ভোক্তা পর্যায়ে এসে দ্বিগুণ হচ্ছে ডিমের দাম
রাজধানীর বাজারে লাফিয়ে বাড়ছে ডিম ও মুরগির দাম। সাধারণত কোরবানির সময় ডিম ও মুরগির দাম কম থাকে; তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। হঠাৎ করে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম অস্বাভাবিক বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষ। মূল্যবৃদ্ধির পেছনে ব্যবসায়ীরা পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনকে দায়ী করলেও তাদের অভিযোগ অন্যদের বিরুদ্ধে। তারা বলছেন, তেজগাঁও ডিম সমিতি সিন্ডিকেট করে বাড়াচ্ছে ডিম ও মুরগির দাম। বর্তমান বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম দ্বিগুণ। খামার পর্যায়ে ডিম প্রতি পিস সাড়ে সাত টাকা বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে হয় তেরো টাকা। খামারি পর্যায়ে যে মুরগি ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, তা খুচরা বাজারে ২০০ টাকা। ঈদের সময় কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও ফের ডিম ও মুরগির দাম বাড়ছে। গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল খুচরা বাজারের একটি দোকানে এক হালি ডিম কিনতে চাইলে দোকানি ৫২ টাকা মূল্য দাবি করেন। এ হিসাবে ডজন পড়ে ১৫৬ টাকা। তবে ওই দোকানেই ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকায়। এদিকে খুচরা বাজারগুলোতে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকা। নিউমার্কেট কাঁচাবাজার, নয়াবাজার, হাতিরপুল বাজারসহ কয়েকটি বাজারেও একই দামে ডিম বিক্রি করতে দেখা যায়। প্রান্তিক পর্যায়ের ডিমের খামারিদের অভিযোগ, যে দামে ডিম ও মুরগি বিক্রি হচ্ছে, এর সুফল তারা ভোগ করছেন না। ডিমের দাম বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ডিম ব্যবসায়ী সমিতির দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন প্রান্তিক খামারিরা। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে বিভিন্ন বাজারের ডিম ব্যবসায়ীরা বলছেন, মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে বাড়ছে দাম। রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার কাপ্তানবাজার। বৃহস্পতিবার ভোরে কাপ্তানবাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশের প্রান্তিক অঞ্চল থেকে ট্রাক বোঝাই করে মুরগি ও ডিম আসছে। এ সময় কাপ্তানবাজারের কয়েকজন পাইকারি ডিম ও মুরগি ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। পাইকারি ডিম ব্যবসায়ী মেসার্স জহিরুল ট্রেডার্সের ম্যানেজার ওয়াসিম উল্লাহ বলেন, আজকের বাজারে (বৃহস্পতিবার) ডিমের চাহিদার তুলনায় আমদানি কম হলে দাম বাড়বে। আবার চাহিদার তুলনায় আমদানি বেশি হলে দাম কমবে। রাজধানীর বাজারে ডিমের দাম নির্ধারণ করে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন, ডিম সমিতি। তারা প্রতিদিন ভোররাতে আমাদের ফোনের মাধ্যমে জানিয়ে দেয় ওইদিন প্রতি পিস ডিমের দাম কত হবে। এতে আমরা যারা প্রতিদিনই খামারিদের কাছ থেকে ডিম কিনি এবং রাজধানীর বাজারে পাইকারি বিক্রি করি, তাদের কখনো লাভ আবার কখনো লোকসান হয়। তিনি বলেন, গতকাল (বুধবার) আমার দোকানে ২ লাখ পিস ডিম ঢুকেছে। কিন্তু সব ডিম তো আর এক দিনে বিক্রি করতে পারিনি। গতকাল পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন প্রতি একশ পিস ডিমের দাম নির্ধারণ করেছিল ১ হাজার ১১০ টাকা। আজ (বৃহস্পতিবার) আবার ১০ টাকা কমিয়ে ১ হাজার ১০০ টাকা নির্ধারণ করেছে। গতকাল যে ডিম বিক্রি হয়নি, সেটা আজ ১০ টাকা লোকসানে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে আমরা খামারিদের কাছ থেকে প্রতি পিস সাড়ে সাত টাকা করে কিনি। পরিবহন খরচ ও অন্যান্য খরচ আরও দুই টাকা ধরুন। তারপর কর্মচারীদের বেতন ও দোকান ভাড়া দিয়ে যা থাকে, তা আমাদের লাভ। কিন্তু সবসময় লাভ হয় না। কোনো কোনো সময় লোকসানও গুনতে হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার কালবেলাকে বলেন, আমরা ডিম বা মুরগির দাম নির্ধারণ করি না। মূলত তেজগাঁও ডিম সমিতি