নিজের জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ বললেন প্রধানমন্ত্রী
নিজের জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আমার জীবনটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। রোববার (৭ জুলাই) ঢাকা সেনানিবাসে ‘প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট (পিজিআর)’- এর ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় এ মন্তব্য করেন তিনি।  পিজিআরদের জীবনও ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা আমার নিরাপত্তায় নিয়োজিত, তারাও যথেষ্ট ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে থাকেন। পিজিআরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, পিজিআরের নেতৃত্ব ও নিরাপত্তা অত্যন্ত প্রশংসার দাবি রাখে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কারও রক্তচক্ষুকে ভয় করে না বাংলাদেশ। এই দেশকে আর কেউ পেছনে টানতে পারবে না। অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতির পানে এগিয়ে যেতে হবে। দেশের সম্পদ বিক্রি করে কখনো ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা করিনি। বড় দেশ আমেরিকা ও তাদের কোম্পানি গ্যাস তুলে বিক্রি করবে ভারতের কাছে। আমি রাজি হইনি। এই জন্য ক্ষমতায় আসতে পারিনি। দেশের সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় বসতে হবে এ দুর্বলতা কখনো আমার মধ্যে ছিল না। বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খবরদারি করা বড় দেশগুলোও এখন বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি অস্বীকার করতে পারে না। এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। আমেরিকার চেয়ে এক পার্সেন্ট হলেও দারিদ্র্য হার কমাতে হবে দেশে। এর আগে সকালে গণভবনে যুব মহিলা লীগের ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সম্প্রতি সারা দেশে কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এটা আদালতের বিষয়। আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার কোনো যোক্তিকতা নেই।’ সরকারপ্রধান বলেন, শিক্ষার্থীরা মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ কোটা বাতিল করার আন্দোলন করছে। যারা এর আগে আন্দোলন করেছিল তারা আগে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় কত পাস করত, এখন কত করছে। এটা সাবজুডিস ম্যাটার, আদালতে বিচারাধীন। আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা সময় নষ্ট করছে। আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই।
০৭ জুলাই, ২০২৪

বগুড়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ছয়টি পয়েন্টে ১০৬২ মিটার ঝুঁকিপূর্ণ
বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ছয়টি পয়েন্টে ১০৬২ মিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে যমুনার পানি সমতল সারিয়াকান্দি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।  শুক্রবার (৫ জুলাই) এ তথ্য জানিয়েছে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড। সারিয়াকান্দি উপজেলায় যমুনার পানির বিপৎসীমা ১৬ দশমিক ২৫ মিটার। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পানির উচ্চতা ছিল ১৬ দশমিক ৫৭ মিটার। শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৪ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে এখন পানির উচ্চতা ১৬ দশমিক ৮১ মিটারে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, যমুনার পানি বাড়ার কারণে সারিয়াকান্দির ইছামারায় ৫০০, হাটশেরপুরে ৩০০, কর্নিবাড়ীতে ১০০, সোনাতলার সুজাতপুরে ১৫০, সারিয়াকান্দির শিমুলদায়েরে ৬ ও ধুনটের শহড়াবাড়ীতে ৬ মিটারসহ মোট ১ হাজার ৬২ মিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঝুঁকির মুখে রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির জানান, দীর্ঘ ৪৫ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে এখনো কোনো ঝুঁকি দেখছি না। ছয়টি পয়েন্টে নদী ভাঙলেও সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ইছামারা অংশে। কারণ নদী থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দূরত্ব মাত্র ৩০০ মিটার। গত বছর সেখানে ১ হাজার ৭০০ মিটার ভেঙে ছিল। সেখানে কাজ করা হয়েছে। যমুনার ভাঙনের যে গতি তাতে তীব্র ভাঙন শুরু হলে বাঁধ পর্যন্ত ঠেকে যেতে বেশি সময় লাগবে না। তিনি জানান, পানি বাড়ার কারণে সারিয়াকান্দির চরগুলোর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সারিয়াকান্দির কর্নিবাড়ী, কামালপুর, হাটশেরপুর, ফুলবাড়ী, চালুয়াবাড়ীর চরাঞ্চলের নিচু জায়গা তলিয়ে গেছে। সারিয়াকান্দি উপজেলার সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বলেন, যমুনার পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা আমাদের অপরিপক্ব পাটগাছ কেটে নিচ্ছি। এতে আমাদের লোকসান হবে। আর কয়েক দিন পর কাটতে পারলে ভালো হতো। চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বাদশা বলেন, গত কয়েক দিনে যমুনার ভাঙনে শিমুলতাইড় গ্রামের ৪৩টি পরিবার এবং মানিকদাইড় গ্রামের ২০টি পরিবার তাদের বাড়িঘর ভেঙে নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। এদিকে ধুনট উপজেলায় যমুনা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করায় প্রবল স্রোতে ঘূর্ণিবর্তের সৃষ্টি হয়ে শহড়াবাড়ি বাঁধ (স্পার) ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে বাঁধটি রক্ষার চেষ্টা চলছে। শুক্রবার (৫ জুলাই) বিকেল পর্যন্ত শহড়াবাড়ি বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে সাড়ে ৩ হাজার বালু ভর্তি জিও বস্তা ফেলা হয়েছে। আরও আড়াই হাজার জিও বস্তা ফেলার পরিকল্পনা রয়েছে।  