‘বাজেট প্রণয়ন থেকে বাজেট বাস্তবায়নে কোথাও জনগণের অংশগ্রহণ নেই’
বাজেট যখন প্রণয়ন করা হয় তখন মাঠপর্যায়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলা হয় না। জনগণের জন্য বাজেট করছেন জনগণের মতামত নিচ্ছেন না। বাজেট প্রণয়ন থেকে বাজেট বাস্তবায়ন পর্যন্ত কোথাও জনগণের অংশগ্রহণ নেই। মঙ্গলবার(১১ জুন) হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট সেন্টার ও এএলআরডির যৌথ আয়োজনে ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে অংশীদারিত্ব এবং বাজেট  ভাবনা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবুল বারকাত। তিনি বলেন, প্রতিবছর বাজেটে কিছু কিছু খাতে ভালো বরাদ্দ পেলেও সেখানে পারিবারিক কৃষি, গ্রামীণ নারী, আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও কৃষি-ভূমি-জলা সংস্কার খাত একদম অবহেলিত। এই খাতে জনগোষ্ঠীর মানুষের জীবন মান-উন্নয়নে আলাদা কোনো বরাদ্দ থাকে না। তবে সরকারের এসব খাতকে আলাদা করে বরাদ্দ দেওয়া উচিত। কারণ আমাদের হিসেবে বিভিন্ন খাতে সরকারের পারিবারিক কৃষির জন্য বরাদ্দ ৪০ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা যা মোট বাজেটের ৫.৩ শতাংশ ছিল। যদি গত বছরের মতো এ বছরও একই রকম বরাদ্দ থাকে তা হতে পারে প্রায় ৪৫ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা। সিরডাপ মিলনায়তনের সেমিনারে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী আর মোট জনসংখ্যার ৩৫.১ শতাংশ গ্রামীণ নারী। আমাদের হিসাবে গত বাজেটে গ্রামীণ নারীদের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩১ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা। যা মোট বাজেটের ৪.১ শতাংশ। চলমান বাজেট বরাদ্দে গ্রামীণ নারী তার ন্যায্য বরাদ্দ পাননি। আদর্শ অবস্থা বাস্তবায়ন কঠিনসাধ্য। তাই গ্রামীণ নারীর জন্য বিদ্যমান মাথাপিছু বরাদ্দের নিদেন পক্ষে দাবি করছি। গ্রামীণ নারীর মধ্যে ভূমিহীন, কৃষি-মৎসজীবিতার সাথে যুক্ত নারী, বিধবা এবং প্রতিবন্ধী নারীর সংখ্যা প্রায় ২ কোটি ৯০ লাখ। তাদের বাজেট-বরাদ্দ বঞ্চনা আরও বেদনাদায়ক। অনুমিত যে এই ধরনের গ্রামীণ নারীরা বাজেট থেকে মাথাপিছু পান সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৫৭০ টাকা। এ সময় তিনি বলেন, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য বাজেটে কোনো কাঙ্ক্ষিত ফল নেই। বাংলাদেশে কতসংখ্যক আদিবাসী আছে তার কোনো সরকারি পরিসংখ্যান নেই দেশে। চলতি অর্থবছরে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য মোট বরাদ্দ ছিল ৬ হাজার ২৩ কোটি টাকা। আমরা আগামী অর্থবছরে এর দ্বিগুণ দাবি করছি এই জনগোষ্ঠীর মানুষের উন্নয়নের জন্য। সেমিনারে আরও আলোচনা করেন ড. জামাল উদ্দিন, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক রাজ্জেকুজামান রতন, এএলআরডি প্রধান নির্বাহী পল্লব চাকমা, হিজরা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি জয়িতাসহ অনেকে।
১১ জুন, ২০২৪

বাজেট ২০২৪-২৫ / জাতীয় বাজেট এবং গফুর, আমিনা ও মহেশ
শরৎ বাবু ভেবেই ছিলেন স্বাধীন দেশে সবাই সুখে থাকবে, স্বাধীনতার পাঁচ দশক পেরোবার পরও, এ আশাবাদ ছিল ভুপেন হাজারিকার গায়কীতেও। এ কারণে এবারের ‘জাতীয় বাজেট’টি অনেকটাই ‘জাতীয়’ হবে, এ প্রত্যাশা সবার। বাজেট প্রণেতারাও তাদের বডি ল্যাংগুয়েজে তেমনটি প্রকাশ করেই চলেছেন। যেমনটি তারা সব সময় করে থাকেন। তবে দেখার বিষয় থেকেই যাচ্ছে যে, সবার আশা-আকাঙ্ক্ষার সালতামামিসহ ভবিষ্যৎ দিনাতিপাতের পথ পরিক্রমার পথ-নকশা এই বাজেট প্রকৃত প্রস্তাবে কেমন হলো। বাজেট আলোচনা ও আয় ব্যয় ব্যবস্থাপনাকে ৩০ শে জুনের বেড়াজালে আটকানোর মধ্যে মুনসিয়ানার কিছু নেই। বাজেটে বরাদ্দ দিয়েই দায়িত্ব শেষ এবং প্রচারের প্রগলভতায় তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা যুক্তিযুক্ত নয়, দেখা দরকার হবে বরাদ্দ অনুযায়ী আয় ব্যয় হচ্ছে বা হবে কিনা।  সুবর্ণ গ্রামের অতি প্রান্তজন আশির কাছাকাছি বয়স, গফুর, তার মেয়ে আমিনা এবং তাদের প্রিয় প্রাণিসম্পদ ও সংসারের অন্যতম অর্থনৈতিক সহযোগী সদস্য মহেশের কথা জাতীয় বাজেটে কীভাবে এবং কতটা প্রতিফলিত হলো সেটা নিরিখের জন্য বিষয়টি খোদ গফুর আমিনা আর মহেশের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজের ‘কৃষকের বাজেটের’ এক মফস্বল মাহফিলে গফুর একবার যোগ দিয়েছিল আর দশজনের মতো, সে যা বলেছিল তা ছবিতে ও শব্দে ধারণ করা হয়েছিল। সে শুনেছে গফুর যা যা বলেছিল তা টিভিতে নাকি দেখানোও হয়েছিল (মহেশদের তো আর টিভি দেখার সুযোগ বিধাতা তাদের টিওআরএ রাখেননি) কিন্তু বাজেটে তার কিছু প্রতিফলন হয়তো হয়েছে, হয়তো হয়নি।  