বিশ্বকাপ ব্যর্থতা ব্যাখায় আধা ঘণ্টা লাগবে বিসিবি সভাপতির
চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অফফর্মে থাকা স্বত্তেও নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। তবে সুযোগ থাকলেও, বাংলাদেশ তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি ক্রিকেটারদের মধ্যে সেমিফাইনালের সমীকরণ মেলানোর মানসিকতাও দেখা যায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বাধীন দলটি গ্রুপ পর্বে চার ম্যাচের তিনটি জিতলেও, সুপার এইটে প্রতিটি ম্যাচেই হয়েছেন ব্যর্থ। আর গতকাল তো আফগানিস্তানের কাছে ডি/এল মেথডে ৮ রানে হেরে বিশ্বকাপ অভিযানই শেষ হলো। এ বিষয়ে অবশ্য এখনও কোনো মন্তব্য করেননি বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। বুধবার (২৬ জুন) টাইগারদের পরাজয় ও বিশ্বকাপ পারফরম্যান্স নিয়ে গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে বিসিবি প্রধানের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়। তবে তিনি পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে ৩০ মিনিট লাগবে বলে জানান এবং সাংবাদিকদের পরে কোন এক সময় আমন্ত্রণ জানান। তবে সেই ব্রিফিংয়ের সুনির্দিষ্ট কোনো সময় এখনও জানানো হয়নি। পাপন গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘এটা শুধু গতকালের ম্যাচ নয়, পুরো টুর্নামেন্ট নিয়ে (বলতে হবে) যা এক কথায় উত্তর দেওয়া সম্ভব না। এখানে পুরো বিষয়টা… পারফরম্যান্স বলতে গেলে এর পেছনে অনেক কথা বলতে হবে। এটা না হলে আপনারা বুঝবেন না, কেউ বুঝবে না। আপনারা আসেন, মিনিমাম আধাঘণ্টা লাগবে আমার ব্যাখ্যা করতে।’ এর আগে (মঙ্গলবার) সুপার এইটে নিজেদের শেষ ম্যাচে সেন্ট ভিনসেন্টে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ-আফগানিস্তান। যেখানে রশিদ খানের নেতৃত্বাধীন দল আগে ব্যাট করে ১১৫ রান সংগ্রহ করে। বাংলাদেশের সেমিফাইনালে যেতে হলে ১২.১ ওভারের মধ্যে লক্ষ্য ছুঁতে হতো। কিন্তু সেই সমীকরণ মেলানো দূরে থাক, শান্ত-সাকিবরা মাত্র ১০৫ রানে অলআউট হয়ে বৃষ্টি আইনে ৮ রানে হেরে বিদায় নিশ্চিত করে। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক শান্ত এ বিষয়ে বলেন, ‘পরিকল্পনা ছিল যে আমরা প্রথম ৬ ওভারে চেষ্টা করব। ভালো শুরু করলে এবং দ্রুত উইকেট না হারালে আমরা সুযোগটা নেব। কিন্তু দ্রুত ৩ উইকেট হারানোর পর আমাদের পরিকল্পনা পরিবর্তন হয়। তারপরও আমি বলব, মিডল অর্ডার ভালো সিদ্ধান্ত নেয়নি। যার কারণে ম্যাচটা আমরা হেরে গেছি।’
২৬ জুন, ২০২৪

সেমির লক্ষ্যে কী ছিল শান্তদের পরিকল্পনা?