এর আগে ১ জুলাই থেকে বাঁধটি রক্ষায় এই কাজ শুরু করা হয়। তবে পনি বৃদ্ধির ফলে প্রবলস্রোতের কারণে বাঁধের গোড়ালিতে বালুভর্তি জিও বস্তা ফেলার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। প্রায় এক সপ্তাহ আগে বাঁধের মাঝামাঝি স্থানে ধস দেখা দেয়। সংবাদ পেয়ে বগুড়া-৫ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মজিবর রহমান মজনু ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বাঁধ রক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। পনি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালে প্রায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রক্ষায় সহড়াবাড়ি স্পারটি (বাঁধ) নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের পর থেকে দফায় দফায় নদীগর্ভে বিলীন হতে থাকে। বর্তমানে বাঁধটির এক হাজার ২০০ মিটার বাঁধের প্রায় ১ হাজার মিটার অংশ টিকে আছে। এই বাঁধটি টিকে থাকার কারণে ভাটির দিকে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধটি ভাঙন থেকে রক্ষা পেয়েছে। বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী লিটন আলী বলেন, পুরো বাঁধ এলাকা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। আপাতত ভাঙনের কোনো শঙ্কা নেই। বালু ভর্তি জিও বস্তা ফেলে ঝুঁকিপূর্ণ শহড়াবাড়ি বাঁধটি টিকে রাখার চেষ্টা চলমান। বগুড়ার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, ধুনটের বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘুরে দেখেছি। জনগণের কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্টদের দ্রুত উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে।
০৬ জুলাই, ২০২৪

বগুড়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে পাহারা
বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সারিয়াকান্দি পয়েন্টে যমুনার পানি সকালে ৩৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি ঘণ্টায় ২ সেন্টিমিটার করে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বুধবার (৩ জুলাই) নদীর পানি ১৬ দশমিক ০৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আর মাত্র ২২ সেন্টিমিটার পানি বাড়লেই বিপৎসীমা স্পর্শ করবে। ইতোমধ্যে সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানি বৃদ্ধিতে উপজেলার চরাঞ্চলের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় যমুনা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে সতর্কতার জন্য লোক দেওয়া হয়েছে। বন্যা মোকাবিলার সব রকম প্রস্তুতি আছে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী (পাউবো) প্রকৌশলী মো. নাজমুল হক। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির জানান, প্রতি ঘণ্টায় ২ সেন্টিমিটারের বেশি পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি পেলে বগুড়ার কাছে যমুনার পানি বৃহস্পতিবার বিপৎসীমা স্পর্শ করবে। যমুনা পয়েন্টে পানির বিপৎসীমা ১৬ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার। বুধবার নদীর পানি ১৬ দশমিক ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আর মাত্র ২২ সেন্টিমিটার পানি বাড়লেই বিপৎসীমা স্পর্শ করবে। তিনি জানান, সারিয়াকান্দির কর্নিবাড়ি, কামালপুর, হাটশেরপুর, ফুলবাড়ি, চালুয়াবাড়ির চরাঞ্চলের নিচু জায়গা তলিয়ে গেছে। এদিকে, সারিয়াকান্দির ইছাদহ গ্রামের ৪০০ মিটার এবং শিমুলতাইড় ৬০০ মিটার ভাঙন এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ও টিও ব্যাগ ফেলে নদীভাঙন রোধের কাজ শুরু হয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে লোক দিয়ে পাহারা দেওয়া হচ্ছে। হঠাৎ বাঁধে ভাঙন দেখা দিলে যাতে তাৎক্ষণিকভাবে বাঁধ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। বাঁধের আশপাশের জনগণকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বগুড়া জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া জানান, অতি জরুরিভাবে ৫০০ টন চাল, ১০ লাখ টাকা ও দুই হাজার প্যাকেট শুকনা খাবারের চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে দুএকদিনের মধ্যে সেগুলো এসে পৌঁছাবে। বগুড়ার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, জেলা প্রশাসনের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। বন্যা মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে।
০৩ জুলাই, ২০২৪

বার্ধক্যের ভারে চলছে ঝালকাঠির ঝুঁকিপূর্ণ বাসন্ডা সেতু
