সরকারের একার পক্ষে বাল্যবিয়ে রোধ করা সম্ভব নয় : প্রতিমন্ত্রী
মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি বলেছেন, সরকারের একার পক্ষে বাল্যবিয়ে রোধ করা সম্ভব নয়। একজন মেয়ে হলো একটি দেশের জাতীয় সম্পদ। মেয়ের পেছনে বিনিয়োগ করলে পরিবার ফেরত পাবে। আর মেয়েটি বাল্যবিয়ের শিকার হলে জাতীয় সম্পদের ক্ষতি হবে। বুধবার (৫ জুন) সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে ইউএনএফপিএ ও ইউনিসেফের সহযোগিতায় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় গ্লোবাল প্রোগ্রাম টু ইন্ড চাইল্ড ম্যারেজ (জিপিইসিএম)-এর তৃতীয় পর্যায় উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।  অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারক। বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ( গ্রেড-১) কেয়া খান, বাংলাদেশ ইউএনেফপিএ’র কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ক্রিস্টিন ব্লখুস, বাংলাদেশে ইউনিসেফের ওআইসি রিপ্রেজেন্টেটিভ স্ট্যানলি গুয়্যাভুয়া। নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন কিশোরী সানজিদা ইসলাম, মো. জায়েদ আমিন। তিনি বলেন, আমাদের সম্পদ সীমাবদ্ধ, বিশ্বায়নের এই যুগে আমরা পরস্পরের সহযোগিতা ও রিসোর্স শেয়ারিং এর মাধ্যমে আমাদের কার্যক্রমকে আরও সমৃদ্ধ ও আরও গতিশীল করতে পারব। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা অন্যান্য দেশের কার্যক্রম এবং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে তাদের কার্যকরী উদ্যোগ ও ইনোভেশন সম্পর্কে জানতে পারছি। একই সাথে সেটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কতটুকু কার্যকর তা পরীক্ষা করার সুযোগও পাচ্ছি।  শিশুবিবাহ নিরসনে গৃহীত জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও শিশুবিবাহ নিরোধ আইনের প্রয়োগ নিশ্চিতে ঘনিষ্ঠ ও কার্যকরভাবে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, শুধু আইনের মাধ্যমে শিশুবিবাহ নিরসন করা যাবে না। সে কারণে এ বিষয়ে মানুষের চিন্তা-ভাবনা পরিবর্তনে কাজ করার ওপরেও আমরা গুরুত্ব দেব। বক্তারা বলেন, ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি আইনি নীতিমালা আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছেন। দেশজুড়ে সবচেয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করা হবে। এর লক্ষ্য হবে বাল্যবিবাহ নিরসনে বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টায় সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ ও দক্ষতা (রিসোর্স) বৃদ্ধি। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা প্রদান। কর্মসূচির নতুন এই ধাপে শিশুবিবাহবিরোধী আইন ও নীতিমালা জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। শিশুদের শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার হার হ্রাস করার লক্ষ্যে কাজ করা হবে। সরকারের সামাজিক সুরক্ষার স্কিমগুলো আরও কার্যকর করা ও কমিউনিটির সঙ্গে সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির মাধ্যমে সামাজিক রীতিনীতি পরিবর্তনে গুরুত্ব দেওয়া। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সাল নাগাদ ১৮ বছরের কম বয়সী কন্যাশিশুদের বিয়ে পুরোপুরি বন্ধ করার প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছেন। এই প্রচেষ্টায় সরকারকে সহায়তার জন্য গ্লোবাল প্রোগ্রামে শিশুবিবাহ নিরসনে গৃহীত জাতীয় কর্মপরিকল্পনার পুরো মাত্রায় বাস্তবায়ন নিশ্চিতের জন্য কাজ করা হবে। সে লক্ষ্যে অনেক খাতের সম্মিলন ঘটিয়ে পরিবর্তন আনতে সক্ষম এবং তথ্য-উপাত্তভিত্তিক নানা পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ক্রিস্টিন ব্লখুস বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর মাত্র ২ দশমিক ১ শতাংশ হারে শিশুবিবাহ কমছে। এর অর্থ দাঁড়ায় বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ নিরসনের জন্য দুই শতকের বেশি সময়- ২১৫ বছর লেগে যাবে। তিনি বলেন, কন্যাশিশুদের স্কুলে পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে পারলে তা বেশ কাজে দেবে। যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবায় বর্ধিত ও সুপরিকল্পিত বিনিয়োগ এবং কম্প্রিহেন্সিভ সেক্সুয়ালিটি এডুকেশন কিশোরীদের তাদের শরীর ও জীবন সম্পর্কে বিজ্ঞানভিত্তিক ধারণাপ্রসূত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম করে তুলবে, যা তাদের পরিবর্তনের দূত ও ভবিষ্যৎ নেতা হয়ে ওঠার সুযোগ তৈরি করে দেবে।    স্ট্যানলি গুয়্যাভুয়া বলেন, যেসব জেলায় উচ্চ মাত্রায় শিশুবিবাহ রয়েছে, সেসব জায়গায় আমরা অন্যান্য অংশীজনদের নিয়ে শিশুবিবাহের মূল কারণ মোকাবিলার পাশাপাশি এক্ষত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন এমন সবাইকে যুক্ত করব। সেই সঙ্গে আমরা বিবাহিত ও অবিবাহিত কিশোরী কন্যাশিশুদের সমন্বিত সহায়তা প্রদান করব।     প্রতিবেদনে বলা হয়, ১০ জেলায় বাল্যবিয়ের হার ৬২ থেকে ৭১ শতাংশ। এর মধ্যে বাগেরহাট জেলায় বাল্যবিয়ের হার সবচেয়ে বেশি। নাজমা মোবারক বলেন, বাল্যবিয়ে বন্ধ করার ক্ষেত্রে ২৩টি মন্ত্রণালয়কে চিহ্নিত করেছি।  ১০টি জেলা নয়, পুরো দেশে বাল্যবিয়ে বন্ধে কাজ করতে হবে। কেয়া খান বলেন, ১২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের হার সবচেয়ে বেশি।  বাল্যবিয়ে বন্ধে প্রতিটি স্কুলে কিশোর-কিশোরী, অভিভাবক, শিক্ষকদের নিয়ে সচেতনতা সভা করা হচ্ছে।
০৫ জুন, ২০২৪

বাল্যবিয়ে রোধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাল্যবিয়ে রোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বাল্যবিয়ের বহুমাত্রিক ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। একটি শিশু হয়েও গর্ভে ধারণ করতে হয় আরেকটি শিশুকে। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন এবং জেন্ডার সমতা বিধানের লক্ষ্যে নেতৃত্ব দিচ্ছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। অনুষ্ঠানে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, সংসদ সদস্য আরমা দত্ত, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী প্রমুখ।
২৬ এপ্রিল, ২০২৪

বাল্যবিয়ে রোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে : মানবাধিকারের চেয়ারম্যান 
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাল্যবিয়ের বহুমাত্রিক ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। শিকার হতে হয় পারিবারিক সহিংসতা ও নির্যাতনের। বাল্যবিয়ে বাড়ছে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু। এটি অমানবিক এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন। দেশকে বাল্যবিয়ে মুক্ত করতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।  বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওতে বাংলাদেশ প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের ৩০ বছরপূর্তি উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।    বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন এবং জেন্ডার সমতা বিধানের লক্ষ্যে নেতৃত্ব দিচ্ছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সরকারের বাল্যবিয়ে নিরোধকল্প জাতীয় পরিকল্পনা (২০১৮-২০৩০) এর আওতায় বাল্যবিয়ে রোধ করতে প্রতিষ্ঠানটি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। এ ছাড়াও গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্যগত সচেতনতা বৃদ্ধি, কন্যাশিশুদের পুষ্টি নিশ্চিত এবং তাদেরকে যে কোনো ধরনের সহিংসতা থেকে রক্ষা করতে রাষ্ট্র কাজ করছে। একই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানটিও। মাঠপর্যায়ে সরকার, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়নমূলক সংস্থাগুলোর সাথে যৌথভাবে কাজ করছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।  এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য আরমা দত্ত, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধুরীসহ অন্যান্য আমন্ত্রিত অতিথিরা।
