চাঁদে পৌঁছল মানুষবিহীন চীনের মহাকাশযান
চাঁদে মহাকাশযান পাঠিয়েছে চীন। মানুষবিহীন এ যানটি চাঁদের কিছুটা দূরে সফলভাবে অবতরণ করেছে। রোববার (০২ জুন) বিবিসির এক প্রতিবেদেনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।  চীনের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (সিএনএসএ) জানিয়েছে, চীনের স্থানীয় সময় রোববার সকাল ৬টা ২৩ মিনিটে অবতরণ করেছে। চন্দ্রপৃষ্ঠের অদূরে দক্ষিণ মেরুর আইটকেন ব্যাসিনে এটি অবতরণ করে।  চীন সরকার জানিয়েছে, মাহাকাশযানটি এমন জায়গায় অবতরণ করেছে যেখানে আর কেউ পৌঁছাতে পারেনি। আইটকেন ব্যাসিন নামে পরিচিত এ জায়গাটি বিশাল গর্ত। চাঁদ গঠিত হওয়ার ‍শুরুর দিকে বিরাট কোনো সংঘর্ষের ফলে এটির সৃষ্টি হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।  গত ৩ মে চাঁদের উদ্দেশে যাত্রা করে মহাকাশযানটি। এটির মূল উদ্দেশ্য হলো চাঁদ থেকে মূল্যবান পাথর ও মাটি সংগ্রহ করা। ইতোমধ্যে আইটকেন ব্যাসিন থেকে প্রাচীনতম কিছু পাথরও বের করেছে চন্দ্রযানটি।  প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহাকাশযানটির চাঁদে অবতরণ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। কারণ এটি একবার চাঁদের দূরবর্তী প্রান্তে পৌঁছে গেলে এটির সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় অসম্ভব। নাসা জানিয়েছে, চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে কাঙ্ক্ষিত উপকরণ সংগ্রহ করতে উচ্চঝুঁকি নিতে হবে। এতে তিন দিন সময় লাগতে পারে মহাকাশযানটির।  ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের চন্দ্র ভূতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক পার্নেট-ফিশার বলেন, চাঁদে এমন অনেক পাথর রয়েছে যা আমরা আগে কখনো দেখি নাই। বিষয়টি নিয়ে অনেকের আগ্রহও রয়েছে। এ ছাড়া চাঁদ থেকে সংগ্রহ করা পাথরগুলো দিয়ে মহাকাশের গ্রহগুলোর গতিবিধি ব্যাখ্যা করা যাবে বলেও জানান তিনি।  নতুন করে চাঁদে পৌঁছানো এ মহাকাশযানটির নাম চেইঞ্জ-৬। এর আগে ২০১৯ সালে চেইঞ্জ-৪ নামের একটি মহাকাশযান পাঠিয়েছিল চীন। 
০২ জুন, ২০২৪

অর্ধশতাব্দী পর চাঁদে মার্কিন মহাকাশযান
অর্ধশতাব্দী পর আবারও চাঁদে অবতরণ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি মহাকাশযান। দেশটির টেক্সাসভিত্তিক কোম্পানি ইনটুইটিভ মেশিনসের নির্মিত এবং তাদের পরিচালিত উড্ডয়নে একটি মহাকাশযান স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে অবতরণ করে। গত অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময়ের মধ্যে এটিই চন্দ্রপৃষ্ঠে প্রথম মার্কিন স্পর্শ। এ ছাড়া এটি আরেকটি কারণেও ঐতিহাসিক। আর তা হচ্ছে, এই প্রথম কোনো বেসরকারি সংস্থার তৈরি মহাকাশযান অবতরণ করল চাঁদের মাটিতে। খবর বিবিসির। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘অডিসিয়াস’ নামে পরিচিত ছয় পায়ের এই রোবট ল্যান্ডারটি যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ২৩ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার ভোর ৫টা ২৩ মিনিট) চাঁদে অবতরণ করে। অডিসিয়াস মহাকাশযানটি তৈরি করেছে ‘ইনটুইটিভ মেশিনস’ নামে এক বাণিজ্যিক মহাকাশ সংস্থা। সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্টিভ অলটেমাস বলেন, ‘আমরা এখন চন্দ্রপৃষ্ঠে এবং সেখান থেকে তথ্য পাঠাচ্ছি। চাঁদে আপনাদের স্বাগত।’ অবশ্য ল্যান্ডারটি ঠিক কী অবস্থায় আছে, তা এখনো বিস্তারিত জানায়নি সংস্থাটি। তবে চাঁদে যে সেটি নেমেছে, তা নিশ্চিত করা হয়েছে। চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে মালাপের্ট নামে এক খাতের কাছে অবতরণ করেছে এই মার্কিন মহাকাশযান। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানিয়েছে, চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চল অত্যন্ত উঁচু-নিচু। বড় বড় গর্তের পাশাপাশি সেখানে উচ্চভূমিও রয়েছে। দক্ষিণ মেরু থেকে কিছুটা দূরেই নেমেছে অডিসিয়াস। এলাকাটি তুলনামূলকভাবে সমতল এবং নিরাপদ বলে জানিয়েছে নাসা। মূলত চাঁদের পরিবেশ সম্পর্কে আরও জানতে এই জায়গাটিকেই অবতরণের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। এই এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে, দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের পরিবেশ ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা করা হবে। এদিকে মহাকাশযানটি অবতরণের ঠিক আগের মুহূর্তে অবশ্য যোগাযোগ নিয়ে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল। ফলে যে সময়ে অবতরণের কথা ছিল, তার থেকে দেরিতে অবতরণ করে যানটি। ইনটুইটিভ মেশিনসের ফ্লাইট কন্ট্রোলার বিভাগ জানিয়েছে, অবতরণের পর ল্যান্ডারটি থেকে ফের সংকেত আসছে। উল্লেখ্য, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্পেসএক্স সংস্থার তৈরি ফ্যালকন-৯ রকেটে চড়ে চাঁদের উদ্দেশে রওনা হয় অডিসিয়াস। মহাকাশে প্রবেশ করার কয়েক মিনিট পর রকেটটি থেকে মহাকাশযানটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মূলত অ্যাপোলো অভিযানের সময় মার্কিনিরা যে পথে চাঁদে যায়, সেই একই পথে এগিয়ে যায় অডিসিয়াসও। আর এর মাধ্যমে মাত্র আট দিনে চাঁদে পৌঁছে গেল অডিসিয়াস।
২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

সূর্যের উদ্দেশে ভারতের মহাকাশযান
চাঁদে অভিযানের সাফল্যের পর এবার সূর্যের দিকে যাত্রা শুরু করেছে ভারতীয় মহাকাশযান আদিত্য-এল-১। সূর্যের কক্ষপথে পরিভ্রমণ ও এ-সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করবে আদিত্য। স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার দুপুর ১২টার দিকে অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীহরিকোটা শহরের লঞ্চপ্যাড থেকে নভোযানটি উৎক্ষেপণ করা হয়। খবর এনডিটিভি ও আনন্দবাজার অনলাইনের। এই শ্রীহরিকোটা লঞ্চপ্যাড থেকেই গত ১৪ জুলাই চাঁদের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল চন্দ্রযান-৩। যাত্রার ৩৯ দিন পর গত ২৩ আগস্ট চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে অবতরণে সক্ষম হয় মহাকাশ যান বিক্রম। সেই সাফল্যের ২ সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে সূর্যের কক্ষপথে আদিত্যকে পাঠাল ভারত। সৌরজগতের প্রাণকেন্দ্র সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব ১৪ কোটি ৯৬ লাখ কিলোমিটার। পৃথিবী থেকে উড়াল দেওয়ার পর ১৫ লাখ কিলোমিটার পর্যন্ত যাবে আদিত্য। শতকরা হিসেবে যা পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বের ১ শতাংশ পথ। এই অভিযানের সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা ভারতের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইসরো জানিয়েছে, এই পথ পাড়ি দিতে আদিত্য সময় নেবে চার