ছন্দে থাকা মেসির ইনজুরি নিয়ে দুশ্চিন্তা
নিউ জার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়ামে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে চিলির বিপক্ষে ১-০ গোলে জিতে কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে আর্জেন্টিনা। দুই ম্যাচে কোনো গোল না পেলেও দারুণ ছন্দে ছিলেন লিওনেল মেসি। কানাডার বিপক্ষে ৩টি নিশ্চিত গোল মিস করার পর, চিলির বিপক্ষে অন্তত দুটি সহজ সুযোগ নষ্ট করেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। গোল না পেলেও মেসির দারুণ ফর্ম আশা বাড়াচ্ছে আর্জেন্টিনার ভক্তদের। তবে আর্জেন্টাইন গণমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস যা জানিয়েছে, তাতে দুশ্চিন্তার ছাপ পড়বে মেসিভক্তদের কপালে। চিলির বিপক্ষে মাঠে নামার আগে পুরোপুরি ফিট ছিলেন না মেসি। এ জন্য ম্যাচের ২৪ মিনিটে চিকিৎসক দলের শরণাপন্ন হয়েছিলেন তিনি। মাঝে মধ্যে মাঠে দাঁড়িয়ে স্ট্রাচিং করতে দেখা যায় তাকে। অবশ্য এর আগে চিলি ফুটবলাররা আর্জেন্টিনার অধিনায়ককে দুবার বেশ কড়া ট্যাকল করেন। বিশেষ করে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডার গ্যাব্রিয়েল সুয়াজোর ট্যাকলটি ছিল বেশ বাজে। এরপর ডান পায়ের ঊরুতে অস্বস্তিবোধ করায় প্রাথমিক চিকিৎসা নেন তিনি। যদিও পুরো সময় মাঠে ছিলেন মেসি। তবে তাকে ঘিরে দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে। চোটের কারণে ইন্টার মায়ামির হয়ে বেশ কয়েকটি ম্যাচ খেলতে পারেননি তিনি। এমনকি জাতীয় দলের জার্সিতে খেলা হয়নি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচও। কোপা আমেরিকায় পুরোপুরি সুস্থ মেসিকে পাওয়া নিয়ে কিছুটা শঙ্কা ছিল।         View this post on Instagram                       A post shared by The Athletic | Football (@theathleticfc) সেই শঙ্কা কাটিয়ে মাঠে নামেন তিনি। খেলছিলেন ভালোই। ছিলেন দারুণ ছন্দে। তবে মহাদেশীয় এই টুর্নামেন্ট চলাকালে মেসির ইনজুরি, কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলবে লিওনেল স্কালোনির কপালে। যদিও আর্জেন্টাইন কিংবদন্তির চোট কতটা গুরুতর তা নিয়ে কিছু জানায়নি আর্জেন্টাইন গণমাধ্যম। শুধু জানানো হয়েছে দ্রুত মেসির চোটের পরীক্ষা করা হবে। ইনজুরিটা খুব বেশি বড় নয় বলে জানিয়েছে আর্জেন্টাইন অধিনায়ক নিজে।   ম্যাচ শেষে মিক্সড জোনে কথা বলার সময় তিনি বলেছেন, ‘একটু তো ভাবনা হচ্ছেই, তবে খেলাটা শেষ করতে পেরেছি। আশা করছি, আঘাতটা বড় কিছু নয়। চোট পাওয়া জায়গাটা শক্ত হয়ে আসছিল। অস্বস্তির কারণে ঠিকমতো দৌড়াতে পারছিলাম না। দেখা যাক কী হয়।’ চিলির বিপক্ষে নামার আগে শারীরিকভাবেও অসুস্থ ছিলেন বলেও জানান তিনি, ‘কয়েক দিন ধরেই গলাব্যথা, জ্বরও আছে। এ কারণেই সম্ভবত ম্যাচে একটু ভুগেছি।’ বাংলাদেশ সময় আগামী রোববার সকালে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে পেরুর বিপক্ষে লড়বে আর্জেন্টিনা। সে ম্যাচে খেলতে পারবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মেসি বলেন, ‘দেখা যাক, কতটুকু সেরে উঠি। সামনে আরও ম্যাচ আছে। সেসব নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা শুরু করব।’
২৬ জুন, ২০২৪

বাজেট ২০২৪-২৫ / বাজেট পরিকল্পনায় দুশ্চিন্তা ডলারের ঊর্ধ্বমুখী দর
আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখার পরিকল্পনায় বাগড়া দিতে পারে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়হারের অস্থিতিশীলতা। এ কারণে সরকার যে বাজেট পরিকল্পনা সাজাতে যাচ্ছে, সেখানে ডলারের দামে অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতিকে সবচেয়ে বড় অস্বস্তির কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আগামী ৬ জুন জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী প্রস্তাবিত বাজেট বক্তব্যের বেশ কিছু জায়গায় সবিস্তারে এই অস্বস্তির কথা উঠে আসবে। একই সঙ্গে ডলার দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে সরকারের সম্ভাব্য অতিরিক্ত ব্যয়ের একটি পূর্বাভাসও তুলে ধরা হবে বাজেটকেন্দ্রিক পরিকল্পনা সরকারের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনীতির নীতি বিবৃতিতে। খবর অর্থ বিভাগের সামষ্টিক অর্থনীতি শাখা সংশ্লিষ্ট সূত্রের। এ বিষয়ে শাখা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখার পরিকল্পনায় বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়হারের সম্পর্ক ওতপ্রোত। বিশেষত ডলার দামে অস্থিতিশীলতা চলতে থাকলে প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার যে ব্যয় পরিকল্পনা রাখতে যাচ্ছে, বছর শেষে সেই হিসাবে বড় ধরনের ব্যাঘাত তৈরি করবে। কারণ, ডলারের দাম যত বাড়ে বৈদেশিক ঋণের সুদাসল পরিশোধে ব্যয়, প্রকল্পজনিত আমদানি ও পরামর্শক ব্যয়, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ভর্তুকি ব্যয় এবং আমদানি দায় ও সেবার রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টির বিপরীতে সরকারের প্রচ্ছন্ন দায়জনিত ব্যয়ও তত বাড়ে। অর্থ বিভাগের হালনাগাদ তথ্য বলছে, বর্তমানে সরকার এ ধরনের বৈদেশিক দায়ের যে স্থিতি তার ৫০ শতাংশই পরিশোধ করতে হয় মার্কিন ডলারে। এর বাইরে জাপানিজ ইয়েনে পরিশোধ করা হয় ঋণ স্থিতির ২১ শতাংশ, ইউরোতে ১৫ শতাংশ, আরএমবিতে ৯ শতাংশ, ব্রিটিশ পাউন্ডে ৩ শতাংশ এবং অন্যান্য মুদ্রায় ২ শতাংশ। ডলার দামে ঊর্ধ্বগতির প্রভাব পড়েছে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সার্বিক বৈদেশিক দায় পরিশোধের হিসাবে। অর্থাৎ ব্যয় আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে যেখানে শুধু বৈদেশিক ঋণের সুদাসল পরিশোধে সরকারকে খরচ করতে হয়েছে ১৯ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা, সেখানে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ১০ মাসে এ খাতে পরিশোধ করতে হয়েছে ৩০ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে বৈদেশিক ঋণের দায় পরিশোধে খরচ বেড়েছে ১১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঋণ পরিশোধে ব্যয় হয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা এবং সুদ পরিশোধে খরচ হয়েছে ১৩ হাজার কোটি টাকা। এর মানে হচ্ছে, এই এক বছরের ব্যবধানে শুধু সুদ পরিশোধেই খরচ বেড়েছে ৭ হাজার কোটি টাকা। সবশেষ গত এক বছরে দেশে ডলারের দাম দুবার বাড়াতে হয়েছে। এর ফলে এ সময়ে ডলারের বিপরীতে দেশীয় মুদ্রা টাকার মানের ৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ অবমূল্যায়ন ঘটেছে। বর্তমানে প্রতি ডলারে ১১৭ টাকা নির্ধারিত আছে। পূর্বাভাস আছে, আগামী অর্থবছরের সেপ্টেম্বর নাগাদ এটি ১২৪ টাকা এবং জুন নাগাদ ১৩০ টাকায় ওঠে যাওয়ার। এ বাস্তবতায় সামষ্টিক অর্থনীতি বিভাগও ধারণা করছে, আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরও সরকারের বৈদেশিক সার্বিক দায়ে বৃদ্ধির প্রবণতা আরও বাড়তে পারে। বর্তমানে দেশে অনেক মেগা প্রকল্প চালু রয়েছে। এর বাইরে আছে অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্প। এসব প্রকল্পের বেশিরভাগ উপকরণ এবং পরামর্শক ব্যয় আমদানিনির্ভর। আবার বাজেট ঘাটতি মেটাতে বিদেশ থেকে সরকার যে ঋণ নেয়, সেটিও নির্ধারিত কিস্তিতে সুদাসলে পরিশোধ হয়। আবার শুধু প্রকল্প ও ঋণজনিত দায় নিয়েই সীমাবদ্ধ থাকে না সরকার, এর বাইরে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মাধ্যমে আমদানিকৃত পণ্য—সার, জ্বালানি ও খাদ্য এবং সেবার রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টির বিপরীতে প্রচ্ছন্ন দায়ও নিতে হয়। সব মিলিয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেটে সরকারের বৈদেশিক দায় পরিশোধের পারদ কতটা উচ্চতায় পৌঁছাবে, সেটি নির্ভর করছে এই ডলারের দামের গতিবিধির ওপর। এদিকে অর্থ বিভাগের সামষ্টিক অর্থনীতি শাখার বিষয়ক একটি বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, টাকার ১০ শতাংশ অবমূল্যায়নের ফলে চলতি অর্থবছর শেষে সরকারি ও সরকারি গ্যারান্টিযুক্ত ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৪০ হাজার ২০০ কোটি টাকায়। এর বিপরীতে ১০ শতাংশ বাড়লে ঋণের পরিমাণ নেমে যাবে ৩৩৩ কোটি টাকায়। বাস্তবতা হলো, অর্থবছরের ১০ মাসেই বৈদেশিক দায়ের সুদাসল পরিশোধে ব্যয় হয়ে গেছে ৩০ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা। এর মানে হচ্ছে, বছর শেষে এই হিসাব সরকারের প্রাক্কলিত লক্ষ্যমাত্রা ৪০ হাজার ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এই বাস্তবতায় আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতির আকার জিডিপির ৪.