দেশে প্রথম রক্তে সিসা ও ভারী ধাতু নির্ণয়ে শুরু হচ্ছে জরিপ
জাতিসংঘের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউনিসেফের সহায়তায় দেশে প্রথমবারের মতো রক্তে সিসা ও ভারী ধাতুর মাত্রা নির্ণয়ে নারী-শিশুদের নিয়ে পারিবারিক জরিপ শুরু করছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। সারা দেশে বড় পরিসরে এ জরিপ কার্যক্রম চলবে। জরিপে শিশু ও নারী সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে তাদের বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে বাস্তব ধারণা লাভ করা যাবে। গতকাল মঙ্গলবার বিবিএস ও ইউনিসেফ বাংলাদেশে মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে (এমআইসিএস), রাউন্ড ৭ (২০২৪-২৫) চালুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিবিএস মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান সচিব শাহনাজ আরেফিন। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে ইউনিসেফের রিপ্রেজেন্টেটিভ শেলডন ইয়েট। বিবিএস জানিয়েছে, এমআইসিএস হলো এক ধরনের পারিবারিক জরিপ, যার মাধ্যমে শিশু ও নারী সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে তাদের বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে বাস্তব ধারণা লাভ করা যায়। প্রাপ্ত এই তথ্য-উপাত্ত তাদের উপযোগী নীতিমালা তৈরি, পরিকল্পনা গ্রহণ ও কর্মসূচি প্রণয়নে সহায়তা করে। এমআইসিএস পরিচালনায় বিবিএস ও ইউনিসেফ কয়েক দশক ধরে একসঙ্গে কাজ করছে। বাংলাদেশে প্রথম এমআইসিএস পরিচালিত হয় ৩০ বছর আগে। তবে এবারের জরিপে কিছু নতুন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই এমআইসিএসের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো রক্তে সিসার মাত্রা (বিএলএল), ভারী ধাতুর মাত্রা, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টসের মাত্রা এবং রক্তশূন্যতা বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। আমাদের চারপাশে সিসাসহ ভারী উপাদানের উপস্থিতি শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে; তবে পরিবেশগত এই ঝুঁকি সময়মতো নির্ণয় ও মোকাবিলার মাধ্যমে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রতি তিনটি শিশু মৃত্যুর একটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই এই জরিপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি বিবিএসের। অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার জরিপ দেশের শিশু এবং সুবিধাবঞ্চিত নারীদের চাহিদার বিষয়ে সঠিক তথ্য সরবরাহ করবে। এ জরিপের ফল আমাদের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার তথ্যের ঘাটতি পূরণ করতে এবং সময়োপযোগী তথ্যের মাধ্যমে কার্যকর পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন সক্ষম হবে। পরিসংখ্যান সচিব শাহনাজ আরেফিন বলেন, আমরা ৯০ দশকে যেখানে ছিলাম সেখান থেকে অনেক অগ্রসর হচ্ছি। আমরা এমআইসিএসে এমপিআইয়ে তুলনা করতে পারব। সবমিলে একটি জরিপ করে সব ধরনের তথ্য পাওয়া যাবে সে ধরনের সক্ষমতা এখনো হয়নি। শিশুরা পৃথিবীর ভবিষ্যৎ, তাদের নিয়ে এগোতে হবে। নারীরা মানুষের অর্ধেক। তাদের ছাড়া কাজ করা যাবে না। বাংলাদেশে ইউনিসেফের রিপ্রেজেন্টেটিভ শেলডন ইয়েট বলেন, এ জরিপ প্রতিটি শিশুর প্রয়োজন ও তাদের অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জরিপ থেকে প্রাপ্ত মূল্যবান তথ্য বাংলাদেশের শিশু ও তাদের পরিবার জানবে। অনেক শিশু ও নারী যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় সেগুলোর সময়োপযোগী সমাধানে পাবে। বিবিএসের মহাপরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, আগামী ডিসেম্বরে শুমারির কার্যক্রম শুরু হবে। আমরা বিভিন্ন জরিপ পরিচালনা করি। এসডিজির ১১৫টি ইন্ডিকেটরের তথ্য আমরা দিয়ে থাকি। এটি এমআইসিএসের সপ্তম রাউন্ড। এখানে ৪ বছরের শিশুদের অ্যামোনিয়ার জন্য রক্ত সংগ্রহ করা হবে। বিবিএস জানায়, এমআইসিএস পরিচালনায় বিবিএস ও ইউনিসেফ কয়েক দশক ধরে একসঙ্গে কাজ করছে। বাংলাদেশে প্রথম এমআইসিএস পরিচালিত হয় ৩০ বছর আগে। এই জরিপগুলো দেশের নারী ও শিশুর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এই উপাত্ত ভান্ডার শিশুদের অধিকার রক্ষায় পরিবর্তনকারী নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। পাশাপাশি ইউনিসেফের, নীতিনির্ধারকদের, সরকারের ও অংশীজনের কাজেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এমআইসিএস এই জরিপে স্বাস্থ্য, পুষ্টি, পানি, স্যানিটেশন, শিক্ষা ও শিশু সুরক্ষা বিষয়ে প্রায় ২০০টি সূচক অন্তর্ভুক্ত থাকবে। ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ২০২০-২৫ মূল্যায়নে এ জরিপের উপাত্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিবিএস জানায়, নব্বইয়ের দশকে ইউনিসেফ প্রথম এমআইসিএসের সূচনা করে। গ্লোবাল মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে (এমআইসিএস) প্রোগ্রামের লক্ষ্য ছিল দেশগুলোকে শিশু ও নারীদের আন্তর্জাতিকভাবে তুলনামূলক তথ্য সংগ্রহে সহায়তা করা। তিন দশক ধরে ইউনিসেফের সহযোগিতায় বিবিএস সফলভাবে এমআইসিএসের বেশ কয়েকটি রাউন্ড পরিচালনা করেছে। ২০১৯ এমআইসিএস ৬৪ হাজার পরিবারের জরিপ করেছে এবং শিশু ও নারীদের জন্য ১৪৪টি সূচক তৈরি করেছে, যার মধ্যে ২৯টি সরাসরি রয়েছে।
১২ জুন, ২০২৪
X