ঝালকাঠির বাসন্ডা নদীর ওপর দাঁড়িয়ে আছে ১২৪ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৭ দশমিক ৩০ মিটার প্রস্থের বেইলি ব্রিজ। ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। সেতুটি নির্মাণের ৩৪ বছর পরও এটির ওপর দিয়ে চলেছে যানবাহন। বর্তমানে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পরিণত হয়েছে। মেরামত করলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে না। সেতু কর্তৃপক্ষ তিন বছর আগে এটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করলেও নতুন সেতু নির্মাণে কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়। প্রতি বছর সেতু সংস্কারে ব্যয় করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। ঝালকাঠি সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ মাসে সেতুটি মেরামতে তাদের খরচ গুনতে হয়েছে প্রায় চার লাখ টাকা। প্রতিদিনই ছুটে যাচ্ছে ঝালাই, স্থানচ্যুত হচ্ছে প্লেট এবং খুলে যাচ্ছে নাট-বল্টু। তার পরও সেতুর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে ভারী যানবাহন। গাড়ি উঠলেই সেতুটি দুলতে থাকে। ফলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা।  সেতুটি ভেঙে পড়লে ঝালকাঠি থেকে বরগুনা পিরোজপুর, বাগেরহাট, খুলনা ও যশোরসহ সীমান্তবর্তী এলাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। স্টিলের সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ বলে সেখানে একটি কংক্রিটের সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পাঠানো হয়েছে। সেটি অনুমোদিত হলে নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে। স্থানীয়রা জানান, বারবার মেরামত করা হলেও সেতুটি কয়েকদিনের মধ্যেই ফের যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। নাট-বল্টু খুলে পড়ার পাশাপাশি ফেটে যায় প্লেট। এ ছাড়া সেতুতে ভারী যানবাহন উঠলে দুলতে থাকে। এ পথে যাতায়াতকারী যাত্রী, চালক ও পথচারীরা বাসন্ডা সেতু নতুন করে নির্মাণের জোর দাবি জানান। তারা আরও জানান, বাসন্ডা সেতুটি কয়েকবছর আগে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করার পরও এত দিনে সেখানে নতুন ব্রিজ নির্মাণ না করার কোনো কারণ থাকতে পারে না। আবার প্রতিবছর মেরামতের পেছনে সওজ যে অপচয় করছে, তাতে সরকারের অর্থ পানিতেই পড়ছে। সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, দরপত্র ছাড়া নিজস্ব তত্ত্বাবধানে বছরে তিনবার সেতুটি মেরামত করে সড়ক বিভাগ। প্রতিবার মেরামতে খরচ হয় ৬ লাখ টাকা। গাবখান সেতু টোলপ্লাজা থেকে জানা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ শতাধিক ভারী যানবাহন চলাচল করে। বারবার মেরামত করা হলেও সেতুটি কয়েক দিনের মধ্যেই ফের যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। ট্রাকচালক মহিম মিয়া বলেন, লোড ট্রাক নিয়ে ব্রিজে উঠলে মনে হয় এ বুঝি ভেঙে পড়ল। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। খুলনাগামী একটি বাসের চালক মালেক হাওলাদার বলেন, রাতে ব্রিজ পার হওয়ার সময় যে শব্দ হয়, তাতে মনে হয় গাড়ির চাকা থেকে টায়ার খুলে গেছে। ব্রিজটি ভেঙে পড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। মেরামতে আর কাজ হবে না। এখন নতুন করে নির্মাণ করা দরকার। ধানসিঁড়ি পরিবহনের বাসচালক ইদ্রিস হাওলাদার বলেন, ব্রিজে গাড়ি উঠলে দুলতে থাকে। মনে হয় ভূমিকম্প হচ্ছে। এখানে দ্রুত নতুন ব্রিজ বানানো দরকার, তা না হইলে যেকোনো সময় ভেঙে পড়বে এ রুটের নিয়মিত যাত্রী আবুল কাশেম বলেন, আমাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে দিনের পর দিন। হয়ত বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে। এ ব্রিজের পাশেই রয়েছে নেছারাবাদ মাদরাসা। যেখানে মাহফিল অনুষ্ঠিত হলে প্রচুর যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। যানবাহনের চাপে দুলতে থাকে ব্রিজটি। ঝালকাঠি সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহরিয়ার শরীফ খান বলেন, এ সেতুটি ঝুকিপুর্ণ হওয়ায় ইতোমধ্যে নতুন সেতু নির্মাণের জন্য আমরা ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি সম্পন্ন করেছি। বাকি তথ্যগুলো আমরা প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে পাঠিয়েছি। ডিপিপি বাস্তবায়ন হলে শিগগির এখানে নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে।  তিনি বলেন, প্রকল্প প্রস্তাব তৈরির জন্য ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালকের কাছে সম্ভাব্য সেতুর যে তালিকা চূড়ান্ত করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে বাসন্ডা সেতুর নামও রয়েছে। অনুমোদন পেলেই নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ বাসন্ডা বেইলি সেতুটি কংক্রিট দিয়ে নির্মাণ করার জন্য নকশা একে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।  নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, আমি যোগদানের পর ৯ মাসে ৪ লাখ টাকা দিয়ে সেতুটি মেরামত করেছি। ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা সেতুটি বর্তমানে ঝালকাঠি সড়ক বিভাগের গলার কাঁটা।
০৩ জুলাই, ২০২৪

বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস / ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বাড়ছেই
সরকারি-বেসরকারি নানা প্রচেষ্টা সত্ত্বেও দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম মুক্ত করা যাচ্ছে না। পরিবারের অভাবের কারণে নিরুপায় হয়ে নানা ধরনের কাজ যুক্ত হচ্ছে শিশুরা। আর নামমাত্র মজুরিতে কাজ করানোর সুযোগ থাকায় আইনের তোয়াক্কা না করে শিশুদের কাজে যুক্ত করছেন কলকারখানার মালিকরা। এমন বাস্তবতায় আজ ১২ জুন পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন গতকাল মঙ্গলবার বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তিনি শিশুদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে ও শিশুশ্রম নিরসনে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থাসহ সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শিশুদের জন্য একটি সুন্দর, নিরাপদ এবং সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ গড়ে উঠুক এমন প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, শিশুর যথাযথ বিকাশ নিশ্চিত করতে সব প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে শিশুশ্রমমুক্ত করতে হবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শিশুশ্রম জরিপ ২০২৩-এর পরিসংখ্যানে জানা যায়, দেশের ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুরা বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ খাতে কাজ করছে। পাঁচটি ঝুঁকিপূর্ণ খাতের মধ্যে শ্রমজীবী শিশুদের সবচেয়ে বড় অংশ নিয়োজিত রয়েছে অটোমোবাইল খাতে। এর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ওয়েল্ডিং বা গ্যাস বার্নার ম্যাকানিকের কাজে ৪ হাজার ৯৯ জন এবং ওয়ার্কশপে ২৪ হাজার ৯২৩ জন শিশুশ্রমিক রয়েছে। এই খাতে কর্মরত শিশুর ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশ গ্রাম এবং ৬৪ দশমিক ৩ শতাংশ শহরে বসবাস করে। ঢাকার টিপু সুলতান রোডের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত সারিবদ্ধভাবে অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে একটি সাইফুল ইঞ্জিনিয়ারিং। চার ফুট বাই ছয় ফুটের ছোট্ট এই কারখানায় কাজ করছে দুই শিশু। তাদের একজন শিপন, বয়স ১২ বছর। অন্যজন জাহিদ, বয়স ১৫ বছর। ওয়েল্ডিং মেশিনে কাজ করতে থাকা দুই শিশুর কারও চোখেই ছিল না সুরক্ষিত চশমা। আগুনের ফুলকি বা লোহার কণা ছিটকে তাদের চোখে পড়ে যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা। এভাবেই সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে ওরা। শিপনের বাড়ি শরীয়তপুরে। ওরা ছয় ভাই, দুই বোন। শিপন জানায়, মালিক সকাল-বিকেলের নাশতা আর দুপুর-রাতের খাবার দেন। খাবার মেস থেকে আসে। মার্কেটের বাথরুমে গোসল করে। সপ্তাহে ২০০ টাকা দেন। লক্ষ্মীপুর থেকে মামার সঙ্গে ঢাকায় এসেছে জাহিদ। এক বছর কাজ শিখে এখন মাসে ৮ হাজার টাকা বেতন পায়। খাওয়া বাবদ খরচ হয় ৫ হাজার ৩০০ টাকা। হাতে থাকে মাত্র ২ হাজার ৭০০ টাকা। সুজন রেডিওটার ওয়াকর্সের কারখানার সামনে জেনারেটরের রেডিওটারের রেগুলেটর ঠিক আছে কি না, পরীক্ষা করছিল চার শিশু। রেগুলেটরের পাইপে মুখ দিয়ে বাতাস দিচ্ছিল মোহাম্মদ সিফাত। নিচের অংশ ঝালাই দিচ্ছিল রিয়াদ। আরেকজন ওপরের সামনের অংশ হাত দিয়ে চেপে ধরছিল। একটু দূরে ডকস দিয়ে পলিশ করছিল পুরোনো রড। তারা সবাই মেঘনার কুড়াতলী গ্রাম থেকে এসেছে। তবে সবাই বেতন পায় না। কেউ কেউ পেটে-ভাতে থাকে। কেউ কেউ ৬ হাজার টাকা বেতন পায়। থাকা-খাওয়ায় এই টাকা শেষ হয়ে যায়। টিপু সুলতান রোডের লালচান মকিম লেনের হুমায়ুন রেডিওটারের দোকানের সামনের রাস্তায় সোলারের সকেট তৈরি করছিল এক শিশু। ওর নাম সুজন। বয়স চৌদ্দ বছর। ওর বাড়ি কুমিল্লায়। ও গাড়ির ইঞ্জিনের পার্টস প্লায়ার্স দিয়ে ধরে রেখেছিল। গ্যাস ওয়েল্ডিং মেশিন দিয়ে মালিক তা ঝালাই করছিলেন। সুজনের চোখে সুরক্ষার জন্য কোনো চশমা ছিল না। এভাবেই শিশুরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিন-রাত কাজ করছে। অথচ আন্তর্জাতিক শ্রম আইন সংস্থা (আইএলও) এবং জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ অনুযায়ী, যখন কোনো শ্রম বা কর্ম পরিবেশ শিশুর জন্য দৈহিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক, নৈতিক এবং সামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রে অন্তরায় ও ক্ষতিকর হিসেবে গণ্য হবে, তখন তা শিশুশ্রম হিসেবে গণ্য হবে। বাংলাদেশ মেডিকেলের শিশু বিভাগের চিকিৎসক মুকতাফি সাবি বলেন, শিশুশ্রমিক বিদ্যুৎ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বিদ্যুৎতাড়িত হতে পারে। হরিজেন্টাল গেইনিং মেশিন বা ওয়েল্ডিং মেশিন থেকে আগুনের ফুলকি বা লোহার কণা ছিটকে এসে চোখে পড়তে পারে। চোখে বিশেষ করে কর্নিয়ায় এই মেটাল পার্টিকেলগুলো বিঁধে থাকতে পারে। তাদের চোখেও আঘাত লাগতে পারে। এর ফলে চোখ অন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। মাথা নিচু হয়ে কাজ করায় ডিটারনাইজেশন হতে পারে। এ ছাড়া কালি, ময়লার মধ্যে দীর্ঘক্ষণ কাজ করায় অ্যালার্জি, অ্যাজমার সমস্যাও হতে পারে। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ কালবেলাকে বলেন, আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী এবং ২০১৩ সালে বাংলাদেশ শিশুশ্রম আইনে স্পষ্টভাবে বলা রয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিষিদ্ধ। সার্বিকভাবে শিশুশ্রম, গৃহকর্মীদের নিয়ে মানবাধিকার কমিশন একটি আইনের খসড়া তৈরি করেছে। আর অটোমোবাইলে শিশুশ্রম বেআইনি। অটোমোবাইল ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুদের নিতে পারে না। আইএলও কনভেনশন, ১৩৮-এ আইনগত এবং মানবিকভাবে কোনো শিশুকে অটোমোবাইল কাজে নিতে পারে না। কারণ এটি আইনের বরখেলাপ। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন কালবেলাকে বলেন, কলকারখানা উপপরিদর্শক কলকারখানাগুলো নিয়মিত পরিদর্শন করছেন। যাতে শিশুশ্রমিকরা এসব কারখানায় কাজ না করে। অটোমোবাইলে শিশুদের কাজ করা ঝুঁকিপূর্ণ। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তারা বিষয়গুলো দেখছেন। তিনি বলেন, ঢাকার কেরানীগঞ্জে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনে দুই বছরের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানো হচ্ছে। বিভাগীয় পর্যায়ে শিশুশ্রম নিরসনে কর্মশালা করা হচ্ছে। সবার সমন্বয়ে শিশুশ্রম নিরসনে কাজ করছি। মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি বলেন, শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত করা ঠিক নয়। এই শিশুরা যাতে কর্মোপযোগী পরিবেশ অর্থাৎ কারিগরী শিক্ষার সুযোগ পায় সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে তারা নিজের দক্ষতা বাড়াতে পারে। কম্পিউটার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করা যায়। এরকম দক্ষ জনগোষ্ঠী আমরা তৈরির চেষ্টা করছি। এর ফলে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন হবে।
