সিঙ্গাপুরের চেয়ে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কম : স্থানীয় সরকারমন্ত্রী 
সিঙ্গাপুরের চেয়ে বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কম বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।  বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সচিবালয়ে সারা দেশে ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত অন্যান্য রোগ প্রতিরোধবিষয়ক জাতীয় কমিটির চলতি বছরের দ্বিতীয় সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে বিশেষজ্ঞরা আমাদের যেসব পরিসংখ্যান দিয়েছেন, সেসব বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি। সিঙ্গাপুরের চেয়ে বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কম। তাই সিটি করপোরেশনসহ সেবা সংস্থাগুলোর কার্যক্রমে সন্তুষ্ট না হওয়ার কোনো কারণ নেই।  তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সবাই সচেতন আছে। সবাই সচেতন আছে বলেই এখন পর্যন্ত এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি। আশা করি ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সব সিটি করপোরেশন ও উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদসহ সবাই যার যার অবস্থান থেকে যা করণীয় তা করবেন। এ সময় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, সচেতনতা বৃ‌দ্ধি কর‌তে প্রত্যেক কাউন্সিলরকে প্রতিমাসে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে। প‌রিত্যক্ত মালামাল কিনতে ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাজ চল‌ছে। পরীক্ষার দিন ছাড়া বিদ্যালয়গু‌লোতে অভিযান চলবে।
০৪ জুলাই, ২০২৪

৯টি প্রকল্পে জাইকার সহায়তা ১১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি(জাইকা) বাংলাদেশের অন্যতম সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাইকা সহায়তায় ৯টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। যার আর্থিক সহায়তার পরিমাণ ১১ হাজার ৩শত ৪৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা। চলমান অর্থবছরে স্থানীয় সরকার বিভাগের ২২৭টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। প্রকল্পগুলোতে সর্বমোট বরাদ্দ ৩৮ হাজার ৮শত ৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।  বুধবার (৩ জুলাই) বিকেলে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে জাইকার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হারা শোহেই এর সঙ্গে বৈঠককালে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রতি এ তথ্য তুলে ধরেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।  মন্ত্রী বলেন, জাইকার সহায়তায় বিদ্যমান প্রকল্পগুলোর পাশাপাশি আরও ৪টি প্রকল্প শুরু হতে যাচ্ছে। প্রকল্পগুলো হলো- উপজেলা প্রশাসন এবং উন্নয়ন প্রকল্প-২ ( ইউজিডিপি-২), প্রস্তাবিত দক্ষিণ চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পানি সরবরাহ প্রকল্প, চট্টগ্রাম ওয়াসার অধীন চট্টগ্রাম পয়ঃনিষ্কাসন প্রকল্প ক্যাচমেন্ট-২ ও ৪ এবং হাওর বন্যা ব্যবস্থাপনা ও জীবিকা উন্নয়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়)। প্রস্তাবিত ৪টি প্রকল্পে জাইকার সহায়তার পরিমাণ ২০ হাজার ৫শ ৭৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা হতে পারে।  তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে জাইকা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করছে। স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়ন, সক্ষমতা বৃদ্ধি, স্থানীয় সড়ক যোগাযোগসহ বিভিন্ন প্রকল্পে জাইকা সহায়তা করছে। আশা করছি, এই বৈঠকের মাধ্যমে এই সহায়তা আরও বৃদ্ধি পাবে। এই সময় জাইকার ভাইস প্রেসিডেন্ট হারা শোহেই বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে জাইকার যেসব প্রকল্প চলমান রয়েছে তার উল্লেখযোগ্য অংশ রয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে। ইতোমধ্যে অনেকগুলো প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে, নতুন কিছু প্রকল্পের ব্যাপারেও আলোচনা চলছে। বাংলাদেশ অর্থনীতিতে অনেক এগিয়েছে, আশা করছি এই ধারা অব্যাহত রেখে বাংলাদেশ আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা হতে চূড়ান্তভাবে বের হয়ে আসবে। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. আলী আকতার হোসেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী তুষার মোহন সাধু খাঁ, জাইকার সাউথ এশিয়া বিভাগের উপমহাপরিচালক সাকুডু শুনসুকে, জাইকা বাংলাদেশের প্রধান প্রতিনিধি ইচিগুচি তুমোহিদেসহ জাইকা ও স্থানীয় সরকার বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা।
০৩ জুলাই, ২০২৪

সিরডাপের গভর্নিং কাউন্সিলের সভাপতি হলেন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম
পল্লী উন্নয়ন কেন্দ্রের (সিরডাপ) গভর্নিং কাউন্সিলের সভাপতি নির্বাচিত হলো বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার (৬ জুন) থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অনুষ্ঠিত সিরডাপের গভর্নিং কাউন্সিলের ২৪তম সভায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামকে সভাপতি পদে নির্বাচিত করা হয়।  ব্যাংককে সিরডাপের গভর্নিং কাউন্সিলের তিন দিনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যার সমাপনী দিনে আগামী দুই বছরের জন্য তাজুল ইসলামকে গভর্নিং কাউন্সিলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।  এ সময় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, সিরডাপ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সমন্বিত পল্লী উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ, গবেষণা এবং নীতিনির্ধারণে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এসেছে। আমরা সিরডাপের ম্যান্ডেট এবং সাংগঠনিক দর্শনের ওপর জোর দিতে চাই, যাতে করে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দারিদ্র্যবিমোচনে ভূমিকা পালন করতে পারে। তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক পরিসরে নেতৃত্বদানকারী জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার সংস্থার (এফএও) সমর্থন এবং সহযোগিতার ওপর জোর দিতে হবে। সংগঠনটিকে আরও ফলপ্রসূ এবং যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে হবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ ক্ষুদ্রঋণ, দারিদ্র্যবিমোচন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, খাদ্য নিরাপত্তা, প্রাথমিক শিক্ষা, টিকাদান এবং সংক্রামক রোগ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে। 
০৮ জুন, ২০২৪

২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করতে হবে : তাজুল ইসলাম
২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানির পশুর সকল প্রকার বর্জ্য অপসারণ এবং কোরবানির স্থান পরিষ্কার করতে হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।  বৃহস্পতিবার (৩০ মে) সকালে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ‘জাতীয় ঈদগাহ প্রস্তুতি, পশুর হাট ব্যবস্থাপনা, নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানি এবং দ্রুত বর্জ্য অপসারণ’ নিশ্চিত করার বিষয়ে এক প্রস্তুতি পর্যালোচনা সভা শেষে এ নির্দেশনা দেন তিনি। মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানির পশুর সকল প্রকার বর্জ্য অপসারণ এবং কোরবানির স্থান পরিষ্কার করতে হবে। অতীতেও নির্দেশনা ছিল, কোরবানির পরেরদিন সূর্যোদয়ের পূর্বেই সকল প্রকার বর্জ্য অপসারণ করার।  তিনি বলেন, এর আগে দেখা গেছে যে, ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার মধ্যে সকল বর্জ্য অপসারিত হয়েছে। কাজেই, অতীতে যত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে আমরা সফলতার সঙ্গে তা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি।  সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইবরাহিম, গাজীপুর সিটি করপোরেশন মেয়র জায়েদা খাতুনসহ আরও অনেকে।  এক প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানি এবং পশু জবাইয়ের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত স্থান নির্ধারন করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ এলাকাভিত্তিক পশুর হাট ও পশু কোরবানির নির্দিষ্ট স্থানের তালিকা জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে ব্যাপকভাবে প্রচার করবে। মন্ত্রী আরও বলেন, দেশের সকল কোরবানি পশুর হাটে জাল টাকা শনাক্তকরণ মেশিন স্থাপন করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এটি বাস্তবায়ন করবে। এ ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংকের সহায়তায় এটিএম বুথ, পয়েন্ট অব সেলস্ মেশিন, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস)’র মাধ্যমে ক্যাশলেস বা নগদ টাকাবিহীন লেনদেনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।  আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে অনুষ্ঠিত এই প্রস্তুতি পর্যালোচনা সভায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের মাঠ প্রস্তুতি, কোরবানি পশুরহাট ব্যবস্থাপনা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ বিবিধ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আলোচনা ও সিদ্ধান্ত  গ্রহণের সুপারিশ প্রদান করা হয়। 
৩০ মে, ২০২৪

আমিরুল ইসলাম চৌধুরী : জাহাঙ্গীরনগরের গারিঞ্চা পাখি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার কর্মকালের একটি বড় প্রাপ্তি ছিল প্রফেসর আমিরুল ইসলাম চৌধুরী, অর্থাৎ এ আই সি, অর্থাৎ ময়না ভাইয়ের সাথে ঘনিষ্ঠতা।  কিন্তু এখন ভাবলে হাসি পায়, তার প্রতি একটা অব্যক্ত বিরূপতার মধ্য দিয়েই আমার জাহাঙ্গীরনগর যাত্রা শুরু হয়েছিল। সালটি ছিল ১৯৮১; দেশে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ তখন প্রায় নির্বাসিত শব্দ সমাহার; তার সাথে সোভিয়েত ইউনিয়নও। তাই দরখাস্তের প্রায় পাঁচ মাস পর যখন নিয়োগপত্রটি নিয়ে বিভাগে উপস্থিত হলাম (একটি বন্যাজনিত বন্ধ, একটি কর্মচারী ধর্মঘট, একটি অফিসার ধর্মঘট অতিক্রম করে) তখন কেমন জানি একটু অস্বস্তি অনুভব করলাম। বিভাগের কলিগগণ খুব হাসিমুখে সাদর অভ্যর্থনা জানালেও মাঝে মাঝে দুএকটা প্রশ্ন বা ফোড়ন থেকে মনে হল সোভিয়েত ডিগ্রি নিয়ে আমার আগমন বিভাগের একাডেমিক অঙ্গনে না হলেও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ভালোই একটা চাপ সৃষ্টি করেছে। কিছু দিনের মধ্যেই বুঝতে পারলাম বিভাগেও যেমন, বিশ্ববিদ্যালয়েও তেমনি দুটি ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ধারা বিরাজ করছে।  