কূটনৈতিক সম্পর্ক বাড়াতে তৎপর বিএনপি
সরকারবিরোধী আন্দোলন সফল করতে সাংগঠনিক পুনর্গঠন ও রাজপথের কর্মসূচির পাশাপাশি কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নেও জোর দিচ্ছে বিএনপি। সেজন্য আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বাড়াতে সাংগঠনিক পদক্ষেপ নিচ্ছে দলটির হাইকমান্ড। এ ক্ষেত্রে নানা বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা বিশ্ব এবং ভারত ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে দলের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি ঢেলে সাজানো হচ্ছে। অভিজ্ঞ নেতাদের মূল দায়িত্বে রেখে তাদের সহযোগী হিসেবে তরুণদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। সেইসঙ্গে এবার কমিটির নেতাদের অঞ্চলভিত্তিক দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হবে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। জানা গেছে, বিএনপির নবগঠিত ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি গত রোববার ভার্চুয়াল মাধ্যমে প্রথম বৈঠক করেছে। এ সময় কমিটির পক্ষ থেকে দলের হাইকমান্ডকে ক্ষমতাধর দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পরামর্শ দেওয়া হয়। এদিকে, গত ১৫ জুন গঠিত দলের ‘চেয়ারপারসনস ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটিতে (সিএফএসি) আরও ১৭ জনকে বিশেষ সহকারী (স্পেশাল অ্যাসিস্ট্যান্ট) হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে স্পেশাল অ্যাসিস্ট্যান্ট টু দ্য চেয়ারপারসনস ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য সংখ্যা ৩৫ জনে দাঁড়িয়েছে। প্রথমে গঠিত ১১ সদস্যের অ্যাডভাইজরি কমিটির মধ্যে তিনজনকে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে পদমর্যাদা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে যথাযথ ভূমিকা পালনে ব্যর্থতার দায়ে আগের কমিটির কয়েকজনকে এবার বাদ দেওয়া হয়েছে। বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতার সন্তানকে নতুন কমিটিতে যুক্ত করা হয়েছে। বিদেশে পড়াশোনা কিংবা ব্যবসায়িক কারণে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক রয়েছে। যদিও বৈদেশিক যোগাযোগবিষয়ক কমিটিতে কয়েকজনকে অন্তর্ভুক্ত করায় দলের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও দেখা গেছে। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘দলের জন্য যাকে যেখানে দায়িত্ব দিলে ভালো হবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাকে সেখানেই রাখছেন। যাকে বলা হয় ‘রাইট ম্যান ইন দ্য রাইট প্যালেস’। আমি মনে করি, নতুন যারা দায়িত্ব পেয়েছেন, তারা অবশ্যই সফল হবেন।’ জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২০১৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে চেয়ারম্যান করে ২১ সদস্যের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি গঠন করে বিএনপি। বিগত আন্দোলনের সময় বৈদেশিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই কমিটির ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতার দাবি, চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ঢাকায় তাইওয়ানের কনস্যুলেট চালুকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিনের বন্ধু দেশ চীনের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কে ফাটল ধরে। তাইওয়ানকে গুরুত্ব দেওয়ার পেছনে তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ভূমিকা ছিল বলে ধারণা করা হয়। তখন থেকেই তিনি চীনের অপছন্দের তালিকায় আছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। চীনের পক্ষ থেকে বিষয়টি নানাভাবে বিএনপিকে বোঝানোরও চেষ্টা করা হয়েছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থতার কারণ পর্যালোচনায় এই ইস্যুটিও সামনে এসেছে। বিএনপির শীর্ষ নেতারাই বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন। এ কারণে বিভিন্ন পর্যায় থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। পরে দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গেও এ নিয়ে কথা বলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। সর্বশেষ গত ১৫ জুন তারেক রহমানকে প্রধান করে চেয়ারপারসনস ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটি ঘোষণা করা হয়। আগে এর নাম ছিল ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি। নতুন