দেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না : র‍্যাব মহাপরিচালক
র‍্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) ব্যারিস্টার মো. হারুন অর রশিদ দাবি করেছেন, বাংলাদেশে আর জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ ও উগ্র মৌলবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। সোমবার (১ জুলাই) হলি আর্টিসানে জঙ্গি হামলায় নিহতদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে গুলশান মডেল থানার সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এমন দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, জঙ্গি তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে র‍্যাব অনেক আধুনিক হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জঙ্গিরা তৎপর আছে। ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডেও তৎপর র‍্যাব। পলাতক জঙ্গিদের নজরদারি মধ্যে রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছে জঙ্গি তৎপরতার কোনো তথ্য নেই। বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানে অবস্থিত হলি আর্টিসান বেকারি রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ জঙ্গি হামলা হয়, যা নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় হয়। আন্তর্জাতিক একটি জঙ্গি সংগঠন এর দায় স্বীকার করে। অবশ্য পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবি থেকে বেরিয়ে আসা অতি উগ্রবাদী জঙ্গিগোষ্ঠী ‘নব্য জেএমবি’ ওই নৃশংসতা চালায়। ওই হামলায় পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ দেশি-বিদেশি ২২ জন নিহত হন। নিহত ১৭ বিদেশির মধ্যে ৯ জন ইতালিয়ান, ৭ জন জাপানিজ এবং একজন ভারতীয়। অন্য তিনজনের মধ্যে একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এবং অন্য দুজন বাংলাদেশি। নিহত অপর দুজন পুলিশ কর্মকর্তা। ওই নৃশংসর পর হলি আর্টিসানে ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ড’ নামে সেনা অভিযানে সরাসরি হামলায় যুক্ত পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়। পরে পুলিশি তদন্তে হামলায় নানাভাবে যুক্ত আরও ২১ জঙ্গির সম্পৃক্ততা মেলে। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টানা অভিযানে বিভিন্ন আস্তানায় ১৩ জঙ্গি নিহত হয়। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় পুলিশ আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। বিচার কার্যক্রম শেষে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর নিম্ন আদালত নব্য জেএমবির জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ, হাদিসুর রহমান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, আব্দুস সবুর খান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপনকে মৃত্যুদণ্ডসহ বিভিন্ন ধারায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন। অন্য আসামি মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে খালাস দেন আদালত। উচ্চ আদালতও ওই জঙ্গিদের শাস্তি বহাল রাখেন। জঙ্গিবাদ নির্মূল ও নজরদারির দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বাহিনীর সূত্র জানায়, আবু বকর সংগঠনের দায়িত্ব নেওয়ার পর নব্য জেএমবি অনলাইনসহ নানা মাধ্যমে কর্মী সংগ্রহের চেষ্টা করছে। এই সংগঠনটির চেয়ে এখন বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে আরেক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম, যেটি শুরুতে আনসারুল্লাহ বাংলাটিম (এবিটি) নামে দেশে ভয়ংকর নাশকতা চালিয়েছে। ওই সূত্রটি জানায়, সম্প্রতি নরসিংদীতে আধা স্বয়ংক্রিয় টুটু রাইফেলসহ এক ব্যক্তি গ্রেপ্তার হয়। থানা পুলিশ ওই ঘটনায় অস্ত্র আইনে মামলা নিলেও জঙ্গিবাদ দমনে যুক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিশ্চিত হয়, ওই ব্যক্তি আনসার আল ইসলামের সদস্য। এর পরই নেত্রকোনায় সংগঠনটির একটি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
০১ জুলাই, ২০২৪

ধানের শীষ মানেই দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ ও এতিমের টাকা আত্মসাৎ : সোহেল তাজ 
