ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জেলেদের চাল আত্মসাতের অভিযোগ
বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার দূর্গাপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হানিফ তালুকদারের বিরুদ্ধে তালিকাভুক্ত কার্ডধারী জেলেদের চাল না দিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে।  এ ঘটনায় ২১ মে (মঙ্গলবার) তালিকাভুক্ত কার্ডধারী জেলেরা ক্ষুব্ধ হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এর কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে ওই ইউনিয়নের জেলেদের মধ্যে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড গোবিন্দপুর গ্রামের কার্ডধারী জেলে গৌতম দাস ও দোলোয়ার মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, প্রতিবার স্থানীয় ইউপি সদস্যের মাধ্যমে তারা তাদের চালের টোকেন কার্ড পেয়ে থাকেন। এই বার ইউপি চেয়ারম্যান হানিফ তালুকদার স্থানীয় ইউপি সদস্যের কাছে সেই কার্ড দেয়নি। চেয়ারম্যান হানিফ তালুকদার তার কাছ থেকে কার্ড সংগ্রহ করতে বলেন, তার কথা অনুযায়ী আমরা চেয়ারম্যানের কাছে কার্ড চাইতে গেলে চেয়ারম্যান বলেন, তোমাদের কোনো কার্ড নেই। ইউপি চেয়ারম্যান এভাবেই অনেক জেলেদের চালের কার্ড না দিয়ে নিজেই আত্মসাৎ করেছে। তাই আমরা চালের কার্ড না পাওয়ায় ইউএনও বরাবর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।  ইউপি চেয়ারম্যান হানিফ তালুকদারের বিরুদ্ধে স্থানীয় জেলেদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, প্রত্যেক জেলে কার্ডের বিপরতীতে ৪০ কেজি করে চাল বিতরণ করার কথা থাকলেও যেসব জেলেদের মাঝে চাল বিতরণ করা হয়েছে তা সঠিক ভাবে পরিমাপ করে  চাল বিতরণ করেননি। ইউপি চেয়ারম্যান হানিফ তালুকদারের খামখেয়ালিপনায় চাল না পাওয়া কার্ডধারী জেলেরা সরকারিভাবে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল পাওয়ার দাবিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। অভিযোগের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান হানিফ তালুকদারের কাছে জানতে চেয়ে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বরে বারবার ফোন করা হলেও তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে।  এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন গতকাল (২১ মে) আমি হিজলা উপজেলার নির্বাচনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বে ছিলাম, জেলেদের চাল বিতরণে অনিয়ম করেছে চেয়ারম্যান হানিফ তালুকদার তার বিরুদ্ধে উপজেলা কার্যালয়ে,  জেলেরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন-এ রকম একটি লিখিত অভিযোগ দাখিলের বিষয়ে মৌখিকভাবে শুনেছি, কিন্তু লিখিত অভিযোগটি হাতে পাইনি। লিখিত অভিযোগটি হাতে পেলে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 
২৩ মে, ২০২৪

পিরোজপুরে জেলেদের চাল নিয়ে চালবাজি