প্রবল ধারাটি যখন আওয়ামী-ভারত-সোভিয়েত বৈরিতার সূত্রে মুক্তিযুদ্ধের একটি বিকল্প অর্থের অনুসন্ধানে ব্যস্ত, অন্য ক্ষীণ ধারাটি তখন হারিয়ে যাওয়া মুক্তিযুদ্ধের রেশটাকে ধরে রেখে কোন প্রকারে টিকে থাকতে সচেষ্ট। জনাব আমিরুল ইসলাম চৌধুরীকে কোনও ধারাতেই ঠিক ফেলতে না পারলেও বন্ধুবান্ধব ও আড্ডাবাজির বিচারে তাকে আমি প্রবল ধারার মধ্যেই ফেলে দিলাম। ফলে আমার অবচেতন মনেই অমিত্র জনগোষ্ঠীর কাতারে তার জায়গা হয়ে গেল।  সেকালে জাহাঙ্গীরনগরে আজকের মত মারমার কাটকাট কোন দলাদলি ছিল না; তবে নির্বাচন ছিল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রবল ধারার কিছু প্রবল নেতা ঠিক করে দিতেন কে কোন পদ দখল করবেন, বা কোন চেয়ারে বসবেন। একবার বিপত্তি বাধল। সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসাবে জনাব চৌধুরী এই প্রক্রিয়ায় মনোনীত হলেও পথ ছাড়তে রাজি হলেননা তারই বন্ধু স্থানীয়, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের জনাব আজিজুল হক। অতএব ভোট। এই ভোটের সুবাদেই ময়না ভাইয়ের সাথে আমার সম্পর্কটি এক নতুন মাত্রা পেল। মফিজ ভাইয়ের (অর্থনীতির সহযোগী অধ্যাপক, প্রবল ধারার প্রবলতমদের একজন) রুমে ভোটের হিসাব নিকাশ হচ্ছে; রুমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ কানে এলো, ময়না ভাই বলছেন, “তাজুলের ভোটটা আমি বাদ দিয়ে ধরেছি”। মনটা যারপরনাই খারাপ হয়ে গেল, কারণ ভোটটাতো আমি তাকেই দিব বলে ঠিক করে রেখেছিলাম। কারণটা খুব সিম্পল। ময়না ভাই বা আজিজ ভাই, দুজনেই আমার দৃষ্টিতে সেই প্রবল ধারার প্রতিভূ, তাদের মধ্যে একজনকে যদি বাছতে হয় তবে কেন আমি ঘরের জনকে রেখে বাইরে হাত বাড়াবো?  যাই হোক, মনের ক্ষোভ প্রকাশের একটা সুযোগ করে দিলেন আখলাক স্যার, প্রফেসর আখলাকুর রহমান। মুষ্টিবদ্ধ হাতে সিগারেটে একটা লম্বা টান দিয়ে ( এটা স্যারের মজলিশি সিগারেট খাওয়ার সিগনেচার স্টাইল) স্যার জিজ্ঞাসা করলেন, “ও মিয়া কারে ভোট দিবা?” আমার উত্তরের আগেই স্যার আমাকে হতভম্ব করে দিয়ে বললেন, “আজিজকে দিলে কেমন হয়? ময়নাতো এমনিতেই খুব পাওয়ারফুল, আরো পাওয়ারফুল করা কি ভাল হবে?” অনেক কষ্টে বিস্ময় ভাবটাকে দমিয়ে রেখে উত্তর দিলাম, স্যার আমি ভোটটা ময়না ভাইকেই দিব, তবে তার একটা কথায় আমি খুবই কষ্ট পেয়েছি; বললাম আমার কষ্টের কথা।  এবার স্যার আমাকে আরেক প্রস্থ হতভম্ব করে দিয়ে বললেন, ”মিয়া আমি তো তোমাকে পরীক্ষা করলাম; ভোটতো অবশ্যই ময়নাকে দিবা, অন্য ডিপার্টমেন্টে ভোট দিতে যাবা কোন দুঃখে? “আমার কাছে বিষয়টি আজও ধাঁধাই রয়ে গেল, আসলে ঐদিন স্যারের মনের কথাটা কী ছিল? সে যাই হোক, আসল ঘটনাটা ঘটল পরের দিন, কিংবা তার পরের দিন। ঘরে একা বসে আছি, ময়না ভাই ঘরে ঢুকে কোন ভণিতা না করে আমার হাতটি দুহাতে নিয়ে বললেন, তাজুল, আমি আপনার উপর খুব অবিচার করেছি , আমাকে মাফ করে দিবেন। আমি অপ্রস্তুত হয়ে তোতলাতে তোতলাতে কী বলেছি ভাল মনে নেই, তবে ময়না ভাই যে প্রায় ফসকে যাওয়া একজন ভোটারকে বাগে আনার প্রয়াসে অভিনয় করছেন না, তা তার কথার টোন থেকে অনুভব করলাম। আর নিশ্চিত হলাম, যখন তিনি বললেন, আমাকে আপনি ভোট দিবেন কি দিবেননা তা নিয়ে আর কথা বলবনা, তবে জুনিয়র কলিগ হিসাবে আপনি মনে কষ্ট পেয়েছেন এই চিন্তায় আমি সারারাত অস্থিরতায় কাটিয়েছি। আর কি রাগ থাকতে পারে? সেই শুরু, তারপর বহুদিন বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতিতে তার বিপরীত প্লাটফর্মে অবস্থান করেছি, কিন্তু ব্যক্তি ময়না ভাইকে ধীরে ধীরে ফিলসফার এবং গাইডের ভুমিকায় নিয়ে এসেছি নিজের অজান্তেই (বন্ধু শব্দটাকে ইচ্ছে করেই বাদ দিয়েছি; একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যায়, এই ভয়ে)।  আমাদের অন্তরঙ্গতা গড়ে উঠার পিছনে দুজনেরই বোধহয় আগ্রহ ছিল। আমার যে ষোল আনা ছিল তার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই। আমরা দুজনেই নওয়াবপুর গভর্নমেন্ট স্কুলের ছাত্র ছিলাম; প্রায় দশকের ব্যবধান হলেও বান্দরের ঘর, পণ্ডিত স্যার, বারী স্যার, নুরুল হক স্যার, উর্দু সেকশানের সাথে ঝগড়া মারামারি ইত্যাদি নিয়ে কথা উঠলে দুজনেই তন্ময় হয়ে যেতাম। এর মধ্যে আবার যুক্ত হয়েছেন নজরুল ভাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক, তার সবচেয়ে অন্তরঙ্গ বাল্যবন্ধু ও স্কুলের ক্লাসমেট, আর আমার বন্ধুর বড়ভাই-কাম দেশীয়, কাম পূর্বপরিচিত (এক অঞ্চলের বাসিন্দা)। নজরুল ভাই আমার সম্বন্ধে তাকে কিছু ভাল ভাল কথা বলে বিষয়টাকে আমার অনুকূলে নিয়ে এসেছেন, বুঝতে পারতাম। ময়না ভাইয়ের একভাই আবার কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন, এটাও আমাদের আলাপচারিতার অনেক কাঁচামালের যোগান দিত। জাহাঙ্গীরনগরে কালক্রমে আমার মতাদর্শিক বন্ধু বা শুভানুধ্যায়ীর সংখ্যা বেশ বড়ই হয়েছিল; কিন্তু ময়না ভাইর সাথে সম্পর্কটি গড়ে উঠেছিল কেবল মাত্র ব্যক্তিগত ভাল লাগার উপর ভিত্তি করে।  কালক্রমে অনেক ভাঙ্গা গড়া, চড়াই উতরাই পেরিয়ে জাহাঙ্গীরনগরের পলিটিক্স পলিটিক্স খেলায় আমরা কখন যে এক নৌকায় উঠে বসলাম মাঝে মাঝে তা ভাবলে অবাক লাগে। সেই কাহিনি বেশ চমকপ্রদ; স্থান সংকুলানের ভয়ে এখানে তার অবতারণা থেকে বিরত রইলাম; অন্য কোন সুযোগে তা বলা যাবে। এক কথায়, সেই প্রথম, দীর্ঘদিন উপেক্ষিত, অপাঙ্‌ক্তেয় এবং প্রান্তিক অবস্থানে থাকার পর জাহাঙ্গীরনগরের একাডেমিক ও প্রশাসনিক নীতি নির্ধারণে কিছুটা ভূমিকা রাখার সুযোগ এলো। ময়না ভাই হলেন ভাইস চ্যান্সেলর, আর আমার সুযোগ হল, তাকে প্রশাসক হিসাবে অতি কাছ থেকে দেখার; তার তদাবধি অপ্রকাশিত কিছু চমৎকার গুণাবলি প্রত্যক্ষ করার। সেই সম্বন্ধে কিছু বলার জন্যই এত দীর্ঘ ভণিতা।  