তবে শিল্প ও ব্যবসায়ীদের ’শক্তিমান’ পদ-পদবিধারী কর্তাব্যক্তিদের মতো গফুর যদি বলতে পারত বাজেটে তাদের দাবি-দাওয়ার কত পার্সেন্ট প্রতিফলন হয়েছে কি হয়নি। তারা পারে কি যেতে তাদের নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ে? গফুরদের ভাগ্য ও বক্তব্য কৃষন চন্দের এক গল্পের কবি প্রকৃতির সেই লোকটির মতো যে, সচিবালয়ে গাছচাপা পড়েছে যেখানে সে জায়গাটা কৃষি মন্ত্রণালয়ের, গাছের গোড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে, কবি হওয়ায় তার দেখভালের নথি তথ্য সম্প্রচার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের, তাকে গাছের তলা থেকে উদ্ধারে যে টাকা লাগবে তা দেবার মালিক অর্থ মন্ত্রণালয়।  গাছচাপা লোকটিকে বলা হলো তোমার ফাইল চালাচালি শুরু হয়েছে, খুব শীঘ্র তোমাকে উদ্ধার করা হবে। শেষমেষ লোকটা গাছের তলায় পড়ে মারাই গেল তার ফাইল চূড়ান্ত হওয়ার আগে। যে সমাজে ‘রোগী মারা যাবার পর ডাক্তার আসা’র কাহিনি হরহামেশা বিদ্যমান, যে অর্থনীতিতে আইন তৈরি হয়ে বাস্তবায়নে যাবার আগেই তা সংশোধন সংস্কারের প্রয়োজন পড়ে সে দেশে গফুর, আমিনা আর মহেশের ঠাঁই বাজেটের পাতায় উঠলেও উঠতে পারে।  একসময় লেখাপড়া না জানলে টিপসহি দিলে চলত, এখন নিদেন একটা মোবাইল ব্যবহারেও মেশিনে টিপসহি দিতে হচ্ছে শিক্ষিত অশিক্ষিত সবাইকেই। ডিজিটাল পদ্ধতির যেখানে জয়জয়কার সেখানে সুবর্ণগ্রামের গফুর আর মহেশের ভাগ্য ফিরতে কেন এত বিলম্ব? কেন তার কাছে স্টিমুলাস প্যাকেজের টাকা, প্রধানমন্ত্রীর নগদ সহায়তার টাকা পৌঁছাবে না , কেন সে টাকা মিথ্যা পরিচয় প্রত্যয়নের জোরে অপাত্রে যাবে। স্বাধীনতার পাঁচ দশকের মাথায় এসে এখনো গফুর আর মহেশের নাম নিশানা নিয়ে ‘বোধগম্যতা’ কিংবা ‘দৃষ্টিসীমা’ কেন প্রসারিত হয়নি বা হচ্ছে না মহেশ তা বলবে কীভাবে, আগে ’পশু’সম্পদ পরে ’প্রাণী’সম্পদভুক্ত (মিউটেশনে একধাপ উন্নতি?) হতে পেরেছে সে।  এক সময় অধম অনাচারী মানুষের কীর্তিকলাপকে ‘পশুর চাইতে অধম’ বলার চল থাকাতে দু’পক্ষেরই মানসম্মান নিয়ে টানাটানি পড়ার কারণে কি না বলা যায় না, পশু প্রাণীতে পরিণত হয়েছে তবে বাজেটে এই উত্তরণের কোনো উপায় উপকরণের সুফল দেখা যায় না, তবে মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের দক্ষতা-সক্ষমতা বৃদ্ধির এন্তেজাম আছে প্রচুর।  সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় রিমাল ও জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবন কিংবা অদূর নিঝুম দ্বীপে প্রাণী সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কোনো তত্ত্ব তালাশই হয়েছে বা হবে কিনা জানা যায় না। হায় বাজেট, সেখানে ভেসে আসা মরা হরিণের প্রসঙ্গ টেনে এনে একটা লাইনও যদি থাকত! বরাদ্দ তো দূরের কথা। সরকারি দল ও কর্মকর্তারা হয়তো বলবেন জনতা থেকে কেউ বলেনি ‘বাজেট খারাপ হয়েছে’। বাজেটে যা সাব্যত হয় তা টের পেতে গফুর আমিনাদের সময় লাগে না। গফুর নিজে এটা জানা বোঝার আগেই মোবাইলে তার পয়সা কাটা শুরু হয়ে যায়। এ পয়সা সরকারের খাজাঞ্চিখানায় কখন পৌঁছাবে, আদৌ পৌঁছায় কিনা তার কিছুই সে জানে না, কেউ তাকে হিসাবও দেয় না।  মোটাতাজাকরণ ধরনের যে তেলেসমাতি চালু হয়েছে তাতে নিজের মানসম্মান নিয়ে বংশ গৌরব ও জাতপাত নিয়ে মহেশদের ইদানীং বেঁচে থাকা দায়। মহেশদের এক সময় সম্মান ও কদর ছিল চাষাবাদে সহায়তার জন্য। এখন হালচাষের কাজও করে দেয় মেশিন। মহেশদের এখন কোরবানির মওসুমে কে কাকে কত দামে বিক্রিযোগ্য করা যাবে সে ধান্দায় থাকে সবাই। এ জন্য তাকে কতকিছু খেতে দেওয়া হয়, তাকে হাইব্রিড পণ্য বানানোর জন্য। হায় অবস্থা এখন এমন হয়েছে গফুর এক মণ ধানের যা দাম পায় তা দিয়ে এক কেজি গরুর গোশতও পাওয়া যায় না। এক আসন্ন কোরবানির কালে মহেশদের হাটে ওঠা, বেচাকেনা, মাংস বানানো, বিলি বণ্টন, চামড়া সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ- রপ্তানি এবং এমনকি মসলা আমদানি সবই অনিশ্চিতের আধারে। এ জন্য মহেশের রাতের ঘুম হারাম হতে চলেছে। শরৎ বাবু এসব কিছুই আগাম ভাবেননি।  গফুরের বয়স এখন আশির কাছাকাছি। সে তিন জমানার তিন পতাকা দেখেছে। ব্রিটিশ আমলের পড়ন্ত বেলায় সে শুনেছে সামনে সুদিন আসছে। তার সঙ্গে তার পাড়ার পঞ্চায়েত পয়সাওয়ালাদের আর কোনো ফারাক থাকবে না বৈষম্য কমে যাবে কতকিছু। কিন্তু পাকিস্তান আমলে সে জানতে পারল বৈষম্য কমেনি বরং বাইশ পরিবার চুরানব্বই লাখ পরিবারের প্রতিপক্ষ বনে গেছে। এসবের থেকে ‘মুক্তির সংগ্রামে’ গফুর নিজেও অনেক কষ্ট ত্যাগ স্বীকার করেছে। কিন্তু পরবর্তী পঞ্চাশের বেশি বছর, এখন ঘরে ঘরে শিক্ষিত বেকার সন্তানের সমাহার বাড়ছে। তাদের চাকরির বয়স চলে গেছে বা যাচ্ছে, তাদের অনেকেই এখনো চাকরি বা কোনো কর্মে নিয়োজিত হতে পারেনি।  