ইমরান খানকে বন্দি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ‘স্বৈরাচারীভাবে কারাবন্দি’ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘের একটি মানবাধিকার সংস্থা। এটি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলেও উল্লেখ করেছে সংস্থাটি। গত সোমবার প্রকাশিত এক মতামতে ইউএন ওয়ার্কিং গ্রুপ অন অরবিট্রারি ডিটেনশন বলেছে, এ ঘটনার উপযুক্ত প্রতিকার হবে ইমরান খানকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে ক্ষতিপূরণের কার্যকর অধিকার প্রদান করা। খবর আলজাজিরার। জেনেভাভিত্তিক সংস্থাটি জানিয়েছে, তারা উপসংহারে পৌঁছেছে যে, ইমরান খানকে আটকের কোনো আইনি ভিত্তি ছিল না। রাজনৈতিক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে তাকে অযোগ্য ঘোষণার উদ্দেশ্যে এ কাজ করা হয়েছিল। সুতরাং, শুরু থেকেই সেই প্রসিকিউশনের কোনো আইনি ভিত্তিতে ছিল না। জাতিসংঘ ওয়ার্কিং গ্রুপটির এই মতামত গত ২৫ মার্চের হলেও তা গত সোমবার প্রকাশ করা হয়। পাঁচজন স্বাধীন বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে গঠিত এই গ্রুপের মতামত বাধ্যতামূলক না হলেও এর সুনামগত গুরুত্ব রয়েছে। মতামতে বলা হয়েছে, ইমরান খানের আইনি সমস্যাগুলো তার এবং তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) বিরুদ্ধে ‘বৃহত্তর দমন অভিযানের’ অংশ। এতে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে ইমরানের দলের সদস্যদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করা হয়েছিল এবং তাদের সমাবেশে বাধা দেওয়া হয়েছিল। নির্বাচনে ‘ব্যাপক জালিয়াতি, কয়েক ডজন সংসদীয় আসন চুরি’ হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছে জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ। এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি পাকিস্তান সরকার।
০৩ জুলাই, ২০২৪

সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিদেশে বন্দি সাড়ে ১১ হাজার বাংলাদেশি
বিদেশের কারাগারে ১১ হাজার ৪৫০ জন বাংলাদেশি বন্দি আটক রয়েছেন। এর মধ্যে বেশি ৫ হাজার ৭৪৬ জন আটক আছেন সৌদি আরবে। এ ছাড়া প্রতিবেশী দেশ ভারতে ১ হাজার ৫৭৯, তুরস্কে ৫০৮, ওমানে ৪২০, কাতারে ৪১৫, গ্রিসে ৪১৪, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৪০৪, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৩৮৫ ও মিয়ানমারে ৩৫৮ জন আটক রয়েছেন। গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ফরিদা ইয়াসমিনের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এসব তথ্য জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়। চট্টগ্রাম-১১ আসনের সরকারদলীয় এমপি এম আবদুল লতিফের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় র‌্যাবের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে শুরু থেকে অদ্যাবধি ক্রমাগত প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। র‌্যাবের বিরুদ্ধে আনা কথিত অভিযোগগুলোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের কাছে পদ্ধতিগতভাবে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও বিধিগত প্রক্রিয়া চলমান আছে। জাতীয় পার্টির মুজিবুল হকের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশের গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র কখনো শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা প্রদান করেনি। জিএসপি সুবিধাকালীন ও গার্মেন্টস পণ্য এর আওতাবহির্ভূত ছিল। এ সুবিধা ছাড়াই উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানির একক বৃহত্তম বাজারে পরিণত হয়েছে। জিএসপি সুবিধা ফের চালু হলে তাতে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি এবং গার্মেন্টস পণ্যকেও জিএসপির আওতায় আনতে সরকারের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সংরক্ষিত নারী আসনের সরকারদলীয় এমপি ফরিদা ইয়াসমিনের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, বর্তমানে বিশ্বের ৬০টি দেশে বাংলাদেশের ৮৪টি কূটনৈতিক মিশন রয়েছে, যার সবগুলোর কার্যক্রম চালু রয়েছে। এর মধ্যে ৪৭ দূতাবাস, ১৪ হাইকমিশন, ১২ কনস্যুলেট, ৩টি স্থায়ী মিশন, ৪টি উপ-হাইকমিশন এবং ৪টি সহকারী হাইকমিশন রয়েছে। আরও ৯টি নতুন মিশন স্থাপনে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। পশ্চিম এশিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশ শ্রমিকদের ৬০ শতাংশ আধা দক্ষ ও অদক্ষ: এমপি এম আবদুল লতিফের আরেক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পশ্চিম এশিয়া বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি বাজার এবং রেমিট্যান্সের প্রধান উৎস। সরকারের গত দেড় দশকের নিরলস প্রচেষ্টায় ২০০৯ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমশক্তি দ্বিগুণ রপ্তানি হয়েছে। এ অঞ্চলে শ্রমশক্তির প্রায় ৬০ শতাংশ আধাদক্ষ ও অদক্ষ বাংলাদেশি কর্মী নিয়োজিত আছে। অঞ্চলটি ৬০ শতাংশ রেমিট্যান্সের উৎস। কারোনাকালীন কাজ হারিয়ে অবৈধ হওয়া কর্মীদের একটি বড় অংশ নিয়োগকর্তা পরিবর্তনের মাধ্যমে বৈধ হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। এর বাইরে ২০২০-২২ মেয়াদে ভিজিট ভিসা থেকে কর্মী ভিসায় রূপান্তরের সুযোগ নিয়ে প্রায় ৩ লাখ বাংলাদেশি বৈধ কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন। স্বতন্ত্র এমপি আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগারের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, বিদেশে পাচার বাংলাদেশি নাগরিকদের দেশে প্রত্যাবাসনের জন্য সংশ্লিষ্ট দূতাবাস আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইএমও) সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে চলতি বছর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ দূতাবাস ও আইএমওর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় অনিয়মিত এক হাজার ৪৭৯ জনকে ফেরত আনা হয়। সুদান থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১ হাজার ২০০ প্রবাসী বাংলাদেশিকে উদ্ধার করে এবং সরকারি খরচে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করে।
০২ জুলাই, ২০২৪

বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই তিস্তার পানি, বন্দি ২ হাজার পরিবার
উজানের ঢল ও ভারি বৃষ্টিপাতে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার ৫ উপজেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও তিস্তা চরাঞ্চলের দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানি নিয়ন্ত্রণে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে রেখেছেন কর্তৃপক্ষ। রোববার (৩০ জুন) সকাল ৮টা থেকে দোয়ানি তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানিপ্রবাহ বিপৎসীমার কাছাকাছি দেখা গেছে।  এর আগে সকাল ৬টা থেকে দোয়ানি তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানিপ্রবাহ বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, যা স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার। পরে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সকাল ৮টায় ৪ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার নিচে নেমে আসে।  এর আগে শনিবার (২৯ জুন) সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি মাত্র ১৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। রাতেই পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করে। একই পয়েন্টে শনিবার বিকেল ৩টায় পানি বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এদিকে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। চর এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধির ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় লালমনিরহাটের ৫ উপজেলা পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না, চর সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কালমাটি, রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের অন্তত দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আদিতমারী উপজেলা মহিষখোঁচা ইউনিয়নের গোবর্ধন চর এলাকার আলী হোসেন বলেন, শনিবার বিকেল থেকে আবারও তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সন্ধ্যার মধ্যেই তিস্তা নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করে। আর রাতেই সেই পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়। সদর উপজেলা খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খায়রুজ্জামান বাদল বলেন, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করায় নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, শনিবার বিকেল থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। রাতের মধ্যে পানিপ্রবাহ আরও বেড়ে রোববার সকাল ৬টা থেকে একই পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পরে সকাল ৮টায় পানিপ্রবাহ ৪ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই অবস্থায় প্রবাহিত হচ্ছে।
৩০ জুন, ২০২৪

দেশ ও গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলায় খালেদা জিয়া বন্দি
দেশ, দেশের জনগণ ও গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বন্দি আছেন বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। গতকাল বিকেলে এক সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। গয়েশ্বর বলেন, যে মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হয় না, সেই মামলায় তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে। জামিনযোগ্য হলেও তাকে জামিন না দিয়ে এখনো বন্দি রাখা হয়েছে। আমরা তার মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছি বহুদিন ধরে। কিন্তু তিনি এখনো কারাগারে। তিনি জামিন পান না। জামিন পায় খুন ও মৃত্যুদণ্ডের আসামি। তিনি বলেন, নেত্রীকে মুক্ত করতে হলে লাগবে আন্দোলন। বক্তৃতায় মুক্তি মিলবে না। বক্তৃতা দিয়ে কিন্তু দেশ স্বাধীন হয়নি। সুতরাং খালেদা জিয়াকে তাড়াতাড়ি মুক্ত করতে না পারলে মানচিত্র থেকে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র মুছে যাবে। সরকার ভারতের সঙ্গে দেশবিরোধী চুক্তি করেছে। আমরা এতে উদ্বিগ্ন। আমরা ভারতবিরোধী নই; সবার সঙ্গে সমমর্যাদার ভিত্তিতে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও গণতন্ত্র চাই। এ কথা বলাই তো খালেদা জিয়ার দোষ।
৩০ জুন, ২০২৪

খালেদা জিয়াকে জোর করে বন্দি রাখা হয়েছে
বর্তমানে দেশে কারও কথা বলার স্বাধীনতা নেই বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, মানুষের সরকার পরিবর্তন করার কোনো অধিকার নেই। এ কঠিন পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে জোর করে বন্দি করে রেখেছে সরকার। তাকে চিকিৎসাসেবা থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। তিনি এখন জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। শুধু প্রতিহিংসার কারণে তিনি বন্দি। গতকাল বৃহস্পতিবার বাদ আসর রাজধানীর মোহাম্মদপুরে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনায় খাসি জবাই করে এতিমদের মাঝে গোশত বিতরণ ও দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, মীর সরফত আলী সপু, মাহমুদুর রহমান সুমন, আমিনুল ইসলাম, মাহবুবুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের ডা. জাহেদুল কবির জাহিদ, যুবদলের মেহবুব মাসুম শান্ত, ছাত্রদলের তৌহিদুর রহমান আউয়াল, সুজন মোল্লা, ইমাম হোসেন প্রমুখ।
২৮ জুন, ২০২৪

খালেদা জিয়াকে জোর করে বন্দি রাখা হয়েছে : রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বর্তমানে দেশে কারও কথা বলার স্বাধীনতা নেই। মানুষের সরকার পরিবর্তন করার কোনো অধিকার নেই। এ কঠিন পরিস্থিতিতে বেগম খালেদা জিয়াকে জোর করে বন্দি করে রেখেছে। তিনি বলেন, তাকে চিকিৎসা সেবা থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। তিনি এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। শুধু প্রধানমন্ত্রীর প্রতিহিংসার কারণে তিনি বন্দি। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বাদ আছর রাজধানীর মোহাম্মদপুরে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনায় ছদকা হিসেবে খাসি জবাই করে এতিমদের মাঝে গোশত বিতরণ ও দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, মীর সরফত আলী সপু, মাহমুদুর রহমান সুমন, আমিনুল ইসলাম, মাহবুবুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের ডা. জাহেদুল কবির জাহিদ, যুবদলের মেহবুব মাসুম শান্ত, ছাত্রদলের তৌহিদুর রহমান আউয়াল, সুজন মোল্লা, ইমাম হোসেন প্রমুখ। রিজভী বলেন, দেশে যে ভয়াবহ দুঃশাসন চলছে এ অবস্থায় প্রতিটি মানুষ ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে বাস করছে। কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দেশের জনগণ আমার কাছ থেকে সরে গেলে আমি মারা যাব। আমিও বলছি- আমরা আপনার মৃত্যু চাই না। তবে আপনার সঙ্গে জনগণ নেই। বহু আগেই আপনার দল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অপমৃত্যু হয়েছে। জনগণ আপনার সরকারের অনাচার অত্যাচারের বিচার চায়। তিনি অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন। এর আগে ঢাকার পশ্চিম মালিবাগের একটি এতিমখানায় দুটি ছাগল জবাই করে এতিমদের দুপুরের খাবারের আয়োজন ও দোয়া মাহফিল হয়। সেখানে রুহুল কবির রিজভী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরফত আলী সপু, ডা. রফিকুল ইসলাম, তারিকুল আলম তেনজিং, যুবদল নেতা সাঈদ ইকবাল মাহমুদ টিটু, শেখ আব্দুল হালিম খোকন, আহসান উদ্দিন খান শিপন, আসাদুজ্জামান পলাশ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সারোয়ার ভুইয়া রুবেল, গোলাম মোর্শেদ রাসেল, ছাত্রদলের ১ নং যুগ্ম সম্পাদক মমিনুল ইসলাম জিসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
২৭ জুন, ২০২৪

হত্যার উদ্দেশ্যে খালেদা জিয়াকে বন্দি রাখা হয়েছে : মির্জা ফখরুল
ক্ষমতাসীন সরকার বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দিতে এবং হত্যার উদ্দেশ্যে বন্দি করে রেখেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।  তিনি বলেন, সারাবিশ্বে গণতন্ত্রের জন্য যেসব নেতা লড়াই সংগ্রাম করে যাচ্ছেন তাদের অন্যতম হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে বেআইনিভাবে দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সঙ্গে খালেদা জিয়ার অবদান ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তিনি ১৯৭১ সালে শিশু সন্তানদের নিয়ে এবং সমস্ত ঝুঁকি মাথায় নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন। তিনি পাক সেনাদের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাকে ৯ মাস কারাগারে থাকতে হয়েছিল। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম। নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব নিপুন রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানকে হত্যা করেছিল তারাই, যারা বাংলাদেশকে পরনির্ভরশীল হিসাবে দেখতে চায়। তারপর থেকে গণতন্ত্রের পতাকা উড্ডীন করে রেখেছেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি গণতন্ত্রের প্রশ্নে কখনো আপস করেননি। প্রতিদিনই তাকে মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে হচ্ছে। তিনি ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বিএনপির নির্বাহী কমিটির সভায় বলেছিলেন-‘আমি রায়ের পরে কোথায় থাকব জানি না। তবে আপনারা গণতন্ত্রের আন্দোলনে পিছপা হবেন না।’ তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যেই মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। আমার প্রশ্ন খালেদা জিয়াকে কেন বন্দি করেছেন? তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বন্দি রাখা হয়েছে। আজ যারা দেশ শাসন করছে তারা দেশকে বিক্রির ষড়যন্ত্র করছে। দেশের কোনো প্রতিষ্ঠান বাদ যায়নি সবগুলোকে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। তারা ভিন্ন আঙ্গিকে একদলীয় শাসন কায়েম করছে। তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্র সমান্তরাল। তাকে মুক্ত করা মানেই গণতন্ত্রকে মুক্ত করা। আজকে দেশ নিয়ে যেসব চুক্তি করা হয়েছে তাতে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকিতে। আমি বলব- দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র করবেন না।  মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের আন্দোলন ক্ষমতার জন্য নয়। আমরা দেশের জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের লুটপাট ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। আমরা চাই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন।  তিনি বলেন, দেশ আজ চরম বিপদে পড়েছে। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এই আন্দোলন শুধু বিএনপির নয়। দেশের সমগ্র জাতির আন্দোলন। খালেদা জিয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে বন্দি করে রাখা হয়েছে। আসুন সবাই মিলে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ি। সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি আমাদের অনুপ্রেরণা। তাকে বন্দি রেখে সরকার যতই তৃপ্তি পাক আমরা ক্ষুব্ধ না হয়ে পারি না। জীবনের বিনিময়ে হলেও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব। জেল এবং মৃত্যু আমাদের জন্য নির্ধারিত। কিন্তু বাধা অতিক্রম করে লড়াই করব।  সেলিমা রহমান বলেন, খালেদা বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন। তিনি দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার করে দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছেন। তার মতো নেত্রীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে বন্দি রেখেছে। তাকে মেরে ফেলার চক্রান্ত করছে। তিনি এখন মৃত্যুশয্যায়। আমি অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করছি। সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, আব্দুস সালাম আজাদসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা শিরিন সুলতানা, মীর নেওয়াজ আলী, তাইফুল ইসলাম টিপু, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আমিনুল ইসলাম, খান রবিউল ইসলাম রবি, অধ্যাপক ইমতিয়াজ বকুলসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশ ঘিরে আশপাশের এলাকায় পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল। 
২৭ জুন, ২০২৪

কনডেমড সেলে বন্দি ২ হাজার ৫৫৬
২০০৪ সালের ৭ মে গাজীপুরের টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক জনসভায় জনপ্রিয় নেতা আহসানউল্লাহ মাস্টারকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আলোচিত এ হত্যা মামলার বিচার শেষ হয় ২০০৫ সালে। বিচারিক আদালতের রায়ে বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারসহ ২২ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এর প্রায় ১১ বছর পর ২০১৬ সালে হাইকোর্ট এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায় দেন। রায়ে ৬ জনের ফাঁসি বহাল রাখা হয়। বাকিদের কেউ কেউ খালাস পান, দু-একজন কারাগারে থাকাবস্থায় মারা যান, কারও কারও সাজা কমে যায়। পরবর্তী ধাপে মামলাটি এখনো আপিল বিভাগে বিচারাধীন। ফলে বিচারিক আদালতে রায় ঘোষণার পর ১৯ বছর পার হতে চললেও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তাদের আপিল শুনানি শেষ হলে রিভিউ আবেদন হবে। এরপর রিভিউ শুনানির মধ্য দিয়ে বিচারিক প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবে। আসামিদের কয়েকজন কারাগারের কনডেমড (ডেথ) সেলে বন্দি রয়েছেন। এভাবে বিভিন্ন মামলায় সারা দেশের কারাগারগুলোতে বর্তমানে ২ হাজার ৫৫৬ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রয়েছেন। এসব আসামিকে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠ হিসেবে পরিচিত নির্জন কনডেমড সেলে বন্দি রাখা হয়েছে। তাদের সবারই আপিল ও ডেথ রেফারেন্স দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন। কারও কারও আপিল বিচারাধীন হাইকোর্টে। আর কারও আপিল বিচারাধীন আপিল বিভাগে। তাদের বিচার কবে শেষ হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে চূড়ান্ত বিচারের আগে ডেথ সেলে রাখাটা অমানবিক। এতে অনেকেই অবিচারের শিকার হচ্ছেন। জানা গেছে, বর্তমানে বিচারিক আদালত থেকে ২০১৭ ও ২০১৮ সালে পাঠানো ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর হাইকোর্টে শুনানি চলছে। এসব মামলার আসামি ৬ থেকে ৭ বছর ধরে কনডেমড সেলে বন্দি রয়েছেন। এ ছাড়াও রমনা বটমূলে বোমা হামলার ঘটনায় করা হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্সের