তখনো মাসখানেক হয়নি ময়না ভাই ভিসি হয়েছেন, একদিন প্রফেসর মফিজউদ্দিন অর্থাৎ মফিজভাই প্রচণ্ড উত্তেজিত অবস্থায় আমার রুমে ঢুকলেন। তিনি এমনিতেই লাল, রাগে একেবারে সিঁদুরে লাল তার অবস্থা; বললেন “তাজুল ময়নাকে সামলান, আমার সহ্যের সীমা পার হয়ে গেছে”। আমিতো হতভম্ব। ময়না- মফিজ জোড়া নাম জাহাঙ্গীরনগরের শব্দ ভান্ডারে কিংবদন্তীসম, ময়না ভাই ভিসি হওয়ার পিছনে মফিজ ভাইয়ের অবদান আকাশচুম্বী, সেই মফিজ ভাইয়ের সহ্যের সীমা পার হয়ে যাওয়াতো হাত পা ঠান্ডা করে দেবার মত ঘটনা; বিশেষ করে আমরা যারা ময়না নামক ঘোড়াটির উপর বাজি ধরেছি তাদের জন্যতো বটেই। মফিজ ভাইয়ের সহ্য বিনষ্টকারী অভিযোগটি জানা গেল , “ ময়না কেন রেজিস্ট্রারের ঘরে যায়, কেন তাকে ডেকে এনে অর্ডার করেনা?” অভিযোগটি শুনে আমি বরং কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেলাম, কারণ ব্যাপারটা আমার কাছে ঠিক আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মত মনে হল না। আমাকে একটু নিশ্চুপ দেখে তিনি কী বুঝলেন জানিনা, হঠাৎ আমার হাত ধরে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে বললেন, চলেন এখনি ময়নার কাছে, একটা বিহিত করতে হবে। ময়না ভাই তো প্রথমে হেসেই খুন; কিন্তু মফিজ ভাইয়ের সিরিয়াস ভাবের কাছে তিনিও সিরিয়াস হলেন, বললেন, ”মোহাম্মদ আলী (রেজিস্ট্রার) আমার দীর্ঘ দিনের বন্ধু, তুমি তুমি সম্পর্ক। এখন ভিসি হয়েছি বলেই কি বন্ধুত্বকে বিসর্জন দিয়ে বস হয়ে বসতে হবে? এতটা অধঃপতনের (শব্দটা ঠিক কী ছিল মনে নেই, তবে এরকমই একটা কিছু) আগে আমি বরং ভিসিপদ ছেড়ে দিব।“ মফিজ ভাই ততটা কনভিন্সড হলেন না, তবে আর পীড়াপীড়িও করলেন না। আর আমি আবিষ্কার করলাম আরেক ময়না ভাইকে, ক্ষমতা বা পদ যাকে সামান্যতমও পরিবর্তন করতে পারেনি, আর নীতির প্রশ্নে যিনি তার ঘনিষ্ঠতম বন্ধু এবং শুভানুধ্যায়ীকেও অগ্রাহ্য করতে পারেন।  ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক জীবনে ভিন্ন ভিন্ন আবহের মধ্যে থাকতেই আমরা (অনেকে) স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। কিন্তু ময়না ভাই তার ব্যক্তিগত সারল্যকে প্রাতিষ্ঠানিক আবহেও এভাবেই খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছেন দেখে আমি সত্যিই সেদিন চমৎকৃত হয়েছিলাম। ময়না ভাইয়ের সারল্য ও মহানুভবতা নিয়ে আরো দু একটা ঘটনার কথা বলব, তবে তার আগে মফিজভাই’র সাথে তার আর একটি এপিসোডের উল্লেখ করার লোভ সামলাতে পারছিনা।  মফিজভাই ছিলেন অবিসংবাদিতভাবে জাবিতে বিএনপি ঘরানার এক নম্বর ব্যক্তিত্ব (অনেকটা পীরস্থানীয় বলা যায়)। তার প্রভাবেই ছাত্রদল প্রশাসনের সাথে সহযোগিতাপূর্ণ একটা অবস্থান নিয়ে চলত। বিএনপি সরকারের আমলে এর কিছুটা সুফল প্রশাসনের পক্ষে আসছিল। ছাত্রলীগ, ছাত্রইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট এরাও প্রশাসনের বেশ অনুকূলেই ছিল। আসলে তখনাবধি প্রশাসন-ছাত্র সংগঠনের অনৈতিক সমীকরণগুলি বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়েই তেমনভাবে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেনি; জাহাঙ্গীরনগরেতো অবশ্যই নয় (দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া) । সে যাই হোক মফিজভাই চাইলেন ছাত্র দলের নেতাদেরকে ভিসি সাহেব চায়ের দাওয়াত দিক, যাতে সরকারের উচ্চ মহলে প্রশাসনের একটা লিয়াঁজো গড়ে ওঠে। ময়না ভাই কিছুতেই সেটি করবেন না, কারণ তাহলে ছেলেরা মাথায় চড়ে বসবে। এ নিয়ে দুই বন্ধুর মুখ দেখাদেখি বন্ধের উপক্রম হলেও ময়না ভাই কিছুতেই তার অবস্থান থেকে সরে আসবেন না। অগত্যা মফিজভাইকেই সরে আসতে হল (মফিজভাই’র এই একটি গার্জিয়ানসুলভ গুণ ছিল, নিজের পছন্দ না হলেও কোন ইস্যুতে তিনি গোঁ ধরে থাকতেন না)। আজ পিছনে ফিরে তাকালে বুঝতে পারি, কী শক্ত নৈতিক অবস্থান থাকলে এ ধরনের চাপ উপেক্ষা করা যায়।  ছোট খাটো কিছু ঘটনায় ভিসি হওয়ার আগে থেকেই ময়না ভাইয়ের নৈতিক দৃঢ়তার সাথে আমার পরিচয় ঘটেছিল। সে রকম একটি ঘটনার কথা বলি। ছাত্রদের অনুরোধে পরীক্ষা পেছানো অর্থনীতি বিভাগের একটি মুদ্রাদোষে পরিণত হয়েছিল, যা ময়না ভাই তেমন পছন্দ করতেন না। কঠিন কোন পরীক্ষার আগের দিন অথবা ঐ দিন সকালে দেখা যেতো ভাল ছাত্রদের মধ্যে একজন গুরুতর অসুস্থ, আমাদের মেডিক্যাল সেন্টারের এই মরে তো সেই মরে ধরনের সার্টিফিকেট নিয়ে বন্ধুদের কয়েকজন পরীক্ষা কমিটির সামনে ধর্ণা দিয়ে বসে আছে, এত ভাল ছাত্রের ক্যারিয়ারটা যেন স্যাররা নষ্ট করে না দেন। সব কিছু বুঝেও কমিটির পক্ষে পরীক্ষা না পিছিয়ে উপায় থাকতনা। ময়না ভাই প্রায়শই বলতেন একবার না পিছিয়ে দেখিই না ছাত্ররা কতদূর যায়! কিন্তু ‘নিষ্ঠুর’ দুর্নামের ভয়েই হোক আর আন্দোলনের ভয়েই হোক, এক্সপেরিমেন্টটা কেউ করতে সাহস পেতনা। একবার এরকম এক ঘটনায় ফোকাসে চলে এলেন ময়না ভাই নিজেই।  ভাবীর আপন বোনপো (নাকি ভাইপো সঠিক মনে নেই, তবে অত্যন্ত নিকট আত্মীয়)- নামটা এখন মনে নেই- অসুস্থ হল এবং যথারীতি মেডিক্যাল সেন্টারের সুপারিশসহ পরীক্ষা স্থগিতের দরখাস্ত চলে এলো। কাকতালীয়ভাবে পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান হলেন ময়না ভাই; ফাইনাল কথাটি তিনিই বলবেন। অনেক কাতর অনুনয়, অনেক আবেগাত্মক চাপ উপেক্ষা করে ময়না ভাই তার সিদ্ধান্তে অটল রইলেন। ছেলেটি সিকবেডে (রাইটার নিয়ে নাকি নিজে, ঠিক মিনে নেই) পরীক্ষা দিতে বাধ্য হয়েছিল। আমার হিসাবে এর আগে আমরা যতগুলি পরীক্ষা পিছিয়েছি তার অন্তত সত্তর ভাগের চেয়ে তার অবস্থা খারাপ ছিল। এই যুক্তিটা ময়না ভাইকে দেবার পর তিনি বলেছিলেন ঐ সত্তর ভাগ ক্ষেত্রেই আমরা ভুল করেছিলাম, একখানে এসে তো ব্যাপারটা থামতে হবে। হ্যাঁ, ব্যাপারটা থেমেছিল। এরপর দীর্ঘদিন ডা. হান্নানের সুপারিশ সম্বলিত আবেদন আসা বন্ধ ছিল (ডা. হান্নান মেডিক্যাল সেন্টারের প্রধান, ছাত্র-সুহৃদ হিসাবে তিনি বেশ প্রসিদ্ধ ছিলেন), আর আসলেও আমরা উপেক্ষা করার মত মনোবল দেখাতে পারতাম। একবারতো ক্লাসের ফার্ষ্টবয়কেও রক্ত আমাশয় নিয়ে ( তার দাবি এবং ডাক্তারের সুপারিশ অনুযায়ী) পরীক্ষায় বসতে বাধ্য করেছিলাম।  