সেমিফাইনালে খেলতে হলে মেলাতে হতো জটিল সমীকরণ। বোলাররা জ্বালিয়ে ছিলেন আশার প্রদীপ। আর ব্যর্থতার জল ঢেলে ব্যাটাররা নেভালেন সেই আশা। টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে আফগানিস্তান করে ১১৫ রান। সেমিফাইনালে খেলতে হলে ১২ ওভার ১ বলে ১১৬ রান করতে হতো বাংলাদেশকে। জবাবে শুরুটা ভালো করে ছিলেন লিটন দাস। প্রথম ওভারে নেন ১৩ রান। তৃতীয় ওভারের মধ্যে ৩  উইকেট হারিয়ে চাপে টাইগাররা। এরপরও সুযোগ ছিলো। তবে ব্যাটারদের ব্যাটিং দেখে মনে হয়নি জেতার চেষ্টা করছে টাইগার। এতে প্রশ্ন উঠেছে কি ছিল সেমিফাইনাল খেলতে কী ছিল বাংলাদেশের পরিকল্পনা।   ম্যাচ শেষ ব্রডকাস্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেন, ‘পরিকল্পনা ছিল প্রথম ছয় ওভারে জোরালোভাবে চেষ্টা করা (সেমিফাইনালে যাওয়ার জন্য)। এটা হয়নি আর মিডল অর্ডারও ঠিকঠাক (পরিকল্পনা) বাস্তবায়ন করতে পারেনি।’ পুরো আসর জুড়ে ব্যাটারদের পারফরম্যান্স হতাশাজনক। বিশেষ করে টপ অর্ডার ধারাবাহিকভাবে ছিলে ব্যর্থ। টাইগার দলপতি বলেন, ‘ব্যাটিংয়ে উন্নতি করা দরকার, টপ-অর্ডার ভালোভাবে পারফর্ম করতে পারেনি। এটা হতেই পারে যখন বল ভিজে গেছে। আমি যেমন বলেছি, পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করতে পারিনি ব্যাট হাতে। আর অনেক সিদ্ধান্ত ভুল হয়েছে।’ পুরো আসরে বোলারদের পারফরম্যান্স ছিলে দুর্দান্ত। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি রিশাদ হোসেন। বোলারদের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার দলপতি বলেন, ‘পুরো টুর্নামেন্টে আমরা সত্যিই ভালো বোলিং করেছি, বিশেষ করে রিশাদ, পেসাররা সত্যিই ভালো করেছে। ব্যাটিংয়ে উন্নতি করতে হবে, টপ অর্ডার ভালো পারফর্ম করতে পারেনি। আমরা ব্যাট হাতে ভালোভাবে খেলতে পারিনি এবং অনেক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
২৫ জুন, ২০২৪

সরকার ব্যর্থতা ঢাকতে তারেককে নিয়ে বিষোদ্গার করছে: রিজভী
সরকার লুটেরা ও টাকা পাচারকারীদের প্রতিনিধি মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, তারা ব্যর্থতা ঢাকতেই আবারও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে বিষোদ্গার শুরু করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বেনজীর-আজিজকাণ্ড, লাখো কোটি টাকা পাচার, অস্বাভাবিক ঋণখেলাপি, মন্দ ঋণে ব্যাংক ধসে যাওয়া কাণ্ডের পৃষ্ঠপোষক সরকার। ডলার সংকট, জাতীয় রিজার্ভ তলানিতে চলে আসা, ব্যাংকগুলো খালি হয়ে যাওয়ায় আইনবহির্ভূতভাবে ক্ষমতাঘনিষ্ঠরা বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে। দেশের অস্থিরতা সামাল দিতে না পেরে তারা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে হুমকি দিচ্ছে। এ সময় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের আহ্বায়ক খন্দকার এনামুল হক এনামের মুক্তি দাবি করেন রিজভী। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, মীর সরফত আলী সপু, আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল, সাঈদ সোহরাব প্রমুখ।
১৪ জুন, ২০২৪

সরকার ব্যর্থতা ঢাকতে তারেক রহমানকে নিয়ে বিষোদ্‌গার করছে : রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেছেন, আপনার সরকার লুটেরা ও টাকা পাচারকারীদের প্রতিনিধি। আপনার সরকারের মুখ ঢাকতে আবারও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে নিয়ে বিষোদ্‌গার শুরু করেছেন। আপনার হুকুম পৃথিবীর সর্বত্র তামিল হবে না জেনে মাঝে মাঝেই বিষাক্ত গরল উদ্‌গিরণ করেন। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, বুধবার (১২ জুন) জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে শেখ হাসিনা ২১ আগস্টের বোমা হামলার মামলায় তারেক রহমানসহ ১৫ জন পলাতক রয়েছে বলে উল্লেখ করে বলেন, এখন নাকি তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাবেন। প্রকৃতপক্ষে বোমা হামলায় তারেক রহমানসহ বিএনপির অন্যান্য নেতাকে ফরমায়েশি রায়ে যে সাজা দেওয়া হয়েছে সেটি যে, সাজানো মামলায় ফরমায়েশি সাজা তা আজ সর্বজনবিদিত। তিনি আরও বলেন, বেনজীরকাণ্ড, জেনারেল আজিজকাণ্ড, লাখ লাখ কোটি টাকা পাচারকাণ্ড, অস্বাভাবিক ঋণখেলাপি কাণ্ড, মন্দ ঋণে ব্যাংক ধসে যাওয়া কাণ্ডে পৃষ্ঠপোষক আপনি। বর্তমান ডামি সরকারের ডামি বাজেটে সাধারণ করদাতা ও উদ্যোক্তাদের সুবিধা দেওয়া হয়নি। গরিবদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীতে বরাদ্দ টাকা বৃদ্ধি করা