ঈদের দ্বিতীয় দিনেও দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলছে পশু কোরবানি
ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিনেও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পশু কোরবানি করছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। মঙ্গলবার (১৮ জুন) ফজরের নামাজের পর থেকেই এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গতকাল সোমবার (১৭ জুন) কসাই না পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে যারা ফরজ এই ইবাদত পালন করতে পারেননি, তারাই আজ পশু কোরবানি দিচ্ছেন। সরেজমিনে গিয়ে ঢাকার ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, পুরান ঢাকা, ধূপখোলা ও গেন্ডারিয়া এলাকা ঘুরে পশু কোরবানি করতে দেখা গেছে। ঈদের দ্বিতীয় দিন কোরবানি দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে বিভিন্নজন বিভিন্ন কথা বলেন, তাদের অধিকাংশ প্রথম দিন কসাই সংকটের কারণ উল্লেখ করেছেন। আবার অনেকেই পারিবারিক ও প্রথাগত ঐতিহ্য ধরে রাখতেও দ্বিতীয় দিন কোরবানি করার কথা জানান। রাজধানীর গেন্ডারিয়া এলাকার বাসিন্দা মকবুল হোসেন বলেন, মহল্লার অলিগলি, বাসার নিচের গ্যারেজ, সড়ক সব জায়গাতেই গতকাল অনেক ভিড় ছিল। তাছাড়া কসাইও পাওয়া যাচ্ছিল না। সেজন্য গতকাল কোরবানি দিতে পারিনি। তাই আজ স্বস্তির সঙ্গে পশু জবাই করেছি। অবশ্য ইসলামি শরিয়তেও কোরবানির মোট সময় তিন দিন। ঈদের প্রথম দিন কোরবানি করা সবচেয়ে উত্তম, তারপর দ্বিতীয় দিন, তারপর তৃতীয় দিন। ১০ জিলহজ ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে শুরু করে জিলহজের ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত কোরবানি করা যায়। জিলহজের ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পর আর কোরবানি করার সুযোগ থাকে না। তবে কেউ যদি কোরবানির সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পর অর্থাৎ ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের পর কোরবানির পশু জবাই করে ফেলে, তাহলে ওই পশুর সব মাংস সদকা করে দিতে হবে। এ রকম ক্ষেত্রে গোশতের মূল্য জীবিত পশুর চেয়ে কমে গেলে যে পরিমাণ মূল্য কমবে, তাও সদকা করতে হবে।
১৮ জুন, ২০২৪

জামালপুরে পশু কোরবানি দিতে গিয়ে আহত ১৪
জামালপুরের ইসলামপুরে গরু কোরবানি দিতে গিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ছুরিকাঘাতে ও গরুর লাথিতে অন্তত ১৪ জন আহত হয়েছেন। সোমবার (১৭ জুন) বেলা সোয়া ১১টা পর্যন্ত আহতরা চিকিৎসা নিতে আসেন ইসলামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জরুরি বিভাগে। উপজেলা নাওভাঙা এলাকার মো.বাবুল (৩৫)বলেন, গরু কোরবানি দেওয়ার সময় লাথি মারে আমার ডান হাতের আঙুলের হাড় ভেঙে গেছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কোরবানি দিতে গিয়ে আহত অবস্থায় ১৪ জন জরুরি বিভাগে এসেছেন। জরুরিভাবে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. সারা বলেন, এখন পর্যন্ত আহত অবস্থায় আমাদের এখানে প্রায় ১৪ জন এসেছেন। সবাইকে সেলাই ও চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে আমরা এখনও কাউকে ভর্তি করা হয়নি। এখানে বেশিরভাগ রোগী কাটাছেঁড়ার।
