কারাগারের মধ্যেই জেল সুপারের গরুর খামার
কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে বিশালদেহী ষাড়টির দাম হাঁকানো হয়েছে ২০ লাখ টাকা। নাম তার কালা পাহাড়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এমন অনেক বিশালাকার গরু থাকলেও একদিক থেকে কালা পাহাড় অনন্য। সে বেড়ে উঠেছে কারাগারের মধ্যে। জন্মও সেখানেই। জেল সুপারের শখের খামারের সবচেয়ে বড় সদস্য এই কালা পাহাড়। একজন জেল সুপার কারাগারের ভেতরে গরুর খামার করেছেন, অবাক করা ঘটনাটি এখানেই শেষ হয়। জানা যায়, ওই খামার দেখাশোনা করছেন কারাগারের বিভিন্ন পর্যায়ে দ্বায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মচারীরা। সরকারি দফতরের ব্যারাকে বিক্রির উদ্দেশে এভাবে পশু পালন এবং সেই পশু দেখভালে সরকারের বেতনভুক্ত কর্মচারীকে দায়িত্ব দেওয়া কতটুকু যৌক্তিক—এমন প্রশ্ন উঠেছে। খামার তৈরি করে গরু পালনের এই ঘটনা ঘটেছে মুন্সীগঞ্জ জেলা কারাগারে। সেখানকার জেল সুপার মো. বজলুর রশীদ দায়িত্ব নেওয়ার শুরু থেকেই খামার পরিচালনা করে আসছেন। খামারটিতে আছে কালা পাহাড়সহ তিনটি গরু। এদেরকে খাবার খাওয়ানো থেকে শুরু করে গোসল করানো এবং খামার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন ৮-১০ জন সরকারি কর্মচারী। জেলখানায় কর্মরত কারারক্ষী, নিরাপত্তাকর্মীসহ অন্যান্যদের দিয়ে ব্যক্তিগত খামার পরিচালনার বিষয়ে জানতে মুন্সীগঞ্জের জেল সুপার মো. বজলুর রশীদকে একাধিকবার ফোন করা হলেও রিসিভ করেননি। ফোন করে সাড়া পাওয়া যায়নি জেলা প্রশাসকের কাছ থেকেও।  তবে মুন্সীগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মুন্সীগঞ্জের জেল সুপার মো. বজলুর রশীদ যেখানেই দায়িত্ব পালন করেছেন, সেখানেই গরুর খামার করেছেন। ২০০৭ সালে ঝালকাঠি কারাগারে থাকার সময় একই কাজ করেছেন তিনি। পরে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারের সুপার হিসেবে যোগ দিলে সেখানেও একই চিত্র দেখা যায়। এভাবে খামার করে তিনি আয়ও করছেন অনেক টাকা।
১৩ জুন, ২০২৪

গরুর খামার করেই পাঁচতলা বাড়ির মালিক সোলাইমান
দেশের জনসাধারণ পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণে গরু পালন করে আসছেন খামারিরা। বর্তমানে গরু পালন করে শুধু পুষ্টির চাহিদাই পূরণ নয়, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হয়েছেন অনেক গরু খামারি। এদেরই একজন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা ইউনিয়নে নিথক গ্রামের ইউপি সদস্য সোলেমান গনি। তিনি একজন সফল খামারি। ভাই ভাই ডেইরি ফার্ম থেকে বাৎসরিক আয় দিয়ে তিনি নির্মাণ করেছেন একটি পাঁচতলা বাড়ি। দুগ্ধ গাভি পালনে একজন সফল খামারি হিসেবে এই অঞ্চলে মানুষের কাছে ব্যাপক পরিচিত লাভ করেছেন সোলেমান গনি। সম্প্রতি কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের নিথক গ্রামে নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন ভাই ভাই নামের একটি ডেইরি ফার্ম। দেশি-বিদেশি মিলে ৩০টি গাভি ও ২২টি ষাঁড় ভাই ভাই ডেইরি ফার্ম থেকে এবার কোরবানি ঈদের জন্য ১০টি গরু প্রস্তুত করা হয়েছে তার খামারে। এ খামার থেকে প্রতিদিন ১৪০ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। এসব গরুর জন্য