যমুনায় পানি কমায় ব্রহ্মপুত্রে ভাঙন
জামালপুরের ইসলামপুরে যমুনা নদীতে পানি কমায় ব্রহ্মপুত্র নদী তীরবর্তী এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিনের ভাঙনে বসতভিটা ফসলি জমি বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। দিশাহারা তীরবর্তী লোকজন। ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস সংশ্লিষ্টদের।  উজানের পাহাড়ি ঢলে এবং অতি বৃষ্টিতে ইসলামপুরে সৃষ্ট বন্যায় গত ১২ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ১ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে ব্রহ্মপুত্র নদে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। উপজেলার চরপুটিমারী ইউনিয়নের ৪ নম্বর চর এলাকায় গত কয়েক দিনের ভাঙনে প্রায় অর্ধশত ঘরবাড়ি ও কয়েক একর ফসলি জমি নদীর গর্ভে চলে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ইমারজেন্সি প্রকল্পের আওতায় গত বছর প্রায় ২ শত মিটার  জিও ব্যাগ ডাম্পিং করেন। ডাম্পিংয়ের উজানে ১০০ মিটার অবশিষ্ট রয়ে যায়। সে অবশিষ্ট অংশে নদীর মারাত্মক ভাঙনে বিভিন্ন সামাজিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বসত ভিটা ও শত শত বিঘা  ফসলি জমি হুমকির মুখে রয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের করাল থাবাতে শেষ সম্বলটুকু নদের পেটে যাওয়াতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন নদীর তীরবর্তী লোকজন। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন ইতোমধ্যেই। ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা কালবেলাকে জানান জামালপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম। নদীটির ভাঙনের কবল থেকে গ্রামটি রক্ষার্থে তীরবর্তীদের মাথাগোঁজার আশ্রয় টিকে থাকুক, এমন প্রত্যাশা সবার।
০৬ জুলাই, ২০২৪

বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপরে যমুনার পানি
সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সিরাজগঞ্জ শহর হার্ড পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার এবং কাজিপুরের মেঘাই পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে যমুনার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ ফুলজোড়, ইছামতি, করতোয়া নদীর পানিও বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। ইতোমধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার ১২৭৬ পরিবার। প্লাবিত হয়েছে ৪০০ হেক্টরেরও বেশি ফসলি জমি। অপরদিকে নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে তীব্র ভাঙন চলছে।  শুক্রবার (৫ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৩৭ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ৩৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে, কাজিপুর মেঘাই পয়েন্টে রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ২৪ মিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় ৫০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসমীরা ৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।  খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যমুনায় পানি বেড়ে জেলার কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার চরাঞ্চলের গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এসব অঞ্চলের শত শত পরিবার। তলিয়ে গেছে আবাদি জমি, রাস্তাঘাট ও বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বন্যাকবলিত মানুষগুলো বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। এদিকে শাহজাদপুরের হাটপাচিল ও কাজিপুরের খাসরাজবাড়িতে চলছে নদীভাঙন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এ দুটি এলাকায় একশোরও বেশি বাড়িঘর যমুনা বিলীন হয়েছে।  পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান জানান, কয়েকদিন ধরেই যমুনার পানি দ্রুতগতিতে বেড়েছে। ইতোমধ্যে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টা ধীগতিতে বৃদ্ধি পেতে পারে। মাঝারি আকারের বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, জেলার ভাঙনকবলিত এলাকাগুলো জিওটিউব ও জিওব্যাগ ডাম্পিং করে ভাঙন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে।  জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বাবুল কুমার সূত্রধর বলেন, বন্যার পানি ওঠে জেলার ৪০৮ হেক্টর জমির পাট, তিল, কলা ও মরিচ ক্ষেত প্লাবিত হয়েছে। এখনো ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা যায়নি। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, সর্বশেষ জেলার ৫টি উপজেলার ১২৭৬টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি আছে। ৫০০ টন চাল আর ১০ লাখ টাকা মজুত আছে। সময়মতো সেগুলো বিতরণ করা হবে।
০৫ জুলাই, ২০২৪

যমুনার গর্ভে বিলীন ৫ শতাধিক বাড়িঘর
সিরাজগঞ্জে তৃতীয় দফায় দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনা নদীর পানি। সেই সঙ্গে জেলার নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে জেলার কাজিপুর, সদর ও শাহজাদপুর উপজেলায় শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আর গত এক মাসে ৫ শতাধিক বসতভিটা গিলে নিয়েছে যমুনা। বুধবার (৩ জুলাই) সকালে সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৪৪ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ৪২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৯০ মিটার)। মঙ্গলবার এই পয়েন্টে যমুনার পানি বৃদ্ধি পায় ৩৪ সেন্টিমিটার। দুদিনে বাড়ে ৭৬ সেন্টিমিটার। অন্যদিকে কাজিপুর মেঘাই পয়েন্টে পানি রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ১০ মিটার। এ পয়েন্টে নদীর পানি ২৪ ঘণ্টায় ৪০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার নিচ প্রবাহিত হচ্ছে (বিপৎসীমা ১৪ দশমিক ৮০ মিটার)। মঙ্গলবারও ৪০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পায়। দুদিনে বাড়ে ৮০ সেন্টিমিটার।  খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যমুনায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার কাজিপুর উপজেলার খাসরাজবাড়ী, সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ও শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর এবং কৈজুরী ইউনিয়নে গত এক সপ্তাহ ধরে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিওব্যাগ ফেললেও বর্ষা মৌসুমে সেটা কোনো কাজেই আসছে না।  খাসরাজবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে দক্ষিণ খাসরাজবাড়ি গুচ্ছগ্রামের ৬০/৭০টি বাড়িঘর ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নদীগর্ভে চলে গেছে। গুচ্ছগ্রামের মানুষগুলো আবারও ভিটেমাটিহীন নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।   সদর উপজেলার কাওয়কোলা ইউনিয়নে একমাসে দুইশতাধিক বাড়িঘর ও তিন হাজার একর ফসলি জমি নদীগর্ভেবিলীন হয়েছে। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে হাটবয়ড়া, দোগাছি, বড়কয়ড়া, ছোটকয়ড়া, চন্ডাল বয়ড়া, বেড়াবাড়ি, কৈগাড়ি, দোরতা ও বর্ণি গ্রামের আরো পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর, চার কিলোমিটার পাকা রাস্তা, কয়েকশ একর ফসলি জমি, বন্যা ও দুর্যোগকালীন আশ্রয়কেন্দ্র মুজিবকেল্লা, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর অধীন ১২৬টি ব্যারাক, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, ছয়টি সরকারি প্রাইমারি স্কুল এবং একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবন। শাহজাদপুরের জালালপুর ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামে যমুনার ডানতীরে দীর্ঘদিন ধরেই ভাঙন চলছিল। গত এক মাসে এই এলাকার প্রায় পৌনে দুইশ বসতভিটা ও ৩০০ একর ফসলি জমি বিলীন হয়েছে। যমুনার পানি বাড়ার কারণে ভাঙনের তীব্রতা আরও বেড়েছে। ভাঙন শুরু হয়েছে পার্শ্ববর্তী কৈজুরী ইউনিয়নের হাঁটপাচিল গ্রামেও। গত তিনদিনের ব্যবধানে এ দুটি ইউনিয়নে অন্তত ৪০/৫০টি বাড়িঘর বিলীন হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।  জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ বলেন, বছরের পর বছর ধরে এ অঞ্চলে ভাঙন চলে আসছে। মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে। ভাঙনরোধে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প দিলেও তিন বছরেও তা শেষ হয়নি। ফলে কিছুতেই ভাঙনমুক্ত হচ্ছে না এ অঞ্চলবাসী।  কৈজুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন খোকন বলেন, কয়েকদিন ধরে হাঁট পাচিলে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। কোবাদ মাস্টারের একটি দোতলা বাড়ি এবং পাশেই বিশাল গরুর খামার নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন ইউএনও। আমাদের এলাকাবাসী কোনো ত্রাণ চায় না, এক বান্ডিল টিনও চায় না। তারা চায় দ্রুত নদীভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।  শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুজ্জামান বলেন, জালালপুর ও কৈজুরী ইউনিয়নের হাঁটপাচিল এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। কয়েকদিন আগে ভাঙন কমেছিল। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। দুটি এলাকায় তিনদিনে অন্তত ৪৫ থেকে ৫০টি বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন কবলিতদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের সহযোগিতা করা হবে।  এদিকে পাউবো সূত্র জানায়, ২০২১ সালে যমুনার ভাঙনরোধে শাহজাদপুরের এনায়েতপুর থেকে কৈজুরী পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার নদীতীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু হয়। ৬৫০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও মাত্র অর্ধেক শেষ হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ জুন পর্যন্ত বাড়োনো হয়েছে।  সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, নদী ভাঙনরোধে আমরা প্রকল্পের পাশাপাশি জিওটিউব ডাম্পিং শুরু করেছি। এ ছাড়া পাউবোর ড্রেজার দিয়ে আমরা চ্যানেলটিকে প্রশস্ত করার চেষ্টা করছি। নদীর গতিপথ পরিবর্তনের জন্য খনন কাজ চলছে। সেই সঙ্গে ভাঙনরোধে কাজ করা হচ্ছে।
০৩ জুলাই, ২০২৪

পানি নামতেই এবার ভাঙন দুর্যোগ
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ধলাই নদী পাড়ের বাসিন্দারা বন্যার পানি নামার পর নতুন দুর্যোগের মুখে পড়েছেন। শুরু হয়েছে নদীভাঙন। পানি কমতে শুরু করেছে। কিন্তু পানি কমলেও বাড়ছে ভাঙনের তীব্রতা। এরই মধ্যে অনেকের ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। অনেকেই ঘরবাড়ি সরিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন অন্যত্র। স্থানীয়রা জানান, বর্ষা আসতে না আসতেই প্রতিরক্ষা বাঁধে ধস শুরু হওয়ায় অনেকে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে ধলাই নদীর ৫৭ কিলোমিটার প্রতিরক্ষা বাঁধের এখন নাজুক অবস্থা। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ধলাই নদীর বাঁধ পুরোনো হওয়ায় ঝুঁকি বেশি। অনেক স্থানে বাঁধের অর্ধেক নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভারতের ত্রিপুরা থেকে আসা কমলগঞ্জের ৫৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ধলাই নদীর দুই পাশের বাঁধ ঢল ও বন্যায় অত্যন্ত দুর্বল হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও ভেঙে গেছে। আবার বাঁধের অনেক জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৯৯৬ সালের পর আর কোনো বড় প্রকল্প গ্রহণ না করায় বাঁধ এখন হুমকির মুখে রয়েছে। প্রায় ২০টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল নামলেই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। গত বুধবার নদীর বড়চেক ও চৈতন্যগঞ্জ এলাকায় প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের কমলগঞ্জ পৌরসভা অংশের চারটি স্থান খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। স্থানগুলো হলো রামপাশা, কুমড়াকাপন, আলেপুর ও নরেন্দ্রপুর। রামপাশায় বাঁধের প্রায় ২০০ মিটার এলাকা ধসে পড়েছে। অন্যদিকে ইসলামপুর ইউনিয়নের মোকাবিল, গোলের হাওর, শ্রীপুর, আদমপুর ইউনিয়নের