১৭ জুন, ২০২৪

পশু কোরবানি দিতে গিয়ে আহত হয়ে ৯৪ জন ঢামেকে
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পশু কোরবানি দিতে গিয়ে গরুর শিংয়ের আঘাত, গরুর লাথি এবং মাংস কাটতে গিয়ে ৯৪ জন আহত হয়েছে। সোমবার (১৭ জুন) দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক ) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। গরু কাটতে গিয়ে আহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জরুরি বিভাগের (ভারপ্রাপ্ত) আবাসিক সার্জন ডা. আমান।  তিনি বলেন, কোরবানি দিতে গিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এখন পর্যন্ত আহত অবস্থায় আমাদের এখানে ৯৪ জন এসেছে। আহতদের জরুরি বিভাগ থেকে সেলাই এবং চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ডেমরার সারুলিয়া থেকে গরুর শিংয়ের আঘাতে গুরুতর আহত অবস্থায় মো. বাবুল (৫৫) নামে একজনকে হাসপাতালে নিয়ে এলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা তাকে ১০২নং ওয়ার্ডের ভর্তি দেন। ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে কোরবানি দিতে গিয়ে আহত অবস্থায় ৯৪ জন জরুরি বিভাগে এলে হাসপাতালের জরুরিভাবে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
১৭ জুন, ২০২৪

কোন কোন পশু কোরবানি দেওয়া যায়
ঈদুল আজহার অন্যতম ইবাদত পশু কোরবানি। এটি রাসুল সা. ও তার উম্মতের জন্য বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদার প্রতীক। কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে রাসুল সা. ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহতায়ালার কাছে কোরবানির দিন মানবজাতির কোরবানি অপেক্ষা অধিকতর পছন্দনীয় কোনো আমল নেই। বিচার দিনে কোরবানির পশুকে তার শিং, পশম ও খুরসহ উপস্থিত করা হবে। পশুর রক্ত জমিনে পড়ার পূর্বেই আল্লাহতায়ালার কাছে তা বিশেষ মর্যাদায় পৌঁছে যায়, সুতরাং তোমরা আনন্দচিত্তে কোরবানি করো।’ (সহিহ তিরমিজি: ১৩৯১) আসুন, জেনে নিই কোন কোন পশু কোরবানি করা যাবে আর কোন কোন পশু কোরবানি করা যাবে না। কোরবানির পশুর ধরন হচ্ছে- উট, গরু, ছাগল, দুম্বা বা মেষ। মহান আল্লাহর বাণী (وَلِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنسَكاً لِيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ عَلَى مَا رَزَقَهُم مِّن بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ فَإِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَلَهُ أَسْلِمُوا وَبَشِّرِ الْمُخْبِتِينَ)الحج আমি প্রতিটি সম্প্রদায়ের জন্য কোরবানির নিয়ম করে দিয়েছি। তাদের গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু হতে যে রিজিক দেওয়া হয়েছে সেগুলোর ওপর তারা যেন আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। কারণ, তোমাদের উপাস্য একমাত্র উপাস্য, কাজেই তার কাছেই আত্মসমর্পণ করো আর সুসংবাদ দাও বিনীতদের। আর গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু হলো: উট, গরু, ছাগল, দুম্বা বা মেষ। আর কোরবানিতে একটি ছাগল, মেষ বা দুম্বা একজনের পক্ষ হতে যথেষ্ট হবে। পক্ষান্তরে একটি উট বা গরু সাতজনের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে। হজরত জাবির (রা.) এক