১২ জুন, ২০২৪

ঝুঁকিপূর্ণ ঈদযাত্রা ঠেকাতে কঠোর হবে হাইওয়ে পুলিশ
এবারের ঈদযাত্রা আনন্দ ও স্বস্তিদায়ক হবে উল্লেখ করে হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, সেটা নিশ্চিতে সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে। আমরা যেন স্বস্তির সঙ্গে, আনন্দের সঙ্গে ঈদ শেষে ফিরে আসতে পারি। সেজন্য কেউ ঝুঁকিপূর্ণ ঈদযাত্রায় শামিল হব না, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া যারা ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন ব্যবহার করবেন বা যে কোনো যাত্রা ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলে তা বন্ধে কঠোর অবস্থান নেবে হাইওয়ে পুলিশ। গতকাল রোববার দুপুরে রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন উপলক্ষে মহাসড়ক নিরাপদ ও যানজটমুক্ত রাখার লক্ষ্যে মতবিনিময় সভায় একথা বলেন তিনি। মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা। অতিরিক্ত আইজিপি বলেন, ঈদযাত্রায় এবার বেশ কয়েকটি বিষয়ে কঠোর থাকবে হাইওয়ে পুলিশ। যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ঈদযাত্রা বন্ধ করা হবে। যানবাহনের ওভার স্পিড এবার শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। কোনো যানবাহন যদি নির্ধারিত গতিসীমা অতিক্রম করে, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঈদের সময় কোনো ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা মেনে নেওয়া হবে না। প্রধান অতিথির বক্তব্যে শাজাহান খান বলেন, ঈদযাত্রায় বসিয়ে রাখার মতো পর্যাপ্ত যানবাহন নেই আমাদের বরং চাহিদার তুলনায় যানবাহন খুবই কম। তাই ঈদ এলে পুরোনো বাস নেমে আসে সড়কে। বিআরটিএর দায়িত্ব এই পুরোনো বা ফিটনেসবিহীন পরিবহন নিয়ন্ত্রণ করা। হাইওয়েতে কোনোক্রমেই তো নছিমন করিমন ভটভটি চলতে দেওয়া উচিত না। মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, আমাদের গাড়ির চালকরা ফেরেস্তা না। আমাদের কারণেই যানজট হয়। আবার পুলিশের গাফিলতি আছে। কোথাও চাঁদাবাজি হয়। গত ঈদে রুট পারমিট নেই, ফিটনেস নেই, বিধ্বস্ত গাড়িটিও কিন্তু সড়কে চলেছে। এবার এসব ধরতে হবে। আমাদের পক্ষে ধরা সম্ভব হয় না।
২৭ মে, ২০২৪

নড়বড়ে সেতু, ঝুঁকিপূর্ণ চলাচল
নড়বড়ে সেতু। তার ওপর হাঁটার জন্য বিছানো রয়েছে কাঠের চাটাই। সে চাটাইও বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গেছে। এর মধ্য দিয়েই লোকজন হেঁটে বা সাইকেল নিয়ে পার হচ্ছেন। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন গ্রামের মানুষসহ কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। পিরোজপুরের কাউখালীতে আমরাজুরী ইউনিয়নের গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জব্দকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দত্তেরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের খালের ওপর ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটির অবস্থান।  বিকল্প রাস্তা না থাকায় বাধ্য হয়ে বিদ্যালয়ের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীসহ এলাকাবাসী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে  সাঁকো পেরিয়ে যাতায়াত করছে।  এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই সেতুগুলো সংস্কার না করায় দিন দিন সেতুগুলো ভেঙে পড়ে চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। যেকোনো সময় মারাত্মক দুর্ঘটনাসহ জীবনহানির আশঙ্কা রয়েছে।  দত্তেরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারিয়া আক্তার বলেন, আমি একা সেতু পেরিয়ে যেতে ভয় পাই, আমার বাবা-মা আমাকে বিদ্যালয় দিয়ে আসে।  জব্দকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর সিকদার বলেন, আমি দীর্ঘদিন এই বিদ্যালয়ে আছি। সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। আমাদের ছাত্রছাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পারাপার হচ্ছে। অনেক সময় আমাদের নিজেদেরকে ছাত্রছাত্রীদের সাঁকো পারাপারে সহযোগিতা করতে হয়।  গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গায়ত্রী মুখোপাধ্যায় বলেন, জোয়ারের সময় খালে পানি বেশি আসায় আমরা ছাত্রছাত্রী নিয়ে টেনশনে থাকি। তখন সেতু পারাপারে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ থাকে।  অভিভাবক অনিল হালদার ও আব্দুল জব্বার বলেন, আমাদের কোমলমতি ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে ভয় লাগছে। কীভাবে ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে বিদ্যালয় যাবে।  উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের সামনের সাঁকোগুলো সংস্কার করা দরকার। কারণ অনেক ছাত্রছাত্রীরা সাঁতার জানে না। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। আমরাজুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমি ইউনিয়নের ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজগুলোর তালিকা তৈরি করে উপজেলা পরিষদের সমন্বয়ে মিটিংয়ে উপস্থাপন করব এবং ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলো অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করব।  কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সজল মোল্লা বলেন, আমি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলোর তালিকা পেলে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
