সাবেক এমপিপুত্রের নারী কেলেঙ্কারি ফাঁস, সমালোচনার ঝড়
খুলনায় সাবেক এমপিপুত্র শেখ রাশেদুল ইসলাম রাসেলের সঙ্গে এক নারীর ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও ফাঁস হয়েছে। এ ঘটনা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। শেখ রাশেদ খুলনা-৬ আসনের (কয়রা-পাইকগাছা) সাবেক সংসদ সদস্য শেখ নুরুল হকের ছেলে এবং জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক। ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও ফাঁস হওয়া নিয়ে তিনি থানায় মামলা করার পর ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। গত ১১ জুন রাজধানীর ভাটারা থানায় মামলা করেছেন শেখ রাশেদ। মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন, গত ৬ জুন বেলা ১১টার দিকে তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি তার একান্ত মুহূর্তের কিছু ছবি পাঠান এবং পরে মেসেজ দিয়ে চাঁদা দাবি করেন। মেসেজে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আপনার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের ব্যাপার একটু ভেবে দেখবেন। আমার যেন এই ছবিগুলো জুয়েল ভাই আর মনিরুল ভাইয়ের কাছে পাঠানো না লাগে। যদি সমঝোতায় আসেন ওকে, আপনার সব জিনিস আপনার কাছে চলে যাবে। টাকা দেবেন ৫ কোটি।’ রাশেদুল ইসলাম এজাহারে আরও উল্লেখ করেছেন, ‘একটি অজ্ঞাত মহিলা ও পুরুষ কুচক্রি মহল আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস করার জন্য কৌশলে আমার একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি এবং ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ আমার আত্মীয়স্বজনের মোবাইলে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করছেন।’ তবে শেখ রাশেদ কালবেলার কাছে দাবি করেছেন, ওই নারীর সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। এমনকি তাকে কোনোদিন দেখেনওনি। ছবি ও ভিডিও এডিট করা দাবি করে তিনি বলেন, ‘এসব ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করতে একটি চক্র এসব ছড়াচ্ছে।’ মামলার এজাহারে তিনি নিজের একান্ত মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও গোপনে ধারণ করে তার কাছে চাঁদা দাবির কথা উল্লেখ করেছেন- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, চাঁদা দাবি এবং তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ায় তিনি আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। এদিকে, নারীর সঙ্গে অনৈতিক কার্যকলাপে জড়ানোয় শেখ রাশেদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা- জানতে চাইলে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। কোথাও শুনিও নাই। না শুনে, না জেনে কীভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।’ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিত অধিকারী কালবেলাকে বলেন, ‘ঘটনাটি বেশ কিছুদিন ধরেই শুনছি। কিন্তু এখনো যেহেতু অফিসিয়ালি আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। সে কারণে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কিছু নেই।’ এদিকে রাশেদুলের করা মামলায় খুলনার দৌলতপুর থেকে ফাতেমা তুজ জোহরা নামে এক নারীকে এবং পাইকগাছা উপজেলার ফতেহপুর গ্রাম থেকে আব্দুল্লাহ আল মামুন নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে দুজনই ঢাকার কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন।
১৮ নভেম্বর, ২০২৩

পুলিশ কর্মকর্তাদের নারী কেলেঙ্কারি নিয়ে আলোচনা
আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, জনগণের জানমাল ও সম্পদের নিরাপত্তায় ভূমিকা রেখে চললেও গুটি কয়েক অসাধু কর্মকর্তার জন্য বারবার সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে পুলিশ প্রশাসনকে। বিভিন্ন সময়ে ঘুস, দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য থেকে শুরু করে নানা অনিয়ম সামনে আসলেও সম্প্রতি ছাত্রলীগের দুই নেতাকে মারধরের ঘটনায় এক পুলিশ কর্মকর্তার নারী কেলেঙ্কারির তথ্য বেশ সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। অতিসম্প্রতি নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে ডিএমপির রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদের সঙ্গে ডিএমপির সদর দপ্তরে কর্মরত সানজিদা আফরিন নিপার অনৈতিক সম্পর্কের গুঞ্জন। এর জের ধরে সানজিদার স্বামী রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হক মামুনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাঁধে এডিসি হারুনের। যার ভিডিও ক্লিপ পর্যন্ত ছড়িয়েছে সামাজিকমাধ্যমে। এদিকে ওই ঘটনায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দুই নেতাকে আটক করে থানা হেফাজতে নিয়ে ব্যাপক মারধরের ঘটনায় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ করা হয়। ওই ঘটনার পর এডিসি হারুনকে রংপুরে বদলি করা হয়। সবশেষ সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে পুলিশের এই কর্মকর্তাকে। গত কয়েক বছরে