বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই তিস্তার পানি, বন্দি ২ হাজার পরিবার
উজানের ঢল ও ভারি বৃষ্টিপাতে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার ৫ উপজেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও তিস্তা চরাঞ্চলের দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানি নিয়ন্ত্রণে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে রেখেছেন কর্তৃপক্ষ। রোববার (৩০ জুন) সকাল ৮টা থেকে দোয়ানি তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানিপ্রবাহ বিপৎসীমার কাছাকাছি দেখা গেছে।  এর আগে সকাল ৬টা থেকে দোয়ানি তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানিপ্রবাহ বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, যা স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার। পরে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সকাল ৮টায় ৪ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার নিচে নেমে আসে।  এর আগে শনিবার (২৯ জুন) সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি মাত্র ১৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। রাতেই পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করে। একই পয়েন্টে শনিবার বিকেল ৩টায় পানি বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এদিকে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। চর এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধির ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় লালমনিরহাটের ৫ উপজেলা পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না, চর সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কালমাটি, রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের অন্তত দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আদিতমারী উপজেলা মহিষখোঁচা ইউনিয়নের গোবর্ধন চর এলাকার আলী হোসেন বলেন, শনিবার বিকেল থেকে আবারও তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সন্ধ্যার মধ্যেই তিস্তা নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করে। আর রাতেই সেই পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়। সদর উপজেলা খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খায়রুজ্জামান বাদল বলেন, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করায় নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, শনিবার বিকেল থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। রাতের মধ্যে পানিপ্রবাহ আরও বেড়ে রোববার সকাল ৬টা থেকে একই পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পরে সকাল ৮টায় পানিপ্রবাহ ৪ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই অবস্থায় প্রবাহিত হচ্ছে।
৩০ জুন, ২০২৪

লালমনিরহাটে তিস্তার পানি বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই
উজানের ঢল ও ভারি বৃষ্টিপাতে তিস্তা নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই করছে। যে কোনো মুহূর্তে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। তিস্তা নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সকাল ৬টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ বিপৎসীমার মাত্র ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার রেকর্ড করা হয়েছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সকাল ৯টায় একই পয়েন্টে পানি কিছুটা কমে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রাশেদীন ইসলাম জানান, ভারতের সিকিমে প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টিপাতের কারণে সেখানে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। সেই পানি তিস্তায় প্রবেশ করে নদীতীরবর্তী কিছু কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এদিকে তিস্তায় পানি বৃদ্ধিতে লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কালমাটি, রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়ন, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী ইউনিয়ন, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি ইউনিয়ন, হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী, দোয়ানী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী এবং পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব ইউনিয়নের নদীতীরবর্তী চরের বাদাম ক্ষেত, ধান বীজতলা, মিষ্টি কুমড়াসহ  অন্যান্য ফসলি জমি পানিতে ডুবে গেছে। তিস্তা নদীসংলগ্ন সদর উপজেলার আনন্দবাজার এলাকার কৃষক জয়নাল আবেদীন বলেন, বৃহস্পতিবার ভোর রাত থেকে পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে নদীতীরবর্তী অনেক ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মানুষজন। উঁচু স্থানে চুলা জ্বালিয়ে রান্নার কাজ সেরে নিচ্ছেন মানুষজন। লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার রায় জানান, ভারতের সিকিমে বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। মূলত উজানের পানিতেই তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। উজান থেকে আরও ব্যাপকহারে তিস্তা নদীতে পানি প্রবেশ করলে আমাদের বাংলাদেশ অংশের তিস্তা নদীতীরবর্তী পুরো অঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
