জনগণের আন্দোলন কখনো ব্যর্থ হবে না : ফখরুল
বিএনপি জনগণের পক্ষে, সত্যের পক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে এবং রাষ্ট্র ও সমাজকে রক্ষা করবার জন্য আন্দোলন করছে জানিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এ আন্দোলন কখনো ব্যর্থ হবে না।  শুক্রবার (২৮ জুন) বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সংহতি মিলনায়তনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশ এখন সবচেয়ে বড় একটা সঙ্কটের মধ্যে উপস্থিত হয়েছে। একদিকে গণতন্ত্র নেই, অন্যদিকে দেশের যে সার্বভৌমত্ব সেই সার্বভৌমত্ব আজকে হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। এখন যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সেটা হচ্ছে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার একটা আন্দোলন। কারণ, গণতন্ত্রের জন্য তিনি সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছেন, অথচ এখনো আটক অবস্থায় আছেন। আজকে তিনি জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই ও সংগ্রাম করছেন। সুতরাং খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনকে আলাদা করে দেখতে চাই না। গণতন্ত্রের আন্দোলনের সঙ্গে এটা অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। শনিবার আমাদের একটা কর্মসূচি আছে। তার মুক্তির জন্য আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। গণতন্ত্রের জন্য আমরা যারা একসঙ্গে সংগ্রাম করছি, তাদের সঙ্গে বসে আলোচনা করে দ্রুততার সঙ্গে আন্দোলনকে বেগবান করা হবে। এই সরকারকে সরিয়ে দেশে একটা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব, আমরা সফল হব। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকের শাসকগোষ্ঠী কখনোই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেনি। তাদের কারণেই আজকে গণতন্ত্র প্রচণ্ডভাবে ব্যাহত হয়েছে। আবারও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করে দেশটাকে আবারও অনিশ্চয়তা ও অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। সেই প্রক্রিয়া এখনো চলছে। এখন এমন একটা পরিস্থিতিতে এসে পৌঁছেছে, যেখানে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ছে। যুগপৎ আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা বড় রাজনৈতিক দলগুলো একমঞ্চে উঠতে না পারলেও যুগপৎভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটা একটা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। আমরা এই আন্দোলনে অবশ্যই সফল হব। জনগণের পক্ষে, সত্যের পক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে এবং রাষ্ট্র ও সমাজকে রক্ষা করবার যে আন্দোলন, সেই আন্দোলন কখনো ব্যর্থ হবে না।  বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কেন্দ্রীয় নেত্রী ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের বজলুর রশীদ ফিরোজ, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গণঅধিকার পরিষদের একাংশের নুরুল হক নুর ও রাশেদ খান, অপরাংশের মিয়া মসিরুজ্জামান ও ফারুক হোসেন, এবি পার্টির মুজিবুর রহমান মঞ্জু, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আশরাফ আলী আখন্দ, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাগপার রাশেদ প্রধান প্রমুখ নেতারা।  অনুষ্ঠানে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান, আবু হাসান টিপু, আনছার আলী দুলাল প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
২৮ জুন, ২০২৪

ইরান সরকারের ‘নিপীড়ন’ ও জনগণের আন্দোলন
ইরান বেআইনিভাবে আন্দোলনকারী ও মানবাধিকার কর্মীদের আটকে রাখছে। আটকে রাখা এসব মানুষের ভেতর এবার শান্তিতে নোবেলজয়ী নার্গিস মোহাম্মদিও রয়েছেন। দেশটিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যাও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক তদন্তকারী শুক্রবার প্রকাশিত এক রিপোর্টে এমনটাই বলেছেন। জাভায়েদ রেহমানের রিপোর্টটিতে ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়ের চিত্র ফুটে উঠেছে। রিপোর্টটি শুক্রবার দীর্ঘদিন ধরে নারীদের অধিকারবিষয়ক আন্দোলনকর্মী মোহাম্মদিকে নোবেল পুরস্কার ঘোষণার আগেই লিখিত হয়েছে। বর্তমানে তেহরানের কুখ্যাত এভিন কারাগারে রয়েছেন তিনি। রেহমান ব্রুনেল ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন বিষয়ের একজন অধ্যাপক। তিনি মোহাম্মদিকে তার কর্মের জন্য অন্যান্য মানবাধিকারকর্মী এবং আইনজীবী থেকে আলাদা করে সাধারণ পরিষদে আলাদা করে উত্থাপন করেন। তিনি ইরানের সরকারের বিরুদ্ধে মাত্রাতিরিক্ত এবং প্রাণঘাতী শক্তি প্রদর্শনের গুরুতর অভিযোগ তোলেন। ২০২২ সালে মাশা আমিনির মৃত্যুর পর দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু হয়। ২২ বছর বয়সী কুর্দিশ সংখ্যালঘু এ তরুণীকে ‘অপ্রকৃত বা বেঠিকভাবে’ হিজাব পরার দায়ে জেলে পাঠানো হয়েছিল। রেহমান জানান, জুলাই পর্যন্ত ৫৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৬৮টি শিশু এবং ৪৮ জন নারী রয়েছেন। তারা সবাই আন্দোলনে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। আরও অনেকেই আহত হন এবং হাজারো মানুষকে গ্রেপ্তার, আটক বা কারারুদ্ধ করা হয়। আমিনির মৃত্যু নিয়ে ইরান কোনো স্বাধীন তদন্ত করেনি বলে হতাশা প্রকাশ করেছেন রেহমান। তিনি বেআইনিভাবে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে বল প্রয়োগের অভিযোগও তোলেন। তিনি দাবি করেছেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি, সরকার, বিচার বিভাগ এবং সংসদের উচিত আমিনির ‘মৃত্যুর সম্পূ্র্ণ দায়’ গ্রহণ করা এবং প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া। জাতিসংঘের জেনেভাকেন্দ্রিক মানবাধিকার কাউন্সিলের এই তদন্ত কর্মকর্তা খামেনি ও ইরানি কর্তৃপক্ষকে আন্দোলনকারীদের হত্যার নিরপেক্ষ বিচার দাবি করেন। তিনি যৌন নিগ্রহ, নারী আন্দোলনকারীদের ওপর ঘটে যাওয়া নিপীড়নসহ ‘অবিলম্বে সব ধরনের সহিংসতা বন্ধে’র জন্য ইরানি কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানান। আন্দোলনের ফলস্বরূপ ইরানি নিরাপত্তাবাহিনী ৫৭৬ আন্দোলকারীকে গ্রেপ্তার করে। তাদের ভেতর নাগরিক অধিকারকর্মী, শিক্ষক, শ্রমিক ইউনিয়ন ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পক্ষে কথা বলা আইনজীবীরাও রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকারের জন্য যেসব আন্দোলনকর্মী সোচ্চার ছিলেন তাদের মুখ বন্ধ করানোর জন্যই গ্রেপ্তার ও নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। এছাড়া নারীদের ওপর নির্যাতনও চালানো হয়েছে বলে জানান তিনি।’ রেহমান মানবাধিকার কর্মী নার্গিস মোহাম্মদির কথাও তুলে ধরেন, যিনি ১৬ বছরের কারাদণ্ড পেয়ে এখন কারাগারে। তিনি এও বলেন, ‘অজস্র’ রিপোর্টে ইরানে বাকস্বাধীনতা ‘চরম সংকটে’ তার প্রমাণ মিলেছে। তার রিপোর্টে সাংবাদিকদের ওপর প্রতিবেদন করার জন্য নেমে আসা নির্যাতনের কথাও তুলে ধরা হয়। জুলাইয়ের শেষ অবধি ২১ জন সাংবাদিককে জেলে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত এসব সাংবাদিকের ভেতর নিলোফার হামিদি ও এলাহে মোহাম্মদি রয়েছেন, যারা আমিনির মৃত্যু নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে ‘আমেরিকা সরকারকে সাহায্যে’ অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের কারণে দেশের নিরাপত্তা শঙ্কার মুখে পড়ছে বলেও অভিযোগ করা হয়। রেহমান আরেকটি গুরুতর বিষয়ের কথা তার রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন। সেটি হলো— দেশজুড়ে মেয়েদের স্কুলে বিষ প্রয়োগের ঘটনা ঘটেছে। তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, যখন দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু হয় একই সময়ে এসব বিষক্রিয়ার ঘটনা ঘটে। ১০০টিরও বেশি বিদ্যালয়ে ৭৮টি বিষ প্রয়োগের ঘটেছে। ১৩ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। রেহমান তার রিপোর্টে ইরানে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যার বৃদ্ধি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ২০২২ সালে অন্তত ৫৮২ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। ২৫৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে মাদক সংক্রান্ত অপরাধের কারণে। এদিকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ৪১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। রেহমান চরম নির্যাতনের মাধ্যমে আদায় করা স্বীকারোক্তি নিয়েও শংকা প্রকাশ করেন। তিনি মনে করেন সাতজন আন্দোলকারীর মৃত্যুদণ্ড আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারকে লঙ্ঘন করেন।
০৮ অক্টোবর, ২০২৩
X