মানুষের মতো কথা বলার চেষ্টা কুকুরের, রাসুলের (সা.) বাণী সত্য প্রমাণিত
চোখ বন্ধ করে কেউ শুনলে মনে হবে যেন কোন শিশু কথা বলার চেষ্টা করছে। কিন্ত আসলে তা না। এটি একটি কুকুরের শব্দ।  বলা হচ্ছে, প্রাণীদের কথা বলার বিষয়টি রাসুল (সা.) ভবিষ্যতবাণী করে গেছেন। এটিই সত্য প্রমাণিত হচ্ছে।   জানা গেছে, ঘেউ ঘেউ করার সময় কথা বলার মতো শব্দ করে ওই কুকুরটি। ৯ বছর বয়সী এই কুকুরের নাম সানি। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে তার কথা বলার মতো এই শব্দ। ঘটনাটি ঘটেছে নেদারল্যান্ডের বাণিজ্যিক রাজধানী আমস্টারডামে।  সম্প্রতি ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে,  গাড়িতে তার মালিকদের সঙ্গে কথা বলার মতো শব্দ করছে সানি। আর তার মালিক হাসছেন। এরপর সানির মালিক মারিয়া ডেলকে একটি গল্প বলতে শুনা যায়।  মারিয়া বলেন,  কুকুরটি জন্মের পর স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু তার বয়স ৪৫ দিন হওয়ার পর থেকে মানুষের মতো এই অদ্ভত শব্দ শুরু করে এবং এই কাজটি বেশি করে যখন আশেপাশে লোকজন দেখে। অনেক সময় সানির এই শব্দ শুনে মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে যায়।  মারিয়া তার সুইজারল্যান্ড ভ্রমণের কথা স্মরণ করে বলেন, ওখানে পৌঁছানোর পর তিনি দেখেন লোকে পরিপূর্ণ একটি জায়গা। তখন সানি কথা বলার শব্দ শুরু করে। সুইজারল্যান্ডের লোকজন কুকুরটির এই আচরণ দেখে বেশ অবাক হয়েছিল এবং বিষয়টি উপভোগ করেছিল। এরপর মারিয়া ডেল সানির এসব মজার ভিডিও শেয়ার করার জন্য একটি ইন্সট্রাগ্রাম এবং একটি টিকটক আইডি খোলেন। ইতোমধ্যে এসব আইডিতে ফলোয়ারের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। রাসুলের (সা.) ভবিষ্যতবাণী  পৃথিবীর বয়স যত বাড়ছে, মানুষ কেয়ামতের তত নিকটবর্তী হচ্ছে। রাসুল (সা.) তার হাদিসের মাধ্যমে কিয়ামতের অনেক নিদর্শনের বর্ণনা দিয়েছেন।  ইমাম আহমাদ (র.) আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে একটি হাসিদ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘জনৈক রাখাল মাঠে ছাগল চরাচ্ছিল। হঠাৎ একটি নেকড়ে এসে একটি ছাগলের উপর আক্রমণ করলো। রাখাল বাঘের পেছনে ধাওয়া করে ছাগলটি ছিনিয়ে আনল। তখন বাঘটি একটি টিলার উপর বসে বলতে লাগল- তুমি কি আল্লাহকে ভয় করো না? আল্লাহ আমাকে একটি রিজিক দিয়েছিলেন। আর তুমি তা ছিনিয়ে নিলে। রাখাল বলল- কি আশ্চর্য্য ব্যাপার! মানুষের ন্যায় বাঘও আমার সঙ্গে কথা বলছে। বাঘ বলল, আমি কি তোমাকে এর চেয়ে আশ্চর্য্যজনক খবর দেব না? মদিনায় রাসূল (সা.) অতীতে যা ঘটেছে এবং আগামীতে যা ঘটবে তা সম্পর্কে মানুষকে সংবাদ দিচ্ছেন। রাখাল তার ছাগলের পাল নিয়ে মদিনায় প্রবেশ করে ছাগলগুলো এক স্থানে রেখে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে ঘটনা খুলে বলল। ততক্ষণে নামাজের সময় হয়ে গেছে।  নামাজ শেষে রাসূল (সা.) রাখালকে বললেন, তুমি সবার সামনে ঘটনা খুলে বলো। রাখাল ঘটনার বর্ণনা শেষ করলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, রাখাল সত্য বলেছে। ওই আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ। তত দিন পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না হিংস্র প্রাণী মানুষের সঙ্গে কথা বলবে। মানুষ তার হাতের লাঠির সঙ্গে কথা বলবে, পায়ের জুতার সঙ্গে কথা বলবে। এমনকি ঘরের স্ত্রী তার স্বামীর অনুপস্থিতে কী করছে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তাকে বলে দেবে।
৩০ মে, ২০২৪

শান্তি প্রতিষ্ঠায় বুদ্ধের বাণী আজও সমভাবে প্রযোজ্য : রাষ্ট্রপতি 
বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমা আজ। যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে এ উৎসব উদযাপন করবেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। দিবসটি উপলক্ষে বুধবার (২২ মে) বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন।  তিনি বলেছেন, সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ‘অহিংস পরম ধর্ম’ বুদ্ধের এই অমিয় বাণী আজও সমভাবে প্রযোজ্য। বুধবার (২২ মে) বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে তিনি বলেন, আজকের এই অশান্ত ও অসহিষ্ণু বিশ্বে মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ, যুদ্ধ-বিগ্রহ, ধর্ম-বর্ণ-জাতিগত হানাহানি রোধসহ সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মহামতি বুদ্ধের দর্শন ও জীবনাদর্শ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে আমি মনে করি। আজকের এই অশান্ত ও অসহিষ্ণু  বিশ্বে মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ, যুদ্ধ-বিগ্রহ, ধর্ম-বর্ণ-জাতিগত হানাহানি রোধসহ সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মহামতি বুদ্ধের দর্শন ও জীবনাদর্শ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে তিনি মনে করেন। শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মৈত্রীময় শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। মহামতি গৌতম বুদ্ধের শুভ জন্ম, বোধিজ্ঞান লাভ ও মহাপরিনির্বাণ এ উৎসবের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত।  রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আবহমানকাল থেকে এ দেশে সব ধর্মের মানুষ তাদের নিজ নিজ ধর্ম ও আচার-অনুষ্ঠানাদি অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে পালন করে আসছে, যা আমাদের সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল ঐতিহ্য। এ ঐতিহ্যের চর্চা ও বুদ্ধের মহান আদর্শকে ধারণ করে বৌদ্ধ সম্প্রদায় দেশের উন্নয়নে তাদের কর্মপ্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন এ প্রত্যাশা করি। তিনি বলেন, ‘সব্বে সত্তা সুখিতা হোন্তু’- জগতের সব প্রাণী সুখী হোক, গৌতম বুদ্ধের শাশ্বত এ দর্শন সমাজে শান্তির প্রতিফলন ঘটাবে এই কামনা করি।  
২২ মে, ২০২৪

সম্পাদকীয় / বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে!
