রূপায়ণের উপহারে সিলেটে বন্যার্ত কয়েক হাজার পরিবারের মুখে হাসি
বন্যার পানিতে প্রায় ভেঙে পড়েছে দিলারা বেগমের কাঁচা ঘরটি। দিনমজুর স্বামী ঘর মেরামত করবেন না কি সংসারের খাবার জোগাবেন এ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায়। এ বিপদের সময়ে চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যভর্তি একটি বড় ব্যাগ হাতে পেয়ে দিলারার মুখে হাসির ঝিলিক। দিলারাকে এ আনন্দের মুহূর্ত উপহার দিয়েছেন দেশের শীর্ষ স্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী রূপায়ণ গ্রুপ। রূপায়ণ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার (২ জুলাই) সিলেটের বন্যাদুর্গত কয়েক হাজার পরিবারকে উপহার হিসেবে খাদ্যসামগ্রী প্রদান করা হয়। দক্ষিণ সুরমায় রূপায়ণ হাউজিং প্রকল্পের পাশে আয়োজিত এ উপহার বিতরণ অনুষ্ঠানে এলাকার বন্যাকবলিত নারী, পুরুষ, বয়োবৃদ্ধরা এসে উপহারের ব্যাগ হাতে নিয়ে খুশি মনে বাড়ি ফিরেছেন। এই দুঃসময়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তারা রূপায়ণ গ্রুপের মাননীয় চেয়ারম্যান মো. লিয়াকত আলী খাঁন মুকুলসহ রূপায়ণ গ্রুপের সবার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। উপহার বিতরণ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি ইয়ারদৌস হাসান, রূপায়ণ ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের এ জি এম মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, রূপায়ণ ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজার আমজাদ হোসেন, ডেপুটি ম্যানেজার তোফাজ্জল হোসেন, রূপায়ণ ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের সিলেটের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. এনামুল হক, দৈনিক দেশ রূপান্তরের সিলেট ব্যুরো চিফ ফখরুল ইসলাম, ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (ইমজা) সিলেটের সভাপতি সজল ছত্রী, এশিয়ান টিভির সিলেট প্রতিনিধি শাহজাহান সেলিম বুলবুল প্রমুখ। অনুষ্ঠানে অতিথিরা বলেন, চলতি বছর সিলেট অঞ্চল এ নিয়ে তৃতীয় দফা বন্যাকবলিত হয়েছে। একবার বন্যার পানি নামতে না নামতেই আবার বন্যা আসছে। ফলে বন্যাকবতিলদের কষ্ট-দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। এই দুঃসময়ে রূপায়ণ গ্রুপ বন্যাকবলিতদের পাশে দাঁড়িয়ে মহত্তের পরিচয় দিয়েছে। রূপায়ণ গ্রুপের এমন মহতি উদ্যোগ অন্যদেরও উৎসাহিত করবে। অনুষ্ঠানে রূপায়ণ গ্রুপের কর্মকর্তারা জানান, সিলেটের বন্যাকবলিত লোকজনকে রূপায়ণ গ্রুপ নিজেদের বন্ধু হিসেবে দেখছে। বিপদগ্রস্ত এ বন্ধুদের জন্য রূপায়ণের খাদ্য সহায়তা অব্যাহত থাকবে। রূপায়ণ গ্রুপের দেওয়া খাদ্যসামগ্রীর ব্যাগ হাতে পেয়ে নিজেদের অনুভূতি জানিয়েছেন আইয়ুব আলী, বাবুল মিয়া, আক্তার হোসেন, দুলাল মিয়া, এনাম উদ্দিন, রোকেয়া বেগম, সেলিনা বেগম, জাহানারা বেগম, শাহিদা বেগম, সুনীতি দাস, শান্তি রানী দাসসহ আরও অনেকে।   তারা বলেন, ‘আমরা বড় কষ্টে আছি। ঠিকমতো খাবার জুটছে না। বন্যা আমাদের বিপুল ক্ষতি করেছে।  এই বিপদের সময়ে রূপায়ণ গ্রুপ খাদ্যসামগ্রী উপহার দিয়ে আমাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। আমরা রূপায়ণ গ্রুপের মালিকদের জন্য প্রাণ খুলে দোয়া করছি।’
০২ জুলাই, ২০২৪

বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান রিজভীর
বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বাংলাদেশকে দখল করে নিয়েছে সিন্ডিকেটবাজরা। নৈরাজ্যের কালো ছায়া যেন সারা বাংলাদেশকেই ঢেকে ফেলেছে। ঈদের আনন্দ উৎসবকেও বাকশালীকরণ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ এখন অদম্য জমিদার হয়ে উঠেছে। দেশের কোথাও কোনো সুস্থ প্রতিযোগিতার জায়গা নেই।  বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সন্তানরাও নিজেদের জমিদার সন্তান ভাবছেন। তারা মনে করেন আইন যেন তাদের হাতের মুঠোয়। ঈদের দিন রাতে বগুড়ায় আওয়ামী লীগ নেতার প্রবাসী মেয়ের গাড়ির সঙ্গে একটি বাইকের ধাক্কা লাগায় দুজন বাইক আরোহীকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে এসে আওয়ামী লীগ নেতার লোকজন কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। ঈদের দিন মানুষ হত্যার উন্মাদনার মধ্য দিয়েই আওয়ামী ক্যাডাররা উৎসব পালন করছে।  