মূল্যস্ফীতিতে জর্জরিত জনগণের ওপর নতুন করের বোঝা কাম্য নয়
নতুন সরকারের অর্থমন্ত্রী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য বাজেট প্রস্তাব পেশ করেছেন জাতীয় সংসদে। অর্থমন্ত্রী বলছেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট সংকোচনমূলক। এ বাজেট সংকোচনমূলক না করেও কোনো উপায় ছিল না। আইএমএফের চাপ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পরস্পর নির্ভরশীল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য বাজেটের আকার ছোট রাখা প্রয়োজন ছিল। বৈদেশিক মুদ্রার কম থাকার কারণে আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, আমদানি না হলেও রিজার্ভ বাড়ছে না, রিজার্ভ না বাড়লে সংকটের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে মানুষের ত্রাহি অবস্থা। সবকিছু মিলে সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার নামে এবার সংকোচনমূলক বাজেট করা হয়েছে। আপাতত শুনতে ভালো মনে হলেও এ বাজেটের উদ্দেশ্য এবং বিধেয়ের মধ্যে ব্যাপক ফারাক রয়েছে। বলা হয়েছে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনা হবে। এবারের বাজেটের প্রধান লক্ষ্য এটি। সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারেও বলা হয়েছিল, এবার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করাই সরকারের প্রথম এবং প্রধান কাজ। শুধু বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬-৬.৫ শতাংশে নিয়ে আসব বললেই সেটা হয়ে যায় না। বাজারে এখন মূল্যস্ফীতির পরিমাণ ৯-১০ শতাংশ। সেটাকে ৬ শতাংশে আনার জন্য যে পদক্ষেপ বা কৌশল প্রয়োজন, তা বাজেটের মধ্যে থাকতে হবে। বাজেটটি সম্পূর্ণরূপে পরোক্ষ কর নির্ভরশীল। প্রত্যক্ষ কর এখানে খুব একটা নেই। প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর, আদায় করার বা ব্যবস্থাপনা উন্নত করার কোনো লক্ষণ এখানে নেই। মোবাইলে কথা বলা, ইন্টারনেট, ভ্রমণ আরও অনেক কিছুতে পরোক্ষ কর বাড়ানো হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় কমানো হয়েছে কিন্তু সেটি ততটা কাজের নয়। বরং বলা যায় লোকদেখানো হ্রাস। শিশুখাদ্য গুঁড়া দুধ, অন্যান্য নিত্যপণ্যে যে শুল্ক কমানোর কথা বলা হয়েছে, আদতে কতটুকু কার্যকর হবে তা কারও অজানা নয়। দেশে দাম বাড়লে সেটি আর কমে না, এটি সর্বজনবিদিত। ফলে এ ধরনের কিছু পণ্যে শুল্ক কমিয়ে মানুষকে দেখানো হয় যে, আমরা এখানে এখানে দাম কমিয়ে দিলাম। আদতে তা বাস্তবায়িত হয় না। ভোজ্যতেলের ওপর শুল্ক কমানোর যে কথা বলা হচ্ছে, তার আসল উদ্দেশ্য দাম কমানো। কিন্তু আসলে কি দাম কমে? সে ধরনের বাজার ব্যবস্থাপনা কি রয়েছে? এক কথায় নেই। শুল্ক বাড়ানো হয়েছে এমন সব জায়গায়, যা মানুষকে স্পর্শ করবে। যে জায়গাগুলোতে দাম বাড়লে মানুষের দৈনন্দিন খরচের ওপর চাপ পড়বে। অর্থাৎ দ্রব্যমূল্যের ওপর তার প্রভাব পড়বে। যেমন, মোবাইল সেবা বা ইন্টারনেটে কর বাড়ানো। এটা সব মানুষের ওপর প্রভাব পড়বে। অথচ এই মোবাইল ব্যবহার, ইন্টারনেট বা প্রযুক্তি অর্থনীতিকে অনেক গতিশীল করেছে। মানুষ সহজেই টাকা-পয়সা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পাঠাতে পারছে, অনেকে ফ্রিল্যান্সিং করছে, প্রযুক্তি সংস্পর্শে মানুষের অনেক কাজ সহজ হয়েছে। সেই প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর কর আরোপ করলে সম্ভাবনাময় এ খাতের ওপর থেকে মানুষের আগ্রহ কমে যাবে। মূল্যস্ফীতি কমানোর কথা বলা হয়েছে, কতটুকু কমানো হবে সেটি বলা হয়েছে। কিন্তু কোন উপায়ে কমানো হবে সেই উপায়গুলো স্পষ্ট করা হলো না। মূল্যস্ফীতি কীভাবে ৬ শতাংশের মধ্যে আনা সম্ভব হবে এখানে তা অস্পষ্ট রয়ে গেছে। করের আওতা বাড়ানোটা দরকার। কিন্তু সেখানে কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। বরং আরও সংকুচিত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কালো টাকা সাদা করার সুবিধা দেওয়া হয়েছে ১৫ শতাংশ কর পরিশোধের মাধ্যমে। এর