মাস। সংস্কৃত ভাষায় সূর্যের আরেক নাম আদিত্য। এ কারণে মহাকাশযানটির নাম সূর্যের নামেই রাখা হয়েছে। আর এল-১ হলো লেগ্রেঞ্জ পয়েন্ট ১-এর সংক্ষিপ্ত রূপ। ১৫ লাখ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করার পর যেখানে গিয়ে থামবে আদিত্য, সেই এলাকাটি হলো সূর্যের লেগ্রেঞ্জ পয়েন্ট। ইউরোপের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির সংজ্ঞানুযায়ী, লেগ্রেঞ্জ পয়েন্ট হলো মহাবিশ্বের এমন একটি এলাকা, যেখানে দুই বৃহৎ মহাজাগতিক বস্তু, অর্থাৎ সূর্য ও পৃথিবীর মহাকর্ষীয় শক্তি পরস্পরকে বিকর্ষণ করে। আদিত্য যদি নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে, তাহলে পৃথিবী যে গতিতে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে সেই একই গতিতে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে সক্ষম হবে মহাকাশযানটি। ইসরো জানিয়েছে, শ্রীহরিকোটার লঞ্চপ্যাড থেকে উৎক্ষেপণের পর লেগ্রেঞ্জ পয়েন্টে যাওয়ার আগে বেশ কয়েকবার পৃথিবীর কক্ষপথে পরিভ্রমণ করবে আদিত্য। এতে সূর্যের কক্ষপথে পৌঁছাতে সুবিধা হবে যানটির। উৎক্ষেপণের পর প্রায় ১৬ দিন পৃথিবীর চারদিকে পাক খাবে আদিত্য। এই ১৬ দিনে সূর্যের দিকে পাড়ি দেওয়ার জন্য পাঁচটি ধাপে গতিবেগ বাড়াবে আদিত্য। এরপর ১১০ দিন সূর্যের অভিমুখে যাত্রা করে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়িয়ে সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করবে সেটি। এই লেগ্রেঞ্জ পয়েন্টে সূর্য এবং পৃথিবীর আকর্ষণ এবং বিকর্ষণ বল একসঙ্গে ক্রিয়াশীল। ফলে এই অঞ্চলে পৌঁছে কৃত্রিম উপগ্রহ স্থির থাকতে পারে। লেগ্রেঞ্জ পয়েন্টে পৌঁছানোর পর সূর্যের তিন স্তর সোলার করোনা (সূর্যের বহিরাবরণ) ফটোস্ফেয়ার (সূর্যের পৃষ্ঠ, খালিচোখে পৃথিবী থেকে আমরা এই অংশটি দেখি) এবং ক্রোমোস্ফেয়ার (ফটোস্ফেয়ার ও সোলার করোনার মধ্যবর্তী অর্ধতরল স্তর) পর্যবেক্ষণ ও এ সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করবে আদিত্য। এই কাজের জন্য নভোযানটি প্রয়োজনীয় ৭টি পেলোড (বৈজ্ঞানিক সরঞ্জাম) নিয়ে যাচ্ছে। লেগ্রেঞ্জ পয়েন্ট পৌঁছানোর পর ভিসিবল এমিশন লাইন করোনাগ্রাফি (ভিইএলসি) পেলোড প্রতিদিন ১ হাজার ৪৪০টি ছবি তুলে পাঠাবে। তাই এই পেলোডটিকেই আদিত্য-এল১-এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পেলোড বলে মনে করা হচ্ছে। এই অভিযানে ব্যয় কত হয়েছে, সে সম্পর্কিত কোনো তথ্য দেয়নি ইসরো। তবে সরকারি সূত্রে জানা গেছেÑ অভিযানের বাজেট ধরা হয়েছে ভারতীয় মুদ্রায় ৩৭৮ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪৯৯ কোটি ২৪ লাখ ৬৯ টাকা)। উল্লেখ্য, ১৯৮১ সালে জাপান সূর্যের কক্ষপথে প্রথম মহাকাশযান পাঠিয়েছিল। সেই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিল সূর্যের আকার-আয়তন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নেওয়া। এরপর ১৯৯০ সাল থেকে সূর্য অভিযান সংক্রান্ত গবেষণায় গুরুত্ব দেওয়া শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল অ্যারোনেটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা) এবং ইউরোপের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইএসএ)। তাদের এই তৎপরতায় সাফল্য আসে ৩০ বছর পর, ২০২০ সালে। ওই বছর ফেব্রুয়ারি মাসে নাসা ও ইএসএ যৌথভাবে সূর্যের কক্ষপথে একটি যান পাঠাতে সক্ষম হয়। জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের পর চতুর্থ দেশ হিসেবে সূর্যের কক্ষপথে যান পাঠাল ভারত।
