পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে জাহাজভাঙা শিল্প
‘জাহাজভাঙা শিল্পের ফলে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে পরিবেশের ওপর। ব্যবহৃত ক্ষতিকর পদার্থ এবং অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে পরিবেশ দূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই শিল্পে কর্মরত শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।’ শুক্রবার (৭ জুন) বিকেল সাড়ে ৩টায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে মানববন্ধন ও র‌্যালি করে এসব কথা বলেন জাহাজভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের নেতারা। এ সময় বক্তারা বলেন, শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য উন্নতমানের সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ করা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি। আমাদের পরিবেশ এবং শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির প্রয়োগ একান্ত প্রয়োজন।’ ফোরামের আহ্বায়ক তপন দত্তের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব ফজলুল কবির মিন্টুর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক এ এম নাজিম উদ্দিন, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শ ম জামাল, বাংলাদেশ মুক্ত শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি কাজি আলতাফ হোসেন, জাহাজভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের সদস্য এবং জাতীয় শ্রমিক লীগ সীতাকুণ্ড আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মাহাবুবুল আলম, জাহাজভাঙ্গা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের সদস্য মছিউদ্দোউলা, জাহাজভাঙা শ্রমিক সেফটি কমিটির আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মাহমুদ, জাহাজভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের কোষাধ্যক্ষ রিজওয়ানুর রহমান খান, বাংলাদেশ মেটাল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক মো. আলী, বাংলাদেশ ফ্রি ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কে এম শহিদুল্লাহ, বাংলাদেশ মুক্ত শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক মো. ইদ্রিছ, জাহাজভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আহ্বায়ক মো. মানিক মণ্ডল, জাহাজভাঙা শ্রমিকনেতা মো. হাসান প্রমুখ।
০৭ জুন, ২০২৪

বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণের অর্থনীতি এবং কূটনীতি
পরিবেশগত বিপর্যয়ে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ দেশটির নাম বাংলাদেশ। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ২০৫০ সালের ভেতর বাংলাদেশের একটি অংশ তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কোটি কোটি মানুষের বাস্তচ্যুত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পরিবেশগত বিপর্যয় শুধু জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয় আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্যও হুমকিস্বরূপ।   আমাদের চারপাশের পরিবেশ বিপর্যয়ের নানান দিক বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ, পানি দূষণ, মাটি দূষণ এ বিষয়গুলোর সঙ্গে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। তবে পরিবেশ দূষণের কারণ, প্রতিকার, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব এ বিষয়গুলোতে আমাদের মাঝে সচেতনতার মাত্রা সেভাবে বাড়েনি। আপনি দূষণ ঘটার কারণগুলো খুঁজে দেখেন, দেখবেন একটি বড় কারণ হচ্ছে জনগণের মধ্যে সচেতনতার অভাব। এ বিষয়টি নিয়ে আগেও লিখেছি। পরিবেশ দূষণের সঙ্গে উন্নয়নের সম্পর্ক খুঁজে বের করি, তাহলেই অর্থনীতি চলে আসবে। ধরুন একটি ১১ তলা বিল্ডিং এখানে উন্নয়ন এবং পরিবেশ তারা খুব নিকটতর এবং উভয়েই ষষ্ঠ তলায় থাকে। এখন উন্নয়ন পরিবেশকে বলছে আমি যত উপরে উঠব তুমি তত নিচে নামবে। উন্নয়নকে শিল্পায়নে এসে সপ্তম তলায় উঠিয়ে দিল অপরদিকে বায়ু দূষণ পরিবেশকে পঞ্চম তলায়, নগরায়ন অষ্টম তলায় উঠিয়ে দিলে উন্নয়নকে আর পানি দূষণ পরিবেশকে নামাল চতুর্থ তলায়। মেগা প্রকল্প উন্নয়নকে উঠিয়ে দিল নবম তলায়, শব্দ দূষণ ও প্লাস্টিক দূষণ ধরুন পরিবেশকে তৃতীয় তলায় নামিয়ে দিল।  এভাবে উন্নয়ন পৌঁছাল ১১ তলায়, আর পরিবেশ দূষণের ফলে নামল প্রথম তলায় বা গ্রাউন্ড ফ্লোরে। ধরুন উন্নয়নের উপরে ওঠার সুযোগ আছে কিন্তু পরিবেশের, হয় তাকে বাড়ির বাইরে যেতে হবে অর্থাৎ তখন তার ওপর বাড়ির মালিকের আর কোনো নিয়ন্ত্রণই থাকবে না। বাড়ির মালিক আর কেউ নয় সেটা সরকার। অর্থাৎ তখন তার সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে অন্যদিকে সে যদি প্রথমতলা থেকে নিচে নামার চেষ্টা করে তবে বিপর্যয় ঘটবে এমনকি বিল্ডিংটি ধ্বসে পড়ার সম্ভাবনা থাকবে।  বিল্ডিংটি হচ্ছে আমাদের দেশ। রূপক এ বিষয়টি দ্বারা বোঝা যাচ্ছে উন্নয়ন এবং পরিবেশ দর্শনের যাত্রা বিপরীতমুখী । উন্নয়নের মাত্রা যত বাড়ছে দূষণের মাত্রা সেভাবে না হোক তবে বাড়ছে। উন্নয়নের ফলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে যতটুকু এগিয়ে যাচ্ছে পরিবেশ দূষণের কারণে অর্থনীতির কিছু অংশ কিন্তু ঠিকই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনলাইন জার্নাল দ্য ল্যানসেট প্ল্যান্টারিং হেলথ এর সর্বশেষ গবেষণায় বায়ু দূষণের বাংলাদেশ প্রতিবছর সর্বাধিক ১ লাখ ৭৩ হাজার ৫১৫ জনের মৃত্যু হয় বলা হয়েছে। অর্থাৎ পরিবেশ দূষণের মোট মৃত্যুর প্রায় ৮৭ শতাংশ‌ই হচ্ছে বায়ু দূষণের কারণে। সর্বশেষ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল বায়ু দূষণে বিশ্বে পঞ্চম, যদিও তার আগের বছর বাংলাদেশ শীর্ষে ছিল।  এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে কয়েকদিন পরপরই ঢাকা শীর্ষ অবস্থানে চলে আসছে। বায়ু দূষণের মূল কারণ ইটভাটার ধোয়া, নির্মাণ কাজের কারণে সৃষ্ট ধূলা। বিষয় দুটি উন্নয়নের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। অবশ্য মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের ধোঁয়া, সীমান্তের বাইরে থেকে ভেসে আসা বস্তুকণা এসব রয়েছে হিসাবে।  বিশ্বব্যাংকের গবেষণা বলছে, ঢাকায় সারাদিন একজন যে পরিমাণ দূষিত বায়ু গ্রহণ করেছেন তা প্রায় দুটি সিগারেট খাওয়ার সমান। ফুসফুসজনিত রোগ, হৃদরোগ, অ্যাজমা, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস, কম ওজনের শিশু জন্ম নেওয়া, ক্যান্সার, অকাল মৃত্যু বেড়ে যাওয়া, বুদ্ধির হ্রাস পাওয়া, ধোঁয়াশা তৈরি হওয়া, ফসলের উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়া, প্রাণী প্রজাতির বিলুপ্ত হওয়া এসবের কারণ হিসেবে বায়ু দূষণকে দায়ী করা হয়।  চিকিৎসা খরচ বেড়ে যাওয়া কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া, কর্ম ক্ষেত্রে অনুপস্থিতির কারণে উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়া এসব বিষয়কে আমলে নিয়ে গ্রিনপিস ২০২০ সালে বাংলাদেশের বায়ু দূষণের আর্থিক ক্ষতি নিরূপণ করেছে সোয়া লাখ কোটি টাকা, যা তখনকার ডলারের হিসাবে। যা মোট জিডিপির পাঁচ শতাংশ। অর্থাৎ বায়ু দূষণ যত নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে নিয়ে আসা হবে, জিডিপি প্রবৃদ্ধি তত বাড়বে। ‌অন্য একটি গবেষণায় এসেছে বায়ু দূষণের আর্থিক ক্ষতি বছর ৬৫২ কোটি ডলার। প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্টকারী পরবর্তী দূষণ হচ্ছে পানি দূষণ। মানুষের বাসা বাড়ির বর্জ্য, নর্দমা নদীতে পতিত হলে, শিল্প কারখানার বর্জ্য নৌযানের পোড়া তেল, প্লাস্টিক বর্জ্য, কঠিন আবর্জনা, ফসলের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য কীটনাশক ও আগাছানাশক ওষুধ এসব পানিতে পতিত হয়ে পানি দূষণ বাড়াচ্ছে। নদীর আভ্যন্তরীণ বাস্তুতন্ত্র বিনষ্ট হচ্ছে ,মাছের মধ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিক উল্লেখযোগ্য হারে পাওয়া যাচ্ছে। দেশে প্রতিবছর নদী দূষণের আর্থিক ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে এবং তা ২৮৩ কোটি ডলার। মাটিতে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার বৃদ্ধি, ইটাখোলা স্থাপনের জন্য, এর আশেপাশে ছড়িয়ে পড়া ছাই,পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যের মাটিতে মিশে যাওয়া ফলাফল মাটিতে জৈব পদার্থের আশঙ্কাজনক ভাবে হ্রাস পাওয়া। এসবের কারণে মাটি দূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলে মাটিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি এই সমস্ত কারণে একটি সময়ে জমি অনুৎপাদনশীল হয়ে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে ‌। কারণ ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে জমির উর্বরতা শক্তি। তাছাড়া চাষযোগ্য জমির রূপান্তর এ সমস্ত কারণে চালের ক্ষতি হচ্ছে ০ দশমিক ৮৬ থেকে ১ দশমিক ১৬ শতাংশ। মাটিস্থিত জৈব পদার্থের হ্রাস পাওয়া, উর্বর শক্তির ক্ষয়, কিছু জমির অনুৎপাদনশীল হয়ে পড়া, চালের ক্ষতি এসব ক্ষতিরও কিন্তু আর্থিক মূল্য আছে। যেমন বাংলাদেশের চাল উৎপাদন করছে চার লাখ টন অর্থাৎ শুধু চাল‌ই আমরা আরও চার হাজার টন বেশি উৎপাদন করতে পারতাম। জিডিপিতে এই বিষয়গুলোর ঋণাত্মক প্রভাব রয়েছে। অন্যদিকে শব্দ দূষণেও আমরা কিন্তু পিছিয়ে নেই। আবাসিক বাণিজ্যিক ভবনগুলোর নির্মাণ কাজ, পাইলিং, গাড়িচালকদের উচ্চ স্বরে হর্ন, মাইকিং ভটভটি, নসিমনের আওয়াজ, স'মিলের আওয়াজ, উচ্চস্বরে গান বাজনা এসবের কারণে মানুষের বধির হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। ট্রাফিকদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ কোনো না কোনোভাবে আক্রান্ত, কানের রিসিপ্টর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, মানসিক অসুস্থতা দেখা যাচ্ছে, গর্ভবতী নারীদের গর্ভের শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছে। শ্রবণ শক্তি কমে যাচ্ছে, বধির হওয়া, শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া এসবের কারণে কর্মক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে, মানসিক অসুস্থতা রিসেপ্টর নষ্টের বিপরীতে ওষুধপত্র, গর্ভের শিশু আক্রান্ত হওয়া, যারা দেশের ভবিষ্যৎ তারা অসুস্থ হয়ে বেড়ে ওঠা এসবের আর্থিক মূল্য নিরূপিত না হলেও এটুকু বোঝা যায় শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা হলেও বাড়বে। সব মিলিয়ে প্রতিবছর দেড় লাখ কোটি টাকাও যদি অর্থনৈতিক ক্ষতি হিসেবে ধরে নেওয়া যায় তাহলে তা কম নয় কিন্তু। এ ধরনের ক্ষতি গত কয়েক বছর ধরেই হয়ে আসছে। তার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবও কিন্তু রয়েছে। সরকার পরিবেশ দূষণ রোধকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করতে পারে। তাৎক্ষণিক আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি অনেক মারাত্মক হতে পারে।  উন্নয়ন কাজগুলোর সুষ্ঠু সমন্বয়, প্রচলিত আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পগুলো যখন হাতে নেওয়া হয় তখনই পরিবেশ দূষণজনিত ইস্যুগুলোকে চিহ্নিত করে তার সমাধানে বরাদ্দ বেশি রাখা, এই বিষয়গুলোতে সরকার আরও কার্যকরভাবে কাজ করলে তা দূষণ রোধের সহায়ক হবে। বাজেটেও এসব খাতে বরাদ্দ বেশি থাকছে না। জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলার ক্ষেত্রে বরাদ্দ বৃদ্ধি উচিত। বরাদ্দকৃত অতিরিক্ত টাকা কীভাবে খরচ হবে সে বিষয়েও সুনির্দিষ্ট নীতি থাকা জরুরি। পরিবেশ করের বিষয়টির বিস্তৃতি জরুরি।  