে অনেক সময় মহাশূন্য বলা হলেও আদতে এটি কিন্তু শূন্য নয়। মহাকাশে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের গ্রহ, উপগ্রহ এবং ধূমকেতু যেগুলো দুর্লভ খনিজ পদার্থে ভরপুর। অভিকর্ষ বলের কারণে মহাকাশের কিছু জায়গায় দ্রুত গতিতে যাত্রা করা সম্ভব আবার কিছু জায়গায় স্থির দাঁড়িয়ে থাকাও সম্ভব। সুবিশাল এই মহাকাশে পৃথিবীর সন্নিকটে জায়গাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা কিনা পৃথিবীর পৃষ্ঠ হতে ৩৬,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। এই এলাকার মধ্যেই আছে পৃথিবী থেকে পাঠানো সকল কৃত্রিম উপগ্রহ (satellite) যেগুলো ছাড়া আমাদের প্রাত্যহিক জীবন অনেকটাই অচল। যেমন এই কৃত্রিম উপগ্রহ গুলো যদি সঠিকভাবে কাজ না করে তাহলে আমাদের জিপিএস (GPS) কাজ করবে না ফলে আমরা ঠিকভাবে পথ চিনতে পারব না; যার ফলে উবার এবং ফুডপান্ডার মত সার্ভিসগুলো আমাদেরকে খুঁজে পাবেনা; আমাদের টেলিভিশন ঠিক মতো কাজ করবে না এবং আমাদের মুঠোফোন গুলো ব্যবহার করে ভালোভাবে যোগাযোগ করতে পারব না।  সামগ্রিকভাবে আমাদের জীবনের অনেক কিছুই আমরা হারিয়ে ফেলবো যদি আমরা আমাদের পৃথিবীর সন্নিকটের মহাকাশ ঠিকমতো ব্যবহার করতে না পারি। মার্কিন প্রফেসার এভেরেট ডোলমান যথার্থই বলেছেন, "পৃথিবীর সন্নিকটের মহাকাশ যে নিয়ন্ত্রণ করবে, সেই ভু-পৃষ্ঠের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে এবং যে ভু-পৃষ্ঠের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করবে, সেই মানবজাতির ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে"। এছাড়াও চাঁদ এবং এরপরে যে অনন্ত মহাশূন্য রয়েছে সেখানেও আকর্ষণীয় অনেক কিছুই লুকিয়ে রয়েছে। চাঁদে পানির উপস্থিতি প্রমাণ করে যে এখানে অক্সিজেন আছে অথবা তা উৎপাদন করা সম্ভব এবং অক্সিজেন ও পানির সংস্থান করা গেলে সেখানে বসতি স্থাপন শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার। অদূর ভবিষ্যতে চাঁদে যদি কেউ বসতি স্থাপন করতে পারে তাহলে বিগত সহস্রাব্দে পৃথিবীতে উপনিবেশিক দেশগুলো যে সুবিধা ভোগ করেছে তার চেয়ে অনেক বেশি সুবিধা তারা ভোগ করবে। প্রযুক্তিগতভাবে যারা এমন একটি অবস্থানে যেতে পারবে তারা অবশ্যই চেষ্টা করবে আমাদের কে তাদের দাসত্বের শৃঙ্খলায় আবদ্ধ করতে, যার ফলে আমাদের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা অনেকটাই হুমকির মধ্যে পড়ে যাবে। শুধু তাই নয় মহাকাশে যদি কেউ একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে পারে তাহলে মহাকাশ ব্যবহার করে সে ভূপৃষ্ঠে তার সামরিক শক্তি প্রদর্শন করতে পারবে এবং কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোন স্থান থেকে মনুষ্যবিহীন বিমান বা ড্রোন ব্যবহার করে যে কোন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারবে। যার ফলে মহাকাশ বিজ্ঞানে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর উপরে তাদের প্রভুত্ব স্থাপন করা সহজ হবে। শুধু তাই নয় মহাকাশ প্রযুক্তির বহুমুখী ব্যবহারের কারণে একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে একই সময়ে সামরিক এবং বেসামরিক কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব। স্পেস এক্স এর "স্টারলিংক" ইন্টারনেট সেবা তেমনি একটি প্রযুক্তি যা কিছুদিন পূর্বে ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছিল। অর্থনৈতিক বিষয়টি মহাকাশ প্রতিযোগিতা এবং বিজয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় ৫০ বছর মানুষ চাঁদকে ভুলে ছিল যার অন্যতম কারণ ছিল অর্থনীতি, এবং আজ নতুন ভাবে এই প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার কারণও অর্থনীতি। বিগত শতাব্দীতে পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে জ্বালানি, বিদ্যুৎ, পানি এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ এর ব্যবহার অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেছে। এতে করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং পৃথিবী ধীরে ধীরে ধ্বংশের দিকে ছুটে যাচ্ছে। এ কারণে প্রাকৃতিক সম্পদের নতুন উৎস খুঁজে বের করা অত্যন্ত জরুরী এবং মহাকাশ একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় বিকল্প উৎস। চাঁদে উদঘাটিত দুর্লভ খনিজ সম্পদের মধ্যে হিলিয়াম-৩ অন্যতম। মাত্র ০১ টন হিলিয়াম-৩ গ্যাস ব্যবহার করে এক বছরে ১০,০০০ মে.ও বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব যা উৎপাদন করার জন্য প্রায় ৫ কোটি ব্যারেল জীবাশ্ম জ্বালানি এর প্রয়োজন হতো। এছাড়াও এই গ্যাস চিকিৎসা বিজ্ঞান সহ আরো অনেক কাজে ব্যবহার করা সম্ভব যার মাধ্যমে সমগ্র মানবজাতি উপকৃত হতে পারবে। এ সকল কারণে, অর্থনীতি ও প্রযুক্তিগতভাবে শক্তিশালী দেশ গুলি নব উদ্যমে মহাকাশ বিজয়ের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এই প্রতিযোগিতায় যে সকল দেশ পিছিয়ে থাকবে তাদের, বিজয়ী দেশগুলোর কাছে দাসত্ব বরণ করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। মহাকাশ প্রতিযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যে এখানে সকল দেশের জন্য সমান সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অপেক্ষাকৃত নতুন দেশ হলেও এরই মধ্যে নিজেকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রমাণ করেছে। রূপকল্প-২০৪১ অনুযায়ী বাংলাদেশ স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সমাজ এবং স্মার্ট অর্থনীতির মাধ্যমে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত হবার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। মহাকাশ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের এই প্রচেষ্টা অনেকটাই সহজতর হবে। জনসংখ্যা বিবেচনায় পৃথিবীর অষ্টম বৃহত্তম এই দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, পরিবেশ নিরাপত্তা, তথ্য নিরাপত্তা সহ আর্থসামাজিক অনেক বিষয়ই মহাকাশ প্রযুক্তির মাধ্যমে অত্যন্ত সুচারুরূপে সমন্বয় করা সম্ভব। বাংলাদেশের ছোট্ট ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে প্রাকৃতিক সম্পদ যেখানে অনেক দুরূহ সেখানে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মহাকাশ থেকে দুর্লভ প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ বাংলাদেশের জন্য খুবই লাভজনক হবে।  প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ মহাকাশ প্রযুক্তি ব্যবহারে সবসময় ইতিবাচক ছিল। ১৯৬৮ সালে তৎকালীন সরকার কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের জন্য অটোমেটিক পিকচার ট্রান্সমিশন (APT) নামে একটি সংস্থা গঠন করে যা পরবর্তীতে SPARRSO নামে আত্মপ্রকাশ করে। এই সংস্থাটি বর্তমানে বাংলাদেশে মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান হিসাবে কাজ করছে এবং এটি বাংলাদেশের একমাত্র মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান। তবে মহাকাশ গবেষণা এবং প্রযুক্তি ব্যবহার সম্পর্কে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সহায়ক শক্তি হলো বাংলাদেশের উদ্যমি তরুণ তরুণীরা। "ব্র্যাক অন্বেষা" নামক বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ এই তরুণরাই মহাকাশে পাঠিয়েছিল। বর্তমানে তারা জাতিসংঘের উদ্যোগে নেওয়া নানাবিধ মহাকাশ সংক্রান্ত কর্মকান্ডে সংযুক্ত আছেন। এছাড়াও মহাকাশ গবেষণা এবং বিজয়ের সম্ভাব্য সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন এবং এরোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছে। এ সকল উদ্যোগের সুফল যদি আমরা সঠিকভাবে পেতে চাই তবে বাংলাদেশকে আরও বেশ কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হবে যার মধ্যে সক্ষমতা বৃদ্ধি অন্যতম। মহাকাশ গবেষণা রকেট সাইন্স এর একটি অংশ এবং বিষয়টি অত্যন্ত জটিল ও স্পর্শ কাতর। বাংলাদেশের একার পক্ষে এই কঠিন বিষয়টি আয়ত্তে আনা সহজসাধ্য হবে না। এ কারণেই বাংলাদেশকে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সাথে সমন্বয় করে এগিয়ে যেতে হবে। মহাকাশ গবেষণা সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা যেমন APSCO এক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। তবে একথা মনে রাখতে হবে যে শুধুমাত্র প্রযুক্তির সহায়তায় বাংলাদেশ মহাকাশ বিজয় করতে পারবেনা। এজন্য অবকাঠামো, আইনগত এবং ইকো সিস্টেম সংক্রান্ত বিষয়গুলোতেও নজর দিতে হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কল্যাণে মহাকাশ সমগ্র মানবজাতির জন্য যে সুযোগ সৃষ্টি করেছে সেটিকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোতে বাংলাদেশে অতি দ্রুত নজর দেওয়া প্রয়োজনঃ প্রযুক্তিগত পার্থক্যের কারণে উন্নত বিশ্বের সাথে মহাকাশ সংক্রান্ত বাংলাদেশের যে বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে সেটি পূরণের জন্য একটি শর্টকাট বেছে নিতে হবে। বাণিজ্যিক চুক্তি বা আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে এবং দ্বিতীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। মহাকাশের উন্নত প্রযুক্তির সাথে তাল মেলানোর জন্য এটি একটি ভালো পদক্ষেপ, তবে টেকসই মহাকাশ গবেষনা এবং প্রযুক্তি ও ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশে যথাযথ প্রতিষ্ঠান নেই। প্রতিষ্ঠানের পর হতে বিগত ৫০ বছরে SPARRSO মহাকাশ গবেষণা সংক্রান্ত তেমন কোনো কার্যক্রম হাতে নেয়নি এবং এ ধরনের কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য কোন রকমের সক্ষমতা গড়ে তোলা হয়নি। এই প্রতিষ্ঠানটিকে নতুন করে ঢেলে সাজিয়ে NASA, ISRO অথবা CNSA এর মত প্রতিষ্ঠানের আদলে গড়ে তুলতে পারলেই শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানটি ইস্পিত দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হবে। তবে আশানুরূপ সাফল্য অর্জন করার জন্য শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপরেখা পরিবর্তন করলেই হবে না বরং একই সাথে প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং কর্তব্য যা ১৯৯১ সালের আইন দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে সেটিরও পরিবর্তন, পরিমার্জন এবং আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন। মহাকাশ প্রযুক্তি যদি সঠিকভাবে দেশের কল্যাণে ব্যবহার করতে হয় তবে এটি একটি জাতীয় কৌশল এবং সুপরিকল্পিত কর্মপদ্ধতির মাধ্যমে গড়ে তুলতে হবে। বহির্বিশ্বের অন্যান্য সকল দেশের মতো বাংলাদেশও আর্থসামাজিক উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে বাংলাদেশের জন্য SDG এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন একটি অন্যতম মোইল ফলক। জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে দেখা যায় SDG এর শতকরা ৪০ ভাগ অর্থাৎ ১৭টি লক্ষ্যের ১৬৯ টি টার্গেট এর মধ্যে ৬৫ টি টার্গেটিই মহাকাশ প্রযুক্তি হতে লাভবান হতে পারে এবং এর ফলে লক্ষ্য অর্জন অনেকটাই সহজ হবে। তবে এর মধ্যে কিছু টার্গেট আছে যা মহাকাশ প্রযুক্তি ব্যবহার ছাড়া অর্জন করা সম্ভব নয় যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা, যার জন্য কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে পাঠানো তথ্য ও চিএ অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া বিমানসহ সকল ধরনের পরিবহনের ক্ষেত্রে কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে GPS ব্যবহার করে দিক নির্ণয় করা ছাড়া এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়াটা বর্তমান বিশ্বে প্রায় অসম্ভব।  