হকতিয়ারখোলা, তিলকপুর, ঘোড়ামারা, রানীরবাজার, বনগাঁও, কেয়ালীঘাট, মাধবপুর ইউনিয়নের হিরামতি, মাধবপুর বাজার, পাত্রখোলা, কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চৈতন্যগঞ্জ, নারায়ণপুর, রামপুর, মুন্সিবাজার ইউনিয়নের সুরানন্দপুর, বাদে করিমপুর, খুশালপুর, লক্ষ্মীপুর, রহিমপুর ইউনিয়নের বড়চেক, ছয়কুট, শ্যামেরকোনা, চৈত্রঘাট, কালেঙ্গাসহ প্রায় ২০টি স্থানে নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। নদী পাড়ের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, ফের ভারি বৃষ্টি হলেই পাহাড়ি ঢলে বাঁধ বিলীন হয়ে যাবে। কমলগঞ্জ পৌর এলাকার রামপাশা গ্রামের রফিক বখসের বাড়ির পাশেই ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের প্রায় ৩০০ ফুট অংশ ভেঙে পড়েছে। সেখানে এক ফুট পরিমাণ বাঁধ টিকে আছে। কুমরাকাপন এলাকায়ও মাটি ধসে পড়েছে। এতে গ্রামবাসী আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহিম বলেন, কয়েকদিন হলো বন্যা গেল। এখন আবার আতঙ্ক হয়েছে ভাঙন। এ যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। নদীভাঙন ঠেকাতে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি। কমলগঞ্জে দায়িত্বরত পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী রাসেল মিয়া বলেন, ‘ধলাই নদীর উভয় পাশে প্রতিরক্ষা বাঁধ পুরোনো। নতুন প্রকল্প গ্রহণ ছাড়া বাঁধ টিকানো সম্ভব নয়।’
২৬ জুন, ২০২৪

তিস্তার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে শুরু হয়েছে ভাঙন
উজানের ঢল আর ভারি বৃষ্টিপাতে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে লালমনিরহাটের নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে সৃষ্ট স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে  শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। এদিকে বন্যার পানি নেমে গেলেও প্লাবিত এলাকার কাঁচা সড়ক ও ফসলের ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গরীবুল্লাহ পাড়া, চন্ডিমারী ও সদর উপজেলার কালমাটি ও বাগডোরা এলাকার কয়েকটি পয়েন্টে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। ওইসব এলাকার বসতভিটা, মসজিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। সোমবার (২৪ জুন) বিকেল ৩টা থেকে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৭৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে গত শুক্রবার তিস্তার পানি বিপৎসীমার মাত্র ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে গত ৪দিনেই সেই পানি নেমে যায়। পানি থেকে জেগে উঠা পাকা ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন তিস্তা পাড়ের কৃষকরা। এদিকে স্বপ্ন মেয়াদি এ বন্যার পানি দ্রুত কমতে থাকায় শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। তিস্তা গরীবুল্লাহ পাড়ার কৃষক কেরামত আলী জানান, গত ৪দিন থেকে বাড়ি-ঘরে পানি ছিলো। এখন বাড়ি ঘরে পানি নেই। কিন্তু ঘরে বাইরে জমে আছে কাদা মাটি। চলাচলে কষ্ট হচ্ছে। একই এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রশিদ বলেন, পানি কমে গেছে। তবে নদীর তীরে শুরু হয়েছে ভাঙন। ভাঙন ঠেকানো না গেলে অনেক বাড়ি ঘর নদীতে বিলীন হবে।  ওই এলাকার হোসেন আলী জানান, বন্যার আগে বাড়ি থেকে ২০০ মিটার দূরে ছিল তিস্তা। ভাঙতে ভাঙতে ফসলি জমি নদীর পেটে চলে গেছে। তিস্তা এখন বাড়ির কিনারায়। সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের কালমাটি এলাকার আব্দুর রহমান জানান, বসতবাড়ি থেকে পানি নেমে যেতে না যেতেই শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। তিস্তার পেটে আবাদি জমি। এখন বসতবাড়ি সরিয়ে নেওয়ার মতো জমিও নেই। আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী জানান, ইউনিয়নের তিস্তা নদী তীরবর্তী গরীবুল্লাহ পাড়ায় ভাঙন শুরু হয়েছে। কয়েকশত বাড়ি ঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদসহ অনেক স্থাপনা ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে। লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার রায় জানান, সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এমকেএম তাহমিদুল ইসলাম লালমনিরহাটের তিস্তা নদী ভাঙন এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছেন। তিস্তার ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