২০ জুন, ২০২৪

বিপৎসীমা ছাড়াল তিস্তার পানি, আতঙ্কে চরাঞ্চলের মানুষ
ভারতের উত্তর সিকিমে ভারি বর্ষণসহ উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি প্রবেশ করা শুরু করেছে। আর এতে নদ-নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। নীলফামারীর ডিমলা অঞ্চলের তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে পাউবো কর্তৃপক্ষ। তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা বন্যার আশঙ্কা করছেন। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। বুধবার (১৯ জুন) সকাল ৯টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৯২ সেন্টিমিটার, যা বিপদসীমার ২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। (স্বাভাবিক পানির প্রবাহ ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। এর আগে সকাল ৬ টায় তিস্তা ব্যারাজের পয়েন্টে ৫১ দশমিক ৯৫ সেন্টিমিটার, যা বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। বর্তমানে রাত ৯ টায় সময় ৫২ দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা বিপদ সীমার ১৫ সেন্টিমিটার উপরে।  তিস্তা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, খগাখরিবাড়ি, টেপাখরিবাড়ি, গয়াবাড়ি, খলিশা চাপানি, ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরের বসতবাড়ি ও রাস্তা-ঘাট পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এতে প্রায় ২ শতাধিক পরিবারের বসতবাড়িতে পানি উঠে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের ঝাড় সিংহেশ্বর, খগাখরিবাড়ি ইউনিয়নের দোহল পাড়া, টেপাখরিবাড়ি ইউনিয়নের চর খড়িবাড়ি, খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ছোটখাতা, বাইশ পুকুর, ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের কেল্লাপাড়ার তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করছে। কেল্লাপাড়ার হামিদুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে তিস্তা পানি বৃদ্ধি পেয়ে চর এলাকার বসতবাড়ি ও চলাচলের রাস্তা ডুবে গেছে। পরিবারগুলো ঘর থেকে বের হতে পারছে না। খালিশা চাপানি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান শহীদুজ্জামান  বলেন, সকালে থেকে বাইশপুকুর গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। আর এতে ওই ওয়ার্ডের প্রায় শতাধিক পরিবারের ঘর বাড়িতে পানি প্রবেশ করে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।  এ বিষয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, গজলডোবায় পানি ছেড়ে দেওয়ার কারণে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সকাল থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল।
২০ জুন, ২০২৪

কুড়িগ্রামে সবকটি নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে গত কয়েক দিনের টানা ভারি বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দুধকুমার, ফুলকুমার ও কালজানিসহ উপজেলার সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্ষার টানা বর্ষণে খাল-বিল ডোবা পানিতে টইটম্বুর। গত ২৪ ঘণ্টায় দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৩৭ সেমি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই হয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুধকুমার নদীর দুকূল উপচে যেন কোনো মুহূর্তে প্লাবিত হতে পারে নিম্নাঞ্চল।  যে কোনো সময় সবকটি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছে পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।  পাউবো জানায়, মঙ্গলবার (১৮ জুন) দুপুর ১২টায় গত ২৪ ঘণ্টায় দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৩৭ সেমি বেড়ে বিপৎসীমার মাত্র ১০ সেমির নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।  দুধকুমার নদের পাড়ের বাসিন্দা ফরিদুল, আমজাদ ও মোজাম্মেল হক জানান, যে হারে নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে দুই এক দিনের মধ্যে চরাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যাবে। বন্যা হওয়ার আশঙ্কায় আছি। কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার উত্তর দিকে ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। কয়েকদিন এ প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, উজানে ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে জেলার নদ-নদীগুলোর পানি দ্রুত বাড়ছে। এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি, পাটেশ্বরী পয়েন্টে দুধকুমার নদের পানি ও তালুকশিমুল বাড়ি পয়েন্ট ধরলার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম ফেরদৌস জানান, জেলা প্রশাসন থেকে বন্যার জরুরি ত্রাণ সহায়তা পাওয়া গেছে। ইউপি চেয়ারম্যানগণকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা দিতে বলা হয়েছে। বন‍্যা হলে তা মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে।
