দৌলতদিয়া ঘাট ভাঙা বড় হুমকি বললেন বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান
তীব্রভাবে ভাঙছে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাট। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে ঘাটের ২টি ফেরিঘাট ও পদ্মা পাড়ের ১৫০০ পরিববার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শুক্রবার (২১ জুন) বিকেলে ভাঙন এলাকা দৌলতদিয়া ৭নং ফেরিঘাট ও ৬নং ফেরিঘাট পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা।  পরিদর্শন শেষে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান জানান, ঘাট ভাঙছে এটা আমাদের জন্য বড় হুমকির বিষয়। আমরা কাজ করছি। দৌলতদিয়া ৬নং ও ৭নং ঘাটেও কাজ হয়েছে। তীব্রভাবে ৭নং ঘাট ভাঙছে। আমি দেখে আসলাম সেখানেও কাজ হচ্ছে। আমাদের এখানে ৭টা ঘাট আছে। এখন এখানে ৫টা ঘাট ঠিক আছে। যেখানে ভাঙনের ফলে ঘাট হুমকির মুখে পড়বে সেখানে বিআইডব্লিউটিএ আমরা অবশ্যই কাজ করব।  তিনি বলেন, এ ছাড়াও নদী ভাঙনের ফলে নদীর তীরে যাদের বসবাস তাদেরও অনেক অভিযোগ আমরা দেখলাম। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গেও আমরা সমন্বয় করছি। তিনি আরও বলেন, আমাদের ঘাট যেখানে হুমকির মুখে পড়বে শুধু সেখানেই অবশ্যই দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।  চেয়ারম্যান আরও বলেন, নদী ভাঙনের হাত থেকে ঘাটকে আমরা রক্ষা করব। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় সরকারের বড় পরিকল্পনা রয়েছে। আপনারা জানেন, এখানে বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছি। ঘাটের সঙ্গেও অন্যান্য যে পরিকল্পনা সেটাও কিন্তু চলমান। আমরা একটা সমীক্ষা করেছিলাম এটা পূর্বের। এখন যেভাবে ঘাট ভাঙছে আবার নতুন করে এক সমীক্ষার প্রয়োজন। আমরা শীঘ্রই একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্রুতই এখানে প্রয়োজনীয় কাজ করব। এ ছাড়া তিনি আরও বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় আধুনিকায়ন নদী বন্দরের ১৪০০ কোটি টাকার কাজ দ্রুতই করা হবে। ভাঙন ঝুঁকিতে থাকা দৌলতদিয়া ৬নং ফেরি ঘাট ও ৭নং ফেরিঘাট পরিদর্শনের পর লঞ্চঘাট পরিদর্শনও করেন তিনি। লঞ্চে যেন অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে পারাপার না করা হয় এবং লঞ্চে যাত্রী ধারণ ক্ষমতার বাইরে যেন গাদাগাদি করে যাত্রী নেওয়া না হয় সে ব্যাপারে লঞ্চঘাট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করেন। লঞ্চে ধারণ ক্ষমতার বাইরে যাত্রী পারাপার করা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও আশ্বাস দেন তিনি।  পরিদর্শনকালে এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিআইডব্লিউটিএ (নৌ-সংরক্ষণ ও পরিচালনা বিভাগ) আরিচা অঞ্চলের উপ-পরিচালক, মো. রবিউল ইসলাম, (বন্দর ও পরিবহন বিভাগ) আরিচা অঞ্চলের উপ-পরিচালক মো. মামুনুর অর রশিদ, দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ মো. ফরিদউদ্দিন।  এ ছাড়া টিআই মো. জাকির হোসেন, ট্র্যাফিক সুপারভাইজার মো. শিমুল ইসলাম ও মো. সুজন হোসেনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, পদ্মা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় তীব্র ভাঙনের দেখা দিয়েছে রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়া ঘাটে। দীর্ঘ একসপ্তাহ ধরে পদ্মার পাড় ভাঙলেও কর্তৃপক্ষের কোনো নজর নেই। আর ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ১৫০০ পরিবার ও শতশত বসতি ও দোকানপাট এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে ভাঙন রোধে দ্রুতই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র। প্রতিবছরই