২৫ এপ্রিল, ২০২৪

বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে যাওয়ায় পুলিশের ওপর হামলা
সিরাজগঞ্জে বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে যাওয়ায় মো. রানা নামে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্বে পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তার স্ত্রীকে। এ সময় ওই আওয়ামী লীগ নেতার ঘর থেকে বেশ কয়েকটি দেশীয় অস্ত্র ও চোলাই মদ উদ্ধার করা হয়। শুক্রবার রাত ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার রেলওয়ে কলোনি মহল্লায় এসব ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা মো. রানাসহ ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় চার-পাঁচজনকে আসামি করে তিনটি মামল করেছে পুলিশ। সদর থানার ওসি মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, পাবনা জেলার সাঁথিয়া থানার সাটিয়াকোলা গ্রামের এক বাসিন্দা ৯৯৯ ফোন করে জানান সিরাজগঞ্জের রেলওয়ে কলোনি মহল্লায় সাইদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি তার ১৪ বছরের মেয়েকে আটকে রেখে বিয়ে দিচ্ছেন। সংবাদ পেয়ে এসআই ব্রজেশ্বরের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে যায় এবং বাল্যবিয়ে বন্ধের কথা বলে। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা রানার নেতৃত্বে ১৬-১৭ জন তাদের ওপর হামলা চালায়। এসআই ব্রজেশ্বরসহ এক নারী কনস্টেবলকে মারধর এবং একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। ঘটনাস্থলে থাকা ওই মেয়েসহ তার ভাইকেও মারধর করে হামলাকারীরা। বিষয়টি বেতার যন্ত্রের মাধ্যমে খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে রানার বাড়ি তল্লাশি তিনটি তলোয়ার, দুটি বড় ছোরা, একটি বল্লম, একটি রামদা ও ২০ লিটার চোলাই মদ উদ্ধার করা হয়। এ সময় আটক করা হয় রানার স্ত্রীকে। ওসি আরও বলেন, এ ঘটনায় এসআই ব্রজেশ্বর বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ও সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগ তিনটি মামলা করেছেন।
২১ এপ্রিল, ২০২৪

সংসদে আলোচনা  / দেশে অর্ধেকের বেশি নারীর বাল্যবিয়ে
বাংলাদেশের অর্ধেকেরও বেশি নারীর বাল্যবিয়ে হয় বলে জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি। গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নুর প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপন করা হয়। প্রতিমন্ত্রী মাল্টিপল ইনডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে-২০১৯ তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের হার ১৫ বছরের নিচে ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং ১৮ বছরের নিচে ৫১ দশমিক ৪০ শতাংশ। প্রতিমন্ত্রী বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে ১৭টি পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, ৬৪টি জেলায় বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে মনিটরিং কার্যক্রম চলছে। এমপি নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৫ থেকে ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত ১২ হাজার ১৫০টি বাল্যবিয়ে রোধ করা গেছে। একই সময়ে বাল্যবিয়ে রোধে ৪৩ হাজার ৭৭৭টি উঠান বৈঠক করা হয়।
০৫ মার্চ, ২০২৪

প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বন্ধ হলো বাল্যবিয়ে
চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে অষ্টম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রী বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পেয়েছে। বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার বাজদিয়া গ্রামে ওই ছাত্রীর বাড়ি অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তিথি মিত্র। এসময় ছাত্রীর বাবা ১৮ বছর না হওয়া পর্যন্ত সন্তানের বিয়ে দেবে না বলে মুচলেকা দেন। জানা গেছে, অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাকে নিয়ে সেখানে অভিযানে যান তিথি মিত্র। এসময় অভিযোগের সত্যতা পান তারা। পরে পরিবারকে মেয়ের ১৮ বছর না হওয়া পর্যন্ত বিয়ের বিষয়ে সতর্ক করা হয়।  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তিথি মিত্র বলেন, ডিসি স্যারের কাছে বাল্যবিয়ের অভিযোগ পাই। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাজদিয়া গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। ওই মেয়ের বাবা বাল্যবিয়ে দেবেন না বলে মুচলেকা দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, মেয়ের পরিবার আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল, আমাদের অগোচরে যাতে বিয়ে না দিতে পারে সেজন্য সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সদস্য ও গ্রাম পুলিশকে খোঁজ রাখতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ছেলের পরিবারকে মোবাইলের মাধ্যমে ১৮ বছরের আগে বিয়ে না করা জন্য বলা হয়েছে। 
০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পেল স্কুলছাত্রী 
বরগুনার তালতলীতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে অষ্টম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রী বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পেয়েছে। একই সঙ্গে কনের বাবাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সোমবার (২২ জানুযারি) রাত ১০টার দিকে উপজেলার ছোটবগী ইউপির গাবতলী এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সিফাত আনোয়ার তুম্পা। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, উপজেলার ছোটবগী ইউপির গাবতলী এলাকার অষ্টম শ্রেণির স্কুলছাত্রীর সঙ্গে একই এলাকার মো. হযরত আলীর ছেলে রাকিবের বিয়ে ঠিক হয়। বর-কনের উভয়পক্ষের সম্মতিতে স্কুলছাত্রীর বাড়িতে বিয়ের আয়োজন করা হয়। এমন সংবাদ পেয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত সেখানে অভিযান চালায়। এ সময় কনের বাবাকে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়।
২৩ জানুয়ারি, ২০২৪

কুমিল্লায় বাল্যবিয়ে করায় বরের কারাদণ্ড
কুমিল্লার ব্রা‏হ্মণপাড়ায় বাল্যবিয়ের দায়ে রাজিব রানা (৩০) নামে এক বরকে দুই মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় একটি বাল্যবিয়ে সংঘটিত হওয়ায় বরকে এ সাজা দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স.ম আজহারুল ইসলাম। এ সময় ব্রা‏হ্মণপাড়া উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা লুৎফা ইয়াছমিন উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়টিতে পুরো এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।    ভ্রাম্যমাণ আদালত ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ব্রা‏হ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের উত্তর তেঁতাভূমি গ্রামের মো. রাজিব রানার (৩০) সাথে একই উপজেলার সাহেবাবাদ ইউনিয়নের টাটেরা এলাকার বাসিন্দা ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরীর বিয়ের তারিখ চূড়ান্ত করা হয়। বুধবার বিকেলে তাদের বিয়ে উপলক্ষে প্রায় শতাধিক বরযাত্রী বিয়েবাড়িতে উপস্থিত হয়। বাল্যবিয়ের খবরে ওইদিন সন্ধ্যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স.ম আজহারুল ইসলামেরের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত বিয়েবাড়িতে পৌঁছে। এদিকে বিয়ে বাড়িতে পৌঁছার আগেই তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়ে যায় এবং বিয়ের অনুষ্ঠানে বর ও কনেকে উপস্থিত পায়।  ইউএনও তাৎক্ষণিকভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বাল্যবিবাহ বিরোধ আইনে বরকে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। পরে পুলিশ বরকে থানা হাজতে নিয়ে যায়। ব্রা‏হ্মণপাড়া ইউএনও স.ম আজহারুল ইসলাম বলেন, বাল্যবিয়ের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই তাদের বিয়ে হয়ে যায়। বরের বয়স ৩০ বছর আর কনের বয়স ১৬ বছর। বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনের ৭(১) ধারায় বরকে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৩

