পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর সিসায় কর সুবিধা
পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতি বছর বাজেটে তামাক থেকে শুরু করে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পণ্য উৎপাদনে নিরুৎসাহিত করে আসছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর); কিন্তু প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর লেড বা সিসা রিসাইকেলিংয়ে আয়কর সুবিধার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে লেড রিসাইকেলিংয়ের উৎসে কর ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। পরিবেশবিদরা বলছেন, এতে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পণ্য উৎপাদনে সহায়তা করা হচ্ছে। বাজেটে আয়কর-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, রিসাইকেলড সিসা সরবরাহের ক্ষেত্রে উৎসে কর নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছরে ধার্য আছে ৭ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় অর্ধেকের বেশি কর কমিয়ে রিসাইকেলড সিসাকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এতে পরিবেশের এবং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা উপেক্ষিত হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে আয়কর কর্মকর্তাদের দাবি, প্রস্তাবিত বাজেটে রিসাইকেল খাতকে উৎসাহিত করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে লেড রিসাইকেলকে এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে। যদিও এনবিআর তামাক থেকে শুরু করে গাড়ির ক্ষেত্রে পরিবেশ সুরক্ষার কারণ দেখিয়ে কর আরোপ করেছে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান কালবেলাকে বলেন, বাংলাদেশে লেডের রিসাইকেলড শুনতে যত ভালো মনে হয়, আসলে তা নয়। লেড আসলে বিষাক্ত জিনিস। আমাদের এর বিকল্প খুঁজতে হবে। আর লেড শেষ পর্যন্ত কোথায় যায়, তাও দেখতে হবে। আমাদের বিজ্ঞানীদের বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। লেড আমাদের পরিহার করতে হবে। জানা গেছে, লেড অ্যাসিড ব্যাটারি রিসাইক্লিং করা ছাড়াই বাজারে যাচ্ছে। এ ছাড়া বেশিরভাগই যথাযথভাবে রিসাইক্লিংও করছে না। লেড তথা সিসার সঙ্গে পানিসদৃশ অ্যাসিড যত্রতত্র ফেললে তা পরিবেশে ছড়াবে। এর আগে গরুর দুধে সিসা পাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। জাপানে লেড এবং অন্যান্য ধাতব মিশ্রিত ই-বর্জ্য নদীতে ফেলার কারণে মিনামাতা রোগ, ক্যান্সার থেকে শুরু করে বিভিন্ন চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছিল মানুষ। এরপর নদী খনন ও পানি শোধন করে পুরো অঞ্চলকে নিরাপদ করা হয়। বাংলাদেশে এ-সংক্রান্ত আইন ও বিধিনিষেধ থাকার পরেও বিষয়গুলোর তদারকি হচ্ছে না। লেড অ্যাসিড পূর্ণচক্রায়নকারী লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠান পরিবেশ ধ্বংস করছে। মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে এবং ঢাকার আশপাশে অনেক পরিমাণ ব্যাটারি, অ্যাসিড এবং লেডের মাধমে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস ও দূষিত হচ্ছে। সিসার মাইক্রো কণাগুলো বাতাসে মিশে ছড়িয়ে পড়ছে। এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহ আহাম্মদ বলেন, লেড বেশকিছু নেতিবাচক দিক আছে; যেমনÑ এটার লেড লিথিয়ামের তুলনায় খুব বিষাক্ত। সিসা সুপরিচিত ভারী ধাতু। এটা কখনোই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না। এটার এনার্জি ডেনসিটি (শক্তি ঘনত্ব) সীমিত। লেডে কর সুবিধা দেওয়া আসলে ঠিক হচ্ছে কী না, ভাবার সময় এখন। কারণ লেড পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এ জন্য বিজ্ঞানীরা লিথিয়ামের বিকল্প হিসেবে এলিমেন আয়ন ব্যাটারি অথবা নিকেল আয়ন ব্যাটারির দিকে ঝুঁকছে। তবে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি বাণিজ্যিকভাবে এগিয়ে আছে। কারণ এর এনার্জি ডেনসিটি ভালো। তাই আমাদের এখন উন্নত প্রযুক্তির দিকে যেতে হবে। বিশ্বের অনেক দেশের মতো নীতিমালা করে লেড অ্যাসিড ব্যাটারির থেকে বের হতে হবে।
১২ জুন, ২০২৪

প্লাস্টিক কাপে ক্ষতিকর ভারী ধাতু, হতে পারে ভয়ংকর রোগ
বর্তমানে সারাবিশ্বে একক ব্যবহারে উপযোগী (Single use) প্লাস্টিকের কাপের ব্যবহার সর্বত্র, যা ছোট টঙের দোকান থেকে শুরু করে অফিস, রেস্টুরেন্টসহ নানা জায়গায় পানীয় পরিবেশনে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কোভিট-১৯ মহামারি চলাকালীন থেকে স্বাস্থ্য  নিরাপত্তার দিকে বিবেচনায় চা, কফি, কোমল পানীয়, লাচ্ছিসহ দুধের তৈরি বিভিন্ন পানীয় পলিস্টাইরিন (polystyrene) প্লাস্টিকের তৈরি একক ব্যবহারে উপযোগী কাপগুলোতে পরিবেশন করা আরও বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করে। বর্তমান বিশ্বে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার ও এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে চলছে ব্যাপকভাবে গবেষণা। সম্প্রতি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবির) একদল গবেষকের গবেষণায় পলিস্টাইরিন (polystyrene)  তৈরি প্লাস্টিকের কাপ ব্যবহারের ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি, বিশেষ করে কিডনি, ফুসফুস, লিভার ক্যানসারের মতো জীবননাশক মারাত্মক রোগ সৃষ্টিকারী ভারী ধাতুর উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছে, যা প্লাস্টিক কাপ থেকে খুব সহজে স্থানান্তরিত হয়ে পানীয়তে ও পরবর্তীতে মানবদেহে প্রবেশ করে। গবেষক দলটি বিভিন্ন একক ব্যবহার উপযোগী প্লাস্টিক কাপে চা, কার্বনেটেড কোমল পানীয়, লাচ্চিসহ বিভিন্ন রকম কোমল পানীয় যথাক্রমে এক, পাঁচ ও দশ মিনিট ধরে রেখে পরীক্ষা করে ২০টি নমুনার ১৭টি নমুনাতেই মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ভারী ধাতুর (কপার, লেড, ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম) উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন। গবেষণা পত্রটি সম্প্রতি ‘Study on the effect of different contact times on the migration of heavy metals into different foodstuffs served in plastic cups’ শিরোনামে  (Heliyon, Q1, IF:4.0) জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।  