গরুর দুধে প্রাণঘাতী ভাইরাস শনাক্ত, আক্রান্ত এক ব্যক্তি
গরুর দুধে এবার শনাক্ত হয়েছে প্রাণঘাতী ভাইরাস বার্ড ফ্লু। যুক্তরাষ্ট্রে পাস্তরিত দুধে এ ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) টাইমস ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।  স্থানীয় সময় মঙ্গলবার মার্কিন খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গবেষণার সময় নমুনা হিসেবে নেওয়া গরুর দুধে ভাইরাসের অবশিষ্টাংশের অস্তিত্ব মিলেছে। ফলে মানব দেহে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।  বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গরুর দুধে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস শনাক্ত হলেও এতে মানুষের জন্য ঝুঁকির মাত্রা খুব সামান্য।  মার্কিন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে গবাদিপশুর মধ্যে হাইলি প্যাথোজেনিক এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা (এইপিএআই) বা বার্ড ফ্লু  প্রকোপ দেখা দিয়েছে। আক্রান্ত পশুর সংস্পর্শে আসায় এক ব্যক্তিও আক্রান্তের খবর মিলেছে। যদিও তার উপসর্গগুলো মৃদু।  এইচপিএআই-এর এইচ৫এন১ ধরনে সংক্রমিত হয়ে লাখ লাখ হাঁস-মুরগি মারা গেছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো গরু গুরুতর অসুস্থ হয়নি।  মার্কিন খাদ্য ও ঔষুধ প্রশাসন জানিয়েছে, জাতীয় জরিপে আক্রান্ত প্রাণীর দুধে ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় এবং প্রক্রিয়াকরণের শেষেও একই অবস্থা দেখা গিয়েছে। সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, পাস্তুরিত দুধের নমুনাগুলোর কোয়ান্টিটেটিভ পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (কিউপিসিআর) পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, পাস্তরিতকরণের প্রক্রিয়ার সময় উত্তাপের কারণে ভাইরাসটি নিস্ক্রিয় হয়ে গেছে। নমুনায় কেবল প্যাথোজেনের জেনেটিক উপাদানের অবশিষ্টাংশ শনাক্ত হয়েছে।   
২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সম্পাদকীয় / প্রাণঘাতী ভেজাল
বাজারে ভেজাল খাদ্যের পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই বিশুদ্ধ খাদ্য খাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। শাকসবজি, মাছ-মাংস, খাবার পানি, ফলমূলসহ বিভিন্ন প্রকার খাদ্যপণ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রয়োগের মতো গর্হিত কর্মকাণ্ড অব্যাহত গতিতে বেড়েই চলছে। তাই বাধ্য হয়ে তারা ভেজাল খাদ্যপণ্য ক্রয় করে এবং খেয়ে জীবন ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। আরও বিপদের কথা হচ্ছে, জীবনরক্ষাকারী অ্যান্টিবায়োটিক পর্যন্ত বানানো হচ্ছে আটা-ময়দা দিয়ে। মঙ্গলবার কালবেলায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক দিন ধরেই ওষুধ উৎপাদন বন্ধ রেখেছে কোয়ালিটি, কাফকা, রিলায়েন্স ও এমবি ফার্মাসিউটিক্যালস। তবে এসব কোম্পানির নাম ব্যবহার করে বাজারে বিক্রি হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক। শুধু উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের নামই নয়, জীবনরক্ষাকারী এ ওষুধগুলোও পুরোপুরি ভেজাল। অনেক ক্ষেত্রে আটা, ময়দা দিয়ে ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল বানিয়ে বাজারে ছাড়ছে একশ্রেণির প্রতারক। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার অভিযানে বেরিয়ে এসেছে ভয়াবহ এ তথ্য। অন্য এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীর উপকণ্ঠ কেরানীগঞ্জের জিনজিরা এলাকার মান্দাইল মসজিদ ঘাটের পাশে নদীর পাড় ঘেঁষে কয়েকটি টিনশেড বাড়ি। স্বাভাবিকভাবে দেখে মনে হবে বস্তি এলাকা। তবে আঁতকে ওঠার মতো তথ্য হলো, এসব বাড়িতে উৎপাদন করা হচ্ছে বিশ্বখ্যাত নানা ব্র্যান্ডের চকলেট এবং পাউডার ড্রিঙ্কস। এখানের বিভিন্ন কারখানায় তৈরি হচ্ছে রোলানা, কিটক্যাট, লাভ ক্যান্ডি, সাফারি, ফাইভ স্টার, ক্যাডবেরি, বাবলিসহ নানা ব্র্যান্ডের চকলেট। নকল মোড়কে আবৃত এসব চকলেট দেখতে ঠিক আসলের মতোই। ব্যবসায়ী এবং স্থানীয়রা বলছেন, জিনজিরা এলাকায় অসংখ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন দেশের নামি খাদ্যপণ্য উৎপাদন হয় নকল মোড়কে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, ভেজাল উপাদান মিশিয়ে এসব পণ্য তৈরি হলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয় বিদেশি পণ্য হিসেবেই। জিনজিরার পাশেই কামরাঙ্গীরচর, সাভারসহ রাজধানীর পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে দেদার চলছে বিভিন্ন নকল পণ্যের উৎপাদন। আর এসব পণ্য কিনে প্রতিনিয়তই প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা। খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল দেওয়ার অর্থ ভোক্তাদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া। ক্যান্সার সৃষ্টি, লিভার-কিডনি বিকল হওয়া, পাকান্ত্রিক রোগসহ আরও অনেক অসুখের সাম্প্রতিক বাড়বাড়ন্তের অন্যতম কারণও মনে করা হয় এ ভেজাল খাদ্যকে। বাজারে অনেক পণ্যেই এমন ক্ষতিকর ভেজাল পাওয়া যায়, যা ভোক্তার মৃত্যুর কারণও হতে পারে। আর এই ভেজাল বা বিষাক্ত খাবার খেয়ে প্রতি বছর কত মানুষ মারা যাচ্ছে তার কোনো হিসাব কি আমরা করে রেখেছি? এগুলো রোধ করার জন্য সরকারের অনেক সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান থাকলেও মাঝেমধ্যে দুয়েকটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ছাড়া