সিন্ডিকেট করে ডিম বা মুরগির দাম বাড়ায়। আমরা সরকারকে অনেকবার বলেছি এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে, কিন্তু নেয়নি। তবে তেজগাঁও ডিম সমিতির সভাপতি আমান উল্লাহ কালবেলাকে বলেন, আমরা ডিমের দাম বাড়াই না, নির্ধারণও করি না। আমরাও সরকারকে বলেছি, যারা ডিমের দাম নির্ধারণ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। তবে কারা নির্ধারণ করে, সে সম্পর্কে তিনি কিছু বলেননি। কাপ্তানবাজারের আরেক পাইকারি ডিম ব্যবসায়ী মোহম্মদ আলী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী রেজাউল করিম বলেন, এবার কোরবানি হয়েছে মাসের মাঝখানে। মানুষের কাছে টাকা নেই। কোরবানি করতে ঢাকার বেশিরভাগ মানুষই গেছে গ্রামে। সেখানে ব্যয় হয়েছে বেতন-বোনাসের টাকা। তারা এখন ঢাকায় এসেছে, তাদের হাত খালি। মাছ-মাংস না খেয়ে খরচ বাঁচাতে গিয়ে এখন ডিম খাচ্ছে। ফলে ডিমের চাহিদা বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বাড়েনি। ফলে দাম বেড়েছে। তিনি বলেন, রাজধানীর ডিমের দাম নির্ধারণ করে তেজগাঁও। সেখান থেকে আমরা তাদের নির্ধারিত দামে ডিম কিনি এবং বিক্রি করি। আমরা চাইলেই বাড়তি দামে বা কম দামে ডিম বিক্রি করতে পারি না। এদিকে কাপ্তানবাজারের পাইকারি মুরগি ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) ব্রয়লার মুরগির পাইকারি দাম কেজি ১৫০-১৬০ টাকা। আমরা খামারিদের কাছ থেকে ১৩০-১৪০ টাকা কেজি দরে কিনে আনি। তবে রাস্তায় ওমুক টোল, তমুক ফি দিতে গিয়ে তো আমরা শেষ। আমরা কাপ্তানবাজারে ট্রাক থেকে মুরগি নামানো মাত্রই সিটি টোলের নামে ৫০০ টাকার রসিদ ধরিয়ে দেওয়া হবে। এসব খরচ যোগ করে সামান্য লাভ করি আমরা। এর মধ্যেই দিতে হয় দোকান ভাড়া ও কর্মচারীদের বেতন। কাপ্তানবাজারে মুরগি সাপ্লাই দেন ফরিদপুরের খামারি আক্কাস আলী। তিনি বলেন, আমাদের মুরগি ও ডিমের উৎপাদন খরচ বেশি হলেও কম দামে বিক্রি করতে হয় পাইকারদের কাছে। কিন্তু সেই ডিম ও মুরগি আবার ঢাকায় নাকি খুচরা বাজারে দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। আমরা কেজিপ্রতি মুরগি ১২০ টাকা বিক্রি করি এবং ডিম প্রতি পিস ৭ টাকা থেকে সাড়ে ৭ টাকায় বিক্রি করি। এদিকে হাতিরপুল বাজারে বাজার করতে আসা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, দিনকে দিন সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে ডিম ও মুরগির দাম। এখনই দামের লাগাম টেনে না ধরলে, এগুলো কেনা অসম্ভব হয়ে উঠবে। প্রতি বছর কোরবানির আগে ও পরে মুরগি এবং ডিমের দাম কমলেও এ বছর তার ব্যতিক্রম। শুধু দাম বাড়ছেই, কমার কোনো নামগন্ধ নেই। এদিন রাজধানীর নিউমার্কেট কাঁচাবাজারে খুচরা ডিম ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা মূলত প্রতি পিস ডিম কিনে আনি ১১-১২ টাকা। পরিবহন খরচ ও অন্যান্য খরচসহ লাভ রেখে ১৩-১৪ টাকায় বিক্রি করছি। নিউমার্কেট কাঁচাবাজারের ক্রেতা মোকারম বলেন, ঈদের পর সবজি থেকে শুরু করে মুরগি-ডিম সবকিছুর দাম বেশি। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব কিছু আমাদের মতো সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। মাছের বাজারে তো এখন যাওয়া যাচ্ছে না; যে দাম। সেদিক থেকে ডিম ও মুরগির দাম কম। তাই কষ্ট হলেও মুরগি কিনলাম। হাতিরপুল বাজারের মুরগির খুচরা ব্যবসায়ী মামুন বলেন, আমরা যে পরিমাণ চাহিদা দিই, সেই পরিমাণ মুরগি পাই না। সরবরাহ অনেক কম, আবার দামও বেশি। রাতে যখন কাপ্তানবাজার থেকে মুরগি নিয়ে আসি কয়েকটি জায়গায় পুলিশসহ অনেককে একশ-দুইশ টাকা দিতে হয়। ফলে এই টাকা যুক্ত হয় মুরগির মূল দামের সঙ্গে।
২৮ জুন, ২০২৪

হাত বদলে ডিমের দাম ৪ টাকা বাড়ছে
মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় প্রায় ২ হাজারের মতো লেয়ার, ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির খামার রয়েছে। এর মধ্যে ৪৩টি খামার রয়েছে লেয়ার মুরগির। আর এসব মুরগির খামার থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৮ লাখের উপরে ডিম উৎপাদন হয়। তবে গত ১ সপ্তাহের ব্যবধানে খামার থেকে প্রতি পিস ডিম ৩ থেকে ৪ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে প্রায় সাড়ে ১১ টাকার ওপরে। এতে ১০০ পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১৬০ টাকা দরে। পাইকারি বাজারে ফার্মে থেকে প্রতি ডজন ডিম এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা দরে, যা প্রতি পিস ডিমের দাম পরে ১৩ টাকার ওপরে। এদিকে, খুচরা বাজার ও পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা দরে। এতে প্রতি পিস ডিমের দাম পরছে ১৪ টাকার উপরে, যা পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে ১ টাকা পিস বৃদ্ধি পেয়ে ডজন প্রতি ১২ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে। আব্দুল মতিন ডিমের আড়তদের স্বত্বাধিকারী মো. আব্দুল মতিন জানান, ফার্ম থেকে প্রতি পিস ডিম ১১ টাকা ৬০ পয়সা দরে ক্রয় করতে হচ্ছে, যা আমদের প্রতি পিস বিক্রি করতে হচ্ছে ১৩ টাকা দরে। এতে এক ডজন ডিমের দাম পরছে ১৬০ টাকা। আর সাদা ডিম পড়ছে ১৫৫ টাকা। ভাই ভাই পোলট্রি ফার্মের স্বত্বাধিকারী হুমায়ূন গাজী জানান, মুরগির খাবার তৈরির মূল উপাদান তৈল আর ভুট্টা। বর্তমানে এর দাম অনেক বেশি। পাশাপাশি পরিবহন খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই মুরগির উৎপাদন খরচ বেশি হওয়াতে মুরগিসহ ডিমের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। তা ছাড়া ফার্ম থেকে কয়েক হাত হয়ে ভোক্তাদের কাছে যাওয়ার পর তা প্রতি পিস ৩ থেকে ৪ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে। তবে এখানে পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজির কোনো বিষয় নেই। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম, গত ১ সপ্তাহের ব্যবধানে ফার্ম থেকে প্রতি পিস ডিম ৩ থেকে ৪ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত সপ্তাহে প্রতি পিস ডিম ৮ থেকে ৯ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে, যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১১ টাকা ওপরে। জেলায় ৪৩টি লেয়ার, ১৫০০ ব্রয়লার ও ৩৬০ টি সোনালি মুরগির খামার রয়েছে। ৬টি উপজেলার মধ্যে ডিম দেওয়া লেয়ার মুরগির খামার সবচাইতে বেশি মুন্সীগঞ্জ সদর, শ্রীনগর ও গজারিয়া উপজেলায়। প্রতি মাসে এসব খামার থেকে ৮ লাখ ২২ হাজার ডিম উৎপাদন হয়।  তিনি আরও বলেন, জেলায় চাহিদার তুলনায় দুধ, মাংস ও ডিমের উৎপাদন বেশি রয়েছে।
২৫ জুন, ২০২৪

ডিমের দাম নিয়ে কারসাজি, সাড়ে ৩ কোটি টাকা জরিমানা
ডিমের দাম নিয়ে কারসাজি করায় ডায়মন্ড এগ ও সিপি বাংলাদেশকে জরিমানা করেছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। এ সময় ডায়মন্ড এগকে আড়াই কোটি টাকা এবং সিপি বাংলাদেশকে এক কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। সোমবার (২২) জানুয়া‌রি বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের দুটি মামলার রায় দেওয়া হয়েছে। বুধবার (২৪ জানুয়া‌রি) বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে।   প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য হাফিজুর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বাজারে অস্বাভাবিকভাবে ডিমের দাম বাড়ানোর অপরা‌ধ প্রমাণ হওয়ায় ডায়মন্ড এগকে আড়াই কোটি এবং সিপি বাংলাদেশকে এক কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।  এর আগে, ২০২২ সালে দেশের ১০টি পোল্ট্রি ফার্ম ও পোল্ট্রি সংশ্লিষ্ট সংগঠনের বিরুদ্ধে ডিমের দাম বৃদ্ধিতে বাজারে কারসাজির অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এর মধ্যে, মামলা নম্বর ৩৯/২০২২, যা ডায়মন্ড এগ লিমিটেডের বিরুদ্ধে এবং মামলা নম্বর ৪৪/২০২২, সিপি বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেডের মামলার এ চূড়ান্ত আদেশ এলো। প্রতিষ্ঠান দুটির বিরুদ্ধে দায়ের করা আলাদা দুটি মামলার নিষ্পত্তি করে এই জরিমানা করা হয়।
২৪ জানুয়ারি, ২০২৪

ডিমের দাম কমছে