গবেষণাপত্র অনুযায়ী, পলিস্টাইরিন তৈরি একক ব্যবহারে উপযোগী কাপে পরিবেশিত খাদ্য ও পানীয় এবং উভয়ের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী যোগাযোগের সম্ভাব্য স্বাস্থ্যগত প্রভাবের ওপর সবচেয়ে বেশি দৃষ্টিনিবন্ধন করা হয়। ভারী ধাতুসমূহ যেমন লেড, ক্যাডমিয়াম ও আর্সেনিক ক্যানসার সৃষ্টিকারক (carcinogens) হিসেবে পরিচিত। যা দীর্ঘমেয়াদি লিভার, কিডনি এবং ফুসফুসের রোগসহ ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান হিসেবে পরিচিত। শুধু তাই নয়, এ ধরনের ভারী ধাতুসমূহের নন-কার্সিনোজেনিক (non-carcinogenic) প্রভাব যেমন শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা (হাঁপানি, পালমোনারি ডিজিজ) হার্টের সমস্যা, প্রজননের ওপর প্রভাব, হরমোন সিস্টেমের ওপর প্রভাব ও স্নায়ুবিক প্রভাব সৃষ্টিকারী উপাদান হিসেবেও পরিচিত। গবেষক দলটি পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন যে একক ব্যবহারে উপযোগী প্লাস্টিকের এ কাপগুলোতে যত বেশি সময় ধরে খাবার বা পানীয় থাকবে ভারী ধাতুগুলো তত বেশি স্থানান্তরিত হবে। যার ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকির মাত্রা আরও বেশি হবে। গবেষক দল যশোর শহরের বিভিন্ন দোকান থেকে দৈব চয়নের মাধ্যমে পূর্ণ ব্যবহারযোগ্য পলিস্টাইরিন প্লাস্টিকের তৈরি একক ব্যবহারে উপযোগী ২০টি কাপ সংগ্রহ করে। পাশাপাশি চিনি, চা, কোমল পানীয় ও লাচ্ছির নমুনা তৈরি করে নির্দিষ্ট নিয়মে ও সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে সেগুলোর পরীক্ষা করা হয়।  পরীক্ষার পর ১৭টি নমুনায় ভারী ধাতুর উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়। পাশাপাশি তারা একই খাদ্যপণ্যগুলো সাধারণ কাচের পাত্রে পরীক্ষা চালিয়ে কোনো ভারী ধাতুর উপস্থিতির প্রমাণ পাননি। গবেষণায় গ্রাফাইট ফার্নেস পারমাণবিক শোষণ স্পেকট্রোফোটোমেট্রি (GFASS) ব্যবহারে করে প্রমাণ করে যে, সমস্ত নমুনায় প্লাস্টিক কাপে বিভিন্ন পরিমাণে ভারী ধাতুর উপস্থিতি রয়েছে। সবচেয়ে বেশি রয়েছে কপার তারপর লেড, ক্রোমিয়াম এবং ক্যাডমিয়াম। এ সমস্ত ভারী ধাতুর উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে গবেষক দল স্বাস্থ্যঝুঁকির মাত্রা নির্ণয় করেছেন। এ বিষয়ে গবেষক দলের প্রধান ও অ্যাগ্রো প্রডাক্ট প্রসেসিং টেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বি এম খালেদ বলেন, প্লাস্টিকের ব্যবহার আমাদের দেশে সর্বত্র বিরাজমান। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এটি মাটিতে মিশে যায় না। এ ছাড়াও বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা একক ব্যবহার উপযোগী প্লাস্টিক থেকে ভারী ধাতু খাবারে স্থানান্তরিত হওয়ার প্রমাণ পেয়েছেন। কিন্তু তাদের গবেষণায় দেখা গেছে কেউ ১ ঘণ্টা, কেউ বা তার চেয়ে অধিক সময়ে খাবার প্লাস্টিক কাপে রেখে সেই সময়ের মধ্যে খাবারে স্থানান্তরিত ভারী ধাতুর উপস্থিতি নির্ণয় করেন। কিন্তু কোনো গবেষণায় আমরা ঠিক যে সময়ের মধ্যে খাবারটি বা পানীয়টি খায়, সেই সময়ের মধ্যে ভারী ধাতুর স্থানান্তর হওয়ার হার দেখা হয়নি। তাই আমি ও আমার দল এই বিষয়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করি।  তিনি বলেন, আমরা চা, কার্বোনেট জাতীয় পানীয় ও লাচ্ছি প্লাস্টিক কাপে রেখে নির্দিষ্ট সময় পরপর (১ থেকে ১০ মিনিট) তাতে ভারী ধাতুর পরিমাণ কিরূপ তা নির্ণয় করি। এ সময়কাল নির্বাচন করার কারণ হলো সাধারণ পানীয় তা গরম কিংবা ঠান্ডা হোক, আমরা এ সময়ের মধ্যেই সাধারণত খেয়ে থাকি। এরপর আমরা USEPA  প্রটোকল অনুযায়ী নমুনাতে উপস্থিত ভারী ধাতুর পরিমাণ অনুযায়ী মানবদেহের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিরূপণ করি। এতে দেখা যায়, অ্যাসিডজাতীয় খাবার যেমন কার্বোনেট জাতীয় পানি, গরম খাবার যেমন চা ইত্যাদিতে ভারী ধাতুর উপস্থিতি তুলনামূলক বেশি। যার ফলে একক-ব্যবহার উপযোগী কাপে যত বেশি সময় পানীয় বা খাবার থাকবে তার স্বাস্থ্যঝুঁকি বা ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি হবে। তাই একক-ব্যবহারের বিকল্প হিসেবে আমরা মাটির তৈরি কাপ বা কাগজের কাপ ব্যবহার করতে পারি।  এ ছাড়া গবেষণা দলের অন্য সদস্যরা হলেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নিরাপদ খাদ্য অফিসার আদ্দা আন সিনা, এগ্রো প্রোডাক্ট প্রসেসিং টেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এস.এম. শামিউল আলম, সহকারী অধ্যাপক মো. সুমন রানা, স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল নোমান, মারিয়া তাবাসসুম শাম্মী, ফাতিমা পারভীন, তামান্না নাজনীন, মো. মোজাফফর হোসেন ও রিফাত পারভীন প্রমুখ।
০৭ জুন, ২০২৪

শুধু সরকারের পক্ষে ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা সম্ভব নয়
জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তনের ফল ও প্রভাব সম্পর্কে গণমাধ্যমে বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন জলবায়ু পরিবর্তন ও গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বিষয়টি বৈশ্বিক। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। প্রতি বছরই দেশে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, চরম উষ্ণতা, আর্দ্রতা ঝুঁকি, সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির মতো দুর্যোগ পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। এর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় দেশের অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বাড়লেও সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে। টেকসই উন্নয়নের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। জনগণ সচেতন না হলে শুধুমাত্র সরকারের পক্ষে জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। গতকাল সোমবার জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় গণমাধ্যম’ শীর্ষক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরামের (বিসিজেএফ) সহযোগিতায় জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট এ কর্মশালার আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক সচিব সত্যব্রত সাহা এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তন্ময় দাস, দৈনিক কালবেলার সম্পাদক ও প্রকাশক সন্তোষ শর্মা, ডিবিসি নিউজের সম্পাদক প্রণব সাহা, বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরামের (বিসিজেএফ) সভাপতি কাওসার রহমান, সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন এবং ইনস্টিটিউটের পরিচালক একেএম আজিজুল হক ও ড. মো. মারুফ নাওয়াজ, উপপরিচালক নুসরাত জাবিন। সঞ্চালনা করেন ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সুফী জাকির হোসেন। সত্যব্রত সাহা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব কোনো বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। দুর্যোগ হলো জলবায়ু পরিবর্তনের অনেকগুলো অনুষঙ্গের ফল। বিভিন্ন কারণে দুর্যোগ বেড়েছে। বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড, শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়, খরা-বন্যা ও বিভিন্ন প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার খবরগুলো গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত হচ্ছে। কিন্তু প্রভাবের ক্ষতিকর দিক এবং উত্তরণে করণীয় বিষয়গুলো গণমাধ্যমে তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না। এ বিষয়গুলো গণমাধ্যমে আরও গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা প্রয়োজন। তন্ময় দাস বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে উন্নয়নের একটি সংযোগ রয়েছে। যেসব দেশ উন্নতি করেছে, তারা জলবায়ুর ক্ষতি করেই উন্নয়ন কাজ পরিচালনা করেছে। সুতরাং সেসব দেশের দায়বদ্ধতাও বেশি। ডিবিসি নিউজের সম্পাদক প্রণব সাহা বলেন, গণমাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের দিকগুলো নিয়ে প্রতিবেদন কম হচ্ছে। এগুলো আরও বেশি গুরুত্ব পাওয়া উচিত। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের তহবিল কীভাবে কোথায় খরচ হচ্ছেÑসেটি খতিয়ে দেখা দরকার। সভাপতির বক্তৃতায় সুফী জাকির হোসেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি মোকাবিলায় সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। অসংখ্য চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার তার জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন কর্মকাণ্ডের জন্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে।
২৮ মে, ২০২৪

খরচ কমাল আলোক ফাঁদ
কীটনাশক ব্যবহার না করে ক্ষতিকর পোকামাকড়ের কবল থেকে বোরো ফসল রক্ষায় শস্যভাণ্ডার খ্যাত সিরাজগঞ্জের তাড়াশে জ্বলছে আলোক ফাঁদ। বিশেষ করে এখন ফসলের ক্ষতি করে এমন কারেন্ট পোকা, মাজরা পোকা, গান্ধি পোকা ও চুঙ্গি পোকাসহ বাদামি ঘাস ফড়িং দমনে জমিতে আলোক ফাঁদ বা পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার বেড়েছে। রোববার (৫ মে) রাতে উপজেলার গোন্তা-কাঁটাগাড়ি আঞ্চলিক সড়কের তালম ইউনিয়নের গোন্তা এলাকায় এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা আটটি ইউনিয়নের চলতি বছর প্রায় ২২ হাজার ৫০২ হেক্টর জমিতে বঙ্গবন্ধু১০০, ব্রি-১০১, ব্রি-১০২, ব্রি-১০৪, ব্রি-১০৫, ব্রি-৮৯, ব্রি-৯২, ব্রি-২৯, বিনা২৫ জাতের বোরো আবাদ করা হয়েছে। এদিকে পোকার আক্রমণ না থাকলেও কৃষি অফিস থেকে কীটনাশক ব্যবহার না করে বা কমমাত্রায় ব্যবহার করে বেছে নিয়েছে অন্য আরেকটি পদ্ধতি। তারা বিদ্যুৎ বা ব্যাটারিচালিত আলোর মাধ্যমে রোপা আমনের জমিগুলোতে আলোক ফাঁদ বা ডাল পুঁতে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। জানা গেছে, মূলত সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে বোরো জমির মাঝখানে বা পোকা আসে এমন স্থানে শক্ত বাঁশ-কাঠ কিংবা তিনটি লোহার দ্রুত দিয়ে কাঠামো বানিয়ে সেখানে একটি পাত্রের মধ্যে পানি ও ডিটারজেন্ট পাউডার মেশানো হয়। পরে সেখানে একটি বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে রাখা হয়। আর বাতি জ্বালিয়ে রাখার ফলে কিছুক্ষণ পর ওই পাত্রে উপকারী ও ক্ষতিকর পোকারা আসতে শুরু করে। তখন সেখানে থাকা কৃষি কর্মকর্তারা এসব পোকা নিরূপণ করেন। সেখানে উপকারী পোকা বেশি থাকলে এবং তা ক্ষতিকারক পোকাকে প্রতিহত করতে পারলে সেখানকার বোরো জমিতে আর কীটশানক ব্যবহার করা হয় না। আর উপকারী পোকা কম থাকলে তা ক্ষতিকারক পোকাকে প্রতিহত করার ক্ষমতা না থাকলে তখন কৃষি কর্মকর্তাদের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কীটনাশক মাত্রানুযায়ী প্রয়োগের ব্যবস্থা করা হয়। এতে যত্রতত্র কীটনাশক ব্যবহার না করায় কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। পাশাপাশি