তাদের সক্রিয়তা নেই বললেই চলে। ভেজাল প্রতিরোধে কঠোরতার অভাবে ভেজাল ক্রমে সর্বগ্রাসী হয়ে উঠেছে। খাদ্যে ভেজাল রোধে আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব সরকারের। সাধারণ মানুষের পক্ষে ভেজাল খাদ্য চিহ্নিত করা প্রায় অসম্ভব কাজ। তাই সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকেই তা করতে হবে। প্রয়োজনে খাদ্যমান নিশ্চিতকরণ এবং ভেজাল নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। পাশাপাশি তাদের কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান নিয়মিত করতে হবে এবং বাড়াতে হবে আদালতের সংখ্যা। খাদ্যে ভেজালের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এর পাশাপাশি সৃষ্টি করতে হবে গণসচেতনতা। তবেই এ প্রবণতা কমানো সম্ভব হবে।
০৪ এপ্রিল, ২০২৪

ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস: প্রাণঘাতী জটিলতা
ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস হচ্ছে ডায়াবেটিস মেলিটাস রোগের একটি সম্ভাব্য প্রাণঘাতী জটিলতা। এই জটিলতার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে বমি করা, পেটব্যাথা, গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া, মূত্রত্যাগের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া, দুর্বলতা, বিভ্রান্তির সৃষ্টি হওয়া, এবং কিছু ক্ষেত্রে চেতনা হ্রাস পাওয়া। অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্ত রোগীর মুখে বিশেষ এক ধরনের গন্ধ পাওয়া যায়। লক্ষণগুলোর সূত্রপাত সাধারণত দ্রুত ঘটে। যারা জানেন না যে, তাদের ইতোমধ্যেই ডায়াবেটিস হয়েছে তাদের অনেকে এই শারীরিক জটিলতার সম্মুখীন হতে পারেন। সাধারণত টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের ক্ষেত্রেই এই জটিলতার আশঙ্কা বেশি। কারণ l ইনসুলিন হরমোনের কাজ শরীরের গ্লুকোজ ভেঙে শক্তি উৎপাদন করা। l কোনো কারণে শরীরে পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি না হলে চর্বি ভেঙে শক্তি তৈরি করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় উপজাত হিসেবে তৈরি হয় কিটোঅ্যাসিড। খুব বেশি মাত্রায় যখন কিটোঅ্যাসিড তৈরি হয়, তখন শরীরে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এটাই ডায়াবেটিক কিটো অ্যাসিডোসিস। l ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত হলেই এমনটা হয়। প্রধান কারণগুলো হলো— l ডায়াবেটিক রোগীরা ঠিকমতো ইনসুলিন না নিলে। l হার্ট অ্যাটাক হলে। l কোনো ইনফেকশন হলে। l মদ্যপান বা স্টেরয়েড নিলে। লক্ষণ প্রচণ্ড তৃষ্ণা ও ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ, বমি ভাব অথবা বমি হওয়া, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা, দুর্বলতা, ক্ষুধামান্দ্য, অবসাদ, পেটে বা বুকে ব্যথা, নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ, সংজ্ঞাহীন হয়ে যাওয়া। পরীক্ষা রক্তে সুগারের মাত্রা, প্রস্রাবে কিটোনের মাত্রা মাপা। লক্ষণগুলো দেখা দিলেই দ্রুত গ্লুকোমিটারে ব্লাড সুগার চেক করা উচিত। ঘরে বসে প্রস্রাবের কিটোঅ্যাসিড মাপার কিট রয়েছে। এগুলো ব্যবহার করে মাত্রা দেখা যেতে পারে। রোগ নির্ণয়ের জন্য রক্তে উচ্চমাত্রার শর্করার উপস্থিতি, নিম্নমাত্রার পিএইচ, এবং প্রস্রাবে বা রক্তে কিটো এসিডের পরিমাণের ওপর নির্ভর করা হয়। ওপরের লক্ষণগুলোর সঙ্গে সুগারের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে (১৬.৭ মিলিমোল/ডেসিলিটারের বেশি) এবং প্রস্রাবে কিটোন থাকলে রোগীকে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। হাসপাতালে রোগীকে স্যালাইন দেওয়া হতে পারে বা বিশেষ পদ্ধতিতে শিরায় ইনসুলিনও দেওয়া হতে পারে। দ্রুত চিকিৎসা দিতে না পারলে এতে রোগীর মৃত্যুও ঘটতে পারে। সাধারণত এসবের পাশাপাশি রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা নেমে যাওয়া ঠেকাতে রক্তে পটাশিয়ামও প্রয়োগ করা হয়। চিকিৎসাকালীন নিয়মিত রক্তে শর্করা ও পটাশিয়ামের মাত্রা পরীক্ষা করে দেখা হয়। আক্রান্ত ব্যক্তি যদি কোনো ধরনের ব্যাকটেরিঘটিত সংক্রমণে আক্রান্ত থাকেন তবে সেটার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করার প্রয়োজন হতে পারে। যেসব ক্ষেত্রে রক্তের পিএইচের মাত্রা খুব কম থাকে, সেক্ষেত্রে সোডিয়াম বাইকার্বনেট দেওয়া যেতে পারে। ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিসের ভয়াবহতা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকম। যুক্তরাজ্যে টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের মধ্যে এই জটিলতায় আক্রান্তের হার প্রায় ৪ শতাংশ। মালয়েশিয়ায় ২৫ শতাংশ। ১৯২০-এর দশকে ইনসুলিন থেরাপির প্রচলন হওয়ার আগ পর্যন্ত বিশ্বে এ রোগে আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার অনেক বেশি ছিল। এখন উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হয় বলে এতে মৃত্যুর হার ১-৪ শতাংশ।
৩১ মার্চ, ২০২৪

সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হয় না
ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মহাপরিচালক নীতিন আগারওয়াল বলেছেন, সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সীমান্তে আমরা অস্ত্রনীতি পরিবর্তন করেছি। বাংলাদেশ সীমান্তে প্রাণঘাতী নয়- এমন অস্ত্র ব্যবহার করছে বিএসএফ। এর মাধ্যমে যতদূর সম্ভব অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। গতকাল শনিবার রাজধানীর পিলখানায় বিজিবির সদর দপ্তরে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের পাঁচ দিনব্যাপী ৫৪তম সীমান্ত সম্মেলনের শেষ দিনে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের প্রতিনিধিদল এবং বিএসএফ মহাপরিচালক নীতিন আগারওয়ালের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদল এতে অংশ নেয়। নীতিন আগারওয়াল বলেন, কেবলমাত্র আত্মরক্ষায় বিএসএফ সদস্যরা গুলি চালায়। সীমান্ত এলাকায় সংঘবদ্ধ অপরাধ, মানব পাচার, চোরাকারবারির মতো নানা অপরাধী বিভিন্ন সময় বিএসএফ সদস্যদের ওপর আক্রমণ করে। তখন আত্মরক্ষার্থে কখনো কখনো বিএসএফ সদস্যরা গুলি চালাতে বাধ্য হয়। গত বছর প্রায় ৬০ জন বিএসএফ সদস্য দায়ের মতো প্রাণঘাতী অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হয়। বিএসএফের প্রতিরোধে ভারতীয় অপরাধীরাও মারা যায়। তিনি বলেন, সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হয় না; কিন্তু ক্লোজ রেঞ্জ থেকে প্রাণঘাতী নয় (রাবার বুলেট) এমন অস্ত্র চালালে মৃত্যু ঘটতেও পারে। আত্মরক্ষার্থে বিএসএফ সদস্যরা কখনো কখনো গুলি করতে বাধ্য হন। এর বাইরেও বিপুল চোরাকারবারি গ্রেপ্তার ও তাদের বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি সীমান্তে মৃত্যু শূন্যে নামিয়ে আনতে। এ জন্য জয়েন্ট বর্ডার পেট্রোলিং, ইন্টেলিজেন্স শেয়ারিংসহ নানা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, সীমান্তে নিহত বাংলাদেশির মুখ-মণ্ডল, বুকে ও শরীরের উপরিভাগে আঘাতের চিহ্ন থাকে। আপনি বলেছেন অস্ত্রনীতি পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে বিপরীত চিত্র দেখি। প্রকৃত ঘটনা জানতে কেন বডি ওর্ন ক্যামেরা চালু করা হচ্ছে না? কেন যৌথ তদন্ত করা হয় না, জানতে চাইলে বিএসএফ প্রধান বলেন, মুখ-মণ্ডল, বুকে ও শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে আঘাত–এটাই কম দূরত্বে এসে হামলার প্রমাণ দেয়। কেউ যদি দা নিয়ে হামলা চালাতে আসে; তখন বিএসএফের সদস্যরা আত্মরক্ষার চেষ্টা চালায়। এটা হয় যখন কেউ গুরুতর মৃত্যু ঝুঁকিতে থাকে। দ্বিতীয়ত, সীমান্ত রক্ষীকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হয়। দূরত্ব বেশি হলে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে না। যশোর সীমান্তে বিজিবির সিপাহি রইশুদ্দিন বিএসএফের ‘টার্গেট কিলিংয়ের’ শিকার কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে বিজিবি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী মহাপরিচালক বলেন, এটা ঠিক না। ওই দিন অন্ধকার ও কুয়াশাচ্ছন্ন থাকায় বিজিবি ও বিএসএফ সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে দ্বিধায় ছিলেন। আমরা সীমান্তে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। সীমান্তে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটুক; তা চাই না। একই প্রশ্নের জবাবে বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, ওই দিন কী ঘটেছিল, সে বিষয়ে ইতিমধ্যে বিজিবিকে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, সীমান্তে কোনও হতাহত হোক তা আমরা চাই না। সীমান্তে মৃত্যু বন্ধ, চোরাকারবার, মানব পাচারসহ নানা অপরাধ কমিয়ে আনাসহ নানান বিষয়ে সম্মেলনে আলোচনা হয়েছে। সীমান্তে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায়ে রাখতে যৌথভাবে কাজ করতে আমরা বদ্ধপরিকর। খালের মাধ্যমে আগরতলা থেকে আখাউড়ায় ভেসে আসা শিল্পবর্জ্য মিশ্রিত পানির ক্ষতিকর প্রভাবের কথা উল্লেখ করে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, যৌথ নদী কমিশনের কারিগরি কমিটির বৈঠকে প্রয়োজনীয়সংখ্যক বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দুই দেশই যৌথ জরিপ পরিচালনা এবং সীমান্তবর্তী পরিবেশ রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে।
১০ মার্চ, ২০২৪

বাংলাদেশ বর্ডারে প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে : বিএসএফ ডিজি
ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মহাপরিচালক নিতিন আগ্রাওয়াল বলেছেন, বাংলাদেশ বর্ডারে বিএসএফ প্রাণঘাতী নয়, এমন অস্ত্র ব্যবহার করছে। সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।  শনিবার (৯ মার্চ) ঢাকায় বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫৪তম সীমান্ত সম্মেলনের শেষদিন বিজিবি-বিএসএফ ডিজির যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা জানান।  বিএসএফ ডিজি নিতিন আগ্রাওয়াল বলেন, সীমান্ত এলাকায় সংঘবদ্ধ অপরাধ, মানবপাচার, চোরাকারবারির মতো নানা অপরাধীরা বিভিন্ন সময় বিএসএফ সদস্যদের ওপর আক্রমণ করে। তখন আত্মরক্ষার্থে কখনো কখনো বিএসএফ সদস্যরা ফায়ার করতে বাধ্য হয়। গত বছর প্রায় ৬০ জন বিএসএফ সদস্য দায়ের মতো প্রাণঘাতী অস্ত্রের আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হয়। বিএসএফের প্রতিরোধে শুধু বাংলাদেশি না ভারতীয় অপরাধীরাও মারা যায়।  