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বঙ্গতাজকন্যা সিমিন হোসেন রিমি বলেছেন, আজ নৌকার পালে হাওয়া লেগেছে, নির্বাচনে নৌকার জয় হবে। আমরা আবারও সরকার গঠন করে আপনাদের সেবা করব। রোববার (৩১ ডিসেম্বর) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকার চাঁদপুর, তারাগঞ্জ, রানীগঞ্জ, ফুলবাড়িয়া, নাসুমার্কেটসহ বিভিন্ন পথসভায় নৌকার ভোট চেয়ে এসব কথা বলেন। অপরদিকে রিমির ভাই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তানজিম আহমদ সোহেল তাজ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সমালোচনা করে এবং আওয়ামী লীগের সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে বলেন, ধানের শীষ মানেই দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, অর্থপাচার, এতিমের টাকা আত্মসাৎ। আর নৌকা মানেই স্বাধীনতা, সমৃদ্ধি, জনগণের ভাগ্যবদল ও কল্যাণ, যার শুভফল আপনারা ভোগ করছেন। সোহেল তাজ আরও বলেন, বাংলাদেশ এখন দুর্যোগ-দুর্ভিক্ষের দেশ নয়, উন্নয়নের রোল মডেল। আজকে কারও কাছে আমাদের হাত পেতে চলতে হয় না। গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না, লোডশেডিং, রাস্তাঘাট ছিল না, তবে ছিনতাই-জঙ্গিবাদ ছিলই। সব কিছু কাটিয়ে উঠেছি আমরা। ২০০৮ সালে যেখানে আমাদের বিদ্যুৎ ছিল ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট, এখন আমরা ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছি। বঙ্গতাজকন্যা সিমিন হোসেন রিমি বলেন, আমি বঙ্গতাজ তাজউদ্দীনের মেয়ে নিজেদের ভাগ্যবদল নয়, জনগণের ভাগ্যোন্নয়নই আমাদের লক্ষ্য। নিম্নবিত্তের লোকজনের জীবনমান উন্নয়নের জন্যও কাজ করে এসেছি। আগে চিকিৎসার জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ওই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হতো। আজকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দেশের সেরা, মাতৃমৃত্যু শূন্যের কোঠায়, প্রত্যেকটি গ্রাম এলাকায় কমোনিউটি ক্লিনিক করে দিয়েছি।   এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি আরও বলেন, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের স্থান বাংলাদেশে নেই। নৌকায় ভোট দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করতে এবং এই উপজেলার প্রতিটি গ্রামকে আদর্শ গ্রাম হিসেবে গড়ে তুলতে নৌকায় ভোট দিয়ে আমাকে আপনাদের পাশে রাখার আহ্বান জানাই।   এ সময় বিভিন্ন ইউনিয়ন নেতাকর্মীদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে আসন্ন নির্বাচনে নৌকার জন্য ভোট চান তিনি। উপস্থিত জনতাও হাত তুলে নৌকায় ভোট দেওয়ার অঙ্গীকার করেন। নির্বাচনী পথসভায় উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমানত হোসেন খাঁন, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মাজহারুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ, ইউপি চেয়ারম্যান হিরন মোল্লা প্রমুখ। 
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩

বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ ও আমাদের করণীয়
সন্ত্রাসবাদ বিশ্বের প্রাচীনতম ঘটনাগুলোর একটি। কালের পরিক্রমায় এটি বিভিন্ন সময়ে নিজের রূপ বদলে ফিরে এসেছে নতুন আঙ্গিকে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক, মতাদর্শগত বা ধর্মীয় উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য সহিংসতা বা সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে জঙ্গিবাদ বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য ক্রমাগত বৈশ্বিক উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান সময়ের সন্ত্রাসবাদ মূলত ৯/১১ ও আরব বসন্ত পরবর্তী ঘটনা। সন্ত্রাসবাদ এ দেশের সৃষ্ট কোনো উপাদেয় না হলেও বিশ্বায়নের উত্তরাধিকারসূত্রে বাংলাদেশ এটি লাভ করেছে। অতীতে আমাদের দেশের কমিউনিস্ট সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যেমন কোল্ডওয়ার সমসাময়িক সোশ্যালিস্ট আন্দোলনের যোগসূত্র ছিল, তেমনি ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গেও সোভিয়েত-আফগানসংকট পরবর্তী মুজাহিদদেরও যোগসূত্র ছিল। বাংলাদেশের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এটি বিভিন্ন সময়ে দেশে অনেক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর উত্থান প্রত্যক্ষ করার পাশাপাশি সেসব গোষ্ঠীর চূড়ান্ত পরিণতিও দেখেছে। এটি সম্ভব হয়েছে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দেশের জনগণের সুস্পষ্ট অবস্থান, সরকারের সুনির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিচক্ষণ ব্যবহারের কারণে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে র‌্যাব তার ম্যানডেটের আলোকে বাংলাদেশে জঙ্গি দমনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। এ দেশের প্রথম প্রজন্মের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর শীর্ষনেতা থেকে শুরু করে হাল আমলের নিষিদ্ধ হওয়া জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার আমিরসহ শীর্ষনেতাদের গ্রেপ্তার করে এ জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর নেটওয়ার্ক ভেঙে দেয় র‌্যাব। হুজিবি-র মুফতি হান্নান, জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাইসহ অন্য শীর্ষনেতাদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করেছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অপারেশনাল কমান্ডার মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দাল এবং ২০০৫ সালে সিরিজ বোমা হামলায় ব্যবহৃত বোমাগুলোর প্রস্তুতকারক জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমারু মিজানকেও গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। বিগত দশকে টার্গেট কিলিংয়ের মাধ্যমে ১৩ জন মুক্তমনা ব্লগার ও লেখককে হত্যার মধ্য দিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা আনসার আল ইসলামের আধ্যাত্মিক নেতা মাহমুদ হাসান গুনবিসহ অন্য শীর্ষনেতারাও র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়। পরবর্তীকালে দীর্ঘ সময় দেশে তেমন কোনো জঙ্গি হামলা সংঘটিত না হলেও, ২০১৬ সালের হলি আর্টিসান হামলার মাধ্যমে পুনরায় জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব ফুটে ওঠে। হলি আর্টিসানে জঙ্গি হামলায় প্রাথমিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যৌথবাহিনীর সঙ্গে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে মূল অভিযান তৈরির ক্ষেত্র প্রস্তুত করে র‌্যাব। পরে আশুলিয়ায় হলি আর্টিসান হামলার মূল পরিকল্পনাকারী জেএমবির প্রধান সারোয়ার জাহান, গাজীপুরে হলি আর্টিসান হামলার অর্থ, অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী জেএমবির শূরা সদস্য মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে হলি আর্টিসান মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি জেএমবির শীর্ষনেতা শরিফুল ইসলাম ওরফে খালিদসহ অন্যদের বিরুদ্ধে সফল অভিযান পরিচালনা করে। দেশব্যাপী বিভিন্ন স্থানে একের পর এক জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে তাদের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে দিয়ে বিপুলসংখ্যক জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় র‌্যাব। জঙ্গিবাদ দমনে দীর্ঘ এ পথচলায় র‌্যাব বিভিন্ন সময়ে তার অর্জিত অভিজ্ঞতার আলোকে এ দেশে জঙ্গিবাদকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা, জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের এর সঙ্গে জড়ানোর কারণ, জঙ্গি সংগঠনগুলোর দ্বারা নতুন জঙ্গিদের নিয়োগ ও তাদের মৌলবাদী করার জন্য নির্ধারিত কৌশল, বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের দ্বারা নেওয়া জঙ্গিবাদের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এবং জঙ্গিবাদে জড়ানো সদস্যদের পরিবারগুলোর সমাজের মূলধারায় বসবাসের ক্ষেত্রে যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়, সেগুলো নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ করে। মানুষ কেন জঙ্গিবাদে লিপ্ত হয়? : বাংলাদেশে জঙ্গিবাদে জড়ানোর অন্যতম প্রধান কারণ হলো আদর্শগত বা ধর্মীয় প্রত্যয়। জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে জড়ানো ব্যক্তিরা এমন চরমপন্থি গোষ্ঠীর প্রতি আকৃষ্ট হয়, যেগুলো তাদের মতাদর্শগত বা ধর্মীয় বিশ্বাস পূরণের পথের প্রতিশ্রুতি দেয়। এ বিশ্বাসগুলো তাদের সহিংসতাকে একটি পবিত্র বা নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে দেখতে সহায়তা করে। এটি অনেক ক্ষেত্রে লোভনীয় হতে পারে। এ ছাড়া এই মতাদর্শ ধর্ম, জাতীয়তাবাদ বা রাজনৈতিক বিশ্বাসের মধ্যে নিহিত থাকতে পারে। যে ব্যক্তিরা বর্তমান আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে বিতৃষ্ণা বোধ করেন, তারা জঙ্গিবাদী মতাদর্শের প্রতি বেশি সংবেদনশীল। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কিছু ব্যক্তি মানসিক দুর্বলতার কারণে জঙ্গিবাদের প্রতি সংবেদনশীল হতে পারে। বন্ধুবান্ধব, পরিবারের সদস্য বা পরিচিতজন যারা এরই মধ্যে জঙ্গিবাদে জড়িত তারা মানসিকভাবে দুর্বল ব্যক্তিদের ওপর সহজেই প্রভাব বিস্তার করতে পারে। ব্যক্তিগত অভিযোগ এবং প্রতিশোধপরায়ণ ব্যক্তিদের তারা জঙ্গিবাদে জড়ানোর জন্য প্ররোচিত করতে পারে। এ ছাড়া ব্যক্তিগতভাবে বা তাদের কোন সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষতি, অবিচার বা সহিংসতার অভিজ্ঞতা মানুষকে জঙ্গিবাদের দিকে ঠেলে দিতে পারে, যা তাদের নিপীড়কদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় বলে