০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

চাঁদের পর সূর্যের উদ্দেশে যাত্রা করল ভারতীয় মহাকাশযান
চাঁদের বুকে সফলভাবে অবতরণের পর আজ শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) সূর্যের উদ্দেশে মহাকাশযান আদিত্য-এল ১ উৎক্ষেপণ করেছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে প্রথমবারের মতো সফলভাবে চন্দ্রযান পাঠানোর কয়েক দিন পরই সূর্যের দিকে নজর দিয়েছে ভারত। হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, আদিত্য-এল ১ নামের মহাকাশযানটি আজ ভারতীয় সময় বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে শ্রীহরিকোটার লঞ্চ প্যাড থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। এটিকে পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যবর্তী এল-১ পয়েন্টে একটি কক্ষপথে স্থাপন করা হবে। এই পয়েন্টের দূরত্ব পৃথিবী থেকে ১৫ লাখ কিলোমিটার, যা পৃথিবী ও সূর্যের দূরত্বের এক ভাগ। আর এই দূরত্ব অতিক্রম করতে মহাকাশযানটির চার মাস সময় লাগবে। ইসরো জানিয়েছে, একবার মহাকাশযানটি উড্ডয়ন করলে এল-১ পয়েন্টের দিকে উৎক্ষেপণের আগে বেশ কয়েকবার পৃথিবীর চারপাশে প্রদিক্ষণ করবে। সংস্থাটি বলছে, এই কক্ষপথের সুবিধা হলো, সেখান থেকে কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই সব সময় সূর্যের বিভিন্ন কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করা যাবে। এ ছাড়া মহাকাশের পরিবেশের ওপর সূর্যের প্রভাব সম্পর্কেও জানতে পারবে মানুষ। এবারের সূর্য অভিযানে কত টাকা খরচ হচ্ছে সে সম্পর্কে কিছু জানায়নি ভারতীয় মহাকাশ সংস্থা। তবে দেশটির গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, এবারের মিশনে ৪ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার খরচ হবে। গত ২৩ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মাটিতে সফলভাবে অবতরণ করে ভারতের চন্দ্রযান-৩। এর আগে এ অঞ্চলের বিষয়ে অজানা ছিল মানুষের। তবে এটি সেখানে সফলভাবে অবতরণ করায় গবেষণায় নতুন দ্বার খুলবে বলে আশা ভারতীয় বিজ্ঞানীদের। এর আগে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মহাকাশযান চাঁদের মাটি স্পর্শ করেছে। গত মাসে এ তালিকায় চতুর্থ দেশ হিসেবে নিজেদের নাম যোগ করেছে ভারত। আর এবার আদিত্য-এল ১ অভিযান সফল হলে সূর্যে মহাকাশযান পাঠানো জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে নিজেদের নাম যুক্ত করতে পারবে ভারত।
০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

আজই সূর্যের উদ্দেশে মহাকাশযান পাঠাবে ভারত
চাঁদের বুকে সফলভাবে অবতরণের পর আজ শনিবার সূর্যের উদ্দেশে মহাকাশযান পাঠাবে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। চাদেঁর দক্ষিণ মেরুতে প্রথমবারের মতো চন্দ্রযান পাঠানোর কয়েক দিন পরই সূর্যের দিকে নজর দিয়েছে ভারত। খবর বিবিসি। আদিত্য-এল ১ নামের মহাকাশযানটি আজ ভারতীয় সময় বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে শ্রীহরিকোটার লঞ্চ প্যাড থেকে উৎক্ষেপণ করা হবে। এরপর এটিকে পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যবর্তী এল-১ পয়েন্টে একটি কক্ষপথে স্থাপন করা হবে। এই পয়েন্টের দূরত্ব পৃথিবী থেকে ১৫ লাখ কিলোমিটার, যা পৃথিবী ও সূর্যের দূরত্বের এক ভাগ। আর এই দূরত্ব অতিক্রম করতে মহাকাশযানটির চার মাস সময় লাগবে। ইসরো জানিয়েছে, একবার মহাকাশযানটি উড্ডয়ন করলে এল-১ পয়েন্টের দিকে উৎক্ষেপণের আগে বেশ কয়েকবার পৃথিবীর চারপাশে প্রদিক্ষণ করবে। সংস্থাটি বলছে, এই কক্ষপথের সুবিধা হলো, সেখান থেকে কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই সব সময় সূর্যের বিভিন্ন কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করা যাবে। এ ছাড়া মহাকাশের পরিবেশের ওপর সূর্যের প্রভাব সম্পর্কেও জানতে পারবে মানুষ। এবারের সূর্য অভিযানে কত টাকা খরচ হচ্ছে সে সম্পর্কে কিছু জানায়নি ভারতীয় মহাকাশ সংস্থা। তবে দেশটির গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, এবারের মিশনে ৪ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার খরচ হবে। গত ২৩ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মাটিতে সফলভাবে অবতরণ করে ভারতের চন্দ্রযান-৩। এর আগে এ অঞ্চলের বিষয়ে অজানা ছিল মানুষের। তবে এটি সেখানে সফলভাবে অবতরণ করায় গবেষণায় নতুন দ্বার খুলবে বলে আশা ভারতীয় বিজ্ঞানীদের। এর আগে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মহাকাশযান চাঁদের মাটি স্পর্শ করেছে। গত মাসে এ তালিকায় চতুর্থ দেশ হিসেবে নিজেদের নাম যোগ করেছে ভারত। আর এবার আদিত্য-এল ১ অভিযান সফল হলে সূর্যে মহাকাশযান পাঠানো জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে নিজেদের নাম যুক্ত করতে পারবে ভারত।
০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

চাঁদের বুকে ধ্বংস হলো রাশিয়ার মহাকাশযান
চন্দ্রাভিযানে যাওয়া রাশিয়ার মহাকাশযান লুনা চাঁদের বুকে আছড়ে পড়ে ধ্বংস হয়েছে। আর এর মাধ্যমে ব্যর্থ হয়েছে রাশিয়ার ৪৭ বছরের প্রথম চন্দ্রাভিযান। অন্য আরেকটি কক্ষপথে চলে যাওয়ার পর রুশ মহাকাশ যান লুনা-২৫ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং এটি চাঁদের বুকে আছড়ে পড়ে। এদিকে গতকাল রোববার সকালে চন্দ্রাভিযানে ভারতের চন্দ্রযান-৩-এর দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত ডি-বুস্টিং অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এখন চাঁদের মাটিতে পৌঁছানোর সেই মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য অপেক্ষা করছেন ভারতবাসী। খবর সিএনএন ও এনডিটিভির। রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রসকসমস জানিয়েছে, শনিবার গ্রিনিচ সময় ১১টা ৫৭ মিনিটে তারা মহাকাশযানের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে। আজ সোমবার এটির চাঁদে অবতরণ করার কথা ছিল। সংস্থাটি বিবৃতিতে বলেছে, ‘মহাকাশযানটি অন্য আরেকটি কক্ষপথে চলে যায় এবং চাঁদের পৃষ্ঠে আছড়ে পড়ার মাধ্যমে ধ্বংস হয়ে যায়।’ সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, লুনা-২৫-এর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণ খুঁজে বের করতে একটি আন্তঃবিভাগীয় কমিশন গঠন করা হয়েছে। গত ১০ আগস্ট লুনা-২৫ উৎক্ষেপণ করা হয়। এই মিশনের মাধ্যমে আশার সঞ্চার হয়েছিল, রাশিয়া আবারও চাঁদে অবতরণের লড়াইয়ে পূর্ণ শক্তি নিয়ে যোগ দিচ্ছে। উল্লেখ্য, রাশিয়া প্রথম দেশ হিসেবে ১৯৫৭ সালে পৃথিবীর কক্ষপথে স্পুটনিক-১ স্যাটেলাইট পাঠিয়েছিল। এ ছাড়া সোভিয়েত মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিন ১৯৬১ সালে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে মহাকাশ ভ্রমণে গিয়েছিলেন। ১৯৭৬ সালে লুনা-২৪-এর পর রাশিয়া (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন) চাঁদে আর কোনো অভিযান চালায়নি। ওই সময় দেশটির শাসক ছিলেন কমিউনিস্ট নেতা লিওনিদ ব্রেজনেভ। চাঁদের খুব কাছে চন্দ্রযান-৩ : এদিকে রাশিয়া চন্দ্রাভিযানে এমন সময় ধাক্কা খেল, যখন ভারত প্রায় একই সময় সফলভাবে চাঁদে মহাকাশযান অবতরণের চেষ্টা করছে। বর্তমানে ভারতের মহাকাশযান চন্দ্রযান-৩ চাঁদে অবতরণের অপেক্ষায় আছে। এর দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত ডি-বুস্টিং অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে রোববার সকালে; এখন চাঁদের মাটিতে পৌঁছানোর সেই মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য কেবল অপেক্ষা। মহাকাশযানটির ল্যান্ডার বুধবার চাঁদের মাটিতে অবতরণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই পর্বের দিকেই এখন গভীর মনোযোগ ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা-ইসরোর বিজ্ঞানীদের। এনডিটিভি জানিয়েছে, ল্যান্ডার বিক্রম চাঁদের কক্ষপথের এমন একটি অবস্থানে রয়েছে, যেখান থেকে চাঁদের নিকটতম দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার এবং দূরবর্তী পথের দূরত্ব ১৩৪ কিলোমিটার। এই কক্ষপথ থেকেই বুধবার চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে সফট-ল্যান্ডিংয়ের চেষ্টা করবে বিক্রম। চাঁদের ওই অংশ সম্পর্কে এখনো খুব কমই জানে মানুষ। প্রথম দেশ হিসেবে ভারত সেখানে রোবটযান নামাতে যাচ্ছে। ইসরো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (টুইটার) জানিয়েছে, চন্দ্রযান-৩-এর দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত ডিবুস্টিং অপারেশনের মধ্য দিয়ে লুনার মডিউল সফলভাবে কক্ষপথের দূরত্ব কমিয়ে এনেছে। মডিউলটি অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাবে এবং নির্ধারিত ল্যান্ডিং সাইটের সূর্যোদয়ের জন্য অপেক্ষা করবে। অভিযান সফল হলে নিরাপদে চাঁদের মাটিতে নামতে পারা চতুর্থ দেশ হবে ভারত। এর আগে কেবল যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের মহাকাশযান নিরাপদে চাঁদের মাটিতে নামতে পেরেছে। গত বৃহস্পতিবার চন্দ্রযান-৩-এর ‘প্রপালশন মডিউল’ থেকে ‘ল্যান্ডার মডিউলটি’ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পৃথিবী থেকে সমস্ত পথ ল্যান্ডারকে বয়ে নিয়ে এসেছে প্রপালশন মডিউল। প্রপালশন মডিউলটি এখন কয়েক মাস বা বছর ধরে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে থাকবে এবং চাঁদের বায়ুমণ্ডল পর্যবেক্ষণ করবে। ল্যান্ডারটি সেখান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরই বৃহস্পতিবার প্রথম চাঁদের উপরিভাগের ছবি পাঠিয়েছে। চাঁদের মাটিতে নামার পর ল্যান্ডার বিক্রমের পেট থেকে বেরিয়ে আসবে রোভার প্রজ্ঞান। তার ছবি তুলে পৃথিবীতে পাঠাবে বিক্রম। রোবটযান প্রজ্ঞান চন্দ্রপৃষ্ঠের রাসায়নিক গঠন বিশ্লেষণ এবং পানির সন্ধান করবে। এই মিশনের আয়ু হবে এক চন্দ্র দিবস, যা পৃথিবীর ১৪ দিনের সমান। গত ১৪ জুলাই দুপুরে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে চন্দ্রযান-৩-এর সফল উৎক্ষেপণ করে ইসরো। চাঁদে পৌঁছানোর চেষ্টায় এর আগে দুটি অভিযান চালিয়েছে