১০ মে, ২০২৪

ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোই ভরসা ১০ গ্রামের মানুষের
কুলিক নদ। ওই নদের ওপর ৫০ মিটারের বাঁশের সাঁকো। সাঁকোটিও পুনোনো ও নড়বড়ে হওয়ায় বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এই সাঁকো দিয়েই পার হচ্ছেন স্কুলে ছোট ছোট শিশুসহ বিভিন্ন মানুষজন। পার হচ্ছে ভ্যান, সাইকেল এমনকি মোটরসাইকেলও। হরিপুর উপজেলার দিলগাও গ্রামে সরেজমিনে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে। স্থানীয়রা বলছেন, ঝুঁকিপূর্ণ নড়বড়ে বাঁশের সাঁকোই তাদের চলাচলের একমাত্র ভরসা। এই সাঁকো দিয়ে প্রতিনিয়ত পারাপার হন হরিপুর ও রানীশংকৈল উপজেলার ১০ গ্রামের শিক্ষার্থীসহ হাজারো মানুষ। একটি সেঁতুর জন্য নানা দপ্তরে ধরনা দিয়েও কোনো সুফল মেলেনি। তাই, ঝুঁকি নিয়েই প্রতিনিয়ত চলছে এখনকার বাসিন্দাদের পারাপার। হরিপুর উপজেলার দিলগাঁও গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ব্রিজ না থাকায় নড়বড়ে এ সেতুতে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। বর্ষা মৌসুমে সাঁকোটি ভেঙে গেলে দুর্ভোগের শেষ থাকে না এখানকার বাসিন্দাদের। বিশেষ করে রোগীদের হাসপাতালে আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে বিপাকে পড়েন তারা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বারবার আশ্বাসেও সেখানে হচ্ছে না সেতু। এতে ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।  জানা গেছে, হরিপুর উপজেলার ৬নং ভাতুরিয়া ইউনিয়ন ও রানীশংকৈল উপজেলার লেহেম্ব ইউনিয়নের লোকজন প্রায় ২০ বছর ধরে দিলগাঁও গ্রামে কুলি নদের কেল্লা মনির ঘাটে বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করছে। তখন থেকে স্কুল-কলেজ, হাট-বাজার, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা কাজে ভাতুরিয়া ইউনিয়নের ঝাঁরবাড়ি, টেংরিয়া, দিলগাঁও, চাপাসার ও মুলকান এবং লেহেম্বা ইউনিয়নের  বশতপুর, লেহেম্বা, বর্ম্মপুর, বদনকন্ড, বিরাশি, চাপোর ও পাতিপুর গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ওই সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করেন। স্থানীয় বাসিন্দা শামসুল হক বলেন, বর্ষা মৌসুমে সাঁকোটি পানির স্রোতে ভেঙে যায়। তখন মানুষের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। কলেজছাত্র বাবুল বলেন, আমরা যখন এই সাঁকো দিয়ে চলাচল করি তখন ভয় লাগে। বর্ষাকালে অনেক পথ ঘুরে কলেজে যেতে হয়। সময়মতো কলেজে যেতে পারি না। সাঁকোর বদলে এখানে যদি একটা ব্রিজ হলে আমাদের জন্য খুবই ভালো হতো। কৃষক রমজান আলী, মোকমুল হোসেন ও আমিরুল বলেন, কুলিক নদের এপার ও ওপারে  আমাদের কৃষিজমি রয়েছে। জমি চাষাবাদের জন্য খরা মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করি। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে পড়তে হয় মহাবিপাকে। তাই এখানে একটি সেতুর দরকার। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শাজাহান সরকার বলেন, দিলগাঁও ঘাটে একটি ব্রিজের জন্য ঠাকুরগাঁও-২ সংসদ সদস্যকে জানানো হয়েছে।
০৩ মে, ২০২৪

শিশুশ্রম / সস্তায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুরা
মেহেদি হাসানের বাড়ি কুমিল্লা। থাকে ঢাকার আদাবরে। বয়স ৭ বা ৮ বছর হবে। তার এ বয়সে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে মায়ের হাত ধরে স্কুলে যাওয়ার কথা, বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলায় মেতে ওঠার কথা। কিন্তু সে হাতে তুলে নিয়েছে লেগুনার স্টিয়ারিং। পেটের তাগিদে ছুটে চলে পিচঢালা সড়কে। অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুর হাতে স্টিয়ারিং থাকায় যেমন যাত্রীরা নিরাপদ নন, তেমনই এই শিশু হারাচ্ছে তার সোনালি শৈশব। আইনত দেশে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও বর্তমানে মেহেদি হাসানের মতো দেশে শিশুশ্রমিক রয়েছে ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৭ জন। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত রয়েছে ১০ লাখ ৬৮ হাজার ২১২ শিশু। শিশুদের বেশিরভাগেরই কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নেই। এমনকি আড়াই থেকে ৫ হাজার টাকা মজুরিতে কাজ করে বেশিরভাগ শিশু। প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় অনেক কম মজুরিতে পাওয়া যায় বলেই এসব কাজে শিশুদের নিয়োগ দেওয়া হয়। অন্যদিকে জাতীয় শিশুশ্রমে নির্মূল নীতি ২০১০ এবং জাতীয় শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যে দেশ থেকে সব ধরনের শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। তবে পরিসংখ্যান অনুযায়ী ঘটছে তার উল্টোটা। কারণ গত ১০ বছরে দেশে শিশুশ্রমিক বেড়েছে ৮৬ হাজার ৫৫৮ জন। ফলে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, শহর এলাকায় শিশুশ্রমিক নিয়োগের সবচেয়ে প্রচলিত কারণ হলো নিম্ন মজুরি (৩৫ দশমিক ১ শতাংশ) এবং নানাবিধ কাজের জন্য শিশুরা উপযুক্ত এবং বিশ্বস্ত (১৭ দশমিক ৩ শতাংশ)। এ ছাড়া