ক্ষতিকারক কীটনাশক থেকে রক্ষা পায় উপকারী পোকা। তালম ইউনিয়নের গোন্তা গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন, জমিতে ডাল পুঁতে ও আলোক ফাঁদ তৈরি করে তিনি তার জমিতে পোকা দমনে অনেকটাই সফলতা পেয়েছেন। পাশাপাশি একাই গ্রামের আরেক কৃষক মোবারক হোসেন বলেন, আলোক ফাঁদ দিয়ে ক্ষতিকারক পোকা সম্পর্কে ধারণা নিয়ে আমি কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে জমিতে অল্প পরিমাণ কীটনাশক প্রয়োগ করছি। এতে আমার কীটনাশক খরচ গত বছরের চেয়ে অর্ধেকেরও কম হয়েছে। তাড়াশ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তালম ইউনিয়নের ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান সুমন ও নুহু আলম রতন জানান, বোরো ফসলি জমিতে পুঁতা ডালগুলোর ওপরে পাখি বসে ফসলি জমির ক্ষতিকারক পোকা ও পোকার ডিম খেয়ে ফেলে। যার ফলে আর কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। ফলে কৃষক জমিতে কীটনাশকের খরচে কমিয়ে অধিক ফলন উৎপাদন করতে পারেন। এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, পোকামাকড় যাতে ফসল নষ্ট না করতে পারে তার জন্য কৃষকদের আলোক ফাঁদ বা পার্চিং পদ্ধতির মাধ্যমে ক্ষতিকারক পোকামাকড় নিধনে প্রতিটি ইউনিয়নের ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। যা সুফল পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি ফসল উৎপাদনে কীটনাশকের ব্যয় অনেক কমে এসেছে। যে কারণে আলোক ফাঁদ বা পার্চিং পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
০৬ মে, ২০২৪

ক্ষতিকর নানা গ্যাস ঢাকার বাতাসে উত্তাপ বাড়াচ্ছে
রাজধানী ঢাকায় কয়েক দশক আগেও নগর পরিকল্পনার মানদণ্ড অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণ সবুজ এলাকা ও জলাশয় ছিল। কিন্তু পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে খাল-পুকুর ভরাট, দখল ও ধ্বংস, সবুজ এলাকা নষ্ট করে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণে কংক্রিটের জঞ্জাল বেড়েছে। নগরীর ভবনের নকশায় পরিবেশ ও জলবায়ুর ধারণা বাদ দিয়ে কাচ নির্মিত ভবন ও এসিনির্ভর ভবনের নকশা তৈরি করা হয়েছে। সঙ্গে নগরীতে কোনো ধরনের বনায়ন করা হয়নি। নগর এলাকায় সরু রাস্তার পাশেই সুউচ্চ ভবন নির্মাণ, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো কর্তৃক জলাশয়-জলাধার-সবুজ এলাকা ধ্বংস করা হচ্ছে। ময়লার ভাগাড়, ইটভাটা, যানবাহন ও শিল্পকারখানার ধোঁয়া থেকে সৃষ্ট বায়ুদূষণে নগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি বায়ুদূষণে সৃষ্ট অতি ক্ষুদ্র কণার কারণে নগরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢাকার বাতাসে উত্তাপ বাড়াচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর গ্যাস। ময়লার ভাগাড়, ইটভাটা, যানবাহন ও শিল্পকারখানার ধোঁয়া থেকে তৈরি হচ্ছে গ্যাস। গতকাল শনিবার বাংলামোটরে প্ল্যানার্স টাওয়ারের বিআইপি কনফারেন্স হলরুমে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) উদ্যোগে ‘ঢাকায় তাপদাহ: নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন ব্যবস্থাপনার দায় ও করণীয়’ শীর্ষক পরিকল্পনা সংলাপে এসব তথ্য উঠে আসে। সংলাপের শুরুতে বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসানের সঞ্চালনায় মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ইনস্টিটিউটের সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান। প্রতিবেদনে তিনি বলেন, ঢাকা শহরে সবুজ যেমন কমেছে, ঠিক তেমনি গত দুই দশকে বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত ধূসর এলাকা ও কংক্রিটের পরিমাণ, যা নগর এলাকায় তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে মারাত্মক হারে, বাড়ছে আরবান হিট আইল্যান্ডের প্রভাব। ২০১৯ সালে করা বিআইপির গবেষণা অনুসারে, কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকা ১৯৯৯ সালে ছিল ৬৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ, ২০০৯ সালে বেড়ে হয় ৭৭ দশমিক ১৮ শতাংশ, আর ২০১৯ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৮১ দশমিক ৮২ শতাংশে। ২০২৩ সালে বিআইপির প্রকাশিত আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৮ বছরে রাজধানী ঢাকার সবুজ এলাকা কমে মাত্র ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে; অন্যদিকে জলাভূমি নেমে এসেছে মাত্র ২ দশমিক ৯ শতাংশে। যদিও নগর পরিকল্পনার মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি আদর্শ শহরে ২৫ শতাংশ সবুজ এলাকা এবং ১০ থেকে ১৫ শতাংশ জলাশয়-জলাধার থাকার কথা। এরই পাশাপাশি ভবনের নকশায় প্রাকৃতিক আলো-বাতাস চলাচলকে ব্যাহত করে দিয়ে আবদ্ধ ঘর, কাচ নির্মিত ঘর ও এসি ব্যবহারকে মাথায় রেখে ভবন নির্মাণের প্রবণতার কারণে মহানগরীতে তাপমাত্রা বাড়ছে। শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে পুরো পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১ থেকে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির কথা বলা হলেও ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় এ তাপমাত্রা ৫ থেকে ৬ ডিগ্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। যার মূল কারণ মূলত ঢাকা শহরের আশপাশের প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার এবং নগরায়ণের নামে চালানো ধ্বংসযোগ্য। তিনি বলেন, ডেল্টা প্ল্যান, জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা এবং অন্যান্য যেসব নীতিমালা রয়েছে, তার যথাযথ চর্চায় নিয়ে আসতে হবে এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সংযোগ রেখে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। তা ছাড়া বিভিন্ন ধরনের যেসব জলবায়ুকেন্দ্রিক পলিসি অথবা নীতিমালা রয়েছে, সবগুলোকে একসঙ্গে করে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। তা ছাড়া যে কোনো পরিকল্পনা বা মেগা প্রকল্প শুরু করার আগে রাজউকের মাস্টার প্ল্যান অনুসরণ করছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। সঙ্গে এসব প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কাজে পরিকল্পনাবিদদের যুক্ত করতে হবে। এরই মধ্যে ঢাকা শহরের বায়ুর মানদণ্ড পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় অত্যন্ত নিম্নমানের মন্তব্য করেন বিআইপির ন্যাশনাল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল লিয়াজোঁ পরিকল্পনাবিদ আবু নাইম সোহাগ। তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত নগরায়ণের নামে এসব পার্ক উদ্যান এবং জলাভূমি ভরাট করা হচ্ছে, যা আমাদের ঢাকা শহরে তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে অন্যতম কারণ। তা ছাড়া ঢাকা শহরে এসি ব্যবহারে যে বাণিজ্যিক চিন্তাভাবনা গড়ে উঠেছে, তা থেকে আমাদের যত দ্রুত সম্ভব সরে আসতে হবে। বিআইপির বোর্ড সদস্য পরিকল্পনাবিদ হোসনে আরা বলেন, ঢাকার তাপপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে এবং তাপ সহনশীল নগর হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আরবান হিট মিটিগেশন ও ম্যানেজমেন্ট কৌশল নগর পরিকল্পনায় সর্বোচ্চ বিবেচনায় আনতে হবে। পরিকল্পনাবিদ রেদওয়ানুর রহমান বলেন, ঢাকা শহরে পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ জনগণ মূলত এসি ব্যবহার করে থাকে, যা আমাদের ঢাকা শহরের তাপমাত্রা পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ পাশাপাশি আমাদের জলবায়ুর ক্ষতি সাধন করছে। পরিকল্পনা সংলাপে ড. আদিল মুহাম্মদ খান ঢাকা মহানগরীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে বিআইপির পক্ষ থেকে ২৩ দফা প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। তাদের প্রস্তাবনায় রয়েছে, সবুজ ও জলাশয় এলাকা সংরক্ষণে যথাযথ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন, জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, হারিয়ে যাওয়া খালবিল-জলাশয়-জলাভূমি ও সবুজ বাস্তবতার নিরিখে সম্ভাব্যতা যাচাই সাপেক্ষে পুনরুদ্ধার, ধ্বংসকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা, নগর পরিকল্পনা ও ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনার মাধ্যমে সবুজ এলাকা, জলাশয় ও কংক্রিট এলাকার ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট হওয়া, নগর এলাকার প্রান্তে সবুজ বেষ্টনী প্রকল্প গ্রহণ, ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জলাশয় ও জলাধার রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন করা, সরু রাস্তার পাশে সুউচ্চ ভবন নির্মাণ প্রবণতা বন্ধ করা, বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের বিধিমালা সংশোধন করে সবুজ ও জলাশয় এলাকা, পার্ক-উদ্যান-খেলার মাঠ বাড়ানোর যথাযথ উদ্যোগ, বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা প্রস্তাবিত জলকেন্দ্রিক পার্ক, ইকোপার্ক, পার্ক, খেলার মাঠ তৈরিতে দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, মেগা প্রকল্প ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে নগর সংস্থাগুলোর মধ্যে কার্যকর সমন্বয় নিশ্চিত করা, এসির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও সীমিত করতে প্রয়োজনীয় নীতিমালা এবং নির্দেশনা প্রণয়ন করা, এনার্জি এফিশিয়েন্ট ভবন ও গ্রিন বিল্ডিং কোড প্রণয়ন করা, ভবনের ডিজাইনে প্রাকৃতিক আলো-বাতাস চলাচল ও এনার্জি এফিশিয়েন্সির বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া, প্রান্তিক, নিম্ন আয় ও বস্তি এলাকার মানুষের আবাসন পরিকল্পনা, নগর এলাকায় সবুজ ও জলাশয় রক্ষা করতে কমিউনিটিভিত্তিক সংগঠন সৃষ্টি ও কমিউনিটিভিত্তিক নজরদারি বাড়ানো। ওয়ার্ডভিত্তিক মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা, তাপমাত্রা ও তাপপ্রবাহ বিবেচনায় নিয়ে নগর পরিকল্পনা ও ভবনের নকশা এবং নির্মাণ নিশ্চিত করতে পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, প্রকৌশলী, উদ্যানতত্ত্ববিদদের অন্তর্ভুক্তি ও সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব থেকে উদ্ধার পেতে ঢাকা মহানগরীর পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা-২০২২-এর সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে এবং এজন্য এসব প্রতিষ্ঠানে পরিকল্পনাবিদসহ প্রয়োজনীয় কারিগরি জনবল বৃদ্ধি করতে হবে।
০৫ মে, ২০২৪

বিআইপির পরিকল্পনা সংলাপ / ঢাকায় কমছে গাছ, উত্তাপ বাড়াচ্ছে কনক্রিট আর ক্ষতিকর গ্যাস
রাজধানী ঢাকায় কয়েকদশক আগেও নগর পরিকল্পনার মানদণ্ড অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণ সবুজ এলাকা ও জলাশয় ছিল। কিন্তু পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে খাল-পুকুর ভরাট, দখল ও ধ্বংস, সবুজ এলাকা নষ্ট করে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণে কংক্রিটের জঞ্জাল বেড়েছে। নগরীর ভবনের নকশায় পরিবেশ ও জলবায়ুর ধারণা বাদ দিয়ে কাচ নির্মিত ভবন ও এসি নির্ভর ভবনের নকশা তৈরি করা হয়েছে। সঙ্গে নগরীতে কোনো ধরনের বনায়ন করা হয়নি। নগর এলাকায় সরু রাস্তার পাশেই সুউচ্চ ভবন নির্মাণ, সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসমূহ কর্তৃক জলাশয়-জলাধার-সবুজ এলাকা ধ্বংস করা হচ্ছে। ময়লার ভাগাড়, ইটভাটা, যানবাহন ও শিল্পকারখানার ধোঁয়া থেকে সৃষ্ট বায়ুদূষণে নগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি বায়ুদূষণে সৃষ্ট অতি ক্ষুদ্র কণার কারণে নগরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢাকার বাতাসে উত্তাপ বাড়াচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর গ্যাস। ময়লার ভাগাড়, ইটভাটা, যানবাহন ও শিল্পকারখানার ধোঁয়া থেকে তৈরি হচ্ছে গ্যাস। শনিবার (৪ মে) বাংলামোটরস্থ প্ল্যানার্স টাওয়ারের বিআইপি কনফারেন্স হলরুমে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)-র উদ্যোগে ‘ঢাকায় তাপদাহ : নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন ব্যবস্থাপনার দায় ও করণীয়’ শীর্ষক পরিকল্পনা সংলাপে এসব তথ্য উঠে আসে। সংলাপের শুরুতে বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসানের সঞ্চালনায় মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ইনস্টিটিউটের সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান।   প্রতিবেদনে তিনি বলেন, ঢাকা শহরে সবুজ যেমন কমেছে, ঠিক তেমনি গত দুই দশকে বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত ধূসর এলাকা ও কনক্রিটের পরিমাণ, যা নগর এলাকায় তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে মারাত্মক হারে, বাড়ছে আরবান হিট আইল্যান্ডের প্রভাব। ২০১৯ সালে করা বিআইপির গবেষণা অনুসারে, কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকা ১৯৯৯ সালে ছিল ৬৪ দশমিক ৯৯ ভাগ, ২০০৯ সালে বেড়ে হয় ৭৭ দশমিক ১৮ ভাগ, আর ২০১৯ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৮১ দশমিক ৮২ শতাংশে। ২০২৩ সালে বিআইপির প্রকাশিত আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৮ বছরে রাজধানী ঢাকার সবুজ এলাকা কমে মাত্র ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে; অন্যদিকে, জলাভূমি নেমে এসেছে মাত্র ২.৯ শতাংশে। যদিও নগর পরিকল্পনার মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি আদর্শ শহরে ২৫ শতাংশ সবুজ এলাকা এবং ১০ থেকে ১৫ শতাংশ জলাশয়-জলাধার থাকার কথা। এরই পাশাপাশি ভবনের নকশায় প্রাকৃতিক আলো-বাতাস চলাচলকে ব্যাহত করে দিয়ে আবদ্ধ ঘর, কাচ নির্মিত ঘর ও এসি ব্যবহারকে মাথায় রেখে ভবন নির্মাণের প্রবণতার কারণে মহানগরীতে তাপমাত্রা বাড়ছে।   শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে পুরো পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১ থেকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির কথা বলা হলেও ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় এই তাপমাত্রা ৫ থেকে ৬ ডিগ্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। যার মূল কারণ মূলত ঢাকা শহরের আশপাশের প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার এবং নগরায়নের নামে চালানো ধ্বংসযোগ্য। তিনি বলেন, ডেল্টা প্ল্যান, জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা এবং অন্যান্য যেসব নীতিমালা রয়েছে তার যথাযথ চর্চায় নিয়ে আসতে হবে। এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট এর সঙ্গে সংযোগ রেখে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা তৈরি  করতে হবে। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের যেসব জলবায়ুকেন্দ্রিক পলিসি অথবা নীতিমালা রয়েছে সবগুলোকে একসঙ্গে করে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। তাছাড়া যে কোনো পরিকল্পনা বা মেগা প্রকল্প শুরু করার আগে রাজউকের মাস্টার প্ল্যান অনুসরণ করছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে। সঙ্গে এসব প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কাজে পরিকল্পনাবিদদের যুক্ত করতে হবে।   ইতোমধ্যেই ঢাকার শহরের বায়ুর মানদণ্ড পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় অত্যন্ত নিম্নমানের মন্তব্য করেন বিআইপির ন্যাশনাল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল লিয়াজোঁ পরিকল্পনাবিদ আবু নাইম সোহাগ। তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত নগরায়নের নামে এসব পার্ক উদ্যান এবং জলাভূমি ভরাট করা হচ্ছে যা আমাদের ঢাকা শহরে তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে অন্যতম কারণ। তাছাড়া ঢাকা শহরে এসি ব্যবহারে যে বাণিজ্যিক চিন্তাভাবনা গড়ে উঠেছে তা থেকে আমাদের যত দ্রুত সম্ভব সরে আসতে হবে। বিআইপির বোর্ড সদস্য পরিকল্পনাবিদ হোসনে আরা বলেন, ঢাকার তাপদাহ নিয়ন্ত্রণে এবং তাপ সহনশীল নগর হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আরবান হিট মিটিগেশন ও ম্যানেজমেন্ট কৌশল নগর পরিকল্পনায় সর্বোচ্চ বিবেচনায় আনতে হবে।   পরিকল্পনাবিদ রেদওয়ানুর রহমান বলেন, ঢাকা শহরে পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ জনগণ মূলত এসি ব্যবহার করে থাকে, যা আমাদের ঢাকা শহরের তাপমাত্রা পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ পাশাপাশি আমাদের জলবায়ুর ক্ষতি সাধন করছে।   