তিনি বলেন, সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হয় না কিন্তু ক্লোজ রেঞ্জ থেকে প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র দিয়ে গুলি করলেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারে। ক্লোজ রেঞ্জ থেকে রাবার বুলেট ছুড়লে সেটি দিয়েও মৃত্যু হতে পারে। যখন বিবিএসএফ সদস্যদের ওপর দা দিয়ে হামলা করা হয়, তখন তারা অনেক কাছে চলে আসে। তখন আত্মরক্ষার্থে বিএসএফ সদস্যরা কখনো গুলি করতে বাধ্য হন। এর বাইরেও বিপুল চোরাকারবারিদের গ্রেপ্তার করা হয়, গ্রেপ্তারদের বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি সীমান্তে মৃত্যু শূন্যে নামিয়ে আনতে। এজন্য জয়েন্ট বর্ডার পেট্রোলিং, ইন্টেলিজেন্স শেয়ারিংসহ নানা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিএসএফ ডিজি নিতিন আগ্রাওয়াল বলেন, বাংলাদেশ বর্ডারে বিএসএফ প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র ব্যবহার করছে। সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।  বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, আমরা সীমান্তে সচেতনতা বৃদ্ধিতে চেষ্টা করছি। আমরা সীমান্তে কোনো হতাহত হোক চাই না। ঢাকায় ৫-৯ মার্চ বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেছেন। বিএসএফ মহাপরিচালক শ্রী নিতিন আগ্রাওয়ালের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন। সীমান্তে মৃত্যু বন্ধ, চোরাকারবার, মানবপাচারসহ নানা অপরাধ কমিয়ে আনাসহ এবারের সীমান্ত সম্মেলনে নানা বিষয়ে আলোচনা। উভয়পক্ষ বিভিন্ন বিষয়ে উভয়পক্ষ সম্মত হয় এবং সীমান্তে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায়ে রাখতে যৌথভাবে কাজ করতে পুনর্ব্যক্ত করেন। এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত অতিক্রম করে বলপূর্বক বাস্তুচ্যূত মিয়ানমার নাগরিকদের অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে যথাযথ ও দৃঢ় অবস্থান গ্রহণের ব্যাপারে একমত হন। সীমান্তবর্তী খাল হয়ে ভারতের আগরতলা থেকে বাংলাদেশের আখাউড়ায় ভেসে আসা শিল্পবর্জ্য মিশ্রিত পানির ক্ষতিকর প্রভাবের কথা উল্লেখ করে বিজিবি মহাপরিচালক যৌথ নদী কমিশনের কারিগরি কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংখ্যক বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনের ওপর জোর দেন। উভয়পক্ষ যৌথ জরিপ পরিচালনা এবং সীমান্তবর্তী পরিবেশ সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সম্মত হয়েছে। বিজিবি মহাপরিচালক জকিগঞ্জের কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী ৫ হাজার হেক্টর চাষযোগ্য ফসলি জমির সেচ সুবিধা ও সীমান্তবর্তী জনগণের দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে মানবিক দিক বিবেচনায় অবিলম্বে কুশিয়ারা নদীর সঙ্গে বন্ধ থাকা রহিমপুর খালের মুখ পুনরায় খুলে দেওয়ার জন্য বিএসএফ মহাপরিচালকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।  বিএসএফ মহাপরিচালক উভয়পক্ষের স্বার্থ বিবেচনায় দ্রুত রহিমপুর খালের মুখ পুনরায় উন্মুক্তকরণের আশ্বাস দেন। 
০৯ মার্চ, ২০২৪

গাজায় প্রাণঘাতী বোমা ব্যবহার করেছে ইসরায়েল
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রথম সপ্তাহে বিশ্বের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক বোমা হিসেবে পরিচিত ২০০ হাজার পাউন্ড ওজনের এমকে-৮৪ অর্ডন্যান্স বোমা ব্যবহার করেছে ইসরায়েল। প্রাণঘাতী এই বোমা শতাধিক বার নিক্ষেপ করায় গাজায় এত বেশি ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত হয়েছেন। সিএনএন ও নিউইয়র্ক টাইমসের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা যুদ্ধের প্রথম সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এমকে-৮৪ অর্ডন্যান্স বোমা ব্যবহার করেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। এমনকি ইসরায়েলি বাহিনীর আদেশ মেনে যেসব ফিলিস্তিনি এলাকা ছেড়েছেন তাদের ওপরও এসব বোমা ফেলা হয়েছে। ভয়ংকর এ বোমা ইসরায়েল অন্তত ২০০ বার ব্যবহার করেছে। সামরিক বিশেষজ্ঞদের বরাতে দুটি মার্কিন সংবাদমাধ্যমই জানিয়েছে, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এসব বোমা প্রায় কখনই ফেলা হয় না। আর গাজা বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল। মাত্র ৩৬২ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ২০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি বসবাস করেন। প্রাণহানির হার বেশি হওয়ায় আন্তর্জাতিক মানবিক আইনে নির্বিচারে এসব বোমা ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জাতিসংঘের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা মার্ক গারলাস্কো বলেছেন, যুদ্ধের প্রথম মাসে তেল আবিব যে হারে গাজায় বোমা হামলা করেছে তা ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর আর দেখা যায়নি। অবরুদ্ধ এই অঞ্চলে এত বেশি প্রাণহানির অন্যতম একটি কারণ এই বোমার ব্যবহার। শুক্রবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর থেকে অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় ২০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৫৩ হাজারের বেশি মানুষ। ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা আছে কয়েক হাজার। ইসরায়েলের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এই বোমার ওজন ২০০০ পাউন্ড বা ৯০৯ কেজির বেশি। ওজন ও আকৃতির দিক দিয়ে এই বোমা যেমন বিশাল তেমনি গুরুতর প্রাণঘাতীও। এই বোমা যে এলাকায় ফেলা হয়, তার চারপাশের এক হাজার ফুট দূরত্বের মধ্যে থাকা মানুষ হতাহত হতে পারেন।
২৪ ডিসেম্বর, ২০২৩

গাজায় সবচেয়ে প্রাণঘাতী বোমা ব্যবহার করেছে ইসরায়েলে