১৮ জুন, ২০২৪

সিলেটে বিপৎসীমা ছাড়িয়েছে নদ-নদীর পানি, বন্যার আশঙ্কা
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সিলেটে তিন দিনের টানা বৃষ্টি ও নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুরমা, কুশিয়ারা ও সারিগোয়াইন নদী তিনটি পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। জেলার গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, কোম্পানীঞ্জ ও জকিগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্যমতে, বুধবার (২৯ মে) দুপুর ১২টায় সুরমা নদী কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা নদী জকিগঞ্জের অমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার এবং সারিগোয়াইন নদী জৈন্তাপুরের সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আকস্মিক বন্যায় গোয়াইনঘাট উপজেলায় সারিঘাট-গোয়াইনঘাট সড়কের দুটি পয়েন্ট এবং যথাক্রমে গোয়াইনঘাট-রাধানগর-জাফলং সড়কের শিমুলতলা পয়েন্ট প্লাবিত হয়েছে বলে গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। এসব সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। উপজেলার রুস্তমপুর, লেংগুড়া, ডৌবাড়ি, নন্দীরগাঁও ইউনিয়ন, পূর্ব ও পশ্চিম আলীরগাঁও, পশ্চিম জাফলং, মধ্য জাফলংয়ে প্লাবনের পরিমাণ বেশি হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে। বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য এরইমধ্যে ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, যে সকল এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ ও প্লাবিত হতে পারে সে সকল এলাকার ঘরবাড়ি, বাজার ও দোকানসমূহ থেকে জানমাল নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য স্থানীয়দের সতর্ক করা হচ্ছে। অতি ঝুঁকিপূর্ণ ও প্লাবণ প্রবণ এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে দ্রুত অবস্থান নিতে মাইকিং করা হচ্ছে। এদিকে জৈন্তাপুরে দ্বিতীয় দিনে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সারী, বড় নয়াগং ও রাংপানি নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন নিজপাট, জৈন্তাপুর ও চারিকাটা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা। এ ছাড়া বন্যায় পরিস্থিতির খোঁজ রাখছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। নিজপাট লামাপড়া, বন্দরহাটি, ময়নাহাটি, জাঙ্গালহাটি, বড়খেল, মেঘলী, তিলকৈপাড়া, ফুলবাড়ী, নয়াবাড়ী, হর্নি, বাইরাখেল, গোয়াবাড়ী, ডিবির হাওর, ঘিলাতৈল, মুক্তাপুর, বিরাইমারা হাওর, খারুবিল, লমানীগ্রাম, কাটাখাল, বাউরভাগ, চাতলারপাড়, ডুলটিরপাড়, ১নং লক্ষীপুর, ২নং লক্ষীপুর, আমবাড়ী, ঝিঙ্গাবাড়ী, কাঠালবাড়ী, নলজুরী, কেন্দ্রী, থুবাং, কালিঞ্জি, লালা, তুমইর, শেওলারটুক, বাওন হাওরসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা সর্ববৃহৎ সারী, বড় নয়াগাং ও রাংপানি নদীর পানি বিপৎসীমার দশমিক ৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টানা বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে পানি আরও বৃদ্ধি পাবে। সারী-গোয়াইন বেড়িবাঁধ প্রকল্পের কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে পানি নিম্নাঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় বিপৎসীমার দশমিক ৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, পাহাড়ি ঢল টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। আমরা বন্যার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি এবং নিম্নাঞ্চলের জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে গবাদিপশু সরিয়ে আনতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।  তিনি জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে। বন্যা মোকাবিলায় প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া সকল নদী পথে যাতায়াতকারীদের সতর্কভাবে চলাচলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস বলেন, আমাদের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পায় মূলত উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে। তিনি বলেন, শুষ্ক মৌসুমের হিসেবে সিলেটে নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে আছে। এই পানি আরেকটু বৃদ্ধি পাবে তারপর নেমে যাবে। তবে যেহেতু আমাদের দেশে বৃষ্টি হচ্ছে না তাই এখন কিছুটা স্বস্তি আছে। এখন যদি ভারতের মেঘালয় বা আসামে বৃষ্টি হয় তাহলে তো পাহাড়ি ঢল আসবেই। এজন্য আমাদের বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হবে। অপরদিকে সিলেট আবহাওয়া অফিস বলছে, যেহেতু প্রাক বর্ষাকাল চলছে তাই এখন প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হবে। গত ২৪ ঘণ্টায় সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ১৪৬ দশমিক ১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজিব হোসেন বলেন, আগামী তিন দিন সিলেটে অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
