নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে এক বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা
বান্দরবানের নাইক্ষ‌্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের সীমান্তের ৪৮ নম্বর পিলারের ওপারে আরাকান আর্মির গুলিতে আবুল কালাম (২৮) নামের এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন। রোববার (১২ মে) সকালে ৯টায় মিয়ানমারের ছেলির ঢালা নামক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত আবুল কালাম (২৮) উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড বামহাতির ছড়া গ্রামের মৃত বদিউজ্জামানের ছেলে। স্থানীয়রা জানান, আবুল কালামসহ স্থানীয় কয়েকজন যুবক ভোরের দিকে গরু আনতে অবৈধভাবে মিয়ানমারের ভেতরে গিয়েছিলেন। সকালে ফেরার পথে গুলিতে মৃত্যু হয় আবুল তার। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুরুল আবছার ইমন ও  ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার শামশুল আলম। তিনি জানান, আমার ওয়ার্ডের বামহাতির ছড়া এলাকার এক ব্যক্তিকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে জেনেছি। তার লাশ দেশে ফেরত আনার চেষ্টা চলছে। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ জাকারিয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও কল রিসিভ হয়নি।
১২ মে, ২০২৪

নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে আতঙ্কে ৫ স্কুল বন্ধ
রাখাইনে কয়েকদিন ধরে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী আরাকান আর্মির মধ্যে তুমুল লড়াই চলছে। দুপক্ষের প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে বাংলাদেশ সীমান্তে বসবাসকারী পরিবারগুলোর মধ্যে। আতঙ্কে গতকাল সোমবার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। স্কুলশিশুদের নিরাপত্তার স্বার্থে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। গতকাল বন্ধ থাকা স্কুলগুলো হলো বাইশপারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজাবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু পশ্চিমকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করে ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তের কাছে পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এক দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুল মান্নান কালবেলাকে বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় সীমান্তঘেঁষা কয়েকটি স্কুলের শিক্ষকরা তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের জন্য আবেদন করেছিলেন। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে আজকের (গতকাল) জন্য পাঁচটি স্কুল বন্ধ ছিল। মঙ্গলবার পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্কুলগুলো খোলার বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি জানান, সার্বক্ষণিক তারা সীমান্তের আশপাশের স্কুলগুলোর বিষয়ে নজর রাখছেন। তথ্য নিয়ে তা জেলা প্রশাসন ও বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করা হচ্ছে। তুমব্রুর ভাজাবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছৈয়দুর রহমান বলেন, রোববার দুপুরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে দুটি হেলিকপ্টার আকাশে মহড়া দেয়। ঠিক সে মুহূর্তে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনতে পাই আমরা। ফলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে নিরাপত্তাজনিত কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের অনুরোধ করা হয়। এদিকে চলমান সংঘর্ষে গতকাল উখিয়া, টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ না পাওয়া গেলেও সীমান্তবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক কাটেনি। যে কোনো সময়ে তা ফের শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নাইক্ষংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু হেডম্যানপাড়া চাকমাপল্লির অবস্থান সীমান্তের খুব কাছাকাছি। এই পল্লিতে অন্তত ২৭টি পরিবারের বসবাস। স্থানীয়রা বলছেন, গত কয়েকদিনে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি ও মর্টার শেল এসে পড়েছে। আতঙ্কে বাসিন্দারা রাতে সেখানে নিয়মিত পাহারা চালু করেছেন। পরিস্থিতি ভয়াবহ হলে তারা যেন দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যেতে পারেন সেজন্য অন্তত একজন বাসিন্দা রাতভর জেগে থাকছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের ২৮৩ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। দীর্ঘ এই সীমান্ত এলাকার বড় একটা অংশই পড়েছে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায়। কক্সবাজার ও বান্দরবানের স্থানীয় প্রশাসন বলছে, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সীমান্তে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনও পুরো পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখছে। বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা দ্রুতই করার প্রস্তুতি রয়েছে। কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম ও বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন কালবেলাকে বলেন, সীমান্ত এলাকার থানা পুলিশ সতর্ক রয়েছে। তা ছাড়া স্থানীয়ভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ভালো। পুলিশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। সীমান্তের বাসিন্দারা বলছেন, দুই সপ্তাহ আগে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি রাখাইনের বেশকিছু এলাকা দখল করে নিয়েছে। তুমুল লড়াইয়ের মধ্যে একে একে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে জান্তা সরকার। টেকনাফ এবং তুমব্রু সীমান্ত এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে দিনভর গোলাগুলি ও মর্টার শেল ছোড়ার শব্দ ভেসে আসছে। নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া ঘেঁষে মিয়ানমার অংশে রোববার পর্যন্ত তিন দিনে অর্ধশতাধিক মর্টার শেলের শব্দে কেঁপে ওঠে ৪৭ ও ৪৮ নম্বর সীমান্ত পিলারের বাংলাদেশের অভ্যন্তর। তবে গতকালের পরিস্থিতি কিছুটা ভালো ছিল। নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ কালবেলাকে বলেন, তাদের এলাকা থেকে সীমান্ত অঞ্চলের মিয়ানমার অংশে ৩৪ পিলার রাইট ক্যাম্প এবং ঢেকিবুনিয়া ক্যাম্প দুটি স্পষ্ট দেখা যায়। আজ (গতকাল) পর্যন্ত ওই ক্যাম্প দুটিতে জান্তা বাহিনীর সশস্ত্র সৈন্যদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। তিনি বলেন, এদিন সকালেও মর্টারশেল বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। এতে কেউ হতাহত না হলেও আতঙ্কে রয়েছেন সীমান্তে বসবাসকারী স্থানীয় বাসিন্দারা। ওই ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ডের মেম্বার দ্বীন মোহাম্মদ ভুট্টো বলেন, ‘আমরা যারা এপারে বসবাস করছি সবাই আতঙ্কে আছি, কখন কোন সময় কী হয় জানি না। বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে না যাওয়ার জন্য স্থানীয় জনগণকে সতর্ক করছি আমরা।’ তুমব্রু সীমান্তের স্থায়ী বাসিন্দা গণমাধ্যমকর্মী মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘কিছু দিন ধরে সীমান্তের ওপারে ব্যাপক গোলাগুলি হচ্ছে, আমরা যারা স্থায়ী বাসিন্দা আছি, সবাই খুব আতঙ্কে রয়েছি। তবে সীমান্তে বসবাসকারী অনেকেই ভয়ে নিরাপদে চলে গেছেন।’ ৩৪ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সীমান্তে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। স্থানীয়দের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। মিয়ানমার বাহিনীর ঘাঁটি দখলের দাবি: আরাকান আর্মি রোববার রাখাইন রাজ্যের মিনবিয়া শহরে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ৩৮০ ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তর দখলে নিয়েছে বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম ইরাবতীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। থাইল্যান্ডে নির্বাসিত মিয়ানমারের একদল নাগরিক ওই সংবাদমাধ্যমটি চালান। ইরাবতীর দেওয়া তথ্য বলছে, রাখাইনের ম্রাউক ইউ, কিউকটা ও রাথেডং এলাকায় দুই পক্ষের লড়াই চলছে। এদিকে আরাকান আর্মির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘জান্তার আর আমাদের সঙ্গে লড়াই করার সামর্থ্য নেই। তারা এখন আরও বেশি গোলা নিক্ষেপ ও আকাশ থেকে বোমা হামলা চালাচ্ছে।’
৩০ জানুয়ারি, ২০২৪
X