২৪ জুন, ২০২৪

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে ভাঙন আতঙ্কে নদীতীরের মানুষ
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে রোববার (২৩ জুন) গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ২৮ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ১৩১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমলেও উপজেলার চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। চাষিরা তলিয়ে যাওয়ায় ভয়ে অপরিপক্ব পাট কাটছেন। এদিকে পানি কমায় ভাঙন আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন এলাকাবাসী।  উপজেলার যমুনা নদীর পানি গত কয়েকদিন ধরেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুক্রবার (২১ জুন) বিকেল ৩টায় সারিয়াকান্দি মথুরাপাড়া পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ১৫ দশমিক ২৩ মিটার। পানির বিপৎসীমা রয়েছে ১৬ দশমিক ২৫ মিটার। শনিবার (২২ জুন) ছিল ১৫ দশমিক ২২ মিটার। আর রোববার ১৪ দশমিক ৯৪ সেন্টিমিটার। গত কয়েক দিনের পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার চালুয়াবাড়ী, কাজলা, কর্ণিবাড়ী এবং বোহাইল ইউনিয়নের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সদর ইউনিয়নের পারতিত পরল গ্রামের ডাকুরিয়া নদীর তলদেশে সদ্য বেড়ে ওঠা অপরিপক্ব পাট কাটছেন চাষিরা। যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি হওয়ায় উপজেলার চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের শিমুলতাইড় গ্রামের এলাকাবাসী ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছেন।  খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ ইউনিয়নের মানিকদাইড় গ্রামের উত্তর পাশে জামালপুর মাদারগঞ্জ সীমানায় যমুনা নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এদিকে উপজেলার কাজলা ইউনিয়নের চর ঘাগুয়া গ্রামের যেখানে বাম তীর সংরক্ষণের কাজ হচ্ছে তার উত্তর পাশের বেশকিছু এলাকাজুড়ে ধসের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের ইছামারা গ্রামেও যমুনা নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড’র নদী ভাঙন রোধে কাজ চলমান। এদিকে বোহাইল ইউনিয়নের শংকরপুর চরে যমুনা নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেখানে কয়েকদিনের যমুনা নদীর ভাঙনে বেশকিছু কৃষিজমি ভেঙে গেছে।  কুতুবপুর ইউনিয়নের মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের বাড়ি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের বাইরে হওয়ায় প্রতিবছর বন্যার সময় বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে যায়। গত কয়েকদিন ধরেই পানি বাড়তে থাকায় আমরা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধে আশ্রয় নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। বগুড়া জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (অতি.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আগামী ২ দিন পর্যন্ত পানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারপর উজানে যদি আরও ভারি বৃষ্টিপাত হয় তাহলে পানিবৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকবে। উপজেলার যেখানেই নদী ভাঙনের খবর পাওয়া যাচ্ছে সেখানেই ভাঙন রোধে কাজ করা হচ্ছে। তাই নদী ভাঙনের জন্য আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
২৩ জুন, ২০২৪

বলেশ্বর নদী পাড়ে জিও ব্যাগ ফেলেও থামানো যাচ্ছে না ভাঙন