মফিজভাই ঠাট্টা করে প্রায়শই বলতেন, ময়না একটা ভিতুর ডিম; অর্থাৎ সাহস করে বড় ধরনের অন্যায় তিনি করতে পারতেননা (ছোট মাঝারি কিছু অন্যায় যে তার আমলে হয়নি তা নয়, তবে ন্যায়ের ভাগ যে অনেক বেশি ছিল একথা তার অতি বড় শত্রুও স্বীকার করবেন)। কিন্তু নৈতিক প্রশ্নে তিনি যে সাহসের পরিচয় দিয়েছিলেন তা জাহাঙ্গীরনগরের ইতিহাসে উজ্জ্বলতম ঘটনা হিসেবে আজও অমলিন।  আমি তখন শহিদ সালাম বরকত হলের প্রভোস্ট; একদিন কাকভোরে ঘুম ভাঙল গুলি, বোমা আর স্লোগানের শব্দে। খবর এলো ছাত্র শিবিরের সশস্ত্র ছেলেরা বিভিন্ন হলে দখল নিয়েছে। বাড়ির ছাদে উঠে দেখলাম, উত্তরে আলবেরুনি আর দক্ষিণে কামাল উদ্দিন হলের ছাদে অস্ত্রধারীরা পাহারারত। আমার হলটা মাঝখানে মুক্ত অবস্থায় (তার প্রধান কারণ, হলটি চারদিক থেকে উন্মুক্ত)। তাদের দাবিনামা সম্বলিত লিফলেটও চলে এলো, যা নিয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে তারা আলোচনা করতে চায়। ইতিমধ্যে ভিসি সাহেবের নির্দেশ এলো, যে সমস্ত হলগুলি দখলমুক্ত সেখানে যেন প্রভোষ্টগণ হাউজ টিউটর সহ সার্বক্ষণিক অবস্থান নেন এবং সাধারণ ছাত্রদের মনোবল অটুট রাখার ব্যবস্থা করেন। তাই আর ভিসি অফিসে যাওয়া হল না, নিজের হল আগলেই বসে রইলাম। ক্ষণে ক্ষণে দখলকারীদের হুমকি আসতে লাগলো, তাদের সাথে আলোচনায় না বসলে তারা চরম ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। এদিকে ভিসি সাহেব অনড়, হল দখলে থাকা অবস্থায় তাদের সাথে কোন রকম আলোচনায় যাবেনা প্রশাসন; বরং তিনি বার বার পুলিশকে তাগাদা দিচ্ছেন হলে ঢোকার জন্য। বি এন পির তৎকালীন রাজনৈতিক সমীকরণের কারণেই হোক(বিএনপি তখন সরকারে), বড় ধরনের ক্ষয় ক্ষতির ভয়েই হোক আর পুলিশের নিজস্ব নিরাপত্তার চিন্তায়ই হোক, বেলা গড়িয়ে গেলেও রেইড আর হয়না। একপর্যায়ে ভিসি সাহেব ছাত্র শিক্ষক কর্মচারীদের নিয়ে রাস্তায় নামলেন, তিনি হলে ঢুকবেন, পরিণতি যাই হোক। উপায়ান্তর না দেখে পুলিশকে তড়িঘড়ি করে হল রেইড করতে হল; আর বহ্বারম্ভে লঘু ক্রিয়ার মতো অনায়াসেই দখলকারীদের কাবু করে ফেললো।  এই ক্লাইমেক্স সময়টিতেই আমি মিস করেছি, সেসময় নিজের হল সামলানোর ব্যস্ততায়। তবে এই ঘটনা ‘ভিতুর ডিম’ আমিরুল ইসলাম চৌধুরীকে কোন্‌ উচ্চতায় নিয়ে গেছে তা অনুভব করেছি ক্ষণে ক্ষণে, ক্যাম্পাসের সর্বত্র ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারী, পথচারী সকলের আলাপচারিতায়। আমার এক পুরানো ছাত্র বর্তমানে এক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার কলিগ। সে যখন ছাত্র তার অনেক আগেই ময়না ভাই ডিপার্ট্মেন্ট ছেড়েছেন। একদিন কথায় কথায় সে যখন জানালো তাদের সময়ও এই কাহিনি ক্যাম্পাসে সজীব ছিল তখন বুঝতে পারলাম জাবি ইতিহাসের কোথায় স্থান করে নিয়েছেন আমিরুল ইসলাম চৌধুরী।  ময়না ভাই’র আরো দুয়েকটা মানবিক বৈশিষ্ট্যের কথা বলব বলেছিলাম। সেটি দিয়েই শেষ করছি: আমি বেশ কয়েক বছর ময়না ভাইয়ের সাথে কোরবানি দিয়েছি। আমি আর ময়না ভাইই হাটে গিয়ে গরু কিনতাম, কোনোবার আশুলিয়া, কোনোবার কালামপুর কোনোবার এমনকি গাবতলী পর্যন্ত গিয়ে। ময়না ভাই গরুর পরে অবশ্যই একটা খাসি কিনতেন। এটা তিনি কিনতেন জামাই কিংবা বেয়াই খাওয়ানোর জন্য নয়। তার খাসীর বিশেষ অতিথিরা ছিলেন ক্যাম্পাসের অমুসলিম অধিবাসীগণ। ঈদের পরদিন তারা সকলে তার বাসায় নিমন্ত্রিত ছিলেন। ময়না ভাই প্রত্যেককে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিমন্ত্রণ করতেন, কখনো টেলিফোনে দাওয়াত দিতেন না।  একবার ঈদের দিন বিকেলবেলা ময়না ভাই’র বাসায় এসেছিলাম, দেখি তিনি গাড়িতে করে বের হয়ে যাচ্ছেন। তিনি বিশমাইলের দিকে যাচ্ছেন, আমিও সাথে উঠে বসলাম। বিশমাইল এসে আমাকে বসতে বলে গাড়ি থেকে নামলেন, সাথে একটা পোটলা গোছের। মিনিট দশেক পর ফিরে আসলে কথায় কথায় বের হল তিনি জাফরের বাসায় কোরবানির মাংস নিয়ে এসেছিলেন; সিরাজ (পিয়ন) বাসায় নেই তাই তিনিই দিয়ে গেলেন। জাফর অর্থনীতি বিভাগের পিয়ন, আর আমিরুল ইসলাম চৌধুরী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। এই হলেন ময়না ভাই। পদমর্যাদা তুচ্ছ করে পিয়নের বাসায় কোরবানির মাংস বয়ে আনা, গুলিখাওয়া ছাত্রের মৃত্যুশয্যায় রাতের পর রাত হাজিরা দেয়া, রাস্তা অবরোধকারী ছাত্রদেরকে ঘরে ফিরিয়ে আনতে গভীর রাত পর্যন্ত তাদের সাথেই আরিচা রোডে বসে থাকা, এসব কি আমাদের সমাজের খুবই পরিচিত ছবি? মনে হয়, না।  