কী আছে ক্যাডারে, সবাই কেন ক্যাডার হতে চায়!
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের একজন শিক্ষক পুলিশ ক্যাডারে চাকরি করে চাকরি ছেড়ে দিয়ে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিতে যোগদান করেছিলেন। পুলিশ ক্যাডারে যোগদান করার পর তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করিনি, যোগাযোগ ছিল না। কয়েক বছর পর একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখি সিভিল পোশাকে সেই শিক্ষক-পুলিশ অফিসার। জিজ্ঞেস করলাম আপনি এখানে কীভাবে? উত্তরে বললেন, ‘মাছুম ভাই, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবার জয়েন করেছি। ওই চাকরি আসলে আমার জন্য নয়।’ যারা সাহিত্য পড়েছেন, যারা প্রকৃত জ্ঞানের বই পড়েছেন, যারা ইতিহাস পড়েছেন তাদের পক্ষে বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব চাকরি ভালো লাগার কথা নয়। কিন্তু এসব উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত কোনো মিডিয়ায় কোনোভাবেই দেখা যায় না। পত্রিকায় ঘটা করে দেখা যায় অমুক দোকানদারের ছেলে বিসিএস ক্যাডার হয়েছে। অমুক দরিদ্র পরিবারের ছেলে বা মেয়ে বিসিএস ক্যাডার হয়েছে। মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কাজটি করে ফেলেছেন তারা। এই করে করে পৃথিবীতে বিসিএস ক্যাডার ছাড়া যেন আর কোনো চাকরির মূল্য নেই।  এ সপ্তাহেই বাসায় আসা একজন মেহমান বললেন, আমি একটি কাজ করতে যাচ্ছি সেখানে সব বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তারা থাকবেন। তার কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ থেকে তার নিজের বড় ভাই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তার কথা জিজ্ঞেস করলাম, তিনি রিয়াটারমেন্টে গেছেন কি না। উত্তরে বললেন গেছিলেন কিন্তু ওনার বিষয়ে যোগ্য অধ্যাপক নেই বিধায় বিশ্ববিদ্যালয় ওনাকে দুই বছরের এক্সটেনশন দিয়েছেন। তখন আমি বললাম, বাংলাদেশে এই কৃষিবিদদেরই বেশি বেশি প্রয়োজন। এদেশে যত গবেষণা হয়েছে বা হচ্ছে তার কোনটা জনগণের ও দেশের কাজে লেগেছে বা কে কি জেনেছে সেই গবেষণার বিষয়বস্তু সম্পর্কে? শুধু কৃষির গবেষণার ফলে শাকসবজি, ফলমূল, শস্য থেকে শুরু করে কোটি কোটি মানুষের জীবন ধরনের জন্য পণ্য উৎপাদনে বিপ্লব ঘটেছে। অথচ বিসিএস ক্যাডারে তাদের কোনো মাহাত্ম্যই নেই। সবই যেন প্রশাসন ক্যাডার!  একটি উপজেলায় ও জেলার প্রথম পজিশন হবে কৃষি কর্মকর্তার, তারপর হবে শিক্ষা কর্মকর্তার, তারপর হবে ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ারদের। বাকিসব ক্যাডার হবে এই ক্যাডারগুলোর পরের। কিন্তু পুরো পুরি উল্টো বিষয় ঘটে চলেছে পঞ্চাশ বছরের অধিককাল ধরে পুরোপুরি স্বাধীন হওয়া এই দেশে! ব্রিটিশরাজ প্রবর্তিত প্রশাসনের যে দর্শন, তাই থেকে গেল। দর্শন পড়ুক, সাহিত্য পড়ুক আর বিজ্ঞান- ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তারি যে যাই পড়ুক এখন সবাই হতে চায় প্রশাসক আর পুলিশ যাতে ‘বেনজীর’ হতে পারে।  কী শিক্ষা আমরা পাচ্ছি আর কী শিক্ষা দিচ্ছি আর কেনই বা দিচ্ছি? ফেসবুকের পাতায় প্রায়ই অনেক ধরনের কথা লেখা দেখা যায় তার মধ্যে কয়েকটি কথা অহরহই দেখছি’ সব চেয়ে বেশি দুর্নীতির তালিকার শীর্ষে শিক্ষিত ব্যক্তিরা, বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর তালিকার শীর্ষে শিক্ষিতরা, বিদেশে অর্থ পাচারের শীর্ষে শিক্ষিতরা। বিদেশের মাটিতে অশিক্ষিত অর্ধশিক্ষিতরা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠায় আর শিক্ষিতরা সেই টাকা রাষ্ট্রীয় অনিয়মের মাধ্যমে নিজেদের করে বিদেশে পাঠায়। সাাংস্কৃতিক জগতের লোকজন সব রাজনীতিতের আসার জন্য, পজিশন পাওয়ার জন্য মরিয়া! এগুলো তো বাস্তব! কী শেখানো হচ্ছে আমাদের সমাজে, সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে? একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লিখেছেন, ‘বেশ কয়েক বছর আগে আমি কুষ্টিয়ায় একটা গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম আমার এক বন্ধুর সঙ্গে বেড়াতে। তখন আমি দেশের নামকরা একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। যে বাড়িতে বেড়াতে গেছি, সেই বাড়ির কর্তা আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন, তুমি কী করো? বললাম, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছি। এরপর তিনি জিজ্ঞেস করেছেন, ‘এটা কি সরকারি চাকরি? বললাম না। তিনি এরপর খুব তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বললেন, ‘তুমি সরকারি চাকরি পাওনি?’ আমারও এ ধরনের বহু অভিজ্ঞতা রয়েছে। একদিন আমার অতি পরিচিত একজন আমার এক নিকটাত্মীয়ের পেশার কথা জানতে চাইলেন যে উনি কী করতেন। আমি বলেছিলাম, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। শুনেই বলেছেন বিসিএস ক্যাডার না তো, তাইলে আর কী? এবার বুঝুন সমাজকে আমরা কোথায় নিয়ে গেছি।  ৪০তম বিসিএসের একজন বুয়েটিয়ান অ্যডমিন ক্যাডার ছেড়ে চলে এসেছেন এবং দীর্ঘ একটি পোস্ট দিয়েছেন ফেসবুকে। সেখান থেকে কিছু তথ্য এখানে তুলে ধরা ধরছি। তিনি ওই ক্যাডারে ৮০ দিন কাজ করার পর স্বেচ্ছায় অব্যাহিত নিয়ে চলে এসেছেন। এটিই ছিল তার প্রথম এবং একমাত্র সরকারি চাকরি। কিছু বিষয় তার কাছে অদ্ভুত লেগেছে তাই ছেড়ে এসেছেন। বুয়েটের অধিকাংশ মেধাবী শিক্ষার্থীদের তথাকথিত ঠাঁটবাটের জীবন, খুব একটা আকৃষ্ট করবে না সেটি বুঝি কিন্তু মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যাই যখন দেখি বুয়েটের শিক্ষার্থীও নিজেদের অর্জিত বিশেষায়িত জ্ঞান পেছনে ফেলে রেখে হচ্ছেন পুলিশ, হচ্ছেন মেজিস্ট্রেট। একই কাজ করছেন ডাক্তার ও কৃষিবিদরাও। অ্যাডমিন ক্যাডারে ছুটি নেই, ছুটি নিলে না কি ভালো অফিসার হওয়া যায় না। তিনি লিখেছেন ‘একদিন ছুটির জন্য ইউএনওরাও না কি ডিসির কাছে কাচুমাচু করে। ছুটি চাওয়া এক ধরনের পাপ। আপনি কোন অবস্থানে যাবেন তা অনেকটাই বসের ওপর। আর বস কতটা খুশি তার অনেকটাই আপনার তেলের ওপর নির্ভর করে। প্রত্যোকটি ভাষণ, আলোচনা, প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে বসকে তেল দেওয়া লাগে।’ বলা হয়, জুতা সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ, সবকিছুই অ্যাডমিন ক্যাডারদের করা লাগে। তাই সব কাজ ভালো লাগবে না, আবার সব কাজ খারাপও লাগবে না। অনেক কিছুই করার সুযোগ আছে কিন্তু ইনোভেশনের সুযোগ নেই। কাজ কীভাবে হয় সব ২৫০ বছর ধরে ঠিক করা আছে। এটা মেনে নিতে পারলে খারাপ না। সবচেয়ে ভালো দিক হলো- আপনি সব জায়গায় নেতা হবেন, আর সব ভালো কাজের রিকগনিশন পাবে আপনার বস। অ্যাডমিন ক্যাডারে হিপোক্র্যসির প্রয়োজন হয় খুব। তিনি আরও লিখেছেন, ‘এডমিন ক্যাডার স্পেসিফিক ‘বাংলো’ কালচার অর্থাৎ ডিসি স্যারের বাসায় সময় দেওয়া।’ অ্যাডমিন ক্যাডার ঢিলেঢালাভাবে চলবে, যা ইচ্ছে তাই করবে সেটি নয়। সব চাকরির একটি সুসংহত নিয়ম কানুন থাকতে হয় তা না হলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। কিন্তু ব্রিটিশরাজ এই ভারতীয় উপমহাদেশে যে শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল ভিন্ন ভাষাভাষী, ভিন্ন সংস্কৃতি, পরিবেশ ও আবহওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য সেই সিস্টেম তো এতদিনে চলার কথা নয়। কিন্তু তারচেয়েও যেন বেশি মাহাত্ম্য নিয়ে এই ক্যাডার জেকে বসেছে। ফলে দেশের মূল সমস্যা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, কালচার সবকিছু বিসর্জন দিয়ে কৃষিবিদ, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষক সবাই হতে চান অ্যাডমিন ক্যাডার, হতে চান বেনজীর। কিন্তু কেন? কে দেখবে এসব? সবাই যেন হাল ছেড়ে দিয়েছে। কোটি কোটি মানুষে জন্য উৎপাদনমুখী কাজ, সৃষ্টিশীল কাজ, প্রকৃতি শিক্ষা ও জ্ঞান নিয়ে যেখানে এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল সবকিছু বাদ দিয়ে সব শিক্ষিতরা প্রশাসক আর পুলিশ হবেন! এ কী খেলা শুরু হলো দেশে? অতি সম্প্রতি তথ্য ক্যাডারের আরেকজন অফিসার ক্যাডার সার্ভিস ছেড়ে নন-ক্যাডারে (সাব রেজিস্ট্রার পদে জয়েন করেছেন) আর সব পত্রিকার পাতা এই খবরে ছেয়ে গেছে। অনেকেই বিষয়টি নিয়ে অনেক কিছু লিখেছেন। একজন সাবেক সচিব লিখেছেন, ‘সবাই ছেলেটাকে গালমন্দ করছেন। করাটা অযৌক্তিক নয়। ছেলেটি গালমন্দ খাবারই যোগ্য তবে আমার একখান কথা আছে।’ তিনি তথ্য ক্যাডারের এবং প্রশাসন ক্যাডারের অনেক বিষয় তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা বড় পদে যেতে মরিয়া হয়ে উঠি। বড় পদ পেয়েও যাই কিন্তু বড় পদ পাওয়ার দায় শোধ করি না। বড় পদের সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে এবং দায়সারাভাবে দায়িত্ব পালন করে দিন পার করতে চাই। জনশ্রুতি রয়েছে, রেডিও বাংলাদেশের জনবল ব্যবস্থাপনায় মহাগিট্টু লেগে লেজেগোবরে হয়ে আছে। সেখানে পদোন্নতির জটিলতা এতই তীব্র, হতাশ হওয়া ছাড়া ন্যূনতম আশার আলো নেই। জটিলতা দেখার ও দূর করার কেউ নেই। তাই এ ছেলেটির চলে যাওয়াকে কেউ কেউ নীরব প্রতিবাদ হিসেবেও দেখছেন।  এ বিষয়টিও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এ রকম অনেক মন্ত্রণালয়ের অনেক বিভাগেই গিট্টু লেগে থাকে, বছরের পর বছর কেউ সেখানে কিছু করার জন্য এগিয়ে আসেন না। অ্যাডমিন ক্যাডারের লোকজনই সেসব জায়গায় পোস্টিং হয়, দু’একজন গিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। তারা সব গিট্টু খুলে পদোন্নতিসহ অন্যান্য পদ এবং অন্যান্য জায়গা মসৃণ করেন। অর্থাৎ ব্যক্তির কারনেই এ ঘটান ঘটে। তিনি সিএসপিদের প্রশংসা করেছেন কারণ তিনি তাদের অনেককে কাছ থেকে দেখছেন। ‘বর্তমানে যারা কর্মকর্তা তারা কাকাসুমারা, মারকাট করে পদ-পদবী দখলে ব্যস্ত। কেউ কেউ বছর না যেতেই একটার পর একটা বড় মন্ত্রণালয় বাগিয়ে নেন। তাদের ব্রত, কাজ নয়, পদই ধর্ম, পদই জীবন, পদ বাগাও, ভোগ করো, কাজের খেতা কিলাও, কেবল পদের পেছনে দৌড়াও।’  বেনজীর সাহেবরা কী করেন, কেন করেন, কীভাবে করেন এগুলো কী কেউই জানতেন না? ক্ষমতার অপব্যবহার করে সম্পদ বানানোই যে তাদের আদর্শ এটি কী কেউ জানে না? রাষ্ট্রীয় এসব বাহিনী জনগণের কী কাজে লাগে? পঞ্চাশ বছরের অধিককাল হলো দেশ পুরো স্বাধীন হয়েছে কিন্তু এসব রাষ্ট্রীয় বাহিনীর চরিত্রে কী খুব একটা পরিবর্তন হয়েছে বিশেষ করে সাধারন জনগণের সঙ্গে? এরাই আবার শুদ্ধাচার পুরস্কার পান। কারা দেন তাদের এসব পুরস্কার? কিন্তু জাতি এসব কাকে জিজ্ঞেস করবে?  যখন বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা হয়, সভা-সেমিনার হয় অনেকেই বলেন এবং আশা করেন, সরকার এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করবেন যেখানে শিক্ষিত হলে মানুষ এসব আর করবে না, এমন শিক্ষা তারা রাষ্ট্র বা সরকার থেকে আশা করেন। আমি উত্তরে তাদের বলেছি এসব জায়গা থেকে আশা করে কোনো লাভ নেই কারন তাদের এতে কিছু আসে যায় না। তাদের অনুকূল্য ছাড়া বড় বড় পদে বসে কোটি কোটি ডলার কামানো আর বিদেশে পাচার করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আরও স্পষ্ট উদাহরণ চলে এলো। একজন আইনপ্রণেতাকে ভারতে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বিষয় কী? বন্ধুর সাথে হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা। সেই ব্যবসার সামান্য কয়েকটি টাকা নিয়ে বিরোধ, ক’টি টাকার পরিমাণ হচ্ছে পাচশত কোটি, তাই বন্ধুকে হত্যা করা হলো। ঐ বন্ধুরাই আমাদের জন্য, দেশের জন্য আইন তৈরি করেন। অতএব বোঝাই যাচ্ছে...।  