কেউ কেউ বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে অনেক কিছু খুইয়ে। আর তাদের দেশের কাজ করতে আসছে বিদেশের মানুষ। চাকরি বাকরি কর্মসৃজনে এই যে আত্মঘাতী অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে এসব নিয়ে জাতীয় বাজেটে কোনো কর্মপরিকল্পনা আছে কিনা গফুর এখনো জানতে পারেনি। শহরের করোনার কথা বলে গাও গ্রামের স্কুল কলেজ বন্ধ রেখে পড়–যারা সেই যে পাঠবিমুখ হয়ে গিয়েছিল তাদের ফেরাবার কোনো উপায় হয়েছে কিনা গফুর জানে না। গফুরের চোখে পানি এসে গেল আমার আমিনা যদি লেখাপড়া না করতে পারে তাহলে ক্ষতিটা হবে কার? আমার।  বাজেটে প্রান্তজনদের সামাজিক নিরাপত্তা জাল বিস্তৃত হচ্ছে। কিন্তু আসন্ন শিক্ষিতজনদের কর্মসৃজনের প্রয়াস প্রচেষ্টায় কোনো কিছুর ভিজিবিলিটি বার বার চশমা পাল্টিয়েও বাড়ছে না। গফুর জমি চাষ করে এক ফসলের জায়গায় দুই তিন ফসল উচ্চ ফলনশীল শস্যের সমাহার ঘটায় কিন্তু তার বিক্রয় মূল্য যেভাবে পড়তে শুরু করেছে ভবিষ্যতে চাষাবাদে টিকে থাকাই মুশকিল হয়ে পড়ে কিনা, তার দেশের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার বাড়া ভাতে ছাই পড়ে কিনা আবার খাদ্যশস্য আমদানির পথে হাঁটতে হয় কিনা গফুর কানাই করিম শামসু সবাইকে ভাবিয়ে তুলছে। গফুর আমিনা ও মহেশদেও প্রান্তিক পর্যায়ের জীবনে দু'দন্ড শান্তি, ক্ষুদ্র-ঋণ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার কাজ করে যে এন জি কিংবা অলাভজনক সেবা সংস্থা তাদেরকেও করের আওতায় আনায় তারাও কার্যক্রম গুটাতে বাধ্য হচ্ছে । গফুর রা যাবে কোথায়?  গফুর ও আমিনারা গ্রামে বাস করে। সেই গ্রামীণ সমাজে বেশ কিছু পরিবর্তন তাদের ভাবায় বৈকি। ডিজিটাল অগ্রগতিতে সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে অনেক ইতিবাচক সাফল্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মালামাল পরিবহন এবং মূল্য নির্ধারণ বিপণন ক্ষেত্রে বেশ অগ্রগতি ও সফলতা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এর বিপরীতে ডিজিটাল সুযোগ-সুবিধার অবৈধ ব্যবহারে উসকে দিয়ে সামাজিক ঐক্য, শান্তি ও নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ভিন দেশি ও ভাষী উগ্র ও অসামাজিক কার্যকলাপের সঙ্গে পরিচিতি ও ব্যবহারকে সহজলভ্য করে তুলেছে। তাদের পড়াশোনা ও জ্ঞানচর্চায় নানা অনৈতিক পন্থা ও প্রবৃত্তি অনুসরণে আগ্রহী করে তুলছে। ’জাতীয়’ পাঠ্য পুস্তক বোর্ড থেকে দলীয় লেখকদের দিয়ে মুক্তবুদ্ধির পরিবর্তে তাদের ‘সাম্প্রদায়িক’ বৃত্তাবদ্ধ বই বিনামূল্যে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলকে বিলি করা হচ্ছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে বেশ অরাজকতা বিরাজ করছে। শিক্ষকের নিয়োগ ও তাদের জ্ঞানবত্তা গুণগত মান নিয়ে সদাসর্বদা বাণিজ্য, অনিয়ম ও দুর্নীতি সর্বব্যাপী হয়ে ওঠায় শিক্ষার মানে ধস নামছে।  জিপিএ-৫ পেয়েও শিক্ষার্থীরা উচ্চ পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষাতেই কুপোকাত হচ্ছে। চাকরি-বাকরির পরীক্ষায় তারা সৎভাবে টিকতেই পারছে না। শহরের গুটিকয়েক ভালো স্কুল ও ভালো শিক্ষকের কাছে পড়াশোনা করাদের কাছে আপামর প্রান্ত ও পল্লী থেকে ওঠে আসারা দাঁড়াতেই পারছে না। গফুর দিব্য দৃষ্টিতে দেখছে তার দেশ ও সমাজ এক ধরনের অস্বস্তিকর মেধাশূন্য হয়ে পড়ছে ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থার কারণে। শিক্ষায় ভর্তুকি দিয়ে জনশিক্ষার হার হয়ত বাড়ছে কিন্তু গণশিক্ষা হচ্ছে না। এভাবে অন্তঃসারশূন্য শিক্ষায় শিক্ষিতরা দেশ ও সমাজের সম্পদ হওয়ার পরিবর্তে ‘সমস্যা’য় পরিণত হয় কিনা গফুর কাকে দেখতে বলবে?  বাজেটে পানির মাছের সাথে ডাঙার প্রাণিসম্পদকে মিশিয়ে ফেলা হয়। প্রাণিসম্পদ মহেশের মনে অনেক ক্ষোভ ও দুঃখ। সুন্দরবনের প্রাণিসম্পদ ও জীববৈচিত্র্য আজ নানা কারণে বিবিধ আক্রমণের শিকার। তাদের সুরক্ষার উন্নয়ন সম্পর্কে এবং তাদের সাম্প্রতিক ক্ষতির শিকার হওয়ার মতো বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে বাজেটে কর্মপরিকল্পনা ও বরাদ্দের প্রত্যাশা সকলের । মৎস্য ও পশুসম্পদ বিভাগের কাজ একত্রে থাকায় এবং মৎস্য চাষাবাদ ও ব্যবসায়ের সঙ্গে নগদ স্বার্থবাদিতার সম্পর্ক বেশি থাকায় মৎস্য সম্পদের দেখভাল প্রক্রিয়া পশুসম্পদের হিস্সায় ভাগ বসাচ্ছে। মহেশের মনে দুঃখ অনেক। গফুর ইদানীং মাছ চাষের ব্যাপারে যতটা না আন্তরিক মহেশের দেখাশোনার ব্যাপারে ততটা নয়।  ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ: সরকারের সাবেক সচিব এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান 
০৮ জুন, ২০২৪

বাজেটে অর্থনৈতিক সূচকের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না : সিপিডি
গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি)  নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, বাজেটে মুদ্রাস্ফীতি, জিডিপি গ্রোথ, বিনিয়োগের যেসব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা অতি উচ্চাভিলাষী ও বাস্তবসম্মত নয়। বাজেটে অর্থনৈতিক সূচকের অনেক লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না।  শুক্রবার (৭ জুন) প্রস্তাবিত বাজেটের পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়। ফাহমিদা খাতুন বলেন, চলমান অর্থনৈতিক উদ্বেগ মোকাবিলায় যে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, তা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে নেয়া হয়নি। মূল্যস্ফীতি রোধ ও নিম্ন আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে বাজেটে যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা যথেষ্ট নয়। এছাড়া বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, বেসরকারি ও ব্যক্তিগত খাতের বিনিয়োগে অবাস্তব লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাজেটে মুদ্রাস্ফীতি, জিডিপি গ্রোথ, বিনিয়োগের যেসব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা অতি উচ্চাভিলাষী ও বাস্তবসম্মত নয়। বাজেটে অর্থনৈতিক সূচকের অনেক লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। চলমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ অনুধাবন করতে না পারায়, বাজেটে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা দুর্বল ও অপর্যাপ্ত। সব মিলিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটটি অসাধারণ সময়ে একটি সাধারণ বাজেট। ফাহমিদা খাতুন বলেন, মন্ত্রী এমপিদের করমুক্ত গাড়ি পাওয়ার যে আইন রয়েছে সে আইন পরিবর্তন করতে হবে। তাদের কিছু পরিমাণ হলেও কর দেওয়া উচিত।  সিপিডি নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে স্পষ্ট বলা হয়েছে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সে থাকবে সরকার। কিন্তু বাজেটে কর ও ঋণ খেলাপিসহ দুষ্টচক্রকে মাথায় হাত বুলিয়ে তাদের টাকা অর্থনীতিতে আনার প্রচেষ্টায় কর হার কমানো হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।  
০৭ জুন, ২০২৪

এম এ মান্নান, এমপি / প্রস্তাবিত বাজেট সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেবে
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। জনবান্ধব বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেটে নিম্ন আয়ের মানুষের উপকার হবে। এই বাজেটে অনেক নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। সার্বিকভাবে এটিকে আমি ভালো বাজেট বলে মনে করি।   অর্থনীতির নানা প্রতিকূলতা স্বত্তেও প্রবৃদ্ধির গতি ছিল ভালো। সন্দেহ নেই, প্রবৃদ্ধির এই গতিধারা বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্তর্নিহিত শক্তির পরিচয় দেয়। জিডিপি প্রবৃদ্ধির এ গতি আগামী দিনে ধরে রাখার লক্ষ্যে কৃষি ও শিল্প খাতের উৎপাদন উৎসাহিত করতে সব ধরনের যৌক্তিক সহায়তা অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটি। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় সব ধরনের নীতি সহায়তা বজায় রাখা হবে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার মধ্যমেয়াদে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশে পৌঁছাবে।  মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির আওতায় গৃহীত পদক্ষেপসমূহের সাফল্য নিশ্চিত করার জন্য এর পাশাপাশি রাজস্ব নীতিতেও সহায়ক নীতিকৌশল অবলম্বন করা হবে বলে প্রস্তাবিত বাজেটে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দিতে ফ্যামিলি কার্ড, ওএমএস ইত্যাদি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। আমাদের গৃহীত এসব নীতি-কৌশলের ফলে আশা করছি, আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নেমে আসবে।  বর্তমান সরকার সব সময় দারিদ্র মানুষের দিকে দৃষ্টি রেখে বাজেট প্রণয়ন করেছে। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। নতুন করে ১০ লাখ মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনা হবে।  নতুন অর্থবছরে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ এবং খাদ্যনিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের তুলনায় নতুন অর্থবছরে এ খাতে প্রায় ৭ শতাংশ বরাদ্দ বেড়েছে, যার পরিমাণ ২ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা। কৃষি উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে ভর্তুকি প্রদান অব্যাহত রয়েছে এবং তা অদূর ভবিষ্যতেও চলমান থাকবে। সারে ভর্তুকি প্রদানের পাশাপাশি কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে যান্ত্রিকীকরণকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।  তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের আয়কর অব্যাহতির সুবিধা পুরোপুরি প্রত্যাহার করেনি সরকার। তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত দিয়ে বলা হয়েছে যে শর্ত পালন করলে বেশির ভাগ ব্যবসাতেই আগামী তিন বছরের জন্য কর অবকাশের সুবিধা পাওয়া যাবে। একটি উদীয়মান ও সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ২০১১ সাল থেকে কর অব্যাহতির সুবিধা দিয়ে আসছে সরকার। ২০২০-২১ অর্থবছরে এ সুবিধার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে পরে সরকার এ সুবিধার মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ায়। এ সুবিধা আগামী বছরও থাকছে।  