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার বড় মাছুয়া ইউনিয়নের বলেশ্বর নদীতে জিও ব্যাগ ফেলার পরেও রোধ করা যাচ্ছে না ভাঙন। প্রতি বছর নদীভাঙন রোধে নেওয়া কোনো ব্যবস্থাই কাজে আসছে না। উপজেলার বড় মাছুয়া ইউনিয়নের স্টিমার ঘাট এলাকায় নতুন করে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। জলোচ্ছ্বাস ও রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, মাছুয়া স্টিমার ঘাট এলাকায় ৫০০ মিটার নদী তীর প্রতিরক্ষা কাজ ব্লক দ্বারা স্থায়ীকরণ করার জন্য খরচ হচ্ছে ৪৭ কোটি টাকা যা পরিকল্পনা কমিশনে দাখিল করা আছে। বর্তমানে ৩০০-৫০০ মিটার জায়গাজুড়ে বেড়িবাঁধ রক্ষায় জিও ব্যাগ ফালানো হচ্ছে যাতে টেকসই থাকে। জিও ব্যাগ প্রকল্পে হচ্ছে আনুমানিক ৮৫ লক্ষ টাকা। নদীভাঙনে ভুক্তভোগীরা জানান, সাধারণত বর্ষা মৌসুমের শুরু এবং শেষের দিকে ব্যাপক নদী ভাঙন দেখা দেয়। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে জলোচ্ছ্বাস বেড়িবাঁধগুলো ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই এলাকায় ইতোপূর্বে কয়েকবার জিও ব্যাগ ফেলে নদী ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থায় কাজে আসছে না। ভাঙনে ফলে মাছুয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম হুমকির মুখে পড়েছে। মাছুয়া ইউনিয়নের খেজুরবাড়িয়া এলাকার বেল্লাল হোসেন জানান, এই এলাকাটা অনেক বড় ছিল। কয়েক বছর নদী ভাঙনে বেশকিছু অংশ বিলীন হয়ে গেছে। অনেক পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন।  একই গ্রামের অতুল চন্দ্র সাহা জানান, বেড়িবাঁধ থেকে অনেক দূর পর্যন্ত ফসলি জমি ও বসতবাড়ি ছিল নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। বালু উত্তোলনের ফলে নদীতে ভাঙন সৃষ্টি হয়। কয়েক জায়গা দিয়ে জিও ব্যাগ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ হলে হয়ত ভাঙন রোধ করা সম্ভব হতো। পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নুসাইর জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বন্যার আগে বেড়িবাঁধগুলো পুনঃনির্মাণ করতে হবে। মঠবাড়িয়া উপজেলার মাছুয়া ইউনিয়নের স্টিমার এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ জিও ব্যাগ ফেলে প্রতিরক্ষা করার চেষ্টা করছি। ব্লকের প্রজেক্ট দেওয়া আছে বরাদ্দ পেলেই আমরা কাজ শুরু করব।
২২ জুন, ২০২৪

হরিরামপুরে ফের ভাঙন পদ্মা পাড়ে আতঙ্ক
পদ্মা নদীতে বর্ষার পানি বৃদ্ধি পেতে না পেতেই মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের দুর্গম চরাঞ্চল আজিমনগর ইউনিয়নের হাতিঘাটা নদীতীরবর্তী এলাকায় ফের ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে নতুন করে ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন চরাঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ। জানা যায়, প্রায় পঞ্চাশ দশক থেকে অব্যাহত পদ্মার ভাঙনে এ উপজেলার আজিমনগর, সুতালড়ী ও লেছড়াগঞ্জ তিনটি ইউনিয়ন সম্পূর্ণরূপে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। সত্তর দশকের শেষের দিকে চর জেগে উঠলে তিনটি ইউনিয়নে আবার জনবসতি শুরু হয়। বর্তমানে চরাঞ্চলের এসব ইউনিয়নে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষের বসবাস। এখনো ভাঙা গড়ার মধ্য দিয়ে বসবাস করতে হয় চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের। ২০২২ সালের দিকে তীব্র ভাঙন শুরু হলে সাবেক সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম জরুরি ভিত্তিতে চরাঞ্চলে নদী শাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে আজিমনগরে ৪০০ মিটার এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ করা হয়। চলতি বর্ষা মৌসুমে পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে প্রবল স্রোত আর ঢেউয়ের আঘাতে আজিমনগরের হাতিঘাটা এলাকায় দুই দিন ধরে নতুন করে আবার ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে করে জিও ব্যাগ ধসে নদীতীরের মাটি বের হয়ে আসছে। নদীভাঙন আতঙ্কে রয়েছে এ এলাকার শত শত পরিবার। এ ছাড়া ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে সুয়াখাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প, হাতিঘাটা বাজার, বসতভিটাসহ শত শত বিঘা ফসলি জমি। আজিমনগর ইউনিয়নের এনায়েতপুর গ্রামের মো. শহিদুল ইসলাম