ভারত। ২০০৮ সালে প্রথম অভিযানে চন্দ্রযান-১ পৌঁছেছিল চাঁদের কক্ষপথে। চাঁদের ভূপৃষ্ঠের গঠন ও পানির উপস্থিতি নিয়ে বড় পরিসরে গবেষণা চালানো হয় সে সময়। দিনের বেলায় চাঁদে যে একটি বায়ুমণ্ডল সক্রিয় থাকে, ওই গবেষণাতেই তা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়। ২০১৯ সালের দ্বিতীয় অভিযান আংশিকভাবে সফল হয়েছিল। চন্দ্রযান-২-এর অরবিটার আজও চাঁদের চারপাশ প্রদক্ষিণ করছে এবং তথ্য পাঠাচ্ছে; কিন্তু এর ল্যান্ডার অবতরণের সময় শেষ মুহূর্তের জটিলতায় চাঁদের মাটিতে বিধ্বস্ত হয়।
২১ আগস্ট, ২০২৩

৪৭ বছর পর চাঁদে মহাকাশযান পাঠানোর অভিযানে ব্যর্থ রাশিয়া
নতুন করে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখা হলো না রাশিয়ার। ৪৭ বছর পর চাঁদে মহাকাশযান পাঠানোর প্রথম অভিযান ব্যর্থ হয়েছে রাশিয়ার। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চাঁদের বুকে ভূপাতিত হয়েছে রুশ মহাকাশযান লুনা-২৫। ২১ আগস্ট চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে লুনা-২৫ এর অবতরণ করার কথা ছিল। রোববার (২০ আগস্ট) বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই তথ্য জানিয়েছে। কারিগরি ত্রুটির কথা উল্লেখ করে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত মহাকাশ সংস্থা রসকসমস জানায়, মহাকাশযানটি শনিবার চাঁদে অবতরণের আগে একটি সুনির্দিষ্ট কক্ষপথে পাঠানোর পর এতে গণ্ডগোল দেখা দেয়। এর খানিকক্ষণ পর লুনা-২৫ এর সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। যন্ত্রটি (মহাকাশযান) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অপরিকল্পিত কক্ষপথ ধরে আগাতে থাকে এবং একপর্যায়ে চাঁদে আছড়ে পড়ে এর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায় বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে রুশ মহাকাশ সংস্থা রসকসমস। সোমবার চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে রুশ মহাকাশযানের সফল অবতরণ হলে নতুন ইতিহাস তৈরি হতো দেশটির। কারণ, ওই দক্ষিণ মেরুতে এর আগে কোনো দেশের মহাকাশযানের সফল অবতরণ হয়নি। বিশ্বের প্রথম রাষ্ট্র হিসেবে পৃথিবীর কক্ষপথে ১৯৫৭ সালে স্পুৎনিক ১ নামে একটি কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠিয়েছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন। এরপর প্রথম মানুষ হিসেবে সোভিয়েত নভোচারী ইউরি গ্যাগারিন ১৯৬১ সালে মহাকাশ ভ্রমণ করেন। পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালে চাঁদে অবতরণ করেন ২ মার্কিন নভোচারী। সর্বশেষ অভিযানের ব্যর্থতার ফলে মহাকাশ অভিযানে রাশিয়ার সেই সুদিন বা সক্ষমতা, কোনোটিই আর আগের মতো নেই বলে ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।  ১৯৭৬ সালে লুনা-২৪ অভিযানের পর রাশিয়া গত ৪৭ বছরে আর কোনো মহাকাশ অভিযান পরিচালনা করেনি। মূলত ভারতের মহাকাশযান ‘চন্দ্রযান-৩’ এর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়েছিল লুনা-২৫। এ সপ্তাহেই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করতে পারবে বলে ভারতের কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেছেন। উল্লেখ্য, রাশিয়া ও ভারতের পাশাপাশি, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশ মহাকাশ প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে।
২০ আগস্ট, ২০২৩
X