ক্যাডেট কলেজ থেকে বোর্ড পরীক্ষায় যারা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় স্থান অধিকার করতো তারা সাধারনত সেনাবাহিনীতে যোগ দিত না তখন আমি ক্যাডেট কলেজ সার্ভিসে ছিলাম। কিছু গল্প শুনতাম যে, বেশি ব্রিলিয়ান্টদের সেনাবাহিনীতে নেয়া হয় না কারণ তারা হয়তো সব কমান্ড ফলো করবেনা। জানিনা কতটা সত্য মিথ্যা। তবে, এটিও হতে পারে যে, দুনিয়া তাদের জন্য খোলা, তারা গোটা পৃথিবীকে সেবা করবে তাদের মেধা ও মনন দ্বারা, তারা নির্দিষ্ট জগতে কেন সীমাবদ্ধ থাকবে? সেনাবাহিনীর চাকচিক্য এবং কিছু সুবিধাপ্রাপ্ত জীবনের মধ্যে তাদের আটকে রাখা ঠিক নয়। সম্ভবত এ কারণেই তাদের প্রতি খুব আগ্রহ দেখানো হতোনা আর তারা তারাও বাহিনীতে যোগ দিতনা। গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে এসব মেধাবীরা, তারা উন্নত বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়সহ বড় বড় গবেষণা প্রতিষ্ঠানে অত্যন্ত সুনামের সাথে, অত্যন্ত ইনোভেটিভ ওয়েতে কাজ করছে, আবিষ্কার করছে। আমি নিজেও উন্নত বিশ্বে এই উদাহরন দেখে এসেছি। সরকারি জবের কিছু ক্যাডারের কিছু বিশেষত্ব থাকবে কিন্তু স্বাধীন দেশে সব কিছুই হবে জনগনের কল্যাণে। তাদের ভয় দেখানোর জন্য, তাদের কাছে দুর্ভেদ্য কিছু প্রমাণ রাখার জন্য আর  ব্রিটিশ আর পাকিস্তানের প্রশাসকদের চরিদ্র প্রদর্শনের মতো যাতে কিছু না হয়। বিশেষত্বে পরিপূর্ন এই জীবন সবার ভাল লাগবেনা, সবার সেখানে হুমড়ি খেয়ে পড়ার কথা নয়। এক ধরনের মাদকতা অনেককে আটকে রাখে যা ক্রিয়েটিভ ও মুক্তমনাদের আকর্ষণ করবে না। তাদের কাছে নতুন কিছু সৃষ্টি শুধু আদেশ পালন করা আর নিরীহ জনগনের ওপর ক্ষমতার লাঠি প্রদর্শন করা কখনও ভাল লাগবেনা আর তাই উপরের উদাহরণ থেকে দেখলাম যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বুয়েটিয়ান যথাক্রমে পুলিশ ও প্রশাসন ক্যাডার ছেড়ে এসেছেন। আর তৃতীয় উদাহরণটি হচ্ছে আন্ত:ক্যাডার বৈষম্য ও ঐ ছেলেটির অসৎ অর্থের প্রতি লোভ বলে সে সাব রেজিষ্ট্রার হয়েছে!  মাছুম বিল্লাহ : শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও গবেষক; সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর-ভাব বাংলাদেশ  
২৯ জুন, ২০২৪

বিসিএস ক্যাডার ছেড়ে সাব-রেজিস্ট্রার হলেন কর্মকর্তা
বিসিএস ক্যাডারের চাকরি ছেড়ে নন-ক্যাডার সাব-রেজিস্ট্রার হলেন আদনান ফেরদৌস নামের এক কর্মকর্তা। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের এ-সংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিসিএস তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা বাংলাদেশ বেতারের গবেষণা ও গ্রহণ কেন্দ্রের সহকারী বেতার প্রকৌশলী আদনান ফেরদৌস ৪১তম বিসিএসের মাধ্যমে নন-ক্যাডার সাব-রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ পেয়েছেন। সাব-রেজিস্ট্রার পদে যোগদানের জন্য আদনান ফেরদৌসের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ৫ জুন বর্তমান পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো। বিসিএস তথ্য ক্যাডারের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে বলেন, বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে বেতারে যোগ দিয়ে ১০ বছরেও পদোন্নতি হয় না। এতে আর্থিক ক্ষতির চেয়েও মর্যাদা সংকটে বেশি ভুগতে হয়। এ কারণে অনেক কর্মকর্তা তথ্য ক্যাডার ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন। সরকার ক্যাডার বৈষম্য কমানোর উদ্যোগ না নিলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আরও বাড়বে।
১৫ জুন, ২০২৪

শিক্ষা ক্যাডার নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত
বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রোববার শিক্ষা ক্যাডারের সবচেয়ে বড় সংগঠনের নেতৃত্ব বাচাইয়ে ভোট দিয়েছেন দেশের শিক্ষা প্রশাসন ও বিভিন্ন সরকারি কলেজে কর্মরত ১৩ হাজারের বেশি শিক্ষক-কর্মকর্তা। সারা দেশে ২১৪ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শুরু হয় সকাল ৯টায়, চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এদিকে অনিয়মের অভিযোগে একটি কেন্দ্রের ভোট বাতিল করা হয়েছে। অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, সমিতির এ নির্বাচনে ৯৫ পদে ২৩২ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মোট ভোটার ১৩ হাজার ৫৯৬ জন। সারা দেশের ১১টি সাংগঠনিক শিক্ষা বিভাগে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাসহ সরকারি কলেজ শিক্ষক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষা বোর্ড, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম), শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ (টিটি কলেজ), জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবং শিক্ষাসংশ্লিষ্ট প্রকল্পে কর্মরত ক্যাডার কর্মকর্তারা এ নির্বাচনে ভোট দেন। নির্বাচনে তিনটি প্যানেল ও দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে ‘ক’ প্যানেলের নেতৃত্বে রয়েছেন রুহুল কাদির-হুমায়রা-কামাল। ‘খ’ প্যানেলের নেতৃত্বে রয়েছেন মামুন-জিয়া-নাসির। আর ‘গ’ প্যানেলে রয়েছেন শাহেদ-তানভীর-মোস্তাফিজ। প্রার্থীদের ইশতেহারের অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন, সব অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষকে প্রাধিকারের ভিত্তিতে গাড়ি দেওয়া, অধিদপ্তর, দপ্তর ও কলেজগুলোতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় গ্রেডের পদ সৃষ্টি, সব কলেজে অতিরিক্ত একজন উপাধ্যক্ষের পদ সৃষ্টি করা। এ ছাড়া রয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই), মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর, নায়েম বিএমটিটিআইর বিতর্কিত নিয়োগ বিধিমালা বাতিলের চেষ্টা অব্যাহত রাখা, সরকারি কলেজে ডরমিটরি স্থাপন, মাধ্যমিক ও কলেজের প্রশাসনিক দপ্তর স্থাপন এবং বিসিএস সাধারণ শিক্ষা একাডেমি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ, অর্জিত ছুটি প্রদান নিশ্চিত করা এবং আনুপাতিক হারে প্রথম ও দ্বিতীয় গ্রেডসহ প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্টি, চাকরির পাঁচ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। এক কেন্দ্রের ভোট বাতিল: নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে ফেনীর ফুলগাজী সরকারি কলেজ কেন্দ্রের ভোট বাতিল করা হয়েছে। জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক সাইফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, ফুলগাজী সরকারি কলেজ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের শেষ সময়সীমার আগেই ফল প্রকাশ করায় ওই কেন্দ্রের ভোট বাতিল করা হয়েছে। সোমবার বেসরকারিভাবে এবং মঙ্গলবার সরকারিভাবে নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হবে।
১০ জুন, ২০২৪