কিছুদিন আগেও ডিমের দাম নিয়ে দেশে হৈচৈ পড়ে গিয়েছিল। সরকার প্রতি পিস ১২ টাকা দাম ঠিক করে দিলেও বিক্রি হচ্ছিল প্রায় ১৫ টাকায়। বেগতিক বাজার নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১৫ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেয়। যদিও আমদানি জটিলতায় একটিও ডিম দেশে আসেনি। দীর্ঘদিন এ পরিস্থিতির মধ্যে গত সপ্তাহ থেকে নীরবেই ডিমের দাম কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে সরকার নির্ধারিত সীমায় কিংবা তারও নিচে অবস্থান করছে ডিমের দাম। বাজারে শীতের শাকসবজির সরবরাহ বৃদ্ধিকে কারণ হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ীরা। আর পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডিমের উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়ার তুলনায় ভোক্তার ভোগ কমেছে। যেজন্য দাম কমছে। অন্যদিকে প্রান্তিক খামারিদের দাবি, সরকার নির্ধারিত ১২ টাকা দামে খোলাবাজারে ডিম বিক্রি শুরু করায় আপাতত ডিমের দাম কমেছে। পোলট্রির খাদ্য ও বাচ্চার দাম বেশি হওয়ায় মাসখানেকের মধ্যে বাজার আবার অস্থির হয়ে উঠতে পারে। গতকাল রোববার রাজধানীর পাইকারি বাজারে ফার্মের প্রতি ১০০ পিস ডিম (বাদামি বা লাল) বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ১০ টাকায়। ১০০ সাদা ডিম বিক্রি হয়েছে ৯৫০ টাকায়, যা সপ্তাহখানেক আগেও বিক্রি হয়েছিল যথাক্রমে ১ হাজার ২০০ ও ১ হাজার ১৪০ টাকায়। তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আমান উল্লাহ দৈনিক কালবেলাকে বলেন, গত সপ্তাহ থেকে পর্যায়ক্রমে ডিমের দাম কমছে। বাজারে শীতকালীন শাকসবজির সরবরাহ বেড়েছে। একই সঙ্গে ডিমের উৎপাদন ও সরবরাহ বেড়েছে। বিপরীতে ভোক্তার চাহিদা কম থাকায় ডিমের দাম কমছে। বাজারে দেখা গেছে, রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে বাজারে ক্রেতা সাধারণের উপস্থিত তুলনামূলক কম। দোকানিরা জানান, প্রতি হালি (বাদামি) ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকায়, যা কয়েক দিন আগে বিক্রি হয়েছিল ৫৫ টাকায়। সাদা ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৫ টাকায়। আগে ছিল ৪৮ টাকা। বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার দাবি করছেন, সমিতির পক্ষ থেকে সরকার নির্ধারিত ১২ টাকায় খোলাবাজারে ন্যায্যমূল্যে ডিম বিক্রির উদ্যোগ সফল হয়েছে। বাজারে এখন সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে। পোলট্রির খাদ্য ও বাচ্চার দাম বৃদ্ধির কারণে এ চিত্র বেশিদিন থাকবে না। কারণ, খামারিরা উচ্চমূল্যে বাচ্চা কিনে ডিম ও মুরগি উৎপাদন করছেন। দেশে এলো ভারতীয় ডিমের প্রথম চালান বেনাপোল প্রতিনিধি জানান, ভারত থেকে ডিম আমদানি শুরু হয়েছে। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রথম চালানে ৬১ হাজার ৯৫০ পিস ডিম পৌঁছেছে দেশে। এ ডিমের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিডিএস করপোরেশন। প্রতি পিস ডিম ভারতীয় বাজার থেকে কেনা হয়েছে ৫ টাকা ৩০ পয়সায়। শুল্ক পরিশোধ ও পরিবহন খরচ দিয়ে বেনাপোল পর্যন্ত প্রতি পিস ডিমের মূল্য দাঁড়িয়েছে ৮ টাকা ৫৭ পয়সা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে আমদানি করা হলে ডিমের বাজারে যে ঊর্ধ্বগতি তা কমে আসবে। বাজার নিয়ন্ত্রণে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ভারত থেকে ডিম আমদানির কথা জানান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সে অনুযায়ী প্রথম ধাপে ভারত থেকে ৪ কোটি পিস ডিম আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। পরে আরও ৬ কোটি পিস ডিম আমদানির অনুমতি দিয়ে মোট ১০ কোটি পিস আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। প্রথম চালানে ঢাকার রামপুরার বিডিএস করপোরেশন ভারতের মেসার্স কানুপ নামের একটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৬১ হাজার ৯৫০ পিস ডিম আমদানি করে। সন্ধ্যায় ডিমবোঝাই ১টি ট্রাক বেনাপোল স্থল বন্দরে প্রবেশ করে। দেশের ১০টি প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি করে ডিম আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এসব প্রতিষ্ঠান হলো মেসার্স মীম