চড়া সুদে ঋণ দিয়ে কৌশলে সম্পত্তি দখল করেন ফরিদ
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রিচি গ্রামের ফরিদ মিয়া। দীর্ঘদিন সৌদি আরবে ছিলেন। দেশে ফিরে শুরু করেন সুদের ব্যবসা। এলাকায় সুদখোর ফরিদ হিসেবে পরিচিত তিনি। চড়া সুদে ঋণ দিয়ে কৌশলে ঋণগ্রহীতার সম্পত্তি দখল করে নেন তিনি। বিভিন্ন সময় মানুষ বিপদে পড়ে তার কাছে সুদে ঋণ নিতে এলে কৌশলে তাদের একরকম জিম্মি করে সম্পত্তি বায়না করে ঋণ দেন। কারও ঋণ শোধ করতে দেরি হলে তার সম্পত্তি দখলে নেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্তত ডজনখানেক লোক ফরিদ মিয়ার কাছ থেকে সুদে ঋণ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী। এই ঋণ নিয়ে অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়েছেন। ভুক্তভোগী কয়েকজন কালবেলাকে জানান, ফরিদ মিয়ার কাছে ঋণ নিতে গেলে তিনি প্রথমে না করেন। সম্পত্তি বায়না করলে বা জমিজমার কাগজপত্র জমা দিলেই তিনি ঋণ দিতে রাজি হন। পরে যে টাকা ঋণ দেন, তার দ্বিগুণের চেয়ে বেশি টাকা দাবি করেন। ঋণের চুক্তির কাগজপত্র এফিডেভিড করে উকিল নোটিশ দিয়ে বিভিন্নভাবে ঋণগ্রহীতাদের ভয়ভীতি দেখান। কথা হয় ভুক্তভোগী সিদ্দিকুর রহমান দুলালের সঙ্গে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি রেস্তোরাঁর ব্যবসা করেন। ছেলেকে ইতালি পাঠানোর পর তার ৩ লাখ টাকার প্রয়োজন হয়। উপায়ান্তর না দেখে তিনি ফরিদ মিয়ার শরণাপন্ন হন। ঋণের সিকিউরিটি বাবদ সিদ্দিকুর রহমানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একটি বায়নাপত্র করে দিতে বলেন ফরিদ। নিরুপায় হয়ে বায়নাপত্র করে প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা সুদে এক বছরের জন্য ৩ লাখ টাকা ঋণ নেন। ৯ মাস সুদ পরিশোধ করেন সিদ্দিকুর। এর পরই বেঁকে বসেন ফরিদ। সুদের টাকা না নিয়ে বায়নাকৃত হোটেলের জমিটি রেজিস্ট্রি করে দিতে চাপ দেন। বিষয়টি স্থানীয় মাদবরদের জানান সিদ্দিকুর। কিন্তু ফরিদ মিয়া জায়গা রেজিস্ট্রি করে দিতে আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেন। নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রক্ষায় সিদ্দিকুর রহমান পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সিদ্দিকুর রহমান দুলাল কালবেলাকে বলেন, ‘বিপদে পড়ে ফরিদ মিয়ার কাছ থেকে ঋণ নিতে গেলে তিনি জমির কাগজপত্র রেখে বায়না করতে বলেন। বাধ্য হয়েই বায়না করে এক বছরের জন্য ৩ লাখ টাকা ঋণ নিই। নিয়মিত তাকে ১৫ হাজার টাকা করে সুদ দিলেও ফরিদ মিয়া ৯ মাস পর আমার জমি দখল করতে আসেন। আমি তাকে ঋণের টাকা পরিশোধ করে দিতে চাইলে তিনি টাকা না নিয়ে জমি দখলের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।’ স্থানীয় নাতিরাবাদ গ্রামের জিতু মিয়ার স্ত্রী অনুফা বেগম ৪ লাখ টাকা ঋণ নেন ফরিদ মিয়ার কাছ থেকে। কিন্তু তার কাছ থেকে ৯ লাখ টাকা দাবি করেন ফরিদ মিয়া। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে অনুফা বেগমকে আইনি নোটিশ দেন ফরিদ। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘চুক্তি অনুযায়ী ঋণ নেওয়ার পর এক বছরের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পরও আপনি (অনুফা বেগম) টাকা ফেরত প্রদান না করে অহেতুক সময় কর্তন করছেন এবং দুই চেক প্রদান করছেন, তা ডিজঅনার হয়।’ নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে উল্লিখিত ৯ লাখ টাকা নগদ পরিশোধ করা না হলে আদালতে মামলা দায়ের করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। হবিগঞ্জ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আসাদ হোসেন পাঠানের স্ত্রী কামরুন নাহার সীমা ২ লাখ টাকা ঋণ নেন। তিনি সুদের টাকা পরিশোধ করলে তাকে পুরো টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ দেন ফরিদ মিয়া। পরে তাকে পাঠানো হয় আইনি নোটিশ। সেখানে ৬ লাখ টাকা পাওনা দাবি করেন। অভিযোগের বিষয়ে ফরিদ মিয়া কালবেলাকে বলেন, ‘আমি কোনো সুদের ব্যবসা করি না। যারা বলছে, এসব মিথ্যা বলছে। দুলাল (সিদ্দিকুর রহমান) জমি বায়না করেছিল, এখন আমাকে জমি বুঝিয়ে দিচ্ছে না। এটা নিয়ে আমি মামলা করেছি। জিতু মিয়ার স্ত্রী আমার আত্মীয়। তিনিও টাকা নিয়ে ফেরত দিচ্ছেন না। আসাদের স্ত্রীও টাকা ফেরত দিচ্ছেন না।’
১৬ ঘণ্টা আগে

ঋণ থেকে মুক্তির আমল
অনেক মানুষ ছোট-বড় ঋণের কবলে জর্জরিত। ক্রমেই বাড়ছে ঋণের চাপ। আসলে ঋণের মাত্রা বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে অনেক কারণ। প্রথমত সামর্থ্যের গণ্ডি অতিক্রম করা। অর্থাৎ, যার যতটুকু সামর্থ্য রয়েছে, ততটুকু গণ্ডির মধ্যে না থেকে সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে পা রাখা ঋণগ্রস্ত হওয়ার প্রধান কারণ। ব্যাংকের লোভী অফার নিয়েও অনেকে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। বিভিন্ন ইন্স্যুরেন্স ও ব্যাংক লিমিটেডের পক্ষ থেকে বেশি ঋণে অল্প সুদ পরিশোধযোগ্য অফার দেওয়া হচ্ছে। যেমন—৫০ হাজারে মাত্র ২-৪ হাজার টাকা সুদ দিতে হবে। ১ লাখে ৭-৮ হাজার সুদ দিতে হবে। তাই এমন অফারে লোভী হয়ে ঝাঁপ দেওয়ার ফলে আজ অধিকাংশই ঋণগ্রস্ত। এটা এজন্যই ঋণ বলা হচ্ছে, কেননা এর ফলে প্রতি সপ্তাহে কিংবা মাসে একটি নির্দিষ্ট অ্যামাউন্ট বাধ্যতামূলক পরিশোধ করতে হচ্ছে, যা ব্যক্তি-মালিকানায় টাকা থাকুক আর না থাকুক। অকল্পনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণেও বাড়ছে ঋণের প্রবণতা। ব্যক্তির যতটুকু আয় তার চেয়ে ব্যয়ের পরিমাণ অনেক বেশি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি আয় বাড়ছে না চাকরিজীবীর। ফলে ৫ টাকার স্থলে ১০ টাকা খরচ হচ্ছে। অথচ, ৫ টাকা আয়ের (বেতন) স্থলে ১০ টাকা আয়ের স্কেল বাড়ছে না। যার কারণে ঋণের মধ্যে পা রাখতে হচ্ছে। অন্যদিকে কৃষিজীবীদের আরও শোচনীয় অবস্থা। যথার্থ জাকাত অনাদায়ও টেনে আনছে ঋণের অভিশাপ। প্রকৃতপক্ষে ধনীরা যদি সঠিকভাবে জাকাত প্রদান করত, তাহলে ঋণগ্রস্ত হওয়ার দূরের কথা, দারিদ্র্য পর্যন্ত দূর হয়ে যেত। অসহায় মানুষদের ঋণের পেছনে ছুটতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ঋণ প্রতিকারের ক্ষেত্রে জাকাতেরও একটি ভূমিকা রয়েছে। ঋণের লেনদেন স্বাভাবিক বিষয়। প্রয়োজনের কারণে ইসলামেও এটি নিয়ে আলোচনা