শিক্ষা ক্যাডার নির্বাচনে এক কেন্দ্রের ভোট বাতিল
বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (৯ জুন) শিক্ষা ক্যাডারের সবচেয়ে বড় সংগঠনের নেতৃত্বে বাচাইয়ে ভোট দিয়েছেন দেশের শিক্ষা প্রশাসন ও বিভিন্ন সরকারি কলেজে কর্মরত ১৩ হাজারের বেশি শিক্ষক-কর্মকর্তা। তবে নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে ফেনীর ফুলগাজী সরকারি কলেজ কেন্দ্রের ভোট বাতিল করা হয়েছে। বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক সাইফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘ভোটগ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের করনীয়’-সংক্রান্ত নির্দেশনার ক্রমিক ১৬ এর (ঙ) অনুচ্ছেদে সুস্পষ্ট নির্দেশনা ছিল যে, ‘শতভাগ ভোট প্রদান শেষ হয়ে গেলেও বিকাল ৪টার পূর্বে ভোট গণনা করা যাবে না’। কিন্তু সরকারি কলেজ এ নির্দেশনা অমান্য করে নির্ধারিত সময়ের পূর্বে ভোট গণনার ফলাফল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করায় ওই ভোটকেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করা হলো।’ জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক সাইফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, কোনো ধরনের নেতিবাচক ঘটনা ছাড়াই সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে ফেনীর ফুলগাজী সরকারি কলেজ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের শেষ সময়সীমার আগেই ফল প্রকাশ করায় ওই কেন্দ্রের ভোট বাতিল করা হয়েছে।
০৯ জুন, ২০২৪

শিক্ষা ক্যাডার নির্বাচনে প্রাধান্য পাবে ‘ক্যাডার বৈষম্য নিরসন’
আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন, পদোন্নতি, অধ্যাপক পদ ৩য় গ্রেডে উন্নীতকরণ, অর্জিত ছুটি প্রদান এবং আনুপাতিক হারে ১ম ও ২য় গ্রেডসহ প্রয়োজনীয় পদসৃজন, চাকরির ৫ বছর পূর্তিতে ৬ষ্ঠ গ্রেড প্রদানসহ বিভিন্ন দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা। দাবি আদায়ে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সর্বশেষ কমিটি বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও সেটি আলোর মুখ দেখেনি। যে কারণে শিক্ষা প্রশাসনের আসন্ন হাইভোল্টেজ নির্বাচনে ক্যাডার বৈষম্য নিরসনসহ অন্য বিষয়গুলো প্রাধান্য পাচ্ছে। ভোটাররাও বলছেন, ক্যাডার বৈষম্য নিরসন, পদোন্নতি ও নতুন পদ সৃষ্টির মতো গুরুত্ব বিষয়গুলোকে যারা বেশি গুরুত্ব দিবেন, তাদেরই নেতা হিসেবে বেছে নিবেন তারা। জানা গেছে, শিক্ষা ক্যাডারদের সংগঠন বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন হবে আগামী রোববার (৯ জুন)। সারা দেশে ২১৪ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে। মোট ভোটার ১৩ হাজার ৫৯৬ জন। সারা দেশের ১১টি সাংগঠনিক শিক্ষা বিভাগে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাসহ সরকারি কলেজ শিক্ষক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), শিক্ষাবোর্ড, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম), শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ (টিটি কলেজ), জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে কর্মরত ক্যাডার কর্মকর্তারা এ নির্বাচনে ভোট দিবেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে তিনটি প্যানেল ও দুইজন স্বতন্ত্র প্রার্থী অংশগ্রহণ করছে। এর মধ্যে ‘ক’ নামক প্যানেলের নেতৃত্বে রয়েছে রুহুল কাদির-হুমায়রা-কামাল। ‘খ’ নামক প্যানেলের নেতৃত্বে রয়েছেন মামুন-জিয়া-নাসির। ‘মূলধারা ঐক্য প্যানেল’ নামে পরিচিত এই প্যানেল। ‘গ’ নামক প্যানেলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন শাহেদ-তানভীর-মোস্তাফিজ। শুরু থেকেই গ প্যানেলের শীর্ষ পদের প্রার্থীরা অন্যদের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। তবে নির্বাচনের তিন দিন আগে গত বুধবার এই প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী মাউশির কলেজ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরীকে সরকারি বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ পদে বদলি করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষাভবন হিসেবে পরিচিত মাউশির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদের ব্যক্তিকে বদলি করায় নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক প্যানেল থেকে গত নির্বাচনেও অধিকসংখ্যক প্রার্থী বিজয়ী হয়েছিল। তাদের নেতৃত্বে ছিল সর্বশেষ কমিটির সাধারণ সম্পাদক শওকত হোসাইন মোল্লা। তবে এবার তিনি প্যানেলের সঙ্গে নেই। স্বতন্ত্র হিসেবে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়াও নিজেদের মধ্যে বিভক্তির কারণে এবার এই প্যানেলের অবস্থা বেশ নাজুক। শিক্ষা প্রশাসনের দপ্তরগুলোতে গিয়ে প্রচারণার চেয়ে ফেসবুকে প্রচারণায় তারা বেশি সক্রিয়। এছাড়া গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৯৫টি পদ থাকলেও তারা প্রার্থী দিয়েছেন ৪৯টি পদে। আবার অভিযোগ রয়েছে- এই প্যানেলের অনেকেই আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এসব কারণে আঞ্চলিক কিছু পদে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও সর্বোচ্চ পদগুলোতে সম্ভাবনা কম- এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ক প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী ড. আজম রুহুল কাদীর চাঁপাইনবাবগঞ্জের নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। জানতে চাইলে তিনি কালবেলাকে বলেন, আমরা যেসব জায়গায় যাচ্ছি সেখানেই প্রচুর সাড়া পাচ্ছি। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট প্যানেল চাপ প্রয়োগ করে প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে। মূলত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ভয়-ভীতি দেখানোর কারণে পূর্ণ প্যানেল দিতে পারিনি। প্যানেলের প্রার্থীদের ভিন্ন রাজনীতির বিষয়টি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মত তার। তিনি বলেন, আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এটি অব্যাহত থাকবে। কিন্তু যাদের চেয়ারের মায়া আছে, তারা এটি করবে না। এই প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী হুমায়রা আক্তারের বাড়ি গোপালগঞ্জে। ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে। তবে ক প্যানেলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় তার ভোটব্যাংক কমতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে হুমায়রা আক্তার কালবেলাকে বলেন, আগের কমিটির নেতারা ক্যাডার সার্ভিসের সমস্যাগুলোর সমাধান করেন নি। সে কারণে ক্ষোভ থেকে নিজেই প্রার্থী হয়েছি। প্যানেলের বাকিরাও বঞ্চনা ও ক্ষোভ থেকে প্রার্থী হয়েছে। আমরা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। বাকি বিবেচনা ভোটারদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খ প্যানেলের কয়েকজন প্রার্থী বিগত সময়ে বিএনপির প্যানেল বলে পরিচিত প্যানেল থেকে নির্বাচন করেছিলেন। কিন্তু এগুলোকে অপপ্রচার বলছেন প্যানেলের নেতারা। এই প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী অধ্যাপক মামুন উল হক কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এক সময় নায়েমে চাকরি করার সুবাদে পরিচিতিও রয়েছে বেশ। তাছাড়া তিনি সর্বশেষ কমিটির সহসভাপতিও ছিলেন। এসব কারণে গ প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী শাহেদুল খবির চৌধুরীর সঙ্গে তার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে। এছাড়া, সাধারণ সম্পাদক পদে জিয়া আরেফিন আজাদও পরিচিতির কারণে মাঠ কাঁপাবেন। তবে এই প্যানেল ৯৫টি পদের মধ্যে নির্বাহী সদস্যের কয়েকটি পদে প্রার্থী দিতে পারেনি। এই প্যানেল থেকে আঞ্চলিক অনেক পদে জয়লাভ করার সম্ভাবনা রয়েছে। জানতে চাইলে অধ্যাপক মামুন উল হক কালবেলাকে বলেন, প্রচারণার সময় অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি। ভোটারদের ওপর আস্থা রাখতে চাই। তিনি বলেন, সাবেক দুইজন শিক্ষামন্ত্রী এই ক্যাডার সার্ভিসকে শিক্ষা ভবন ও বাহির- এই দুই ভাগে ভাগ করে ফেলেছিলেন। সে কারণে শিক্ষাভবন কেন্দ্রিক ক্ষমতা চলে যাওয়ায় বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছিল। এর প্রতিকার চাই। প্যানেলের প্রার্থীর ভিন্ন রাজনীতির বিষয়ে তিনি বলেন, আমার প্যানেলে স্বাধীনতার পক্ষের ও দুর্নীতিগ্রস্থ নয় এমন ব্যক্তিদের স্থান দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে, তারা ক্যাডার সার্ভিসের রুলস মানছেন না। আমাদের নয় বরং বাকি প্যানেলগুলোতে এমন প্রার্থী পাওয়া যাবে। গ প্যানেলই একমাত্র পূর্ণ প্যানেলে প্রার্থী দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এবার এই প্যানেল থেকে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী বিজয়ী হবেন। প্যানেলের সভাপতি পদপ্রার্থী অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী অ্যাসোসিয়েশনের সর্বশেষ কমিটির সভাপতি। এছাড়া মাউশির পরিচালক হওয়ায় তার পরিচিতিও বেশ। তাই তিনি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। জানতে চাইলে তিনি কালবেলাকে বলেন, বেশ কয়েকজন তরুণকে প্যানেলে রেখেছি। আশা করছি তারুণ্যের সহযোগিতা পাব। আমরা পূর্ণ প্যানেলে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। তিনি বলেন, আমাদের প্যানেলে যারা আছেন, তারা প্রগতিশীল রাজনীতির সমর্থক। আমাদের সরকারের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ রয়েছে, অন্য প্যানেলগুলোর সেটি নেই। আশা করি ভোটাররা এসব বিষয় বিবেচনা করবেন। এই প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মাউশির সহকারী পরিচালক তানভীর হাসান। তরুণ বেশিরভাগ সদস্যের ভোট তানভীর হাসানের পক্ষে। যদিও সমালোচকরা বলছেন, ক্যাডার সার্ভিসে অনেক জুনিয়র হওয়ায় অনেক কাজই তিনি ঠিকমতো করতে পারবেন না। তবে এসব সমালোচনা জয়ের পথে বাধা হবে না বলে বিশ্বাস তানভীর হাসানের। তিনি কালবেলাকে বলেন, ১৪ থেকে ৪২তম ব্যাচের ক্যাডাররা যোগ্যতায় কেউ কারও থেকে কম নয়। গত ১৫ বছর ধরে চাকরি করছি। বিশেষ করে ৪ বছর ধরে আমি মাউশির কলেজ শাখায় কর্মরত রয়েছে। আমি মনে করি কলেজের ক্যাডার সার্ভিসের যেসব সমস্যা রয়েছে এবং সেগুলোর সমাধান কীভাবে সম্ভব- এটি আমার পদে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাদের চেয়ে বেশি ভালো জানি। তাছাড়া এটি একটি টিমওয়ার্ক। সবার সহযোগিতায় ক্যাডার সার্ভিসের সমস্যাগুলো দূর করা সম্ভব হবে। এই প্যানেলের কোষাধ্যক্ষ পদে নির্বাচন করছেন এনসিটিবির উপসচিব (কমন) সৈয়দ মোস্তাফিজুর রহমান লিখন। চব্বিশ ব্যাচের দুইবারের নির্বাচিত সভাপতি হওয়ায় তিনিও বেশ জনপ্রিয়। অঘটন না ঘটলে তিনিই অর্থ সম্পাদক হবেন-বলছেন সংশ্লিষ্টরা। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে শওকত হোসেন মোল্লা বেশ শক্তিশালী প্রার্থী। গতবারের মতো এবার তারুণ্য তার পাশে না থাকলেও নিজ ব্যাচ ও জ্যেষ্ঠদের ভোট পাবেন। এ নির্বাচনে তানভীর হাসানের সাথে তাকেই প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছেন অনেকেই। শওকত হোসেন মোল্লা কালবেলাকে বলেন, নো বিসিএস, নো ক্যাডার আন্দোলনের কারণে শিক্ষা ক্যাডারদের মধ্যে আমার জনপ্রিয়তা রয়েছে। তাই জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। তিনি বলেন, শিক্ষা ক্যাডারদের মধ্যে এটা স্পষ্ট হয়েছে, অফিসের কর্মকর্তাদের দিয়ে সমিতি চালানো কষ্টকর। সে কারণে আশা করছি এবারও বিগত নির্বাচনের মতো সবাই আমাকে বেছে নিবে।
০৭ জুন, ২০২৪

শিক্ষা ক্যাডার নির্বাচনের তিন দিন আগে মাউশি পরিচালককে বদলি