যেহেতু পরিবেশ দূষণ রোধে আলাদাভাবে বরাদ্দ নেই, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের শুরুতেই এ বিষয়ে কিছু অর্থ ধরে রাখা যেতে পারে। কিন্তু কিছু বিষয়ে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের বাইরে। দেখুন গত অর্থ বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব এর সম্পর্কে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, কিন্তু প্রকৃত চাহিদা ছিল নয় বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাকি টাকা কোথা থেকে আসবে। এখন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়া, মাত্রা অতিরিক্ত কার্বন নির্গমনের জন্য ওজোন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, গ্রীন হাউজ গ্যাসের বিরূপ প্রভাব এ বিষয়গুলোর জন্য তো বাংলাদেশ দায়ী নয়। কিন্তু ক্ষতিকর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি তো আমরা। এ বিষয়গুলো নিয়ে দেন দরবার, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশেষ করে কপগুলোতে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরা, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর ক্ষতিকর প্রভাব বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপন করা, সর্বোপরি ক্ষতিপূরণ আদায় এসব বিষয়গুলো কূটনীতির সঙ্গে জড়িত।       ১৯৯২ সালে বাংলাদেশে প্রথম পরিবেশ নীতি গৃহীত হয় ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ কিয়েটো প্রটোকল গ্রহণ করে। ২০১৩ সালে কিয়েটো প্রোটোকলের দ্বিতীয় দশা গ্রহণ করে। পরিবর্তনের ক্ষতিপূর প্রভাব মোকাবিলায় ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে। কপ-১৯, দোহা সামিট, কপ-২১ এ বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২০১৬ সালে প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষর করে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী চ্যাম্পিয়নস অফ দ্য আর্থ পুরস্কার পান। ক্লাইমেট ভালনিয়ারেবল ফোরামে বাংলাদেশ দুইবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছে। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি শীর্ষ নির্গমনকারী দেশসমূহ চীন, আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহের সঙ্গে দেন দরবারে বাংলাদেশকে যথেষ্ট আগ্রাসী হতে হবে। আসছে নভেম্বরেই বাকুতে কপ-২৯ শুরু হচ্ছে। সেখানে অবশ্যই ডাবল সাপোর্ট, প্যারিস চুক্তির পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন, ১০০ বিলিয়ন ডলার ফান্ড, আক্রান্ত রাষ্ট্র সমূহের জনগণের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তায় অর্থায়ন এ বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশকে কথা বলতে হবে। শুধু তাই নয়, আক্রান্ত রাষ্ট্রসমূহকে সঙ্গে নিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আলোচনা করতে হবে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে হবে।  আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের আলোচনাগুলোতে সম্পৃক্ত থাকতেই হবে। গত কিছু দিনে কাঠমান্ডু ইনিশিয়েটিভ, জেনেভায় ক্লাইমেট হেলথ ফাইন্যান্স ডায়ালগ, বার্লিনে পিটাসবার্গ ডায়ালগে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ অবশ্যই কিছুর উদাহরণ। ট্রাক ডিপ্লোমেসির মাধ্যমেও বাংলাদেশ আগাতে পারে। এক্ষেত্রে সিভিল সোসাইটি মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ভালো ভূমিকা রাখতে পারে।  লেখক : পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক, আমরা ক'জন মুজিব সেনা
০৫ জুন, ২০২৪

নৌপথের বড় সমস্যা নাব্য-সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি ও দূষণ
দেশের নৌ-সেক্টরে প্রধান সমস্যা হলো নাব্য সংকট। এরপর নৌপথে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি, নদী দূষণসহ উপেক্ষিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পাশাপাশি স্পিড লিমিট না মেনে নৌযান চালানোর কারণে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া নৌ-সেক্টরে বৃহত্তর অভ্যন্তরীণ সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দ্রুত তা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া না হলে দেশের জন্য বড় ক্ষতি হবে। মঙ্গলবার (৪ জুন) বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে নৌ-নিরাপত্তা সপ্তাহ-২০২৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে নৌপরিবহন সেক্টরের সঙ্গে যুক্ত প্রতিনিধিরা এসব তথ্য তুলে ধরেন। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে দুর্ঘটনামুক্ত নৌ চলাচল ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে প্রতি বছরের মতো এ বছরও ‘নৌ-নিরাপত্তা সপ্তাহ ২০২৪’ পালিত হচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘দূষণমুক্ত নদী ও নিরাপদ নৌযান, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে রাখবে অবদান’। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বিশ্বের পঞ্চম দূষিত নদী হলো বুড়িগঙ্গা। এই নদীতে দিনে ৯০ টন বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। তুলনামূলক বিবেচনায় দেখা যায় বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নদী ‘চিতারুম’ চেয়ে বেশি দূষিত হচ্ছে ‘বুড়িগঙ্গা’। এমন বাস্তবতায় নৌপরিবহন সেক্টরকে রক্ষা করতে সব পর্যায় থেকে আন্তরিকভাবে কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন তারা। বক্তারা বলেন, সদরঘাটে নদীতে যত বর্জ্য পড়ে সারা দেশের নৌপথে তা পড়ে না। কলকারখানা ও মানববর্জ্য ৯০-৯২ ভাগ নদী দূষণ হচ্ছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যদি নদী নালা শুকিয়ে যায় তাহলে বাংলাদেশের প্রাণ থেমে যাবে। সরকার নিরাপদ নৌযান ও দূষণমুক্ত নদী গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। দেশপ্রেম না থাকলে, দেশের জন্য কাজ না করলে এগিয়ে যাওয়া যায় না বলেও যোগ করেন তিনি। ম্যানমেইড বর্জ্য, শিল্প-কারখানার বর্জ্য দূষণমুক্ত করতে কাজ করার কথা জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দূষণমুক্ত নদী ও নিরাপদ নৌযান এ লক্ষ্যে আমরা এখনো পৌঁছতে পারিনি। কিছুটা ঘাটতি দুর্বলতা রয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা ‘দূষণমুক্ত নদী ও নিরাপদ নৌযান’ এ লক্ষ্যে পৌঁছতে না পারব ততদিন আমরা ‘দূষণমুক্ত নদী ও নিরাপদ নৌযান, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে রাখবে অবদান’ এ প্রতিপাদ্যটি ব্যবহার করব। বিশ্বের অনেক বড় বড় নদী টেমস, হাইমস, রাইন, হান নদী একসময় দূষিত ছিল; এখন সেখানকার পানি পান করা যায়। অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মাহফুজুর রহমান বলেন, দেশের অপার সম্ভাবনাময় হলো নদী ও সমুদ্রসম্পদ। এসবকিছু যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবেই। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তফা কামাল বলেন, নৌপথে অসুস্থ প্রতিযোগিতার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া দরকার। নিরাপদ নৌপথ গড়ে তুলতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কোনো ধরনের আপস করা যাবে না। নদীতে বর্জ্য ফেলা বন্ধে কাজ করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ সচল প্রকল্পের মধ্যে আমরা ৭ হাজারে পৌঁছেছি। বিভিন্ন দেশের দূষিত নদীর উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, একটা সময় বুড়িগঙ্গায় কোনো বর্জ্য থাকবে না। এখন তো বুড়িগঙ্গার পানি অজুর উপযোগী নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পানির রং বদলাতে তা আর পবিত্র থাকে না। পবিত্র পানিতে অজু করতে হয়। সচেতনতার অভাব, স্বদিচ্ছা আর অবহেলায় নদী নষ্ট করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, জলযানের ময়লা তীরে ফেলতে হবে। পানি তো সবকিছু ফেলার জায়গা নয়।   বিগত বছরগুলোতে নৌপথ সংকুচিত হওয়ার কথা তুলে ধরে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল (যাপ) সংস্থার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব উদ্দিন বীরবিক্রম বলেন, যাত্রী পরিবহনে রীতিমতো দুর্যোগ নেমে এসেছে। যে পথে বেশি যাত্রী হতো তা বন্ধ। যাত্রী কমায় মালিকরাও দুর্যোগের মধ্যে আছেন। দেশে ১৯ হাজার জাহাজের কথা বলা হলেও অনেকগুলো ইতোমধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া নৌপথের বড় সমস্যা হলো নদীর নাব্য।   দুর্ঘটনা এড়াতে গতি মেনে নৌযান চালানোর অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, একটা জাহাজের সঙ্গে আরেকটা জাহাজ লাগিয়ে দুর্ঘটনা আর হতে দেব না। আইনভঙ্গের দায়ে মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে যদি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাহলে তা মাথা পেতে নেব। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল (যাপ) সংস্থার সাবেক প্রধান উপদেষ্টা গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, নৌপথ এখন ৭০ ভাগ ব্যবসা কমেছে। নৌ শ্রমিকদের ২/৩ মাসের বেতন বকেয়া। তিনি বলেন, সদরঘাটে নদীতে যত বর্জ্য পড়ে সারা দেশের নৌপথে তা পড়ে না। ঢাকার আশপাশের সব বর্জ্য নদীতে পড়া ঠেকানোর পদক্ষেপ নিলে বুঝব সরকার নদী রক্ষায় আন্তরিক।
০৪ জুন, ২০২৪

জানতেন কি? / প্লাষ্টিক দূষণ
n বছরে আমাদের সমুদ্রগুলোতে ১ কোটি টন করে প্লাস্টিক বর্জ্য মিশছে, যা মিনিটে এক ট্রাক আবর্জনা ফেলার সমান। n এক মিনিটেরও কম সময়ের জন্য ব্যবহার হয় বছরে এমন প্লাস্টিক তৈরি হচ্ছে ১৯ কোটি টন। n প্রায় শতভাগ শামুকের ভেতর মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। n বছরে গড়ে ১০ লাখ সামুদ্রিক প্রাণী মারা যাচ্ছে প্লাস্টিকের দূষণে। n মানুষ নিজেরাই অজান্তে বছরে ২০ কেজি করে প্লাস্টিক গিলে ফেলছে। n বছরে গড়ে বিশ্বে প্রায় ৫০ হাজার কোটি প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহৃত হচ্ছে। একটি ব্যাগের ব্যবহারের গড় আয়ু ১৫ মিনিট। n বোতলজাত পানি উৎপাদনে ওই বোতলের চেয়ে ৬ গুণ বেশি পানি প্রয়োজন হয়।
১৪ মে, ২০২৪

পরিবেশ দূষণ / টায়ার গলিয়ে তেল উৎপাদন
রংপুরের পীরগঞ্জে পরিবেশ দূষণ করে কেরোসিনের বিকল্প জ্বালানি তেল উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে বাইসাইকেল, রিকশা ও গাড়ির পুরোনো টায়ার গলিয়ে তেল উৎপাদন করছে একটি কোম্পানি। টায়ার গলানোর কাজে জ্বালানি হিসেবে খড়ি ব্যবহার করায় টায়ার আর খড়ির কালো ধোঁয়ায় এলাকা আচ্ছন্ন হয়ে বায়ুদূষণের সঙ্গে ক্ষতি করছে মানুষজন, পশুপাখি ও বিভিন্ন উঠতি ফসলের।  সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের থিরারপাড়া গ্রামে মেসার্স মন্ডল প্লাস্টিক অ্যান্ড রাবার ফুয়েল প্লান্ট নামে ওই কারখানায় দৈনিক ২২ টন টায়ার গলিয়ে ৬ টন তেল উৎপাদন করা হয়। ওই ২২ টন টায়ার গলাতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয় আরও কয়েক টন কাঠ। ফলে উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল। কাঠ আর টায়ারের কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন থাকে আশপাশের কয়েকটি গ্রাম। সেই সঙ্গে মারাত্মক দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। পরিবর্তিত আবহাওয়ার কারণে বিরূপ প্রভাব পড়ছে জলবায়ুতে। ফলে ওই এলাকায় শ্বাসকষ্টজনিত রোগ বেড়েছে কয়েকগুণ। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা কাশিজনিত নানা রোগে ভুগছেন। কারখানার মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় ক্ষতি সত্ত্বেও এলাকার মানুষজন ভয়ে মুখ খুলতে সাহস করছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, কারখানায় যখন টায়ার গলায় তখন গন্ধে ঘরের বাইরে বের হওয়া যায় না। ফসলের মাঠে কাজ-কর্ম বাদ দিয়ে বাড়িতে ঘরে ঢুকে বসে থাকতে হয়।  এ বিষয়ে কারখানার মালিক শামিম মন্ডলের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার সব কাগজপত্র আছে। আমি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়েই কারাখানা দিয়েছি বলেও দাবি করেন তিনি। ইউএনও আমাকে অনুমতি দিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত কোনো প্রকার কাগজপত্র দেখাতে অস্বীকৃতি জানান।  পীরগঞ্জ উপজেলা বন কর্মকর্তা মিঠু তালুকদার বলেন, বনাঞ্চল ও পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু করার অনুমতি দেয় না বন অধিদপ্তর। ইউএনও ইকবাল হাসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিবেশ দূষণ করলে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হবে। জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আজহারুল ইসলাম বলেন, ওই প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো পরিবেশ ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। খোঁজখবর নিয়ে অবশ্যই জরুরিভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
০৮ মে, ২০২৪

কৃষি জমিতে ইটভাটা, দেদার পুড়ছে কাঠ
রাজবাড়ীর পাংশায় ইটভাটায় প্রকাশ্যে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। দিন দিন কৃষিজমি চলে যাচ্ছে ভাটা মালিকদের দখলে। ইটভাটায় মাটিবাহী ভারী যান চলাচলে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক। ইটভাটার ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এসব যেন দেখার কেউ নেই। সরেজমিনে দেখা যায়, পাংশা উপজেলায় মোট ১৫ থেকে ১৭টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি বন্ধ রয়েছে। বেশিরভাগ ইটভাটা চালু। প্রায় প্রতিটি ভাটার পাশেই রয়েছে কৃষিজমি। অধিকাংশ ভাটায় কয়লা দিয়ে ইট পুড়ালেও কয়েকটি ভাটায় প্রকাশ্যে পুড়ানো হচ্ছে কাঁঠ। ভাটার বৈধ কাগজপত্র আছে দাবি করলেও, তা দেখাতে পারেননি ভাটার মালিকপক্ষরা। তাদের দাবি, ভাটায় কাঠ পুড়ানোর ঘটনা নতুন নয়, বিষয়টি প্রশাসনও জানে। উপজেলার কসবামাজাইল ইউনিয়নের সুবর্ণখোলা গ্রামের ভাটা এলাকার এক কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের এলাকায় কোনো ইটভাটা ছিল না। তিন বছর হলো এখানের কৃষি জমিতে একটি ভাটা হয়েছে। ফলে ধিরে ধিরে আমাদের কৃষি জমিতে ফসল কমতে শুরু করেছে। ভাটার মালিক অনেক কৃষি জমিও নিয়ে গেছে। বাহাদুরপুর ইউনিয়নের ভাটা এলাকার মো. কমির নামের এক ব্যক্তি জানান, দুইটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঝখানে কীভাবে ইটভাটা চলে, তা আমাদের জানা নেই। ভাটায় প্রকাশ্যে কাঠ পুড়িয়ে পরিবেশ দূষণ করা হচ্ছে, দেখার কেউ নেই। যশাই ইউনিয়নের ভাটা এলাকার বাসিন্দারা জানান, ইটভাটায় মাটিবাহী ভারী যান চলাচলের কারণে এলাকার রাস্তাগুলো ভেঙে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের কোনো নজর নেই। এ বিষয়ে উপজেলা পরিবেশ ও বন বিভাগে গিয়ে কোনো কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। উপজেলা পরিবেশ ও বন বিভাগের কর্মকর্তা আজিজুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফরিদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. হারুন অর রশিদ জানান, তিনি রাজবাড়ী জেলা সদর, বালিয়াকান্দি ও গোয়ালন্দ উপজেলায় অভিযান পরিচালনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। পাংশা উপজেলার ইটভার বিষয়ে ইতোমধ্যে অবগত হয়েছেন। অভিযান পরিচালনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
০৩ মে, ২০২৪

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস / ঢাবিতে পলিথিন-প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে মূকাভিনয় ও অবস্থান কর্মসূচি
বিশ্ব ধরিত্রী দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) পলিথিন ও প্লাস্টিক দূষণ বন্ধের দাবিতে মূকাভিনয় ও অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।  সোমবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে ‘প্লাস্টিক দূষণ বন্ধ করি, ধরিত্রী রক্ষা করি’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এর উদ্যোগে এ কর্মসূচি আয়োজিত হয়। কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের এর চেয়ারম্যান বদরুল আলম, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশনের সভাপতি নিয়াজ মাখদুম সিনা প্রমূখ।   প্রধান অতিথির বক্তব্যে বদরুল আলম ধরিত্রী সম্মেলনের প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ধরিত্রী সম্মেলনসহ বিভিন্ন পরিবেশবাদীদের পরামর্শের ভিত্তিতে প্রণীত প্রস্তাবনাগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন দেখতে পাচ্ছি না। যার ফলে, সাধারণ মানুষ ও এই পৃথিবীর মানুষ এবং প্রাণীকূল আজ বিপন্ন।  তিনি আরও বলেন, গবেষকরা আজ ব্যাপভাবে উদ্বিগ্ন যে, শেষ পর্যন্ত আমাদের এই ধরিত্রী টিকে থাকতে পারবে কি না। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য যারা দায়ী দেশ তারা তাদের ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করছে না। পলিথিন ও প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে গুরুত্বারোপ করে তিনি সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংগঠন এবং সাধারণ মানুষকে সচেতন হয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।  