এন্টারপ্রাইজ, প্রাইম এনার্জি ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড সাপলাইয়ার্স, টাইগার ট্রেডিং, অর্ণব ট্রেডিং লিমিটেড, চিস গ্যালারি, পপুলার ট্রেড সিন্ডিকেট, মেসার্স রিপা এন্টারপ্রাইজ, এসএম করপোরেশন, বিডিএস করপোরেশন ও মেসার্স জুনুর ট্রেডার্স। শার্শা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বিনয় কৃষ্ণ মণ্ডল দৈনিক কালবেলাকে বলেন, ডিমগুলো সরেজমিন পরীক্ষণ করে খাওয়ার উপযোগী মনে করে ছাড়পত্র দিয়েছি। বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট কাস্টমসবিষয়ক সম্পাদক সুলতান মাহমুদ বিপুল বলেন, ডিমের বাজারের অস্থিরতা নিরসনে সরকার ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে, তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমদানি শুরু হয়েছে। এভাবে আমদানি হলে মানুষ অল্প মূল্যে ডিম কিনতে পারবে। বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার আব্দুল হাকিম দৈনিক কালবেলাকে বলেন, কাস্টমস কর্মকর্তারা ডিম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ছাড়পত্র দিয়েছেন। এসব পণ্যকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বন্দর থেকে ছেড়ে দিচ্ছি।
০৬ নভেম্বর, ২০২৩

আলু ও ডিমের দাম বেশি রাখায় তিন ব্যবসায়ীর দণ্ড
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে আলু ও ডিমের দাম বেশি রাখায় তিন ব্যবসায়ীকে অর্থদণ্ড প্রদান করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফৌজিয়া নাজনীন অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপজেলার শ্যামগঞ্জ বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফৌজিয়া নাজনীন এই দণ্ড প্রদান করেন। জানা গেছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের নির্ধারিত দাম নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বুধবার উপজেলার শ্যামগঞ্জ বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালায়। এ সময় নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে আলু ও ডিমের দাম বেশি রাখায় তিন ব্যবসায়ীকে ৭ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফৌজিয়া নাজনীন অভিযান সম্পর্কে বলেন, জনস্বার্থে এই ধরনের অভিযান পরিচালনা অব্যাহত থাকবে।
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

রঙ্গবেলা / ডিমের দাম নিয়ে মুরগির কাছে ব্যাচেলরদের খোলা চিঠি
মাননীয় মুরগিদল,  আমরা দেশের ব্যাচেলররা বর্তমানে খুবই বিপদে রয়েছি। ডিম নিয়ে দেশে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে তার সমাধান পেতে তাই আজকে আপনাদের লিখতে বসা ছাড়া আর কোনো উপায়ন্তর নেই। প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি- এ চিঠি পড়তে আপনাদের ডিমে তা দেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট করবার জন্য। (সারা দেশে ডিম নিয়ে আলোচনা আর এক হালি ডিমের দাম শুনলেই বোঝা যায়, আপনাদের অক্ষরজ্ঞান নেই- এমন গুজবের দিন শেষ।) আপনাদের আজ আমাদের বিশেষ কিছু বলার রয়েছে। ডিমের দামের এ লাগামহীনতায় আপনাদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি এখন সময়ের দাবি। আমরা যারা শহরে লেখাপড়া ও চাকরির উদ্দেশ্যে এসে মেসে থাকি তাদের বেশিরভাগেরই প্রতিদিনকার খাওয়া দাওয়ার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। এমতাবস্থায় এক স্বস্তি হলো- আপনাদের ডিম। বলতে গেলে মাসের অর্ধেকটাই কাটে আপনাদের ডিম খেয়ে। ডিম পাড়ার ক্ষমতা আছে শুধু আপনাদেরই। হাঁসরাও ডিম পাড়ে তবে দুর্ভাগ্য সেটা আমরা কেনার দুঃসাহস পর্যন্ত দেখাই নাই। উলটো ভাবি, যে দাম! তাতে হয়তো খাসি কেনা যাবে।  