চারদিক / গ্রামগঞ্জে আবারও বাড়ছে বাল্যবিয়ে
বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিলেও আশাতীত হ্রাস করা সম্ভব হচ্ছে না। ২০১৫-২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রশাসন ও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক সংস্থার কঠোর উদ্যোগে গত কয়েক বছর শিথিল ছিল বাল্যবিয়ে। বাল্যবিয়েমুক্ত রাষ্ট্র গড়তে বেসরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা ও সামাজিক সংগঠন জনসাধারণ বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে দেশের মানুষের মধ্যে বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে অনেকটা সচেতনতা গড়ে উঠেছিল। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলাকে বাল্যবিয়েমুক্ত হলেও মফস্বলে আবারও এর মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে করোনা মহামারির পর থেকে আবারও দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে এ ব্যাধি। প্রত্যন্ত অঞ্চল গ্রামগঞ্জে প্রাথমিক থেকে শুরু করে নিম্ন মাধ্যমিকপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যাই এ তালিকায় বেশি। নানা অজুহাত দেখিয়ে মেয়ে কিশোরী হতে না হতেই বাবা-মা ছেলে দেখা শুরু করেন। তাদের ধারণা, মেয়েদের বয়স বেড়ে গেলে বিয়ের উপযুক্ত পাত্র পাওয়া নাকি দুষ্কর। নানা কুসংস্কার আর বিভ্রান্তিকর পথ থেকে গ্রামের মানুষ আজও অগ্রসর হতে পারেনি। তবে এর সঙ্গে সায় দিয়ে যাচ্ছেন সদ্য নিয়োজিত কিছু ডিফেন্সের সরকারি চাকরিজীবী। যারা নিজের বিয়ের জন্য পাত্রী খোঁজেন স্বল্পবয়সী কিশোরী। বিশেষ করে সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির কিশোরীদের এ তালিকায় বেশি দেখা যাচ্ছে। এর সঙ্গে গোপনে অধিক হারে যৌতুকও নেওয়া হচ্ছে, যা এখন সমাজের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রামের সমাজপতিরা অনেক সময় এসব বিয়ের খবর জেনেও তারা চুপচাপ থাকেন। কখনো কখনো বাল্যবিয়ে সম্পর্কে সমাজের সচেতন মানুষ জানার পর প্রতিবাদ করলে মেয়ের পরিবার থেকে বলা হয়, স্কুলে বা বাড়িতে বখাটে যুবকরা মেয়েদের বিরক্ত করে। যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে মেয়েকে দ্রুত পাত্রস্থ করতে হচ্ছে। কোনো কোনো পরিবার থেকে বলা হয়, গরিবের সংসারে মেয়েরা অনেকটা বোঝা। তাই ভালো বা পয়সাওয়ালা অথবা প্রবাসী পাত্র পেয়ে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন। ১১-১৫ বছর বয়সী মেয়েদের অর্থের লোভে বয়স্ক পাত্রদের কাছেও বাবা-মা তুলে দিচ্ছেন। আবার সরকারি চাকরিজীবী ছেলের প্রস্তাবের লোভ সামলাতে না পেরে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে হলেও মেয়ের সুখের জন্য বাল্যবিয়ে দিতে রাজি হচ্ছেন অভিভাবকরা। যেখানে নাবালিকা মেয়ের সম্মতিও নেওয়া হচ্ছে না। প্রশাসন ও থানা পুলিশদের আড়ালেই বহু বাল্যবিয়ে এখনো চলমান। ইউনাইটেড নেশনস পপুলেশন ফান্ড (ইউএনএফপিএ) ‘এইট বিলিয়ন লাইভস, ইনফিনিট পসিবিলিটিজ’ শিরোনামে বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি ২০২৩ রিপোর্টে দেখা গেছে, বাল্যবিয়েতে এখনো দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। এখানে ১৮ বছর বয়সের আগেই ৫১ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। বাল্যবিয়ে বাড়ার ফলে অল্প বয়সে গর্ভধারণের ঝুঁকি বাড়ছে। বাংলাদেশে প্রতি হাজারে ৭৪টি শিশুর জন্ম দিচ্ছেন ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী মায়েরা। বাল্যবিয়ের সার্বিক