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রথম সপ্তাহে বিশ্বের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক বোমা হিসেবে পরিচিত ২০০ হাজার পাউন্ড ওজনের এমকে-৮৪ অর্ডন্যান্স বোমা ব্যবহার করেছে ইসরায়েল। প্রাণঘাতী এই বোমা শতাধিক বার নিক্ষেপ করায় গাজায় এত বেশি ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত হয়েছেন। অবরুদ্ধ এই অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রাপ্ত স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ এসব তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন ও নিউইয়র্ক টাইমস। সিএনএন ও নিউইয়র্ক টাইমসের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা যুদ্ধের প্রথম সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এমকে-৮৪ অর্ডন্যান্স বোমা ব্যবহার করেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। এমনকি ইসরায়েলি বাহিনীর আদেশ মেনে যেসব ফিলিস্তিনি এলাকা ছেড়েছেন তাদের ওপরও এসব বোমা ফেলা হয়েছে। ভয়ংকর এ বোমা ইসরায়েল অন্তত ২০০ বার ব্যবহার করেছে। সামরিক বিশেষজ্ঞদের বরাতে দুটি মার্কিন সংবাদমাধ্যমই জানিয়েছে, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এসব বোমা প্রায় কখনোই ফেলা হয় না। আর গাজা বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল। মাত্র ৩৬২ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ২০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি বসবাস করেন। প্রাণহানির হার বেশি হওয়ায় আন্তর্জাতিক মানবিক আইনে নির্বিচারে এসব বোমা ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জাতিসংঘের যুদ্ধাপরাধবিষয়ক সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা মার্ক গারলাস্কো বলেছেন, যুদ্ধের প্রথম মাসে তেল আবিব যে হারে গাজায় বোমা হামলা করেছে তা ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর আর দেখা যায়নি। অবরুদ্ধ এই অঞ্চলে এত বেশি প্রাণহানির অন্যতম একটি কারণ এই বোমার ব্যবহার। শুক্রবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর থেকে অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় ২০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৫৩ হাজারের বেশি মানুষ। ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা আছে কয়েক হাজার। ইসরায়েলের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এই বোমার ওজন ২০০০ পাউন্ড বা ৯০৯ কেজির বেশি। ওজন ও আকৃতির দিক দিয়ে এই বোমা যেমন বিশাল তেমনি মারাত্মক প্রাণঘাতীও। এই বোমা যে এলাকায় ফেলা হয়, তার চারপাশের এক হাজার ফুট দূরত্বের মধ্যে থাকা মানুষ হতাহত হতে পারেন।
২২ ডিসেম্বর, ২০২৩

‘দেশে শিশুদের প্রাণঘাতী বিরল এসএমএ রোগের চিকিৎসা শুরু’
স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি (এসএমএ) জিনগত রোগ। এ রোগে শিশুদের পেশি দুর্বল ও শক্ত হয়ে যায়। ফলে সামান্য নড়াচড়াতেও অসুবিধা হয়। মস্তিষ্ক, শিরা ও মেরুদণ্ডের কোষ ক্ষয় হতে থাকে। মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে পেশিতে কাজের সংকেত পাঠানো বন্ধ করে দেয়। যত দিন যায় সমস্যা তত বাড়তে থাকে। রোগাক্রান্ত শিশুদের আয়ুষ্কাল ১২ থেকে ১৬ বছর হয়ে থাকে। এ সময়ের মধ্যে শ্বাসতন্ত্রের ইনফেকশন ও জটিলতার জন্য মৃত্যুবরণ করে। তবে আশার দিক হলো বিরল এই রোগের চিকিৎসার যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে।  মঙ্গলবার ( ১৪ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল বাংলাদেশে মেরুদণ্ডের পেশির অ্যাট্রোফির চিকিৎসার সুবিধা শীর্ষক একটি বৈজ্ঞানিক সিম্পোজিয়ামে এই তথ্য জানানো হয়। এতে নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, নিউরোসায়েন্সের ইতিহাসে বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক দিন। কারণ বিরল এই চিকিৎসা বাংলাদেশে হচ্ছে, এটা আমাদের জন্য খুবই আনন্দের। যদিও এই চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। আমার অনুরোধ, বাংলাদেশের রোগীদের জন্য ওষুধের মূল্যের দিকটা যেন বিবেচনা করা হয়। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ১৬০ জন রোগী এ বিরল জেনিটিক রোগে আক্রান্তের তথ্য পাওয়া যায়। এতে রোগীর পেশি দুর্বল ও ছোট হয়ে যায়। ফলে হামাগুড়ি দিতে বা মাথা নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ বিঘ্নিত হয়। এতদিন পর্যন্ত দেশে এ রোগের চিকিৎসার তেমন সুযোগ ছিল না। এদিকে বিরল এই রোগের চিকিৎসার সুযোগ বৃদ্ধি করতে ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ নিয়েছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল, সুইজারল্যান্ডভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রোশ বাংলাদেশ এবং রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস। তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে চিকিৎসকদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও চিকিৎসায় সহায়তা করবে উল্লিখিত তিন প্রতিষ্ঠান।  অনুষ্ঠানে এনআইএনএস পরিচালক অধ্যাপক ড. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী এবং রোশ বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার মার্ক হিব তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করেন। রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান বলেন, রোশ শুধু ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি নয়, এটি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানও। তারা বিশ্বব্যাপী সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। এসএমএ রোগের ওষুধ সহজলভ্য করতে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।  অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন পেশি রোশ বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার মার্ক হিব। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো রেংগলি। এ ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন রোশের মধ্য পূর্ব ইউরোপ, তুরস্ক, রাশিয়া ও ভারতীয় উপমহাদেশের এরিয়া প্রধান আদ্রিয়ানো ট্রেভ।