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় ১১টি ইউনিয়নে মৎস্য সংরক্ষণ মৌসুমে কর্মহীন জেলেদের পুনর্বাসনের চাল বিতরণ শুরু হয়েছে। বেতমোড় ইউনিয়নে যে চাল বিতরণ করা হয়েছে তাতে এক মাসে ৪০ কেজির স্থলে প্রত্যেক জেলে ৫-৬ কেজি চাল ওজনে কম পেয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইলিশের জাটকা আহরণ বন্ধ ও ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১১ মার্চ থেকে চার মাস সমুদ্র ও নদীর বিভিন্ন স্থানে জাল ফেলে মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সরকারি এ নিষেধাজ্ঞায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক জেলেদের প্রতি মাসে ৪০ কেজি চাল প্রদান করে মৎস অধিদপ্তর। সরেজমিনে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার সকালে বেতমোড় রাজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে ইনটেক ত্রিশ কেজি ওজনের বস্তা খুলে ওজন মাপা যন্ত্র ছাড়াই বালতি দিয়ে মেপে জেলেদের বস্তায় চাল ভরে দিচ্ছেন। যেন জোর যার মুল্লুক তার। জাটকা ধরা থেকে বিরত থাকা ৮৯০ জন জেলের জন প্রতি মাসে ৪০ কেজি চাল দেওয়ার কথা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়াম্যান উপজেলা মৎস্য অফিসের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে প্রতি জেলে পরিবারের মাঝে ৫-৬ কেজি ওজনে কম দিয়ে বিতরণ শুরু করেন। এতে জেলেদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ জেলেরা ওজনে কম দেওয়ার বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সাংবাদিকদের অবহিত করেন। সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়েও অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। ওজন করে দেখা যায়- উলুবাড়িয়া গ্রামের মান্নান বিশ্বাসের ছেলে আলম বিশ্বাসকে (জেলে) ৪০ কেজির পরিবর্তে ৩৪ কেজি চাল দেওয়া হয়েছে।  তিনি জানন, জেলেদের তালিকা থেকে নাম কেটে দেওয়ার ভয়ে এ বিষয়ে কোনো জেলে প্রতিবাদ করেন না। বেতমোড় ইউনিয়নের মহারাজ, সেলিম মিয়াসহ একাধিক ভুক্তভোগী জেলের অভিযোগ, কার্ডধারী জেলেদের ৪০ কেজি করে চাল দেওয়ার নির্দেশ থাকলেও ৫-৬ কেজি করে কম দেওয়া হচ্ছে।  তবে ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন আকন ৫ কেজি করে চাল ওজনে কম দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা জনপ্রতি জেলেকে ৪০ কেজির পরিবর্তে ৩৭.৫ চাল বিতরণ করছি। বস্তায় চাল ঘাটতি, শ্রমিকদের মজুরির জন্য কিছু চাল কম দিতে হচ্ছে।   সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, কার্ডধারী জেলেদের প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে চাল দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। পরিমাপে কম দেওয়ার সুযোগ নেই। ইউপি চেয়ারম্যান কম দিয়েছে সেটা আমার জানা নেই।   এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈকত রায়হান কালবেলাকে জানান, এখনও কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। প্রত্যেক ইউনিয়নে একজন করে সরকারি মালামাল বিতরণে ট্যাগ অফিসার দায়িত্বে থাকেন।  চাল কম দেওয়ার সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
২২ মার্চ, ২০২৪

জেলেদের চাল পাচ্ছে ভিন্ন পেশার মানুষ, বঞ্চিত প্রকৃত জেলেরা
বরগুনার আমতলীতে ৬ হাজারেরও অধিক নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে অধিকাংশই ভিন্ন পেশার মানুষ বলে অভিযোগ স্থানীয় জেলেদের।  তারা বলছেন, প্রকৃত অনেক জেলেকে বাদ দিয়ে কয়েক হাজার ভুয়া জেলেদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তালিকায়। তাই নিবন্ধিত না থাকায় সরকারি বিভিন্ন সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত জেলেরা। এ ছাড়াও জেলেদের বরাদ্দের খাদ্য সহায়তা (চাল) বিতরণে অনিয়ম ঠেকাতে যাচাইবাছাই করে চাল দেওয়ার দাবি স্থানীয় জেলেদের।  