গঙ্গা নিয়ে মমতার অভিযোগ নাকচ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি নবায়নের বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল শুক্রবার দেশটির মন্ত্রণালয় বলেছে, গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি নবায়নের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতার বক্তব্যের সত্যতা নেই। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরে গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তির নবায়নের প্রসঙ্গটি আলোচিত হয়। ৩০ বছরের ওই চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হচ্ছে। চুক্তি নবায়ন বিবেচনার জন্য দুই দেশের মধ্যে কারিগরি একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীদের বৈঠকের পর এ-সংক্রান্ত ঘোষণাও দেওয়া হয়। সম্প্রতি মমতা অভিযোগ করে বলেন, গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি নবায়নের বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করেনি। যদিও গতকাল সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, মমতার এ দাবির সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। তিনি বলেন, আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, তা তার (মমতার) বক্তব্যকে সমর্থন করে না। সব অংশীদারের সমন্বয়ে গঠিত (বাংলাদেশের সঙ্গে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি সংক্রান্ত) অভ্যন্তরীণ কমিটির সব বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন। রণধীর জয়সওয়াল আরও বলেন, চলতি বছরের ৬ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার এটাও জানিয়েছে যে, ২০২৬ সালে চুক্তি শেষ হয়ে গেলেও তাদের সুপেয় পানি ও শিল্পের জন্য পানির প্রয়োজনীয়তা থাকবে। গত ২৪ জুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে লেখা মমতার চিঠি নিয়ে প্রশ্ন করায় মুখপাত্র এসব মন্তব্য করেন। জয়সওয়াল বলেন, ‘গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি নবায়নের বিষয়ে ভারতের অভ্যন্তরীণ কমিটি তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।’ যদিও তিনি প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু প্রকাশ করেননি। ১৯৯৬ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি সই হয়। চুক্তিটি ২০২৬ সালে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো যেতে পারে। সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শেষে জানান, চুক্তিটি নবায়ন করার জন্য দুই দেশ টেকনিক্যাল পর্যায়ে আলোচনা শুরু করবে। এরপরই মমতা অভিযোগ করেন, তাদের বাদ দিয়েই গঙ্গা চুক্তি নবায়নের চেষ্টা চলছে। মোদিকে চিঠিও লেখেন মমতা। তাতে তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশের সঙ্গে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি পুনর্নবায়নের আলোচনা শুরুর সিদ্ধান্ত ‘একতরফা’। তিনি বলেন, ‘রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা ও মতামত ছাড়াই এই ধরনের একতরফা আলোচনা গ্রহণযোগ্য ও কাম্য নয়।’  
২৯ জুন, ২০২৪

বাংলাদেশের সঙ্গে গঙ্গা ও তিস্তা চুক্তিতে নারাজ মমতা
বাংলাদেশের সঙ্গে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি নবায়নে নারাজ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে তিস্তা নিয়েও কোনো চুক্তি চান না তিনি। শনিবার নয়াদিল্লিতে মোদি-হাসিনা বৈঠকের পরদিন আনন্দবাজার অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি নবায়ন হয়। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গকে বাদ দিয়ে এ ধরনের কোনো চুক্তি হলে তা মেনে নেবে না রাজ্য সরকার। এরই মধ্যে গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখে নিজের তীব্র আপত্তির কথাও জানান মমতা। চিঠিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে এ বিষয়ে একতরফা চুক্তি হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। যেহেতু পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারও এ চুক্তির একটি অংশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিল্লি সফরকালে গত শনিবার গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি নবায়নের আশ্বাস দেয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। তবে রোববার আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি নবায়ন হয়। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, তৃণমূলের অভিযোগ, রাজ্য সরকারকে এড়িয়ে চুক্তির নবায়ন হয়েছে। রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূলের তরফে এই চুক্তি নবায়নকে পশ্চিমবঙ্গকে ‘বিক্রি করার পরিকল্পনা’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। একই সঙ্গে তিস্তা চুক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তৃণমূলের তরফে বুঝিয়ে দেওয়া হয়, রাজ্যের বুকে রাজ্যকে এড়িয়ে রাজ্যের স্বার্থ বিঘ্নিত হয়—এমন কোনো কাজ করা সহজ হবে না। তৃণমূলের বক্তব্য, ফারাক্কা-গঙ্গা চুক্তিতে রাজ্য সরকারও পক্ষ। কিন্তু নবায়নের বিষয়ে রাজ্য সরকারকে কিছুই জানানো হয়নি, যা অত্যন্ত খারাপ। পাশাপাশি বলা হয়, এই চুক্তি বাবদ রাজ্য সরকারের যে পাওনা অর্থ, তা-ও বকেয়া রয়েছে। গঙ্গার ড্রেজিংয়ের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে, যা বাংলায় বন্যা ও ভাঙনের প্রাথমিক কারণ হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখে এ বিষয়ে তীব্র আপত্তির কথা জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা লেখেন, ‘গঙ্গা এবং তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হয়তো আপনার কিছু আলোচনা হয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকারের কোনো মতামত না নিয়ে এমন একতরফা আলোচনা কাঙ্ক্ষিত বা গ্রহণযোগ্য নয়।’ বাংলাদেশের সরকার এবং জনগণের সঙ্গে যে তিনি সুসম্পর্ক রাখতে চান, সেই বার্তা দিয়ে মমতা বলেন, ‘ছিটমহল বিনিময়, রেল ও বাস যোগাযোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিবিড় হয়েছে। কিন্তু পানি অত্যন্ত মূল্যবান। প্রাণধারণের রসদ নিয়ে কোনো সমঝোতা করতে আমরা প্রস্তুত নই। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অংশগ্রহণ ছাড়া তিস্তা এবং গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো রকম চুক্তিতে তাই আমার তীব্র আপত্তি রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের স্বার্থ নিয়ে কোনো আপস করব না।’ মোদিকে পাঠানো চিঠিতে মমতা আরও লেখেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের জনজীবনে গঙ্গার পানির গুরুত্বের পাশাপাশি এ পানি কলকাতা বন্দরের নাব্য বজায় রাখার ক্ষেত্রেও বড় ভরসা। গঙ্গা ফিডার ক্যানেলের মাধ্যমে অন্তত ৪০ হাজার কিউসেক পানি পেলে কলকাতা বন্দরের নাব্য বজায় রাখা সম্ভব।’ তা না হলে গঙ্গায় পলি পড়ে কলকাতা বন্দর জাহাজ চলাচলের উপযোগী নাব্য হারাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছে গঙ্গার পানি বণ্টনের বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বস্তুত, সোমবার বিকেলে নবান্নে সংবাদ সম্মেলনে পানি বণ্টন নিয়ে নয়াদিল্লি-ঢাকা দ্বিপক্ষীয় উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মমতা। সেইসঙ্গে তার অভিযোগ, ‘চিনকে দিয়ে ড্যাম (জলাধার) বানিয়েছে বাংলাদেশ।’ চিঠিতে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদলের তরফে খানিকটা হুঁশিয়ারির সুরে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। বলা হয়, সংবিধান অনুযায়ী অন্য দেশের সঙ্গে কোনো বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করার অধিকার কেন্দ্রের রয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রকে এটাও বুঝতে হবে, রাজ্য সরকার সহযোগিতা না করলে তিস্তার পানি বণ্টনের মতো চুক্তি থমকে থাকে। চিঠিতে তিস্তার পানি বণ্টন প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী লিখেন, ‘সিকিমে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে তিস্তার গুরুতর স্বাস্থ্যহানি হয়েছে। পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে।’ এর পরেই কেন্দ্রকে নিশানা করে চিঠিতে তার মন্তব্য, ‘দেখে আশ্চর্য হচ্ছি, তিস্তার ভারতীয় অংশের স্বাস্থ্য ফেরাতে জলশক্তি মন্ত্রণালয়ের কোনো উদ্যোগই নেই!’ সিকিমে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে তিস্তায় জলপ্রবাহ কমেছে এবং তাতে উত্তরবঙ্গের কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রসঙ্গত, গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে ১৯৯৬ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চুক্তি হয়। সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২৬ সালে। এই আবহে শনিবার নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হাসিনার মধ্যে একটি বৈঠক হয়। সেখানে ‘গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি’ নবায়নের জন্য ‘যৌথ কারিগরি কমিটি’ তৈরি করা হয়। কার্যত এই পদক্ষেপের মাধ্যমে এ চুক্তি নবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
২৫ জুন, ২০২৪
X