পুলিশের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নারীঘটিত কেলেঙ্কারি দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ডিআইজি মিজান, পুলিশ সুপার মুক্তা ও এডিসি সাকলায়েন। যার সর্বশেষ সংযোজন এডিসি হারুন। এর আগে ২০১৭ সালে জিআইজি মিজানের ঘটনা বেশ আলোচনায় জন্ম দেয়। ওই বছরের জুলাই মাসে কর্মসংস্থান ব্যাংকের কর্মকর্তা ইকো নামের এক নারীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বিয়ে করেন পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এমনকি সেই বিয়েতে শর্ত দেওয়া হয় যেন, বিয়ের খবর ২০১৯ সাল পর্যন্ত গোপন রাখে ইকো। তবে শর্ত ভেঙে বিয়ের খবর প্রকাশ করায় তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ইকোকে গ্রেপ্তার করান তিনি। এমনকি বগুড়া, রমনা ও মোহাম্মদপুর থানা পুলিশকে ব্যবহার করে ওই নারী ও তার পরিবারকে হয়রানি করেন ডিআইজি মিজান। ইকোর লালমাটিয়ার বাসা তল্লাশি চালিয়ে জব্দ করা হয় মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, লেখাপড়া ও চাকরিসংক্রান্ত সব কাগজপত্র। যে ঘটনায় কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা। ওই সময়ে পাওয়া যায় ডিআইজি মিজানের আরও বেশ কয়েকটি নারী কেলেঙ্কারির তথ্য। যেখানে সংবাদ পাঠিকাসহ বেশ কয়েকজন নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে বলে দাবি করেন ইকো ও তার মা। এমনকি ওই পুলিশ কর্মকর্তার ফাঁদে পড়ে অনেক নারীর সংসার ভেঙেছে দাবি করে বিভিন্ন ফোনালাপের রেকর্ড সংবাদমাধ্যমের কাছে সরবরাহ করেন ব্যাংক কর্মকর্তা ওই নারী। এর জের ধরে অবৈধ সম্পদের তদন্তে নামে দুদক। দুদকের করা মামলায় ডিআইজি মিজানকে ১৪ বছরের সাজা দেন আদালত। ২০১৯ সালের মে মাসে সুদানে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে থাকা অবস্থায় এক নারী কর্মকর্তার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়ান বাংলাদেশ পুলিশের কন্টিনজেন্টের কমান্ডার পুলিশ সুপার মোকতার হোসেন। দেশে আসার পর এসপি মোকতারকে পিবিআইয়ে পুলিশ সুপার হিসেবে বদলি করা হয়। দেশে ফিরে ২০২১ সালের ১২ আগস্ট মোকতার হোসেনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেন ওই নারী। পরে সেটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করতে থানাকে নির্দেশ দেন ঢাকার একটি আদালত।  ২০২১ সালে চিত্রনায়িকা পরীমণির সঙ্গে সম্পর্কের বিষয় সামনে আসার পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) গোলাম সাকলায়েনকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরে মিরপুরের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) সংযুক্ত করা হয় তাকে। এর আগে পরীমণির বিরুদ্ধে র‌্যাবের করা একটি মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। ওই মামলার সূত্র ধরেই এডিসি সাকলায়েনের পরীমণির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। চলতি বছরের ২৭ মার্চ অফিস কাম বাসার একটি কক্ষে মেয়েদের নিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ এবং ঘুস নেওয়ার অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় চাকরি থেকে অপসারণ করা হয় সহকারী পুলিশ সুপার মোহা. আবদুর রকিব খানকে। ময়মনসিংহের ত্রিশাল সার্কেলে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত থাকাকালে অফিস কাম বাসার একটি কক্ষে দীর্ঘদিন ধরে মেয়েদের নিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে আসার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এসব বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক এক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আমরা গত দুয়েক বছরে কয়েকটি ঘটনা দেখলাম। পুলিশের কতিপয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নৈতিক স্খলনের কারণে পেশাদারিত্ব হারিয়ে নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছেন। এ ক্ষেত্রে এডিসি হারুন, এসপি মোকতার বা এডিসি সাকলায়েন কিংবা অন্য যাদের কথাই বলুন তারা আদর্শ ও নীতিবান পুলিশ হয়ে উঠতে পারেননি। শুধু নারী কেলেঙ্কারিই নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও পুলিশের এমন নীতি-আদর্শচ্যুতির উদাহরণ আছে। তারা মনে করেছেন, একটা সুযোগ যেহেতু পেয়েছি সেটা কাজে লাগাই। আমি পুলিশ, আমাকে কোথাও জবাবদিহি করতে হবে না, কেউ আমার কাছে জবাবদিহি চাইবেও না। কারণ তারা আমার পরিচয়, পোশাক ও অস্ত্রকে ভয় পাবে। এসব কারণেই কখনো কখনো তারা জোর করেই কোনো সহকর্মী অথবা অন্য কোনো নারীর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছেন। আবার কখনো কখনো ওই পুলিশ ও নারী দুজনই নিজের ইচ্ছায় সম্পর্কে জড়িয়েছেন। তাদের এই নৈতিক স্খলনের কারণে তৃতীয় কেউ ভিকটিম হয়েছে। এমনকি কেউ সহিংসতার শিকার হয়েছে, আত্মহত্যা করতে হয়েছে। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে ব্যাপকভাবে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে।
১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
X