মৎস্য অফিসের তথ্য মতে, আমতলীতে কার্ডধারী জেলে রয়েছে ৬ হাজার ৭৮৯ জন। যার মধ্যে আমতলী পৌরসভায় ৪৯৬, ইউনিয়ন পর্যায়ে আমতলী সদরে ৩৪১, হলদিয়ায় ৮২৩, চাওড়ায় ৬০২, কুকুয়ায় ৬১৮, গুলিশাখালীতে ১ হাজার ৬৪০, আরপাঙ্গাশিয়ায় ১ হাজার ৩৪৮ জনকে প্রকৃত জেলে বলে শনাক্ত করে নিবন্ধন এবং পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়েছে। প্রতি বছর জুলাই হতে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে উপজেলা মৎস্য অফিস জেলেদের তালিকা হালনাগাদ করে। এ সংশ্লিষ্ট উপজেলা পর্যায়ে একটি কমিটিও রয়েছে। চলমান ২২ দিনের মৎস্য শিকরের নিষেধাজ্ঞার খোঁজখবর নিতে গিয়ে উপজেলার আরপাঙ্গাশিয়া, লোছা, আঙ্গুলকাটা ও লঞ্চঘাট জেলে পল্লীতে গেলে স্থানীয় জেলেরা অভিযোগ করেন, ব্যবসায়ী, কৃষক, শ্রমিক ও স্বচ্ছল ব্যক্তিরা কার্ডধারী জেলে। জীবনে কখনো মাছ শিকার করেননি, যাননি কখনো নদীর পাড়ে। তাদের প্রধান পেশা ব্যবসা-বাণিজ্য বা কৃষি। কিন্তু তারা নিবন্ধিত জেলে। খাদ্য সহায়তার তালিকায় সবার আগে থাকে তাদের নাম। প্রতি বছর জেলে হিসেবে তারা পান খাদ্য সহায়তা। চাল বিতরণের দিন লাইনেও দাঁড়াতে হয় না তাদের। অন্য লোকের মাধ্যমে চাল চলে যায় বাড়িতে। একাধিক জেলে বলেন, এই বছরে এমনিতেই অনেক লোকসানে আছি। ধার দেনা করে কোনো মতে বেঁচে আছি। ৬৫ দিনের অবরোধে অনেক কষ্ট হয়েছে পরিবারকে নিয়ে। ইলিশ রক্ষায় আমরা প্রতি বছর সরকারের কথা মেনে ঘাটে থাকি। কিন্তু আমাদের নামের চাল আমরা প্রকৃত জেলেরা পাই না, অন্য পেশার মানুষরা চাল নিয়ে যায় আমাদের সামনে থেকে।  জেলেরা আরও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মাছ ধরে জাইল্লারা, চাউল পায় হাইল্লারা। তালিকায় থাকা ভুয়া জেলেদের কার্ড পরিবর্তিত না করা হলে সরকারি অর্থ অপচয়ের পাশাপাশি সরকারের উদ্দেশ ব্যাহত হবে বলে জানান তারা।  আমতলী পৌরসভা ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জেলে স্বপন জানান, পাঁচ বছর ধরে তিনি জেলে পেশায়। তিনি সাগরে মাছ ধরেন। কিন্তু তাদের নামে জেলে কার্ড নেই।  উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের আঙ্গুলকাটা গ্রামের জেলে মনির প্যাদা বলেন, আমি ১০ বছর জেলে পেশায় আমার কার্ডও হয় নাই আর সরকারি কোনো সহায়তাও পাই না। এ ছাড়া আমার বাড়িতে আরও চারজন প্রকৃত জেলে রয়েছেন, যাদের কারোরই জেলে কার্ড নেই।  লোছা গ্রামের সোলাইমান জানান, তিনি ১৪ বছর ধরে জেলে পেশায় জড়িত। কিন্তু তার নামে জেলে কার্ড নেই।  ফেরদৌস নামের আরেক জেলে বলেন, চার বছর ধরে সাগরে মাছ শিকার করেন তিনি। জেলে তালিকায় নাম নেই তার। নেই জেলে কার্ডও। তাই মাছ ধরা বন্ধের সময় সরকারি কোনো সহায়তাও পান না তারা। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হালিমা সরদার জানান, অতীতে কীভাবে জেলে তালিকা তৈরি হয়েছে তা তিনি জানেন না। জেলে তালিকা হালনাগাদ চলছে। প্রকৃত জেলে শনাক্ত করে নিবন্ধনকরণ এবং তাদের পরিচয়পত্র প্রদান করা হবে। এ ছাড়া, তালিকায় ভুয়া জেলেদের বিষয়ে অভিযোগ পেলে তিনি ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান। সঠিক জেলে তালিকা না থাকায় সরকারের উদ্দেশ ব্যাহত এবং অর্থের অপচয় হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের তিনি কোনো উত্তর দেননি।
২১ অক্টোবর, ২০২৩
X