রানা প্লাজা ধসের ১১ বছর পেরোল। অনেকটা নীরবে ও নিভৃতে এই দিনটি এখন আমাদের জীবন আসে এবং চলেও যায়। আমাদের অনুভূতিতে এই দিনটি এখন আর বিশেষভাবে নাড়া দেয় না। আমরা অনেকেই হয়তো দিনটির কথা ভুলেই গেছি। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঘটে যাওয়া এ ঘটনাটি সারা বিশ্বের অন্যতম বড় শ্রমিক দুর্ঘটনা। এ দুর্ঘটনায় ১ হাজার ১৩৫ জন নিহত ও ১ হাজার ১৬৯ জন গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গু হন। ভবনটি ধসে পড়ার তিন দিন আগে থেকেই কেঁপে কেঁপে উঠছিল। যখনই বিদ্যুৎ চলে যেত, একসঙ্গে অনেক জেনারেটর চলতে শুরু করলে তখন কম্পনটা বেশি হতো। ২১ এপ্রিল বড় ধরনের কম্পন হওয়ায় শ্রমিকরা কাজ থেকে বের হয়ে এসেছিলেন। ২২ এপ্রিল ফ্যাক্টরি ইন্সপেক্টরের অফিস থেকে কাজ বন্ধ রাখার মৌখিকভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়। ২৪ এপ্রিল ভবনের নিচতলায় ব্যাংক, দোকান ও অফিস বন্ধ থাকলেও ভবনের মালিক সোহেল রানার উদ্যোগে ফ্যাক্টরিগুলো চালু হয়। সোহেল রানা ছিলেন এলাকার প্রতাপশালী। শ্রমিকরা অনিচ্ছা সত্ত্বেও কাজে যান। কাজে না যাওয়ার ইচ্ছা অনেকের ছিল কিন্তু নিজেদের ইউনিয়ন না থাকায় তারা যে কর্তৃপক্ষকে দাবিটা জানাবেন, সেই উপায় ছিল না। সে ক্ষেত্রে রানা প্লাজা ধসকে নিছক দুর্ঘটনা বলা যায় না। এ ঘটনায় মামলা হয় ২০টি। এর মধ্যে তিনটি হচ্ছে ফৌজদারি মামলা। শ্রমিক নিহতের ঘটনায় হত্যা মামলা করে পুলিশ। অন্যদিকে ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং ভবন নির্মাণসংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিচারের এ দীর্ঘসূত্রতায় নিহতের পরিবার ও আহতরা তাদের জীবদ্দশায় ন্যায়বিচার পাবেন কি না, তা নিয়েই সংশয়ে আছেন। শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবি, ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও তাদের পরিবারগুলোকে এত বছরেও ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। আহতদের পুনর্বাসন হয়নি। তারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত এবং আর্থিকভাবে ভালো নেই। আহত শ্রমিকদের শারীরিক অবস্থা নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাধা। তাদের বেশিরভাগ কাজে ফিরতে না পারায় অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ ঘটনায় আহত শ্রমিকরা কেউ কেউ ছোট পরিসরে বিভিন্ন ব্যবসা আবার অনেকে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হারিয়ে এখন সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে বেকার জীবনযাপন করছেন। তাদের অভিযোগ, সারা বছর কেউ তাদের কোনো খোঁজখবর নেয়নি। দিবসটি এলেই অনেকে আমাদের মোবাইল ফোনসহ বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করে—এটুকুই। রানা প্লাজা ধসের ১১ বছরেও খুনের মামলার বিচার শেষ হয়নি। মামলার ৫৯৪ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৮৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। এত দিনেও বিচার শেষ না হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। এ ক্ষেত্রে বলা প্রয়োজন, কয়েকজন আসামির পক্ষে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় দীর্ঘদিন মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ বন্ধ ছিল। এক বছরের বেশি সময় ধরে নিয়মিত সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। গত জানুয়ারিতে খুনের মামলাটি ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির চেষ্টা চালাচ্ছে রাষ্ট্রপক্ষ। খুনের মামলা ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। ইমারত আইনের মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ বন্ধ রয়েছে। মামলার নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, খুনের মামলায় তদন্তে গেছে দুই বছর। মামলায় ছয় সরকারি কর্মকর্তাকে অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি করার অনুমতি না পাওয়ায় তদন্ত শেষ করতে দেরি হয়। আমাদের প্রত্যাশা, যত দ্রুত সম্ভব এ ঘটনার বিচারকার্য শেষ হবে এবং জড়িতদের নিশ্চিত করা হবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।
২৫ এপ্রিল, ২০২৪

লাইলাতুল কদর মানবজাতির অত্যন্ত বরকত ও পুণ্যময় রজনী : রাষ্ট্রপতি
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন মহিমান্বিত রজনী পবিত্র শবে কদর উপলক্ষে দেশবাসীসহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানিয়েছেন। আগামীকাল (৬ এপ্রিল) পবিত্র শবে কদর উপলক্ষে এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি একথা বলেন। সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘পবিত্র লাইলাতুল কদর মানবজাতির জন্য অত্যন্ত বরকত ও পুণ্যময় রজনি। অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ এ রাতকে হাজার মাসের চেয়েও উত্তম হিসেবে ঘোষণা করেছেন। মানুষের ক্ষণস্থায়ী জীবনে হাজার মাসের চেয়েও বেশি ইবাদতের পুণ্য লাভের সুযোগ এনে দেয় এ রাত।’ মহিমান্বিত এই রজনীতে মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে দেশবাসীসহ সমগ্র মুসলিম উম্মার জন্য মাগফেরাত ও কল্যাণ কামনা করে  মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের অপার সুযোগ নিয়ে বরকতময় পবিত্র শবেকদর আমাদের মাঝে সমাগত।’ তিনি বলেন, ‘পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ আল-কুরআন লাইলাতুল কদরে নাযিল হয়। এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয়ই আমি তা (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। তাই মুসলিম উম্মার নিকট শবে কদরের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলত অত্যধিক। এই মহিমান্বিত রজনি সকলের জন্য ক্ষমা, বরকত, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ বয়ে আনুক-মহান আল্লাহর দরবারে এ প্রার্থনা করি।’       রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ইসলাম শান্তি ও কল্যাণের ধর্ম। মানুষের ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির জন্য ইসলামের সুমহান আদর্শ আমাদের পাথেয়। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে করোনা মহামারি, সংঘাত, যুদ্ধবিগ্রহ, অভাব-অনটনসহ নানা কারণে হাজার হাজার মানুষ অসহায় অবস্থায় দিনাতিপাত করছে।’ তিনি বলেন, ‘আসুন শবে কদরের এই পবিত্র রজনিতে আমরা এ সকল সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করি। আমি পরম করুণাময় আল্লাহর নিকট অশেষ রহমত ও বরকত কামনার পাশাপাশি দেশের অব্যাহত অগ্রগতি ও কল্যাণের জন্য প্রার্থনা জানাই। সমগ্র বিশ্ব মানবজাতির জন্য শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ হয়ে উঠুক। মহান আল্লাহ আমাদের প্রার্থনা কবুল করুন, আমিন।’
০৫ এপ্রিল, ২০২৪

জাফর ওয়াজেদের নিবন্ধ / গণহত্যার বিচারের বাণী
ঢাকার চুয়ান্ন মালিবাগের বাসিন্দা শহীদ রেজাউল করিমের সাতাশ বছর বয়সী পুত্র আবদুল করিম একাত্তরের ২৬ মার্চ সকালে প্রাণে বেঁচে যান। চারজন পাকিস্তানি হানাদার সেনা সকাল ১০টায় তাদের বাড়িতে প্রবেশ করে। তার আগে গুলি চালায় বাড়ির ছাদে পতপত করে উড়তে থাকা বাংলাদেশের লাল-সবুজ রঙের হলুদ মানচিত্র খচিত পতাকাটি লক্ষ্য করে। বাড়িতে ঢুকেই হানাদাররা তার পিতাকে বাঙালি কি না জিজ্ঞেস করলে তিনি হ্যাঁ বলে মাথা নাড়েন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর তার অগ্রজকে একই প্রশ্ন করলে তিনিও হ্যাঁ সূচক জবাব দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গুলি করে। তারপর আবদুল করিমকে জিজ্ঞেস করে, বাঙালি কি না। তিনি কৌশল অবলম্বন করে উর্দু ভাষায় বলেন, তিনি একজন অতিথি মাত্র। তারপর তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, হিন্দু কি না। মাথায় বুদ্ধি খেলে যায় করিমের। বলেন, তিনি পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আসা একজন মুসলমান অতিথি। শুনে সেনারা চলে যায়। করিম এরপর ঢাকা ছেড়ে আগরতলায় চলে যান। সেখান থেকে জুন মাসে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অবস্থিত মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা দিয়ে চিঠি লিখেছিলেন। তার মাতৃভূমিতে দখলদার হানাদার পাকিস্তানিরা যে বর্বরতা চালাচ্ছে, তা তুলে ধরে প্রতিকার চেয়েছিলেন। ঢাকার শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনির ৪/বি-এল নম্বর বাসার অধিবাসী দীপালী রানী সরকার ২৪ জুলাই মানবাধিকার কমিশনকে লেখা চিঠিতে জানান, এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে হানাদাররা তার বাড়ি লুট করে। আশপাশের বাড়ি থেকে মেয়েদের তুলে নিয়ে যায়। যারা আর ফেরেনি। দীপালী রানী প্রতিবেশীর সহায়তায় পালিয়ে চলে যান সীমান্তের ওপারে। তিনি সদরঘাট, ডেমরা এলাকায় পাকিস্তানিদের বর্বরতার বর্ণনা দিয়েছেন তার পত্রে। একাত্তর সালের জুন মাস থেকে নভেম্বর পর্যন্ত হানাদারদের নির্যাতনের মুখে কৌশলে পালাতে পারা বাঙালি নারী-পুরুষ জেনেভায় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানকে কয়েক হাজার পত্র লিখেছিল। কমিশন সে সময় পাকিস্তানিদের মানবাধিকার হরণের বিরুদ্ধে খুব যে সোচ্চার হতে পেরেছিল, তা নয়। শরণার্থীদের সাহায্যার্থে তারা তেমনভাবে বিশ্বজনমত গড়ে তুলতে পারেনি। পাকিস্তানিরা যে গণহত্যা চালিয়েছিল এবং নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়ে বাঙালি নিধনে মত্ত ছিল, তা অস্বীকার না করলেও এর প্রতিকারে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। তবে তাদের দপ্তরে যেসব দলিল দস্তাবেজ রয়েছে, তা গণহত্যার বিবরণ তৈরিতে যথেষ্ট সহায়ক অবশ্যই। যারা গণহত্যা চালিয়েছে, তাদের বিচারের দাবিতে এবং ধর্ষিতাদের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়ে কমিশন কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার জন্য নানা দেশ ও সংগঠন তৎপর ছিল। মানবাধিকার কমিশন বিচারের পক্ষে বলিষ্ঠ অবস্থান নেয়নি। বাঙালিকে তার নিজস্ব শক্তিমত্তা, মানসিক সাহসে ভর করে হানাদার নিধনে অস্ত্র হাতে তুলে নিতে হয়েছিল সেদিন। একাত্তরের ২৫ মার্চ থেকে যে গণহত্যা শুরু হয়, তা ১৬ ডিসেম্বর হানাদারদের পরাজয়ের পূর্বপর্যন্ত অব্যাহত ছিল। সেসব হত্যাযজ্ঞের বিবরণ লিখে শেষ করা যাবে না। পাকিস্তানি সেনাদের অত্যাচার ও নির্যাতনের ধরন সভ্যতা-বিবর্জিত মানুষের নির্মমতা এবং নৃশংসতার চেয়েও জঘন্য ছিল। তাদের নির্যাতনের রূপ নির্যাতিতদের কাছ থেকে যা পাওয়া গেছে, তা বীভৎস ও ভয়াবহতারই নামান্তর। সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে দেখামাত্র গুলি করত। শক্তসমর্থ, তরুণ ও যুবকদের রাস্তা কিংবা বাড়িঘর থেকে বন্দি করে এনে চোখ বেঁধে সমষ্টিগতভাবে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসাবাদের পর শারীরিক নির্যাতন করা এবং পরিশেষে পেছনে হাত বেঁধে কখনো এককভাবে, কখনো কয়েকজনকে একসঙ্গে গুলি করে নদী, জলাশয় বা গর্তে ফেলে দিত। কখনো সবাইকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করত। কখনো নিকটজনের সামনেই বন্দিদের এক-এক করে জবাই এবং দেহ টুকরো টুকরো করা হতো। প্রকাশ্য বিভিন্ন অঙ্গচ্ছেদ করা অথবা বিভিন্ন অঙ্গে গুলি করে হত্যা করত। চোখ উপড়ে ফেলত। উলঙ্গ অবস্থায় উল্টো করে ঝুলিয়ে রেখে পা থেকে মাথা পর্যন্ত চামড়া ছিলে ফেলত। বস্তায় ঢুকিয়ে বস্তার মুখ বেঁধে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা বা বস্তাবন্দি অবস্থায় নদীতে ফেলে দিত। বাঁশ এবং রোলারের মধ্যে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ চেপে ধরে থেতলে দিত। বেয়নেট ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে পেট এফোঁড়-ওফোঁড় করে, কখনো পেটের সমস্ত নাড়িভুঁড়ি বের করে কিংবা বুক চিরে হৃৎপিণ্ড উপড়ে ফেলত। দড়ি দিয়ে বেঁধে আগুনে পুড়িয়ে মারত। বয়লারে নিক্ষেপ করে হত্যা ছিল মামুলি ব্যাপার। মলদ্বার ও আশপাশের স্থানে বরফ ও উত্তপ্ত লোহা ঢুকানো হতো। গায়ে ও মলদ্বারে বৈদ্যুতিক শক প্রদান, আঙুলে সুচ ফোটানো, নখ ও চোখ উপড়ে ফেলা, যৌনাঙ্গে লাঠি, রাইফেলের নল, ধারালো বোতল জাতীয় জিনিস ঢুকিয়ে দেওয়া হতো। অণ্ডকোষ থেঁতলে মৃত্যু যন্ত্রণা প্রদান, বাঁশডলা, বরফের চাঙরে শুইয়ে পেটানো, সিগারেটের আগুনে ছ্যাঁকা দেওয়া ইত্যাদি অজস্র পদ্ধতি ছিল নির্যাতনের। একাত্তরে বাংলাদেশে বিশ্ব ইতিহাসের দ্বিতীয় বৃহত্তম গণহত্যা ঘটিয়েছিল বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর ও আলশামস। শুধু বাঙালি হয়ে জন্মানোর দায়ে পাকিস্তানি হানাদাররা নৃশংস গণহত্যার যে দৃষ্টান্ত এ দেশে রেখে গেছে, তা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। অত্যাচারের যেসব পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া তারা উদ্ভাবন করেছিল, তার মধ্যে গুলিতে হত্যা করাই ছিল সবচেয়ে শান্তির মরণ। তাদের অপকর্ম চাপা দেওয়ার জন্য একাত্তরে দখলদার পাকিস্তানিরা শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছিল ‘পূর্ব পাকিস্তানের সংকট’ শিরোনামে। হাজার পৃষ্ঠার এ শ্বেতপত্রে শেখ মুজিব, আওয়ামী লীগ, নির্বাচন, ভারত সম্পর্কে পাকিস্তানি জান্তা শাসকদের দৃষ্টিভঙ্গি ও মিথ্যাচার বিধৃত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২৫ মার্চ দিনগত রাতে আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা অনুযায়ী সশস্ত্র বিদ্রোহ সংঘটন এবং স্বাধীন বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের অভ্যুত্থান বাস্তবায়িত করার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীকে তাদের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার এবং সরকারের কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার আহ্বান জানান। পুরো শ্বেতপত্রে বাঙালিদের বিরুদ্ধে অসত্য, কল্পিত বিষয়াদি তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর হলেও গৃহীত এ সিদ্ধান্ত বাঙালিকে আরও আত্মমর্যাদাপূর্ণ জাতিতে পরিণত করেছে। বাংলাদেশ চায় দিবসটি আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে মযার্দা পায় যেন। নতুন প্রজন্ম অবহিত নয়, গণহত্যার সেই দুঃসহ রাত সম্পর্কে। তাই সেদিনের ঘটনাগুলো নিয়ে সরকারের উচিত শ্বেতপত্র প্রকাশ করা। একই সঙ্গে গণহত্যার সাক্ষী যারা, তাদের বিবরণ তুলে ধরা। বীরের জাতির জন্য এ পদক্ষেপ জরুরি। লেখক: একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক মহাপরিচালক, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ
২৫ মার্চ, ২০২৪

শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন বলেছেন, ‘আমাদের স্বাধিকার, মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অমর একুশের অবিনাশী চেতনাই জুগিয়েছে অফুরন্ত প্রেরণা ও অসীম সাহস।’ তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির রক্তঝরা পথ বেয়েই অর্জিত হয় মাতৃভাষা বাংলার স্বীকৃতি এবং সে ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে অর্জিত হয় বাঙালির চিরকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা, যার নেতৃত্ব দিয়েছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’ রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘নিজ ভাষার উন্নয়ন ও সংরক্ষণের পাশাপাশি বহুভাষিক শিক্ষার মাধ্যমে টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ করতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন ইতিবাচক অবদান রাখবে—এটাই সবার প্রত্যাশা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই একটি অসম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের ভিত রচিত হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ বাঙালির গৌরবময় ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস যুগে যুগে আমাদের জাতীয় জীবনে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করছে।’  
২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

কোরআনের প্রথম বাণী ‘পাঠ করো’