হয়নি। রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা দেশের অর্থনীতির কাঠামো ভেঙে ফেলেছেন। শেখ হাসিনার নানা অঙ্গীকার আজও সূর্যের আলো দেখেনি। ডলার সংকট, জাতীয় রিজার্ভ তলানিতে চলে আসা, ব্যাংকগুলোর খালি হয়ে যাওয়ার, আইনবহির্ভূতভাবে ক্ষমতাঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন। যারা একদিন নিঃস্ব, নিঃসম্বল ছিলেন তারা আজ আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীর সহযোগিততায় ঐরাবতে পরিণত হয়েছেন। দেশে অস্থিরতার কুজ্ঝটিকা এতটাই ঘন হয়ে উঠেছে যে, তিনি এখন সেগুলো সামাল দিতে না পেরে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে হুমকি দিচ্ছেন। তিনি বলেন, আমরা সুষ্পষ্টভাবে বলতে চাই—জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে ক্রমাগত হুমকি কখনোই রাজনীতির ময়দান শান্ত, নিরাপদ ও সুখময় হয়ে উঠবে না। দেশের জনগণ বাকশাল—২ এর অনন্তশৃঙ্খল থেকে মুক্তির জন্য রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা করছেন। এই মুক্তির আদর্শই হচ্ছে গণতন্ত্র। আজ অগ্রদূত ও অগ্রগণ্য নেতা হিসেবে তারেক রহমান গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর এমন মানহানিকর ও কুরুচিপূর্ণ হুমকির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের আহ্বায়ক খন্দকার এনামুল হক এনাম আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে গত মঙ্গলবার হাজিরা দিতে গেলে তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে এনামের মুক্তির দাবি জানান রিজভী। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, বিএনপির সাংস্কৃতিক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জল, সাংস্কৃতিকবিষয়ক সহসম্পাদক সাঈদ সোহরাব, কেন্দ্রীয় নেতা শাম্মী আক্তার, আমিনুল ইসলাম, সালাউদ্দিন ভুইয়া শিশির, তারিকুল আলম তেনজিং, আ ক ম মোজাম্মেল হক, মৎস্যজীবী দলের সদস্যসচিব মো. আবদুর রহিম, যুবদলের সহসভাপতি জাকির হোসেন সিদ্দিকী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহসভাপতি অধ্যাপক ইমতিয়াজ বকুল প্রমুখ।
১৩ জুন, ২০২৪

টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় বিপাকে বাংলাদেশ
টার্গেট মাত্র ১২৫ রান। বোলারদের কল্যাণে এত অল্প রানে শ্রীলঙ্কাকে আটকে দেয় বাংলাদেশ। কিন্তু ব্যাটারদের ব্যর্থতায় বিপাকে পড়েছে টাইগাররা। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে চলা ব্যর্থতা এ ম্যাচও ধরে রেখেছেন বাংলাদেশের টপ অর্ডার। সৌম্য সরকারকে দিয়ে শুরু। ইনিংসের তৃতীয় বলেই সাজঘরে ফেরেন বাঁহাতি এই ওপেনার। ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচেও গোল্ডেন ডাক মেরেছিলেন তিনি। ফর্মে ছিলেন অপর ওপেনার তানজিম হাসান তামিম। তিনিও ব্যর্থ এ ম্যাচে। মাত্র তিন রানে নুয়ান তুষারার শিকার হন তামিম। ফর্মহীনতায় থাকা নাজমুল হোসেন শান্তও বেশি দূর এগোতে পারেননি। মাত্র ৭ রানে তুষারার দ্বিতীয় শিকার বাংলাদেশ অধিনায়ক।
০৮ জুন, ২০২৪

প্রশ্ন টিআইবির / ব্যর্থতা ঢাকতেই কি বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক নিষিদ্ধ
বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মাধ্যমে সংবাদকর্মীদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে অভূতপূর্ব প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে বলে মনে করছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এ ঘটনায় গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের মনে রাখতে হবে, তারা জনস্বার্থের সুরক্ষার ভূমিকা পালনের কথা, ঋণখেলাপি আর ব্যাংকিং খাতের সংকটের জন্য দায়ী মহলের নয়। সংবাদকর্মীরা বলছেন, ব্যাংক খাতের অনিয়ম, দুর্নীতি, ঋণ কেলেঙ্কারি, দুর্বল ব্যাংকের মার্জার, কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রাহকদের আমানতের টাকা না পাওয়া এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ প্রকাশের মধ্যে গভর্নরের নির্দেশে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জমান বলেন, ‘খেলাপি ঋণ, আর্থিক প্রতারণা ও জালিয়াতি এবং সার্বিক সুশাসনের অভাবসহ নানাবিধ সংকটে ব্যাংকিং খাত যখন জর্জরিত তখন তথ্যের অবাধ প্রবাহ বন্ধের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ নেতৃত্ব সবার কাছে কী বার্তা দিতে চান? তবে কি খাদের কিনারায় উপনীত ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নিজেদের ব্যর্থতার তথ্য গোপন করতেই এ উদ্যোগ? নাকি যারা ঋণখেলাপি ও জালিয়াতিসহ এ খাতের সংকটের জন্য দায়ী; তাদের স্বার্থ সুরক্ষার প্রয়াস এটি।’ আর্থিক খাতের হাজার হাজার কোটি টাকা কেলেঙ্কারির যেসব তথ্য প্রকাশ্য হয়েছে, সেসব সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তবে কি ধরে নিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংক এ খাতের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ঋণ খেলাপি, জালিয়াতি ও অর্থ পাচারের মতো অপরাধী মহলের অব্যাহত সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করছে।’ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সংবাদকর্মীদের অবাধ প্রবেশের সুযোগ দিতে অবিলম্বে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে টিআইবি। ডিআরইউর নিন্দা: বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন সংবাদকর্মীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)। সেখানে সাংবাদিকদের বাধাহীন প্রবেশ নিশ্চিতের দাবি জানানিয়েছে সংগঠনটি।
২৭ এপ্রিল, ২০২৪

বিসিবির সীমাবদ্ধতা টেস্ট ক্রিকেটে ব্যর্থতা
টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার দুই যুগেও লাল বলের ক্রিকেটের আদর্শ বার্ষিক সূচি তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বছরের পর বছর ধরে দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে সাফল্যও তাই খুব একটা ধরা দেয়নি। কালেভদ্রে যে কটা ‘ঐতিহাসিক’ সাফল্য এসেছে, সেগুলোও ছিল অধিক প্রস্তুতির ফসল। আর প্রস্তুতির ঘাটতি নিয়ে বারবারই হোঁচট খেয়েছে বাংলাদেশ; যার সর্বশেষ উদাহরণ শ্রীলঙ্কা সিরিজ। লঙ্কান সিরিজের আগে লাল বলে বাংলাদেশের প্রস্তুতি ছিল শূন্য! ফল চার ইনিংসের মধ্যে তিনটিতেই দুইশ ছুঁতে পারেনি নাজমুল হোসেন শান্তর দল। সিলেটে ব্যর্থতার পর চট্টগ্রামে এসে শেষ ইনিংসে মোটামুটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তারা। ততক্ষণে কার্যত ম্যাচটি হেরেই গেছে স্বাগতিকরা। লাল বলে অসহায়ত্বের পর ঘরোয়া ক্রিকেটের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররাই। এমনকি সিরিজ শুরুর আগে ক্রিকেটারদের প্রস্তুতির ঘাটতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা। অধিনায়ক নাজমুল হোসেনের চাওয়া, ভালো করতে হলে বিভিন্ন সফরের আগে সেখানে ‘এ’ দলেরও সফর নিশ্চিত করা। তবে এখানেই যত সীমাবদ্ধতা দেখছে বিসিবি। সাদা বলের সিরিজ ও টুর্নামেন্টের চাপ পড়ে ঘরোয়া ক্রিকেটের জন্য আদর্শ সূচি মেলাতে পারছেন না তারা। ‘এ’ দলের কিছু সফর ও সিরিজ নিশ্চিত করা গেলেও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আবার সেটাও পাচ্ছেন না তারা। গতকাল মিরপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে এসব নিয়ে কথা বলেছেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস। এ সময় নিজেদের সীমাবদ্ধতাই বেশি তুলে ধরেন বিসিবির এই পরিচালক। জালাল ইউনুস বলেছেন, ‘প্রস্তুতির জন্য জাতীয় লিগ ছাড়া সুযোগ নেই। কারণ, সিরিজের পর সিরিজ হতে থাকে। আপনি দেখেন কোন খেলোয়াড় সময় পায় বেশি টেস্ট খেলার? এই সুযোগটা তো নেই। সিরিজ হলে টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি থাকে। জাতীয় দলের খেলোয়াড় হিসেবে মানিয়ে নিয়েই খেলতে হবে।’ বিসিবি থেকে যতই মানিয়ে নেওয়ার কথা বলা হোক না কেন, কখনোই ক্রিকেটারদের মধ্যে এই মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারটা দেখা যায়নি। বিশেষ করে সাদা বল থেকে লাল বলে গিয়ে বারবারই হোঁচট খেয়েছেন ক্রিকেটাররা। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের ঐতিহাসিক সাফল্য মাউন্ট মঙ্গানুই জয়। সে সিরিজের কয়েক সপ্তাহ আগেই দেশের মাটিতে জাতীয় লিগে খেলে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন মুমিনুল হক, নাজমুল হোসেন, এবাদত হোসেনরা। একই বছর যখন দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্টে ভরাডুবিতে পড়ে বাংলাদেশ। ওই সিরিজের আগে বিপিএল ও সাদা বলেই ব্যস্ত ছিলেন মাহমুদুল হাসান জয়, নাজমুল হোসেন, তাইজুল ইসলামরা। অর্থাৎ প্রস্তুতির ঘাটতিই স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছিল বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে। এসব ক্ষেত্রে যখন অন্তত ‘এ’ দলের সফরের আলাপ আসে, তখনো সীমাবদ্ধতা থেকে যাচ্ছে বোর্ডের। এ বছর পাকিস্তানের সঙ্গে দুটি টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ। তার আগে সেখানে যাবে ‘এ’ দল। পাকিস্তান ‘এ’ দলও আসবে বাংলাদেশে। অথচ ভারতে টেস্ট খেলতে যাওয়ার আগে থাকবে না ‘এ’ দলের কোনো সফর। জালাল ইউনুস বলেছেন, ‘ভালো হতো যদি ভারত সিরিজের আগে খেলতে পারত (এ দল)। সুযোগ তো পাওয়া যায় না; সুযোগ পেলে আরও ভালো হতো। এখন সুযোগ বের করা বেশ কঠিন।’