বিশেষ করে পল্লি এলাকায় প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিকের অভাবকে শিশুশ্রমিক নিয়োগের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণেই পল্লিতে ১১ দশমিক ৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে শিশুশ্রমিক নিয়োগ করা হয়। শ্রমজীবী শিশু নিয়োগে আরেকটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো, শ্রমিক হিসেবে কাজের জন্য উপযুক্ত, এই মানদণ্ডের ভিত্তিতে ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ শিশুশ্রমিক নিয়োগকৃত রয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী ৩৫ লাখ ৪০ হাজার শিশু শ্রমজীবী রয়েছে। যার মধ্যে ১৭ লাখ ৬০ হাজার শিশু বেকার এবং ১৭ লাখ ৮০ হাজার শিশুশ্রমে রয়েছে। শ্রমে থাকা শিশুদের মধ্যে ১০ লাখ ৭০ হাজার শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। ঝুঁকিপূর্ণ কাজের মধ্যে অটোমোবাইল ওয়ার্কশপে কাজ করে সবচেয়ে বেশি। পল্লি এলাকায় ২৭ লাখ ৩০ হাজার শ্রমজীবী শিশু রয়েছে এবং শহরাঞ্চলে রয়েছে ৮ লাখ ১০ হাজার। শ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা পল্লি এলাকায় ১৩ লাখ ৩০ হাজার এবং শহরাঞ্চলে ৪ লাখ ৪০ হাজার। অন্যদিকে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা পল্লি এলাকায় ৮ লাখ ২০ হাজার এবং শহরাঞ্চলে ২ লাখ ৪০ হাজার। শিশুশ্রমিকের ৮২ শতাংশ তাদের নিজস্ব বাড়িতে বসবাস করে। উৎপাদনে ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ এবং কৃষি, বনায়ন ও মাছ ধরায় ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ নিযুক্ত রয়েছে। সামগ্রিকভাবে শিশুশ্রমিক কর্মচারী হিসেবে শ্রেণিভুক্ত ৬৮ দশমিক ৮ শতাংশ এবং স্কুলে যায় ৫২ দশমিক ২ শতাংশ। শিশুশ্রমিকদের গড় মাসিক আয় ৬ হাজার ৬৭৫ টাকা। এ ছাড়া ২০ লাখ ১০ হাজার শিশু গৃহকর্মী রয়েছে, যাদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয় না। গৃহকর্মে পারিশ্রমিক পায় ৮০ হাজার শিশু, তাদের মধ্যে মেয়েশিশুর সংখ্যা বেশি। তিনটি প্রাথমিক খাত যেমন কৃষি, শিল্প ও পরিষেবায় যথাক্রমে ১০ লাখ ৭০ হাজার, ১১ লাখ ৯০ হাজার এবং ১২ লাখ ৭০ হাজার শিশুশ্রমিক রয়েছে। বেতনভোগী এবং মজুরি উপার্জনকারী শ্রমজীবী শিশুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫ লাখ ৪০ হাজারের মধ্যে ১০ লাখ ৯২ হাজার। সর্বোচ্চ সংখ্যা হলো ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৫৯৯ শ্রমজীবী শিশু, যাদের মাসিক আয় ৫ হাজার ১ থেকে ৭ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে। পরবর্তী সর্বোচ্চ সংখ্যা হলো ৫ লাখ ৮৫ হাজার ৪২২, যাদের আয় ২ হাজার ৫০১ থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে। শ্রমজীবী শিশু যারা ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সী, তাদের উপার্জন বেশি এবং এ বয়সের ১৩ লাখ ৪৮ হাজার ৯০২ জন শ্রমজীবী শিশু রয়েছে। ১০ লাখ ৩৫ হাজার শ্রমজীবী শিশুর মধ্যে ৪ লাখ ৭২ হাজার ৭২৮ জনের মাসিক আয় ৭ হাজার ৫০১ টাকা। ১২ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ২৭ লাখ ৬৪ হাজার ৮২৭ জন শ্রমজীবী শিশু রয়েছে, যাদের মাসিক আয় ২ হাজার ৫০১ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। ৫ থেকে ১১ বছর বয়সের ১ লাখ ৬৮ হাজার ৩৮০ জন শিশু প্রতি মাসে ২ হাজার ৫০১ থেকে ৫ হাজার টাকা আয় করে। খাতভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শিশুশ্রম সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ৪৩টি খাতকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিবিএস সরকারঘোষিত এই ঝুঁকিপূর্ণ তালিকা থেকে খাতভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শিশুশ্রম জরিপ-২০২৩ পরিচালনার জন্য পাঁচটি খাত নির্বাচন করেছে। এগুলো হলো মাছ, কাঁকড়া, শামুক বা ঝিনুক সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ও শুঁটকি উৎপাদন; জুতা উৎপাদন; লোহা ও ইস্পাত ঢালাই (ওয়েল্ডিং কাজ বা গ্যাস বার্নার মেকানিকের কাজ); মোটর যানবাহনের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত (অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ) এবং ব্যক্তিগত ও গৃহস্থালি সামগ্রীর মেরামত (অনানুষ্ঠানিক এবং স্থানীয় টেইলারিং ও পোশাক খাত)। এ পাঁচটি খাতে ৪০ হাজার ৫২৫টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ পাঁচটি ঝুঁকিপূর্ণ খাতে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী ৩৮ হাজার ৮ জন শিশু কাজ করছে। ঝুঁকিপূর্ণ খাতে কাজে নিয়োজিত শিশুদের মধ্যে ৯৭ দশমিক ৫ শতাংশ ছেলে এবং ২ দশমিক ৫ শতাংশ মেয়ে। এই পাঁচটি খাতে শ্রমজীবী মোট শিশুর সংখ্যা হলো যথাক্রমে শুঁটকি মাছ উৎপাদনে ৮৯৮, চামড়ার তৈরি পাদুকা তৈরিতে ৫ হাজার ২৮১, ওয়েল্ডিং বা গ্যাস বার্নার মেকানিকের কাজে ৪ হাজার ৯৯, অটোমোবাইল ওয়ার্কশপে ২৪ হাজার ৯২৩ এবং অনানুষ্ঠানিক এবং স্থানীয় টেইলারিং বা পোশাক খাতে ২ হাজার ৮০৫ জন। এ পাঁচটি ঝুঁকিপূর্ণ খাতের শ্রমজীবী শিশুদের সবচেয়ে বেশি কাজ করে অটোমোবাইল খাতে। এই খাতে কর্মরত শিশুর ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশ পল্লি এবং ৬৪ দশমিক ৩ শতাংশ শহর এলাকায় বসবাস করে। এসব শিশুর মধ্যে আনুমানিক ১৯ দশমিক ১ শতাংশ ছেলে এবং ৭ দশমিক ৭ শতাংশ মেয়ে। জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোর্শেদ কালবেলাকে বলেন, ‘সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম পুরোপুরি বন্ধ করার উদ্যোগ নিলেও সেটি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। কারণ শিশুশ্রম বন্ধ করতে হলে রাষ্ট্রের সামাজিক এবং আর্থিক কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে। যে শিশু কাজ করে পরিবারকে সাপোর্ট দেয়, তার পরিবারের দায়িত্ব নিতে হবে রাষ্ট্রকে। এই দায়িত্ব নেওয়ার সক্ষমতা রাষ্ট্রের নেই। তাই মহাপরিকল্পনা ছাড়া এটি বন্ধ করা সম্ভব নয়।’ এ বিষয়ে শিশু সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ লায়লা খন্দকার কালবেলাকে বলেন, ‘সদিচ্ছার অভাবে শিশুশ্রম নির্মূল করা যাচ্ছে না। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছি, কিন্তু শিশুশ্রম বন্ধ করতে পারছি না। বিষয়টি লজ্জার, একই সঙ্গে আমাদের লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’
