মঞ্চ নির্মাণে বৃক্ষ নিধন, প্রতিবাদের ঝড়
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বৈশাখী মঞ্চ তৈরির জন্য দুই যুগের পুরোনো কয়েকটি গাছ কাটা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি একাডেমিক ভবনের মাঝে ‘বৈশাখী মঞ্চ’ নির্মাণ করতে  এ বৃক্ষ নিধন করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় বয়ে যাচ্ছে পুরো ক্যাম্পাসে। এ ছাড়া মঞ্চ নির্মাণ করায় লেখাপড়ার পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় সোমবার (৪ মার্চ) সকালে প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদসহ বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ‘বৈশাখী মঞ্চ’ নির্মাণ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবন এবং ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদ ভবনের মাঝে বটতলা সংশ্লিষ্ট এলাকায় একাধিক বড় গাছ কেটেছে কর্তৃপক্ষ। পরে বিষয়টি জানতে পেরে সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গাছ নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা দেয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে সেখানে গাছ কাটার বিরুদ্ধে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদ। এ সময় সংগঠনটির সহসভাপতি সাদিয়া মাহমুদ মিম বলেন, বৃক্ষ নিধনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরিবেশবিধ্বংসী প্রশাসনে পরিণত হয়েছে। প্রশাসনের এসব পরিবেশবিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সংগঠনটির সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ তারা যেন খুব শিগগিরই বৃক্ষ নিধন করে স্থাপনা নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসেন। যদি প্রশাসন তা না করে তাহলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব। এ দিকে বৃক্ষ নিধনের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবাদী সংগঠন ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক কনজার্ভেশন ফাউন্ডেশন ইবি শাখা মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। মানববন্ধনে সংগঠনটির নেতারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের জন্য গাছ কেটেছে। অনেক সময় অপ্রয়োজনেও গাছ কাটা হয়েছে। প্রশাসন মঞ্চ নির্মাণের জন্য দুটি একাডেমিক ভবনের মাঝের জায়গাটি বেছে নিয়েছে যা একটি অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত। এ ছাড়া এখানে তিনটি পুরোনো বৃক্ষও কেটে ফেলছে প্রশাসন। এ রকম ঠুনকো কারণে এই গাছগুলো কেটে ফেলায় আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অপর পরিবেশবাদী সংগঠন ‘অভয়রাণ্য’ বৃক্ষ নিধন করে মঞ্চ নির্মাণের প্রতিবাদ জানিয়েছে। বটতলায় ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কন, গণস্বাক্ষর গ্রহণ ও লেখনীর মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছে সংগঠনটি। এ দিকে পরিবেশবাদী সংগঠন ‘গ্রিন ভয়েস’ ক্যাম্পাসে বৃক্ষ নিধন বন্ধের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট স্মারকলিপি দিয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রশাসন বৈশাখী মঞ্চ নির্মাণের জন্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ একাডেমিক ভবনের মাঝের জায়গাটি বেছে নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও অনেক জায়গা ছিল যেখানে একাডেমিক ব্যস্ততা কম। প্রশাসনের এমন কোনো জায়গা বেছে নেওয়া উচিত ছিল বলে আমরা মনে করছি। বৃক্ষ নিধন করে একাডেমিক পরিবেশের ক্ষতি করে মঞ্চ নির্মাণ করাটা অযৌক্তিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল মুঈদ বলেন, প্রশাসন অনেকটা তড়িঘড়ি করেই এসব পুরোনো বৃক্ষ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রশাসনের উচিত ছিল পরিবেশকর্মীদের সঙ্গে বসে আলোচনা করে উপযুক্ত স্থান বেছে নেওয়ার। তারা এখানে অপরিপক্বতার পরিচয় দিয়েছে। এ দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বৃক্ষ নিধনের প্রতিবাদ জানিয়েছে শাখা ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়নসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদের পাওয়া যায়নি।
০৪ মার্চ, ২০২৪
X