আমাদের ভালো করেই জানা আছে, পশ্চিমাদের মতো মুরগিসমাজও দূর রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর বেশ ক্ষেপে আছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আপনাদের খাবারের দাম বেড়েছিল। তবে বিশ্বাস করুন, আপনাদের খাবারের মধ্যে ভুট্টা আর সয়াবিনের দাম পুনরায় কমে স্বাভাবিক হয়ে গেছে। দয়া করে, পুতিনকে আর ভুল বুঝবেন না। আপনারা আর উপোস করে থাকবেন না- বেশি করে খান, সানন্দে ডিম পাড়ুন, কোনো সমস্যা নেই। শহরের তাবৎ আলোকিত খাবার দোকানে প্রতিদিন লাখ টাকার খাবার বেচাকেনা হচ্ছে। আমরা কালেভদ্রেও এসব জায়গায় গিয়ে খাওয়াদাওয়া করতে পারি না। গেলেও খাবার খাওয়ার চেয়ে পকেটের কথা ভাবতে ভাবতেই ক্ষুধা নষ্ট হয়ে যায়। দিনশেষে, আমাদের ভরসা একটাই—বুয়ার রান্না করে দেওয়া ডিম আলুর অতলান্তিক ঝোল অথবা একটু লবণ আর মরিচের গুঁড়া দিয়ে ডিম ভাজা।  ভাবলে খারাপ লাগে কিছুদিন আগেও আমরা ডিমভাজির সঙ্গে কাঁচামরিচের আভিজাত্যটা দেখাতে পারতাম। তবে মরিচ নিয়ে লঙ্কাকাণ্ডের পর সেটাও বাদ দেওয়া হয়েছে।  ‘ভাতের বদলে আলু’ খাওয়ার পরামর্শ মেনে এতকাল পর্যন্ত শরীরকে চালিয়ে নিতে পারলেও চলমান অবস্থায় ডিমের বদলে আমরা কী খাব সে প্রেসক্রিপশন এখনো কারও কাছ থেকে পাইনি। নতুন পরামর্শ পেলে হয়তো আপনাদের কাছে এই চিঠিও লিখতে হতো না।  আমাদের কষ্টটা সরকারের উপর মহল হয়তো এখনো কড়ায় গণ্ডায় অনুধাবন করতে পারেনি। তবে এ কষ্ট প্রকৃতি ঠিকই বুঝেছে। ডিমের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিগত কয়েকদিনের লাগাতার বৃষ্টি যেন সেটারই ইশারা দিচ্ছে।  একটা সময় ছিল যখন বাড়িওয়ালাদের বাসা থেকে ব্যাচেলরদের বাসায় হঠাৎ-বিঠাৎ এক আধ বাটি তরকারি আসত। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির রোষানলে পুড়ে তারা সেটা বাদ দিয়েছে। সেই দিন আজ অতীত যখন কেউ বাড়িওয়ালার বাসা থেকে এসে ভরদুপুরে এক বাটি তরকারি দিয়ে কলিং বেল টিপত। বর্তমানে মাস শেষ হতে না হতেই তরকারি তো দূরে থাক বাড়িওয়ালা উলটো ভাড়ার তাগাদা দেয়।  ডিমের সাথে ব্যাচেলরদের যে সম্পর্ক তা রোমিও জুলিয়েট, নাট-বল্টু বা দুর্নীতিবাজ সরকারি আমলা আর পাহাড়ের জমির সম্পর্কের মতো না হলেও কিছুক্ষেত্রে তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। এমনো অনেক দিন আছে যখন প্রায় দুপুরবেলা ঘুম থেকে উঠে সকালের নাস্তা করার প্রশ্নটাকে মাটিচাপা দিয়ে দুপুরে একটা ডিম ভেজে ভাত খেয়ে বিকালের কর্মকাণ্ড শুরু করি। সারা বিকাল-সন্ধ্যা এখানে সেখানে নানা রাজা উজির মেরে দিনশেষে যখন আবার রাতের খাবারের সময় আসে তখনো দেখি একটি বাটিতে কয়েক টুকরা আলু আর একটা ডিম মিলে অধীর আগ্রহে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। দাম বাড়ার পর প্রত্যেকটা ডিমকে এত পরিচিত আর আপন মনে হয়…  হে মুরগিসমাজ, আপনাদের বুঝতে হবে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ষোলোটি বছর লেখাপড়ার দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে এবং রাস্তাঘাটে হরহামেশা ঘটতে থাকা সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু থেকে বেঁচে- আমরা মাত্র ১২-১৫ হাজার টাকা নিয়ে চাকরি শুরু করি। বর্তমানে এক হাজার টাকার বাজারে দুই দিনের বেশি চলা দুষ্কর। গরুর মাংসের কথা আমরা প্রায় ভুলতে বসেছি। এক কেজি গরুর মাংস সুদূর ভবিষ্যতের কোনো স্বপ্ন মনে হয়। খাসির কথা বাদই থাক আজ, ক’দিন পর বানানটাই লিখতে দিলে পারব কিনা সন্দেহ জাগে। গরু আর খাসি খেতে হলে ব্যাচেলরদের হাতে এখন বোধহয় একটাই উপায় আছে। সেটা হলো- অপরিচিত মানুষের বিয়ে খাওয়ার যে অপবাদ ব্যাচেলরদের নামে ছিল- তাকে আবার সচল করা। প্রিয় মুরগিসমাজ, আপনাদের শারীরতাত্ত্বিক বিবিধ অভ্যাস নিয়ে আমাদের কোনো পরামর্শ দেওয়া সাজে না। আপনারা বিচক্ষণ। ধ্যানে বসে আপনারা দেশ-বিদেশের নানা সমস্যার কথা ভাবেন। তাই এটাও আপনাদের অজানা নয় যে, ব্যাচেলরদের ডিম পাড়ার ক্ষমতা নেই। আমাদের ভেতর যদি কারও এই বিশেষ ক্ষমতা থাকত তাহলে আজকে আপনাদের শরণাপন্ন হতাম না।  সবকিছু মিলিয়ে আপনাদের প্রতি আমাদের আকুল আবেদন, পরিবার পরিকল্পনার সব উদ্যোগ এখন, এই মুহূর্ত থেকে বন্ধ করে দিন। আপনাদের সচলতা আমাদের টিকে থাকার পাথেয়। আমাদের দিকে একটু তাকান। আমরা একটু বাঁচি।  প্রাণপ্রিয় মুরগিসমাজ, আপনাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার কোনো শেষ নেই। তবে শেষবেলায় শেষ একটা দাবি জানাতে চাই। সেটা হলো, সম্ভব হলে আরেকটু বড় আকারের ডিম পাড়ার অনুরোধ রইল। তাহলে এক ডিমেই আমরা দুই বেলা খাওয়ার নতুন অভ্যাস গড়ে তুলতে পারব। ইতি,  আপনাদের একান্ত বিশ্বস্ত খাদক বাংলাদেশের ব্যাচেলর সমাজ। কালবেলার রম্য বিষয়ক আয়োজন রঙ্গবেলায় মুরগিদলের কাছে চিঠিটি লিখেছেন কালবেলার পাঠক ছদরুল আমীন (ছদ্মনাম)। রঙ্গবেলার জন্য আপনিও চাইলে রম্য রচনা পাঠাতে পারেন এই ঠিকানায়- [email protected]