৬৭ শতাংশের মধ্যে রাখা হলেও বৈদেশিক ঋণ বা দায় পরিশোধের লক্ষ্য বাড়ানো হচ্ছে। এর পরিমাণ ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে, যা অর্থবছর শেষে বাজেটে সম্ভাব্য বরাদ্দকৃত হিসাবকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে দেশের চাহিদাকৃত মূলধনি যন্ত্রপাতি, সব ধরনের কাঁচামাল এবং নিত্যপণ্য বেসরকারি উদ্যোগে আমদানি হয়ে থাকে। ডলারের দামে ঊর্ধ্বগতি চলতে থাকলে অতিরিক্ত ব্যয়ের দরুন দেশে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতিও বেড়ে যাবে, যা বাজেটে সরকারের ৬ দশমিক ৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতির হার ধরে রাখার চেষ্টা ব্যর্থ হবে। অন্যদিকে আমদানিজনিত এই অতিরিক্ত ব্যয়ের পারদ রিজার্ভে বড় রকমের চাপ তৈরি করবে, যা সামষ্টিক অর্থনীতির সব ধরনের শৃঙ্খলাকে হুমকির মুখে ঠেলে দেবে। বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের তথ্যানুযায়ী মার্কিন ডলারের বিপরীতে এক টাকা অবমূল্যায়নের ফলে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি প্রদানের পরিমাণ ৪৭৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা বেড়ে যায়। একই সঙ্গে ভর্তুকির পাশাপাশি সরকারের প্রকল্পজনিত ব্যয় বাড়ে। ফলে দেশে টাকার যত অবমূল্যায়ন ঘটবে, প্রকল্পের ব্যয়ও তত বৃদ্ধি পাবে। জানা গেছে, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার দ্রুত অবমূল্যায়ন এবং আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে বাংলাদেশকে খাদ্য জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ বাড়িয়ে ৪০ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা করতে হয়েছিল। এই বরাদ্দ আরও বাড়িয়ে সংশোধিত বাজেটে সেটি ৫০ হাজার ৯২৬ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরও এ বাজেটে ভর্তুকি ৬৬ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়, যা বছর শেষে এ লক্ষ্যমাত্রাকেও অতিক্রম করতে পারে। অন্যদিকে চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশ সরকারি ও সরকারি গ্যারান্টিযুক্ত ঋণের পরিমাণ ৩৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকায় পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩৬ হাজার ৬০০ কোটিতে পৌঁছাবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি আর্থিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ডলারের দাম বাড়লে সরকারের সব ধরনের বৈদেশিক দায় পরিশোধের খরচ বাড়বে—সময়ের বাস্তবতা। কিন্তু এর থেকে শিক্ষা নেওয়ার অনেক বিষয় আছে। এ ধরনের অপ্রত্যাশিত ব্যয় কমিয়ে আনতে হলে সবার আগে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। এটা বাড়ানো গেলে বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার হার কমে আসবে। যতটা সম্ভব স্থানীয়ভাবে পণ্য, সেবা ও প্রযুক্তির উৎপাদন ও মানবসম্পদের দক্ষতা বাড়ানোয় মনোযোগ দিতে হবে। তাহলে প্রকল্পজনিত আমদানি ও পরামর্শক ব্যয় কমবে। সব মিলিয়ে এ ধরনের গুচ্ছ উদ্যোগ বাজেটে ঘাটতি কমাবে এবং সরকারকেও স্বস্তিতে রাখতে হবে। আমি মনে করি, এজন্য আর্থিক খাত ও ব্যবস্থাপনায় সংস্কারই হলো শেষ কথা।
২৭ মে, ২০২৪

ফার্মেসির দুর্বলতায় ওষুধ নিয়ে দুশ্চিন্তা
সারা দেশে চলছে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ। তীব্র গরমে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। গরমজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের চেম্বারে ভিড় বাড়ছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে ওষুধ সেবনের প্রয়োজনীয়তা। অস্বাভাবিক এই গরমে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ নিয়ে তৈরি হয়েছে আরেক দুশ্চিন্তা। কারণ বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের অধিকাংশ ফার্মেসিতে (দোকান) ওষুধ সংরক্ষণের জন্য উপযোগী তাপমাত্রা বজায় রাখা যাচ্ছে না। এ কারণে অনেক ক্ষেত্রে কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। শুধু এ বছর নয়, প্রতি এপ্রিল, মে ও জুন জুড়েই দেশের বেশিরভাগ এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশে যথাযথ তাপমাত্রায় সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকলে অনেক ওষুধই মানবদেহের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে বলে জানিয়েছেন ফার্মাসিস্টরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানী থেকে গ্রাম পর্যন্ত বাংলাদেশের বেশিরভাগ ওষুধের দোকান বা ফার্মেসি টিনশেডের। যেখানে সিংহভাগের রেফ্রিজারেটরের ব্যবস্থাই নেই, সেখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তো বিলাসিতা। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনা হলো, সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণ করতে হবে। আর কিছু কিছু সংবেদনশীল ওষুধ মাইনাস তাপমাত্রায়ও রাখতে হতে পারে। তা না হলে ওষুধের কার্যকারিতা নষ্ট হতে পারে। সে রকম কোনো ওষুধ সেবন করলে সুস্থতার পরিবর্তে শারীরিক ক্ষতির কারণও হতে পারে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘দেশে প্রায় ছয় মাস গড় তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকে। অথচ ওষুধ সংরক্ষণের জন্য ঘরের তাপমাত্রা হতে হবে ১৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেটা না হলে ওষুধের তিন ধরনের ক্ষতি হতে পারে। প্রথমত অতিরিক্ত তাপমাত্রায় ওষুধের কার্যকারিতা হারাতে পারে। দ্বিতীয়ত ওষুধের লাইফটাইম বা মেয়াদকাল (নির্ধারিত সময়ের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া) কমে যেতে পারে। তৃতীয়ত ওষুধে ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বাড়তে পারে।’ জাতীয় ওষুধ নীতিতেও ফার্মেসিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং রেফ্রিজারেটর থাকা বাধ্যবাধকতা। অথচ শুধু ফার্মেসি নয়, সরকারি অনেক হাসপাতালেও নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণে উদাসীনতা লক্ষ করা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রচলিত সব ধরনের ওষুধ মূলত তিনটি ভাগে বিভক্ত—বায়োমেডিকেল, অ্যান্টিবায়োটিক এবং জেনারেল মেডিসিন। এর মধ্যে সব ধরনের ইনসুলিন, প্রতিষেধক ভ্যাকসিনসহ বায়োমেডিকেল ধরনের ওষুধ ৪ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখতে হবে। ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকজনিত অ্যালার্জি, চোখ ওঠা, পেটের পীড়া, লাইম রোগ, ডায়রিয়া, যক্ষ্মা, কলেরা, মশাবাহিত ম্যালেরিয়া, মূত্রনালি প্রদাহ, যৌনবাহিত রোগ সিফিলিস, গনোরিয়া, ক্লামিডিয়া, পেনিসিলিনসহ অন্যান্য রোগের অ্যান্টিবায়োটিক সাধারণত ১২ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। এ ছাড়া দেশে প্রচলিত অন্যান্য সাধারণ ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল জাতীয় ওষুধ ১৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার নির্দেশনা রয়েছে। এর ব্যত্যয় ঘটলে ওষুধের কার্যকারিতা ও মেয়াদকাল কমে যেতে পারে। এসব ওষুধ ব্যবহার করলে জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখা না হলে অর্থ খরচ করে ওষুধ খেয়েও কাজ হবে না জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল টেকনোলজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. এ বি এম ফারুক কালবেলাকে বলেন, ‘বেশি গরমে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগেই ওষুধের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। আমরা বারবার বলে আসছি, ফার্মেসিগুলোতে যেন এসি রাখে। তা না হলে দোকানদারের অজান্তেই ওষুধের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যাবে। সাধারণ মানুষ অর্থ খরচ করে ওষুধ কিনে খেয়েও কাজে আসবে না।’ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশে নিবন্ধিত ফার্মেসি বা ওষুধের দোকান সংখ্যা ২ লাখ ৩২ হাজার ৫৩৫টি। এর মধ্যে মাত্র ৫২৮টিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রয়েছে। এর বাইরেও নিবন্ধনহীন অনেক ফার্মেসি রয়েছে। গত শনিবার দুপুরে সরেজমিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় দেখা গেছে, ওয়েলবিং, লাজফার্মা, একেএস, পারুল ফার্মেসিসহ হাতেগোনা কয়েকটি দোকানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে। এর বাইরে অন্তত অর্ধশত দোকানে নেই কোল্ড চেইন বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। তবে রেফ্রিজারেটর ব্যবস্থা রয়েছে অধিকাংশের। ঢামেক হাসপাতালের দক্ষিণ গেট সংলগ্ন একটি ফার্মেসির স্বত্বাধিকারী কালবেলাকে বলেন, ‘নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণ না করলে গুণগত মান কমতে পারে, বিষয়টি আমরাও জানি। কিন্তু প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে কেউ খরচ বাড়াতে চায় না। তাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বা এসি স্থাপন করে খরচ বাড়াতে চাই না। তবে সংবেদনশীল ওষুধ রেফ্রিজারেটরে রাখি।’ রাজধানীর ধানমন্ডি-২ নম্বর সড়কে পপুলার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বিপরীতে ধানমন্ডি ফার্মেসিতে গিয়ে কথা কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম পরিচালক জাবের আহমেদের সঙ্গে। তিনি নিজেও একজন স্নাতক ফার্মাসিস্ট। তিনি জানান, ধানমন্ডি এলাকায় তাদের দুটি শাখা আছে। দুটোতেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে। জাবের আহমেদ কালবেলাকে বলেন, ‘নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণ করা খুব জরুরি। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। অর্থ খরচ করে জীবনরক্ষাকারী ওষুধ কিনে ভোক্তা প্রতারিত হবে। তবে ব্যবসায়িক চিন্তা থেকে অনেকেই এসব বিষয়ে উদাসীন, যা মোটেও কাম্য নয়।’ ওষুধ বিপণন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে মডেল ফার্মেসি চালু করা হয়েছিল। কিন্তু সেই উদ্যোগও এখন থমকে গেছে। এ অবস্থায় সারা দেশে ফার্মেসিতে সুনির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণে নজরদারি বাড়ানোর দাবি উঠেছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুনির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণ বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে উদাসীন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। দেশের সিংহভাগ ওষুধের দোকানে নেই কোল্ড চেইন বা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণের ব্যবস্থা। এ ক্ষেত্রে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে না অধিদপ্তর। এমন পরিস্থিতিতে মাঠপর্যায়ে ওষুধের সংরক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল, ওষুধ শিল্প সমিতি, ওষুধ মালিক সমিতি, বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নয়তো অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়। জানা গেছে, প্রতিবেশী দেশ ভারতেও প্রসূতি ও নবজাতকদের মৃত্যুর ঘটনায় ওষুধের কোল্ড চেইন ঠিকমতো কাজ না করার অভিযোগ উঠেছিল। সেখানে জনস্বার্থে বিষয়টিতে বেশ কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। এতে সে দেশে ওষুধ সংরক্ষণের সার্বিক পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রে ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) ওষুধ রক্ষণাবেক্ষণ যেন নিয়ন্ত্রণ করা হয়, সেদিকে কড়া নজরদারি বজায় রাখে। সৌদি আরবের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অথরিটি (এসএফডিএ), মালদ্বীপে মালদ্বীপস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অথরিটি (এমএফডিএ), ঘানায় ফুডস অ্যান্ড ড্রাগ অথরিটি ওষুধ সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় তদারকির ব্যবস্থা করে। বাংলাদেশে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ওষুধের মান ও বিপণন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে। ওষুধ রক্ষণাবেক্ষণে অন্যান্য দেশের মতো তাদেরও আরও কার্যকরী ভূমিকা নিতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ কালবেলাকে বলেন, ‘তীব্র তাপপ্রবাহের পাশাপাশি দেশে এখন বিদ্যুৎ বিভ্রাটও রয়েছে। এ কারণে রেফ্রিজারেটরেও নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। অনেক ওষুধ আছে তাপ সংবেদনশীল। তাদের মাইনাস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। ওষুধের প্যাকেটে লেখা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে। স্টোরে এর বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করলে কার্যকারিতা থাকবে না। এতে যে সমস্যা হবে, ওষুধ খেয়েও রোগ সারবে না। কোনো ক্ষেত্রে বিপরীতও হতে পারে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। আবার সংক্রমণজনিত রোগের ওষুধের কার্যকারিতা নষ্ট হলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। সুতরাং এটা জনস্বাস্থ্যের জন্য বেশ উদ্বেগের কারণ। এ বিষয়ে জাতীয় ওষুধ নীতিমালায়ও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘শুধু ফার্মেসি নয়, সরকারি হাসপাতালের ওষুধ সংরক্ষণের স্টোরেও কিন্তু নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণের নির্দেশনা উপেক্ষা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে মনিটরিং বাড়াতে হবে। সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগের প্রতিটি পর্যায়ে যেন নীতিমালা অনুসরণ করা হয়। এই তাপমাত্রা কিন্তু ক্ষণস্থায়ী নয়। সামনে দিনে আরও বাড়তে পারে। এখনই পরিকল্পনামাফিক কাজ না করা হলে আগামীতে ওষুধ কার্যকারিতা নষ্টের ফলে বড় ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।’ জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন কালবেলাকে বলেন, ‘সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওষুধ সংরক্ষণের কথা আমরা জানি। সারা দেশে ফার্মেসিগুলোর বেশিরভাগ নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই কথাটি সত্য। এখন তাপপ্রবাহ চলছে। এতে ফার্মেসিতে ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে খোঁজ নিতে বলব। তারা যেন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।’ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আসরাফ হোসেন কালবেলাকে বলেন, ‘ফার্মেসিতে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণ ও বিপণনের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মনিটরিং করা হচ্ছে। বিজ্ঞানসম্মত ধারণা হলো, অন্তত ছয় মাস পর্যন্ত ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও সাধারণ ওষুধ সংরক্ষণ করা যায়। এর চেয়ে বেশি সময় ধরে ৪০ ডিগ্রিতে সংরক্ষণ করা হলে সমস্যা হতে পারে।’ তিনি বলেন, বর্তমান তাপমাত্রা তো সাময়িক। তার পরও সারা দেশের ফার্মেসিগুলোতে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। দাবদাহের এই সময়ে সার্বক্ষণিক ফ্যান চালিয়ে রাখতে হবে। ফ্রিজিং ব্যবস্থা বৃদ্ধি করতে হবে। দিনের শুরুতে দোকানের সামনে আলো প্রতিরোধের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে করে ওষুধের গায়ে সরাসরি সূর্যের তাপ না লাগে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কথাও বলা হচ্ছে। তবে এক দিনে তো সব শুধরে দেওয়া যায় না। ধীরে ধীরে সবাইকে সচেতনতার আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে মডেল ফার্মেসি কনসেপ্টটা আরও ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।’
৩০ এপ্রিল, ২০২৪

পাহাড় নিয়ে নতুন দুশ্চিন্তা