০৫ এপ্রিল, ২০২৪

ব্যাটারদের ব্যর্থতাকেই দায়ী করছেন শান্ত
অনেক আশা নিয়েই নতুন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর অধীনে লঙ্কানদের বিপক্ষে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ শুরু করেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। তবে তিন ফরম্যাটের মধ্যে বাংলাদেশের সাফল্য এসেছে শুধু ওয়ানডে ফরম্যাটে। ওয়ানডে সিরিজে সাফল্যের পর অবশ্য টিম টাইগার্স টেস্ট সিরিজের দুই ম্যাচেই শোচনীয় পরাজয়ের মুখোমুখি হয়েছে। চট্টগ্রামে দ্বিতীয় টেস্টের পঞ্চম দিনে ৩১৮ রানে অলআউট হয়ে টাইগাররা হেরেছে ১৯২ রানের বিশাল ব্যবধানে। প্রথম টেস্টে ৩২৮ রানের পর দ্বিতীয় টেস্টে ১৯২ রানের পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়া নাজমুল হাসান শান্ত বাহিনীর শোচনীয়ভাবে পরাজয় নির্ঘাত ভাবিয়ে তুলবে দেশের ক্রিকেট ভক্তদের। ম্যাচ শেষে ব্রডকাস্ট চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অধিনায়ক শান্ত অবশ্য সিরিজে এরকম শোচনীয় পরাজয়ের জন্য পুরোপুরি দায় দিলেন দলের ব্যাটারদের। তিনি বলেন, ‘আমরা ভালো খেলিনি, বোলাররা উইকেটে নিজেদের প্রমাণ করে দেখালেও ব্যাটাররা ভালো ব্যাটিং করেনি। সবাই ক্রিজে সেট হয়েছে কিন্তু বড় রান করতে পারেনি, এটা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে যারা সেট হবে তারা যেন বড় রান করে।’ এ ছাড়াও শান্ত আবারও তাগিদ দিলেন দেশের ক্রিকেটারদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট বেশি করে খেলার জন্য, ‘একজন খেলোয়াড় হিসেবে আমাদের যে কোনো পরিস্থিতির জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। তবে আমরা যদি আরও বেশি প্রথম-শ্রেণির ক্রিকেট খেলি তাহলে তা আমাদের কাজে আসবে।’ অভিষিক্ত পেসার হাসান মাহমুদ প্রশংসা করেছেন শান্ত। এ ছাড়া সাকিব-মিরাজকেও ভাসিয়েছেন প্রশংসায়, তার (হাসান) প্রথম ম্যাচে যেভাবে এসে বোলিং করেছে, সে সত্যিই ভালো বোলিং করেছে। সাকিব ভাই যেভাবে ব্যাট করেছে এবং বোলিং করেছে, মিরাজ যেভাবে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করেছে, তাতে কিছুটা ইতিবাচক দিক রয়েছে।
০৩ এপ্রিল, ২০২৪

কূটনৈতিক উইং পুনর্গঠনের দাবি / বিএনপি প্রভাবশালী দেশগুলোকে কাছে টানতে পারছে না
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির কূটনৈতিক সম্পর্ক বা তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে দলটি। বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোকে আস্থায় আনতে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে দায়িত্বপ্রাপ্তদের। বিশেষ করে চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, স্পেনসহ পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর দ্রুত অভিনন্দন বার্তা পাঠানো বিএনপির রাজনীতিতে কূটনৈতিক ধাক্কা বলে মনে করা হচ্ছে। এজন্য বিএনপির ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির (এফআরসি) ভূমিকা নিয়েও চলছে সমালোচনা। যদিও বাংলাদেশ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর অবস্থান নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন বিএনপির নেতারা। সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, মধ্যপ্রাচ্য ও অধিকাংশ পশ্চিমা দেশের সঙ্গে বিএনপির আস্থার সম্পর্ক ছিল। তবে ২০০১ সালে জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর কয়েকটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় হলেও অবনতি হয় বেশি। এরপর আর কূটনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেনি দলটি। এমন পরিস্থিতিতে অঞ্চলভিত্তিক দায়িত্ব দিয়ে এফআরসি বা কূটনৈতিক উইং পুনর্গঠনের দাবি উঠেছে। পাশাপাশি শুধু পশ্চিমা নয়—পূর্বমুখী কূটনীতিতে জোর দেওয়া উচিত বলে অনেকেই মনে করছেন। জানা গেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কূটনৈতিক উইংয়ে যাদের দায়িত্ব দেন, তারা ঠিকমতো কাজ করেন না। আবার যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাদের অনেকেই পছন্দ করেন না। বিশেষ করে বাংলাদেশে প্রভাবশালী দেশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন ও ভারত এবং অস্ট্রেলিয়াকে বিবেচনা করা হয়। এক্ষেত্রে রাশিয়া, চীন ও ভারতের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বেশ সুসম্পর্ক রয়েছে। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিএনপির সুসম্পর্ক থাকলেও সম্প্রতি নানা কারণে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। দেশের সব রাজনৈতিক দলকে একত্রিত করতে না পারা এবং কূটনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া বিএনপির অন্যতম ব্যর্থতা বলে মনে করছেন অনেকে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপি ও তাদের মিত্রদের প্রত্যাশা ছিল, বাংলাদেশের নির্বাচন সামনে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র আমেরিকাসহ পশ্চিমারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, যা একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমেরিকার ভূমিকায় বিএনপি ও যুগপতের শরিক দলগুলোর মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। কেননা যুক্তরাষ্ট্র এবার বাংলাদেশে অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ইস্যুতে বেশ আগে থেকেই সরকারের ওপর চাপ তৈরিতে তৎপর ছিল। তারই অংশ হিসেবে ২০২৩ সালের ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে। এ নীতির অধীনে বাংলাদেশের ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা না দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। তখন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের তৎপরতাও ছিল চোখে পড়ার মতো। আওয়ামী লীগ ছাড়াও বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অনেক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেন তিনি। অনেকের মতে নির্বাচন ঘিরে সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকট নিরসনে পিটার হাস তখন ‘দূতিয়ালির ভূমিকা’ রেখেছেন! এদিকে গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের এক দিন পরই যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য নির্বাচন সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক হয়নি বলে বিবৃতি দিয়েছে। কিন্তু বিএনপিসহ ভোট বর্জনের আন্দোলনে থাকা দলগুলো মনে করে, নির্বাচনের পরের এই বিবৃতির এক ধরনের মূল্য থাকলেও এটি সরকারের জন্য বড় কোনো চাপ তৈরি করতে পারেনি। কেননা ভূ-রাজনৈতিক তথা বৈশ্বিক রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীত বলয়ে থাকা দেশ রাশিয়া ও চীনসহ অনেক দেশ নির্বাচনকে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে। এমনকি নির্বাচনের পর বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশ ভারতও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব শেষ পর্যন্ত কত দূর এগোবে, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে বিএনপিতে। দলের নেতারা ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপটা আগে হলে ভালো হতো। বিএনপি নেতাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র অথবা পশ্চিমা দেশগুলো কোনো বিশেষ দল বা সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ নেয় না। বৈশ্বিক ও ভূরাজনীতির কৌশলগত দিকগুলো অবশ্যই তারা বিবেচনায় রাখে। কেননা পশ্চিমাদের মানসিকতা বাংলাদেশের মানুষের মনস্তাত্ত্বিক গঠন প্রকৃতি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তাদের কার্যপদ্ধতিও বাংলাদেশের থেকে ভিন্ন। সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে শুরু করে সবকিছুতে ক্ষমতাসীন দলের পাশাপাশি ভিন্ন দল ও মতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। চাইলেই কোনো সিদ্ধান্ত এককভাবে তারা নিতে পারে না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান গতকাল কালবেলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের বৈশিষ্ট্য তারা সবসময় রাজনীতির বিষয়ে নিজের মতো করে একটা উপলব্ধি তৈরি করে। এমন বাস্তবতা থেকেই সম্ভবত নির্বাচনের আগে মানুষ ভেবেছিল যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে বিদেশি শক্তিগুলো যে ধরনের বক্তব্য দিচ্ছে, তা বাস্তবায়নে তারা কোনো না কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। বৈশ্বিক রাজনীতির পরিক্রমায় উপলব্ধি করতে হবে যে, আজকের যুগে কিন্তু বিশ্ব সেই ১৯৬০-এর দশকে নেই। এই ভিন্ন বাস্তবতায় ভূরাজনীতির গতি-প্রকৃতি পাশাপাশি বর্তমান বিশ্বে রাজনীতির যে ধারা, সেখানে এ ধরনের পরিবর্তন স্বয়ংক্রিয়ভাবে আসবে না। সুতরাং পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলো বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং সুশাসন ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশের মানুষকে নৈতিক সমর্থন দিয়েছে—এটা স্পষ্ট।’ কূটনৈতিক বিষয়ে খবর রাখেন এবং বিএনপির রাজনীতি পর্যবেক্ষণ করেন—এমন ব্যক্তিদের মতে, বর্তমান যুগে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে চোখ-কান খোলা রাখলেই শুধু হয় না, বরং অন্তর্দৃষ্টিও রাখতে হয়; কিন্তু বিএনপির এফআরসির সেই দক্ষতা কতটুকু আছে—তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। কেননা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর নানা অনিয়মের বিষয় আলোচনায় এলেও আন্তর্জাতিক মহলে তা ভালোভাবে তুলে ধরতে পারেনি তারা। বলা হচ্ছে, ২০০৬ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর বৈদেশিক সম্পর্কোন্নয়নে কিছুটা হোঁচট খেয়েছে বিএনপি। পেশাদার কূটনীতিক হিসেবে খ্যাতিমান বা সে মহলে ভালো যোগাযোগ এবং জানাশোনা আছে, এমন কোনো ব্যক্তি এখন এফআরসিতে নেই। ফলে বিশ্বের চলমান গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো সেভাবে সামলাতে পারছে না দলটি। তাই পেশাদার কূটনীতিক এবং দক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে এফআরসি পুনর্গঠন তথা ঢেলে সাজানোর কথাও বলছেন দলের নেতাকর্মী ও পর্যবেক্ষকরা। তবে বর্তমান কমিটির একাধিক সদস্যের দাবি, সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকগুলো প্রমাণ করে, তারা এ ক্ষেত্রে সফল। যেটি তারা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় করতে পারেননি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় এক যুগ ধরে অনেকটা জোড়াতালি দিয়ে চলছিল বিএনপির বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটি। এই কমিটির সিনিয়র সদস্যদের অনেকেই অসুস্থতার কারণে ধারাবাহিকভাবে মিটিংয়ে আসতে পারেন না। অনেকে অংশ নিলেও বাড়তি চাপ নিতে অনীহা ছিল তাদের মধ্যে। এ ছাড়া এমন সদস্যও ছিলেন—যাদের কেউ কেউ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ধারণা ও কৌশল সম্পর্কে কিছুই জানেন না। এসব কারণেই মূলত পিছিয়ে পড়ে এ কমিটি। সম্প্রতি বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের বিষয়টি গুরুত্ব দেয় বিএনপির হাইকমান্ড। যার ফল দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে একাধিক বৈঠক। তা ছাড়া দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন, দেশের গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর সরকার প্রকাশ্যে কথা বলছে। নির্বাচনকে ‘স্বীকৃতি’ দেয়নি। এসব সাফল্য হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। জানতে চাইলে বিএনপির সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক সম্পাদক মোহাম্মদ রাশেদুল হক কালবেলাকে বলেন, ‘চলমান আন্দোলন সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে বিএনপি ব্যর্থ হয়নি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তো নির্দিষ্ট কোনো দলকে সমর্থন করে না। তারা সংশ্লিষ্ট দেশের জনগণকে সমর্থন করে। যেখানে দেশের ৯৫ ভাগ মানুষ ও ৬৩টি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের একতরফা নির্বাচন বর্জন ও প্রত্যাখান করেছে। সেখানে তো বিএনপি ব্যর্থ নয়।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এমনকি পশ্চিমা বিশ্ব তো আওয়ামী লীগের একতরফা নির্বাচন ও সরকারকে বৈধতা দেয়নি। এক্ষেত্রে বিএনপির বৈদেশিক কমিটি এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কাজ করেছেন। তাহলে বিএনপির কূটনৈতিকভাবে ব্যর্থ কীভাবে?’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি এফআরসির ২১ সদস্যের নতুন কমিটি গঠন করা হয়। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এই কমিটির সদস্যদের মধ্যে ২০২১ সালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন খন্দকার আহাদ আহমেদ। বাকিদের বেশিরভাগই নিজ নিজ পেশা ও এলাকার রাজনীতিতে ব্যস্ত। কমিটি গঠনের পর থেকে এর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করছেন কয়েকজন সদস্য। তাদের দৌরাত্ম্যের কারণে অনেকেই নিজেদের গুটিয়ে রেখেছেন। এ বিষয়ে মুখ না খুললেও নাম গোপন রাখার শর্তে অনেকেই এ তথ্য দিয়েছেন। ২১ সদস্যের এ কমিটিতে এখন বেশি সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যায় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, শামা ওবায়েদ এবং আসাদুজ্জামানকে। মাঝেমধ্যে মীর হেলাল ও তাবিথ আউয়ালকে দেখা যায়। এর বাইরে অন্যদের খুব একটা দেখা যায় না। কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, কমিটিতে রাজনীতিকদের মধ্য কাউকে প্রধান করা হলে বাকিদের ওপর চাপ পড়ে। একই সঙ্গে কমিটিতে থাকা সার্বক্ষণিক রাজনীতিকরাও অনীহা দেখান। এ নিয়ে স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য, যারা একই সঙ্গে এফআরসির সদস্য, তাদের মধ্যে বেশি বিভাজন রয়েছে। কমিটি গঠনের পর থেকে পাঁচ বছরে কমিটির আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে মাত্র একটি। অনানুষ্ঠানিকভাবে অবহিতকরণ সভা হয়েছে কয়েকটি। ভার্চুয়ালি যোগাযোগই হয় বেশি। ফলে কিছুটা সমন্বয়হীনতা তৈরি হয়েছে। কমিটির সিনিয়র সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু কয়েক মাস ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন। কবে ফিরবেন, সেটিও নিশ্চিত নয়। সদস্যদের অভিযোগ, বিদেশিদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কোনো কর্মসূচির সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ত করা হয় না। ঢাকার বেশিরভাগ বিদেশি দূতাবাসের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে ঘাটতি আছে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের। বিএনপির একাধিক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক কালবেলাকে জানান, কূটনৈতিক উইং শক্তিশালী করতে হলে শুধু এফআরসির মাধ্যমেই কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলে হবে না। অনেক প্রভাবশালী দেশে দলের অনেক নেতা অবস্থান করেন। তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে অঞ্চলভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করলে বিষয়টি সহজ হয়। তবে বিএনপি কূটনৈতিকভাবে সফল—এমন দাবি করে ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির (এফআরসি) সদস্য অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ গতকাল কালবেলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, জনগণের মানবাধিকার সংরক্ষণ এবং ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিএনপি আন্দোলন করছে। দেশের মানুষের পাশাপাশি সারা বিশ্বেও বিএনপির এই দাবি প্রতিষ্ঠিত। বিদেশিরাও সমস্বরে বাংলাদেশের নির্বাচন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ভোটাধিকার নিয়ে কথা বলছে। তারা অনেক কথা বলেছে, এমনকি পদক্ষেপও নিয়েছে। তাহলে বিএনপির কূটনৈতিক তৎপরতা ব্যর্থ বলবেন কীভাবে?’
২৫ মার্চ, ২০২৪

সাকিব-তামিমের ‘পরামর্শ’ শুনেছে তদন্ত কমিটি
অবশেষে সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে বিশ্বকাপ ব্যর্থতার কারণ খুঁজতে তৈরি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। আজ সোমবার সকালে সিলেটের একটি পাঁচ তারকা হোটেলে সাকিব-তামিমের সঙ্গে আলাদা আলাদা বসেছিলেন তারা। দুজনের সঙ্গে লম্বা সময়ের বৈঠকের পর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্ত কমিটির প্রধান এনায়েত হোসেন সিরাজ। তিনি জানিয়েছেন, আলোচনা গতিশীল ছিল। আগামী বোর্ড মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। বিশ্বকাপের পর থেকে চোট আর নির্বাচনী ব্যস্ততায় ছিলেন সাকিব। আর তামিমও ছিলেন ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত। দুজনের সঙ্গে বসার জন্য লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে তাদের। আজ সে সুযোগ আসায় সিলেটে এসেছিলেন বিসিবির তিন পরিচালক এনায়েত হোসেন, মাহবুবউল আনাম ও আকরাম খান। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দুই ক্রিকেটারের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা। পরে এনায়েত হোসেন বলেন, ‘আমাদের যে দায়িত্ব দিয়েছে ক্রিকেট বোর্ড। আমরা এখন শেষ পর্যায়ে আছি। শিগগিরই এটা ক্রিকেট বোর্ডকে জমা দিয়ে দেব। যেহেতু ওরা এখানে (সিলেটে) পেয়েছি দুজনকে। সেজন্য সকালে এসে কথা বলে এখন চলে যাচ্ছি।’ সাকিব-তামিমই নন, তার আগেও খেলোয়াড়, কোচ, নির্বাচকদের সঙ্গে বসেছিল তদন্ত কমিটি। বিসিবির এই পরিচালক সেটা মনে করিয়ে বলেছেন, ‘শুধু সাকিব-তামিম না বাংলাদেশের ক্রিকেটের ওভারঅল বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। তাদের কাছেও আমরা পরামর্শ চেয়েছি।’
২৯ জানুয়ারি, ২০২৪
X