রয়েছে। ঋণ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। তিনি নিজেও ঋণ গ্রহণ করেছেন। ঋণ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়েছেন। উম্মতকে ঋণমুক্তির দোয়া শিখিয়েছেন। এমনকি তিনি অমুসলিম থেকেও ঋণ নিয়েছেন। সুতরাং বলা যায়, ইসলাম বিপদে-আপদে এবং বিভিন্ন প্রয়োজনে অন্যের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করার অনুমতি দিয়েছে। পাশাপাশি সঠিক সময়ে তা পরিশোধ করার প্রতি কঠোর নির্দেশও দিয়েছে। তবে ঋণের ব্যাপারে সদা সতর্ক থাকা জরুরি। কারণ ঋণগ্রস্ত হয়ে মারা গেলে জান্নাতে প্রবেশ কঠিন হবে। তা ছাড়া রাসুল (সা.) মৃত ব্যক্তির সম্পদ তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টনের আগে মৃতের ঋণ পরিশোধ করার ব্যাপারে জোর তাগিদ দিয়েছেন। হাদিসের বাণী, ‘আল্লাহর পথে শহীদ হওয়া ব্যক্তিও ঋণের কারণে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (মুসনাদ আহমাদ: ২২৪৯৩)। ঋণ থেকে বেঁচে থাকতে দরকার সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য ও বৈধ উপার্জনের উদ্যম। সতর্কতা হিসেবে কিছু বিষয় মনে রাখা দরকার—১. সাধ্যের মধ্যে চাহিদাগুলো সীমাবদ্ধ রাখা। ২. যথাসম্ভব ব্যাংক লোন থেকে বিরত থাকা। ৩. দারিদ্র্য দূর করতে বিভিন্ন কর্মসংস্থান গড়ে তোলার পাশাপাশি সুদমুক্ত কর্জে হাসানা ফান্ড প্রতিষ্ঠা করা। ৪. দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রেখে চাকরিজীবীদের উপযুক্ত বেতন স্কেল নির্ধারণ করা। যাতে ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি আয়ের ঘাটতি কমে আসে। ৫. সঠিকভাবে উপযুক্ত ব্যক্তিদের জাকাত প্রধান করা; যাতে ঋণের কবল ও দারিদ্র্য থেকে ফিরে আসতে সক্ষম হয়। ৬. পারস্পরিক সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা। ৭. সামাজিকতায় যৌতুক প্রথার মতো নিকৃষ্ট কর্মকাণ্ডগুলো দূর করা। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে ঋণের কবল থেকে বেঁচে থাকার তওফিক দান করুন। লেখক: মাদ্রাসা শিক্ষক
০৫ জুলাই, ২০২৪

নমনীয় শর্তে বাংলাদেশকে ৭০০ কোটি ডলার ঋণ দিতে চায় চীন
দ্বিপক্ষীয় ট্রেড ফ্যাসিলিটেশনের আওতায় কম সুদ ও নমনীয় শর্তে বাংলাদেশকে ৫০০ থেকে ৭০০ কোটি ডলার ঋণ দিতে চায় চীন। বাংলাদেশও এই ঋণ গ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। চীনা মুদ্রা ইউয়ানে ঋণ নিয়ে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের মতো একটি তহবিল গঠন করতে চায় বাংলাদেশ। এতে স্থানীয় রপ্তানিকারকরা চীন থেকে আমদানির বিপরীতে ইউয়ানে অর্থ পরিশোধ করতে পারবেন। এর বাইরে ৬০ হাজার কোটি টাকায় গাবতলী থেকে সদরঘাট হয়ে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত মেট্রোরেল-২ নির্মাণেও চীনা এক্সিম ব্যাংক প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ সফররত চীনের এক্সিম ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সম্মেলনকক্ষে এসব বিষয়ে বৈঠক হয়। বাংলাদেশের পক্ষে এই সভায় ইআরডির অতিরিক্ত সচিব মিরানা মাহরুখ নেতৃত্ব দেন। সূত্র জানায়, বৈঠকে চীনের কাছ থেকে ৫০০ থেকে ৭০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ চীনা মুদ্রায় নেওয়ার উপায় পর্যালোচনাসহ বিভিন্ন তথ্য চীনা প্রতিনিধিদের জানানো হয়। পাশাপাশি চীনের এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশ কী ধরনের প্রকল্প নিতে চায় সেটিও তুলে ধরা হয়। সূত্রমতে, বৈঠকে ৯ প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে পিরোজপুরে কচা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ এবং মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর সেতু মেরামতের কাজও রয়েছে। এ ছাড়া গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে জামালপুর পর্যন্ত মিশ্র গেজ রেলপথ নির্মাণ, পাবনার ঢালারচর থেকে ফরিদপুরের পাচুরিয়া পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ, রাজবাড়ীতে একটি রেলওয়ে ওয়ার্কশপ নির্মাণ এবং ভৈরববাজার থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত মিটারগেজ লাইন মিশ্র গেজে রূপান্তর প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮ থেকে ১১ জুলাই চীন সফর করতে পারেন। ওই সফরে ট্রেড ফ্যাসিলিটিশেনের ঋণসহ রেল ও সড়ক যোগাযোগের প্রকল্পগুলোয় চীনা মুদ্রায় ঋণের বিষয়টির ঘোষণা আসতে পারে।
০৪ জুলাই, ২০২৪

সমুদ্রবন্দর উন্নয়নে ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক
বাংলাদেশের জন্য ৬৫ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭ হাজার ৬৩৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা (প্রতি ডলার ১১৭.৫১ টাকা ধরে)। বে-টার্মিনাল গভীর সমুদ্রবন্দর উন্নয়নের অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণে এই ঋণ সহায়তা দেওয়া হবে। গতকাল শনিবার বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস এ তথ্য জানায়। ওয়াশিংটন ডিসিতে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক বোর্ড এ অর্থ অনুমোদন করে। বিশ্বব্যাংক জানায়, বাংলাদেশকে গভীর সমুদ্রবন্দর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে বিনিয়োগে সহায়তা হিসেবে ৬৫ কোটি ডলার ঋণ দেওয়া হচ্ছে; যা দেশটির বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি করবে এবং বন্দর বৃদ্ধির মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি খরচ কমিয়ে আনবে। আর্থিক সংস্থাটি আরও জানায়, বে-টার্মিনাল সামুদ্রিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ৬ কিলোমিটার জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক ব্রেকওয়াটার নির্মাণ করা হবে। আধুনিক এ টার্মিনাল আন্তর্জাতিক অপারেটরদের দ্বারা পরিচালিত হবে। সেখানে প্যানাম্যাক্সের মতো বড় আকারের জাহাজের সুযোগ বাড়াবে এবং টার্ন অ্যারাউন্ড সময়কে উল্লেখযোগ্যভাবে কমাবে। এর মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার সাশ্রয় হবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৯০ শতাংশ কনটেইনার প্রবেশ করে। বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক বলেন, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর বেশি নির্ভরশীল। যেটি উল্লেখযোগ্য সক্ষমতার সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হয়। বে-টার্মিনাল সেক্ষেত্রে গেম চেঞ্জার হবে। এটি বন্দর সক্ষমতা বাড়ানো এবং পরিবহন খরচ ও সময় কমানোর মাধ্যমে রপ্তানি প্রতিযোগিতার উন্নয়ন ঘটাবে। এর মাধ্যমে মূল বৈশ্বিক বাজারে নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে। তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটি কনটেইনার টার্মিনালগুলোর উন্নয়নের জন্য বেসরকারি বিনিয়োগকে একত্রিত করবে। সরকারি অর্থায়নের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের বিনিয়োগ বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াবে এবং সামগ্রিক বে-টার্মিনাল উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত ঝুঁকি কমাতে ভূমিকা রাখবে। বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ট্রান্সপোর্ট স্পেশালিস্ট এবং প্রকল্প প্রধান হুয়া টান বলেছেন, বে-টার্মিনাল দেশের সমুদ্রবন্দর অবকাঠামোর আধুনিকীকরণ এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাজারের সংযোগ উন্নত করতে অবদান রাখবে। এটি চট্টগ্রাম বন্দরের পশ্চিমে আনন্দনগর/সন্দ্বীপ চ্যানেলে অবস্থিত এবং ঢাকার সঙ্গে বিদ্যমান সড়ক ও রেল যোগাযোগের কাছাকাছি। সেজন্য বাংলাদেশের কনটেইনারের পরিমাণের ৩৬ শতাংশ পরিচালনা করবে। শিপিং কোম্পানি, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, আমদানিকারক, রপ্তানিকারক এবং মালবাহী ফরওয়ার্ডারসহ টেকসই পরিবহন পরিষেবাগুলোতে উন্নত অ্যাক্সেসের মাধ্যমে এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষ সরাসরি উপকৃত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
৩০ জুন, ২০২৪

ঋণখেলাপি, অর্থ পাচারকারী ও লুটপাট সহায়ক বাজেট
গত ৬ জুন ২০২৪ তারিখে ৭,৯৭,০০০ কোটি টাকার বাজেট-প্রস্তাব সংসদে পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এই বাজেটকে ‘সংকোচনমূলক বাজেট’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, যার প্রধান উদ্দেশ্য ঘোষিত হয়েছে অর্থনীতিতে বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির হারকে ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনা। আমাদের প্রতিবেশী দেশ শ্রীলংকা ও ভারত তাদের মূল্যস্ফীতির হারকে ইতোমধ্যেই পাঁচ শতাংশের নিচে নামিয়ে ফেলেছে, অথচ আমরা পারিনি প্রধানত এ দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে অদক্ষ ও অর্থনীতি সম্পর্কে কম-জ্ঞানসম্পন্ন সাবেক অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামালের নিষ্ক্রিয়তা, কায়েমী স্বার্থ ও অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে। এখন অভিজ্ঞ অর্থমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, যিনি ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে যোগদানের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন দু’বছর।  