ফলে সাধারণ করদাতারা নিরুৎসাহিত বোধ করবেন। যারা কালো টাকা সাদা করবেন তাদের ৩০ শতাংশ কর দিতে হচ্ছে না, কোনো পেনাল্টি দিতে হচ্ছে না, বরং শুধু ১৫ শতাংশ কর দিয়েই মাফ পেয়ে যাচ্ছেন এবং টাকা সাদা করে ফেলতে পারছেন। সব থেকে বড় কথা তাদের কোনো প্রশ্ন করা হবে না। এটা একটি অযৌক্তিক এবং অবৈজ্ঞানিক ঘোষণা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বলা হয়েছিল, ট্রুথ কমিশনে গেলে কিছু বলা হবে না। মানুষ সাদামনে সেখানে গেল এবং পরে দেখা গেল ট্রুথ কমিশনে যাওয়াটাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এখানেও বলা হচ্ছে কালো টাকা সাদা করতে গেলে কোনো প্রশ্ন করা হবে না। কিন্তু প্রশ্ন না করে ছেড়ে দেওয়া কীভাবে সম্ভব! কোথাও না কোথাও এই টাকা ব্যবহার করতে হবে। ব্যবহার করতে গেলে বলতে হবে এই টাকা কোথা থেকে পেয়েছেন। প্রশ্ন করা হবে না মানে কি পি কে হালদারের মতো ব্যক্তিদের এমনি এমনি ছেড়ে দেওয়া হবে? কালো টাকা সাদা করতে প্রশ্ন করা না হলে তার মানে দাঁড়াবে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া। দুর্নীতি করতে আরও উৎসাহ পাবে তারা। এর থেকে সমাজে এমন একটি ধারণা জন্মাবে যে, যত পারো কালো টাকা উপার্জন করো কোনো ভয় নেই। প্রত্যেকটা জায়গায় স্বচ্ছতা থাকতে হবে। ব্যাংক খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনতে স্পষ্ট ঘোষণা এবং পদক্ষেপ দেখাতে হবে। তাহলেই শুধু এ বাজেট ভালো কিছু বয়ে আনতে পারে। এনবিআরের যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে, তা পাটিগণিতের নিয়ম অনুযায়ী। গত বছরের তুলনায় ১৩ বা ১৪ শতাংশ বাড়িয়ে কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাজস্ববহির্ভূত আয় এবং করবহির্ভূত আয় অর্থাৎ সরকার মালিকানাধীন সেবামূলক কোম্পানিগুলোর আয়ের বিষয়ে কোনো লক্ষ্যমাত্রা নেই। সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোকে আয় বাড়ানোর কোনো লক্ষ্যমাত্রা না দিয়ে বরং কমানো হচ্ছে। এখানে স্পষ্ট যে, নিজের সম্পদ থেকে রাজস্ব উপার্জন করার কোনো চিন্তা, লক্ষ্যমাত্রা বা গুরুত্ব নেই। যদি সরকারের নিজস্ব সম্পদগুলোর ব্যবস্থাপনা এবং এখান থেকে আয় বৃদ্ধির লক্ষ্য থাকত, তাহলে এনবিআরের ওপর চাপ একটু কম হতো। বাজেট এমন একটি বিষয় যেখানে একদিকে আয় কমালে অন্যদিক থেকে আয় বাড়ানোর দরকার হয়। এনবিআরের ওপর আয় বাড়ানোর চাপ দেওয়া মানে জনমানুষের ওপর চাপ বাড়ানো, দেশের অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়ানো। যে অর্থনীতি নানান রোগে আক্রান্ত, যে অর্থনীতি মূল্যস্ফীতিতে জর্জরিত সেখানে মানুষের কাছ থেকে পরোক্ষ কর বেশি আদায় করে মানুষের ঘাড়ে চাপ বাড়ানো কোনোভাবেই কাম্য নয়। ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ: সাবেক সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান
১২ জুন, ২০২৪

নতুন রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রায় ভারী হচ্ছে করের বোঝা
আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক মিলে এই রাজস্ব আহরণ করবে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সরকার করের বেড়াজালে আটকে দিয়েছে সাধারণ মানুষকে। আর সেবার ক্ষেত্রেও নতুন করে বাড়ানো হয়েছে ভ্যাটের হার। চলাফেরা থেকে শুরু করে বিয়ের স্থান ভাড়া, এমনকি বাসা-বাড়ির বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী লাইট কিনতেও লাগবে বাড়তি অর্থ। আয়কর খাতে করহার কমানোর ঘোষণা দিলেও শর্তের কারণে আটকে যাবে অনেকে করপোরেট প্রতিষ্ঠান। এনবিআরের রাজস্ব বাড়ানোর পরিকল্পনা বিশ্লেষণে এমন চিত্র উঠে এসেছে। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব বাড়ানোর কর বিন্যাসের কারণে কোম্পানি থেকে শুরু করে প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীকেও ভুগতে হবে। আর ভ্যাটের হার বাড়ার কারণে কোমল পানীয় থেকে শুরু করে জুস খেতে গুনতে হবে বাড়তি অর্থ। মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া শর্ত ভ্যাটের অভিন্ন হার বাস্তবায়নে নাকাল হবে ভোক্তা। প্রাথমিকভাবে ১১ ধরনের সেবার বিপরীতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। এতে ভোক্তার খরচ বেড়ে যাচ্ছে। শুল্কহারেও উল্লেখযোগ্য হারে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে ঘরের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী লাইটেও গুনতে হবে বাড়তি অর্থ। আয়কর বিভাগের প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, করের আওতা বাড়াতে উৎসে করে বেশকিছু পরিবর্তনের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে হোটেল-মোটেল থেকে শুরু করে রেস্টুরেন্ট, হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নবায়নে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র পেশ করতে হবে। আর কমিউনিটি সেন্টার বা কমিউনিটি হল ভাড়া নিতে গেলেও দেখাতে হবে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র। অর্থাৎ কারও আয় না থাকলেও বিয়ে করার স্থান ভাড়া করতে রিটার্নের প্রমাণ দিতে হবে। কোনো সেলুলার ফোন উৎপাদনকারীর পরিশোধিত আয় বণ্টন, লাইসেন্স ফি বা অন্য কোনো ফি বা চার্জ থেকে আসা আয়ের ওপর কর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হতে পারে। ইটভাটা মালিকদের লাইসেন্স নবায়নেও দিতে হবে বাড়তি কর। করপোরেট করহার আড়াই শতাংশ কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু এর সঙ্গে শর্তজুড়ে দিয়েছেন। এ ছাড়া পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার স্থরভেদে আড়াই শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন। অবৈধ আয়ে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে বিনা প্রশ্নে কালো টাকা সাদা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিপরীতে সৎকরদাতাদের ব্যক্তি খাতের সর্বোচ্চ করহার ২৫ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। শুল্ক খাতের প্রস্তাব পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আইএমএফের চাপে এ খাতে অব্যাহতি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে সংকুচিত করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। ফ্রিজের কম্প্রেসার আমদানির শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ঘরের প্রয়োজনীয় এই পণ্য কিনতে হবে বাড়তি দামে। শুল্ক আরোপের কারণে এয়ারকন্ডিশনার ব্যবহারেও খরচ বাড়ছে। রেফ্রিজারেটর ও এয়ার কন্ডিশনের কাঁচামালের রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করে নতুন করে শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। এয়ারকন্ডিশনের স্টিল শিটের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হচ্ছে। এ-সংক্রান্ত যেসব পণ্যের শুল্ক ১০ শতাংশ রয়েছে, তা বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বাজারে এসব পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। এলইডি লাইটে নতুন করে ১০ শতাংশ হারে আমদানি শুল্ক নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে জেনারেটর তৈরির উপকরণ শূন্য শতাংশ থেকে ১ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া ইলেকট্রিক খাতের সুইচ, সকেট ও হোল্ডারের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে ১ শতাংশ কমিয়ে আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। আয়রন তৈরির কাঁচামাল আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। এ ছাড়া নতুন করে কাজুবাদামের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ এবং রেগুলেটরি ডিউটি ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। ইলেকট্রিক মিটারের আমদানি শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রি-পেইড কিলোওয়াট মিটারের যন্ত্রপাতির আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এতে বাসাবাড়িতে মিটার বসানোর খরচ বাড়বে। নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট সিসি ক্যামেরা এবং এটিএমের উপকরণের শুল্ক ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের খরচ আরও বাড়বে। ওয়াটার পিউরিফাইর আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বিশুদ্ধ পানি পানের খরচও বেড়ে গেল। এ ছাড়া ব্যাগেজ রুলে বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রস্তাব এনেছেন অর্থমন্ত্রী। এতে প্রবাসীদের স্বর্ণ ও মোবাইল ফোন নিয়ে আসার খরচও বেড়ে গেল। ভ্যাটের প্রস্তাব পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ভ্যাট আদায়ের বাড়তি চাপে মেট্রোরেলের ভ্যাট অব্যাহতি তুলে দেওয়া হয়েছে। এতে মেট্রোরেলের যাত্রীদের ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হবে। অর্থাৎ মেট্রোরেল চড়তে গেলে বাড়তি টাকা গুনতে হবে। এই গরমে কোমল পানীয় পান করতে গেলেও গুনতে হবে বাড়তি অর্থ। কারণ কার্বোনেটেড বেভারেজের সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে ৫ শতাংশ। জুস খেতে গেলেও গুনতে হবে আগের তুলনায় বাড়তি অর্থ। কারণ চিনিযুক্ত জুসের ভ্যাটের হার সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। মোবাইল ফোনে কথা বলতে গেলেও গুনতে হবে বাড়তি অর্থ। কারণ অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত বাজেটে টকটাইমের সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন। প্রতিনিয়ত প্রয়োজন এমন সব বিষয়ে ভ্যাটের হার বাড়ানোর কারণে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা বাড়বে।
০৭ জুন, ২০২৪

ক্রান্তিকালে নতুন করের বোঝা না চাপানোর অনুরোধ ডিএসইর
আস্থার সংকটের সঙ্গে দেশি-বিদেশি নানা সমস্যার কারণে ক্রান্তিকাল পার করছে দেশের শেয়ারবাজার। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে করের বোঝা না চাপানোর অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। পাশাপাশি আগামী অর্থবছরের বাজেটে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স আরোপ না করার দাবিও জানানো হয়। গতকাল রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে প্রাক বাজেট নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় ডিএসই। সংবাদ সম্মেলনে ডিএসইর পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু। সংবাদ সম্মেলনে ডিএসইর পরিচালক রিচার্ড ডি রোজারিও, শরীফ আনোয়ার হোসেন, ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাত্বিক আহমেদ শাহ, জিএম মো. সামিউল ইসলাম ও মোহাম্মদ আসাদুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে শেয়ারবাজারে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। করোনাকালীন একটা প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। পরবর্তী সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। সার্বিকভাবে বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দা তার প্রভাব শেয়ারবাজারে পড়ে। ওই প্রেক্ষাপটে আমরা হয়তো শেয়ারবাজারকে সেভাবে ঘুরে দাঁড় করাতে পারিনি বা ঘুরে দাঁড়ায়নি। তিনি বলেন, ক্যাপিটাল গেইনের ওপর কর আরোপ করলে তা বিনিয়োগকারীদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। বর্তমানে শেয়ারবাজার ক্রান্তিকালে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ইনসেনটিভ না দিয়ে নতুন করের বোঝা চাপিয়ে বাজারের ওপর একটি নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টির প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না। বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার পর সরকার বা এনবিআর আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারে। ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের মাধ্যমে পরিচালিত সিকিউরিটিজ লেনদেনের মূল্য পরিশোধকালে ০.০৫ শতাংশ হারে কর সংগ্রহ করে। এ করের হার আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। বর্তমান বাজার পরিস্থিতি এবং করোনা মহামারির প্রভাব বিবেচনা করে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এ ধরনের করের হার ০.০৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.০১৫ শতাংশ করা যেতে পারে। এ ছাড়া ডিএসইর চেয়ারম্যান লিখিত আকারে বেশকিছু প্রস্তাব তুলে ধরেন।