একবার একটা লেখা পড়েছিলাম ব্রাজিল ফুটবল টিম, পেলে এসব নিয়ে। যারা খবর রাখেন তারা জানেন, সেই ১৯৫৮’র বিশ্বকাপ থেকে পেলে আর ব্রাজিল প্রায় সমার্থক। তবে একজন ব্রাজিলিয়ানকে জিজ্ঞাসা করলে সে আরেকটা নাম বলবে। তার আসল নামটা অনেক বড়, তবে ব্রাজিলিয়ানরা তাকে ডাকত টুনটুনি গোত্রের ছোট্ট একটা পাখি, গারিঞ্চা নামে। সেই ৫৮ থেকে ৭০ পর্যন্ত বিশ্ব ফুটবলের একচ্ছত্র কর্তৃত্বকারী ব্রাজিল দলের প্রাণভোমরা ছিল পেলে আর গারিঞ্চা। একটা রেকর্ড আছে, পেলে আর গারিঞ্চা একসাথে দলে ছিল এরকম কোন খেলায় ব্রাজিল কখনো হারেনি। ৬২’র বিশ্বকাপতো বলতে গেলে গারিঞ্চা একাই ঘরে তুলল, পেলে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই ইনজুরিতে পড়ার পর। কালক্রমে ব্যক্তিত্ব, নেতৃত্ব, উচ্চাভিলাষ, নিজেকে তুলে ধরার ক্ষমতা ইত্যাদির মধ্যদিয়ে পেলে আন্তর্জাতিক ফুটবলে চিরস্থায়ী আসন করে নিলেন, আর গারিঞ্চা? বোদ্ধা মহলে এখনো সমান মূল্যায়িত হলেও ( সর্বশেষ, এক্সপার্ট ভোটে শতাব্দীর সেরা বিশ্বদলে স্থান পেয়েছেন) এলেবেলে গোছের লোকটি ঐ সব গুনাবলীর অভাবে আস্তে আস্তে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে, সাধারণ ফুটবল প্রেমিকদের কাছে প্রায় অচেনা হয়ে উঠলেন। কিন্তু ব্রাজিলে যান, সেখানকার চিত্র ভিন্ন। এখনো সেখানে পেলে গারিঞ্চা সমান ভাবে উচ্চারিত নাম।  আর সবচেয়ে মজার কথাটি কী জানেন? একজন ব্রাজিলিয়ানকে যদি জিজ্ঞাসা করেন পেলে আর গারিঞ্চাকে তিনি কীভাবে তুলনা করেন, সবচেয়ে সম্ভাব্য উত্তরটি হল,” পেলেকে আমরা শ্রদ্ধা ( এডমায়ার) করি, আর গারিঞ্চাকে আমরা ভালোবাসি”। পেলে ছিলেন স্টার, সেলিব্রিটি, আর গারিঞ্চা ছিলেন তার সরল, হুল্লুড়ে বেপরোয়া জীবন নিয়ে একেবারেই মাটির মানুষ, সাধারণের কাছের মানুষ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ভিসি এসেছেন- কাজে, দক্ষতায়, নেতৃ্ত্বগুণে তারা শ্রদ্ধার আসনে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু আমার বিশ্বাস, মানুষের ভালবাসা অর্জনের ক্ষেত্রে আমিরুল ইসলাম চৌধুরি হলেন জাহাঙ্গীরনগরের গারিঞ্চা। লক্ষ্য করেছেন? ‘গারিঞ্চা’ এবং ‘ময়না’, দুটিই খুব লোকপ্রিয় পাখি! (প্রফেসর আমিরুল ইসলাম চৌধুরি ৮৪ বছরে পদার্পণ করেছেন। তার সুস্থ শতায়ু কামনা করি)  মো. তাজুল ইসলাম: ভূতপূর্ব প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন 
২৪ মে, ২০২৪

মৌলভীবাজার সদরের নির্বাচনে স্থিতাবস্থা জারি
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার নির্বাচন ৭ দিনের জন্য স্থিতাবস্থা জারি করেছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে এই সময়ের মধ্যে সদর উপজেলার চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী মো. তাজুল ইসলাম তাজের মনোনয়নপত্রের বৈধতা নিয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। বৃহস্পতিবার (১৬ মে) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ৮ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে তাজের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম, সাঈদ আহমেদ রাজা। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। ইসির পক্ষে ছিলেন এম খালেকুজ্জামান। জানা যায়, মৌলভীবাজার সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে গত ২১ এপ্রিল মনোনয়নপত্র জমা দেন মোস্তফাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম তাজ। দুদিন পর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ২৩ এপ্রিল তাজের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার রিটার্নিং অফিসার আব্দুস সালাম। কিন্তু পাঁচ দিন পর ২৮ এপ্রিল চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী মো. তাজুল ইসলাম তাজের মনোনয়নপত্র আপিল শুনানিতে বাতিল ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক ও আপিল কর্তৃপক্ষ ড. উর্মি বিনতে সালাম। পরে তাজুল ইসলাম তাজ মনোনয়নপত্র ফিরে পেতে উচ্চ আদালত হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। গত ৯ মে মো. তাজুল ইসলাম তাজের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে বিচারপতি মো. ইকবাল কবির ও মো. আখতারুজ্জামানের যৌথ বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন। এক‌ইসঙ্গে দ্রুত প্রার্থিতা ফিরিয়ে দিয়ে নির্বাচন করার জন্য রুল জারি করা হয় এ যৌথ বেঞ্চ থেকে। এ বিষয়ে তাজুল ইসলাম তাজ বলেন, আমি আমার ন্যায্য অধিকার ফিরে পেতে চাই। আমার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছিল। আমি হাইকোর্টে এসে ন্যায়বিচার পেয়েছিলাম। আবার চেম্বার আদালতে আপিল করা হয়েছিল। চেম্বার আদালতও আমার প্রতি ন্যায়বিচার করে আপিল খারিজ করেছেন। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার তিন লাখ ভোটার তাদের ভোটপ্রয়োগের জন্য অপেক্ষা করছেন। উল্লেখ্য, আগামী ২১ মে মৌলভীবাজার সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু চেয়ারম্যান পদে দুজন প্রার্থীর মধ্যে তাজের মনোনয়নপত্র বাতিল হ‌ওয়ায় প্রতীক বরাদ্দ না দিয়ে কামাল হোসেনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়।
১৬ মে, ২০২৪

হাইকোর্টে প্রার্থিতা ফিরে পেলেন মৌলভীবাজারের তাজ
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী মো. তাজুল ইসলাম তাজের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।  বৃহস্পতিবার (৯ মে) সকালে বিচারপতি মো. ইকবাল কবির ও মো. আখতারুজ্জামানের যৌথ বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। এক‌ইসঙ্গে দ্রুত প্রার্থিতা ফিরিয়ে দিয়ে নির্বাচন করার জন্য রুল জারি করা হয়েছে।  