তিনি বন্যা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বলেন, বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে যেন বন্যা ও ধ্বংস সমার্থক হয়ে উঠেছে। পাহাড়ি ঢল ও মেঘভাঙা বৃষ্টিপাতে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার অঞ্চলে বন্যা ধ্বংসের তাণ্ডব চালাচ্ছে। বহু মানুষ বসতবাড়ি, ক্ষেতখামার প্রচণ্ড ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তলিয়ে গেছে হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস কাছারি, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ ও ক্ষেতের ফসল। প্রতিবছর বারবার বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিসহ তাণ্ডবে সরকারের উদাসীনতা বিস্ময়কর। দেশের ভেতরের বৃষ্টি ও উজানের ঢলের পানিতে দিশেহারা মানুষ কোথাও নিরাপদ আশ্রয় পাচ্ছে না। ঘরের ভেতর উঁচু মাচা করার পরেও টিকতে পারছে না।  তিনি বলেন, উত্তরপূর্বাঞ্চলের রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের অবস্থাও মারাত্মক। উজানের প্রবল ঢলে সিলেট ও রংপুর বিভাগে নদীগুলো উপচে দুই পাশে প্রবল বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।  বিশেষজ্ঞদের অভিমত সিলেটের হাওর উন্নয়নের নামে চলছে অপরিকল্পিত কর্মকাণ্ড। নদীতে বাঁধ দিয়ে স্বাভাবিক গতিপ্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করার কারণেই বন্যার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই অঞ্চলে প্রতিবছর বন্যা হওয়ার পরেও ‘আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম’ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়নি সরকার।  রিজভী বলেন, মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে ঠেলে দেওয়া যে সরকারের কর্মসূচি, সে সরকারের দ্বারা একটি জাতির সর্বাঙ্গীণ উন্নতি লাভ কখনোই সম্ভব নয়। আজ ডামি সরকারের লুটেরা নীতির জন্যই ভুক্তভোগী জনগণের মর্মভেদী অশ্রুপাতের কারণ। আওয়ামী সরকার দেশের সার্বভৌমত্ব দুর্বল করে নিজের ক্ষমতাকে আঁকড়ে রাখার জন্য উন্নয়নের কর্মকৌশল নির্মাণ করেছেন।  তিনি আরও বলেন, কোরবানির পশুর চামড়া এবারও বিক্রি হয়নি। আড়তদাররা কোরবানির চামড়া ফিরিয়ে দিয়েছে। এটাও সিন্ডিকেটবাজদের কারসাজি। গরিবের হককে বঞ্চিত করে একচেটিয়াকরণ করার জন্যই দেশের কোরবানির চামড়া সিন্ডিকেটওয়ালারা কৌশলে মূল্যহীন করেছে। প্রশাসনের নির্ধারিত দামেও চামড়া কেনেননি আড়তদাররা। কোরবানির চামড়া বিক্রি করতে না পেরে অনেকে মাটির নিচে পুঁতে রেখেছে। এমনিতেই এবারে মধ্যবিত্ত ও সীমিত আয়ের মানুষ কোরবানি দিতে পারেনি।  সরকারি হিসাবে অবিক্রীত থেকেছে ২৫ লাখ ৮১ হাজার গবাদিপশু। বাস্তবে এর সংখ্যা আরও অনেক বেশি। এর পরেও চামড়ার দাম নিয়ে এহেন নৈরাজ্য কেবল শেখ হাসিনার শাসনেই সম্ভব। কারণ মানুষের বেঁচে থাকার সব অবলম্বনকেই এরা নিরুদ্দেশ করে দিতে চায়।  রিজভী বলেন, আজ বিশ্ব শরণার্থী দিবস। প্রতিবছর ২০ জুন এই আন্তর্জাতিক দিবসটি জাতিসংঘকে কর্তৃক উদযাপিত হয়। এটা সারাবিশ্বের উদ্বাস্তুদের সম্মান করার জন্য এই দিবসটি পালন করা হয়। নিজ দেশের সংঘাত ও নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসে শুধু অভয়ারণ্য খুঁজে পেতে এবং উন্নত জীবনযাপনের আশায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রধান শরণার্থী সমস্যা রোহিঙ্গা। প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা নিপীড়নের শিকার হয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এখন মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। গতকালও পাহাড় ধসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১১ জন মারা গেছে। কিন্তু তাঁবেদার নতজানু সরকার তাদের নিজ দেশে ফেরাতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি। এদেরকে নাগরিক হিসেবে নিজ দেশে ফেরাতে মিয়ানমারকে রাজি করাতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।  তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোটি কোটি যুবক এখন বেকার। শুধু ভিন্ন মতের কারণে অনেক তরুণ যুবক কর্মসংস্থানের সুযোগ না পেয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে ভূমধ্যসাগরসহ বিভিন্ন সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে অনেকেই সলিলসমাধি হচ্ছে। বহুসংখ্যক বাংলাদেশিরা এখন নিজ দেশেই পরবাসী। একদলীয় শাসনে নিজ দেশেরই ভিন্ন রাজনৈতিক মতের কারণে নিপীড়ন ও অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন।  সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, অর্থনৈতিক বিষয়ক সহসম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, নির্বাহী কমিটির সদস্য তারিকুল আলম তেনজিং প্রমুখ।
২০ জুন, ২০২৪
X