১৪ নভেম্বর, ২০২৩

এমন প্রাণঘাতী বন্যা দেখেনি লিবিয়া
ইতিহাসে এরকম ভয়ংকর ও প্রাণঘাতী বন্যা দেখেনি লিবিয়ার মানুষ। দেশটির দারনা শহরে ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী বন্যায় নিখোঁজ স্বজনদের মরিয়া হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এখনো প্রায় ১০ হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। উদ্ধারকারীরা একের পর এক মরদেহ উদ্ধার করে যাচ্ছেন। তারা বলছেন, মরদেহগুলো রাখার জন্য পর্যাপ্ত বডিব্যাগ প্রয়োজন। এদিকে সৌদি টেলিভিশন চ্যানেল আল আরাবিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দারনার মেয়র আবদুলমেনাম আল-ঘাইথি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, মৃতের সংখ্যা ২০ হাজারে পৌঁছাতে পারে। খবর আলজাজিরার। গত রোববার লিবিয়ার উত্তর উপকূলে ঘূর্ণিঝড় দানিয়েল আঘাত হানার পর একটি বাঁধ ভেঙে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এক লাখ বাসিন্দার বন্দরনগরী দারনা। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, দারনা শহরে প্রাণহানি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। ৫২ বছর বয়সী গাড়িচালক উসামা আল হুসাদি ঘটনার পর থেকে দারনায় মরিয়া হয়ে স্ত্রী এবং পাঁচ সন্তানকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘হেঁটে হেঁটে আমি তাদের খুঁজে বেড়াচ্ছি। আমি হাসপাতালগুলোতে খুঁজেছি, স্কুলগুলোতে খুঁজেছি, কিন্তু কোথাও পাইনি।’ ঘূর্ণিঝড়ের রাতে হুসাদি কাজের জন্য বাইরে ছিলেন। আলজাজিরার সঙ্গে কথা বলতে বলতেই স্ত্রীর ফোন নম্বরে আবারও ফোন দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেটি বন্ধ। হুসাদি বলেন, ‘আমি আমার বাবার পরিবারের অন্তত ৫০ সদস্যকে হারিয়েছি। তারা কেউ নিখোঁজ, কেউ মারা গেছে।’ লিবিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট তারেক আল-খাররাজ বলেন, ভূমধ্যসাগরের উপকূলবর্তী দারনা শহরে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৮৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩ হাজার ১৯০ জনকে এরই মধ্যে সমাহিত করা হয়েছে। মৃতদের মধ্যে কমপক্ষে ৪০০ জন বিদেশি নাগরিক। তাদের বেশিরভাগই সুদান ও মিশরের। লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রশাসনের বেসামরিক বিমান চলাচলমন্ত্রী হিশেম আবু কিওয়াত বলেন, এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় ৫ হাজার ৩০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে পারে। এমনকি তা দ্বিগুণও হতে পারে। দারনার মেয়র আবদুলমেনাম আল-ঘাইথি আল আরাবিয়া টেলিভিশনকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বন্যায় দারনা নগরীর কতগুলো জেলায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার ওপর ভিত্তি করে মৃতের সংখ্যা ১৮ থেকে ২০ হাজারে পৌঁছাতে পারে। ত্রিপোলিতে সাংবাদিক মৌতাজ আলীকে দারনার বাসিন্দা মাহমুদ আবদুলকারিম জানান, বন্যায় তিনি তার মা ও ভাইকে হারিয়েছেন। বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর তারা সময়মতো বাড়ি থেকে নিরাপদে সরেননি। তার মা বাড়ি থেকে যেতে চাইছিলেন না। তিনি ধারণাই করতে পারেননি যে পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ রূপ নেবে। শেষ পর্যন্ত তার মা এবং ভাই যখন বাড়ি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন, ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। রাস্তায় বের হতে না হতেই বন্যার পানি এসে তাদের ভাসিয়ে নিয়ে যায়। গত মঙ্গলবার কোনো রকমে দারনা শহর থেকে বের হয়ে এসেছেন মাবরুকা এলমেসমারি নামে এক সাংবাদিক। আলজাজিরাকে তিনি বলেন, শহরটি বড় ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে আছে। সেখানে কোনো পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই, পেট্রোল নেই।
১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

প্রাণঘাতী মহামারির অপেক্ষায় দিন গুনছে বাংলাদেশ
বেশিরভাগ দৈনিক পত্রিকা ও গণমাধ্যম থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞরা বহু আগে থেকে সতর্ক করেছেন ‘এবার ডেঙ্গু ভয়ানক রূপ নিতে পারে’। এমনকি খোদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকেও জানানো হয়েছিল এবার ঢাকার ৯৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৫টিই ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। পাশাপাশি ডেঙ্গুর মৌসুম গত বছরের মতো দীর্ঘ হওয়ার শঙ্কার কথাও জানানো হয়েছিল।  বিষয়গুলোকে সত্য প্রমাণ করে রাজধানীসহ সারাদেশে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। প্রতিদিনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। এবারের ভয়ানক বিষয় হচ্ছে শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটেছে পুরো দেশে। বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল ২০১৯ সালে। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাক-বর্ষা জরিপ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, এবারের পরিস্থিতি ২০১৯ সালের চেয়েও কয়েকগুণ খারাপ হতে পারে। বিশেষত, গত পাঁচ বছরের মধ্যে এবার এডিস মশার ঘনত্ব এবং সম্ভাব্য প্রজননস্থলের সংখ্যা সর্বোচ্চ হয়ে গেছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে দেখা যাচ্ছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৯৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৫টিই ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। পক্ষান্তরে ২০১৯ সালে উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ওয়ার্ডের সংখ্যা ছিল ২১টি। ২০১৯ সালের পর দেখতে দেখতে পার হয়েছে আরও চার বছর। এই দীর্ঘদিনের পথ পরিক্রমায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের উচিত ছিল যেভাবেই হোক মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংসে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কিন্ত সিটি করপোরেশন লোক দেখানো নানা কর্মকাণ্ডে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ায় এই কাজ পুরোপুরি আড়ালে থেকে যায়। ফলে মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস দূরে থাক আরও বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। আর এজন্যই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, প্রাক-বর্ষা জরিপ অনুযায়ী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সব এলাকাতেই ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার উপস্থিতি বেশি। ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেলসহ আরও নানা অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি অনেক অপরিকল্পিত সব স্থাপনা নির্মাণ করতে গিয়ে সেখানে আবদ্ধ পানির আধার তৈরি করা হয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমের প্রথম বৃষ্টিপাত থেকেই এইসব স্বচ্ছ পানির আধারগুলো হয়ে উঠেছে এডিস মশার স্বর্গরাজ্য। তারা অপরিকল্পিত উন্নয়নের নামে নির্মিত ইতস্তত অবকাঠামোগুলোতে সৃষ্টি হওয়া জলাধারে নির্বিঘ্নে বেড়ে উঠছে। তাই বিগত যেকোনো বছরের তুলনায় এবারের এডিস মশার সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ। গত ৮ আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ৭ আগস্ট সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে ৩৪০ জনের মৃত্যু হলো। এ সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৭৪২ জন। যার মধ্যে ঢাকায় ১ হাজার ২ জন এবং ঢাকার বাইরে ১ হাজার ৭৪০ জন। সূত্রটি আরও বলছে, চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৭২ হাজার ২২৫ জন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৩৭ হাজার ৭২২ জন এবং ঢাকার বাইরে ৩৪ হাজার ৫০৩ জন। এই তথ্যসূত্র ও সংবাদ পর্যালোচনা করতে গেলে দেখা যায় পরিস্থিতি ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশে বছরের প্রথম ছয় মাসে ডেঙ্গু আর কখনো এমন ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারেনি। এমনকি ডেঙ্গুর ভয়াবহতম বছর সেই ২০১৯ সালেও প্রথম ছয় মাসে মারা গিয়েছিলেন মাত্র ৮ জন। এর বিপরীতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ২০৮ জন। অন্তত এই পরিসংখ্যান আমলে নিলে ২০২৩ সালের ডেঙ্গু এক ভয়াবহ মহামারি হিসেবে চোখ রাঙাচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে মোট ৯৮টি ওয়ার্ডের ৩ হাজার ১৪৯টি বাড়িতে যে জরিপ পরিচালনা করা হয়েছিল তার হাউস ইনডেক্স এবং ব্রুটো ইনডেক্স দুইটাতেই ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। প্রসঙ্গত, বলে রাখা ভালো এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের সূচককে বলা হয় ‘ব্রুটো ইনডেক্স’ আর কতগুলো বাড়িতে এডিস মশার উপস্থিতি রয়েছে তা পরিমাপ করা হয় হাউস ইনডেক্স দিয়ে। বিভিন্ন সংবাদ থেকে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৪০টি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৫৮টি ওয়ার্ডে মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন জরিপকারীরা। দুই সিটি করপোরেশনের এসব ওয়ার্ডের ৩ হাজার ১৪৯টি বাড়ি পরিদর্শন করে ৫৪৯টি বাড়িতেই এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। ডিএনসিসির ২৭১ এবং ডিএসসিসির ২৭৮টি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। সে হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটির মগবাজার, আদাবর, মোহাম্মদপুর, মণিপুর ও উত্তর বাড্ডা এলাকায় মশার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে। অন্যদিকে দক্ষিণ সিটির নবাবপুর, ডিস্টিলারি রোড, আজিমপুর, হাজারীবাগ, কাঁঠালবাগান ও সায়েন্স ল্যাব এলাকায় মশার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। বিষয়টি একটু গুরুত্বসহকারে দেখলে ঢাকার কোনো এলাকাই এখন এডিস সংক্রমণ থেকে নিরাপদ নেই। বিগত বছরগুলোতে কোনো ওয়ার্ডের হাউস ইনডেক্স ১০-এর বেশি হলেই তাকে উদ্বেগজনক ধরা হয়েছিল। এবার ৯৮টি ওয়ার্ডের ৮০টি ওয়ার্ডেই হাউস ইনডেক্স ১০-এর বেশি পাওয়া গেছে। গত বছর হাউস ইনডেক্স ১০-এর বেশি ছিল ১৯টি ওয়ার্ডে। এখান থেকেই অনুমান করা যায় কতটা ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। অন্যদিকে জরিপের তথ্য অনুযায়ী, এবার বহুতল ভবনে (প্রায় ৪৪ শতাংশ) এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এরপর সবচেয়ে বেশি লার্ভা (প্রায় ৪০ শতাংশ) পাওয়া গেছে নির্মাণাধীন