বিচারসহ ব্যতিক্রম দু-একটি মামলার বিচার ঝুলে আছে আরও দীর্ঘ সময় ধরে। বর্তমানে উচ্চ আদালতে এ ধরনের প্রায় এক হাজার ডেথ রেফারেন্স মামলা বিচারাধীন। কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, হাইকোর্টে বিচারাধীন এসব মামলায় আসামি ১২ শতাধিক। এ ছাড়া ১৩ শতাধিক আসামির আপিল বিচারাধীন আপিল বিভাগে। আপিল বিভাগে বিচারাধীন এসব আসামির বেশিরভাগই এক যুগের বেশি সময় ডেথ সেলে বন্দি রয়েছেন। তার পরও কবে তাদের অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে তার নিশ্চয়তা নেই। এর আগে ২০২২ সালে কালবেলার এক অনুসন্ধানে দেখা যায়, ওই বছরের সেপ্টেম্বরে চলা অবকাশে দেড় মাসে ২৯টি ডেথ রেফারেন্স মামলার রায় হয়। এসব মামলায় ৭৭ আসামির মধ্যে ৫০ সজনেরই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। শতকরা হিসাবে এটি দাঁড়ায় ৬৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এর আগে ওই বছরের ২০ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত চলা অবকাশে হাইকোর্টের ১১টি বিশেষ বেঞ্চে ৩০টি ডেথ রেফারেন্স নিষ্পত্তি হয়। এসব মামলায় ৬৭ আসামির মধ্যে ৫৮ জনের মৃত্যুদণ্ড টেকেনি হাইকোর্টে। শতকরা হিসাবে এটি দাঁড়ায় ৮৬ দশমিক ৫৬ ভাগ। হাইকোর্টে যাদের ফাঁসির আদেশ বহাল থাকে তাদের আবার বড় একটি অংশের সাজা কমে যায় অথবা খালাস পান আপিল বিভাগের রায়ে। আইনজীবীদের মতে, বিচারিক আদালতে ফাঁসির আদেশপ্রাপ্তদের মধ্যে চূড়ান্ত ধাপে ফাঁসির আদেশ বহাল থাকে সর্বোচ্চ ৫ থেকে ১০ শতাংশ আসামির। বাকি আসামিরা হয় খালাস পান, তা না হলে সাজা কমে যায়। কিন্তু চূড়ান্ত রায়ের আগেই কনডেমড সেলে কাটাতে হয় বছরের পর বছর। বিষয়টি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকারের লঙ্ঘন বলছেন আইনজীবীরা। জানা যায়, বিচারিক আদালতে কারও মৃত্যুদণ্ড হলে কারাবিধি (বাংলাদেশ জেল কোড) ৯৮০ অনুযায়ী তাকে কারাগারের বিশেষ সেলে রাখা হয়, যা কনডেমড সেল নামে পরিচিত। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুযায়ী, হাইকোর্টের অনুমোদন ছাড়া ফাঁসির সাজা কার্যকর করা যায় না। এ জন্য বিচারিক আদালতে কারও ফাঁসির আদেশ হলেই দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির রায়সহ যাবতীয় নথি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঠাতে হয়। এটিকে বলে ডেথ রেফারেন্স। পেপারবুক তৈরি সাপেক্ষে মামলাগুলো পর্যায়ক্রমে শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ওঠে। অন্যদিকে বিচারিক আদালতের মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিল ও জেল আপিলের সুযোগ পান। হাইকোর্টে সর্বোচ্চ সাজা বহাল থাকলে আসামিরা আপিল বিভাগে আপিল ও জেল আপিল করতে পারেন। আপিল বিভাগের রায়েও মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলে সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে আপিল বিভাগের রায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) চেয়ে আবেদন করার সুযোগ আছে। এ ছাড়া সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারেন। ক্ষমার এই আবেদন রাষ্ট্রপতি যদি না মঞ্জুর করেন অথবা দণ্ডিত আসামি যদি আবেদন না করেন তাহলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে পারে সরকার। তবে আগেই অনেক আসামি খালাস পেয়ে যান। উচ্চ আদালতের রায়ে নির্দোষ প্রমাণিত হলেও এর আগেই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের অনেকেরই কনডেমড সেলে বন্দি থাকতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে ড. শাহদীন মালিক কালবেলাকে বলেন, একজন আসামির চূড়ান্ত বিচার হতে এক থেকে দেড় যুগ লেগে যাচ্ছে। এতদিন কনডেমড সেলে রাখার অর্থ আসামির প্রতি নিষ্ঠুর ও অমানবিক আচরণ করা যা সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। চূড়ান্ত বিচারের আগেই কাউকে কনডেমড সেলে না নেওয়াটা হবে মানবিক ও বিবেচনাপ্রসূত। আশা করব হাইকোর্ট এ বিষয়ে যে রায় দিয়েছেন, রাষ্ট্র তার বিরুদ্ধে আপিল করা থেকে বিরত থাকবে। তা না হলে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। অনেকেই অবিচারের শিকার হয়ে