মহাকাশের প্রযুক্তিগত সেবাগুলি শুধু নয় বরং মহাকাশ গবেষণা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনীতিও ব্যাপকভাবে লাভবান হতে পারে। ১৯৫৭ সালে মহাকাশ যুগের সূচনা লগ্ন হতে ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১৫০ টি কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এরপর হতে মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর সংখ্যা হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। ২০১৩ সালে এ সংখ্যা ছিল ২১০ টি যা ২০১৯ সালে ৬০০ তে এসে দাঁড়ায় এরপর হঠাৎ করেই যেন সবাই প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে। ২০২০ সালে এ সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ১২০০ তে এসে দাঁড়ায় এবং ২০২২ সালে এটি ২৪৭০ টিতে এসে দাঁড়ায়।  জাতিসংঘের মহাকাশ সংক্রান্ত দপ্তর (UNOOSA) এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী শুধুমাত্র ২০২৮ সালেই সর্বমোট এক মিলিয়ন অর্থাৎ ১০ লক্ষেরও  অধিক কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে পাঠানো হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এ সকল উপগ্রহের বেশিরভাগই হবে ক্ষুদ্রাকৃতির এবং সেগুলো মহাকাশের সর্বনিম্ন স্তরে (LEO) থেকে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করবে। এ ধরনের উপগ্রহ প্রযুক্তিগত দিক থেকে খুব উচ্চমানের না। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ এই ধরনের একটি উপগ্রহ তৈরি করেছে ও অনুরূপ আরো উপগ্রহ তৈরি প্রক্রিয়াধীন আছে। বাণিজ্যিকভাবে এ ধরনের ক্ষুদ্রাকার কৃত্রিম উপগ্রহ প্রযুক্তির ব্যবহার, উপগ্রহ পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ এর হার্ডওয়ার, সফটওয়্যার এবং অন্যান্য উপাদানগুলোর গবেষণা, উদ্ভাবন এবং বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান সংক্রান্ত কার্যকলাপ এর মাধ্যমে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারে। বর্তমান বিশ্বে মহাকাশ জয়ের প্রতিযোগিতা হতে যে অপার সুযোগের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে সেটিকে যদি আমরা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারি তাহলে শুধু অর্থনৈতিকভাবেই নয় বরং সামাজিক, প্রযুক্তিগত এবং ভু-রাজনৈতিক দিক হতেও বাংলাদেশ লাভবান হতে পারবে। আর এজন্য দরকার একটি সময়োপযোগী জাতীয় মহাকাশ কৌশল, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা। মহাকাশ বিজ্ঞান চর্চা এবং মহাকাশ প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও ব্যবহার একটি কঠিন কাজ। এটি  বাংলাদেশের জন্য এককভাবে করা দুরূহ, এ কারণে এ সকল ক্ষেত্রে যেসব দেশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে তাদের সাথে সমন্বিতভাবে কার্যক্রম চালানোর প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে জাতিসংঘ সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক সংগঠনগুলো যেমন UNOOSA, ESA, APSCO বিশেষভাবে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক এ সকল প্রতিষ্ঠানে সমন্বিত ভাবে মহাকাশ সংক্রান্ত সক্ষমতা অর্জনের প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে প্রথমত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলো অনুসমর্থন এবং অনুমোদন করা প্রয়োজন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মহাকাশ বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা শুরু হওয়ার পর হতে এখন পর্যন্ত জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে পাঁচটি আন্তর্জাতিক চুক্তি প্রবর্তন করা হয়েছে যার মধ্যে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ মাত্র একটি চুক্তিতে অনুসমর্থন করেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে মহাকাশ প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং মহাকাশে অন্বেষণের জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অবদান প্রতিনিয়তই বাড়ছে। মহাকাশ ভিত্তিক পর্যটন শিল্প এবং মহাকাশ হতে প্রয়োজনীয় দুর্লভ খনিজ সম্পদ আহরণের জন্য পৃথিবীর অন্যান্য দেশে বেসরকারি খাতের দক্ষতার সাথে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তালমেলাতে হিমশিম খাচ্ছে। বেসরকারি মহাকাশ প্রতিষ্ঠান গুলো শুধুমাত্র দ্রুততার সাথেই নয় বরং অর্থনৈতিকভাবেও  মহাকাশ শিল্প বিকাশে এবং বাণিজ্যে অনেক এগিয়ে আছে। এ কারণে বাংলাদেশে মহাকাশ গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং অন্বেষণে টেকশই সাফল্যের জন্য বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এটি নিশ্চিতের জন্য আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন, সংশোধন এবং সংযোজন জরুরী। মহাকাশ গবেষণা, মহাকাশ প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং বাংলাদেশের জন্য অতীব জরুরী খনিজ পদার্থ আহরণের জন্য মহাকাশ একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় মাধ্যম। ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে এবং সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে বাংলাদেশের উন্নয়নের অভিষ্ঠ লক্ষ্য অর্জনের জন্য মহাকাশ গবেষণা এবং মহাকাশ শিল্প বিকাশের কোন বিকল্প নেই। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে যদি মহাকাশে যেতে হয় তাহলে এখন থেকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী। প্রাকৃতিক এবং ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশকে "প্রিজনার অফ জিওগ্রাফি" হিসাবে আখ্যা দেওয়া হয়। আধুনিক প্রেক্ষাপটে যদি মহাকাশ সংক্রান্ত গঠনমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে আমরা ব্যর্থ হই তবে এর পাশাপাশি বাংলাদেশ "ভিকটিম অফ অ্যাস্ট্রোপলিটিক্স" বা "মহাকাশ রাজনীতি" এর শিকারে পরিণত হবে। এয়ার কমডোর এ টি এম হাবিবুর রহমান: প্রো-উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমআরএএইউ) 
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

চন্দ্রযান অভিযানের দুই মহাকাশ বিজ্ঞানী
স্বপ্ন দেখতেন মহাকাশের খুঁটিনাটি নিয়ে গবেষণা করার ঋতু কারিধাল শ্রীবাস্তব লক্ষ্ণৌর মেয়ে ৪৮ বছর বয়সী ঋতু কারিধাল ভারতবাসীর কাছে পরিচিত ‘রকেট উইমেন’ হিসেবে। ইসরোর সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা ১৯৯৭ সাল থেকে। সেই থেকে তিনি মার্স অরবিটার মিশন (এমওএম) বা মম ও চন্দ্রযান প্রকল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছেন। তিনি মম মিশনের ডেপুটি অপারেশনস ডিরেক্টরও ছিলেন। মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা ঋতুর আগ্রহ ছিল পদার্থবিজ্ঞানে। লক্ষ্ণৌর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক করেন তিনি। এরপর দেন গেট পরীক্ষা। ফল ভালো হওয়ায় ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সে পড়ার সুযোগ পান। সেখানে থেকে অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স