পরিকল্পনা সংলাপে ড. আদিল মুহাম্মদ খান ঢাকা মহানগরীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে বিআইপির পক্ষ থেকে ২৩ দফা প্রস্তাবনা  উপস্থাপন করেন। তাদের প্রস্তাবনায় রয়েছে- সবুজ ও জলাশয় এলাকা সংরক্ষণে যথাযথ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন, জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, হারিয়ে যাওয়া খাল-বিল-জলাশয়-জলাভূমি ও সবুজ বাস্তবতার নিরিখে সম্ভাব্যতা যাচাই সাপেক্ষে পুনরুদ্ধার, ধ্বংসকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা, নগর পরিকল্পনা ও ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনার মাধ্যমে সবুজ এলাকা, জলাশয় ও কংক্রিট এলাকার ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট হওয়া, নগর এলাকার প্রান্তে সবুজ বেষ্টনী প্রকল্প গ্রহণ, ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জলাশয় ও জলাধার রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন করা, সরু রাস্তার পাশে সুউচ্চ ভবন নির্মাণ প্রবণতা বন্ধ করা, বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের বিধিমালা সংশোধন করে সবুজ ও জলাশয় এলাকা, পার্ক-উদ্যান-খেলার মাঠ বাড়ানোর যথাযথ উদ্যোগ, বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা প্রস্তাবিত জলকেন্দ্রিক পার্ক, ইকোপার্ক, পার্ক, খেলার মাঠ তৈরিতে দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, মেগা প্রকল্প ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে নগর সংস্থাসমূহের মধ্যে কার্যকর সমন্বয় নিশ্চিত করা, এসির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও সীমিত করতে প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও নির্দেশনা প্রণয়ন করা, এনার্জি এফিশিয়েন্ট ভবন ও গ্রিন বিল্ডিং কোড প্রণয়ন করা, ভবনের ডিজাইনে প্রাকৃতিক আলো-বাতাস চলাচল ও এনার্জি এফিশিয়েন্সির বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া, প্রান্তিক, নিম্ন আয় ও বস্তি এলাকার মানুষের আবাসন পরিকল্পনা, নগর এলাকায় সবুজ ও জলাশয় রক্ষা করতে কমিউনিটিভিত্তিক সংগঠন সৃষ্টি ও কমিউনিটিভিত্তিক নজরদারি বাড়ানো। ওয়ার্ডভিত্তিক মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা, তাপমাত্রা ও তাপপ্রবাহ বিবেচনায় নিয়ে নগর পরিকল্পনা ও ভবনের নকশা ও নির্মাণ নিশ্চিত করতে পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, প্রকৌশলী, উদ্যানতত্ত্ববিদদের অন্তর্ভুক্তি ও সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব থেকে উদ্ধার পেতে ঢাকা মহানগরীর পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা–২০২২ এর সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে এবং এজন্য এসব প্রতিষ্ঠানে পরিকল্পনাবিদসহ প্রয়োজনীয় কারিগরি জনবল বৃদ্ধি করতে হবে।
০৪ মে, ২০২৪

ক্ষতিকর প্যারাবেনমুক্ত শ্যাম্পু ও সুদিং জেল বাজারে নিয়ে এলো লিলি
স্বাস্থ্যঝুঁকি রোধে সংকল্পবদ্ধ পারসোনাল কেয়ার ব্র্যান্ড লিলি বাজারে নিয়ে এলো প্যারাবেনের ঝুঁকিমুক্ত লিলি সুদিং জেল এবং লিলি সিলকোর হেয়ার ফল ডিফেন্স ও সিল্ক অ্যান্ড শাইন শ্যাম্পু।  রিমার্ক এলএলসি, ইউএসএ অ্যাফিলিয়েটেড এই ব্র্যান্ডের পণ্যগুলো তাদের নিজস্ব স্টেট অব দ্য আর্ট প্রোডাকশন ফ্যাসিলিটিতে, উৎপাদন করে থাকে। ক্ষতিকর রাসায়নিকমুক্ত প্রতিটি পণ্যের আন্তর্জাতিক গুণগত মান নিশ্চিত করতে পুরো সময় নিরলসভাবে কাজ করে গেছে লিলির গ্লোবাল রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট টিম। ফলে বাজারের অন্যান্য পণ্যে প্যারাবেনের উপস্থিতির খবর পাওয়া গেলেও লিলি ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু ও সুদিং জেলে প্যারাবেনের অস্তিত্ব নেই। এই পণ্যগুলো ডার্মাটোলজিক টেস্টেও প্রমাণিত। রিমার্ক এলএলসি ইউএসএর হোম অ্যান্ড পারসোনাল কেয়ারের অপারেটিভ ডিরেক্টর হাসান ফারুক বলেন, সম্প্রতি এক আন্তর্জাতিক গবেষণায় প্রাপ্ত উপাত্ত অনুযায়ী, দেশের বাজারে জনপ্রিয় বেশকিছু ব্যক্তিগত পরিচর্যা পণ্যে বিপজ্জনক মাত্রায় ক্ষতিকর রাসায়নিক ‘প্যারাবেন’ পাওয়া গেছে। মরণব্যাধী ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ানো ছাড়াও এর আরও অনেক ধরনের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। কমদামি পণ্যে ক্ষতিকারক যেসব উপাদান থাকে যেমন লেড, বেনজোফেনন, আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম, মার্কারি– এসব ক্ষতিকর হেভি মেটাল উপাদান যেন কোনোভাবেই তাদের কোনো পণ্যে না থাকে তা সতর্কতার সঙ্গে নিশ্চিত করে লিলি। আর এসব উপাদানের ক্ষতি এড়াতে আমরা আমাদের ভোক্তাদেরও উৎসাহিত করে থাকি মানসম্পন্ন পণ্য ব্যবহারের জন্য।   ন্যাচারাল অয়েলের গুণাবলি সমৃদ্ধ লিলির সিলকোর শ্যাম্পুর দুটি ভ্যারিয়েন্ট সিল্ক অ্যান্ড শাইন এবং হেয়ার ফল ডিফেন্স জট ছাড়িয়ে চুলকে করে রেশমি ও উজ্জ্বল। অন্যদিকে নায়াসিনামাইড ও হায়ালুরনিক এসিড সমৃদ্ধ, এলোভেরা ও কিউকাম্বার ভ্যারিয়েন্টের লিলি সুদিং জেল, প্রয়োজনীয় পুষ্টি যুগিয়ে ত্বকে এনে দেয় এক স্নিগ্ধ, প্রশান্তিদায়ক অনুভূতি। প্যারাবেন এবং ক্যানসার সৃষ্টিকারী ক্ষতিকর কেমিক্যালমুক্ত এই পণ্যগুলো পরিবারের সবার চুল ও ত্বকের যত্নে আদর্শ।   বাজারে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের বাজারজাত করা হ্যান্ডওয়াশে বিপজ্জনক মাত্রায় রাসায়নিক ‘প্যারাবেন’ পাওয়া গেছে, যা মানবদেহে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াবে। এ ছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং কিডনির সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। এ গবেষণায় সাতটি অন্যান্য দেশের পণ্যের নমুনাও বিশ্লেষণ করা হয়। কিন্তু দেখা গেছে যে, বাংলাদেশি পণ্যগুলোতেই সবচেয়ে বেশি মাত্রায় প্যারাবেন ব্যবহার করা হয়। প্যারাবেন হলো প্রিজারভেটিভের মতো এক ধরনের রাসায়নিক যা সাধারণত প্রসাধনী, পারসোনাল কেয়ার প্রোডাক্ট এবং ওষুধপত্রের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। প্যারাবেন কম ব্যয়বহুল এবং সহজলভ্য হওয়ার কারণে উৎপাদনকারীরা এটি বেশি পরিমাণে ব্যবহার করে থাকেন। প্রজনন সমস্যা, ক্যানসারের ঝুঁকি, হরমোনাল ইমব্যালেন্সের জন্য অনেকেই প্যারাবেনকে দায়ী করে থাকেন। এ কারণে বেশ কয়েকটি দেশ তাদের পণ্যগুলোতে প্যারাবেনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। আমাদের প্রতিবেদককে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর একজন গৃহিণী বলেন, জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি প্যারাবেন ব্যবহার বন্ধের লক্ষ্যে সরকারকে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।  অ্যাসোসিয়েশন অব স্কিন কেয়ার অ্যান্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স বাংলাদেশের সভাপতি আশরাফুল আম্বিয়া বলেন, কোনো কোনো ব্যবসায়ী শুধু মুনাফা অর্জনের জন্য ক্ষতিকর পণ্য বাজারজাত করে থাকে। কিন্তু সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে ভোক্তাদের স্বার্থের ব্যাপারটিও বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