২৩ আগস্ট, ২০২৩

সিন্ডিকেট করে ব্যবসায়ীরা ডিমের দাম বাড়িয়েছেন: ক্যাব
সিন্ডিকেট করে অসাধু ব্যবসায়ীরা ডিমের দাম বাড়িয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। যেসব ব্যবসায়ী এ ধরনের অনৈতিক কাজে লিপ্ত, তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবিও জানান সংগঠনটির নেতারা। গতকাল শনিবার রাজধানীর উত্তরার গরীবে নেওয়াজ সড়কে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা এ দাবি জানান। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে ডিমসহ অন্য নিত্যপণ্যের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। বক্তারা বলেন, বাজারে প্রায় সব পণ্যের দাম বেশি। ডিম নিয়ে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হয়েছে। পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়েছে। ওষুধের দাম বেশি। বাজার পরিস্থিতি কিছু অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীর হাতে জিম্মি। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া, ক্যাব উত্তরা শাখা কমিটির সাধারণ সম্পাদক স্বপন দেবনাথ, হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটির সভাপতি মীর রেজাউল করিম, উত্তরা শাখা কমিটির প্রধান উপদেষ্টা সানোয়ার হোসেন, উত্তরা প্রবীণ কল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ডা. আবদুস সামাদ, প্রভাতী কল্যাণ সংস্থার সভাপতি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্ম সচিব শওকত আলী খান প্রমুখ।
২০ আগস্ট, ২০২৩

ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে র‌্যাবের অভিযান
রাজধানীর একাধিক বাজারে ডিমের দামের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে অভিযান চালাচ্ছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।  সোমবার (১৪ আগস্ট) সকাল থেকে রাজধানীর কাপ্তান বাজার ও বাড্ডা এলাকার ডিমের আড়তে এ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর কাপ্তান বাজার ও বাড্ডা এলাকায় ডিমের আড়তে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। অভিযান শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে এর আগে গত ১২ আগস্টও অভিযান চালানো হয় কাপ্তান বাজারে। সেদিন তিন ডিম ব্যবসায়ীকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।   জানা গেছে, বর্তমানে প্রতি হালি ডিমের দাম পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়ে ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড় বাজারে কিনলে ডিমের ডজন পড়ছে ১৬০-১৬৫ টাকা, যা পাড়া-মহল্লার খুচরা দোকানে ১৭০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ সাধারণ মানুষের একটি ডিম খেতে গুনতে হচ্ছে ১৫ টাকা।
১৪ আগস্ট, ২০২৩

অতীতের সব রেকর্ড ভাঙল ডিমের দাম
দেশে প্রতিদিন বাণিজ্যকভাবে ৪ কোটির মতো ডিম উৎপাদন হয়ে থাকে। নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় দৈনন্দিন খাদ্য চাহিদা মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এমন অবস্থায় ফের বেড়েছে গরিবের প্রোটিনখ্যাত ডিমের দাম। বুধবার (৯ আগস্টের) ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকায়। আর পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানে বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৭০ টাকা, যা আগে ১৫০ টাকা ছিল। ডিমের দামে সর্বকালের রেকর্ড ছাড়ালেও নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে তদারকি সংস্থা। ফলে আগে এক পিস ডিম ক্রেতাসাধারণ ১২ টাকা কিনতে পারলেও এখন ১৪-১৫ টাকা খরচ করতে হচ্ছে।  