পৃথিবীতে সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ হিসেবে মানুষের মর্যাদা। এমনকি নিষ্পাপ ফেরেশতাদের ওপরও মানুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন মহান আল্লাহ। আর এর নিদর্শন হিসেবে ফেরেশতাদের নির্দেশ দিয়েছেন যেন আদমকে সেজদা করে তারা। মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম কারণ, তাদের জ্ঞান। কারণ, ফেরেশতারা যা জানতেন না, মানুষ তা জানে। তাই জ্ঞানী মানুষের মর্যাদা তৈরি হয় সর্বত্র। রাসুল (সা.)-এর প্রতি যখন কোরআন অবতীর্ণ হয়, প্রথম আয়াতের প্রথম শব্দেই আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন— ‘ইকরা’, অর্থাৎ, ‘পড়ো’, ‘পাঠ করো’। মহান প্রতিপালক রবের নামে পড়ার তাগিদ দেওয়ার মাধ্যমে মহাগ্রন্থ কোরআন নাজিলের সূচনা। পড়ার মাধ্যমে মানুষ জ্ঞানার্জন করে। এমনকি ইসলাম জানার জন্যও জ্ঞানার্জনের বিকল্প নেই। উল্লেখ্য, পবিত্র মক্কা নগরী তখন ছিল শিরকের অন্ধকারে নিমজ্জিত, মানুষ আল্লাহকে ভুলে মূর্তির পূজা করত; স্বাভাবিকভাবেই মনে হতে পারে, শিরকের অন্ধকার দূর করতে প্রথম নির্দেশ হবে কালেমার, কিংবা মূর্তি পূজা বর্জন করে নামাজের। কিন্তু আল্লাহ পাঠ গ্রহণের নির্দেশ প্রথমে দিয়ে এটাই বুঝিয়েছেন, জ্ঞানের আলো জ্বললে অন্ধকার এমনিতেই দূরীভূত হবে। মানুষ যত জানবে, তত সৃষ্টিকর্তাকে চিনতে পারবে। সৃষ্টিকর্তার কালেমায় সাক্ষ্য দেবে এবং তার কুদরতি কদমের সামনেই সেজদাবনত হবে। মহান আল্লাহ এ মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা ও প্রতিপালক। মহাবিশ্ব জুড়ে আল্লাহর অসংখ্য নির্দেশনাবলি রয়েছে। যেগুলো দেখে সাধারণ চোখে অনেক কিছুই আমাদের বোঝা সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন জ্ঞান ও গভীর চিন্তার। অনেক দৃষ্টান্তও আল্লাহ দিয়েছেন। সেগুলো বোঝার জন্য যে জ্ঞান দরকার তা কোরআন বলছে, ‘আর এসব দৃষ্টান্ত আমি মানুষের জন্য পেশ করি আর জ্ঞানী লোকেরা ছাড়া কেউ তা বুঝে না।’ (সুরা আনকাবুত : ৪৩)। আর এজন্যই তো জ্ঞানী ও মূর্খের মধ্যে পার্থক্য। দুনিয়ার জীবনেও দেখা যায়, যারা নিজেদের জ্ঞানের পথে নিয়োজিত করেছে, পড়েছে, বুঝেছে, বাস্তব জীবনেও তারা ভালো করছে। আর যারা তাতে বেশি গুরুত্ব দেয়নি তাদের জীবনও তেমনি। জানার প্রতি কোরআনের তাগিদও তাই—‘বলুন, যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে?’ (সুরা জুমার : ৯)। যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে গবেষণা করে জ্ঞানী হয়, তার দ্বারাই আল্লাহ অজস্র নেয়ামত অনুধাবন সম্ভব। এর মাধ্যমে আপনিতেই তার মাথা নুইয়ে আসে। আল্লাহকে সে বেশি ভালোবাসতে শেখে। সে কথাই কোরআন বলছে, ‘আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই আল্লাহকে বেশি ভয় করে।’ (সুরা ফাতির : ২৮)। কোরআনের শব্দ ‘অহি’ থেকে বাংলা ‘বই’ শব্দের উদ্ভব। বাংলা ভাষায় জ্ঞানচর্চা ব্যাপক ও সার্বজনীন করেছে মুসলমানরা। ইসলাম আগমনের আগে জ্ঞানচর্চার অধিকার শুধু ব্রাহ্মণদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। শূদ্র বা নিম্নজাতের মানুষের অধিকার ছিল না জ্ঞানের আসরে বসার। এ দেশে মুসলমানদের সঙ্গে আগমন করেছে জ্ঞানচর্চার ঐশী আলো। আমির থেকে অধম, ধনী থেকে গরিব, সাদা থেকে কালো সবাই স্নাত হয়েছে জ্ঞানের আলোয়। বাংলায় প্রবেশ করেছে অসংখ্য কোরআনের শব্দ। সুখের বিষয়—বাংলার দুই বর্ণের ‘বই’ শব্দটিও এসেছে আরবি ‘অহি’ শব্দ থেকে। আরবি ‘ওয়াও’ হরফের বাংলা উচ্চারণ হয় ‘ব’। ‘অহি’র বাংলা উচ্চারণ হয় ‘বহি’। ধীরে ধীরে ভাষার পরিবর্তনে ‘বহি’টি ‘বই’ রূপ ধারণ করেছে। মানে অহি থেকে বহি; বহি থেকে বই। সাধু বাংলায় বহি, চলিত বাংলায় বই। এভাবে বইয়ের সঙ্গে অহির জ্ঞানের একটা সম্পর্ক রয়েছে। আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে প্রেরিত ‘অহি’ পবিত্র কোরআনের প্রথম পাঁচ আয়াতই হচ্ছে পাঠ করা কিংবা জ্ঞানার্জন সম্পর্কে। আল্লাহ বলেন, ‘পড়ুন আপনার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন...’ (সুরা আলাক)। এর মধ্যে প্রথম বাণীটিই হলো ‘ইকরা-পড়ো’। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনের অন্তত ৯২ জায়গায় জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার প্রসঙ্গ এনেছেন। ‘কোরআন’ শব্দটির একটি অর্থও ‘অধ্যয়ন’। জ্ঞান মর্যাদার বাহন। যে যত জ্ঞান অর্জন করবে, মানব সমাজে সে তত মর্যাদাবান হবে। আল্লাহ জ্ঞানের সঙ্গে মানুষের মর্যাদা সম্পর্কিত করেছেন সৃষ্টির শুরুতেই। যারা জ্ঞান অর্জন করে আল্লাহ তাদের মর্যাদা সমুন্নত করে দেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ইমান এনেছে এবং যাদের জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদের মর্যাদা সমুন্নত করবেন। আর তোমরা যা করো আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবহিত।’ (সুরা মুজাদালাহ : ১১)। জ্ঞান অন্বেষণ করা এতই মর্যাদাপূর্ণ যে, ইসলামী জ্ঞান অন্বেষণকারীর জন্য আকাশ ও জমিনের সবকিছুই ক্ষমা প্রার্থনা করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দ্বীনি জ্ঞান অন্বেষণকারীর জন্য জগতের সবকিছুই (আল্লাহতায়ালার দরবারে) ক্ষমা প্রার্থনা করে। এমনকি পানির মাছও। (আবু দাউদ, তিরমিজি)। ইমাম বুখারি (রহ.) বলেন, কোনো বিষয়ে কিছু বলা এবং আমল করার আগে সে বিষয়ে জ্ঞানার্জন করা প্রয়োজন। কেননা আল্লাহতায়ালা সুরা মুহাম্মদের ১৯ নম্বর আয়াতে বলেন, ‘আর জেনে নাও, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই।’ এখানে ‘জেনে নাও’ দ্বারা আল্লাহতায়ালা ‘জ্ঞানার্জন’ বুঝিয়েছেন। আর এ গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান অর্জিত হয় বই পাঠের মাধ্যমে। পার্থিব জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয় ও কল্যাণকর জ্ঞান অর্জনও ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে কাম্য। যেমন চিকিৎসা, গণিত, কৃষি, রাষ্ট্রনীতি, বিজ্ঞান, দর্শন ইত্যাদি। গোটা জনপদে যদি এ জ্ঞানের পারদর্শী কেউ না থাকে, তাহলে সবাই কষ্টে পতিত হবে। পক্ষান্তরে যে জ্ঞান মানুষকে অকল্যাণের দিকে নিয়ে যায়, তা চর্চা করা হারাম। যেমন ইসলামবিরোধী প্রাচীন ও আধুনিক দর্শন, কুফরি সাহিত্য ইত্যাদি। তদ্রূপ অকল্যাণকর ও অপ্রয়োজনীয় বিষয় চর্চা করাও নিষিদ্ধ। (ইহইয়াউ উলুমিদ্দীন: ১/২৯-৩০)। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) জাগতিক শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন না বটে, তবে জাগতিক শিক্ষাকে তিনি বাতিল করে দেননি। ইসলাম হলো সবচেয়ে আধুনিক ধর্ম। এ ধর্মে গোঁড়ামি, অজ্ঞতা, কুসংস্কারের কোনো স্থান নেই। ইমানকে মজবুত করতে যে চায়, সে যেন বই পড়ে। কারণ বই পড়লে চিন্তাশক্তি বাড়ে। আল্লাহর নেয়ামত নিয়ে সেই বেশি ভাবতে পারবে। সৃষ্টিকর্তার জন্য নতজানু হতে পারবে। কোরআনে আল্লাহ কী বলেছেন, হাদিসে রাসুল (সা.) কী বলেছেন, তা না জানার চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে? মাঝেমধ্যে পরিবার নিয়ে বইমেলা ও বইয়ের দোকানে যাওয়া যেতে পারে। কোরআন, হাদিস ও উপকারী জ্ঞানের বিপুল সমারোহে ঘুরে এলে জ্ঞানচর্চা ও বই পাঠের প্রতি আগ্রহ তৈরি হবে। মানুষ যা দেখে, তার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। ছেলেমেয়েরা উপকারী বইয়ের সঙ্গে পরিচিত হবে। বোখারি, মুসলিম, সাহাবি-তাবেয়িদের জীবনী পড়বে। ভালো-মন্দের পার্থক্য বুঝতে পারবে। জীবন সাজানোর প্রেরণা পাবে। জ্ঞান অর্জনের বিভিন্ন মাধ্যম আছে। সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হলো বই পড়া। প্রশ্ন হলো, এই বইটা কীসের হবে। দুনিয়াবি না কোরআন-হাদিসবিষয়ক ইসলামী পুস্তক। দুনিয়ার যা কিছু ভালো, সে বিষয়ে জ্ঞান অর্জনে দোষ নেই। যেমন চিকিৎসাবিষয়ক বই পড়া; গল্প-উপন্যাসও যদি ভালো কাহিনি হয়, নৈতিক শিক্ষা থাকে, খারাপ দিকে উৎসাহিত না করে, তাহলে তা পড়তে অসুবিধা কোথায়? বই বলতে শুধু ইসলামী বই নয়। অন্য সব বই পড়া অন্যায় নয়। তবে সবকিছু হতে হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। লোকদেখানো উদ্দেশ্য হলে সব বরবাদ হবে। মানুষ বলবে—সে খুব জ্ঞানী, বাহবা দেবে, এমন উদ্দেশ্যে থাকলে তার পরিণতি জাহান্নাম। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াবি স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে ইলম শিখল, যা শুধু আল্লাহর জন্যই শিখতে হয়, সে কেয়ামতের দিন জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না।’ (আবু দাউদ : ৩৬৬৪)। জ্ঞান অর্জন শুধু পুরুষ করবে, তাও নয়। নারী-পুরুষ সবাইকে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। ইসলামে এ ক্ষেত্রে কোনো ভেদাভেদ নেই। এই মহাবিশ্ব ও পৃথিবীর ভৌগোলিক অবস্থান, ইতিহাস ও সভ্যতা, বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার, জ্ঞানী ব্যক্তিদের চিন্তাধারা ও জীবন দর্শন ইত্যাদি আমরা বই পড়ার মাধ্যমেই জানতে পারি। ধর্ম, দর্শন, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য, অর্থনীতি, রাজনীতি এমন যে কোনো বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে হলে নিয়মিত বই পড়তে হয়। বই পড়ার মাধ্যমে জ্ঞানের পরিধি বাড়ে। মস্তিষ্ককে সচল রাখা যায়। মানসিক উদ্দীপনা বাড়ে। মানসিক চাপ কমিয়ে প্রশান্তি ফিরিয়ে আনে। শব্দভান্ডার তৈরিতে সাহায্য করে। স্মৃতিকে শক্তিশালী ও উন্নত করে। পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা বাড়ে। কল্পনাশক্তি ও সৃজনশীলতা বাড়ে। নতুন বিষয় জানা ও আবিষ্কার করা যায়। উন্নত মানুষ গঠনে সহায়তা করে। বই তার পাঠককে পৃথিবীর সঙ্গে যুক্ত করে দেয়। ভবিষ্যতের উত্তম কর্ম নির্ণয় করা যায়। মনকে সুস্থ ও প্রফুল্ল রাখা যায়। ইতিহাস-পাঠ মানুষকে জ্ঞানী করে, কবিতা-পাঠ বুদ্ধিদীপ্ত করে, গণিতচর্চা যুক্তিবোধকে শানিত করে, প্রাকৃতিক দর্শন নৈতিকতার ভিত্তি সুদৃঢ় করে। মোটকথা জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। ভাষা ও বইয়ের মাসে এই হোক আমাদের প্রত্যয়—আমরা বই ভালোবাসব, বই কিনব, বই উপহার দেব এবং প্রত্যহ নিয়ম করে বই পাঠ করব। লেখক: মুহাদ্দিস ও ইসলামী চিন্তাবিদ
০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