বর্ণনায় বলেছেন, আমাদের আল্লাহর রাসুল (সা.) উট ও গরুর ক্ষেত্রে সাতজনকে একটি পশুতে ভাগ নিতে নির্দেশ করেন। কোরবানির পশুতে যে সব গুণ থাকা আবশ্যক কোরবানির পশুর দুটি গুণ থাকতে হবে। প্রথমত, পশুর শরিয়ত নির্ধারিত বয়স হওয়া। আর তা হচ্ছে, উটের বয়স পাঁচ বছর সম্পূর্ণ হওয়া, গরুর বয়স দুই বছর সম্পূর্ণ হওয়া, ছাগলের বয়স এক বছর সম্পূর্ণ হওয়া, মেষ বা দুম্বার বয়স ছয় মাস পূর্ণ হওয়া। এর কম বয়সের হলে তা কোরবানিতে যথেষ্ট হবে না। এর দলিল নবী (সা.)-এর হাদিস: لَا تَذْبَحُوا إِلَّا مُسِنَّةً إِلَّا أَنْ يَعْسُرَ عَلَيْكُمْ فَتَذْبَحُوا جَذَعَةً مِنْ الضَّأْنِ তোমরা দাঁতা পশু ব্যতীত অন্যকোনো পশু (কোরবানিতে) জবাই করবে না। তবে যদি তোমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ে তাহলে দুম্বা বা মেষের জাজ’আ (যার বয়স ছয় মাস) জবাই করবে। দ্বিতীয়ত, ৪টি দোষ থেকে কোরবানির পশুর মুক্ত হওয়া, যা থেকে নবী (সা.) কোরবানির পশুর ক্ষেত্রে বেঁচে থাকতে বলেছেন। আর তা হলো- স্পষ্ট কানা হওয়া। আর দুই চোখের অন্ধ হওয়া আরও বড় দোষ, তাই তা যথেষ্ট হবে না; স্পষ্ট রোগী হওয়া, যেমন চুলকানি-পাচড়া বা অন্যকোনো ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়া; স্পষ্ট খোঁড়া হওয়া এবং এমন অচল হওয়া যা চলতে পারে না। তাই কোনো একটি পা কাটা হওয়া আরও বড় দোষ; আর এমন দুর্বল হওয়া যার শরীরে কোনো মাংস নেই। কোরবানির পশুতে যেসব গুণ থাকা উত্তম তা হলো, কোরবানির পশুর মোটা হওয়া, শক্তিশালী হওয়া, দৈহিক গঠনে বড় হওয়া এবং দেখতে সুন্দর হওয়া। সুতরাং কোরবানির পশু যত ভালো হবে ততই মহান আল্লাহর নিকট তা প্রিয় হবে। আর সহিহ হাদিসে রয়েছে, আল্লাহ সুন্দর ও উত্তম, তাই তিনি সুন্দর ও উত্তম ব্যতীত অন্য কিছু গ্রহণ করেন না। কোরবানির মাংস বিতরণের নিয়ম-পদ্ধতি এ সম্পর্কে আল্লাহতাআলা বলেন, (فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْبَائِسَ الْفَقِيرَ )الحج সুতরাং তোমরা (নিজেরা) তা থেকে খাও, আর দুঃস্থ-অভাবীদের খাওয়াও। আর নবী (সা.) তার হজের অবস্থায় প্রত্যেকটি কোরবানির পশু হতে এক-এক টুকরো মাংস নিয়ে পাত্রে একত্রিত করে রান্না করতে বলেন, অতঃপর তা থেকে কিছু খান এবং তার ঝোল পান করেন। তাই সুন্নাত হলো, কোরবানির মাংস নিজে খাওয়া এবং তা হতে অন্যদেরও খাওয়ানো। আর কোরবানির মাংস নিজে না খেয়ে এবং অপরকে তা দান না করে শুধু-শুধু জবাই করে ফেলে রেখে দেওয়া যথেষ্ট নয়; কারণ,  এটা ধন-সম্পদ বিনষ্ট করার শামিল। তাই যতক্ষণ এমন স্থানে না জবাই করবে যেখানে নিজের আশপাশে দরিদ্র-অভাবীরা থাকবে, অতঃপর কোরবানির পশু জবাই করে তাদের দান করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোরবানিকারী দায়িত্ব মুক্ত হবে না। কোরবানি ইহা হচ্ছে মহান আল্লাহর নিয়ামত ও অনুগ্রহ, যার জন্য কোরবানির পশু জবাইয়ের মাধ্যমে বা তার বিকল্প (১০টি সিয়াম) সম্পাদনের মাধ্যমে আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করা আবশ্যক। তাই এই কোরবানি হচ্ছে শুকরিয়া প্রকাশের কোরবানি, এটা জরিমানা বা ঘাটতি পূরণের কোরবানি নয়। অতএব হাজি সাহেব তা হতে নিজে খাবে, স্বচ্ছলদের উপঢৌকন দিবে এবং অভাবীদের প্রতি সদকা করবে।  
৩১ মে, ২০২৪
X