কমিটিতে তারেক রহমানের পর তালিকার ক্রমানুসারে সদস্য হিসেবে আছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান। তারা দুজনই এ কমিটিতে নতুন। দলের একাধিক নেতার মতে, ড. আবদুল মঈন খান যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের কাছে বিশেষভাবে গ্রহণযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ। তার পরিবারের সদস্যদের অনেকে ওই দেশগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। নজরুল ইসলাম খান বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ দেশ কুয়েতে রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তিনি একজন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শ্রমিক নেতাও। বিভিন্ন বিষয়ে লেখনীতে দলের মধ্যে তার বিশেষ গুরুত্ব ও সুনাম রয়েছে। আগের কমিটির চেয়ারম্যান আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে নতুন কমিটিতে তিন নম্বরে স্থান দেওয়া হয়েছে। তবে আগের কমিটিতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বাদ পড়েছেন। এই দুই নেতার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আছে বলে মনে করা হয়। বিএনপির নবগঠিত সিএফএসিতে স্থান পেয়েছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, নিতাই রায় চৌধুরী। তাদের মধ্যে আলতাফ হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে চীন ও মধ্যপ্রাচ্যের ভালো সম্পর্ক আছে। অন্যদিকে মিন্টুর সঙ্গে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের এবং নিতাই রায়ের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ভালো বলে মনে করা হয়। নতুন কমিটিতে স্থান পেয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহ, সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির এবং কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সভাপতি তাজভিরুল ইসলাম। এই কমিটি সম্পর্কে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘বৈদেশিক যোগাযোগ বিষয়ে যে কমিটি করা হয়েছে, তা অত্যন্ত শক্তিশালী এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন। কমিটি গঠনের সময় কোন দেশের সঙ্গে কোন নেতার সম্পর্ক কেমন, সে বিষয়টিও বিশেষভাবে বিচেনায় নেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহল বিগত দিনে যেভাবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও জনগণের বাকস্বাধীনতার ব্যাপারে নজর দিয়েছে, সেই ধারা যেন অব্যাহত রাখে— এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’ অন্যদিকে, চেয়ারপারসনস ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটিতে বিশেষ সহকারী (স্পেশাল অ্যাসিস্ট্যান্ট) হিসেবে শুরুতে ১৮ জনের নাম ঘোষণা করা হয়। তারা হলেন শামা ওবায়েদ, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, নওশাদ জমির, কায়সার কামাল, আসাদুজ্জামান, আফরোজা খান রিতা, ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, জিবা আমিনা খান, নিপুণ রায় চৌধুরী, শেখ রবিউল আলম রবি, মীর হেলাল উদ্দিন, তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন, ফারজানা শারমীন পুতুল, ইসরাফিল খসরু, আবু সালেহ মো. সায়েম (ইউকে) এবং ইকবাল হোসেন বাবু (বেলজিয়াম)। গতকাল সোমবার আরও ১৭ জনকে বিশেষ সহকারী হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন আশরাফ উদ্দিন (সাবেক রাষ্ট্রদূত, কানাডা), চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী (সিলেট), এএনএম ওহিদ আহমেদ (সাবেক ডেপুটি মেয়র, টাওয়ার হ্যামলেটস), বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকন ও রাশেদুল হক, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সহ-সম্পাদক নাহিদ খান, ড. তোফাজ্জল হোসেন তপু (জাপান), হাফিজ খান সোহেল (ওয়াশিংটন), এএসএমজি শাহ ফরিদ (পেনসিলভানিয়া) বদরুল আলম চৌধুরী ওরফে শিপলু (ক্যালিফোর্নিয়া), ঢালী নাসির উদ্দিন (ইতালি), গোলাম ফারুক শাহিন (নিউইয়র্ক), শফিক দেওয়ান (জার্মানি), ড. শামীম পারভেজ (জার্মানি), হাজি হাবিব (ফ্রান্স), কবির আহমেদ (আয়ারল্যান্ড) এবং মো. নায়েমুল বাসির (অস্ট্রিয়া)। বিশেষ সহকারী হিসেবে যুক্ত হওয়া ড. এনামুল হক চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা পালনে তিনি সচেষ্ট থাকবেন। আরেক সদস্য রাশেদুল হক বলেন, ‘আশা করছি, বিএনপির এ স্পেশাল অ্যাসিস্ট্যান্ট টু দ্য চেয়ারপারসনস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির নেতৃত্বে ভালো কিছু হবে।’ বদরুল আলম চৌধুরী শিপলু বলেন, ‘কোনো কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। সেই জন্য বিএনপি স্পেশাল চেয়ারপারসনের অ্যাসিস্ট্যান্ট টু দ্য চেয়ারপারসনস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