তারা বিশ্বাস করে। র্যাডিকেলাইজেশন প্রক্রিয়াটি অনেক সময় গোপনীয় সামাজিক নেটওয়ার্কগুলোর মধ্যে ঘটে, যেখানে এর ব্যবহারকারীরা জঙ্গিবাদের ধারণা প্রকাশ করে এবং বন্ধু, পরিবারের সদস্য বা ক্যারিশমেটিক নেতাদের দ্বারা জঙ্গিবাদে যোগদানের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়। অনেক সময় আর্থসামাজিক কারণে মানুষ জঙ্গিবাদে জড়ায়। দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং মৌলিক সেবাগুলো লাভের অভাব মাঝেমধ্যে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে পারে যেখানে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো আর্থিক সহায়তা এবং সামাজিক অবস্থানের প্রতিশ্রুতি দেয়। এটি অর্থনৈতিক কষ্টের সম্মুখীন ব্যক্তিদের কাছে একটি আকর্ষণীয় প্রলোভন হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া অনেকে রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা চ্যালেঞ্জ করার উপায় হিসেবে সহিংসতা বেছে নেয়। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা : জঙ্গিবাদ প্রতিরোধের জন্য সরকার, বিভিন্ন সম্প্রদায় এবং সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একটি বহুমুখী উদ্যোগের প্রয়োজন। জঙ্গিবাদ একটি আদর্শিক সমস্যা। তাই সরকার এবং বিভিন্ন সংস্থাকে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর দ্বারা প্রচারিত চরমপন্থি মতাদর্শকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য পাল্টা-আখ্যান তৈরি করা উচিত। এ আখ্যানগুলোতে সহনশীলতা, সহমর্মিতা ও অহিংসার ওপর জোর দেওয়া উচিত। জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে শিক্ষা ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি বিশেষভাবে জরুরি। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সমালোচনামূলক চিন্তার বিকাশ, সহনশীলতার প্রচার এবং চরমপন্থি মতাদর্শের মোকাবিলায় ভূমিকা রাখতে পারে। সম্প্রদায়গুলোর সঙ্গে জড়িত হয়ে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন ধর্মীয় সংস্থা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে জঙ্গিবাদের ঝুঁকিতে থাকা শ্রেণিকে চিহ্নিত করে তাদের সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক তৈরি করে তাদের বিভিন্ন অভিযোগের সমাধান করা মৌলবাদ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। আজকের ডিজিটাল যুগে অনলাইন র‌্যাডিকেলাইজেশন প্রতিরোধের প্রচেষ্টা অত্যাবশ্যক। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, সরকার এবং সুশীল সমাজ সংস্থাগুলোকে উগ্রবাদী মতাদর্শকে চ্যালেঞ্জ করে এমন অনলাইন পাল্টা বর্ণনা প্রচার করার সময় উগ্রবাদী বিষয় বস্তু নিরীক্ষণ এবং অপসারণ করতে সহযোগিতা করতে হবে। জঙ্গিবাদ প্রতিরোধের জন্য আর্থসামাজিক কারণগুলোকে মোকাবিলা করা অপরিহার্য। অর্থনৈতিক বিকল্প হিসেবে জঙ্গিবাদের আবেদন কমাতে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিক্ষা এবং সামাজিক পরিষেবাগুলোতে সরকার এবং এনজিওদের বিনিয়োগ করা উচিত। জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের জন্য পুনর্বাসন প্রোগ্রাম, মানসিক সহায়তা, শিক্ষা, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং সমাজে পুনঃআত্তীকরণের সুযোগ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। এসব কার্যক্রমের পাশাপাশি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে অবশ্যই জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, নজরদারি এবং প্রয়োজনে মৌলবাদে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করার মাধ্যমে এদের বিকাশরোধ করতে হবে। সমাজে/পরিবারে আত্তীকরণের চ্যালেঞ্জ : জঙ্গিবাদে জড়িতদের পরিবার সমাজে প্রায়ই উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। প্রতিবেশী এবং পরিচিতরা জঙ্গিবাদে যুক্ত থাকার কারণে তাদের এড়িয়ে চলে। এ ছাড়া তাদের পরিবার প্রায়ই তাদের সম্প্রদায়ের কাছ থেকে কলঙ্ক এবং প্রত্যাখ্যানের সম্মুখীন হয়। তাদের সন্দেহের চোখে দেখা এবং তাদের আত্মীয়দের কাজের জন্য তাদের দায়ী করা হয়। প্রিয়জনদের সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে জঙ্গিদের পরিবারের সদস্যদের মানসিক আঘাতের ফলে অপরাধবোধ, লজ্জা এবং দুঃখের অনুভূতির সঙ্গে মোকাবিলা করা তাদের পক্ষে অনেক সময় অপ্রতিরোধ্য হতে পারে এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তাপ্রাপ্তি চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে। জঙ্গিবাদে জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকের পরিবার অর্থনৈতিক কষ্টের সম্মুখীন হয়। জঙ্গিদের অনেক পরিবার কারাভোগ বা মৃত্যুর কারণে তাদের প্রাথমিক উপার্জনকারী ব্যক্তিকে হারিয়ে অর্থনৈতিক কষ্টের দিকে ধাবিত হয়। এ ছাড়া জঙ্গিদের পরিবারগুলো জঙ্গিগোষ্ঠী বা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার হুমকিসহ নিরাপত্তা উদ্বেগের সম্মুখীন হয়। এ নিরাপত্তা ঝুঁকি সমাজে তাদের নিরাপদে পুনঃসংযোগ করার ক্ষমতা বাধাগ্রস্ত করতে পারে। জঙ্গিবাদে জড়িত ব্যক্তিদের পরিবারকে সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে কার্যকর ও বাস্তবমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এ পরিকল্পনাগুলো শিক্ষা, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং কাউন্সেলিংভিত্তিক হলে তার সুফল পাওয়া অনেকাংশে সহজ হয়। র‌্যাব সম্প্রতি জঙ্গিবাদে জড়িয়ে ভুল বুঝতে পারা কিছু তরুণ-তরুণীকে এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে এসে তার সুফল পেয়েছে। র‌্যাব ডি-র‌্যাডিকেলাইজেশন ও রিহ্যাবিলিটেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রায় শতাধিক জঙ্গিকে পুনর্বাসনের মাধ্যমে সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে এনেছে। র‌্যাবের এ সফলতাটি সর্বমহলে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। পরিশেষে, জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করার জন্য এমন একটি বহুমুখী পদক্ষেপের প্রয়োজন যেখানে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষা এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য সহায়তার ব্যবস্থা থাকবে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রচেষ্টার মধ্যে শুধু সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ ব্যবস্থাই নয় বরং এমন সমন্বিত কৌশল অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, যা জঙ্গিবাদের মূল কারণগুলোকে চিহ্নিত করার পাশাপাশি জঙ্গিবাদে জড়ানোর পেছনে অনুপ্রেরণাগুলো চিহ্নিত করবে। পরবর্তীকালে জঙ্গি সংগঠনে নিয়োগের পদ্ধতিগুলোকে লক্ষ্য রেখে এর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করবে। অন্যদিকে জঙ্গিবাদে জড়ানো ব্যক্তিদের সমাজে পুনঃআত্তীকরণের চ্যালেঞ্জগুলো বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডাররা একটি নিরাপদ, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং আরও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করবে। লেখক : পরিচালক, লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং (র‌্যাব)
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

বিএনপি-জামায়াতের জঙ্গিবাদ নিয়ে জয়ের ফেসবুক স্ট্যাটাস
বিএনপি-জামায়াতের রাষ্ট্রীয়ভাবে জঙ্গি প্রতিষ্ঠা নিয়ে ফেসবুক ও টুইটারে ভিডিওসহ স্ট্যাটাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টায় ফেসবুকে পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‌‘২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় কীভাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে, তথ্যপ্রমাণসহ তার কিছু নমুনা দেখে আসি এই ভিডিওতে। পুরো ভিডিও দেখুন আর জানার চেষ্টা করুন, বাংলাদেশকে সাক্ষাৎ নরকে পরিণত করেছিল বিএনপি-জামায়াত।’ টুইটারে এক পোস্টে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘তারেক রহমানের হস্তক্ষেপে জঙ্গি নেতা সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাইয়ের শীর্ষ সহযোগী পুলিশি হেফাজত থেকে মুক্তি পায়। মূলধারার গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কিছু শিরোনাম- ‘জঙ্গিবাদের উত্থানের পেছনে সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতার জন্য দায়ী বিএনপি-জামায়াতের আট নেতা ও মন্ত্রী’, ‘পুলিশি পাহারায় রাজশাহী শহরে ঘুরে বেড়িয়েছে বাংলা ভাইয়ের ক্যাডাররা’, ‘আওয়ামী লীগ নেতাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে বাংলা ভাইয়ের ক্যাডাররা’, ‘গ্রেপ্তারের পর শীর্ষ জঙ্গিদের ছেড়ে দেওয়া হয়।’ ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন সরকার ভয়ঙ্কর জঙ্গি সংগঠন জেএমবির উত্থানের পেছনে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিল, যারা শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরই নয় প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ, লেখক ও কর্মীদের ওপরও ধারাবাহিক হামলা চালিয়েছিল। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট ৬৩টি জেলায় একযোগে নজিরবিহীন বোমা হামলা চালানো হয়, যা কুখ্যাত বাংলাভাই নেতৃত্বাধীন সংগঠন জেএমবি কর্তৃক সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে।’ টুইটারে ওই পোস্টের সঙ্গে একটি ভিডিও চিত্রও শেয়ার করেন জয়। তিনি বলেন, ‘এই ভিডিওতে কিছু মিডিয়া রিপোর্ট রয়েছে যাতে বিএনপি জামায়াত সরকারের সময় যারা এই জঙ্গিদের সঙ্গে একযোগে কাজ করেছিল এবং প্রগতিশীল ও উদারশক্তিকে নির্মূল করার জন্য এই চরমপন্থিদের বেড়ে উঠতে এবং আক্রমণ চালাতে সহায়তা করেছিল তাদের সদস্যদের মুখোশ উন্মোচন করে।’ ‘কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি চালু করা হয়েছে এবং সেই সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কগুলো ধ্বংস করা হয়েছে যার ফলে বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে।’
০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

সহিংসতা ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে এক হয়ে কাজ করবে ভারত : প্রণয় ভার্মা
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার শ্রী প্রণয় ভার্মা বলেছেন, সহিংসতা ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে বাংলাদেশের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করবে ভারত। শনিবার (১৯ আগস্ট) দুপরে রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল অডিটোরিয়ামে এক সভায় এ কথা বলেন তিনি। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতির উদ্যোগে এক আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতিতেও বাংলাদেশ-ভারত কাজ করবে বলে জানান হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা।  এ ছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য অর্থনৈতিক সহযোগীতা এবং যোগাযোগ প্রাধান্য দিচ্ছে দিল্লি। এসব ক্ষেত্রে ভারত সর্ম্পক আরও এগিয়ে নিতে আগ্রহী বলেও জানান তিনি। ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমরা একযোগে কাজ করব। ন্যায়বিচার, সমতা এবং মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা পাবে এমন বিশ্ব বিনির্মাণের লক্ষে আমরা কাজ করে যাব।
১৯ আগস্ট, ২০২৩

সম্পাদকীয় / রুখতে হবে জঙ্গিবাদ
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্রিউলি গ্রামের ওই বাড়িতে রাতভর অভিযান শেষে শনিবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান। আটক ১০ জনের মধ্যে চারজন পুরুষ ও ছয়জন নারী। তাদের সঙ্গে তিন শিশুও রয়েছে। ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, আটক ব্যক্তিরা ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামের নতুন একটি জঙ্গি সংগঠনের সদস্য। ওই বাড়ি থেকে বিস্ফোরক ও জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়েছে। সিটিটিসির সোয়াত টিমের এ অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন হিল সাইড’। দেশকে অস্থিতিশীল ও অকার্যকর করার জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে জঙ্গিরা অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। তারা কখনো জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), কখনো হরকাতুল জিহাদ, কখনো আল্লাহর দল ইত্যাদি নাম ধারণ করেছে। ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয়, কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে, সিলেটের আতিয়া মহলসহ বিভিন্ন জায়গায় তারা সন্ত্রাসবাদী হামলা চালিয়েছে। তবে বাংলাদেশের জনগণ জঙ্গিদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। মা তার জঙ্গি ছেলেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছেন। আত্মীয়স্বজনরা জঙ্গিদের মৃতদেহ নিতে পর্যন্ত আসেননি। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় জঙ্গিবাদের বিস্তারের নেপথ্যে ছিল বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকার। আমরা জঙ্গিবাদের উত্থানের আলামত প্রথম উপলব্ধি করি ১৯৯২ সালে। ‘আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান’—এ স্লোগানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে মৌলবাদীদের উত্থান ঘটে ১৯৯২ সালে। তারা রাষ্ট্রীয় মদতে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালায়। এতে ২৪ জন নিহত হন। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হামলাকারীদের অনেকে দেশত্যাগ করে। বাংলাদেশের ইতিহাসে সশস্ত্র জঙ্গিবাদের উত্থানের সর্ববৃহৎ আলামত দৃশ্যমান হয় ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জেএমবি কর্তৃক ৬১ জেলায় একযোগে বোমা হামলার মাধ্যমে। জঙ্গিদের মদদ দেওয়ার কাজে রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করারও অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ ধর্মপ্রাণ; কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। তাই এ দেশের মানুষ সাম্প্রদায়িকতা তথা জঙ্গিবাদকে আশ্রয়-প্রশ্রয় কখনো দেয়নি এবং দেবে না। বাঙালির মানসেই প্রগতিশীলতার বীজ লুকায়িত আছে। জনগণের জঙ্গিবিরোধী মানসিকতার কারণেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে জঙ্গিবাদ দমন সহজ হয়। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। এ দেশের জন্মের পর থেকেই তৎপর দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারী। এ ষড়যন্ত্র এখনো থেমে নেই। ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে অসংখ্য দেশপ্রেমিক প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। জঙ্গি তৎপরতাও বাংলাদেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করার একটি অপচেষ্টা মাত্র। নিকট-অতীতে জঙ্গিবিরোধী যে তৎপরতা দেখা গেছে, এতে নিঃসন্দেহে আশা করা যায়, বিভিন্নভাবে তৎপর জঙ্গিদের সেলগুলোও ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হবে। আমরা মনে করি, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ বিশ্বে এখন রোল মডেল। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শূন্য সহিষ্ণুতা নীতির ফলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের বিস্তার প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ দেশে জঙ্গিবাদসহ সব রাজনৈতিক অপশক্তির তৎপরতা বন্ধ হবে। সেইসঙ্গে অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
১৪ আগস্ট, ২০২৩

জঙ্গিবাদ থেকে দেশকে শান্তির দেশে পরিণত করেছেন প্রধানমন্ত্রী : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে জঙ্গিবাদ থেকে শান্তির দেশে পরিণত করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। শুক্রবার (৪ আগস্ট) সকালে খামারবাড়ি গোলচত্বর এলাকায় কৃষক লীগ আয়োজিত এডিস মশা নিধন ও সচেতনতা তৈরি অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।  আরও পড়ুন : একদফার আন্দোলন জোরদার করবে গণতন্ত্র মঞ্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ দমিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বাংলাদেশকে শান্তির নীড়ে পরিণত করেছেন। সেখানে দেশের জনগণের সহযোগিতাও ছিল। একইভাবে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতন হতে হবে। তাহলে ডেঙ্গু নির্মূল করা সম্ভব। তিনি বলেন, আমরা যদি আমাদের নিজেদের বাড়ির উঠান পরিষ্কার রাখতে পারি তাহলে আমরা ডেঙ্গু থেকে মুক্তি পাব। ডেঙ্গু একটি মৌসুমি রোগ, একটি মশাবাহিত রোগ। ডেঙ্গু থেকে মুক্তি পেতে হলে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এডিস মশা নিধনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে বলেও জানান তিনি।  আরও পড়ুন : যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা ভারত কী বলল মাথা ঘামানোর দরকার নেই: ফখরুল কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনের সহ-সভাপতি আকবর আলী চৌধুরী, হোসনে আরা এমপি, আব্দুল লতিফ তারিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার বিটু, শামীমা আক্তার খানম, সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী জসিম, আসাদুজ্জামান বিপ্লব, কৃষিবিদ ড. হাবিব মোল্লা, অর্থ সম্পাদক নাজির মিয়া, দপ্তর সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা প্রমুখ।
০৫ আগস্ট, ২০২৩

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেবে -তথ্যমন্ত্রী
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি যেমন মাথাচাড়া দেবে, জঙ্গিবাদও মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। একই সঙ্গে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাও নষ্ট হবে। গতকাল কলকাতা প্রেস ক্লাবে ‘সাংবাদিকদের মুখোমুখি’ অনুষ্ঠানে ভারতীয় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন সফররত মন্ত্রী হাছান মাহমুদ। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না এলে সাম্প্রদায়িকতা ফণা তুলবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি ওই কথা বলেন। সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন একসঙ্গে বাংলাদেশে ৬৩ জেলায় বোমা হামলা হয়েছিল। শায়খ আব্দুর রহমান, বাংলা ভাই, আফগানিস্তানে ট্রেনিংপ্রাপ্তরা প্রকাশ্যে মহড়া দিত। এই হচ্ছে বিএনপি সরকারের আমল। তিনি আরও বলেন, যখন আমরা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করি তখন বিএনপি চেয়ারপারসন প্রকাশ্যে বলেছেন—‘কিছু লোককে ধরে এনে আটকিয়ে রাখা হয়, চুল-দাড়ি লম্বা হলে তাদের জঙ্গি আখ্যা দেওয়া হয়’। মন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে সাম্প্রদায়িকতা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। সংখ্যালঘুরা আবার অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনে আমরা হেরে যাই এবং বিএনপি ক্ষমতায় আসে, তারপর ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হয়েছে। নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার অপরাধে মা-মেয়েকে এক রাতে ধর্ষণ করা হয়েছে, ১৪ বছরের মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে। গৃহহারাদের জন্য তখন ঢাকায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অফিসে লঙ্গরখানা ও আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছিল। তথ্যমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর সেই সাম্প্রদায়িকতাকে আবার ফিরিয়ে এনেছেন। স্বাধীনতার পর ধর্মীয় রাজনীতি বন্ধ করা হয়েছিল, সেটি ’৭৫ সালে আবার চালু করা হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, বিএনপির বহুদলীয় জোটের মধ্যেই সাম্প্রদায়িক অপশক্তি আছে। সেখানে অনেক দল আছে, যে দলের নেতারা তালেবানের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে। অনেক নেতা প্রকাশ্যে ‘বাংলা হবে তালেবান’ স্লোগান দিয়েছিল।
২৮ জুলাই, ২০২৩

আ.লীগ ক্ষমতায় না থাকলে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেবে : তথ্যমন্ত্রী
তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি যেমন মাথাচাড়া দেবে, জঙ্গিবাদও মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। একইসঙ্গে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাও নষ্ট হবে।  বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) দুপুরে কলকাতা প্রেস ক্লাবে ‘সাংবাদিকদের মুখোমুখি’ অনুষ্ঠানে ভারতীয় সাংবাদিকদের উন্মুক্ত প্রশ্নের জবাব দেন ভারত সফররত মন্ত্রী হাছান মাহমুদ। বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না এলে এখানে সাম্প্রদায়িকতা ফণা তুলবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন একসঙ্গে বাংলাদেশে ৬৩ জেলায় বোমা হামলা হয়েছিল। শায়খ আব্দুর রহমান, বাংলাভাই, আফগানিস্তানের ট্রেনিংপ্রাপ্তরা প্রকাশ্যে মহড়া দিত। এই হচ্ছে বিএনপি সরকারের আমল।  তিনি আরও বলেন, যখন আমরা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করি তখন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রকাশ্যে বলছেন- ‘কিছু লোককে ধরে এনে আটকিয়ে রাখা হয়, চুল-দাড়ি লম্বা হলে তাদের জঙ্গি আখ্যা দেওয়া হয়। বাংলাদেশে যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকে তাহলে সেই সাম্প্রদায়িকতা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা আবার অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে। ‘বাংলাদেশে ২০০১ সালে যে নির্বাচনে আমরা হেরে যাই এবং বিএনপি ক্ষমতায় আসে, তারপর অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর অন্যায়ভাবে নির্যাতন হয়েছে’ উল্লেখ করে হাছান বলেন, ‘নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার অপরাধে মা-মেয়েকে এক রাতে ধর্ষণ করা হয়েছে, ১৪ বছরের মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে। গৃহহারাদের জন্য তখন ঢাকায় আমাদের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অফিসে  লঙ্গরখানা ও আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছিল।’  নিজ দলের আদর্শ তুলে ধরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে দেশ হিসেবে সংগ্রাম করেছে এবং অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবে যে দলটি প্রতিষ্ঠিত, সেটি হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবার মিলিত রক্তস্রোতের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর  বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর সেই সাম্প্রদায়িকতাকে আবার ফিরিয়ে এনেছেন। আমাদের দেশে স্বাধীনতার পর ধর্মীয় রাজনীতিটা বন্ধ করা হয়েছিল, সেটি ’৭৫ সালে আবার চালু করা হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, বিএনপির বহুদলীয় জোটের মধ্যেই সাম্প্রদায়িক অপশক্তি আছে। সেখানে অনেক দল আছে যে দলের নেতারা তালেবানের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে। এ সমস্ত অনেক নেতা প্রকাশ্যে ‘বাংলা হবে তালেবান’ স্লোগান দিয়েছিল।
২৭ জুলাই, ২০২৩
X