করেন। তারপর চাকরির জন্য আবেদন করেন ইসরোতে। পিএইচডি করার সময়ই ডাক আসে ইসরো থেকে। পরীক্ষা এবং ইন্টারভিউয়ে সফল হয়ে যোগ দেন ইসরোতে। ২০০৭ সালে এ পি জে আবদুল কালামের হাত থেকে ইসরোর সেরা নবীন বিজ্ঞানীর পুরস্কারও পান ঋতু। ২০১৭ সালে পেয়েছেন ওমেন অ্যাচিভার্স ইন অ্যারোস্পেস পুরস্কার। সহপাঠীদের কাছে ঋতু পরিচিত ছিলেন আবেগপ্রবণ হিসেবে। তবে কাজের ব্যাপারে ইসরো তার ওপর যে ভরসা রেখেছিল, সেটা তিনি বিফলে যেতে দেননি। কারণ ছোট থেকে প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল মহাকাশবিজ্ঞান নিয়ে। এর আগে মঙ্গল অভিযানের সময়ও স্পেসক্রাফটের অটোনমির ক্ষেত্রে ঋতুই ছিলেন মূল দায়িত্বে। এখানেই শেষ নয়। চন্দ্রযান-১-এর মূল টিমেও গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন ঋতু কারিধাল শ্রীবাস্তব। চন্দ্রযান-২-এর অভিযানেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন তিনি। অভিযানের সবকিছু ছিল তার নখদর্পণে। একেবারে ‘পারফেকশনিস্ট’।  মহাকাশ নিয়ে ছোট থেকেই আগ্রহ ছিল মুথাইয়া বনিতা ৫৯ বছর বয়সী ইলেকট্রনিকস সিস্টেম প্রকৌশলী মুথাইয়া বনিতা নেতৃত্ব দিয়েছেন ইসরোর বিভিন্ন উপগ্রহের প্রকল্পগুলোতে। তিনি ইসরোর চন্দ্রযান-২-এর প্রকল্প পরিচালক ছিলেন। ইসরোর সঙ্গে তার শুরুটা ছিল শুধু হার্ডওয়্যার নিরীক্ষণ কাজের মধ্য দিয়ে। পরে তিনি ইসরো স্যাটেলাইট সেন্টারের ডিজিটাল সিস্টেম গ্রুপে টেলিমেট্রি এবং টেলিকমান্ড বিভাগের পরিচালক পদে অধিষ্ঠিত হন। ২০১৩-এর সফল মঙ্গলযান মিশনেও যুক্ত ছিলেন তিনি। তিনিই ছিলেন ইসরোতে আন্তঃগ্রহ মিশনে নেতৃত্ব দেওয়া প্রথম নারী। চন্দ্রযান-২ মিশনের সহযোগী পরিচালক থেকে তাকে প্রকল্প পরিচালক পদে উন্নীত করা হয়। এর মাধ্যমে তিনি ইসরোর প্রথম নারী প্রকল্প পরিচালক হওয়ার সম্মান অর্জন করেন। মহাকাশ নিয়ে ছোট থেকেই আগ্রহ ছিল মুথাইয়ার। বরাবরের মেধাবী ছাত্রী বনিতা ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক করেন। ২০০৬ সালে তিনি অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি অব ইন্ডিয়ার ‘সেরা মহিলা বিজ্ঞানী’র পুরস্কার পান। মিশন মঙ্গল ছিল ইসরোর অন্যতম সেরা সাফল্য। এর মাধ্যমে ভারত চতুর্থ দেশ হিসেবে মঙ্গল গ্রহে অবতরণের মর্যাদা লাভ করে। চন্দ্রযান-২-এর অভিযানে প্রজেক্ট ডিরেক্টর হিসেবে হার্ডওয়্যারের ডেভেলপমেন্ট এবং অন্যান্য বিষয়ে নেতৃত্ব দেন বনিতা।
২৫ অক্টোবর, ২০২৩

চীনের সঙ্গে হটলাইন চায় মার্কিন মহাকাশ বাহিনী
মহাকাশে যে কোনো ধরনের সংকট সমাধানে চীনের সঙ্গে হটলাইন চালু করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ বাহিনী। এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচানা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন মার্কিন মহাকাশ বাহিনীর প্রধান জেনারেল চান্স সল্টজম্যান। আজ সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। মার্কিন মহাকাশ বাহিনীর প্রধান বলেন, উত্তেজনা কমাতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মহাকাশ বাহিনীর মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ বিষয়ে আমরা এখনো চীনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেনি। সল্টজম্যান আরও বলেন, চীনের সঙ্গে অন্তত সরাসরি যোগাযোগের একটি হটলাইন চালু করার বিষয়ে আমরা নিজেরা আলোচনা করেছি। যদি কোনো সংকট দেখা দেয় তাহলে যেন আমরা আসলে কার সঙ্গে যোগাযোগ করব, তা জানি। তবে এ বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টে জো বাইডেন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে। দক্ষিণ কোরিয়ার মতো জাপানেও মার্কিন মহাকাশ বাহিনীর একটি শাখা খোলার