রাতারাতি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী হয়ে ওঠেন তারা
নিজের যোগ্যতায় নয় বরং উত্তরাধিকার সূত্রে ধনী হয়েছেন এমন নারীর সংখ্যা নেহাতই কম নয়। কিন্তু এমনও নারী আছেন, যারা উত্তরাধিকার সূত্র বা ডিভোর্সের মাধ্যমে এতটাই ধনী হয়েছেন যে, বিশ্বের সবচেয়ে  ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন তারা। ধনকুবেরদের তালিকা রাখা ফোর্বস জানিয়েছে, বর্তমানে শত কোটি ডলার বা তার চেয়ে বেশি সম্পদ আছে, এমন ব্যক্তির সংখ্যা ২ হাজার ৭৮১ জন। আর তাদের মধ্যে নারী হচ্ছে ৩৬৯ জন। গেল বছরের চেয়ে ধনী নারীর সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছে ফোর্বস। ২০২৩ সালে বিশ্বে সবচেয়ে ধনী নারীর সংখ্যা ছিল ৩৩৭ জন। এক বছরের ব্যবধানে তা বেড়ে হয়েছে ৩৬৯ জন। এই ধনী নারীদের সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১.৮ ট্রিলিয়ন ডলার। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনী নারীর ৮ জনই উত্তরাধিকার সূত্রে এই বিপুল পরিমাণ টাকার মালিক হয়েছেন। কেবলমাত্র একজন নারী নিজের যোগ্যতায় এই তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। আর ডির্ভোসের কারণে বিপুল সম্পদের মালিক হয়ে তালিকায় স্থান পেয়েছেন এক নারী। টানা চার বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারীর খেতাব জিতে নিয়েছেন ল’রিয়েলের উত্তরাধিকারী ফ্রাঁসোয়া বেনেটকোর্ট মেয়ার্স। ফোর্বস চলতি বছরের এপ্রিলে জানায়, গেল ১২ মাসে বেনেটকোর্টের সম্পদের পরিমাণ ১৯ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে। সব মিলিয়ে তিনি এখন ৯৯.৫ বিলিয়ন ডলারের মালিক। দুই দশকের বেশি সময় ধরে ওয়ালটনে একজন উত্তরাধিকারী বা বেনেটকোর্ট বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারীর খেতাব দখলের রেখেছেন। মায়ের মৃত্যুর দুই বছর পর ২০১৯ সালে বেনেটকোর্ট প্রথমবার বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারীদের তালিকায় স্থান পান। ওয়ালমার্টের প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ওয়াল্টনের একমাত্র মেয়ে অ্যালিস ওয়ালটন। ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারীদের তালিকায় দ্বিতীয় ছিলেন। বিগত কয়েক মাসে ওয়ালমার্টের শেয়ার ফুলে-ফেঁপে ওঠায় আরও ধনী হয়েছেন তিনি। অ্যালিস কখনও ওয়ালমার্টের পরিচালকদের আসনে বসেননি, বরং আঁকাআঁকি নিয়েই থেকেছেন। নিজের হোমটাউন আরকানসাসের বেন্টনভাইলে একটি আর্ট গ্যালারি খুলেছেন তিনি শিল্পপ্রেমী অ্যালিস। বর্তমানে তার সম্পদের পরিমাণ ৭২.৩ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনী নারীর তালিকায় একমাত্র ব্যতিক্রম ম্যাকেঞ্জি স্কট। অন্যরা যেখানে বাবা, স্বামী বা মায়ের সম্পদের উত্তরাধিকারী হয়েছেন, ম্যাকেঞ্জি সেখানে ডিভোর্সের পর রাতারাতি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ধনী নারীদের তালিকায় স্থান করে নেন। ম্যাকেঞ্জি বিশ্বের দ্বিতীয় ধনীতম ব্যক্তি জেফ বেজোসের স্ত্রী ছিলেন। তাদের ডিভোর্সের পর অ্যামাজনের ৪ শতাংশ শেয়ারের মালিক হন। ব্যাস, আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ৫৩ বছর বয়সী এই নারীর বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ৩৫.৬ বিলিয়ন ডলার। তিনি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারীদের তালিকায় পঞ্চম স্থানে আছেন। ধনীতম নারীদের এই তালিকায় একজন ভারতীয়ও রয়েছেন। তার নাম সাবিত্রী জিন্দাল। ৭৪ বছর বয়সী সাবিত্রী ভারতের সবচেয়ে ধনী নারী। ২০০৫ সালে স্বামী ওম প্রকাশ জিন্দালের মৃত্যুর পর তার বিশাল সাম্রাজ্যের মালিক হন সাবিত্রী। জিন্দাল গ্রুপের স্টিল, বিদ্যুৎ, সিমেন্ট ও অবকাঠামো খাতে ব্যবসা রয়েছে। ২০২৩ সালে বিশ্বের ধনীতম নারীদের তালিকায় ১২তম ছিলেন সাবিত্রী। তবে জিন্দাল গ্রুপের শেয়ারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ২০২৪ সালে এই তালিকায় ষষ্ঠ স্থান দখল করে নিয়েছেন তিনি। বর্তমানে তার সম্পদের পরিমাণ ৩৩.৫ বিলিয়ন ডলার। তেল শোধনের ব্যবসা থেকে শুরু করে পেপার টাওয়ালের ব্যবসা করা জুলিয়া কোচ ও তার পরিবার বিশ্বের তৃতীয় ধনীতম নারী। তালিকায় চতুর্থ স্থানে থাকা জ্যাকুলিন মার্স ক্যান্ডি ও পেট ফুডের ব্যবসা থেকে ধনী হয়েছেন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিপিং কোম্পানির সহপ্রতিষ্ঠাতা রাফায়েলা অ্যাপোন্তে-ডিয়ামান্তর অবস্থান তালিকায় সপ্তম। শীর্ষ ১০ এর তালিকায় তিনিই একমাত্র নারী যিনি নিজের যোগ্যতায় ধনী হয়েছেন। মিরিয়াম অ্যাডেলসন ও তার পরিবার রয়েছে তালিকার অষ্টম অবস্থানে। আর জিনা রাইনহার্টের অবস্থান নবম। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারীদের তালিকায় অ্যাবিগেইল জনসন ১০ম স্থান দখল করেছেন।
০৩ জুলাই, ২০২৪
X