২৯ মে, ২০২৪

গণমাধ্যমের ওপর করের বোঝা সহনীয় করার দাবি
সংবাদপত্র শিল্পকে জনগুরুত্বপূর্ণ শিল্প হিসেবে ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছে এফবিসিসিআইর প্রেস ও মিডিয়াবিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটি। একই সঙ্গে সংবাদপত্র, টেলিভিশন, অনলাইনসহ সব গণমাধ্যমের ওপর আরোপিত করের বোঝা সহনীয় করার আহ্বান জানানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার মতিঝিলের এফবিসিসিআই আইকনে এ সভা হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম। এতে সভাপতিত্ব করেন কমিটির চেয়ারম্যান এবং এফবিসিসিআইর সাবেক পরিচালক শোয়েব চৌধুরী। ডিরেক্টর ইন-চার্জ ছিলেন এফবিসিসিআইর পরিচালক রাকিবুল আলম (দিপু)। এফবিসিসিআইর সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, স্বাধিকার আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে দেশের গণমাধ্যম। আগামী দিনে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রেস ও মিডিয়াকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। এজন্য সংবাদপত্র শিল্পের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি কর্মীদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতে গণমাধ্যম মালিকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। সংবাদ মাধ্যমের চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিতকরণ এবং সমাধানে এ শিল্পের সব অংশীজনকে স্ট্যান্ডিং কমিটিতে সম্পৃক্ত করে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরির তাগিদ দেন এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহসভাপতি আমিন হেলালী। সংবাদ মাধ্যমের মালিক, সংবাদকর্মী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে নীতিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধন আনার দিকে গুরুত্ব দেন তিনি। স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান শোয়েব চৌধুরী বলেন, সংবাদ মাধ্যমকেও ব্যবসা করে টিকে থাকতে হয়। কাজেই অন্যান্য খাতের মতো সংবাদ মাধ্যমকেও কিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়া উচিত। কাগজ, কালি, ছাপার যন্ত্রাংশের ওপর আরোপিত কর কমানো দরকার। টেলিভিশনের ব্যান্ডউইথের ওপরও বিদ্যমান কর কমানো প্রয়োজন। সম্পূরক বাজেটে প্রেস ও মিডিয়ার জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখাসহ এ শিল্পকে জনগুরুত্বপূর্ণ শিল্প ঘোষণার আহ্বান জানান তিনি। মুক্ত আলোচনায় সংবাদ মাধ্যমের জন্য কর সহনীয় করা, সহজ শর্তে ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করা, কর্মীদের বেতন-বোনাস ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত, এ খাতে ব্যবহৃত উপকরণ ও যন্ত্রাংশ প্রাপ্তি সহজিকরণ, ক্রোড়পত্র ও বিজ্ঞাপন প্রাপ্তিতে পত্রিকাগুলোর সম-অধিকার নিশ্চিতকরণ, সরকারের কাছে বিজ্ঞাপন বাবদ প্রাপ্ত বিল দ্রুত পরিশোধ করাসহ বেশকিছু প্রস্তাব তুলে ধরেন কমিটির সদস্যরা। এ ছাড়া বেসরকারি খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে এফবিসিসিআইর উদ্যোগে তিন মাস অন্তর সংবাদপত্র ও টেলিভিশনের মালিক, সম্পাদকসহ, ও গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়মিত সৌজন্য সভা আয়োজনের আহ্বান জানান তারা। পাশাপাশি, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে উৎসাহ ও হলুদ সাংবাদিকতাকে নিরুৎসাহিত করা ও সচেতনতা বাড়ানোর বিষয়ও মুক্ত আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পায়। সভায় ছিলেন এফবিসিসিআইর পরিচালক হাফেজ হাজি