চিন্তা-ভাবনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এমন সম্ভাবনার মধ্যেই এসব কথা বলেছেন সল্টজম্যান। জাপানে মার্কিন মহাকাশ বাহিনীর একটি স্থানীয় সদর দপ্তর খোলার সম্ভাবনা নিয়ে সোমবার টোকিওতে জাপানি প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সল্টজম্যান। তবে এই সদর দপ্তর ঠিক কোথায় প্রতিষ্ঠা করা হবে বা এর উদ্দেশ্য কী তা জানাননি তিনি। সামরিক বাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর পর ২০১৯ সালে মহাকাশ বাহিনী গঠন করে যুক্তরাষ্ট্র। এর মাধ্যমে ১৯৪৭ সালের পর প্রথমবারের মতো নতুন কোনো সামরিক সেবা চালু করে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এতদিন হলেও চীন বা রাশিয়ার মহাকাশ বাহিনীর সঙ্গে তাদের কোনো হটলাইন নেই।  
২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

সাড়া দিচ্ছে না বিক্রম ও প্রজ্ঞান, জানাল ইসরো
চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার বিক্রম ও রোভার প্রজ্ঞান-এর কোনো সংকেত পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো।  শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন চন্দ্র দিবস শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রম ও প্রজ্ঞানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ইসরো। তবে এখন পর্যন্ত কোনো সংকেত পাওয়া যায়নি। এর আগে গত ২৩ আগস্ট রোভার প্রজ্ঞানকে নিয়ে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করেছিল চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার বিক্রম। জানা গেছে, ল্যান্ডার বিক্রম উচ্চতায় ২ মিটারের মতো, ওজন এক হাজার ৭০০ কেজির বেশি। আকারে ছোট রোভার প্রজ্ঞানের ওজন ২৬ কেজি মাত্র। এই রোভারই চাঁদের বুকে ঘুরে ঘুরে বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালায়। দুই সপ্তাহ ধরে ছবি ও বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের পর চন্দ্রপৃষ্ঠে রাত নেমে এলে বিক্রম ও প্রজ্ঞানকে ‘স্লিপ মোডে’ রাখা হয়। ইসরো আশা করেছিল, নতুন চন্দ্র দিবস শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রম ও প্রজ্ঞানের ব্যাটারিগুলো রিচার্জ হতে শুরু করবে এবং মডিউলগুলো পুনরায় জাগ্রত হবে।  করছে ইসরোর ধারণা, চন্দ্ররাতের প্রচণ্ড ঠান্ডায় সেসব ব্যাটারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকতে পারে। শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে ইসরো জানায় যে, বিক্রম ও প্রজ্ঞানের সঙ্গে যোগাযোগের সর্বাত্মক চেষ্টা তারা চালিয়ে যাবে। প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের মাধ্যমে ইতিহাস সৃষ্টি করে ভারত। এর মধ্য দিয়ে চাঁদে মহাকাশযান অবতরণকারী চতুর্থ দেশ হয় ভারত।
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে রুশ-মার্কিন নভোচারী
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে একসঙ্গে পা রাখলেন রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের তিন মহাকাশচারী। তিন মহাকাশচারীর দুজন রাশিয়ার ও একজন যুক্তরাষ্ট্রের। শুক্রবার রোসকসমস মহাকাশচারী ওলেগ কোননেনকো ও নিকোলাই শুব এবং নাসার মহাকাশচারী লোরাল ও’হারা কাজাখস্তানের বাইকোনুর কসমোড্রোম থেকে সয়ুজ এমএস-২৪ মহাকাশযানে উঠেছিলেন। রুশ মহাকাশ সংস্থা জানিয়েছে, তিন ঘণ্টা যাত্রার পর তারা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছায়। অরবিটিং স্টেশনে তারা আরও তিনজন রুশ, দুজন আমেরিকান, একজন জাপানি মহাকাশচারী এবং ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার একজন প্রতিনিধির সঙ্গে যোগ দেবেন। সূত্র : আলজাজিরা।
১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
X