জানা যায়, গত ২৮ এপ্রিল মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী মো. তাজুল ইসলাম তাজের মনোনয়নপত্র আপিল শুনানিতে বাতিল ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক ও আপিল কর্তৃপক্ষ ড. উর্মি বিনতে সালাম। এরপর তাজুল ইসলাম তাজ মনোনয়নপত্র ফিরে পেতে উচ্চ আদালত রিট আবেদন করেন। হাইকোর্ট তাজের রিট আবেদন গ্রহণ করে বৃহস্পতিবার রুল জারি করেন। তাই এখন তাজুল ইসলাম তাজের নির্বাচনে অংশ নিতে আর কোনো বাধা থাকলো না। রিটের শুনানি শেষে হাইকোর্ট নির্বাচন কমিশনের দেওয়া আদেশ স্থগিত করে তাদের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি রুল জারি করেছেন। এ বিষয়ে তাজুল ইসলাম তাজ বলেন, আমি আমার অধিকার ফিরে পেয়েছি। আমার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছিল। এখন ন্যায়বিচার ফিরে পেয়েছি। জনগণ আগামী ২১ মে আমাকে ভোট দিয়ে তাদের রায় দেবেন। উল্লেখ্য, আগামী ২১ মে মৌলভীবাজার সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু চেয়ারম্যান পদে দুজন প্রার্থীর মধ্যে তাজের মনোনয়নপত্র বাতিল হ‌ওয়ায় প্রতীক বরাদ্দ না দিয়ে কামাল হোসেনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। 
০৯ মে, ২০২৪

তরুণদের কাজে লাগাতে পারলেই অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে : তাজুল ইসলাম
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার যে বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠী রয়েছে তাদের কর্মক্ষমতাকে কাজে লাগাতে পারলেই আমাদের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। শনিবার (৪ মে) ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। তাজুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের যে অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে উদ্যোক্তারাই পারে তাকে শক্তিশালী ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে। কারণ উদ্যোক্তারা শুধু নিজে স্বাবলম্বী হয় না তারা সমাজের আরও দশজনকে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেয়। মন্ত্রী বলেন- গুগল, ফেসবুক, মাইক্রোসফট ও টেসলার মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোক্তারা ছিল বলেই আজ সারা বিশ্বে আমেরিকা নেতৃত্ব করতে পারছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত হতে হলে বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদেরও বিভিন্ন নতুন নতুন ধ্যান-ধারণা নিয়ে কাজ করে সেগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন করতে হবে। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, একসময়ের খাদ্য ঘাটতির বাংলাদেশ আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বে খাদ্যের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। বিএনপি আমলে বিদ্যুৎ উৎপাদন মাত্র ১৬০০ মেগাওয়াট ছিল, বর্তমানে বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে দেশের প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিয়েছে সরকার। এ ধরনের বিভিন্ন উদ্যোগ টেকসই করার জন্য অর্থনৈতিকভাবে আমাদের আরও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে করে মন্ত্রী বলেন, উদ্যোক্তা হতে গেলে সবচেয়ে বড় যে গুণাবলি নিজের মধ্যে ধারণ করতে হবে তা হচ্ছে আত্মবিশ্বাস এবং কোনো বাধাতেই হাল না ছেড়ে দেওয়ার মনোবৃত্তি। উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের ব্যবসা দাঁড় করাতে গেলে নানা রকমের প্রতিবন্ধকতা আসবে। সামনে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় বিশ্বাসই একজন উদ্যোক্তার অন্যতম পুঁজি যা তাকে কখনোই পরাজিত হতে দিবে না। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন, জারা মাহবুব, আমেরিকান অ্যাম্বাসির ইকোনমিক ইউনিট চিফ জোসেফ গিবলিন, গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান, স্টার্টআপ বাংলাদেশ ম্যানেজিং ডিরেক্টর সামি আহমেদ। উল্লেখ্য, নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বাংলাদেশের ৬৪ জেলা, ৪৯২টি উপজেলা ও ৫০টি দেশ থেকে সাড়ে ১২ লাখ তরুণ-তরুণীকে টানা ৯০ দিনব্যাপী ২৬টি ব্যাচে অনলাইনে উদ্যোক্তা তৈরির কর্মশালার টানা ২৩০০তম দিন উপলক্ষ্যে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
০৪ মে, ২০২৪

দেশকে এগিয়ে নিতে কৃষির আধুনিকায়ন ছাড়া বিকল্প নেই : তাজুল ইসলাম
দেশকে এগিয়ে নিতে কৃষির আধুনিকায়ন ছাড়া বিকল্প ব্যবস্থা নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বে কৃষির সব স্তরে উন্নত প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগলেও আমাদের দেশের কৃষি খাতে বিশেষ করে খামার যান্ত্রিকীকরণে এখনো অনেক উন্নতির সুযোগ রয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটিতে তিন দিনব্যাপী ১২তম আন্তর্জাতিক কৃষি প্রযুক্তির মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।  স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে কৃষি ও ভাগ্যাহত কৃষককুলের উন্নয়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে বিভিন্ন কর্মসূচি। তিনি বলেন, প্রচলিত সনাতন ধারার কৃষি প্রযুক্তির পরিবর্তনে খামার যান্ত্রিকীকরণের পাশাপাশি উন্নত প্রযুক্তি ও কলাকৌশল এর সমন্বয় সাধন একান্ত প্রয়োজন।  মন্ত্রী কৃষি ও শিল্প খাতে দেশের অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি সেক্টর উল্লেখ করে বলেন, এই দুটি খাতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার হলে দেশে সেবাখাতের বিকাশ হবে। তাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন এবং এর উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিতে সরকারি সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, কৃষি ও কৃষি সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি উৎপাদক, প্রযুক্তি সম্প্রসারণকারী শিল্প ও প্রতিষ্ঠানসমূহের অংশগ্রহণে এই প্রযুক্তি মেলা কৃষিখাতকে সমৃদ্ধ করবে।  অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সিনিয়র সচিব মোসাম্মাৎ হামিদা বেগম, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. আব্দুল ওয়াদুদ, পল্লী উন্নয়ন একাডেমি বগুড়ার মহাপরিচালক মো. খুরশিদ ইকবাল রেজবী এবং লিমরার চেয়ারম্যান কাজী ছারোয়ার উদ্দিন।