সকল বাজেটের মতো এবারের বাজেটেরও চ্যালেঞ্জ হবে অর্থ জোগাড় করা। এটি চিরন্তন চ্যালেঞ্জ, নতুন কিছু না। এটি মোকাবিলা করা সম্ভব। তবে বাস্তবায়ন করা হলো বড় চ্যালেঞ্জ। টাকা জোগাড় করা তুলনামূলক সহজ। আসল হলো নিজেরা কাজ করে সময়মতো বাস্তবায়ন করা, ভালো মানের কাজ করা। এই জায়াগাটিতে আমাদের ভালো সুনাম নেই। এটাই বড় চ্যালেঞ্জ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে অর্থনীতির গতি বাড়ানো হবে আগামী বাজেটের আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ।  এডিপির আকার প্রকৃত অর্থে বাড়েনি। টাকার পরিমাণ সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে। টাকার মূল্যমান আগের জায়গায় নেই মূল্যস্ফীতির কারণে। মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলে এডিপির আকার তেমন বাড়েনি। কাজের মান উন্নত ও মিত্যব্যায়িতার নীতি অনুসরণ করতে হবে। অপচয় ও জৌলুস পরিহার করতে হবে। অহেতুক ব্যয়, অপচয় বন্ধ করতে হবে। আমি মনে করি এটাই হবে বাজেটের মূলমন্ত্র। এম এ মান্নান, এমপি: সংসদ সদস্য ও সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী
০৭ জুন, ২০২৪

মো. ফজলুল হকের নিবন্ধ / অর্থনীতির কঠিন সময়ে সাদামাটা বাজেট
নতুন সরকারের প্রথম বাজেট। অর্থমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়া অর্থমন্ত্রীরও প্রথম বাজেট। ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’ প্রতিপাদ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রায় ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।  এক কথায় বলতে গেলে প্রস্তাবিত বাজেটটি সাদামাটা অর্থমন্ত্রীর সাদামাটা বাজেট। খুব বেশি চমকের দেখা মেলেনি। বড় কোনোও পরিবর্তনও নেই। শুধু সংখ্যাগত পরিবর্তন চোখে পড়েছে। উদ্ভাবনী শক্তিরও প্রমাণ পাওয়া যায়নি বাজেটে।  বাজেটের ভালো দিকের কথা বলতে গেলে প্রথমেই সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির কথা বলতে হবে। এ খাতে ১০ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এতে গরিব মানুষের কিছুটা স্বস্তি মিলবে কিনা, সেটি পরে বোঝা যাবে। তবে মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় ভাতার পরিমাণ খুবই কম। এটি বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় রাখা যেত।  অর্থনীতির গতি বৃদ্ধি, রফতানি গতিশীল করা, বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য বাজেটে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনার অভাব লক্ষ্য করা গেছে। বৈদেশিক রিজার্ভ বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন ছিল রেমিট্যান্স ও রফতানি বৃদ্ধিমূলক উদ্যোগ গ্রহণ। কিন্তু হতাশাজনক বিষয় হলো, বাজেটে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের খাতগুলোয় নতুন কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। আশানুরূপ রেমিট্যান্স আহরণে নতুন পরিকল্পনা প্রয়োজন ছিল।  দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কঠিন সময়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো সচল করার নতুন কোনো ব্যবস্থার কথা বাজেটে নেই। উপরন্তু মোবাইল ফোন রিচার্জ ও ইনন্টারনেটের ওপর কর বৃদ্ধি, মেট্রোরেলের ভাড়া বৃদ্ধি, ফ্রিজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর কর বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা জনসাধারণের বোঝাকেই আরো বাড়াবে।  অর্থনীতির কঠিন এ পরিস্থিতিতে এগুলো এড়িয়ে গেলেই পারত সরকার। এসব পণ্য ও সেবার ওপর কর আরোপ করে খুব বেশি আয় বাড়ানো যাবে না শুধু জনগণের কষ্ট আরো বাড়বে।  মো. ফজলুল হক: সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ নিট পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ) 
০৬ জুন, ২০২৪

সংস্কৃতি খাতে বাজেট বেড়েছে দশমিক শূন্য ১ শতাংশ