হারুন-অর-রশিদ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রেস সচিব শামীম চৌধুরী, এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের বোর্ড অব গভর্নরসের (পিডিবিএফ) সদস্য বোরহান উদ্দিন আহমেদ, দ্য ব্লেজার বিডির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী রাজিব ইউ এ চপল, এফবিসিসিআইর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান জাফর ইকবাল, কমিটির কো-চেয়ারম্যান আক্কাস মাহমুদ, মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন জিটু, তাওহিদা সুলতানা, এজাজ মোহাম্মদ প্রমুখ।
২২ মে, ২০২৪

করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে
প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তি ও করপোরেটের ওপর করের বোঝা চাপানো হয়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ‘ফরেন ইনভেস্টর’ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’ (ফিকি)। বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার এ সময়ে করের বোঝা কমানোরও আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে ‘২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট এবং আয়কর আইনের (আইটিএ) ২০২৩ খসড়া বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে ফিকির পক্ষ থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। ফরেন চেম্বার বাংলাদেশের ২১টি খাতসহ ৩৫টি দেশের ২০০টিরও বেশি বহুজাতিক কোম্পানি এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন। সংগঠনটি মনে করে, প্রস্তাবিত বাজেট ও নতুন আয়কর আইন দেশের ব্যবসা খাত এবং কর্মচারীদের ওপর প্রভাব পড়বে। এ ছাড়া কর পদ্ধতিতে কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা হ্রাসের প্রস্তাব করেছে ফিকি এবং নিরবচ্ছিন্ন লেনদেনের জন্য এনবিআরের তিনটি শাখা ও বাইরে থেকে সংযুক্ত ব্যবস্থাগুলোর ডিজিটালাইজেশন করার পরামর্শ দিয়েছে। এ ছাড়া ফিকি বলেছে, খসড়া আয়কর আইনে (আইটিএ) বিনিয়োগকারীরা ডব্লিওপিপিএফ, মিউচুয়াল ফান্ড এবং ডিভিডেন্ড থেকে আয়ের ওপর আর কোনো ছাড় পাবেন না। লিভ ফেয়ার অ্যাসিস্ট্যান্স (এলএফএ) এখন থেকে করের আওতায় অন্তর্ভুক্ত হবে। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কি আদৌ বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে কি না এবং সেটা থেকে কর ছাড় পাওয়া যাবে কি না, সে বিষয়টি পরিষ্কার করে বলা নেই। মিউচুয়াল ফান্ড বা ইউনিট তহবিল এবং সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের সীমা ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বেঁধে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। বেসরকারি স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিলে কর আরোপ করা কর্মীদের আয় হ্রাস করবে এবং সরকারি ভবিষ্য তহবিলকে করমুক্ত হিসাবে রাখার বিষয়টি বৈষম্য সৃষ্টি করবে। ফিকি সরকারকে এ বিধানটি পুনর্বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করেছে। কারণ, এটি ব্যক্তির মোট আয়ের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। প্রস্তাবিত বাজেট এবং খসড়া আয়কর আইনের বিষয়ে ফিকির সভাপতি নাসের এজাজ বিজয় বলেন, ‘আমাদের সরকার যে প্রগতিশীল পরিবর্তনগুলো বাস্তবায়নের দিকে নজর দিচ্ছে, তা প্রশংসনীয়। তবে কিছু বিধান বাস্তবায়ন হলে ব্যবসা এবং ব্যক্তির প্রবৃদ্ধির হার কমে যেতে পারে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মোবাইল ফোনের ওপর আরোপিত ভ্যাট এবং লোকসানে থাকা কোম্পানিগুলোর ওপর করের বোঝা বাড়ার কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। সম্ভাব্য প্রতিকূল পরিস্থিতি এড়াতে পারে—এমন সমাধানের বিষয়ে আমাদের কিছু সুপারিশ রয়েছে। আমরা আশা করি, সুপারিশগুলো বিবেচনায় নেওয়া হবে এবং চেম্বারকে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অব্যাহত সমর্থন রেখে করবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ করে দেওয়া হবে।’ সংবাদ সম্মেলনে নতুন অর্থবছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য বড় বরাদ্দের প্রশংসা করার পাশাপাশি স্বাস্থ্য, কৃষি এবং শিক্ষা খাতে বরাদ্দের অপ্রতুলতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে খসড়া আয়কর আইন (আইটিএ) বিধানের গভীর ও বিস্তৃত পর্যালোচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। কারণ, আইনের কিছু বিধান আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ বিবেচনায় অযৌক্তিক বলে মনে করে ফরেন চেম্বার। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নতুন আইনে ন্যূনতম কর বিধানগুলো ধীরে ধীরে প্রত্যাহার করা হবে। তার পরিবর্তে উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিশেষ করে কার্বোনেটেড পানীয় শিল্পের (বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রি) ন্যূনতম কর শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে মোট প্রাপ্তির ৫ শতাংশ বা ৮ গুণ বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে কোমল পানীয়ের দাম ৩০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পাবে। এই খাতে এরই মধ্যে ৫ থেকে ১০ শতাংশ শুল্কের পাশাপাশি পরোক্ষ কর ৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ দিতে হয়, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। এর ফলে পণ্যের ভোগ কমে যাবে এবং পরবর্তী সময়ে সরকারি কর আহরণ হ্রাস পাবে, যা শেষ পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগ পরিকল্পনা এবং এই খাতে কর্মসংস্থানকে প্রভাবিত করতে পারে। এই শিল্পের বিকাশে ন্যূনতম কর ১ শতাংশ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যান্য করের বিষয়ে বলা হয়েছে: করের বিধান থেকে একটি অনুবিধি বাদ দেওয়া হয়েছে। এটি না থাকলে আধুনিক বাণিজ্যে ডিস্ট্রিবিউটরদের সরবরাহের ওপর করের বোঝা, আমদানিকৃত পণ্যের সরবরাহ, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। নতুন আইনে প্রণোদনা বোনাস অতিরিক্ত লভ্যাংশ হিসেবে বিবেচিত হবে। এতে কোম্পানির ওপর আরও করের বোঝা চাপিয়ে দেবে এবং পরবর্তী সময়ে কর্মচারীদের উপার্জনের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। পাশাপাশি বিদেশি ঋণের সুদের ওপর করের বিধান এবং তৃতীয় পক্ষের বিক্রেতার দ্বারা আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণ প্রদানে ব্যর্থতার জন্য তার সম্পূর্ণ পারিশ্রমিক দিতে অনুমোদন দেওয়ার বিধানটি বাদ দেওয়া প্রস্তাব দিয়েছে ফরেন চেম্বার। অন্যদিকে করপোরেট এবং সংস্থাগুলোর জন্য নগদ লেনদেন সীমিত করায় দেশের উন্নয়নকে সীমাবদ্ধ করবে দাবি করা হয়, কারণ বাংলাদেশ এখনো পুরোপুরি নগদহীন লেনদেন করার ক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। সরকারের উচিত কোম্পানিগুলোর নগদ লেনদেনের জন্য একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা নির্ধারণ না করে তার খরচের ন্যূনতম শতাংশ ব্যয় করার অনুমতি দেওয়া। যেন পরবর্তী পাঁচ বছরে ধীরে ধীরে তারা শতভাগ নগদহীন লেনদেনের লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। সম্পত্তি করের ক্ষেত্রে লেনদেনের খরচ বৃদ্ধি করার পরিবর্তে তা যথেষ্ট পরিমাণে কমিয়ে আনা উচিত এবং বাজার মূল্য প্রতিফলিত করার জন্য মৌজা মূল্যকে পর্যায়ক্রমে হালনাগাদ করার পরামর্শ দিয়েছে সংগঠনটি। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট দীপাল আবেইউক্রেমা, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রশীদ, ট্যারিফ-ট্যাক্সেশন ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কমিটির কো-অর্ডিনেটর সাজ্জাদ রহিম চৌধুরী, ট্যারিফ-ট্যাক্সেশন ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য দেবব্রত রায় চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক টিআইএম নুরুল কবির এবং কনসালট্যান্ট স্নেহাশীষ বড়ুয়া।
১৫ জুন, ২০২৩
X