‘প্রস্তাবিত বাজেটে তামাক কর : নিম্নবিত্ত মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা উপেক্ষিত’
আগামী প্রজন্মকে তামাকের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করতে এবং নতুন তামাকসেবী সৃষ্টি কমাতে হলে অবশ্যই মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে, তামাকজাতদ্রব্যের দাম বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে ঢাকা আহছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টর। সোমবার (১০ জুন) রাজধানীর শ্যামলীস্থ ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টরের অর্কিড মিটিং রুমে ‘বাজেটোত্তর প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গ তামাক মূল্য ও কর’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এমন দাবি জানানো হয়।  অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা আহছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ। তিনি জানান, বিগত কয়েক বছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম যে হারে বেড়েছে, সেই অনুপাতে বাড়েনি তামাকজাতদ্রব্যের দাম। এমনকি, বাংলাদেশে তামাকজাতদ্রব্যের কর বৃদ্ধির হার পাশ্ববর্তী দেশেরগুলোর চাইতে তুলনামূলক অনেক কম।  ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে  নিম্নস্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি শলাকার দাম বাড়ানো হয়েছে মাত্র ৫০ পয়সা।  এদিকে, বাজেটে সিগারেট, জর্দা, গুলের দাম বাড়ানো হলেও দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে বিড়ির দাম। যেখানে দেশের নিম্নবিত্ত শ্রেণির মধ্যে বিড়ি সেবন হার বেশি। ফলে প্রস্তাবিত বাজেটে নিম্নবিত্ত মানুষের স্বাস্থ্য সুরিক্ষায় বিষয়টি উপেক্ষিত হয়েছে।  গত কয়েক বছর বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ৪০ শতাংশ থেকে প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ প্রস্তাবিত বাজেটে তামাকজাতদ্রব্যের দাম বাড়ানো হয়েছে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ থেকে ১১ দশমিক ১১ শতাংশ পর্যন্ত। এদিকে, ২০২৩-২৪ সালের তুলনায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জনগণের মাথাপিছু আয় বেড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়লেও, তামাকজাতদ্রব্য তরুণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সাধ্যের মধ্যেই থেকে যাচ্ছে।  তামাকজাত দ্রব্যের নামমাত্র এই মূল্যবৃদ্ধি দরিদ্র ও তরুণ জনোগোষ্ঠীকে কোনোভাবেই সিগারেটে নিরুৎসাহিত করবে না। কেননা মাথাপিছু আয়বৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলে প্রকৃত অর্থে সিগারেটের দাম বিগত বছরের তুলনায় কমে গেছে। এতে করে সস্তা সিগারেটের ব্যবহার আশংকাজনক হারে বেড়ে যাবে এবং তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি আরো বহুগুনে বাড়বে। বাংলাদেশে ৩৫ ভাগের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন এবং তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিবছর ১ লাখ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ মারা যান। চূড়ান্ত বাজেটে তামাকবিরোধীদের প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে দীর্ঘ মেয়াদে প্রায় ৫ লাখ তরুণসহ মোট ১১ লাখের অধিক মানুষের অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে। তাই তামাকজাতদ্রব্যের সকল স্তরের মূল্য ও কর তামাকবিরোধী সংগঠগুলোর প্রস্তাবিত হারে বৃদ্ধি না করা হলে সরকার বাড়তি ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের সুযোগ হারাবে এবং তামাক ব্যবহারজনিত রোগের স্বাস্থ্য ব্যয় বাড়বে। এমনকি বাড়বে সাধারণ জনগনের ‘আউট অফ পকেট এক্সপেনডিচার’। এ সময় ঢাকা আহছানিয়া মিশন, স্বাস্থ্য সেক্টরের উপপরিচালক মোখলেছুর রহমান, তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী শরিফুল ইসলামসহ অনেকেই।
১০ জুন, ২০২৪

বাজেটে প্রস্তাবিত তামাক কর জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার সহায়ক না
প্রস্তাবিত তামাক কর তরুণদের ধূমপান ও তামাকজাতদ্রব্যের আকাঙ্ক্ষা কমাতে সহায়ক হবে না বলে জানিয়েছে আহছানিয়া মিশন ইয়ুথ ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং।  শনিবার (৮ জুন) সংগঠনটি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে একাধিক কৌশলের মধ্যে বিশ্ব স্বীকৃত অন্যতম পদ্ধতি হলো তরুণদের ক্রয় ক্ষমতার নাগালের বাইরে তামাকপণ্যের দাম নিয়ে যাওয়া। সেই লক্ষ্যে দেশের তরুণ সমাজকে তামাকের নেশার হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রস্তাবিত বাজেট সংশোধন করে তামাক কর যুগোপযোগী করার দাবি সংগঠনটির। বাংলাদেশে বর্তমান মোট জনগোষ্ঠীর ৪৮ শতাংশই তরুণ-তরুণী। তামাক কোম্পানির মূল টার্গেট এই তরুণ জনগোষ্ঠী। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের উচিত তামাক কোম্পানির ছোবল থেকে তরুণদের সুরক্ষা প্রদান করা।  সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আহছানিয়া মিশন ইয়ুথ ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং সমন্বয়কারী মারজানা মুনতাহা জানান, তামাকাসক্তি অসুস্থ প্রজন্ম দেশের অগ্রগতির হাতিয়ার না হয়ে বরং সমাজ ও অর্থনীতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। তাই জনস্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে তামাকজতদ্রব্যের কর বাড়াতে হবে। তিনি আরও বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বিড়ির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেননি। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত যুবকদের অকাল মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে পারে বিড়িসহ সব তামাক কর বৃদ্ধি। এই তামাক কর বৃদ্ধি জনস্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ছাড়াও রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করবে, যা বর্তমান কর রাজস্বের চেয়ে অনেক বেশি।  সংগঠনটির প্রোগ্রাম অফিসার খাদিজাতুল কুবরা সিমা বলেন, অল্প বয়সে ধূমপান ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় এবং তরুণরা ধূমপান চালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি অন্যান্য নেশার দিকে ঝুঁকে যাওয়াও সম্ভবনাও প্রবল থাকে।  তিনি জানান, সিগারেটের নিম্নস্তরের ১০ শলাকার মূল্যস্তর ৫০ টাকা ও তদূর্ধ্ব এবং সম্পূরক শুল্ক ৬০ শতাংশ ধার্যের প্রস্তাব করেছে। যা গত অর্থবছরে দশ শলাকার মূল্যস্তর ৪৫ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৫৮ শতাংশ ছিল। মধ্যম স্তরের ১০ শলাকার মূল্যস্তর গত বছরের চেয়ে ৩ টাকা বাড়িয়ে ৭০ টাকা ও তদূর্ধ্ব, উচ্চস্তরের ১০ শলাকার মূল্যস্তর ১১৩ টাকা থেকে ১২০ টাকা ও তদূর্ধ্ব, অতি- উচ্চস্তরের ১০ শলাকার মূল্যস্তর ১৫০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা ও তদূর্ধ্ব নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই তিন স্তরের সম্পূরক শুল্ক ৬৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে এবার (২০২৪-২৫) ৬৫.৫ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। খাদ্যসহ অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ২০২১ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ৪০ শতাংশ থেকে প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ প্রস্তাবিত বাজেটে তামাকজাতদ্রব্যের দাম বাড়ানো হয়েছে ৪.৪৮ শতাংশ থেকে ১১.১১ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে নিত্যপণ্যের তুলনায় তামাকপণ্য আরও সস্তা হয়ে পড়বে। আহ্ছানিয়া মিশন ইয়ুথ ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং মুদ্রস্ফিতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে তামাকজতদ্রব্যের কর বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে।
০৮ জুন, ২০২৪

জনস্বাস্থ্যের ক্ষতির তুলনায় তামাক কর পর্যাপ্ত নয়
জনস্বাস্থ্যের ক্ষয়ক্ষতির তুলনায় দেশে তামাক দ্রব্যের ওপর কর আদায় হার এখনো পর্যাপ্ত নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান। তিনি জানান, আগামী অর্থবছরের বাজেটটি এমন সময় তৈরি হতে যাচ্ছে, যখন বৈশ্বিক কারণে দেশ একটা সংকটময় মুহূর্ত পার করছে। যে কারণে ব্যয়ের তুলনায় আয় বাড়াতে বাজেটে রাজস্ব আদায়ের একটা অতিরিক্ত চাপ তৈরি হবে। কিন্তু আদায়ের ক্ষেত্র অনেকটাই সংকুচিত থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের একটা সহজ ও চিহ্নিত ক্ষেত্র হতে পারে তামাকপণ্যের ওপর কার্যকর করারোপ। গতকাল শনিবার ‘আসন্ন ২০২৪-২৫ বাজেটে তামাকপণ্যে কার্যকর করারোপ ও মূল্য বৃদ্ধি’ শীর্ষক এক কর্মশালায় তিনি এসব বলেন। রাজধানীর পল্টনে ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দি রুরাল পুয়র-ডর্প এবং ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) যৌথভাবে আয়োজন করে। তিনি বলেন, খাতটির ওপর অতিরিক্ত করারোপ হলে, সেটি হবে এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতো ঘটনা। এতে সংখ্যার বিচারে সর্বাধিক ধূমপায়ী এমন নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য অংশকে এই বাড়তি করারোপের মাধ্যমে কিছুটা হলেও ধূমপান থেকে নিবৃত্ত রাখা যাবে। অন্যদিকে এর মাধ্যমে খাতটি থেকে সহজেই অতিরিক্ত ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আসতে পারে। সরকারের অন্যতম লক্ষ্য জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা। আমরাও সেটিই বলছি। এই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে জনগোষ্ঠীকে সবার আগে ধূমপানে নিরুৎসাহিত করতে হবে। করহার বাড়িয়েই কেবল দেশের বেশিরভাগ মানুষকে এর থেকে দূরে রাখা সম্ভব। কারণ, এটি যখন ক্রয়সীমার মধ্যে থাকবে না, তখন ব্যবহার কম হবে। কর্মশালায় বিষয়ের ওপর মূল প্রস্তাবনা উপস্থাপনা করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের গবেষণা পরিচালক আব্দুল্লাহ নাদভী। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল। বক্তব্য দেন ডর্পের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন, নির্বাহী উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা আজহার আলী তালুকদার, প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর রুবিনা ইসলাম, ইআরএফের সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মৃধা, সম্পাদক আবুল কাসেম প্রমুখ। তারা বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে তামাকপণ্যে কার্যকর করারোপ হলে কেবল সিগারেট খাত থেকেই প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে, যা আগের বছরের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া প্রায় ১৫ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ধূমপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত হবে, ১০ লাখ তরুণ ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ১১ লাখ জনগোষ্ঠীর তামাক ব্যবহারজনিত অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।
৩১ মার্চ, ২০২৪
X