নতুন মন্ত্রিপরিষদ: দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম কর্মদিবসে যা বললেন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা / মিথ্যাচার গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর
তথ্য ও সম্প্রচারপ্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেছেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, তথ্যের অবাধ প্রবাহ এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে অপব্যবহার করে যদি কোনো গোষ্ঠী অপপ্রচার ও মিথ্যাচার করে, সেটি গণতন্ত্র ও সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতিকর। এ ধরনের অপতৎপরতাকে জবাবদিহির আওতায় আনা নিশ্চিত করা হবে। গতকাল রোববার সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নবনিযুক্ত প্রতিমন্ত্রী আরাফাত দায়িত্ব গ্রহণের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন। এ সময় সাবেক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের আগে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ ও সাংবাদিকদের সঙ্গে নতুন প্রতিমন্ত্রীর পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন, বয়সে আমার চেয়ে নবীন হলেও তিনি বিচক্ষণ ব্যক্তি এবং দীর্ঘদিনের সহকর্মী। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার সভা পরিচালনা করেন। প্রতিমন্ত্রী আরাফাত বলেন, তথ্যের অবাধ প্রবাহ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এই বিষয়গুলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অংশ। দেশের অগ্রগতি ও গণতন্ত্রের স্বার্থে এটি নিশ্চিত আমরা করেছি এবং আগামী দিনেও তা বজায় রাখতে চাই। কিন্তু এর অপব্যবহার করে অসত্য অপপ্রচার চালানো, মানুষকে ধোঁকা দেওয়া মানুষের ওপর অবিচার। বাংলাদেশের বিপক্ষে বিশ্বব্যাপী যে মিস-ইনফরমেশন ক্যাম্পেইন বা অপপ্রচার হচ্ছে, সেই ষড়যন্ত্র মোকাবিলাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে এগুলোকে জবাবদিহির আওতায় এনে তথ্যের অবাধ প্রবাহ কীভাবে আরও সুন্দর করা যায়, সেই বিষয়গুলো নিয়ে আপনাদের সঙ্গে আগামী দিনে কাজ করতে চাই।
১৫ জানুয়ারি, ২০২৪

বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ক্ষতিকর : জয়
অগ্নিসংযোগ, রেললাইন উপড়ে ফেলা বিএনপির তথাকথিত গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সৃষ্ট সহিংসতা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ক্ষতিকর। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) বছরের শেষ দিন রোববার (৩১ ডিসেম্বর) দেওয়া এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ট্রেন লাইনচ্যুত করে বিএনপি-জামায়াতের সৃষ্ট সহিংসতা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ক্ষতিকর। সংবাদমাধ্যমের খবরের বরাত দিয়ে সজীব ওয়াজেদ বলেন, গত ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতায় চার শতাধিক ক্রুড বোমা সরবরাহ করেছেন মুকিত ওরফে মাওলানা। নির্বাচন বানচাল ও ভোটারদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করতে দলটি এসব কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছে। অগ্নিসংযোগ, রেললাইন উপড়ে ফেলা বিএনপির তথাকথিত গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য। গত ২০ নভেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে ককটেল বিস্ফোরণের নেপথ্যের কারিগর হিসেবে আটক হয়েছেন মুকিত ওরফে মাওলানা। তাকে কারা এ হামলা করতে বলেছিলেন সেসব তিনি জানিয়েছেন। যদিও এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নিজেদের কর্মীরা জড়িত নয় বলে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা রুহুল কবির রিজভী। তিনি দাবি করেন, বিশ্ববাসীকে ধোঁকা দিতে তারা এসব সহিংসতা করে বিএনপির ওপর দায় চাপাচ্ছে। সজীব ওয়াজেদ লিখেছেন, বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী ও অন্যরা বিশ্বকে বোকা বানাতে প্রতিদিন অস্বীকারের নাটক মঞ্চস্থ করছেন। রিজভী বাসে হামলায় বিএনপি জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করলেও সংবাদমাধ্যমে তার নেতৃত্বে ৩০ জনেরও কম নেতাকর্মীর মিছিল থেকে চলন্ত বাসে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে দেখা যায়। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও মানবাধিকারকর্মীরা রিজভীর মিথ্যাচারের নিন্দা জানিয়েছেন। নিজের ভেরিফাইড এক্স অ্যাকাউন্টে ভিডিও পোস্ট করে সজীব ওয়াজেদ লিখেছেন, মুকিতকে কারা নিয়োগ করেছে, তার সঙ্গে কাদের সখ্য সেটি এখানে দেখা গেছে। বিএনপি নেতৃত্বের মিথ্যাচারেরও প্রমাণ এটি। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস ও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশের জন্য এ সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ডকে ক্ষতিকর মনে করবে কিনা বলেও প্রশ্ন রাখেন তিনি।
০১ জানুয়ারি, ২০২৪
X