নানা অবকাঠামোতে। বিভিন্ন নির্মাণাধীন প্রকল্পের নানা স্থানে জামে থাকা পানি, ভেজা মেঝে, প্লাস্টিক ড্রাম ও পাত্র এবং ফুলের টবে লার্ভা বেশি পাওয়া গিয়েছিল। চলমান ডেঙ্গুর ভয়াবহতা সামনে আরও বড় হুমকি হয়ে আসছে তা এর থেকে নিশ্চিত করে বলা যায়। চলতি বছরে ডেঙ্গুর এই চলমান ভয়াবহতার দায় পুরোপুরি দুই সিটি করপোরেশনের ওপর বর্তায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কয়েক মাস আগে এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক করেছিল। তাদের অভিযোগের পরেও মশক নিধনে ঢাকার দুই সিটি যথাযথ উদ্যোগ নেয়নি। এমনকি ঢাকা উত্তরের উপপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম মোস্তফা সারওয়ার বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত তার মতামতে সুস্পষ্ট করে বলেছিলেন, ‘সিটি করপোরেশনের মশকনিধনে আমার কাজে আমি সন্তুষ্ট না। সিটি করপোরেশন জনসচেতনতা বাড়াতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। ৮ থেকে ১৩ জুলাই বিশেষ অভিযান চালাবে সিটি করপোরেশন।’ সাধারণ কোনো ব্যক্তি নন খোদ ঢাকা উত্তরের উপপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার এমন বক্তব্য প্রমাণ করে দুই সিটি করপোরেশন মশক নিধন অভিযানে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। চলতি বছরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও খারাপের শঙ্কার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এর মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বিলম্বে হাসপাতালে ভর্তির কারণে মৃত্যু ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। পাশাপাশি সবার জন্য হাসপাতালগুলোতে স্থান সংকুলানও সম্ভব হচ্ছে না।  সামনের দিনগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ার বিপরীতে মৃত্যুর সংখ্যাও ভয়াবহরকম বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর গুরুত্ব না দেওয়ায় দেশের প্রায় সব জেলায় এডিস মশা ছড়িয়েছে। গত দুই দশকে জুলাই মাসের শেষে বা আগস্টের শুরু থেকে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। এ বছর জুলাই মাসের শুরু থেকেই পরিস্থিতি যেভাবে খারাপের দিকে যাচ্ছে এর চূড়ান্ত অবস্থা কী হয় তা বলা কঠিন। ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে সহজেই অনুমান করা যায় এডিস মশা এবং ডেঙ্গু এখন কেবলমাত্র ঢাকা মহানগরের সমস্যা নয়, এটি এখন সারা দেশের মানুষের সমস্যা। আগের কয়েক দশকের হিসেবে যেকোনো সময়ের চেয়ে বছরের প্রথম ছয় মাসে এবার আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। শুরু থেকেই মশক নিধনে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে সামনের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে সংক্রমণ বহুগুণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সবাই। জ্বরে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে। আর যারা মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে আসছে তাদেরও দীর্ঘদিন সংগ্রামের পরে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ হচ্ছে। মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাবসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ধুঁকতে থাকা মানুষগুলোর দুঃখ যাতনা শোনার কেউ নেই। তারপরেও যেন হিতাহিত জ্ঞান নেই কর্তৃপক্ষের। বাস্তবে করোনার চেয়ে ভয়াবহ রূপ নিলেও নির্বাচনের ডামাডলে হারিয়ে যাচ্ছে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা। প্রতিদিন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক আর টিভি পর্দার শিরোনাম এখন ‘গণতন্ত্র ফেরানোর সংগ্রাম বনাম উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা ধরে রাখার সরকারি প্রচারণা’। শরৎচন্দ্র চট্টপাধ্যায় আক্ষেপ করে বলেছিলেন ‘এত ছোট কথা অত বড় কানে পৌঁছায় না’। তেমনি ডেঙ্গুর খবর এতটাই ছোট, নির্বাচন আর আন্দোলন সংগ্রামের অত বড় খবরের ভিড়ে তার আর জায়গা হয় না। একটি সক্রিয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে মেয়ররা সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব লাভ করলে নিজের পদ ও জনগণের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা থাকে। প্রতিষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা স্বাধীনভাবে কাজ না করার ফলে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তার সামান্য একটি খণ্ডচিত্র হচ্ছে সিটি করপোরেশন। তাদের নানা অনিয়ম ও দায়িত্বহীনতার মধ্যে ভয়াবহ একটি নজির হচ্ছে মশক নিধনে অনীহার বিপরীতে সীমাহীন ব্যর্থতা। কিন্ত ডেঙ্গু থেকে মুক্তি পেতে এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি মশকনিধনের ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনগুলোর সক্রিয়তা আরও বৃদ্ধি করা। অন্যদিকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে রাষ্ট্রীয় প্রচার-প্রচারণা জোরদার করা গেলে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছু সচেতনতা তৈরি হতে পারে। কিন্ত সমালোচিত নির্বাচনের মাধ্যমে চেয়ারে বসা মেয়র এবং কাউন্সিলরা এ ব্যাপারে কতটা জনবান্ধব হবেন তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। ফলে বাংলাদেশ নতুন একটা ভয়াবহ মহামারির অপেক্ষায় দিন গুনছে এটা নিঃসন্দেহে বলাই যায়।  (লেখক: অধ্যাপক, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।)
০৯ আগস্ট, ২০২৩
X