২৫ জুন, ২০২৪

কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হচ্ছে
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নানা টানাপোড়েন সত্ত্বেও নতুন সরকার গঠনের পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও সরকারকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) পশ্চিমা দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। বাংলাদেশের সঙ্গে চলমান সম্পর্ক শুধু অব্যাহত রাখাই নয়, তা আরও জোরদারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে তারা। ফলে নির্বাচনের আগে অর্থনৈতিক অবরোধসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হলেও এরই মধ্যে সে ধরনের শঙ্কা অনেকটাই কেটে গেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্ব সম্প্রদায় জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের দূরদর্শী পরিকল্পনাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। নির্বাচনের পর আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরিতে এ বিষয়টি সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে। তবে আপাত স্বাভাবিক এই পরিস্থিতি টেকসই করতে সরকারকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সৃজনশীল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নির্বাচন ঘিরে গত বছরের মধ্যভাগ থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা দেশগুলো সরকারকে চাপে রেখেছিল। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণ নির্বাচনের তাগিদ অব্যাহত রেখেছিল শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। যুক্তরাষ্ট্র তো র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। এমনকি দেশটির নতুন শ্রমনীতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে উদ্বেগের মধ্যে রেখেছিল। তবে ভারত, রাশিয়া ও চীন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এদেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে বলে সরকারের পক্ষে তাদের অবস্থান ব্যক্ত করে; যদিও বিএনপি ও সমমনা কয়েকটি দল গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেয়নি। নির্বাচনের পরদিন ভারত, চীন, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানালেও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলো পৃথক বিবৃতিতে বলেছিল, সবশেষ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মানদণ্ড মেনে অনুষ্ঠিত হয়নি। নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ না করায় হতাশা প্রকাশ করে তারা। তবে নির্বাচনের ১০ দিনের মধ্যেই গত ১৫ জানুয়ারি ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা এবং ১৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ও ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি নবনিযুক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে পৃথক সাক্ষাতের পরই দৃশ্যপট পাল্টে যায়। একে একে নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ প্রতিনিধি আব্দুল্লায়ে সেখ, ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুয়ে, জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইস, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ভন লিন্ডে ও বিমসটেক মহাসচিব ইন্দ্রমনি পাণ্ডেসহ প্রভাবশালী বন্ধুদেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার মিশনপ্রধানরা সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এবং অভিনন্দন জানান। একই সঙ্গে তারা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও নিবিড় করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবীর মনে করেন, রাজনৈতিক জগৎকে যতটা সরলীকরণ করে দেখা যায়, কূটনৈতিক জগৎ ততটাই জটিল। তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ও এদেশের জনগণের সঙ্গে সব দেশই সম্পর্ক অব্যাহত ও জোরদার করতে চাইবে—এটি স্বাভাবিক। নির্বাচনের আগে নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে তারা বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা কিছু দেশ অবস্থান ব্যক্ত করেছে বলে তারা এদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে বিষয়টি এমন নয়। নির্বাচনের পরও তারা তাদের অবস্থান ব্যক্ত করতে থাকবে। আর নির্বাচনের পর শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো কূটনৈতিক শিষ্টাচারেরও অংশ।’ তিনি আরও বলেন, ‘সাম্প্রতিক ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় বন্ধু দেশগুলো বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্ব চাইবে, গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু থাকুক। কারণ এটি প্রতিষ্ঠিত সত্য, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা না থাকলে দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতার জায়গা সংকীর্ণ হতে থাকে। এতে অর্থনৈতিক দুর্নীতি, অনিয়ম, বৈষম্যসহ নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হয়, যার সমাধানও কঠিন হয়ে পড়ে। আর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকলে যে কোনো বিষয়ে সংসদে আলোচনা হয়, সরকারের জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতাও বাড়ে।’ এবারের নির্বাচন সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করেছে মন্তব্য করে সাবেক অভিজ্ঞ এই কূটনীতিক বলেন, ‘এই নির্বাচনে বড় একটি রাজনৈতিক দল অংশ না নেওয়ায় সবাই অংশগ্রহণ করতে পারেনি। বিভিন্ন দেশ নির্বাচনের পর সরকারকে অভিনন্দন জানালেও এই নির্বাচনে মতভেদ ও সংকট অতিক্রম করতে পারেনি। ফলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।’ অভ্যন্তরীণ সংকট কূটনৈতিক সম্পর্কে যেন নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে সে ব্যাপারে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকা পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনীতিতে একটি সংকটাপন্ন অবস্থা বিরাজ করছে। নির্বাচনের পর আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি আপাতত স্বস্তির জায়গা তৈরি হয়েছে। এটি টেকসই করতে সরকারকে আরও সৃজনশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। কর্মসংস্থানের সংকট সমাধানে নানামুখী উদ্যোগ নিতে হবে। সাময়িক স্বস্তি যেন দীর্ঘমেয়াদে বিষয়গুলোকে আড়াল না করে, সে বিষয়ে সরকারকে দৃষ্টি রাখতে হবে।’ নির্বাচনের পর কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক গতিতে চলার নেপথ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী পরিকল্পনা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘নির্বাচনের কয়েক মাস আগে থেকেই আমরা বন্ধুরাষ্ট্র ও উন্নয়ন সহযোগীদের জানিয়েছি, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমরা তাদের হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করি না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার অঙ্গীকার অনুসারে ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সহযোগিতা করেছে। নির্বাচনের আগে ও পরে সরকার এমন একটা অবস্থানে পৌঁছুতে পেরেছে, অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যাপারে সরকার সদিচ্ছার বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিল। এরপর যখন বিএনপি নির্বাচনে আসেনি, তখন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্রদের অতীতের মতো বসিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়নি। এর ফলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা জোরালো হওয়ার পাশাপাশি স্বতঃস্ফূর্ততা দেখা গেছে।’ তিনি বলেন, ‘অতীতে বিএনপি সমর্থন করেছেন এমন ভোটাররাও এবারের নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। ভালো একটি নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে ইসি ও সরকারকে চ্যালেঞ্জ করার মতো কিছু নেই। এ বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক মহল গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে। তাই নির্বাচনের পর বিভিন্ন বন্ধুরাষ্ট্র ও উন্নয়ন সহযোগীদের সরকারপ্রধানসহ বিভিন্ন পর্যায় থেকে বাংলাদেশের নতুন সরকারকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছে এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আরও জোরদারে আগ্রহ দেখিয়েছে।’ বিশ্ব সম্প্রদায় জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী পরিকল্পনাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে শাহরিয়ার বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে গত দেড় দশকে বাংলাদেশের আঞ্চলিক অবস্থান ও উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান। বিশেষ করে তৃতীয় দেশকে ব্যবহার করে ধর্মীয় মূল্যবোধ উসকে দেওয়ার মাধ্যমে মৌলবাদ, উগ্রবাদ ও অস্থিরতা তৈরির অপচেষ্টা রুখে দেওয়ার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার সরকারের জিরো টলারেন্স নীতিকে চ্যালেঞ্জ করলে কারও জন্য মঙ্গলজনক হবে না এটি বিশ্বের কাছে স্পষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নের পর বিশ্বব্যাংক ও বন্ধুদেশগুলো ভিশন ২০৪১ নিয়েও আশাবাদী। ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে বৈশ্বিক সম্পর্ক সামনের দিনে আরও জোরদার হবে বলে আশা করছি।’
০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার হুমকি রাশিয়ার
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রুশ সম্পদ জব্দ করা হলে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে। শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভের বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স। সের্গেই রিয়াবকভ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে বিভ্রমের মাঝে থেকে কাজ করা উচিত নয়। সেই দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক দুই হাতে আঁকড়ে আছে রাশিয়া। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ইউক্রেনকে মার্কিন সামরিক ও আর্থিক সহায়তা দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক শূন্যের নিচে নেমে গেছে বলে জানিয়েছিল মস্কো। প্রায় ২২ মাস ধরে চলা এই যুদ্ধে কিয়েভের অন্যতম মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। এখন পর্যন্ত ইউক্রেনকে ১১০ বিলিয়ন ডলারের অর্থ সহায়তা দিয়েছে দেশটি। আরও ৬০ বিলিয়ন ডলালের অর্থ সহায়তার প্রস্তাব মার্কিন কংগ্রেসে আটকে আছে। রিয়াবকভ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার পদক্ষেপ প্রথমে রাশিয়া নেবে না। তবে বিভিন্ন কারণে সম্পর্কে ফাটল দেখা দিতে পারে। যেমন সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা, সামরিক সহায়তা দেওয়া বৃদ্ধি কিংবা আরও অনেক কারণ হতে পারে। আমি এখানে কোনো নেতিবাচক পূর্বাভাস দিব না। তবে মস্কো যে কোনো পরিস্থিতির জন্য তৈরি আছে। ২০২২ সালের ফ্রেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া ইউক্রেনে সেনা পাঠালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে কিয়েভকে অব্যাহত সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ‍ও পশ্চিমারা। এমনকি এই যুদ্ধের জেরে রাশিয়ার জব্দকৃত ৩০০ বিলিয়ন ডলার ইউক্রেনকে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন বেশ কয়েক জন পশ্চিমা নেতা। তবে শুক্রবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থায় মারাত্মক আঘাত হানবে। রাশিয়ার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে এমন দেশকে তারা কখনো শান্তি থাকতে দেবে না। এমনকি প্রতিশোধ হিসেবে পশ্চিমাদের কী ধরনের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা যায় সেটাও খতিয়ে দেখা হবে।
২২ ডিসেম্বর, ২০২৩

কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করছে তুরস্ক-মিশর
এক দশক পর কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করেছে মিশর ও তুরস্ক। এর অংশ হিসেবে এক দেশ অন্য দেশে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করেছে। গতকাল মঙ্গলবার সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার। দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক যৌথ বিবৃতিতে জানায়, তুরস্ক সালিহ মুতলু সেনকে কায়রোতে নিজেদের রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত করেছে। অন্যদিকে, আমর এলহামামিকে আঙ্কারায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত করেছে মিশর। দুই দেশের প্রেসিডেন্টের নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কায়রো-আঙ্কারার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নীতকরণের প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন হয়েছে। দুই দেশের জনগণের স্বার্থে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নত করতে আমরা এ পদক্ষেপ নিয়েছি। ২০১৩ সাল থেকে দেশ দুটির নেতারা একাধিকবার একে অন্যকে মৌখিকভাবে আক্রমণ করেছে। তবে ২০২১ সাল থেকে তারা একটি সম্প্রীতি প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়।
০৫ জুলাই, ২০২৩
X