২৯ মে, ২০২৪

তিস্তার পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই
টানা ভারি বর্ষণে বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে তিস্তা নদীর পানি। পানি নিয়ন্ত্রণে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। পানি বৃদ্ধিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে তিস্তা চরের মানুষজন। রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৭ মিটার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার)। যা বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, গত শনিবার সকাল থেকে রোববার সারা দিন কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি আবার কখনো ভারি বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে তিস্তা তীরবর্তী ও নিম্নাঞ্চলের কয়েক হাজার হেক্টর  ফসলের জমি। বৃষ্টির কারণে লালমনিরহাটের সব নদ-নদীর পানিপ্রবাহ বেড়েছে। টানা বর্ষণের কারণে ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ বেড়েছে বলে জানিয়েছে ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ। নদীপাড়ের মানুষজন জানায়, পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে তিস্তা নদীর বাম তীরে লালমনিরহাট জেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় শঙ্কায় চিন্তিত তিস্তাপাড়ের মানুষ। চলতি মৌসুমে কয়েক দফায় বন্যা হলেও তা বেশি সময় স্থায়ী ছিল না। মৌসুমের শেষ দিকে বড় বন্যার আশঙ্কা করছেন নদী পাড়ের মানুষজন।   জেলার সবকয়টি উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা নদী। বন্যা দেখা দিলে পুরো জেলাকে দুর্ভোগে ফেলে। তিস্তা পাড়ে বন্যা হলে জেলার ৫টি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাতীবান্ধা উপজেলা। লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার বলেন, টানা ভারি বর্ষণে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ বেড়েছে। সবগুলো জলকপাট খুলে পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় আরও তিস্তার পানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও তিনি জানান।
২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

যমুনার পানি কাজিপুর পয়েন্টে বিপৎসীমা ছড়াল
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণের কারণে যমুনার পানি বেশ কয়েক দিন ধরে বাড়তে শুরু করেছে। ফলে এবার সিরাজগঞ্জের কাজিপুর পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে যমুনা নদীর পানি। এদিকে যমুনায় পানি বেড়ে উপজেলার বেশ কিছু ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রনজিত কুমার সরকার জানান, শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ০৮ মিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় ৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৯০ মিটার)। তিনি আরও বলেন, কাজিপুর পয়েন্টেও বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। বন্যা পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, যমুনার পানি আরও দু-একদিন বাড়বে। এরপর কমতে পারে। তবে বড় বন্যার কোনো সম্ভাবনা নাই। যমুনার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলার তেকানী, নিশ্চিন্তপুর, খাসরাজবাড়ি, মনসুরনগর, চরগ্রীস ও নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়নের চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে এসব অঞ্চলের আবাদি জমি। প্রতিদিনই পানিবন্দি হয়ে পড়ছেন অনেকেই। সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পূণর্বাসন কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, চরাঞ্চলের বেশ কিছু পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়লেও আশঙ্কার কিছু নেই। বড় কোনো বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা কম।
০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

জামালপুরে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমা ছাড়াল
উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে জামালপুরের যমুনা, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, দশানী ও জিঞ্জিরামসহ সব নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বুধবার (৩০ আগস্ট) বিকেল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় যমুনা তীরবর্তী ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, মেলান্দহ ও মাদারগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। নিম্নাঞ্চলের রোপা-আমনসহ মৌসুমী সবজির মাঠ তলিয়ে যাচ্ছে। নিচু বসতবাড়িতে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জামালপুরের বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে জেলার দেওয়ানগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলার নিচু এলাকায় পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। তবে এখনো কোনো এলাকা প্লাবিত হয়নি। জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, উজানে পানি বৃদ্ধির ফলে যমুনাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি আগামী দুই তিন দিন বাড়তে পারে। তবে এই মুহূর্তে বড় বন্যার আশঙ্কা নেই।
৩০ আগস্ট, ২০২৩

রংপুর / ভরাট তিস্তার তলদেশ, অল্প পানিতেই বিপৎসীমা পার
এবারের বর্ষায় ভয়াবহ বন্যার মতো বৃষ্টি না হলেও বারবার বন্যা আতঙ্কে থাকছেন তিস্তা নদীর কোলঘেঁষা বাসিন্দারা। বৃষ্টি শুরু হতে না হতেই বন্যা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে ওই এলাকায়। একই সঙ্গে উজানের ঢলের পানিতেও বিপৎসীমার ওপরে উঠছে তিস্তার পানি। হঠাৎ পানি বাড়লেও আবার কমে যাচ্ছে। তিস্তায় এমন পানি বাড়া-কমার খেলায় নদীর অববাহিকায় থাকা মানুষজনও বাড়িঘর ছেড়ে আসা-যাওয়ার মধ্যে পড়ছেন। বাড়ছে বিড়ম্বনা এবং আতঙ্কও। নদী ও পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিস্তায় পানি বাড়া-কমা খেলার সঙ্গে মূলত তিস্তার তলদেশ ভরাটের একটা বড় অঙ্ক রয়েছে। তাদের দাবি, যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হচ্ছে, তাতে নদীর তলদেশ ভিজিয়ে ওঠার কথা। সেখানে বিপৎসীমার ওপরে উঠছে পানি। এর মূল কারণ হচ্ছে, তিস্তা সারা বছরই ভরাট থাকা। নদীপাড়ের বাসিন্দারা বলছেন, এখন আর নদীর গভীরতা নেই। নদীতে বালু আর বালু। একটু পানিতেই নদী উপছে বাড়িঘরে পানি উঠছে। নদী গবেষক অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, বর্ষা মৌসুমে বন্যা ও উজানি ঢলে আসা বালু আর পলি পড়ে ধীরে ধীরে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। নদীর গতিপথ বদল হয়ে সীমানা বাড়লেও গভীরতা কমছে। তিনি বলেন, ২৩৫ বছরের এই নদীর কোনো পরিচর্যা হয়নি। বরং নদীর ক্ষতি হয়—এমন বহু প্রকল্প করা হয়েছে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নদীর পরিচর্যা করা না গেলে আশীর্বাদী তিস্তা অভিশাপে পরিণত হবে। তিনি বলেন, ভারতের সিকিম থেকে ১৭৮৭ সালে তিস্তা নদীর গতিপথ বদল হয়ে বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার কালীগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে লালমনিরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা ছুঁয়ে মিলিত হয় কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদে। ৩১৫ কিলোমিটারের এই নদীর ১১৫ কিমি বাংলাদেশ ভূখণ্ডে অবস্থিত। ২০১৪ সালে তিস্তার ভারতীয় অংশের গজলডোবায় বাঁধ দেয় তারা। তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী জানান, উজান থেকে শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রত্যাহার করায়, পানির অভাবে বাংলাদেশ অংশে তিস্তা মরে যায়, মরে গেছে। প্রকৃতি রুক্ষ হয়ে উঠেছে। বর্ষাকালে পানি ছেড়ে দেওয়ায় প্রবল পানির চাপে মূল গতিপথ বদলে তিস্তা প্রচণ্ডভাবে প্রবাহিত হতে থাকে। তখন তিস্তার বাংলাদেশ অংশে এর প্রস্থ কোনো কোনো জায়গায় ৫ কিলোমিটারেরও বেশি হয়ে পড়ে। বন্যায় প্রতিবছর এই অঞ্চলের শত শত মানুষ বাড়িঘর, গাছপালা, আবাদি জমি হারিয়ে ভূমিহীন ও ছিন্নমূল হয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, ১৯৮৩ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠকে তিস্তা নদীর পানির শতকরা ৩৬ শতাংশ পাবে বাংলাদেশ এবং ৩৯ শতাংশ ভারত। বাকি ২৫ শতাংশ নদীপ্রবাহের জন্য নদীতেই সংরক্ষিত রাখা হবে। কিন্তু কখন থেকে এবং কোথা থেকে এই পানি ভাগাভাগি করা হবে, সে বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা ছিল না ওই বৈঠকে। তিস্তা সুরক্ষা কমিটির আহ্বায়ক নদী গবেষক অধ্যাপক মঞ্জুর আরিফ বলেন, মূল তিস্তা এত প্রশস্ত ছিল না। তিস্তা ভরাট হতে হতে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। নদী নাব্য থাকলে প্রশস্ত হতো না। তিস্তাকে নাব্য রাখতে হবে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে খনন করে নদীর প্রাকৃতিক গঠন ও ধরন বজায় রাখতে হবে। যখন শুকিয়ে যাচ্ছে অর্থাৎ শুষ্ক মৌসুমে প্রতিবেশী দেশ পানি আটকিয়ে রাখছে। প্রতিদিন, প্রতি মাস বা প্রতিবছর যে পরিমাণ পানি প্রবাহিত হওয়ার কথা, সেটি হচ্ছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ড রংপুর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, উজানের পাহাড়ি ঢল নামতে শুরু করলেও তিস্তাসহ বিভিন্ন নদনদীর পানি বাড়তে শুরু করে। পানির স্রোতের কারণে নিয়ম অনুযায়ী তিস্তা ব্যারাজের সবকটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে দেওয়া হয়। সম্প্রতি কয়েকবার পানি বেড়েছে।
২০ আগস্ট, ২০২৩
X