এবারের বাজেটে সংস্কৃতি খাতে নামমাত্র বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। বিগত অর্থবছরের তুলনায় হিসাব করলে এই বরাদ্দ বৃদ্ধি হয়েছে মাত্র দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। সংস্কৃতি খাতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ৭ শত ৯৭ কোটি টাকা। শতাংশের হিসাবে তা শূন্য দশমিক ১০। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৭ শত ৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। শতাংশের হিসাবে মোট বাজেটের দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।  গত ১৫ বছরের মধ্যে ২০১০-১১ অর্থবছরে সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ ছিল সর্বোচ্চ দশমিক ১৬ শতাংশ। তখনকার বাজেটের অনুপাতে টাকার পরিমাণ ছিল ২১৪ কোটি। দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির সংরক্ষণ, চর্চা ও বিকাশেও বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে। এদিকে জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বিকেলে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এই বাজেট পেশ করেন। এর আগে প্রস্তাবিত এই বাজেট অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। বিশেষ বৈঠকে বাজেট প্রস্তাব অনুমোদন হয়। এ বাজেটের প্রতিপাদ্য ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার।’ দুপুর ১২টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ বৈঠক শুরু হয়। অনুমোদিত এ বাজেট দেশের ৫৩তম, আওয়ামী লীগ সরকারের ২৫তম এবং এ অর্থমন্ত্রীর প্রথম বাজেট। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। বাকি ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকবে। ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ইতোমধ্যে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে- অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইট www.mof.gov.bd এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইট www.nbr.gov.bd- এ বাজেটের সব তথ্যাদি ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পড়তে পারবেন এবং ডাউনলোডও করা যাবে। এ ছাড়া দেশ ও দেশের বাইরে থেকে [email protected]–এ ইমেইলের মাধ্যমে বাজেট সম্পর্কে মতামত ও সুপারিশ পাঠাতে পারবেন।
০৬ জুন, ২০২৪

প্রস্তাবিত বাজেট / ব্যয়বহুল হাসপাতালে আরও বাড়বে ব্যয়
রেফারেল বা ব্যয়বহুল হাসপাতালের দুই শতাধিক মেডিকেল যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম আমদানির ওপর শুল্ক বাড়াতে প্রস্তাব করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মণে অঙ্গীকার শীর্ষক বাজেট বক্তৃতাকালে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এ ঘোষণা দেন। তার বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে রেফারেল হাসপাতালে চিকিৎসা যন্ত্রপাতি আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্কারোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এই শল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশের বড় বড় বেসরকারি হাসপাতালকে (রেফারেল হাসপাতাল) ৫ শতাংশ অসহায় রোগীর বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার শর্তে মেডিকেল যন্ত্রপাতি আমদানিতে ১ শতাংশ শুল্ক সুবিধা প্রদান করা হয়। তবে বেশিরভাগ হাসপাতালই এই শর্ত পূরণ না করায় এবার প্রস্তাবিত বাজেটে ১০ শতাংশ শুল্কারোপের প্রস্তাব করা হয়। অর্থমন্ত্রী তার বক্তব্যে এ খাতের আশার দিকও বর্ণনা করেন। তিনি বাজেট বক্তৃতায় বলেন, স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়কে অগ্রাধিকার প্রদান করে বিগত বছরগুলোর মতো এবারও কতিপয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী, ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে অব্যাহত থাকবে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা। কিডনি ডায়ালাইসিস ফিল্টার এবং সার্কিট আমদানিতে বর্তমানে শুল্ক দিতে হয় ১০ শতাংশ। এই শুল্ক এক শতাংশে নামিয়ে আনার সুপারিশ করা হয়েছে। আইভি ফ্লুয়েড স্যালাইন পুশ করতে ব্যবহৃত স্পাইনাল নিডল আমদানিতে কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে ৫ শতাংশ। এর আগে এই পণ্যের কোনো এইচএস (হারমোনাইজড সিস্টেম) কোড ছিল না। ফলে স্পাইনাল নিডল আমদানিতে শুল্ক আরোপে জটিলতা তৈরি হতো। তাই পণ্যটিতে নতুন এইচএস কোড তৈরিরও প্রস্তাব করা হয়েছে। চিকিৎসাসেবা সহজলভ্য করার ক্ষেত্রে সরকারের অব্যাহত নীতি সহায়তার অংশ হিসেবে প্রস্তাবিত বাজেটে অ্যাম্বুলেন্স কম শুল্কে আমদানির সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অ্যাম্বুলেন্সের ন্যূনতম দৈর্ঘ্য নির্ধারিত না থাকায় শুল্কায়নে জটিলতা ছিল। তাই অ্যাম্বুলেন্সের প্যাসেঞ্জার কেবিনের দৈর্ঘ্য ন্যূনতম ৯ ফুট নির্ধারণ এবং এইচএস কোডের বর্ণনা পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া ওষুধের কাঁচামাল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বা অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যালস ইনগ্রিডিয়েন্টসের (এপিআই) কাঁচামাল আমদানির রেয়াতি সুবিধা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে আরও কিছু নতুন কাঁচামাল অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সেইসঙ্গে কাঁচামালের প্রজ্ঞাপনে অ্যাজিথ্রোমাইসিনের নাম সংযোজনেরও প্রস্তাব এসেছে। ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করতে এ রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানির তালিকায় আরও নতুন কাঁচামাল অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে ২০১৪ সালে জারিকৃত কাঁচামালের প্রজ্ঞাপনে একই নামের কাঁচামাল একাধিকবার তালিকায় এসেছে। আবার অনেক পণ্যের নামের বানান ভুল রয়েছে। এতে শুল্কায়নের ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হয়। জটিলতা নিরসনে সংশোধন শেষে নতুন প্রজ্ঞাপন জারির প্রস্তাবও করা হয়েছে। ডেঙ্গুর কিট আমদানিতে একটি রেয়াতি সুবিধা ছিল। ২০১৯ সালে সেই সুবিধা বাতিল করা হয়। প্রস্তাবিত বাজেটে রেয়াতি সুবিধায় ডেঙ্গু কিট আমদানির জন্য নতুন প্রজ্ঞাপন জারিরও প্রস্তাব করা হয়েছে।