শান্তি আলোচনা চলাকালেই দুটি ব্যাংকের তিনটি শাখায় হামলা হয়েছে। টাকা ও অস্ত্র লুট করার পাশাপাশি অপহরণ করা হয় একটি শাখার ম্যানেজারকে। পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টকে (কেএনএফ) এ ঘটনায় দায়ী করছে সরকার। তারা বান্দরবানের ৯টি উপজেলা নিয়ে স্বায়ত্তশাসনের দাবি করে আসছে। কেএনএফ এই হামলা ও অপহরণের মধ্য দিয়ে যতটা না টাকা-অস্ত্র লুট করতে চেয়েছে, তার চেয়ে বেশি নিজেদের অবস্থান ও সক্ষমতার জানান দিতে চেয়েছে বলে মনে করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, পাহাড়ে এই হামলা সূক্ষ্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেছে কেএনএফ। পুরোপুরি সফল হতে না পারলেও নিজেদের আবার আলোচনায় আনতে পেরেছে তারা, যা নতুন করে দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। এই হামলার আগাম তথ্য কারও কাছে না থাকাকে চরম গোয়েন্দা ব্যর্থতা বলছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। পাহাড়ে যাদের অপারেশনাল সক্ষমতা রয়েছে, তাদের হাতেই আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি উঠছে। পাহাড়ের নিরাপত্তা বিষয়ে এক্সপার্টরা বান্দরবানে জড়ো হচ্ছেন বলে জানা গেছে। ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় কেএনএফের সঙ্গে সব ধরনের আলোচনা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে সরকার। এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সোনালী ব্যাংকের রুমা শাখার ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে উদ্ধার করে র‌্যাব। পুলিশ ও আনসারের লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধারে অভিযানের কথা জানিয়েছেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্চ ডিআইজি নুরে আলম মিনা। গত মঙ্গলবার রাতে রুমা শহরে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে সোনালী ব্যাংকের শাখায় হামলা চালায় অস্ত্রধারী কেএনএফ সদস্যরা। মসজিদ থেকে রুমা শাখার ম্যানেজার নেজাম উদ্দীন ধরে ব্যাংকে নিয়ে যায় তারা। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মুসল্লিদের। ব্যাংক ম্যানেজারের মাধ্যমে ভল্টের টাকা নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ম্যানেজারের চতুরায় তা পারেনি অস্ত্রধারীরা। তবে ওই এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও আনসার সদস্যদের অস্ত্র নিয়ে যায় কেএনএফ সদস্যরা। সঙ্গে অপহরণ করে নেজাম উদ্দীনকে। পরদিন দুপুরে থানচিতে দুটি ব্যাংকের শাখায় হানা দিয়ে কয়েক লাখ টাকা লুটে নেয় তারা। বান্দরবান পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারীরা দুটি এসএমজি ও এর ৬০টি গুলি, ৮টি চীনা রাইফেল ও ৩২০টি গুলি, ৪টি শটগান ও ৩৫টি কার্তুজ নিয়ে গেছে। ব্যাংক লুটে জড়িতদের কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল বলেন, আমরা দেখছি, ব্যবস্থা নিচ্ছি। সব কিছুই করব, আগে সব কিছু জেনে নিচ্ছি। এর পেছনে কারা আছে, কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না, কোনো ধরনের নাশকতা কিংবা কোনো পরিকল্পনা আছে কি না—এগুলো দেখে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। আমরা কোনো ছাড় দেব না। কঠিন ব্যবস্থা নেব। এখানে ভূ-রাজনৈতিক কোনো ব্যাপার আছে কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের কাছে এখনো এ ধরনের কোনো তথ্য নেই। অনেক কিছুই হতে পারে কিন্তু না জেনে, তথ্য না পেয়ে আমরা বলতে পারছি না। পরপর দুদিন ব্যাংকের হামলা, অস্ত্র-টাকা লুট ও ম্যানেজার অপহরণের পর কেএনএফের সঙ্গে সব ধরনের আলোচনা বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা পরিষদের শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি। গতকাল সকালে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সদস্যরা এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন। এর আগে বুধবার শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি এক জরুরি সভা আহ্বান করে। সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত তুলে ধরার জন্য সংবাদ সম্মেলন করা হয়। কেএনএফের সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য ২০২৩ সালের ২৯ মে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমার নেতৃত্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সঙ্গে কেএনএফের কয়েক দফা অনলাইনে ও দুই দফা সশরীর বৈঠক হয়েছে। গত বছরের ৫ নভেম্বর ও গত ৫ মার্চ অনুষ্ঠিত সশরীর দুই দফা বৈঠকে দুটি সমঝোতা স্মারকও সই হয়। এতে তারা চাঁদাবাজি, অপহরণ, লুটপাটসহ সব ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল; কিন্তু প্রতিশ্রুতির পর তারা রুমা ও থানচিতে সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতি করে। কমিটি মনে করে, তাদের অতিসাম্প্রতিক ঘটনায় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির শান্তি আলোচনা বৈঠকসহ সব ধরনের কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এ অবস্থায় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি কেএনএফের সঙ্গে কোনো ধরনের বৈঠক করবে না। কেএনএফ প্রথম আলোচনায় আসে ২০২২ সালের জুন মাসে। তাদের হাতে রাঙামাটির বিলাইছড়িতে ৩ জন নিহত হন। এরপর একের পর এক হত্যা, লুট, অপহরণে নাম আসে কেএনএফের। শুধু ২০২৩ সালেই ৬ সেনা সদস্যসহ ২০ জনের বেশি তাদের গুলিতে প্রাণ হারান। অপহরণের ঘটনা ঘটছিল নিয়মিত। এরই মধ্যে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়াকে টাকার বিনিময়ে পার্বত্য এলাকায় আশ্রয়, অস্ত্র সরবরাহ ও প্রশিক্ষণের অভিযোগ ওঠে কেএনএফের বিরুদ্ধে। এই প্রশিক্ষণের জন্য তারা তিন বছর মেয়াদি চুক্তি করেছিল। র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল-মঈন জানান, জঙ্গিরা পাহাড়ে আশ্রয় নিয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে বিষয়টি জানতে পারার পর আমরা সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় অভিযান শুরু করি। ধারাবাহিক অভিযানে তাদের ট্রেনিং সেন্টার শনাক্ত, বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ শতাধিক জঙ্গি সংগঠনের সদস্য ও কুকি-চিনের ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আমাদের অভিযানের ফলে অনেকটা কোণঠাসা ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। তাদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা চলছিল। এ কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কুকি-চিনের বিরুদ্ধে অভিযান বন্ধ রাখে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, কেএনএফেএর নেতৃত্ব দিচ্ছেন নাথান লনচও বম। তার বাড়ি রুমার ইডন বমপাড়া। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। ছাত্রাবস্থায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে ২০০৮ সালে কুকি-চিন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (কেএনডিও) নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৯ সালের দিকে এই নাম পাল্টে করা হয় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট। সংগঠনটি রাঙামাটি ও বান্দরবানের যে ৯টি উপজেলা নিয়ে স্বায়ত্তশাসিত রাজ্য গঠনের ঘোষণা দিয়েছে, এর মধ্যে আছে বান্দরবানের রুমা, থানচি, লামা, রোয়াংছড়ি ও আলীকদম উপজেলা; রাঙামাটির সাজেক উপত্যকা, বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলা। তাদের ঘোষিত রাজ্যে ৫ সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করতে পারবে। তারা হলো বম, খুমি, খিয়াং, পাংখোয়া ও লুসাই। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, পাহাড়ে এই পাঁচ সম্প্রদায়ের লোকসংখ্যা ২৫ হাজারের বেশি। কেএনএফের সশস্ত্র সদস্য হাজারের বেশি। ব্যাংক তথা বান্দরবানের ওই এলাকাগুলোতে নিরাপত্তার চরম ঘাটতি ছিল বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি কালবেলাকে বলেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো থাকলে এমনটা হতো না। নিরাপত্তা বলতে কিছুই নেই। পুলিশ তো এই ধরনের এলাকায় নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য বিশেষায়িতভাবে প্রশিক্ষিত নয়। কুকি-চিনের উদ্ভব যেখানে হয়েছে, সেখানে দাঁড় করিয়ে দিলেই নিরাপত্তা হয় না। আমি নিজে ওই এলাকায় দায়িত্ব পালন করেছি। সেনাবাহিনীকে উঠিয়ে আনার পর পুলিশ-র্যাব দিয়ে নিরাপত্তা দেওয়া যাচ্ছে না। তারা যে বিষয়ে পারদর্শী, এটা সেই কাজ নয়। উপজেলা শহরে সন্ধ্যায় লাইট বন্ধ করে হামলা করেছে। তাহলে সেটা পুলিশ টের পায়নি কেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা সঠিক থাকলে গোলাগুলি হতো, এত সহজে সন্ত্রাসীরা তাদের কাজ করে চলে যেতে পারত না। পাহাড়ে নিজের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামরিক বাহিনী যখন মোতায়েন ছিল, তখন এসব এলাকায় সব সময় সেনাবাহিনী থাকত, কমিউনিটি পেট্রোলিং থাকত। বহু বছর ওখানে থাকার কারণে আমরা গ্রাউন্ড থেকে তথ্য পেতাম। কার ছেলে কোথায় আছে, কী করছে, কার মুভমেন্ট সন্দেহজনক, সব তথ্য আমরা পেতাম। আমাদের গ্রাউন্ড লেভেলে স্ট্রং ইন্টেল ছিল। কে এন এফ এই হামলাকে নতুন করে দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন তিনি। বান্দরবানের এই এলাকাগুলোতে সার্বক্ষণিক নজরদারির দরকার। সেজন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করা দরকার বলে জানান তিনি। সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, সার্বক্ষণিক নজরদারির জন্য যা যা করার দরকার তাই সরকারকে করতে হবে। তারা যে রাস্তায় আসে, সেই রাস্তায় যায় না। ফলে সেভাবে প্রস্তুতি রাখা লাগবে। এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সেনাবাহিনীর বিকল্প নেই। আশপাশে কয়েকটি জায়গায় ক্যান্টনমেন্ট আছে। সেনাবাহিনী এই এলাকায় কাজ করে অভ্যস্ত। ফলে এখানে তাদের কাজ করা সহজ।