২৫ এপ্রিল, ২০২৪

বিআরটিসিতে দুর্নীতি ১৫ ভাগে নেমে এসেছে : তাজুল ইসলাম
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন-বিআরটিসিতে অনিয়ম-দুর্নীতি কমিয়ে এখন ১০ থেকে ১৫ ভাগে নেমেছে বলে দাবি করেছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম।  তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানের অপকর্মকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না। স্বচ্ছতার ব্যাপারে কোনো আপোস নয়। চেয়ারম্যান ও ডিপো ম্যানেজার ঠিক থাকলে বিআরটিসিতে অনিয়ম হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নতুন কোনো বাস না আসলেও গত তিন বছরে প্রতিষ্ঠানের আয় বেড়েছে ৮০ ভাগ। যাত্রী বেড়েছে দ্বিগুন।  সোমবার (১৮ মার্চ) রাজধানীর দিলকুশায় বিআরটিসি ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিয়কালে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় গত তিন বছরে বিআরটিসিকে লাভজনক করাসহ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন তিনি।  নিজেরা গাড়ি তৈরির ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, বিআরটিসি এখন গাড়ি তৈরির সক্ষমতা অর্জন করেছে। ইঞ্জিন ও চেসিস এনে আমরা নিজস্ব কারখানায় গাড়ি বানাবো। ১৫ দিনের মধ্যে গাড়ি তৈরির সক্ষমতা অর্জন করেছি। প্রাথমিকভাবে পাঁচটি গাড়ি তৈরির পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।  কাজ না করায় ৩৭ জন কর্মকর্তা কর্মচারির বেতন ভাতা বন্ধের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের মধ্যে ১৫জন অফিসার রয়েছেন। তাজুল ইসলাম বলেন, কাজ না করে কেউ এখানে থাকতে পারবে না। ২০ বছর পর একজন চালককে কাজে নামানোর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, কাজ না করেই তিনি এতোদিন বেতন নিয়েছেন।  বিগত দিনে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে গাড়ি বসিয়ে রেখেছে তাদের তালিকা তৈরি হচ্ছে জানিয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, আগে ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি ছিল বলেই বিআরটিসির অর্থ জমা হতো না।  ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে বনানী বিদ্যা নিকেতনে প্রথম স্মার্ট স্কুল বাস সার্ভিস চালু হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর বিশেষত্ব হলো বাস থেকে শিক্ষার্থীরা নামা ও ওঠার পর অভিভাবকরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসএমএস পাবেন। ৯টি মহিলা বাস সার্ভিস ও নগর পরিবহনে লস দিয়ে গাড়ি পরিচালনা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, যাত্রী যানবাহনের নিরাপত্তায় ১০২৭টি গাড়িতে ব্যবহার করা হচ্ছে ভিটিএস প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির কারণে ট্রাক থেকে আয় বেড়েছে অনেক বেশি। আসন্ন ঈদ, বৈশাখী ভাতা সহ মাসিক ভাতা মিলিয়ে এপ্রিলে প্রতিষ্টানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ১৯ কোটি টাকা সময়মতো পরিশোধ করা হবে বলেও জানান প্রতিষ্ঠান প্রধান।  যে প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে স্বচ্ছ হবে, সে প্রতিষ্ঠান ততো বেশি শক্তিশালী হবে উল্লেখ করে বিআরটিসি চেয়ারম্যান বলেন, ২০২১ সাল থেকে ২৩ কোটি ১২ লাখ ৯১ হাজার সিপিএফ, গ্র্যাচুয়িটি বাবদ ৩৪ কোটি ৫২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে।  আগামী জুলাই অথবা আগস্ট মাসের মধ্যে ৩৪০টি সিএনজি চালিত নতুন বাস কোরিয়া দেশে আমদানি করতে এপ্রিলেই টেণ্ডার আহ্বান করা হবে বলে জানান তিনি। বলেন, নতুন বাসের মধ্যে ঢাকায় ১২০ ও চট্টগ্রামে ১২০টি চলবে। তিনি বলেন, নতুন বাস আমদানিতে মানের ব্যাপারে কোন আপোস করা হবে না। ইচ্ছেমত বাস গছিয়ে দেওয়ার দিন শেষ।  আগামী এক বছর বিআরটিসি কোন আয় না করলেও প্রতি মাসের এক তারিখ বেতন দেয়া সম্ভব দাবি করে তাজুল ইসলাম বলেন, যাত্রা শুরু করেছি, বহুদূর যেতে চাই। তিনি বলেন, ২০২০ সালে ১ হাজার ৮২৫টি বাসের মধ্যে ৮৮৫টি বাস অনরুট ছিল।  ২০২৩ সালে ১ হাজার ৩৫০টি বাসের মধ্যে ১ হাজার ২৫৩টি বাস চলাচল করছে।  বসে যাওয়া আর্টিকুলেটেড বাসের মধ্যে ৩০টি সচল করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বিআরটিসির ছয়টি পর্যটন বাস রাস্তায় চলাচল করছে।  ১০ ভাগ চালকের হাতে ভারি যানবাহনের লাইসেন্স নেই জানিয়ে তিনি বলেন, চালকদের দক্ষ করে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। বর্তমানে ৩৪টি গাড়ি লীজে চলছে। আস্তে আস্তে তা শুণ্যের কোথায় নামিয়ে আনা হবে।  তিনি বলেন, বিআরটিসি বাসে কেউ দুর্ঘটনার শিকার হলে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে চিকিৎসা ব্যয় বহন করা হচ্ছে। চালকের কারণে কারও মৃত্যু হলে তাকে ফৌজদারি মামলায় আসামি করা হবে।   আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিআরটিসি ৫৫০টি বাস দূরপাল্লার বিভিন্ন রুটে চলবে বলেও জানান প্রতিষ্ঠান প্রধান। এ সময় বিআরটিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
১৮ মার্চ, ২০২৪
X