নিয়মিত বাজার থেকে ঘাস ক্রয় করে গরুকে খাওয়ান তিনি। জানা গেছে, ২০২০ সালে বিদেশি তিনটি দুগ্ধ গাভি পালনের মধ্য দিয়ে খামারের কাজ শুরু করেন তিনি। কয়েক বছরের ব্যবধানে তার খামারে এখন ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ৫২টি গরু রয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, ভাই ভাই ডেইরি ফার্মের খামারের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও দেখভালের জন্য রয়েছেন ৬ জন শ্রমিক। তারা দিনরাত পরিশ্রম করেন। এদের কেউ গরুকে ঘাস খাওয়াচ্ছেন, কেউ আবার গাভি থেকে দুধ নেওয়ার এবং বাজারজাত করার কাজ করছেন। কেউবা গোবরগুলোকে গ্যাসের কাজে ব্যবহার করার জন্য ব্যস্ত রয়েছেন। এ ছাড়া নিজস্ব কৃষি জমিতে সবজি উৎপাদনে জৈবসার হিসেবে গোবর ব্যবহার করছেন। উন্নত জাতের এ ফ্রিজিয়ান ৩৫টি গাভিতে তার খামার পরিপূর্ণ হয়ে আছে ৩৫টি গাভির ভেতর ৯টি গাভি দুধ দিচ্ছে। বাকি গাভিগুলো খুব অল্প দিনের মধ্যে বাচ্চা দেবে বলেও তিনি জানান। প্রতিদিন গড়ে ১৪০ কেজির বেশি দুধ বিক্রি হচ্ছে তার খামারে। এতে প্রতিদিন প্রায় ৭ হাজার টাকা আয় হয়, যা থেকে মাসিক আয় হয় ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা এবং প্রতি বছরে আয় হয় ২২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ভাই ভাই ডেইরি ফামের্র মালিক সোলাইমান গনি কালবেলাকে বলেন, আমার শিয়ালখোওয়া বাজারে আমার একটি হোটেল রয়েছে। শাপলা হোটেলের জন্য বাজার থেকে দুধ কিনে হোটেল চালাতে খুবই কষ্ট হতো। সেই সুবাদে স্থানীয় হাট থেকে মাত্র ৯৫ হাজার টাকায় ২০২০ সালে তিনটি বিদেশি গরু ক্রয় করি। বর্তমানে আমার খামারে কাজ করে ৬টি শ্রমিকের পরিবার চলে। তবে ধীরে ধীরে এর চেয়ে আরও বড় পরিসরে খামার করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। তবে বর্তমানে গরুর খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি স্লোগান দিয়েছিলেন, বদলে যাবে দেশ, দুধ-মাংসের বাংলাদেশ। সেই স্লোগানকে সামনে রেখে যদি গরুর খাদ্যের সিন্ডিকেটটা ভেঙে একটু সহযোগিতা করে, তাহলে আমারা যারা উদ্যোক্তা আছি তারা সফল হতে পারব। কারণ যখন ৭০০ টাকা ফিডের বস্তা ছিল, তখনও কিন্তু দুধের দাম ৫০ টাকা ছিল। এখন ১৩শ টাকা ফিটের বস্তা এখনও দুধের দাম ৫০ টাকা। তাহলে কীভাবে সম্ভব, আমরা কীভাবে টিকে থাকব। বর্তমানে আমার এখানে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার গরু রয়েছে। শেড নির্মাণে আমার প্রায় ৬-৭ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। সরকারিভাবে এখনো আমি কোনো কিছু পাইনি। তবে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আমার খামার পরিদর্শন করে গেছেন। বেকার যুবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমার মতো উদ্যোক্তা হতে পারেন। ব্যাপক হারে না হলেও দুই-চারটা গরু দিয়ে আপনারা শুরু করতে পারেন। এতেই একজন সফল খামারি হিসেবে পরিচিত হতে পারেন। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা  ডা. মোশারফ হোসেন কালবেলাকে বলেন, ভাই ভাই ডেইরি ফার্ম দেখেছি। গরুগুলোও ভালো স্বাস্থ্যবান। সরকারি সহায়তা পাওয়ার যোগ্য। খামারটি বেশ সম্ভাবনাময়। সরকারি সহায়তা পেলে আরও ভালো করতে পারে।
০১ জুন, ২০২৪
X