জানান, বুধবার বিকেলে নদীর পাড়ে বেড়াতে গিয়ে ভাঙনকবলিত জায়গা নজরে পড়ে। দুই বছর আগে যে জিও ব্যাগগুলো ফেলা হয়েছিল, প্রবল স্রোত আর ঢেউয়ের আঘাতে সেই জিও ব্যাগ ধসে মাটি বের হয়ে আসছে। প্রায় ৮ মিটার এরিয়া ভেঙে ভেতরে ঢুকে গেছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ভয়াবহ ভাঙনে রূপ নিতে পারে। একই গ্রামের নাসির উদ্দীন জানান, নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে প্রবল স্রোত আর ঢেউয়ের আঘাতে আবার ভাঙন দেখা দিয়েছে। জিও ব্যাগ ধসে যাচ্ছে। এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ করা না চরাঞ্চলের ফসলি জমিসহ ঘরবাড়ি ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দীন কালবেলাকে বলেন, ‘হরিরামপুরের বেশিরভাগ এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে নদী শাসনের কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কিছুদিন আগে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে তীব্র ঢেউয়ের কারণে পদ্মার তীরে কিছু কিছু জায়গায় জিও ব্যাগ স্লাইড করে। সম্প্রতি উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে পদ্মা ও যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে জেলার যমুনা ও পদ্মা নদীর পাড়ে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আমি হরিরামপুর উপজেলার ভাঙনকবলিত স্থানগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে যত দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্ভব জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজ শুরু করার ব্যবস্থা গ্রহণ হবে। তবে পদ্মা নদী পৃথিবীর দ্বিতীয় খরস্রোতা নদী। বন্যাকালীন এখানে বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিতে পারে। আমরা সচেষ্ট আছি, যাতে এলাকাগুলো রক্ষা করতে পারি।’
২২ জুন, ২০২৪

ভাঙন আতঙ্কের মধ্যেই বালু উত্তোলন
যমুনা নদীর পানি বাড়ায় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে বেশ কয়েক দিন ধরেই চলছে তীব্র ভাঙন। তীরবর্তী মানুষগুলো ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। এ অবস্থায়ও নদীর অদূরে চলছে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আখতার হোসেনের নেতৃত্বে উপজেলার এনায়েতপুর থানাধীন খুকনী ইউনিয়নের আড়কান্দি-ব্রাহ্মণগ্রাম এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের এ অভিযোগ উঠেছে। উত্তোলিত বালু পাইপের মাধ্যমে এক কিলোমিটার দূরে নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে যমুনায় ভাঙন আরও বাড়ছে দাবি করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে স্থানীয়রা। স্থানীয় সূত্র জানায়, গত পাঁচ বছরেরও বেশি সময় যমুনা নদীর ডান তীর শাহজাদপুরের খুকনী ও জালালপুর ইউনিয়নের অন্তত ছয় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন চলছে। ভয়াবহ ভাঙনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে তীরবর্তী ব্রাহ্মণগ্রাম, আড়কান্দি, জালালপুর, পাকড়তলা, হাটপাঁচিল ও মনাকষা গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। এরই মধ্যে এ অঞ্চলের কয়েক হাজার ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা, অন্যান্য স্থাপনা ও জমিজমা নদীতে বিলীন হয়েছে। চলতি মৌসুমে যমুনার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আবারও ভাঙন শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় ব্রাহ্মণগ্রামে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আকতার হোসেনের নেতৃত্বে একটি চক্র নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু তুলে বিক্রি শুরু করেছে। তারা ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে চুরি করে কেটে আনা বালু ভলগেট নৌকায় করে নদীর আড়কান্দি তীরে নেওয়ার পর পাইপের মাধ্যমে এক কিলোমিটার দূরে নিয়ে এসব বালু বিক্রি করছে। অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের ফলে নদীতে ভাঙন বেড়েছে। বালু ফেলতে কৃষকদের জমির ওপর দিয়ে জোর করে পাইপ টানাসহ নদী থেকে প্রভাব খাটিয়ে বালু তুলছে চক্রটি। কেউ প্রতিবাদ করলে তারা ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, আরকান্দি-ব্রাহ্মণগ্রামে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রি করার বিষয়ে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১৫ জুন, ২০২৪