০১ মে, ২০২৪

ব্যাংকের ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের তথ্য প্রকাশের পরামর্শ আইএমএফের
দেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলছে। এজন্য পুনঃতপশিল ও অবলোপনের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কম দেখাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকের ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশের পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্বাস্থ্য ও এর ওপর করা পরিদর্শনের প্রতিবেদন গ্রাহকদের জন্য উন্মুক্ত করতে বলেছে সংস্থাটি। গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এ পরামর্শ দেয় সফররত আইএমএফের প্রতিনিধিদল। বৈঠক শেষে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা। সূত্র বলছে, দেশের ব্যাংক খাতে দিন দিন খারাপ সম্পদ বেড়েই চলছে। এ কারণে কয়েকটি ব্যাংক অতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। এসব ব্যাংকের গ্রাহকদের আমানত ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে বলে মনে করে আইএমএফ। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন গ্রাহকদের জন্য প্রকাশ করার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। যাতে গ্রাহকরা তাদের আমানতের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিজেরাই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। একই সঙ্গে ব্যাংকের আর্থিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন অব্যাহত আছে কি না, তা-ও জানতে চেয়েছে সংস্থাটি। পরিদর্শন প্রতিবেদনগুলো গ্রাহকদের জন্য প্রকাশ করা হয় কি না, সে বিষয়েও জানতে চাওয়া হয়েছে। জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, আইএমএফের শর্তানুযায়ী ব্যাংকের খারাপ সম্পদের তথ্য প্রকাশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আমরা এরই মধ্যে অনেক তথ্য প্রকাশ করছি। এর বাইরে আরও কিছু তথ্য তারা প্রকাশ করার পরামর্শ দিয়েছিল। সেগুলো প্রকাশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চেয়েছে প্রতিনিধিদল। পাশাপাশি ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার শর্তও রয়েছে। সে শর্ত অনুযায়ী খেলাপি ঋণ আদায়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপ জানতে চেয়েছে সংস্থাটি। অন্য এক বৈঠকে কী প্রক্রিয়ায় ব্যাংকগুলোকে একীভূত করা হচ্ছে, সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জানতে চেয়েছে সংস্থাটি। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিরা ব্যাংক একীভূতকরণের ক্ষেত্রে এরই মধ্যে নীতিমালা জারি করার তথ্য প্রতিনিধিদলের কাছে উপস্থাপন করেন। দেশের ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা তৈরিতে একীভূতকরণের প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, আইএমএফের প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসার আগেই ব্যাংক একীভূতকরণের বিষয়ে সব তথ্য তাদের পাঠানো হয়েছিল। এ কারণে তারা এ বিষয়ে খুব বেশি জানতে চায়নি। তবে এখন পর্যন্ত কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেসব বিষয়ে জানতে চেয়েছে তারা। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক কালবেলাকে বলেন, আইএমএফ মাত্র আমাদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে। ৮ মে পর্যন্ত ধাপে ধাপে এ বৈঠক হবে। তাই এ মুহূর্তে কোনো ধরনের মন্তব্য করছি না। গত বৃহস্পতিবার এক বৈঠকে ক্রলিং পেগ চালুর বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা ও সফররত আইএমএফের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা নানা পর্যালোচনা ও যুক্তি উপস্থাপন করেন। পরে তারা প্রাথমিকভাবে এটি চালুর জন্য গভর্নরের ওপর দায়িত্বভার ছেড়ে দেন। সবকিছু ঠিক থাকলে গভর্নর সরকারের সর্বোচ্চ মহলে আলোচনা করে আগামী অর্থবছর থেকে ক্রলিং পেগ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, ডলার বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যত কোনো উপায় না পেয়ে মন্দের ভালো হিসেবে ক্রলিং পেগের ওপর নির্ভর করা হচ্ছে। এটি পরীক্ষামূলকভাবে চালুর পর বিভিন্ন দেশের মডেল কীভাবে ক্রলিং পেগকে নিয়ন্ত্রণ করত, সেগুলো বিষয় পর্যবেক্ষণ করা হবে। বিষয়টি স্থায়ীভাবে চালু থাকবে কি না, তা নির্ভর করবে ডলারের বাজার পরিস্থিতি মূল্যায়নের ওপর। এর আগে গত বুধবার সফররত প্রতিনিধিদলটি মুদ্রানীতি, মূল্যস্ফীতি, বিদেশি বাণিজ্যের ভারসাম্য ও আউটলুক, মুদ্রাবাজার, তারল্য ব্যবস্থাপনা, আর্থিক খাত সংস্কার, খেলাপি ঋণ ও সুদের হার বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা করে।
২৯ এপ্রিল, ২০২৪
X