০৬ জুন, ২০২৪

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ভাতাভোগীর সংখ্যা বাড়ছে প্রায় ১০ লাখ
প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় আসছে আরও ৯ লাখ ৮১ হাজার ৬১ জন। এছাড়া গত অর্থবছরের তুলনায় এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৯ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা। বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এ তথ্য জানান। আগামী অর্থবছরে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন মিলে জাতীয় বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। সামাজিক নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আগামী অর্থবছরে ১ লাখ ৩৬ হাজার ২৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১ লাখ ২৬ হাজার ২২৭ কোটি টাকা ছিল। এ হিসাব অনুযায়ী সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৯ হাজার ৭৫৪ কোটি। প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী, নতুন করে ৩ লাখ ৩৪ হাজার প্রতিবন্ধী ভাতা, ১ লাখ ৫০ হাজার ৪৮০ জনের মাতৃত্বকালীন ভাতা, ২ লাখ বয়স্ক ভাতা, ২ লাখ বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা, ৫ হাজার ৭৪৯ তৃতীয় লিঙ্গ ও ৯০ হাজার ৮৩২ জন সমাজের অন্য অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে ভাতার আওতায় আনা হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রতিবন্ধীদের স্বার্থ ও অধিকার সুরক্ষায় আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আগামী অর্থবছরে প্রতিবন্ধী ভাতা প্রাপ্তের সংখ্যা বর্তমান ২৯ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩২ লাখ ৩৪ হাজারে উন্নীত করা হবে। এছাড়া প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চমাধ্যমিক স্তরের উপবৃত্তির হার বিদ্যমান ৯৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৫০ টাকায় উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, গ্রামীণ এলাকায় মাতৃত্বকালীন ভাতা ও শহর এলাকার কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা তহবিল কর্মসূচিকে ঢেলে সাজিয়ে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল কর্মসূচির আওতায় এমআইএস ভিত্তিক মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। এ কর্মসূচির অধীনে মায়েদের ৩৬ মাস পর্যন্ত মাসিক ৮০০ টাকা করে দেওয়া হয়। সারা দেশে মা ও শিশুদের সহায়তা প্রাপ্তি সহজ এবং নিশ্চিত করতে অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া এ কার্যক্রমের আওতা আরও বিস্তৃত করার লক্ষ্যে আগামী অর্থবছরে উপকারভোগীর সংখ্যা ১৫ লাখ ৪ হাজার ৮০০ জন থেকে ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ২৮০ জনে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সরকার প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় বিশেষভাবে নজর দিচ্ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫৮ লাখ ১ হাজার প্রবীণের জন্য মাসিক ৬০০ টাকা হারে মোট ৪ হাজার ২০৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। আগামী অর্থবছরে ভাতাপ্রাপ্ত প্রবীণের সংখ্যা বাড়িয়ে ৬০ লাখ ১ হাজার জনে উন্নীত করা হবে। এ বাবদ ৪ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ভাতাপ্রাপ্ত বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীর সংখ্যা বিদ্যমান ২৫ লাখ ৭৫ হাজার জন থেকে বাড়িয়ে ২৭ লাখ ৭৫ হাজার জনে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং এ বাবদ এক হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আবুল হাসান মাহমুদ আলী আরও বলেন, বেদে, তৃতীয় লিঙ্গসহ সমাজের পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার রয়েছে। তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে বর্তমানে মোট ৬ হাজার ৮৮০ জনকে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। আগামী অর্থবছরে মোট ১২ হাজার ৬২৯ জনকে ভাতার আওতায় আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ ছাড়া বেদে জনগোষ্ঠীর জন্য ভাতা কার্যক্রম চলমান থাকবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে তাঁদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় সকল শ্রেণির বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ভাতা ২০২১-২২ অর্থবছরে ন্যূনতম ২০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়া তাঁদের আবাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিনামূল্যে ৩০ হাজার বীর নিবাস নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১১ হাজার ৫৭টি বীর নিবাস নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। বাজেটে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন করে কোন সুবিধার কথা বলা হয়নি।