নিখিল চন্দ্র ভদ্র বলেন, পরিবেশ দূষণের মাধ্যমে আমাদের পৃথিবী দূষণ করছি, যা আমাদের গলার কাটা হয়ে উঠছে। উপকূলের দিকে তাকালে দেখতে পারবো সেখানে নদ-নদী, খাল-বিল প্লাস্টিকের কারণে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ হারাচ্ছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সুন্দরবন দূষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে প্লাস্টিক দূষণ। তাই, আমরা আমাদের আজকের এই কর্মসূচির মাধ্যমে প্লাস্টিক দূষণ বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি। বর্তমানে সরকার ও সিটি কর্পোরেশন প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আমরা এগুলোর বাস্তবায়ন দেখতে চাই। শুধু সরকার নয় বরং ব্যক্তি, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় থেকেও প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে।  মীর মোহাম্মদ আলী বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, আমরা ধরিত্রীকে এত বেশি উত্তপ্ত করেছি যে, আমরা এখন দেখছি প্রকৃতি বিরূপ আচরণ করছে। প্লাস্টিক দূষণের মাধ্যমে আমরা এই পৃথিবীকে চরমভাবে দূষিত করে ফেলছি এবং পরিবেশের ক্ষতি করেছি। যার ফলে আমরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। তাই আমরা যদি এই ধরিত্রী রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ না করতে পারি সেক্ষেত্রে আমরা আরো বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবো।  ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশনের সভাপতি নিয়াজ মাখদুম সিনা বলেন, টাকার জন্য আমরা বিভিন্ন কল-কারখানা নির্মাণ করছি এবং গাছ কেটে স্থাপনা নির্মান করছি। আমরা প্রাকৃতিক সম্পদ শোষন করলে প্রকৃতি অবশ্যই বিরূপ আচরণ করা শুরু করবে। বর্তমান সময়ে আমরা এমনটাই দেখতে পারছি।  ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এর কর্মসূচি ও গবেষণা ব্যবস্থাপক ইকবাল ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই অবস্থান কর্মসূচিটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সদস্য মামুন। সভাপতির বক্তব্যে গবেষণা ও বাস্তবায়ন বিভাগের ব্যবস্থাপক ইকবাল ফারুক বর্তমানে পৃথিবীর এই উষ্ণায়নের পরিস্থিতি তুলে ধরেন। এসময় তিনি প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে এগিয়ে আসতে সকলকে আহ্বান জানান।  উল্লেখ্য, অবস্থান কর্মসূচির আলোচনা শেষে দেশের গাছ রক্ষা এবং প্লাস্টিক দূষণ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশন দুটি মূকাভিনয় প্রদর্শন করেন।
২২ এপ্রিল, ২০২৪

নারায়ণগঞ্জে ইটভাটার ছড়াছড়ি, বাড়ছে পরিবেশ দূষণ
ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি মানবজীবন পড়েছে হুমকির মুখে। শীতলক্ষ্যা, বুড়িগঙ্গা আর ধলেশ্বরী নদীর তীরে নারায়ণগঞ্জে শত শত ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় বায়ু দূষণের মাত্রা বেড়েই চলছে। এর চুল্লির কালো ধোঁয়ায় দিন যেন রাতে পরিণত হয়। এই বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট ও চর্ম রোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন লাখো মানুষ। নারায়ণগঞ্জে এমন পরিবেশ দূষণে অনেকে আছেন মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। বায়ু দূষণের এহেন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে অনেক আগেই অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। এক দিকে অভিযান করে এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করছে পরিবেশ অধিদপ্তর। অন্যদিকে আবার চলতে দেখা যাচ্ছে এসব অবৈধ ইটাভাটা। বায়ুদূষণের ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও গাজীপুর জেলার সব অবৈধ ইটভাটা ভেঙে ফেলার নির্দেশ ছিল হাইকোর্টের। এরপর সারা দেশের অবৈধ ইটভাটা বন্ধের নির্দেশও দেওয়া হয়। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের অসংখ্য অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। সেগুলোতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযান পরিচালনা করলেও ধ্বংস হয়নি। বন্ধ হয়নি ভাটার চুল্লি ও চিমনি। ফলে বায়ু দূষণের মাত্রাই বেড়েই চলছে। পরিবেশ দূষণের বিষয়ে কোনো রকম তোয়াক্কা না করে আইন অমান্য করে অনেক ইটভাটা অবৈধভাবেই পরিচালনা করে আসছে। এর ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জ জেলায় একের পর এক অভিযান পরিচালনা করে ইটভাটার বিরুদ্ধে নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এমনকি অনেক ইটভাটা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা, বন্দর, রূপগঞ্জ, সোনারগাঁও ও আড়াইহাজারের বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী, শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে সারিসারিভাবে গড়ে উঠেছে কয়েকশো ইটভাটা। সনাতন পদ্ধতির এসব ভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে ব্যবহৃত চুল্লি থেকে নির্গত বিষাক্ত কালো ধোঁয়া বাতাসের সঙ্গে মিশে প্রতিনিয়ত পরিবেশ দূষণ করছে। জমিতে ফসল হচ্ছে না, ফলজ গাছ মরে যাচ্ছে। পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট ও চর্মরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে বছরের পর বছর ভুগছে শিশুসহ নানা বয়সের মানুষ। ফতুল্লার বক্তাবলী এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার বলেন, ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় আমরা দিন দিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। বিশেষ করে শিশুদের জ্বর, ঠান্ডা, সর্দি, কাশি তাদের লেগেই থাকে। এদের থেকে আমরা কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। আমরা এর প্রতিকার চাই। ধামগড় এলাকার মো. আরিফ জানান, বাড়ির পাশেই ইটভাটা। আর কিছু সামনেই রয়েছে বাচ্চাদের স্কুল। তারপরও কীভাবে এই অবৈধ ইটভাটা এখানে পরিচালনা করা হয়। ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় আমাদের শরীরে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। একদিকে পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান করে বন্ধ করে দিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে আবার এই ইটভাটা চালু হয়ে যাচ্ছে। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই অতিদ্রুত এই অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে আমাদের স্বাভাবিকভাবে জীবন ধারণের ব্যবস্থা করা হোক। মদনপুর এলাকার আছমা বেগম বলেন, বাড়ির ভেতর কোনো কিছু পরিষ্কার করে রাখা যায় না। ইটভাটার ধোঁয়া আর ধূলাবালিতে সব নোংরা হয়ে যায়। আমাদের শ্বাঃস নিতে কষ্ট হয়। ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় কারণে অনেক দিন ধরে শ্বাস কষ্টে ভুগছি। আমরা এই অবৈধ ইটভাটা বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে ২৪৪টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ১৩০টির অধিক অবৈধ ইটভাটা আদালতে রিট মামলা পরিচালনা করে কার্যক্রম চালু রেখেছে। জেলায় ইটভাটার লিভ টু আপিল রয়েছে ৭৯টি। মোট ২৮টি ইটভাটার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। এ ছাড়া যেসব ইটভাটার পরিবেশগত ছাড়পত্র ও ইট পোড়ানোর লাইসেন্স উভয় নেই, এরূপ ৪২টি ইটভাটাকে অবৈধ চিহ্নিত করে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সদর উপজেলার ফতুল্লায় ১২টি ইটভাটাকে ৮১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সেখানে বেশ কয়েকটি ইটভাটাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বন্দর উপজেলায় ৩৪টি ইটভাটাকে ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সর্বশেষ অভিযানে আড়াইহাজার উপজেলায় নিউ ব্রিকস ম্যাশন নামে ইটভাটাকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। সেই সঙ্গে এসব ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬টি ইটভাটার বিভিন্ন স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সদর, বন্দর ও আড়াইহাজার উপজেলায় অভিযানে মোট ৪৭টি অবৈধ ইটভাটাকে মোট ২ কোটি ৮ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এর পর থেকে নারায়ণগঞ্জে আর কোনো অবৈধ ইটভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান পরিচালনা করা হয়নি। এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির  সিনিয়র সহসভাপতি রফিউর রাব্বী বলেন, দীর্ঘ ইটভাটার কারণে যেমনই বায়ু দূষণ হচ্ছে, তেমনই ওইসব এলাকার নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। পরিবেশ বাঁচানোর দায়িত্বে যারা আছেন তারা সঠিকভাবে কাজ করছেন না। অবৈধ ইটভাটাগুলোকে ধ্বংস না করে দায়িত্বের অবহেলা করছেন। আমরা বিভিন্ন সময় লক্ষ্য করি এই অবৈধ ইটভাটার সঙ্গে জেলা প্রশাসনের অর্থনৈতিক একটা লেনদেন আছে। যার ফলে এগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ হচ্ছে না। দায়িত্ব অবহেলাকারীদের পরিবর্তনসহ প্রশাসনকে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি। অবৈধ ইটভাটার কারণে পরিবেশ দূষণ চান না ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি। ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি শওকত আলী জানান, সব ইটভাটার মালিকদের বলে দিয়েছি সরকারের সব ধরনের বিধি-নিষেধ মেনে ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। অবৈধ ইটভাটা এদেশে কেউ চালাতেও পারবে না এবং কেউ সমর্থনও করবে না। অত্যাধুনিক ও বিকল্প প্রযুক্তির ব্যবস্থা বাস্তবায়নে প্রশাসনের সহযোগিতা চান তিনি।   পরিবেশ অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ জেলার সহকারী পরিচালক শেখ মুজাহিদ বলেন, বায়ু দূষণ রোধের অভিযান এ বছরও চলমান আছে। পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে জেলা কার্যালয়ের দূষণ নিয়ন্ত্রণে যে অভিযান তা অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ১০১ দিনের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।  যেখানে অবৈধ ভাটাসহ কলকারখানার মাধ্যমে বায়ুসহ পরিবেশ দূষণ হচ্ছে, সেখানে এ অভিযান চলবে। এ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর ও বন্দর উপজেলায় ৪ দফায় অভিযান পরিচালনা করে যথাক্রমে ১২, ১৫, ১৯ ও ১টি ইটভাটাকে জরিমানা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জে ২৪৪টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ইটভাটার পরিবেশগত ছাড়পত্র ও ইট পোড়ানোর লাইসেন্স উভয় নেই এরুপ ৪২টি ইটভাটাকে অবৈধ চিহ্নিত করে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পরিবেশ দূষণ রোধের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সদর, বন্দর ও আড়াইহাজার উপজেলায় মোট ৪৭টি অবৈধ ইটভাটাকে মোট ২ কোটি ৮ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। পরিবেশ বাঁচাতে দ্রুত অবৈধ ইটভাটা ভেঙে ফেলে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি সমাজ বিশ্লেষকদের।
১৮ এপ্রিল, ২০২৪

দূষণ নিয়ন্ত্রণে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ কর্মকাণ্ডে চ্যালেঞ্জের মাত্রা অনেক বেশি হলেও মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে। মানুষের আশার জায়গা নষ্ট করা যাবে না। জনগণ কোনো অভিযোগ দিলে দ্রুততম সময়ে তার নিষ্পত্তি করতে হবে। তিনি বলেন, সরকারি কর্মসূচিগুলো যাতে পরিবেশবান্ধব হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে। গতকাল সোমবার মন্ত্রণালয়ে বিশেষ সভায় কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সাবের হোসেন বলেন, একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকের ব্যবহার রোধ এবং পরিবেশসম্মত উপাদানে ব্যানার-ফেস্টুন তৈরির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। পরিবেশবান্ধব পৌরসভা, জিরো ওয়েস্ট ভিলেজ বাস্তবায়ন করতে হবে। সভায় মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন, অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. মোশারফ হোসেন, অতিরিক্ত সচিব (পদূনি) তপন কুমার বিশ্বাস, অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) ড. ফাহমিদা খানম, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