০৫ এপ্রিল, ২০২৪

এক পা নিয়ে জন্ম নিল শিশু, চিকিৎসা নিয়ে দুশ্চিন্তা
দিনাজপুরের বিরামপুর পৌর শহরের একটি ক্লিনিকে যমজ সন্তান প্রসব করেছেন এক নারী। এর মধ্যে এক নবজাতকের একটি পা রয়েছে, যাতে সাতটি আঙুল। শিশুটির মলদ্বার-যৌনাঙ্গও নেই। গত বুধবার বিকেল ৪টার দিকে পৌর শহরের মডার্ন হেলথ কেয়ার ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ওই শিশুর জন্ম হয়। প্রসূতি তাসলিমা বেগমের বাড়ি দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার শালখুরিয়া গ্রামে। তাসলিমার স্বামী মাহফুজুল ইসলাম পেশায় ভ্যানচালক। শিশুটির চিকিৎসা করানো নিয়ে চিন্তার পড়েছেন তিনি। দানশীল মানুষের কাছে চেয়েছেন সাহায্য-সহযোগিতা। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপক সুমন চন্দ্রপাল কালবেলাকে বলেন, বুধবার বিকেল ৩টার দিকে তাসলিমা বেগমকে তার পরিবারের লোকজন অপারেশনের জন্য ক্লিনিকে নিয়ে আসে। শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিকেল ৪টার দিকে ক্লিনিকের চিকিৎসক ও উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (মা ও শিশু স্বাস্থ্য) ডা. তাহেরা খাতুন অস্ত্রোপচার করেন। প্রথমে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। তার ওজন ১ কেজি ৯০০ গ্রাম, পরে দ্বিতীয় যে সন্তানের জন্ম হয়, তার একটি পা, মলদ্বার ও যৌনাঙ্গ নেই। এখন পর্যন্ত দুটি সন্তানই সুস্থ রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মা ও শিশুবিষয়ক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তাহেরা খাতুন কালবেলাকে বলেন, এ ধরনের শিশুর জন্ম সাধারণত জেনেটিক্যাল (জিনগত) সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। তারা সাধারণত বাঁচে না। শিশুটির উন্নত চিকিৎসার জন্য দিনাজপুরের এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার জন্য মা-বাবাকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শিশুটির বাবা ভ্যানচালক মাহফুজুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, আমার বাড়ি নবাবগঞ্জ উপজেলার শালখুরিয়া গ্রামে। ভ্যানের চাকা ঘুরলে আমার সংসারের মানুষগুলার মুখে দুমুঠো ভাত জোটে, এখন এ শিশুকে নিয়ে কী করব সেটি বুঝতে পারছি না। দানশীল মানুষ সাহায্য-সহযোগিতা করলে হয়তো আমার শিশুকে ভালো চিকিৎসা করে বাঁচানো যাবে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুজহাত নাসনিম আওন কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে জানতে পেরে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক শাকিল আহম্মেদের নির্দেশে ওই বিকলাঙ্গ শিশুর উন্নত চিকিৎসার জন্য তার বাবাকে আর্থিক সহায়তা করা হয়।
২৯ মার্চ, ২০২৪

প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরলে কেটে যায় দুশ্চিন্তা
আলিঙ্গন করা বা জড়িয়ে ধরা হল ম্যাজিকের মতো। প্রিয় মানুষকে ভালেবাসা বোঝানোর জন্য এর চেয়ে ভালো উপায় বোধ হয় আর নেই। প্রিয় মানুষটির বুকে মাথা রাখলেই হৃৎস্পন্দনের মোর্স কোড অস্ফুট ভাষায় বলতে থাকে—ভালোবাসি, ভালোবাসি। আপনার আলতো ছোঁয়াই বুঝিয়ে দেবে প্রেমের প্রতি আপনি কতটা বিশ্বস্ত। শধু প্রেমই নয় জড়িয়ে ধরলে শরীরও ভালো থাকে। প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরলে দূর হয় বেশ কয়েকটি শারীরিক সমস্যা। একদল ব্রিটিশ মনোবিজ্ঞানীর মতে, ৫ থেকে ১০ সেকেন্ডের আলিঙ্গনই আদর্শ। গোল্ডস্মিথ ইউনিভার্সিটির গবেষকরা বলছেন, ছোট আলিঙ্গনের তুলনায় (মাত্র এক সেকেন্ড স্থায়ী) দীর্ঘ আলিঙ্গন তাৎক্ষণিক আনন্দ দেয়। চাপ কমে যায়। মন ভরে ওঠে ভালোবাসায়। আরও অনেক উপকার রয়েছে আলিঙ্গনের। জেনে নিন সেগুলো কী কী- ১. নানা কারণে ভুল বোঝাবুঝি চলছে সঙ্গীর সঙ্গে? প্রিয় মানুষকে জড়িয়ে ধরুন। দেখবেন মনের কোণে জমে থাকা ভার কমে গিয়েছে। ২. প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরলে মন শান্ত হয়। রাগ কমে আসে ধীরে ধীরে। ৩. নানা ধারণের দুশ্চিন্তা লেগেই আছে জীবনে। এগুলো স্ট্রেস বাড়ায়। প্রিয় মানুষকে জড়িয়ে ধরলে কমে যাবে স্ট্রেস। কারণ আলিঙ্গন করটিসলের মাত্রা হ্রাস করে, এটি হলো স্ট্রেস হরমোন। আলিঙ্গন মনে করিয়ে দেয় যে আমরা নিরাপদ আছি। অন্যের কাছে প্রিয় এবং আমরা একা নই। ৪. আলিঙ্গন রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে। এটি শরীরের নরম টিস্যুগুলোতে রক্ত প্রবাহ বাড়ায়, যা পেশী শিথিল করতে সহায়তা করে। ৫. আলিঙ্গন মনের ভয় দূর করে। প্রিয় মানুষটিকে আলিঙ্গন করলে মন থেকে সব ভয় দূর হয়ে যায়। ৬. প্রিয় মানুষকে আলিঙ্গন করলে মন ভালো থাকে। কারণ ভালোবাসার মানুষকে জড়িয়ে ধরলে সেরোটোনিন হরমোন নিঃসৃত হয়। মেজাজ ভালো রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে এই হরমোন।
১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

কোটি টাকার হাটে বর্ষা মৌসুম নিয়ে দুশ্চিন্তা
সরকারের রাজস্ব আদায়ের বড় একটি খাত হচ্ছে হাটবাজার। যে হাট থেকে কোটি টাকা রাজস্ব আদায়, অথচ সেই হাটেরই জরাজীর্ণ অবস্থা। বলছি নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার আবাদপুকুর হাটের কথা। বর্তমানে সংস্কারের অভাবে হাটটি বেহাল। বছরের পর বছর বরাদ্দকৃত নির্ধারিত অর্থের সঠিক ব্যবহার না করায় বৃহত্তম আবাদপুকুর হাটের এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের মধ্যে কেনাবেচা করতে হচ্ছে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের। স্থানীয়রা বলছেন, জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম ধান ও পশুর হাট হচ্ছে উপজেলার আবাদপুকুর হাট। মাছ-মাংস ও সবজি বিক্রেতাদের জন্য কয়েকটি শেড নির্মাণ করে দেওয়া হলেও বর্তমানে এই হাটের মাছপট্টির শেডগুলোর টিন মরিচায় নষ্ট হয়ে গেছে। বছরের পর বছর মেরামত না করায় বেহাল হয়ে পড়ে আছে। সরেজমিন দেখা গেছে, হাটের শেডগুলোর অবস্থা জরাজীর্ণ। কোথাও টিনের চালা ভেঙে পড়ে আছে। আবার কোথাও টিনের চালা নেই, ফাঁকা পড়ে আছে। তাই কোনো কোনো ব্যবসায়ী তাঁবু টাঙিয়ে ব্যবসা করছেন। সপ্তাহের রোববার ও বুধবার হাটের দিনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত ক্রেতা-বিক্রেতাদের সমাগম ঘঠে এই হাটে। আর সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে বসে বাজার। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিতে ভিজে আর শুষ্ক মৌসুমে রোদে পুড়ে বেচাকেনা করতে হয় হাটে আসা মানুষের। এ ছাড়া হাটে একটি ব্যবহারযোগ্য গণশৌচাগার না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় সবাইকে। হাটের মধ্যে চলাচলের জন্য রাস্তা ও পানি নিষ্কাশনের জন্য দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থা দুর্ভোগের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। খোঁজ নিয়ে যায়, ২০২২ সালে এই হাটটির ইজারামূল্য ছিল ৮২ লাখ টাকা। এ ছাড়া ভ্যাট ও অন্যান্য খাত মিলে সরকার এই হাট থেকে রাজস্ব হিসেবে কোটি টাকা আয় করে আসছে। সরকারি নিয়ম অনুসারে প্রতি বছর সরকারি ইজারা মূল্যের শতকরা ১৫ শতাংশ অর্থ হাটের সংস্কার, মেরামত ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজে ব্যয়ের নিয়ম থাকলেও উপজেলা প্রশাসন তা মানছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। হাটের কসাই রশিদুল শেখ বলেন, ‘ভাই, শেডটা ঠিক করার ব্যবস্থা করে দেন। আমার দাদা মোশাররফ কসাই ও বাবা সোলেমান কসাই ব্যবসা করেছেন। আমি আমার বাবার সঙ্গে ভাগা দিয়ে মাংস বিক্রি করেছি। এখানে আমরা সাতজন কসাই ব্যবসা করি। তবে সামনে বর্ষাকাল, তাই দুশ্চিন্তা এখন থেকেই। কারণ বৃষ্টি শুরু হলে মাংস ভিজে যাবে। অথচ আমরা ঠিকমতো হাটের টোল দিয়ে থাকি।’ তার মতো হাটে আসা কবুতর ব্যবসায়ী ও অন্যান ব্যবসায়ীরাও একই কথা বললেন। হাটের ইজারাদার হেলাল উদ্দিন হেলু মেম্বার বলেন, বর্তমানে হাটের প্রতিটি অংশের শেডের চরম দশা। অনেকে আবার নিজেদের অর্থ দিয়ে ভেঙে যাওয়া শেডগুলো মেরামত করার চেষ্টা করছেন। উপজেলা প্রশাসনের কাছে বিগত কয়েক বছরের হাটের ইজারা থেকে বরাদ্দকৃত যে পরিমাণ অর্থ জমে আছে সেই অর্থ দিয়ে যদি হাটের আধুনিকায়নের কাজ করা হয় সেটাই আমাদের জন্য অনেক। কর্মকর্তারা ইচ্ছে করলেই হাটের এমন দশা থেকে আমাদেরকে মুক্ত করতে পারেন। তাই এমন জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির প্রতি দ্রুত সুদৃষ্টি দেওয়ার অনুরোধ করছি। উপজেলা প্রকৌশলী ইসমাইল হোসেন বলেন, গত বছর তৎকালীন ইউএনও শাহাদাত হুসেইনের নির্দেশে উপজেলার সব হাট ও বাজারের আধুনিকায়নের কাজের জরিপ সম্পন্ন করে জমা দেওয়া হয়েছে। এরপর তিনি বদলি হওয়ার কারণে আর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এই বাবদ অর্থ ইউএনওর নিজস্ব অ্যাকাউন্টে জমা থাকে এবং সেই অর্থ খরচের বিষয়ে একমাত্র তিনিই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। তাই এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যে কোনো সময় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে আমাকে জানালেই দরপত্রের মাধ্যমে কাজ শুরু করা যেতে পারে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে তাবাসসুম বলেন, আমি গত বছরের অক্টোবরে এই উপজেলায় যোগদান করেছি। তাই এই বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে দ্রুতই পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

ইসলামে আলো / দুশ্চিন্তা দূর করার আমল
নানাবিধ দুশ্চিন্তা ও হতাশার সহজ সমাধান খুঁজতে গিয়ে অন্যরা দিকভ্রান্ত হয়ে পড়লেও মুমিনগণ মাথা অবনত করে মহান আল্লাহর দরবারে। পৃথিবীতে এমন কোনো রোগ নেই, যার চিকিৎসা আল্লাহতায়ালা দেননি। মানসিক চাপসহ নানাবিধ রোগবালাই থেকে উত্তরণে ইসলামী ব্যবস্থা অত্যন্ত কার্যকর। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘জেনে রেখ, আল্লাহর স্মরণে হৃদয়সমূহ প্রশান্ত হয়।’ (সুরা রাদ, আয়াত : ২৮)। দুশ্চিন্তা ও মানসিক অশান্তি দূর করার প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে আল্লাহর ওপর ভরসা করা। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল বা ভরসা করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক, আয়াত : ৩)। আল্লাহর ওপর নির্ভরশীলতা ও পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস স্থাপনে তার মনোবল বেড়ে যায়। ফলে সে অন্তরে খুঁজে পায় এক অনাবিল সুখ ও পরিতুষ্টি। সুতরাং যে ব্যক্তি দুনিয়ায় সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল করতে জানে তার জন্য কোনো চিন্তা নেই। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, আমি বান্দার সঙ্গে ওই রূপ করি, যে রূপ বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে।’ (বুখারি)। মানসিক চাপ কমাতে নিয়মিত দোয়া করাও উচিত। কারণ হাদিসে দোয়াকে ইবাদতের মূল বলা হয়েছে। দোয়া বা প্রার্থনা করলে, কোনো কিছু চাইলে মহান আল্লাহ খুশি হন। না করলে বরং অসন্তুষ্ট হন। যে কোনো বিপদ-মুসিবত, পেরেশানির সময় নামাজের মাধ্যমেই প্রকৃত প্রশান্তি লাভ করা যায়। কেননা নামাজের মাধ্যমেই বান্দা মহান আল্লাহর সাহায্য লাভ করে থাকেন। তাই মানসিক প্রশান্তি লাভে নামাজের ব্যাপারে যত্নবান হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা নামাজ ও ধৈর্যের মাধ্যমে আমার নিকটে সাহায্য প্রার্থনা কর। অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন। কিন্তু সেসব বিনয়ী লোকদের পক্ষেই তা সম্ভব।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ৪৫)। রাসূলুল্লাহ (সা.) কোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হলে নামাজ আদায় করতেন।’ (আবু দাউদ)। সাহাবায়ে কেরামও এ আমলে অভ্যস্ত ছিলেন। ছোট থেকে ছোট কোনো বিষয়ের জন্যও তারা নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে বেশি বেশি ইসতেগফারের বিকল্প নেই। যেসব কারণে মানুষ চাপে পড়ে, তন্মধ্যে অন্যায়-অপরাধ বেশি করা, অর্থ কষ্টে থাকা, সন্তানসন্ততি না থাকা, জীবিকার অপ্রতুলতা, বেকারত্ব সমস্যা, সামাজিক সমস্যা, পারিবারিক সমস্যা ইত্যাদি। এর সমাধানে কোরআনের নির্দেশনা হলো ইসতেগফার করা। ইসতেগফারেই মানুষ উল্লিখিত সমস্যা থেকে সামাধন খুঁজে পায় বলে ঘোষণা করেছেন মহান আল্লাহ। কোরআনে এসেছে, ‘অতঃপর বলেছি, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দেবেন। তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তানসন্ততি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদীনালা প্রবাহিত করবেন।’ (সুরা নুহ, আয়াত : ১০-১২)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইসতেগফার করবে, আল্লাহতায়ালা তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন। তার সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ (সুনানে আবু দাউদ)। মিজানুর রহমান
২৬ জানুয়ারি, ২০২৪

আ.লীগের দুশ্চিন্তা তৃণমূলের সংঘাত
জাতীয় নির্বাচনের পর কিছুদিনের মধ্যে সারা দেশে অনুষ্ঠিত হবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। যে কোনো সময় তপশিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। স্থানীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভোটের আগে তৃণমূলে দলীয় কোন্দল নিয়ে চিন্তিত আওয়ামী লীগ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ উন্মুক্ত রাখা যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্ষমতাসীন দলের জন্য। অনেক এলাকায়ই চরম বিভক্ত হয়ে পড়েছে সংগঠন। নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তি বেড়েই চলেছে। কোথাও কোথাও হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পাল্টাপাল্টি মামলা। আসন্ন উপজেলা নির্বাচন ঘিরে এই দ্বন্দ্ব ও সংঘাত আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা কেন্দ্রীয় নেতাদের। পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কোন্দল নিরসনে শিগগির জেলা-উপজেলায় বর্ধিত সভা এবং কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের সফরের মাধ্যমে সংকট সমাধানের চিন্তা-ভাবনা করছে দলটি। তার পরও কাজ না হলে নেতাদের পদ থেকে অব্যাহতি, কমিটি ভেঙে দেওয়া এমনকি বহিষ্কারের মতো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও নিতে পারে আওয়ামী লীগ। কোন্দলে লিপ্তদের এভাবে চাপে রাখার কৌশল নিতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘাত এড়াতে জাতীয় নির্বাচনের মতো বিএনপি অংশ না নিলে উপজেলা নির্বাচনে দলীয়ভাবে প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে আওয়ামী লীগ। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন জমজমাট করতে দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনে অংশ নেন কয়েকশ স্বতন্ত্র প্রার্থী। এর মধ্য দলের বর্তমান এমপি, মন্ত্রিসভার সদস্যসহ দলের হেভিওয়েট প্রার্থীদের হারিয়ে ৬২ জন নির্বাচিত হন। এর মধ্যে বেশিরভাগ নির্বাচনী এলাকায়ই দলের মধ্যে চরম বিভক্তি তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া নৌকার প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন, এমন অনেক এলাকায়ও স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ঘিরে দলে বিবদমান দুটি ধারা তৈরি হয়েছে। এই বিভক্তি উপজেলা নির্বাচনে আরও প্রকট হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা নীতিনির্ধারকদের। নেতাকর্মীদের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব ও বিভেদ আঁচ করতে পেরেই প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সবাইকে মনোমালিন্য, দুঃখ-বেদনা, যা-ই থাকুক না কেন তা ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে নির্দেশ দেন। শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনে হার-জিত, কষ্ট ভুলে এক হতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে, জনগণের সঙ্গে, জনগণের কল্যাণে, মানুষের জন্য। দলীয় প্রধানের এই আহ্বানে দলের ঐক্য ফিরিয়ে আনতে কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে ভাবছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। তবুও দলীয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে শিগগির কর্মসূচি ঘোষণা করবে দলটি। প্রাথমিকভাবে নিজেদের মধ্যে কোন্দল-সংঘাত বন্ধে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা-উপজেলার নেতাদের দিচ্ছেন বিভিন্ন নির্দেশনা। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য কালবেলাকে বলেন, দ্বন্দ্ব কোন্দলের প্রভাব যেন উপজেলা নির্বাচনে না পড়ে সেজন্য চেষ্টা করছি। উপজেলা নির্বাচনের আগেই এসব বিভেদ দূর করা হবে। দলীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, আরও বিশদ আকারে কর্মসূচি নেওয়া হবে। জানা গেছে, নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে দলীয় কোন্দল আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। দশ দিন পেরিয়ে গেলেও সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হুমকি, এর জেরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মুন্সীগঞ্জ নাটোর, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ঝিনাইদহ, রংপুর, বরগুনা, বরিশাল, চাঁপাইনবাগঞ্জ, নওগাঁ, পঞ্চগড়সহ অন্তত দুই ডজন জেলায় নির্বাচন-পরবর্তী হামলা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনকেন্দ্রিক এসব দ্বন্দ্ব সংঘাতে চারজন নিহত ও আহত হয় কয়েকশ মানুষ। যাদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থক। গতকাল মঙ্গলবার, বরিশাল-৪ আসনের হিজলায় নির্বাচনী বিরোধকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। একই দিন নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে রূপগঞ্জ উপজেলায় নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে অন্তত সাতজন আহত হয়। আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত গোলাম দস্তগীর গাজী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভূঁইয়ার কর্মী-সমর্থকরা এই সংঘাতে জড়ায়। এ ছাড়া, গত এক সপ্তাহে নোয়াখালী, ঝিনাইদহ, নেত্রকোনা ও মাদারীপুরে চারজন নিহত হন। জানা গেছে, নির্বাচনে কমিশনের তালিকা অনুযায়ী ৪৮৫টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনযোগ্য রয়েছে, যেগুলো নির্বাচনের পর মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে বা মেয়াদ পূর্ণ হতে চলেছে। গত উপজেলা নির্বাচনের মতো এবারও কয়েকধাপে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মার্চ মাসের ১০ তারিখে রোজার পূর্বেই শুরু হবে উপজেলা নির্বাচন। এ উপলক্ষে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে জাতীয় নির্বাচনেও দলীয় প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন এসব প্রার্থীরা। সারা দেশের বিভিন্ন উপজেলাগুলোতে এরই মধ্য পোস্টার সাঁটানো, নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ, ভোটারদের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ বৃদ্ধির কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের এক নেতা কালবেলাকে বলেন, জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অংশগ্রহণের অনুমতির মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে দলের কোন্দলকে উসকে দেওয়া হয়েছে। এর প্রভাব উপজেলা নির্বাচনসহ সব স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে পড়বে। এজন্য দলকে ভুগতে হতে পারে। নেতারা বলেন, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হতে নির্দেশ দিয়েছেন, হার-জিত মেনে নিয়ে কাজ শুরু করতে বলেছেন। সভাপতির এমন ঘোষণার পরও দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘাত ও দ্বন্দ্ব তীব্র আকার ধারণ করেছে। মার্চে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এই নির্বাচন সামনে রেখে দ্বন্দ্ব-সংঘাত মিটিয়ে ফেলা জরুরি। সেটি করতে না পারলে দলের তৃণমূল পর্যায়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। এমনকি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটতে পারে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন কালবেলাকে বলেন, দলের মধ্য কিছু দ্বন্দ্ব ও প্রতিযোগিতা থাকতে পারে, তবে সেটা যেন প্রতিহিংসায় রূপান্তরিত না হয়। এরকম ঘটলে কঠোর হস্তে দমন করবে। নেতাকর্মীরা যদি সংঘাতের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দেয়, তাহলেও আওয়ামী লীগ দলীয় শৃঙ্খলা ফেরাতে যা করার দরকার তাই করবে। সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ দলের এসব কোন্দল ও দ্বন্দ্ব মেটাতে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য এক যৌথ সভার মাধ্যমে দলের সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনগুলোকে দলীয় কর্মকাণ্ড, সম্মেলন ও কমিটির কার্যক্রম শুরু করতে নির্দেশনা দেয় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ ছাড়া নেতাকর্মীদের চাপে রাখাতে নতুন কৌশল নিতে যাচ্ছে দলটি। এজন্য শিগগির জেলা-উপজেলায় বর্ধিত সভা করবে দলটি। দ্বন্দ্বে জর্জরিত স্থানে সফর শুরু করবে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল। তাতেও কাজ না হলে সংশ্লিষ্ট কমিটি ভেঙে দেওয়া, নেতাদের পদ থেকে অব্যাহতির পরিকল্পনা রয়েছে ক্ষমতাসীনদের। গতকাল বুধবার দলের সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে যৌথসভা শেষে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। এরই মধ্য আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্য নির্বাচনী দ্বন্দ্ব বন্ধ করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছে। তবে বিবদমান এসব আসনে দলীয় সফরের মাধ্যমে সংঘাত নিরসনের জন্য প্রতিনিধিদল পাঠানোসহ বিশদ কর্মসূচি গ্রহণ করা হতে পারে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায়। এ মাসেই অনুষ্ঠিত হবে দলের নীতিনির্ধারণী কমিটির বৈঠক। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম কালবেলাকে বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বতন্ত্ররা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। এজন্য কিছু জায়গায় কোন্দল তৈরি হয়েছে। উপজেলা নির্বাচনের আগেই এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে। এসব নিরসনে শিগগির জেলা সফর, বর্ধিত সভার মতো কর্মসূচি হাতে নেওয়া হতে পারে।’
১৮ জানুয়ারি, ২০২৪

আ.লীগের দুশ্চিন্তা তৃণমূলের সংঘাত
জাতীয় নির্বাচনের পর কিছুদিনের মধ্যে সারা দেশে অনুষ্ঠিত হবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। যে কোনো সময় তপশিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। স্থানীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভোটের আগে তৃণমূলে দলীয় কোন্দল নিয়ে চিন্তিত আওয়ামী লীগ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ উন্মুক্ত রাখা যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্ষমতাসীন দলের জন্য। অনেক এলাকায়ই চরম বিভক্ত হয়ে পড়েছে সংগঠন। নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তি বেড়েই চলেছে। কোথাও কোথাও হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পাল্টাপাল্টি মামলা। আসন্ন উপজেলা নির্বাচন ঘিরে এই দ্বন্দ্ব ও সংঘাত আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা কেন্দ্রীয় নেতাদের। পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কোন্দল নিরসনে শিগগির জেলা-উপজেলায় বর্ধিত সভা এবং কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের সফরের মাধ্যমে সংকট সমাধানের চিন্তা-ভাবনা করছে দলটি। তার পরও কাজ না হলে নেতাদের পদ থেকে অব্যাহতি, কমিটি ভেঙে দেওয়া এমনকি বহিষ্কারের মতো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও নিতে পারে আওয়ামী লীগ। কোন্দলে লিপ্তদের এভাবে চাপে রাখার কৌশল নিতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘাত এড়াতে জাতীয় নির্বাচনের মতো বিএনপি অংশ না নিলে উপজেলা নির্বাচনে দলীয়ভাবে প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে আওয়ামী লীগ। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন জমজমাট করতে দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনে অংশ নেন কয়েকশ স্বতন্ত্র প্রার্থী। এর মধ্য দলের বর্তমান এমপি, মন্ত্রিসভার সদস্যসহ দলের হেভিওয়েট প্রার্থীদের হারিয়ে ৬২ জন নির্বাচিত হন। এর মধ্যে বেশিরভাগ নির্বাচনী এলাকায়ই দলের মধ্যে চরম বিভক্তি তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া নৌকার প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন, এমন অনেক এলাকায়ও স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ঘিরে দলে বিবদমান দুটি ধারা তৈরি হয়েছে। এই বিভক্তি উপজেলা নির্বাচনে আরও প্রকট হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা নীতিনির্ধারকদের। নেতাকর্মীদের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব ও বিভেদ আঁচ করতে পেরেই প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সবাইকে মনোমালিন্য, দুঃখ-বেদনা, যা-ই থাকুক না কেন তা ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে নির্দেশ দেন। শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনে হার-জিত, কষ্ট ভুলে এক হতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে, জনগণের সঙ্গে, জনগণের কল্যাণে, মানুষের জন্য। দলীয় প্রধানের এই আহ্বানে দলের ঐক্য ফিরিয়ে আনতে কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে ভাবছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। তবুও দলীয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে শিগগির কর্মসূচি ঘোষণা করবে দলটি। প্রাথমিকভাবে নিজেদের মধ্যে কোন্দল-সংঘাত বন্ধে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা-উপজেলার নেতাদের দিচ্ছেন বিভিন্ন নির্দেশনা। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য কালবেলাকে বলেন, দ্বন্দ্ব কোন্দলের প্রভাব যেন উপজেলা নির্বাচনে না পড়ে সেজন্য চেষ্টা করছি। উপজেলা নির্বাচনের আগেই এসব বিভেদ দূর করা হবে। দলীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, আরও বিশদ আকারে কর্মসূচি নেওয়া হবে। জানা গেছে, নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে দলীয় কোন্দল আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। দশ দিন পেরিয়ে গেলেও সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হুমকি, এর জেরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মুন্সীগঞ্জ নাটোর, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ঝিনাইদহ, রংপুর, বরগুনা, বরিশাল, চাঁপাইনবাগঞ্জ, নওগাঁ, পঞ্চগড়সহ অন্তত দুই ডজন জেলায় নির্বাচন-পরবর্তী হামলা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনকেন্দ্রিক এসব দ্বন্দ্ব সংঘাতে চারজন নিহত ও আহত হয় কয়েকশ মানুষ। যাদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থক। গতকাল মঙ্গলবার, বরিশাল-৪ আসনের হিজলায় নির্বাচনী বিরোধকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। একই দিন নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে রূপগঞ্জ উপজেলায় নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে অন্তত সাতজন আহত হয়। আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত গোলাম দস্তগীর গাজী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভূঁইয়ার কর্মী-সমর্থকরা এই সংঘাতে জড়ায়। এ ছাড়া, গত এক সপ্তাহে নোয়াখালী, ঝিনাইদহ, নেত্রকোনা ও মাদারীপুরে চারজন নিহত হন। জানা গেছে, নির্বাচনে কমিশনের তালিকা অনুযায়ী ৪৮৫টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনযোগ্য রয়েছে, যেগুলো নির্বাচনের পর মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে বা মেয়াদ পূর্ণ হতে চলেছে। গত উপজেলা নির্বাচনের মতো এবারও কয়েকধাপে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মার্চ মাসের ১০ তারিখে রোজার পূর্বেই শুরু হবে উপজেলা নির্বাচন। এ উপলক্ষে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে জাতীয় নির্বাচনেও দলীয় প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন এসব প্রার্থীরা। সারা দেশের বিভিন্ন উপজেলাগুলোতে এরই মধ্য পোস্টার সাঁটানো, নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ, ভোটারদের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ বৃদ্ধির কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের এক নেতা কালবেলাকে বলেন, জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অংশগ্রহণের অনুমতির মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে দলের কোন্দলকে উসকে দেওয়া হয়েছে। এর প্রভাব উপজেলা নির্বাচনসহ সব স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে পড়বে। এজন্য দলকে ভুগতে হতে পারে। নেতারা বলেন, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হতে নির্দেশ দিয়েছেন, হার-জিত মেনে নিয়ে কাজ শুরু করতে বলেছেন। সভাপতির এমন ঘোষণার পরও দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘাত ও দ্বন্দ্ব তীব্র আকার ধারণ করেছে। মার্চে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এই নির্বাচন সামনে রেখে দ্বন্দ্ব-সংঘাত মিটিয়ে ফেলা জরুরি। সেটি করতে না পারলে দলের তৃণমূল পর্যায়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। এমনকি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটতে পারে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন কালবেলাকে বলেন, দলের মধ্য কিছু দ্বন্দ্ব ও প্রতিযোগিতা থাকতে পারে, তবে সেটা যেন প্রতিহিংসায় রূপান্তরিত না হয়। এরকম ঘটলে কঠোর হস্তে দমন করবে। নেতাকর্মীরা যদি সংঘাতের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দেয়, তাহলেও আওয়ামী লীগ দলীয় শৃঙ্খলা ফেরাতে যা করার দরকার তাই করবে। সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ দলের এসব কোন্দল ও দ্বন্দ্ব মেটাতে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য এক যৌথ সভার মাধ্যমে দলের সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনগুলোকে দলীয় কর্মকাণ্ড, সম্মেলন ও কমিটির কার্যক্রম শুরু করতে নির্দেশনা দেয় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ ছাড়া নেতাকর্মীদের চাপে রাখাতে নতুন কৌশল নিতে যাচ্ছে দলটি। এজন্য শিগগির জেলা-উপজেলায় বর্ধিত সভা করবে দলটি। দ্বন্দ্বে জর্জরিত স্থানে সফর শুরু করবে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল। তাতেও কাজ না হলে সংশ্লিষ্ট কমিটি ভেঙে দেওয়া, নেতাদের পদ থেকে অব্যাহতির পরিকল্পনা রয়েছে ক্ষমতাসীনদের। গতকাল বুধবার দলের সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে যৌথসভা শেষে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। এরই মধ্য আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্য নির্বাচনী দ্বন্দ্ব বন্ধ করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছে। তবে বিবদমান এসব আসনে দলীয় সফরের মাধ্যমে সংঘাত নিরসনের জন্য প্রতিনিধিদল পাঠানোসহ বিশদ কর্মসূচি গ্রহণ করা হতে পারে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায়। এ মাসেই অনুষ্ঠিত হবে দলের নীতিনির্ধারণী কমিটির বৈঠক। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম কালবেলাকে বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বতন্ত্ররা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। এজন্য কিছু জায়গায় কোন্দল তৈরি হয়েছে। উপজেলা নির্বাচনের আগেই এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে। এসব নিরসনে শিগগির জেলা সফর, বর্ধিত সভার মতো কর্মসূচি হাতে নেওয়া হতে পারে।’
১৮ জানুয়ারি, ২০২৪
X