যাচ্ছেন। হাইকোর্টের রায়: এর আগে সোমবার হাইকোর্ট এক রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে কারাগারের কনডেমড সেলে বন্দি রাখা অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করেছেন। জনস্বার্থে করা এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি করে এমন রায় দেন বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের বেঞ্চ। রায়ে আদালত বলেছেন, কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড আপিল বিভাগ এবং রিভিউয়ের পরও বহাল থাকলে এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমার আবেদনও নাকচ হয়ে গেলে তখনই তার ‘মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত’ হয়েছে বলে ধরতে হবে। একই সঙ্গে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ‘চূড়ান্ত হওয়ার আগেই’ যাদের কনডেমড সেলে রাখা হয়েছে, তাদের পর্যায়ক্রমে সাধারণ সেলে স্থানান্তর করতে জেল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর এ কাজের জন্য দুই বছর সময় বেঁধে দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে, কোনো দণ্ডিত আসামি যদি তেমন কোনো সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হন যে, তাকে অন্যদের সঙ্গে রাখা ঝুঁকিপূর্ণ, তখন তাকে কনডেমড সেলে রাখা যেতে পারে বলে মত দিয়েছেন আদালত। তবে এ ক্ষেত্রেও আলাদাভাবে দণ্ডিতের বক্তব্য শোনার শর্ত দেওয়া হয়েছে। এ রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত চেয়ে গতকাল রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে একটি আবেদন করেছে। অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন জানিয়েছেন, রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পেলে আমরা আপিল করব। এখন রায় স্থগিত চেয়ে একটি আবেদন করা হয়েছে। এটি বুধবার আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে শুনানি হবে। এদিকে হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। সংগঠনটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশের পরপরই সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে কনডেমড সেলে বন্দি রাখা হচ্ছে, যা অত্যন্ত অমানবিক। মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিদের কনডেমড সেলে না রাখার রায়ের মাধ্যমে আসামিদের প্রতি মানবিক আচরণ করা হবে।
১৫ মে, ২০২৪

কনডেম সেলে বন্দি রাখা অবৈধ ঘোষণায় হাইকোর্টকে আসক-এর সাধুবাদ 
মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিদের কনডেম সেলে বন্দি রাখা অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট। এ ঘটনায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) উচ্চ আদালতের এই মানবিক সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে। মঙ্গলবার (১৪ মে) আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এক বিবৃতিতে এ সাধুবাদ জানায়। বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিদের কনডেম সেলে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন তিন কয়েদি। ওই রিট শুনানি করে ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল রুল জারি করেন হাইকোর্ট। গতকাল ১৩ মে (সোমবার) বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও মো. বজলুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চের দেওয়া রায়ে বলা হয়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির আপিল, রিভিউ, রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার ধাপগুলো নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আসামিকে কনডেম সেলে রাখা যাবে না। একই সঙ্গে বর্তমানে মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে সারা দেশে যত আসামিকে কনডেম সেলে রাখা হয়েছে তাদের দুই বছরের মধ্যে ক্রমান্বয়ে সাধারণ সেলে রাখার কথা বলা হয়েছে রায়ে। তবে বিশেষ কারণে (স্বাস্থ্যগত কারণ, সংক্রামক রোগ) কোনো ব্যক্তিকে নির্জন কক্ষে রাখতে পারবে কারা কর্তৃপক্ষ। সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির উপস্থিতিতে শুনানি হতে হবে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুসারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন নিতে হয়। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১০ ধারা অনুসারে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি হাইকোর্টে আপিল করার সুযোগ পান। হাইকোর্ট বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি আপিল বিভাগে আবেদন করতে পারেন। আপিল বিভাগের রায়েও মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলে সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করার সুযোগ আছে। এ ছাড়া সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারেন। ক্ষমার এই আবেদন রাষ্ট্রপতি যদি নামঞ্জুর করেন অথবা দণ্ডিত যদি আবেদন না করেন তাহলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে পারে সরকার। অথচ বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশের পরপরই সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে কনডেম সেলে বন্দি রাখা হচ্ছে। যা অত্যন্ত অমানবিক। মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিদের কনডেম সেলে না রাখার রায়ের মাধ্যমে আসামিদের প্রতি মানবিক আচরণ করা হবে বলে মনে করে- আসক। 
১৪ মে, ২০২৪

ফিলিস্তিনি বন্দিদের ওপর ইসরায়েলি নির্যাতনের ভয়ংকর তথ্য ফাঁস
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েল। এ অভিযানে একের পর এক ফিলিস্তিনিকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে তারা। এরপর কারাগারে আটকে তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালাচ্ছে ইসরায়েল। কারাগারে ইসরায়েলি বাহিনীর ভয়ংকর নির্যাতনের তথ্য ফাঁস করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।  শুক্রবার (১০ মে) ইসরায়েলি দুই হুইসেলব্লোয়ার এবং এক ফিলিস্তিনি বন্দির বরাতে সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, গাজার সাধারণ মানুষকে ধরে নিয়ে নেগেভ মরুভূমির একটি বন্দিশালায় তাদের নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের ব্যাপক মারধরসহ বিভিন্নভাবে শারীরিক নির্যাতন করা হয়।  এক ইসরায়েলি জানান, গাজার এসব জনসাধারণকে কোনো গোপন তথ্যের জন্য মারধর করা হয়নি। কেবল প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে তাদের মারধর করা হয়েছে। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন হামাসের হামলার জন্য এ শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বন্দিশালায় পান থেকে চুন খসার মতো সামান্য কিছু করলেই তাদের শাস্তি দেওয়া হয়।  অপর এক ইসরায়েলি তেইমানের একটি কারাগারের ছবি সিএনএনকে দিয়েছেন। এ এলাকাটি গাজা থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ছবিতে দেখা যায়, লোহার তারের বেড়া দেওয়া একটি খাঁচায় কয়েকশ ফিলিস্তিনি রয়েছেন। তাদের সকলের পরনে ধূসর রঙের ট্রাউচার রয়েছে।  কারাগারে বন্দি থাকা এক ফিলিস্তিনি চিকিৎসক সিএনএনকে বলেন, তেইমানের বন্দিশালায় প্রায়ই ঘুমন্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর কুকুর ছেড়ে দেওয়া হতো। রাতের বেলা এভাবে নির্যাতন করা হতো।  গাজার ইন্দোনেশিয়া হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডাক্তার মোহাম্মদ আল রানকে আটক করে ইসরায়েলি সেনারা। তবে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তার শারীরিক অবস্থার ব্যাপক অবনতি দেখা দেয়।  বন্দিরা জানান, তাদের একটি অস্থায়ী হাসপাতালে রাখা হয়েছিল। সেখানে তাদের শরীরের সব জামাকাপড় খুলে নেওয়া হয়। এ সময় তাদের কেবল ডায়পার পরিয়ে রাখা হয়। এছাড়া ছোট পাইপের মাধ্যমে তাদের সেখানে খাবার সরবরাহ করা হয়। এমনকি হাসপাতালে বেডের সঙ্গে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে আটকে রাখা হয়।  বন্দিদের অনেকে তাদের হাতে হ্যান্ডকাফের কারণে সৃষ্ট ক্ষতচিহ্ন দেখিয়েছেন।  এছাড়া হ্যান্ডকাফ পরার কারণে অনেকের হাতে ঘায়ের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে কয়েকজনের হাতও কেটে ফেলা হয়েছে বলেও জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি। 
১০ মে, ২০২৪
X