ভাঙনের শিকার পদ্মা পাড়ের রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়ন বাসী। ভাঙতে ভাঙতে নিঃস্ব পদ্মা পাড়ের হাজারো মানুষ। অনেকের এখন মাথা গোজার ঠাঁই নাই। বাপ দাদার ভিটেমাটি বসতি ও শেষ চিহ্ন কবরও রাক্ষুসে পদ্মার পেটে। রাক্ষুসে পদ্মা গিলে খেয়েছে হাজারো পরিবারের শেষ সম্বলটুকু। বর্ষা শুরু হতে না হতেই আবারো ভাঙতে শুরু করেছে পদ্মার পাড়। গত একসপ্তাহ ধরে পদ্মার পাড় ভাঙছে। ভাঙনের মাত্রা অতি তীব্র হওয়ায় ভাঙন ঝুঁকির মুখে রয়েছে প্রায় ১৫০০ পরিবার ও শত শত বসতি ও দোকানপাট। পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় টানা এক সপ্তাহ ধরে পদ্মার পাড় ভাঙলেরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নেই কোনো নজরদারি। পদ্মার তীব্র ভাঙনে বিলীনের পথে দৌলতদিয়া ৭নং ফেরি ঘাটসহ সাক্তার মেম্বার পাড়া এলাকাসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ও ৬নং ফেরিঘাট। আর অতি দ্রুতই ভাঙন ঝুঁকি রোধে জরুরিভাবে জিও ব্যাগ ফেলানোর দাবি জানিয়েছেন পদ্মা পাড়ের মানুষ।  স্থানীয় পাড়ের বাসিন্দা ফারুক আহমেদ কালবেলাকে বলেন, পদ্মাপাড় যেভাবে ভাঙছে তাতে কয়েক দিন এভাবে ভাঙলে আমাদের শেষ সম্বলটুকু বিলীন হয়ে যাবে। এ ছাড়া আমাদের এখানে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে চাঁদখান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেটিও পদ্মায় বিলীনের পথে। দ্রুতই কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে নজর দেওয়া প্রয়োজন। স্থানীয় ৭নং ফেরিঘাটের দোকানদার শাহীন খান কালবেলাকে বলেন, প্রায় কয়েকদিন যাবত এখানে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষের কোনো নজর আমরা দেখছি না। আমরা খুব চিন্তা নিয়ে বসবাস করছি। এ ছাড়াও আমাদের ৭নং ফেরিঘাটের পাশেই যে আঞ্চলিক সড়ক সেটিও ঝুঁকির মুখে। এখান দিয়ে প্রতিদিন ২০০০ থেকে ২৫০০ মানুষ যাতায়াত করে। এ রাস্তাটি নদীতে বিলীন হলে আমাদের যাতায়াত পথ বন্ধ হয়ে যাবে। উজ্জল হোসেন নামের এক বাসিন্দা কালবেলাকে বলেন, জিও ব্যাগের নামে নদীতে যা ফেলা হচ্ছে সেটা যথাযথভাবে ভালোমানের নয়। এখানে জিও ব্যাগে যে মাটি দেওয়া হচ্ছে সেটা নিম্ন মানের এবং কাজের গুণগত মান সঠিক হচ্ছে না। তবে ভাঙন রোধে কর্তৃপক্ষকে বিশেষ নজর দেওয়ার দাবি জানান তিনি। সরকারের কাছে নদী ভাঙন রোধের দাবি জানিয়েছেন, পদ্মা পাড়ের স্থানীয় এলাকাবাসী। এবং দ্রুতই কর্তৃপক্ষ নদীভাঙন রোধে কাজ না করলে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দেন তারা। আক্ষেপ প্রকাশ করে গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা মুন্সী কালবেলাকে জানান, এখানে ৭নং ফেরিঘাটের ফেরিগুলো বন্ধ করে দেওয়া প্রয়োজন। ফেরির ধাক্কায় পাড়ে ভাঙনের মাত্রা বেশি হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি দেখছেন না। ফেরি বন্ধ রাখলে অবশ্যই দেখবেন বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি। এবং ভাঙনের মাত্রা তীব্র হওয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন কর্তৃপক্ষের নিকট। গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র কালবেলাকে জানান, এরা আসলে জনগণের সঙ্গে তামাশা করছে। এটা ছাড়া আর কিছুই নয়। ভাঙন রোধে জরুরিভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার খবর দেই আমি। অথচ এরা জিও ব্যাগ ফেলায়, আমাকে জানায় না। এদিকে জিও ব্যাগে নিম্ন মানের বালি দেওয়ার অভিযোগ পেয়েছেন বলেও জানান তিনি। তবে বিষয়টি নিয়ে এবং ভাঙন রোধে দ্রুতই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
২১ জুন, ২০২৪
X