এদিকে প্রান্তিক খামারি ও খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন খরচ নির্ধারণ করলেও ডিমের বাজার দরের বিষয়ে এখনো কোনো মানদণ্ড ঠিক করেনি। মন্ত্রণালয় ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ কেজিপ্রতি ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা অনুমোদন করেছে, যা এক বছর আগে ছিল ১৪০ টাকার মধ্যে। এরপর থেকে মুরগির দাম পর্যায়ক্রমে ১৬৫ টাকা থেকে বেড়ে গতকাল পর্যন্ত ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায় উঠেছে। অন্যদিকে উৎপাদন খরচ নির্ধারণ না হওয়ায় ডিমের বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে কোনো ধারণা করা যাচ্ছে না। খামারি পর্যায় থেকে জানা গেছে, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক ব্যয়সহ বর্তমানে প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১১ টাকার বেশি, যা পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকা ২০ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৪০ পয়সা পর্যন্ত। আর দুদিনের ব্যবধানে খুচরা বাজারে প্রতি ডজন (১২ পিস লাল/বাদামি) ডিম ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।  আরও পড়ুন : বাজারে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করা যাবে না ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৃষ্টির কারণে ডিম সংগ্রহ ও সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে, সেজন্য দাম বাড়ছে। অন্যদিকে প্রান্তিক খামারিদের দাবি, পোলট্রি খাদ্যের দামের বিপরীতে ডিমের দাম তুলনামূলক কম। পাশাপাশি বৃষ্টিপাত বাড়ার কারণে খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লোকসানে পড়ে অনেক খামারি ব্যবসা বন্ধ রেখেছেন। এ সুযোগে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো চাহিদার সুযোগে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। যদিও ডিমের উৎপাদন খরচ নিয়েও কাজ করছে মন্ত্রণালয়। চলতি বা আগামী মাসের মধ্যে ডিমের উৎপাদন ব্যয় ঠিক করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, গত দুদিনের ব্যবধানে প্রতি হালি (চার পিস) ফার্মের ডিমে ৭.১৪ শতংশ দাম বেড়েছে। আর গত বছর একই সময়ের তুলনায় প্রতি হালি ডিম ২৫ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বুধবার রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১৬৫ টাকা। আর পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ১৭০ টাকা, যা দুই দিন আগে ১৫০ টাকা ছিল। আর গত বছর একই সময় প্রতি ডজন ডিম ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ফলে বছরের ব্যবধানে প্রতি হালি ডিম ৪০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, মুরগি, ডিম ও ফিডের দাম নিয়ন্ত্রণ করে থাকে বেশ কয়েকটি করপোরেট কোম্পানি। প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা মোট চাহিদার ৯০ শতাংশ ডিম ও মুরগি উৎপাদন করে। মাত্র ১০ শতাংশ ডিম ও মুরগি উৎপাদন করলেও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় করপোরেট কোম্পানিগুলো একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। সময় অসময়ে ডিম ও মুরগির দাম বাড়িয়ে দিয়ে তারা লাভবান হলেও প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা হুমকির মুখে পড়ছে।  বুধবার ডিমের মূল্য সহনীয় করার বিষয়ে বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত বছর ডিমের দামে নৈরাজ্য করায় তদারকি করে মূল্য সহনীয় করা হয়েছিল। অসাধুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছিল। ভোক্তার স্বার্থ বিবেচনায় এবারও অভিযান পরিচালনা করা হবে। তবে এটি দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরও আছে। ডিমের দাম কেন বাড়ছে, উৎপাদন খরচ বেড়েছে কিনা; সেটি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ভালো বলতে পারবে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বা প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় যদি আমাদের এ বিষয়ে কাজ করতে বলে আমরা ব্যবস্থা নেব।
০৯ আগস্ট, ২০২৩
X