উত্তরে বন্যার শঙ্কা, সিলেট সুনামগঞ্জে দুর্ভোগ
মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সারা দেশেই ঝরছে বৃষ্টি। পার্বত্য অঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোয় বৃষ্টি হচ্ছে বেশি। এর সঙ্গে রয়েছে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল। ভারতের চেরাপুঞ্জি এলাকায় অব্যাহত রয়েছে প্রবল বর্ষণ। এতে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় আবার বন্যা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির কারণে সাজেক-খাগড়াছড়ি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। সাজেক ভ্যালিতে আটকা পড়েছে তিন শতাধিক পর্যটক। ফেনীতে বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন এক যুবক। এদিকে আগামী ২৪-৪৮ ঘণ্টায় তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, আগামী ৬ জুলাইয়ের পরে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমতে শুরু করবে।
আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুর রহমান বলেন, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সারা দেশেই বৃষ্টি হচ্ছে। তবে ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে তুলনামূলক বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী কয়েক দিনে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঢাকার আবহাওয়া প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আগামী ৬ জুলাই পর্যন্ত ঢাকায় এ রকম টানা বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
সিলেটে তৃতীয় দফা বন্যায় পানিবন্দি ৭ লাখ মানুষ: ১৩ দিন যেতে না যেতেই ফের তৃতীয় দফা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে সিলেট। টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সিলেটে চলমান তৃতীয় দফা বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নিম্নাঞ্চলের পাশাপাশি নগরীতেও পানি প্রবেশ করেছে। কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। এসব এলাকায় বাড়িঘর, বাজার, দোকানপাট প্লাবিত হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানায়, সিলেটের ১৩টি উপজেলায় ৭ লাখ ১১ হাজার ২২৬ জন মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। ৬৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছেন ৮ হাজার ৩০৮ জন। ১৩টি উপজেলায় ১ হাজার ১৮৪টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ। বন্যার্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। ১২৬টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, নগরের বেশ কিছু এলাকার সড়ক ও বাসাবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে নগরের মির্জাজাঙ্গাল, মণিপুরি রাজবাড়ি, তালতলা, জামতলা, কুয়ারপা শিবগঞ্জ, শাহজালাল উপশহর, হাওয়াপাড়া, যতরপুর, মেন্দিবাগ, তোপখানা, মজুমদারি, চৌকিদেখী, দক্ষিণ সুরমাসহ বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরের বাসিন্দারা।
পানিবন্দি সুনামগঞ্জবাসী: প্রথম দফা বানের জল না শুকাতেই আবার বন্যার কবলে পড়ছেন সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা। ভারতের চেরাপুঞ্জি অঞ্চল থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আবার বাড়ছে সুনামগঞ্জের সুরমা, কুশিয়ারা, যাদুকাটাসহ সব নদনদীর পানি। নতুন করে বন্যার কবলে পড়েছেন জেলার ২৫ লাখ মানুষ।
পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার উত্তর আরপিননগর, সাহেববাড়ি ঘাট, পুরানপাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকার রাস্তাঘাট। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দুর্গাপুর সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় জেলা শহরের সঙ্গে আবার তাহিরপুর উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া ছাতক, দোয়ারাবাজার, মধ্যনগরসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের গ্রামীণ সড়ক এখন পানির নিচে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন পাঁচ লাখের বেশি মানুষ।
তাহিরপুর উপজেলার বাসিন্দা আব্দুর রহমান জানান, সব নদীর পানি আবার বাড়ছে। সড়কে পানি ওঠায় জেলা শহরের সঙ্গে তাহিরপুর উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এখন সুনামগঞ্জে যেতে হচ্ছে নৌকায়।
সাজেকে আটকা পড়েছেন ৩ শতাধিক পর্যটক
রাঙামাটির বাঘাইছড়ির কাচালং নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এদিকে বাঘাইহাট সড়কের পানি ওঠার কারণে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পর্যটন উপত্যকা সাজেক। ফলে সেখানে বেড়াতে যাওয়া তিন শতাধিক পর্যটক আটকা পড়েছে।
সাজেক কটেজ মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিজয় ত্রিপুরা জানান, গতকাল সকালে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাঘাইছড়ি-বাঘাইহাট সড়ক তলিয়ে যায়। ফলে সাজেকে ছোট-বড় মিলে ১২৫ গাড়ির পর্যটক আটকা পড়ে। সোমবার যেসব গাড়ি এসেছে, তাদের সবাই সাজেকে অবস্থান করছে। যারা আছেন তাদের কোনো রুম ভাড়া লাগবে না। তারা শুধু পানির খরচ দিলেই হবে।
এদিকে নেত্রকোনায় নতুন করে আবারও বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। জেলার প্রধান নদী উব্ধাখালীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। বেড়েছে সোমেশ্বরী, কংস ও ধনু নদীর পানিও। জেলার সবকটি নদীর পানি বাড়ায় কলমাকান্দা উপজেলার নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে।
ফেনীর মুহুরী নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে জেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এদিকে বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের পূর্ব ঘনিয়ামোড়া এলাকায় মো. মামুন নামে ২৫ বছর বয়সী এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন মজুমদার। নিহত মামুন কিসমত ঘনিয়ামোড়া এলাকার আবদুল মান্নানের ছেলে।
(প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন কালবেলার সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা)
০৩ জুলাই, ২০২৪