বিজিবি দিবসে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দিবস আজ (২০ ডিসেম্বর)। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, বীরত্ব ও ঐতিহ্যে গৌরবমণ্ডিত ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ বিজিবি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাক-হানাদার বাহিনী ঢাকার পিলখানার তৎকালীন ইপিআর সদর দপ্তর ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ সারা দেশে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ইপিআরের ওয়্যারলেসযোগেই বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে যায়। তিনি আরও বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ এবং বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফসহ এ বাহিনীর ৮১৭ জন অকুতোভয় সদস্য আত্মোৎসর্গ করে দেশপ্রেমের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে গৌরবময় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বাহিনীকে ২০০৮ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধসহ দেশমাতৃকার সেবায় বিভিন্ন সময়ে বিজিবির যেসব সদস্য আত্মত্যাগ করেছেন, আমি তাদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করছি। প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বাস্তবায়নে এবং মাদকমুক্ত দেশ ও সমাজ গঠনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দেশের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানসহ অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদান, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ দেশের যে কোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবং দেশ গঠন ও বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে আসছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। সাম্প্রতিককালে রাজধানী ঢাকার বঙ্গবাজার, নিউমার্কেট ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান, উদ্ধার তৎপরতা ও আশপাশের এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পেশাদারিত্বের সাক্ষর রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ বিজিবি ২২৮ বছরের একটি ঐতিহ্যবাহী বাহিনী। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে এ বাহিনীর ভূমিকা অবিস্মরণীয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের দিকনির্দেশনায় এ বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধের সর্বাত্মক প্রস্তুতি শুরু করেন। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা তৎকালীন ইপিআরের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে যায়। প্রধানমন্ত্রী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দিবসের সার্বিক সাফল্য কামনা করেন। বিজিবির পক্ষ থেকে এ দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। 
২০ ডিসেম্বর, ২০২৩

শরিকদের আশার বাণী শোনালেন তথ্যমন্ত্রী
শরিক ১৪ দলকে নিয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান তুলে ধরে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, সবসময়ই শরিকরা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সে জন্যই জোটগতভাবে এবারও নির্বাচন করছি। এককভাবে নির্বাচন করার শক্তি, ক্ষমতা ও সামর্থ্য আমাদের আছে। কিন্তু শরিকদের গুরুত্ব দেওয়া হয় বিধায় জোটগতভাবে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সুতরাং বরাবরের মতোই আমরা একটি সমঝোতায় উপনীত হবো। মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে তথ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সাথে অলাপকালে তিনি এসব বলেন। মন্ত্রী বলেন, প্রথমত আমাদের সিদ্ধান্ত জোটগতভাবেই আমরা নির্বাচন করব। আর নির্বাচনে সমঝোতা করার এখনো অনেক সময় আছে। মনোনয়নপত্র বাছাই শেষ হয়েছে, প্রত্যাহারের এখনো অনেক সময় আছে। তিনি বলেন, এবার আমার দৃষ্টিতে অনেক বেশি প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। বাতিলের এই হার অন্যবারের তুলনায় একটু বেশিই। আপিল করলে হয়ত অনেকে টিকে যাবে, সেটিই আমি আশা করছি। শরিকদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সমঝোতায় উপনীত হলে বলা যাবে, তার আগে বলা যাবে না। যারা নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য, তাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই সমঝোতা করা হবে। জাতীয় পার্টি প্রায় ৩০০ আসনে মনোনয়ন দিয়েছে। এজন্য জাতীয় পার্টিকে অভিনন্দন জানাই। ২০০৮ সালে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আমরা জোটগতভাবে নির্বাচন করেছি। গতবার আমাদের সঙ্গে স্ট্র্যাটেজিক্যাল (কৌশলগত) জোট ছিল, এবারও সেটা হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৩

তব নীরব বাণী হৃদয়তলে
আজ ১৮ অক্টোবর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের জন্মদিন। ১৯৬৪ সালের এই দিনে অর্থাৎ ১৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের ঐতিহাসিক বাসভবনে রাসেল জন্মগ্রহণ করেন। আজ বেঁচে থাকলে রাসেল ৫৯ বছরের প্রবীণ একজন মানুষ হতেন। বাবা বঙ্গবন্ধু বা বড় বোন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো হয়তো দেশের কল্যাণে অসাধারণ ভূমিকা রাখতেন; কিন্তু পঁচাত্তরের অভিশপ্ত ১৫ আগস্ট প্রত্যুষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সপরিবারে ঘাতকের গুলিতে নিহত হন, যা থেকে মুক্তি পায়নি ১০ বছরের ছোট্ট নিষ্পাপ শিশু শেখ রাসেল। শেখ রাসেল থেকে গেলেন চিরকালের শিশু। শিশু রাসেলের হাসিভরা মুখটিই সর্বদা আমাদের চোখে ভাসে। বঙ্গবন্ধু তার প্রিয় লেখক, দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের নামে নাম রেখেছিলেন কনিষ্ঠ সন্তানের। শাহাদাতবরণকালে রাসেল চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলে। স্কুলে রাসেলের সহপাঠীরা বলেন, তাদের এই বন্ধু ছিলেন অত্যন্ত সহজ সরল মিশুক প্রকৃতির। স্কুলের প্রহরী, পিয়ন ও আয়াসহ নিম্ন বেতনের কর্মচারীদের সঙ্গে তার হাসিমুখে কথা বলা ও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ বঙ্গবন্ধুর কথাই মনে করিয়ে দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব হারিয়েছিলেন। পরে ২০১০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সর্বসম্মতিক্রমে বঙ্গবন্ধুর ছাত্রত্ব পুনর্বহাল করে বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্কমুক্ত করেন। শেখ রাসেল সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু তার ডায়েরিতে ১৫ জুন, ১৯৬৬ তারিখে লিখেছেন ‘সাড়ে ৪টায় জেলের লোক এসে বলল, চলুন আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। আপনার স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে বসে আছে জেল অফিসে। তাড়াতাড়ি রওয়ানা করলাম। দূর থেকে দেখি রাসেল, রেহানা ও হাসিনা চেয়ে আছে আমার রাস্তার দিকে। ১৮ মাসের রাসেল জেল অফিসে এসে একটুও হাসে না, যে পর্যন্ত আমাকে না দেখে। দেখলাম দূর থেকে পূর্বের মতোই ‘আব্বা আব্বা’ বলে চিৎকার করছে। একটু পরেই ভেতরে যেতেই রাসেল আমার গলা ধরে হেসে দিল। ওরা বলল, আমি না আসা পর্যন্ত রাসেল শুধু জানালার দিকে চেয়ে বসে থাকে। বলে আব্বার বাড়ি। এখন ওর ধারণা হইয়াছে ওটা ওর আব্বার বাড়ি। যাবার সময় হলে ওকে ফাঁকি দিতে হয়।” রাসেলের দীর্ঘদিনের গৃহশিক্ষক গীতশ্রী দাসগুপ্তা একবার বলেছিলেন, রাসেল কত অতিথিপরায়ণ ছিলেন। গীতশ্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী থাকাকালে রাসেলকে বাসায় পড়াতেন। এমনকি পঁচাত্তরের ১৪ আগস্ট রাতেও তিনি রাসেলকে বাসায় পড়িয়ে গেছেন। তার ছাত্র রাসেল সম্পর্কে গীতশ্রী বলছিলেন যে, প্রতিদিন বাসায় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাসেল নিজেই শিক্ষকের জন্য চা-নাস্তা নিয়ে আসতেন এবং তিনি সেগুলো না খাওয়া পর্যন্ত লেখাপড়া শুরু করতেন না। বার বার রাসেল বলতেন যে, আগে আপনি খাবেন তারপর আমি বইপত্র নিয়ে বসব। মা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের আতিথেয়তা গুণটি ছিল তার মাঝে। এমন একজন মানবিক, বুদ্ধিমান, ধীরস্থির শিশুকে আমরা হারিয়েছি তার শৈশবেই। তিন চাকার সাইকেল চালানোর প্রতি অনুরাগ ছিল রাসেলের। ছবি আঁকার প্রতিও ছিল তার গভীর আগ্রহ। বহুমুখী প্রতিভার শিশু ছিলেন রাসেল, যা ১০ বছর বয়সী বাচ্চাটির মাঝে সুপ্ত ছিল। ছোট্ট শিশু রাসেলের ছিল প্রখর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা। বড় বোন শেখ হাসিনার ভাষায়, ‘তখন প্রায়ই কবুতর খাওয়ার রেওয়াজ ছিল। সকালের নাশতার জন্য পরোটা ও কবুতরের মাংস ভুনা সবার প্রিয়। তাছাড়া কারও অসুখ হলে কবুতরের মাংসের ঝোল খাওয়ানো হতো। ছোট ছোট বাচ্চাদের কবুতরের স্যুপ করে খাওয়ালে রক্ত বেশি হবে, তাই বাচ্চাদের নিয়মিত কবুতরের স্যুপ খাওয়াত।’ ‘রাসেলকে কবুতর দিলে কোনো দিন খেত না। এত ছোট বাচ্চা কীভাবে যে টের পেত কে জানে। ওকে আমরা অনেকভাবে চেষ্টা করেছি। ওর মুখের কাছে নিলেও খেত না। মুখ ফিরিয়ে নিত। শত চেষ্টা করেও কোনো দিন কেউ ওকে কবুতরের মাংস খাওয়াতে পারেনি।’ বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির বাড়ি ও গ্রামের বাড়িতে কবুতর পালন করা হতো। রাসেল নিজ হাতে মায়ের সঙ্গে কবুতরকে খাবার দিতেন। ছোট্ট শিশুটির মন কতটা সংবেদনশীল ও প্রাণির প্রতি কতটা সহানুভূতিশীল, তা উপলব্ধি করা যায়। পূর্ণবয়স্ক রাসেল যে কত বৃহৎ ও মহৎ প্রত্যাশিত জীবনকর্ম সম্পন্ন করার যোগ্যতা রাখতেন, বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো জয়পতাকা উড়াতেন তা আমরা অনুভব করি। শিশুদের হত্যাকাণ্ড যে আমাদের ভবিষ্যতকে হত্যা করে, শিশুদের অপমৃত্যু যে আমাদের সম্ভাবনার অপমৃত্যু ঘটায়, এ পঙ্কিলতা থেকে আমরা কবে মুক্ত হব? রাসেল ১০ বছর বয়সেই যে সম্ভাবনা ও সংবেদনশীলতা প্রকাশ করে গেছেন, তা আমাদের শিশুদের নিরন্তর প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শিশু রাসেলের জাপান সফরের উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত ছবিগুলো আমাদের স্মৃতিতে চিরকাল অমলিন থাকবে। আজকের এই দিনে অত্যন্ত বেদনার সঙ্গে আমরা শেখ রাসেলকে স্মরণ করছি ও প্রার্থনা করি, পৃথিবীর সব শিশু যেন নিরাপদে থাকে। শ্রদ্ধা নিবেদন করি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টে শাহাদাতবরণকারী সব শহীদকে ও শ্রদ্ধা নিবেদন করি আমাদের চার জাতীয় নেতার স্মৃতির প্রতি যারা বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ ধারণ করে আত্মোৎসর্গ করে গেছেন। শেখ রাসেলের নৃশংস হত্যাকাণ্ড কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১১৭ বছর আগে রচিতÑ ‘তুমি নিষ্ঠুর সম্মুখ হতে যাও যে সরে’ পঙ্‌ক্তিমালা স্মরণে আসে। বিশ্ব শান্তি পরিষদ কর্তৃক ১৯৭২ সালের ১০ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুকে ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদক দেওয়ার ঘোষণার পর দিন ১১ অক্টোবর ১৯৭২ এক সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘যে নির্মোঘ আকাশের বুকে ঝাঁকে ঝাঁকে শ্বেতকপোতেরা বিনা দ্বিধায় উড়ে বেড়াবে, যেদিন দুষ্ট বাজপাখি শ্বেতকপোতের ডানা ভাঙার জন্য ছোঁ মারবে না, সেদিন এ বিশ্বে নেমে আসবে শান্তির বারিধারা।’ শ্বেতকপোত রাসেলের জীবন সেদিনই নিরাপদ হবে। দুষ্ট বাজপাখিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে বিশ্ববাসীকে সম্মিলিতভাবে। লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি
১৮ অক্টোবর, ২০২৩
X