১৬ এপ্রিল, ২০২৪

দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে ইছামতী, জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতি
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলা সদরের প্রাণকেন্দ্র দিয়ে প্রবাহিত ইছামতীর শাখা নদীর মাঝ দিয়ে একাধিক স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে মৃতপ্রায়। নদীর মাঝ দিয়ে অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণে জলাবদ্ধতায় কচুরিপানা পচে পানিদূষণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য নদীতীরবর্তী কয়েক হাজার মানুষ। দখল, দূষণ আর অবহেলায় ইছামতীর এই শাখা নদীটি অনেকটাই অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। জানা যায়, প্রায় ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য নদীটি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের ভাঙাবাড়িয়া এলাকার কালিগঙ্গা থেকে হরিরামপুর উপজেলার বলড়া ইউনিয়নের সুলতানপুর, বহুলাতুলি, কাণ্ঠাপাড়া হয়ে চালা ইউনিয়নের পূর্বখলিলপুর, পশ্চিম খলিলপুর, বয়ড়া ইউনিয়নের যাত্রাপুর, আন্ধারমানিক, দড়িকান্দি ও  রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের পিয়াজচর ও  বাহিরচর হয়ে পদ্মার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, ২০০০ সালের দিকে পদ্মার তীব্র ভাঙন রোধে এই ইছামতীর নদীর ওপর দিয়ে বাহিরচর বাজার সংলগ্ন বালুচর এলাকায় নদীর দুইপাড় ভরাট করে একটি সরু কালভার্ট ব্রিজ নির্মাণের মধ্য দিয়ে এই নদীর গতিপথ রোধ করা হয়। এরপর দড়িকান্দি ও বাহিরচর পশ্চিমপাড়া এলাকায় নদীর মাঝ দিয়ে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। এর প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে আন্ধারমানিক এলাকায় বর্তমান লেছড়াগঞ্জ বাজার সংলগ্ন নদীর মাঝ দিয়ে আরও একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়াও কাণ্ঠাপাড়া-পশ্চিম খলিলপুর সংযোগে নদীর প্রস্থ কমিয়ে একটি স্লুইস গেট নির্মাণ এবং পূর্ব খলিলপুর-বহলাতুলী সংযোগস্থলে নদীর দুইপাশ ভরাট করে মাঝখানে প্রায় পনের ফিট দৈর্ঘ্য একটি কালভার্ট ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে হরিরামপুর উপজেলার বাহিরচর পশ্চিমপাড়া থেকে সদর উপজেলার ভাঙাবাড়িয়া এলাকায় কালিগঙ্গা নদীর প্রবেশমুখ পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটারের অধিক এলাকা নিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এই ইছামতীর শাখা নদী। স্থানীয়রা আরও দাবি করেন, ইছামতীর এই শাখা নদীটিতে অপরিকল্পিতভাবে একাধিক বাঁধ দিয়ে নদীর গতিপথ রোধে পানি প্রবাহিত না হওয়ায় এবং নদীর বিভিন্ন স্থানে দখল ও ময়লা-আর্বজনায় পরিবেশ দূষণসহ চরম জনদুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। বর্ষা মৌসুমে নদীর দুকূল ভেসে কচুরিপানার স্তূপ পড়ে। নদী সচল না থাকায় বর্ষার পানি চলে যেতেই কচুরিপানা পচে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়াও নদী তীরবর্তী হাটবাজার ও বাড়ির ময়লায় পানি নষ্ট হয়ে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়ে। এতে করে এ অঞ্চলের নদী তীরবর্তী কয়েক হাজার পরিবার দুর্গন্ধে বসবাসসহ নদীর পানিও ব্যবহার করতে পারছে না। নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় শীত মৌসুমেই নদী পুরোপুরি শুকিয়ে যায়। এতে নাব্যতা সংকটে নদীটি অনেকটাই বিলুপ্তিপ্রায়। দখল, দূষণ ও সংরক্ষণের অবহেলায় হারিয়ে যেতে বসেছে নদীটির ঐতিহ্য। নদীর মাঝ দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে একাধিক বাঁধ দিয়ে নদীর পানি চলাচল বন্ধে এ অঞ্চলে কৃষিকাজ ও মৎস্য প্রজনন বৃদ্ধিসহ পানিশূন্যতায় জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। বয়ড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জাহিদুর রহমান তুষার জানান, নদীতে কচুরি পানা পচে পানি নষ্ট হয়ে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে গেছে। একটা পদ্মা ভাঙন রোধে নদীতে বেশ কয়েকবার বাঁধ দেওয়া হলেও বর্তমানে নদীটি আবার সচল করা প্রয়োজন। রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. কামাল হোসেন বলেন, এই নদীটি জলাবদ্ধতার কারণে পানি নষ্ট হয়ে গেছে। নদীটি খননের জন্য আমরা বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনের কাছে দাবি করেছি। নদীর ভেতরে তিন বাঁধ রয়েছে। যার ফলে পানি চলাচল করতে পারে না। ফলে এলসকার জনগণ পানি নিয়ে চরম ভোগান্তির মধ্যে আছে। রান্নাবান্না থেকে শুরু করে গোসলসহ অন্যান্য কাজেও এ পানি ব্যবহার করা যায় না। এমনকি গবাদিপশুও গোসল করানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তাই আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি করছি, যেন নদীটি সচল করে এর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা যায়, তার জন্য জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। এ ছাড়াও নদী বিশেষজ্ঞের পরামর্শে যতদ্রুত সম্ভব নদীটি সচল করার জন্য এলাকাবাসীও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানান। তবে এ বিষয়ে জানতে মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দীনের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।
৩১ মার্চ, ২০২৪
X