বেড়েই চলেছে যমুনার পানি অরক্ষিত তীরে তীব্র ভাঙন
এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বেড়েই চলেছে। চার-পাঁচ দিন ধরে আশঙ্কাজনক হারে পানি বাড়ছে। এদিকে যমুনা নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অরক্ষিত তীরবর্তী অঞ্চল শাহজাদপুরে শুরু হয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভাঙনকবলিতরা। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ২ জুন থেকে যমুনায় ব্যাপকহারে পানি বাড়ছে। গতকাল শুক্রবার সকালে সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৭৪ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ১৪ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২ দশমিক ১৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে সোমবার ৩০, মঙ্গলবার ৩৭, বুধবার ৫০ ও বৃহস্পতিবার ২৮ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে কাজীপুরের মেঘাই পয়েন্টে শুক্রবার পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৩২ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ১০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২ দশমিক ৪৮ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই পয়েন্টে সোমবার ৩১, মঙ্গলবার ৪৪, বুধবার ৪৪ ও বৃহস্পতিবার ২৮ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পায়। এদিকে জেলার শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর, খুকনী ও কৈজুরী ইউনিয়নে যমুনা অরক্ষিত তীরবর্তী অঞ্চলে কয়েক বছর ধরেই ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে তিনটি ইউনিয়নের আট থেকে ১০টি গ্রামের হাজার হাজার বাড়িঘর কয়েকশ বিঘা ফসলি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, তাঁতশিল্প, রাস্তাঘাটসহ বহু স্থাপনা বিলীন হয়ে গেছে। বাস্তুহারা ও নিঃস্ব হয়ে পড়ছে ভাঙনকবলিত হাজার হাজার মানুষ। চলতি মৌসুমে যমুনার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপকহারে ভাঙন দেখা দিয়েছে। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে জালালপুরের গুচ্ছগ্রাম এলাকায় প্রায় দেড় শতাধিক বসতভিটা ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের আতঙ্কে রয়েছে নদীতীরবর্তী মানুষ। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জরুরি ভিত্তিতে ভাঙনরোধ করা না হলে শত শত বাড়িঘর ও স্থাপনা নদীতে চলে যাবে। নিঃস্ব হয়ে পড়বে হাজারো মানুষ। ভাঙনকবলিতরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে শাহজাদপুরের জালালপুর ও কৈজুরী এলাকায় ভয়াবহ ভাঙনে হাজার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছে। অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, রাস্তাঘাট নদীতে বিলীন হয়েছে। দীর্ঘ আন্দোলন ও প্রতিক্ষার পর সরকার এ অঞ্চলে ভাঙনরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেয়। প্রকল্পটির কাজ শুরু হলেও ঠিকাদার ও পাউবোর গাফিলতিতে দ্রুত কাজ সম্পন্ন হচ্ছে না। ফলে আবারও ভাঙনের কবলে পড়েছে এসব অঞ্চল। গত তিন দিনের ব্যবধানে জালালপুর ও কৈজুরী ইউনিয়নের দেড় শতাধিক বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান। পানি উন্নয়ন বোর্ডে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, শাহজাদপুর উপজেলায় যমুনার ডানতীর সংরক্ষণের জন্য সাড়ে ৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণকাজ চলছে। সিসি ব্লক ম্যানুফ্যাকচারিং প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ম্যানুফ্যাকচারিং শেষ হলে স্থায়ী রক্ষা বাঁধ নির্মাণ শুরু হবে। এই কাজের মেয়াদ ছিল জুন ২০২৪। আরও এক বছর মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আবেদন করা হবে।
০৮ জুন, ২০২৪
X