বিচার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ সরকারের নিয়ন্ত্রণে - মির্জা ফখরুল
বর্তমান বিচার ব্যবস্থা পুরোপুরিভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল বৃহস্পতিবার গুলশানে হোটেল লেকশোরে ইউনাইটেড ল ইয়ার্স ফ্রন্টের এক সেমিনারে এই অভিযোগ করেন তিনি। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সংগঠনের কো-কনভেনর অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্র নেই। বিচার ব্যবস্থা পুরোপুরি তাদের (সরকার) হাতে মূল নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এর কারণটা হচ্ছে, তারা (আওয়ামী লীগ) গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। আমরা যে গণতন্ত্রের কথা বলছি, আমরা যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কথা বলছি—সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তো আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে না, শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন না। সরকারের দায়ের মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় শিগগির ‘সেঞ্চুরি’ করতে যাচ্ছেন জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা প্রায় প্রতিদিন নিম্ন আদালতে যাই। কারণ সেখানে আমাদের মামলা আছে। সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের মামলা ৪০০টি, হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের ৪১৮টি। আমার বিরুদ্ধেও ৯৮টি। সেঞ্চুরি করতে দুটি বাকি আছে। যদি ঢাকার নিম্ন আদালতে যান, দেখবেন গিজগিজ করছে মানুষ। এই মানুষগুলো বিএনপির সঙ্গে জড়িত, বিরোধী দলের সঙ্গে জড়িত। দেশে একদলীয় শাসন চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকে যখন পুলিশ কর্মকর্তারা রাজনীতিবিদদের মতো কথা বলেন, জজ সাহেবরা শপথবদ্ধ রাজনীতির কথা বলেন, তখন আমরা সাধারণ মানুষরা কোথায়, কার কাছে যাব? এ সময় আইনজীবীদের ওপর পুলিশি হামলা ও উল্টো তাদের বিরুদ্ধেই মামলার ঘটনার নিন্দা জানান মির্জা ফখরুল। অনুষ্ঠানে হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী উচ্চ আদালতের বর্তমান অবস্থায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ইউনাইটেড ল ইয়ার্স ফ্রন্টের কনভেনর অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্বে এবং ব্যারিস্টার কায়সার কামালের সঞ্চালনায় সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অধ্যাপক বোরহান উদ্দীন খান, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বক্তব্য দেন। এ সময় বিএনপির আবদুল্লাহ আল নোমান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, জয়নুল আবদিন ফারুক, হাবিবুর রহমান, ইসমাইল জবিউল্লাহ, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, গাজী কামরুল ইসলাম সজল, মীর হেলাল উদ্দিন, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গণফোরামের জগলুল হায়দার আফ্রিক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। সাইবার নিরাপত্তা আইন বিপজ্জনক সংসদে সাইবার নিরাপত্তা আইন পাসের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাতীয় সংসদে চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাবিরোধী সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট বিল পাস দেশের একটি নিকৃষ্ট কালো আইন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার ও তল্লাশি এই আইনকে বিরুদ্ধমত দমনে এক বিপজ্জনক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে। বিলটি পাসে মানুষের মনে গভীর উদ্বেগ রয়েই গেল। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

বিচার ব্যবস্থা নিয়ে বিএনপির বক্তব্য দুরভিসন্ধিমূলক- ওবায়দুল কাদের
বিএনপি বিচার বিভাগকে দলীয় আঙিনায় রূপান্তরিত করেছিল উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দেশের সংবিধান, বিচার ব্যবস্থা নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দেওয়া বক্তব্য দুরভিসন্ধিমূলক। গতকাল শুক্রবার বিচার বিভাগ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদে দেওয়া বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন। সেতুমন্ত্রী বলেন, বিএনপি মহাসচিবসহ তাদের নেতারা দেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নেতিবাচক মন্তব্য করছেন। অথচ বিএনপির দুর্নীতিপরায়ণ শীর্ষ নেতৃত্বের অপরাধ দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া এবং সাক্ষ্য-প্রমাণের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হওয়ায় বিজ্ঞ আদালতের রায়ে তাদের শাস্তি হয়েছে। আওয়ামী লীগের এ শীর্ষ নেতা বলেন, একুশে আগস্ট নারকীয় গ্রেনেড হামলার মাস্টারমাইন্ড, দুর্নীতির বরপুত্র পলাতক আসামি তারেক রহমানের দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইর প্রতিনিধি এসে সাক্ষ্য দিয়েছে। জিয়া পরিবারের পাচারকৃত ৪০ কোটি টাকা বিদেশ থেকে ফেরত আনা হয়েছে। এতিমের টাকা আত্মসাতের দায়ে খালেদা জিয়াও সাক্ষ্য-প্রমাণের মধ্য নিয়ে এবং প্রচলিত আইন অনুযায়ী দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় আদালতের রায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। সাক্ষ্য-প্রমাণ এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা পরিচালিত হয়েছে এবং আদালত আইনের বিধান অনুযায়ী দোষীদের শাস্তি দিয়েছেন। বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, দেশের সংবিধান, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন, জনমত, গণতান্ত্রিক রীতিনীতি কোনো কিছুর প্রতি জন্মলগ্ন থেকেই বিএনপির কোনো আস্থা নেই। তাই তারা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে। স্বাধীন বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় বিএনপি বারবার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি চালু করেছিল। দলীয় বিচারপতি নিয়োগের পথ সুগম করার জন্য সংবিধান লঙ্ঘন করে চার বিচারপতিকে জোরপূর্বক বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছিল জিয়াউর রহমান। তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে খালেদা জিয়া। বিএনপির আমলে হাওয়া ভবন থেকে সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইনের ডিগ্রি নেই এমন লোককে তারা হাইকোর্টের বিচারক বানিয়েছিল এবং প্রমাণিত হওয়ার পর তিনি পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন। যুদ্ধাপরাধীর পুত্রকে জামিন দিতে দেশের আইন ও কোর্টের বিধি লঙ্ঘন করে হাইকোর্টের একজন বিচারক রাতে তার ঘরের মধ্যে কোর্ট বসিয়েছিলেন। তাদের দলীয় রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদের অবৈধভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহণের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের বিচারকার্য চলমান থাকা অবস্থায় তৎকালীন বিএনপিদলীয় অ্যাটর্নি জেনারেলের নির্দেশে গঠিত বেঞ্চ নজিরবিহীনভাবে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল।
০৫ আগস্ট, ২০২৩
X