প্রভাব পড়ে মা ও শিশু উভয়ের স্বাস্থ্যে। বাল্যবিয়ের কারণে মা ও নবজাতক মৃত্যুঝুঁকিও বাড়ছে। উচ্চশিক্ষা অর্জন করার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বিয়ের পর আর স্কুলে যাওয়া হচ্ছে না। ইদানীং অল্প বয়সে বিবাহবন্ধনে জড়ানোর ফলে খুব বেশি ডিভোর্সের সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। যে বয়সে পড়াশোনা করার সময়, সেই বয়সে মাথায় চেপে দিচ্ছে ভারী সংসার। এর চাপ সহ্য করতে না পেরে অকালে আত্মহত্যার পথও বেছে নিচ্ছে অনেক কিশোরী। এতে করে সমাজ ও দেশের অভাবনীয় ক্ষতি হচ্ছে। তাই বাল্যবিয়ে একটি সামাজিক ব্যাধি। সমাজ থেকে এ ব্যাধি দূর করা না হলে হুমকির মুখে পড়বে সমাজ-দেশ। তাই প্রয়োজন প্রশাসন, থানা ও জনপ্রতিনিধিদের জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করে জনসচেতনতার পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক বিভিন্ন সেমিনার, পথনাটক ও বাল্যবিয়ের কুফল তুলে ধরা জরুরি। >>জি বি এম রুবেল আহম্মেদ, মাদারগঞ্জ, জামালপুর
২১ নভেম্বর, ২০২৩

বাল্যবিয়ে ও শিশুশ্রমে ঝরে পড়ছে উপকূলের শিশুরা
সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ থাকা সত্ত্বেও সাতক্ষীরার শ্যামনগরে বাল্যবিবাহ ও শিশুশ্রম রোধ করা যাচ্ছে না। শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহের কারণে শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ছে সুন্দরবন উপকূলীয় জনপদের শিশুরা। শ্যামনগর উপজেলা শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে উপজেলার ৪৬টি বিদ্যালয়, ৩৬টি মাদ্রাসা ও ৩টি কারিগরি (ভোকেশনাল) বিদ্যালয়ে মোট ৫ হাজার ৬৫৭ জন শিক্ষার্থী অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছিল। ওই বছরের পরীক্ষার্থীরাই ২০২৩ সালে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। আর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেয় মাত্র ৩ হাজার ২৯৩ জন শিক্ষার্থী। অর্থাৎ ওই ব্যাচের কমপক্ষে ২ হাজার ৩৬৪ জন শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। শিক্ষকরা জানান, ছেলে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার প্রধান কারণ দারিদ্র্যতা এবং মেয়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার পেছনে মূলত দায়ী বাল্যবিবাহ। বিয়ে হওয়ার পরে ছাত্রীদের পক্ষে পড়াশোনা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সচেতনতার অভাবে মেয়ে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ বাল্যবিবাহ ও পারিবারিক আর্থিক দুরবস্থার কারণে দ্রুতই শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ছে। যদিও গত কয়েক বছর সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগে এ চিত্রে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। সরকার উপবৃত্তি ও বিনামূল্যে বই দেওয়াসহ নানা উদ্যোগের মাধ্যমে দেশে শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে মেয়েদের অংশগ্রহণ ও টিকে থাকার হার বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। তবে ব্যতিক্রম চিত্র লক্ষ্য করা যায় ছেলে শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে। মূলত দারিদ্র্যের কারণেই ঝরে পড়া এসব ছেলে শিক্ষার্থী মাধ্যমিকের আগেই পড়াশোনা ছেড়ে দিচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা। পরিবারের ভরণ-পোষণের তাগিদে জীবিকা উপার্জন করতে গিয়ে ঝরে পড়া এসব শিক্ষার্থী শিশুশ্রমের শিকার বলে দাবি তাদের। এ ছাড়া বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে তারা। এ থেকে গড়ে উঠছে ছোট ছোট কিশোর গ্যাং। উপজেলায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক। সংস্থাটি এ বছর উপজেলায় ৩টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছে প্রশাসনের সহায়তায়। ব্র্যাকের মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচির (বিএলসি) উপজেলা কর্মকর্তা আরাফাত হোসেন বলেন, অনেক সময় অভিভাবকরা দূরে কোনো আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে মেয়ের বিয়ে দেন। ফলে সব বিয়ে রোধ করা সম্ভব হয় না। উপজেলার প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৩৪টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করা হয়।  