০৬ জুন, ২০২৪

আইসিটি-তে বাজেট বরাদ্দ ৪৮৯ কোটি, টেলিযোগাযোগে কমেছে ২৬৬ কোটি টাকা 
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ২ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ২ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের সাথে তুলনায় দেখা যায়, আইসিটি বিভাগে জন্য বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে ৪৮৯ কোটি টাকা। অন্যদিকে, ডাক ও টেলিযোগাযোগ খাতে বাজেটে বরাদ্দ কমছে ২৬৬ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই দুই বিভাগে সংশোধিত বাজেট ছিল যথাক্রমে ২ হাজার ৩৮৩ কোটি এবং ২ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা। এদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ বেড়েছে ১ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই মন্ত্রণালয়ের জন্য সংশোধিত বাজেট ছিল ১২ হাজার ৩৩ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ প্রস্তাবিত বাজেটে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৩ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। নিজ বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, বিজ্ঞানমনস্ক এবং আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন জাতি গঠন আমাদের সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। ... ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণের ফলে গত ১৫ বছরে তথ্যপ্রযুক্তিখাতে ২০ লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হয়েছে। ইন্টারনেটের মূল্য অনেক কমিয়ে ওয়েবভিত্তিক কর্মসংস্থান ও ব্যবসার সুযোগ প্রসারিত হয়েছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আগামী ৫ বছরের মধ্যে কমপক্ষে ১০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করা। আইসিটি খাতের রপ্তানির পরিমাণ আগামী ৫ বছরের মধ্যে ৫ বিলিয়ন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হবে। 
০৬ জুন, ২০২৪

সংকটের এই সময়ে গণমুখী বাজেট হয়েছে : কাদের
সংকটের এই সময়ে এবারের বাজেট গণমুখী হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বিকেলে বাজেট উত্থাপনের পর জাতীয় সংসদ ভবনে বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এ মন্তব্য করেন তিনি। সেতুমন্ত্রী বলেন, সংকটের এই সময়ে গণমুখী বাজেট হয়েছে। দলের নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া অঙ্গীকার ও অগ্রাধিকার খাত বিবেচনায় নিয়ে বাজেট দেওয়া হয়েছে। কারও প্রেসক্রিপশন মেনে বাজেট প্রণয়ন করা হয়নি। ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে, প্রধান্য দেওয়া হয়েছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, কর্মসনংস্থান সৃষ্টি ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করাকে। সর্বোপরি বাজেট বাস্তবসম্মত হয়েছে। এদিকে বৃহস্পতিবার (৬ জুন) দুপুরে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এটি দেশের ৫৩তম ও আওয়ামী লীগ সরকারের ২৫তম বাজেট। গতবারের তুলনায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা বেশি ধরা হয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে। ‘সুখী সমৃদ্ধ উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার’ শীর্ষক বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এবারের বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চেয়ে এবারের বাজেটের আকার বাড়ছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এটি দেশের ৫৩তম, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৫তম ও অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর প্রথম বাজেট। বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় বাজেটের আকার ৪.৬২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। বাজেটে বিদেশি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ব্যাংক থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ঋণের সুদ পরিশোধের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। 
০৬ জুন, ২০২৪
X