শিক্ষা ক্যাডারদের সংগঠন বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন আগামী ৯ জুন। কিন্তু এর তিনদিন আগে গতকাল নির্বাচনে অংশ নেওয়া একটি প্যানেলের শক্তিশালী প্রার্থীকে বদলি করা হয়েছে। তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) দ্বিতীয় শীর্ষ ব্যক্তি কলেজ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী। বুধবার (৫ জুন) এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাকে রাজধানীর বিজ্ঞান কলেজে বদলি করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার রাতে অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরীকে বদলি করে অফিস আদেশ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে স্বাক্ষর করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (সরকারি কলেজ-২) চৌধুরী সামিয়া ইয়াসমীন। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বৃহস্পতিবার (৬ জুন) সেটি প্রকাশ করা হয়েছে। অফিস আদেশ থেকে জানা যায়, শাহেদুল খবির চৌধুরীকে ঢাকার সরকারি বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এত দিন তিনি মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। আর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ বি এম রেজাউল করীমকে মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শাহেদুল খবির বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান সভাপতি। আগামী ৯ জুন অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনেও তিনি ফের সভাপতি প্রার্থী হয়েছেন। গ প্যানেল থেকে নির্বাচন করবেন তিনি। কিন্তু নির্বাচনের মাত্র তিনদিন আগে তাকে বদলি করায় সবাই এটি নিয়ে কানাঘুষা করছেন। তবে ঠিক কী কারণে তাকে বদলি করা হয়েছে, এ ব্যাপারে কেউ আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে রাজি হননি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনের তিন দিন আগে এক প্যানেলের সভাপতি প্রার্থীকে বদলি করা শিক্ষা প্রশাসনের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। তারা অভিযোগ করেন, এ ঘটনায় শিক্ষা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন ব্যক্তি জড়িত। মূলত অন্য একটি বিশেষ প্যানেলকে ‘বাড়তি’ সুবিধা দেওয়ার জন্যই তড়িঘড়ি করে এমন অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। এদিকে মাউশি সূত্র জানায়, নির্বাচন ছাড়াও মাউশির মহাপরিচালক পদের প্রার্থী হিসেবে শাহেদুল খবির চৌধুরীর নাম আলোচিত হওয়া, বিভিন্ন সময়ে শিক্ষা ক্যাডারের দাবি-দাওয়া আদায়ে তার আপসহীন ভূমিকাও অনেকে ভালোভাবে নেননি। এর প্রভাবও রয়েছে বদলির ক্ষেত্রে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, আসন্ন শিক্ষা ক্যাডারদের নির্বাচনে গ প্যানেলের জোয়ার শুরু হওয়ায় অনেকেই ভীত ছিলেন। শিক্ষা ক্যাডারদের বিভিন্ন সমস্যায় পাশে ছিলাম বা সামনেও থাকব, এটা অনেকেরই পছন্দ নয়। তারাই প্রভাব বিস্তার করে এই বদলির ব্যবস্থা করে থাকতে পারেন। তবে আসন্ন নির্বাচনে এই বদলি কোনো ফেলবে না। কারণ আমরা দমে যাচ্ছি না। মাউশির মহাপরিচালক হওয়ার আলোচনায় থাকায় কী এমন বদলি হয়ে থাকতে পারে কি না- জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। প্রসঙ্গত, গত ২৫ এপ্রিল মাউশির মহাপরিচালক হিসেবে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। এর আগেও তিনি প্রায় দুই বছর মাউশির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।  এ বিষয়ে মাউশির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, মূলত শিক্ষা প্রশাসনের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন ব্যক্তি ও সাবেক কয়েকজন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তার ‘বিশেষ আগ্রহে’ নির্বাচনের তিন দিন আগে এমন বদলির ঘটনা ঘটেছে। মূলত যারাই শিক্ষা ক্যাডারদের দাবির বিষয়ে আওয়াজ তুলবে, তাদেরই এভাবে বদলি করে দেওয়া হবে।
০৬ জুন, ২০২৪

মিল্টন সমাদ্দারের ক্যাডার নাজমুল কারাগারে
চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারের ঘোষিত ক্যাডার নাজমুল হোসেনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ুন কবিরের আদালত এ আদেশ দেন। রাজধানীর মিরপুর থানার মামলায় এদিন তাকে আদালতে হাজির করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক সিকদার মহিতুল আলম তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে রোববার তাকে মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০২১ সালের ৩ মার্চ রাতে বাদী মতিউর রহমান মল্লিক বান্ধবীর মাধ্যমে সংবাদ পান মিরপুর-১ দক্ষিণ বিশিলের রাস্তায় অন্ধ বৃদ্ধ লোক পড়ে আছেন। বাদী বৃদ্ধ মোতালেবের বিষয়ে দারুস সালাম থানায় জিডি করেন ও দেখভালের জন্য মিল্টন সমাদ্দারের বৃদ্ধাশ্রমে হস্তান্তর করেন। পরে বাদী জানতে পারেন মোতালেবকে তার স্বজনদের কাছে পাঠানো হয়েছে। পরে বাদী ওই বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে মিল্টন সমাদ্দারের কাছে মোতালেবের বিষয়ে জানতে চাইলে নাজমুলসহ অজ্ঞাত পরিচয়ের চার থেকে পাঁচজন লাঠি ও রড দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে তার মাথা ও শরীরে আঘাত করে গুরুতর জখম করে। নাজমুল বাদীর কাছ থেকে থানায় লিপিবদ্ধ ও চাইল্ড কেয়ারে হস্তান্তরের কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয়। একই সঙ্গে বাদীর মোবাইলে ধারণ করা মারধরের ভিডিও ডিলিট করে ও জোরপূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়। এ ঘটনায় ২ মে মতিউর রহমান মল্লিক মিরপুর থানায় মামলা করেন।
২৮ মে, ২০২৪

মিল্টন সমাদ্দারের ঘোষিত ক্যাডার নাজমুল কারাগারে
‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারের ঘোষিত ক্যাডার মো. নাজমুল হোসেনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। সোমবার (২৭ মে) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ুন কবিরের আদালত জামিন নামঞ্জুর করে এ আদেশ দেন। এদিন রাজধানীর মিরপুর মডেল থানার এক মামলায় তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক সিকদার মহিতুল আলম তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। কারাগারে আটক রাখার আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘মিল্টনের ঘোষিত ক্যাডার আসামি নাজমুল। সে অন্য এক আসামি মিল্টনের গাড়ি চালনাসহ বিভিন্ন লোকের সঙ্গে জবরদস্তি মারামারি করে ত্রাস সৃষ্টি করে থাকে বলে প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া গেছে। তদন্তে এ মামলার ঘটনায় জড়িত থাকার তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত অব্যাহত আছে। এ কাজ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত তাকে জেলহাজতে আটক রাখা প্রয়োজন। আসামি জামিনে মুক্তি পাইলে চিরতরে পলাতক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং অনান্য অজ্ঞাতনামা আসামিদের গ্রেপ্তারে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে।’ এদিকে আসামিপক্ষ জামিন চেয়ে আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে রোববার (২৬ মে) রাত ১১টার দিকে মিরপুর থানা এলাকা থেকে তাকে করা হয়। মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০২১ সালের ৩ মার্চ রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাদী মতিউর রহমান মল্লিক তার বান্ধবী আসমা আক্তার আয়শার মাধ্যমে সংবাদ পান যে, মিরপুর-১ দক্ষিণ বিছিলের রাস্তায় অন্ধ বৃদ্ধ লোক পড়ে আছে। বাদী ওই বৃদ্ধ লোকটিকে অসুস্থ অবস্থায় পেয়ে দারুস সালাম থানায় একটি জিডি করেন। অসুস্থ বৃদ্ধ মোতালেবকে সুচিকিৎসা ও দেখভাল করার জন্য আসামি মিল্টন সমাদ্দারের চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইচ কেয়ার নামক চিকিৎসা ও সেবা কেন্দ্রে ওইদিন রাতে হস্তান্তর করেন। পরে বাদী ভিকটিম মোতালেবকে তার আত্মীয়স্বজনের কাছে দিয়ে দিয়েছে বলে জানতে পারেন। এ বিষয়ে চাইল্ড  অ্যান্ড ওল্ড এইচ কেয়ার সেন্টারে উপস্থিত হয়ে মিল্টন সমাদ্দারের কাছে ভিকটিম মোতালেবের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আসামি নাজমুলসহ ৪-৫ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি লাঠি ও লোহার রড নিয়ে উত্তেজিত হয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করে গুরুতর জখম করে। তখন নাজমুল জোরপূর্বক বাদীর কাছ থেকে দারুস সালাম থানায় লিপিবদ্ধকৃত ও চাইল্ড কেয়ারে হস্তান্তরের কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয়। পরে বাদীর মোবাইলে ধারণ করা মারামারির ভিডিও ডিলেট করে দেয় এবং জোরপূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়।
২৭ মে, ২০২৪

বিএনপি ক্যাডার থেকে আ.লীগের বড় পদে
কাশেদুল হক বাবর ছিলেন এক সময়ের বিএনপির দুর্ধর্ষ ক্যাডার। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর হন রাজাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। দলীয় মনোনয়নে রাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানও হয়েছিলেন। গত ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করায় ব্যাপক সমালোচনা ও ক্ষোভের মুখে পড়েছেন বাবর। বিএনপির আমলে নানা সময়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্যাতন চালানোর বিষয়টিও সামনে এসেছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাশেদুল হক বাবর ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতি করলেও ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তিনি দলটিতে যোগ দেন। বাবর বিএনপিতে যোগদানের পরই তার নির্দেশে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত রাজাপুর ও সিন্দুরপুরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর চালানো হয় নির্যাতনের স্টিমরোলার। ঘরবাড়ি ছাড়তে হয় অনেক নেতাকর্মীকে। বাবরের নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তৎকালীন রাজাপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের ক্রীড়া ও সাহিত্যবিষয়ক সম্পাদক, বর্তমান উপজেলা যুবলীগের সহ-সম্পাদক মো. কামাল হোসেন। কালবেলাকে তিনি বলেন, ‘আমি রাজাপুর বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদে বসে ছিলাম। তখন বাবরের নেতৃত্বে বিএনপির কিছু নেতাকর্মী আমার ওপর হামলা চালায় এবং বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ ভাঙচুর করে। আমি কোনোমতে বেঁচে ফিরি। পরে বাবর আমার বাড়িতে এসে আমাকে বাড়িঘর ছাড়ার হুমকি দিয়ে যায়। তারপর আমার পরিবার রাতের আঁধারে আমাকে অন্যত্র পাঠিয়ে দেয়। দুঃখের বিষয় হলো যার হাতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের রক্ত লেগে আছে, সেই বাবর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দলের পদ ভাগিয়ে নিল এবং নৌকা নিয়ে চেয়ারম্যানও হলো।’ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বাবরের হাতে আরও নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন মুন্সী নুরের জামান, লোকমান, শেখ আহমেদ, কুতুব উদ্দিন, বেলাল, শাহ জালাল, নুর উদ্দিন, নুর আলম, জাহাঙ্গীর, মিয়া, হুমায়ুন, মান্নান, জাহের, মহিউদ্দিন ও প্রয়াত আহছান উল্যাহ। তারা সবাই স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বাবরের হাতে নির্যাতিত হন আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মন্নান (বর্তমানে কুয়েত প্রবাসী)। তিনি বলেন, ‘বিএনপি আমলে একদিন আমি দোকানে চা খাচ্ছিলাম। তখন বাবরের নেতৃত্বে বিএনপির নেতাকর্মীরা অস্ত্র নিয়ে এসে আমাকে মারধর করে এবং গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বলে।’ আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর (বর্তমান সৌদি প্রবাসী) বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে সমর্থন করার কারণে বিএনপি আমলে বাবরের নেতৃত্ব বিএনপির কিছু নেতাকর্মী আমার চায়ের দোকানে এসে মাঘ মাসের শীতে শত শত মানুষের সামনে আমাকে তিন ঘণ্টা গলা সমান পানিতে দাঁড় করে রেখেছিল। পরে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।’ আওয়ামী লীগ সমর্থক বেলাল হোসেন (বর্তমানে সৌদি প্রবাসী) বলেন, ‘বাবর আমাকে এমন নির্মমভাবে মেরেছে তা কখনো ভুলতে পারব না। আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে আমার বাবাকেও মারধর করে বাবর। সেই মাইরের যন্ত্রণা নিয়ে বাবা কবরে চলে গেছেন। আমাকে এখনো মাসে মাসে হাজার হাজার টাকার ওষুধ সেবন করতে হয়।’ নুর উদ্দীন (বর্তমানে সৌদি প্রবাসী) বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ সমর্থন করি, শুধু এ অপরাধে আমাকে বাবর ধরে এনে প্রচণ্ড মারধর শুরু করে। আমার চিৎকারে একজন বয়স্ক নারী ঝাঁপিয়ে পড়ে আমার প্রাণ রক্ষা করেন।’ এতদিন বাবরের অতীতের অত্যাচার-নির্যাতন নিয়ে ভুক্তভোগীরা ভয়ে মুখ খোলেননি। কিন্তু ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিয়ে কটূক্তি করার পর আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্যরা তার অতীতের লোমহর্ষক কাহিনি সামনে এনেছেন। তারা মনে করেন বাবর কখনোই মুজিবের আদর্শ লালন করে আওয়ামী লীগ করেনি। সে ক্ষমতা ভোগদখলের জন্যই আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে। এখন দল তাকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন না দেওয়ায় সে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করেছে। যে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করতে পারে সে কখনোই আওয়ামী লীগের সমর্থক হতে পারে না। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তিকারী বাবরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তারা। জানতে চাইলে কাশেদুল হক বাবর বলেন, ‘আমরা পারিবারিকভাবেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে আসছি। আমি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকেই আজ এ পর্যায়ে এসেছি। কখনোই বিএনপিতে যোগদান করিনি। এটি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর আমি দেশের বাইরে চলে যাই। বিএনপিতে যোগ দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। সব মিথ্যা ও বানোয়াট।’ তবে রাজাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন কালবেলাকে বলেন, ‘বাবর ২০০১ সালে বিএনপিতে যোগ দেন এটা শতভাগ সত্য। তিনি বিএনপিতে যোগদানের পর অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন।’
২২ এপ্রিল, ২০২৪

শিবির ক্যাডার জামাই কাশেম, বাইট্টা ইউসুফের ফাঁসি
চট্টগ্রামের আলোচিত ঘটনা অধ্যক্ষ গোপালকৃষ্ণ মুহুরী খুন। দুর্ধর্ষ ক্যাডার গিট্টু নাছিরের সঙ্গী হয়ে এই খুনে অংশ নেন আরেক শিবির ক্যাডার ছোট সাইফুল। পরে সেই গিট্টু নাছিরের হাতেই ভাইবোনসহ খুন হন সাইফুল। বাঁচতে পারেননি গিট্টু নাছিরও। এবার সাইফুলসহ ৩ খুনে ফাঁসিতে ঝুলতে হবে শিবিরের দুই ক্যাডারকে। গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. কামাল হোসেন শিকদার দুজনের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করেন আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর এমএ ফয়েজ। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন আবুল কাশেম ওরফে জামাই কাশেম ও ইউসুফ ওরফে বাইট্যা ইউসুফ। ৭০ বছর বয়সী দুজনের বাড়ি নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার বালুচরা এলাকায়। রায় ঘোষণার সময় তারা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবু ঈসা বলেন, আসামিদের দণ্ডবিধির ৩০২/১১৪/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্তক্রমে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড এবং প্রত্যেককে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ২০০৪ সালে ৩৬ শতক জমিকে কেন্দ্র করে একসঙ্গে সাইফুল ও তার ভাইবোনসহ তিনজনকে হত্যা করেন গিট্টু নাছির। এক বছর পর র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন সেই গিট্টু। হত্যার ২০ বছর পরে রায় দিলেন আদালত। অনুসন্ধানে ও সূত্রে জানা যায়, মূলত নগরের বায়েজিদ এলাকার গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি, অস্ত্র ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে ছোট সাইফুল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল গিট্টু নাসিরের। পরে গিট্টুর গুলিতেই নিহত হন ভাইবোনসহ ছোট সাইফুল। আদালত সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ থানার দক্ষিণ পাহাড়তলী মৌজার ৩৬ শতক সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে আবুল কাশেম ওরফে জামাই কাশেম এবং ইউসুফ ওরফে বাইট্টা ইউসুফের সঙ্গে সাইফুল ইসলাম এবং তার ভাইবোনদের বিরোধ চলে আসছিল। ২০০৪ সালের ২৯ জুন রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাইফুলের বাড়িতে দেয়াল টপকিয়ে ঢুকে পড়েন শিবিরের তৎকালীন দুর্ধর্ষ ক্যাডার গিট্টু নাছির, ফয়েজ মুন্না, আজরাইল দেলোয়ার, আবুল কাশেম এবং বাইট্টা ইউসুফ। তাদের গুলিতে নির্মমভাবে খুন হন সাইফুল আলম, বড় ভাই মো. আলমগীর ও বোন মনোয়ারা বেগম। এ ঘটনায় সাইফুলের স্ত্রী আয়েশা আক্তার শিল্পী বায়েজিদ বোস্তামী থানায় ইউসুফ, কাশেম, গিট্টু নাছির ও ফয়েজ মুন্নাকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এজাহারে আজরাইল দেলোয়ারের নাম ছিল না। গিট্টু নাছিরকে ক্রসফায়ার: ২০০৫ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি এজাহারভুক্ত চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন বায়েজিদ বোস্তামী থানার তৎকালীন ওসি আমিনুল ইসলাম। এর মধ্যে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন আসামি গিট্টু নাছির ও ফয়েজ মুন্না। ২০০৭ সালের ১৬ জানুয়ারি তৎকালীন চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামলাটি বিচার নিষ্পত্তির জন্য মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠালে আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নেন আদালত। ২০১৭ সালের ৫ জুলাই গিট্টু নাছির ও ফয়েজ মুন্নাকে মামলা থেকে দায়মুক্তি দেওয়া হয় এবং ইউসুফ ও কাশেমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। মামলায় ১৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। জানা যায়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে আসামি কাশেম নিজেকে জালালাবাদ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয় দিয়ে মামলাটি রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহারে ২০১০ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এতে সুপারিশ করেন মরহুম আওয়ামী লীগের নেতা ইনামুল হক দানু। ওই বছর রাষ্ট্রপক্ষের কাছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মামলা বাতিল করতে বলা হয়। ২০১৩ সালে মামলা বাতিলে আদালতে দরখাস্ত দেওয়া হয়। এদিকে রায়ের পর ইউসুফের ছেলে মো. পারভেজ বলেন, আমার বাবা নির্দোষ।
১৯ এপ্রিল, ২০২৪
X