তবে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেন, বহু বিয়ে প্রশাসনের অগোচরে হয়ে গেছে। উপজেলার কৈখালী ইউনিয়নের সাপখালী গ্রামের এক দরিদ্র অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিনি এক আত্মীয়ের কথা শুনে সপ্তম শ্রেণিতে পড়া মেয়েকে বিয়ে দেন ২০২১ সালে। মাত্র চার মাসের মাথায় মেয়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এখন মেয়েটি বাবার বাড়িতেই থাকে। তার পড়াশোনাও আর হয়নি। কৈখালী ইউনিয়নের সাপখালী গ্রামের মোস্তফা গাজী বলেন, তার ছেলেকে পারিবারিক অসচ্ছলতা ও দরিদ্র্যতার কারণে বেশি পড়াশোনা করাননি তিনি। সপ্তম শ্রেণির পর তাকে ইট ভাটায় পাঠিয়ে দেন কাজে। এ বছরও ইটভাটা মালিকপক্ষের নিকট থেকে অগ্রিম টাকা নিয়েছেন তাকে কাজে পাঠানোর জন্য। শিশুশ্রমের কথা বলায় তিনি বলেন, ওসব আমরা বুঝি না। কাজ করতে হবে, কাজ না করলে পেটে ভাত জুটবে না। অভাব অনটনের সংসারে একার পক্ষে সংসার চালানো সম্ভব না। তাই ছেলেকে কাজে লাগিয়েছি। শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আক্তার হোসেন বলেন, সপ্তম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহের সংখ্যা বেশি। বাল্যবিবাহ রোধে প্রশাসন থেকে সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানা করাও হচ্ছে।  তবে উদ্বেগজনক হারে শিশু শ্রমের হার বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দরিদ্র্যতার কারণে পারিবারিকভাবে শিশুরা শিশুশ্রমে জড়িয়ে পড়ছে। জোবেদা সোহরাব মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুস সাত্তার বলেন, তার বিদ্যালয়ের ৯৭ জন শিক্ষার্থী ২০২০ সালে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত ছিল। নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়ে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার আগেই ৯ জনের মেয়ের বিয়ে হয়েছে। পাঁচজন ছেলে পড়ালেখা বাদ দিয়েছেন। জানতে পেরেছি দরিদ্র্যতার কারণে অভিভাবকরা তাদের দেশের বিভিন্ন এলাকার ইটভাটায় শ্রমিক হিসাবে ও স্থানীয় বিভিন্ন দোকানের কর্মচারী হিসেবে কাজে যোগদান করিয়েছেন। ২০২৩ সালে ৭২ জন শিক্ষার্থী মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। কৈখালী শামছুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শেখ সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, তার বিদ্যালয়ে ২০২০ সালে ৮৭ জন শিক্ষার্থী অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছিল। এবার ৫৪ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। বাকি ৩৩ জন ঝরে পড়েছে। এদের অধিকাংশেরই বাল্যবিবাহ ও শিশুশ্রমে জড়িয়ে গেছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও নকিপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণানন্দ মুখার্জী বলেন, তার বিদ্যালয়েও বাল্যবিবাহের কারণে কয়েকজন শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। তবে বাল্যবিবাহের শিকার হয়েও বেশ কয়েকজন ছাত্রী এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। তবে তিনি বাল্যবিবাহ আগের তুলনায় কমেছে দাবি করে জানান, বাল্যবিবাহের হার আগের তুলনায় কমলেও শিশুশ্রমের হার বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে প্রতিবছর আমাদের এ উপকূলীয় এলাকা থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন ইটভাটাসহ অন্যান্য পেশায় কাজে চলে যাচ্ছে পড়াশোনা বাদ দিয়ে। ৬ মাস ইটভাটায় কাজ শেষ করে তারা আর পড়াশোনায় যোগ দিচ্ছে না। এতে ঝরে পড়ছে অনেক শিক্ষার্থী।
১৯ অক্টোবর, ২০২৩
X