কূটনীতিকের চাকরি পরিত্যাগ করে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করায় তিনি এ দেশের একজন ‘সূর্যসন্তান’ হিসেবে সম্মানের পাত্র। গত সংসদীয় মেয়াদে তিনি অর্থ-মন্ত্রণালয় সম্পর্কীত সংসদীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। অতএব, চলমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা সম্পর্কে তিনি ওয়াকিবহাল থাকার কথা। তাঁর বাজেট-বক্তৃতাকে আমি প্রশংসা করব অর্থনীতির চলমান সমস্যাগুলোর বাস্তবানুগ স্বীকারোক্তি হিসেবে।  সাবেক অর্থমন্ত্রী জনগণের কাছ থেকে বাস্তবতাকে আড়াল করার যে প্রবণতা তাঁর ‘গিমিকে-ভরা বাজেট-উপস্থাপনায়’ দেখিয়ে যেতেন এবারের বাজেট-বক্তৃতা সেখান থেকে অনেকখানি সরে এসেছে। তবে ওয়াকিবহাল মহল বাজেট-প্রস্তাবকে যেভাবে ‘গতানুগতিক’ বলে সমালোচনা করছেন তাকে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। এর মানে, ওয়াকিবহাল মহল বাজেটে আরও অনেক বেশি সাহসী নতুন নীতিমালা আশা করেছিল মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পুঁজিপাচার, খেলাপিঋণ, হুন্ডি-দমন ও দুর্নীতি সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে। কারণ, অর্থনীতি বর্তমানে যেসব সমস্যায় জর্জরিত তার বেশিরভাগই সাবেক অর্থমন্ত্রীর ভুলের খেসারত বলাই সমীচীন। (অবশ্য, আমাদের দেশে প্রধানমন্ত্রীই সব নীতি গ্রহণ করে থাকেন বলে মনে করা হয়)! এগুলোকে মোকাবিলা করার জন্য আরও সাহসী ও উদ্ভাবনমূলক পদক্ষেপের প্রয়োজন। প্রস্তাবিত বাজেটকে সংকোচনমূলক বলা হলে তা যথাযথ বলা হবে, কারণ গত অর্থ-বছরের ৭,৬২,০০০ কোটি টাকার বাজেটের তুলনায় মূল্যস্ফীতির বিবেচনায় আগামী অর্থ-বছরের বাজেটটি ‘ক্ষুদ্রতর আকারের’। সামষ্টিক অর্থনীতির তত্ত্বে এটাকে contractionary fiscal policy অভিহিত করা হয়, যেখানে সরকানি ব্যয়কে কমিয়ে ফেলা হয় মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য সামষ্টিক চাহিদাকে হ্রাস করার জন্য। এদিক থেকে বিবেচনা করলে সরকারি ব্যয়-সংকোচন অত্যন্ত সময়োচিত প্রস্তাব। এখানে সরাসরি সংঘর্ষ বাধবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারকেও বর্তমান ৫.৮ শতাংশ থেকে আগামী অর্থবছরে ৬.৭৫ উন্নীত করার উদ্দেশ্যের সাথে। (বিশ্ব ব্যাংক প্রক্ষেপণ করেছে আগামী অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার হবে ৫.৭ শতাংশ)। আমার বিশ্বাস, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারকে ৬ শতাংশের ওপরে নিয়ে যাওয়া বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হবে। অবশ্য, এই উদ্দেশ্য একেবারে অসম্ভব না-ও হতে পারে কিছু বিষয় বিবেচনা করলে।  সরকারি ব্যয় এখন দেশের মোট জিডিপি’র ১৪.৫ শতাংশের মত, যার মধ্যে সরকারি রাজস্ব-জিডিপি’র অনুপাত হলো মাত্র সাড়ে আট শতাংশের মত। বাকি সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ ছিল বাজেট ঘাটতি। এই বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য আমাদেরকে বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সূত্র ও বৈদেশিক সূত্র থেকে ঋণ করতে হয়েছে। গত অর্থ-বছরে বৈদেশিক সূত্রসমূহ থেকে আমরা যথেষ্ট পরিমাণ ঋণ পাইনি। তদোপরি, সাবেক অর্থমন্ত্রীর অযোগ্যতার কারণে রাজস্ব-জিডিপি’র অনুপাতও ছিল বেশ কয়েক বছর ধরে ক্রমহ্রাসমান। এখন দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের রাজস্ব-জিডিপি’র অনুপাত সর্বনিম্ন। এটা চলতে দেওয়া যায় না। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে রাজস্ব-জিডিপি’র অনুপাতকে কমপক্ষে ১২ শতাংশে উন্নীত করাটা এখন আমাদের জন্য ‘ফরজ’ হয়ে গেছে বলা উচিত।  আগামী অর্থবছরে রাজস্ব-জিডিপি’র অনুপাতকে ৯.৭ শতাংশে বাড়ানোর এবং বাজেট ঘাটতি-জিডিপি’র অনুপাতকে ৪.৬ শতাংশে নামানোর লক্ষ্য ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী, আমি এটাকে সাধুবাদ জানাই। এটা অত্যন্ত কঠিন চ্যালেঞ্জ হবে নিঃসন্দেহে, কিন্তু এটা সঠিক পদক্ষেপ। এ-ব্যাপারে আমাদের সফল হতেই হবে। এদেশে যাদের কর দেওয়ার ক্ষমতা আছে তারা দুর্নীতির সহায়তায় কর-ফাঁকি দিয়ে চলেছে, এটা চলতে দেওয়া যায় না। সাবেক অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ী ছিলেন, তাই তিনি প্রধানত ব্যবসায়ীদেরকে সুবিধা দেওয়ার জন্য এই ব্যাপারে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণে অনীহ ছিলেন।  এবারের বাজেটে অনেকগুলো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। মোবাইল টেলিফোনে কথা বলার ওপর কর বাড়ানো হয়েছে, মোবাইল সিমের খরচ বাড়ানো হয়েছে, ফ্রিজ, এসি ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক গ্যাজেটের ওপর আরোপিত কর বাড়ানো হয়েছে, সকল প্রকার সফ্ট ড্রিংকসের ওপর কর বাড়ানো হয়েছে, আইসক্রিমের ওপর আরোপিত কর বাড়ানো হয়েছে, সিগারেটের ওপর আরোপিত কর বাড়ানো হয়েছে, গাড়ি আমদানির ওপর শুল্ক-কর বাড়ানো হয়েছে, ২৫০ সিসি’র বেশি ক্যাপাসিটির মোটরসাইকেলের শুল্ক বাড়ানো হয়েছে, কাজুবাদামের ওপর আরোপিত কর বাড়ানো হয়েছে, সংসদ সদস্যদের আমদানিকৃত গাড়ির ওপর শুল্ক আরাপের প্রস্তাব করা হয়েছে, গিফটের ওপর কর আরোপিত হয়েছে, বিনোদন পার্কে ভ্রমণের ওপর কর আরোপিত হয়েছে। এর বিপরীতে অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর আরোপিত কর ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশে নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই পদক্ষেপগুলো প্রশংসনীয়। তবে, করপোরেশন ইনকাম ট্যাক্সে প্রদত্ত সুবিধাগুলো এবার না দিলেই ভালো হতো।  ব্যক্তিগত আয়করের সর্বনিম্ন সীমা অপরিবর্তিত রাখা হলেও সর্বোচ্চ আয়করের হার ৩০ শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আমি মনে করি, আয়করের জালকে প্রসারিত করার উদ্দেশ্যে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ভাল হতো। আর একটা ব্যাপার আমার কাছে কখনোই গ্রহণযোগ্য মনে হয় না, সেটা হলো কালো টাকাকে সাদা করার ব্যাপারটা। যেখানে সর্বোচ্চ আয়কর হার প্রস্তাব করা হয়েছে ৩০ শতাংশ, সেখানে মাত্র ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকাকে বিনা-প্রশ্নে সাদা করার ব্যবস্থার প্রস্তাব করা কতখানি ‘নৈতিক’ হয়েছে সে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। বাজেটের দুটো বাজে দিক্ হলো শিক্ষা খাতের বাজেটকে এবার জিডিপি’র ১.৬৯ শতাংশে নামিয়ে ফেলার প্রস্তাব করা হয়েছে এবং জিডিপি’র শতাংশ হিসেবে স্বাস্থ্যখাতের ব্যয়-বরাদ্দকেও গত বছরের চাইতে কমিয়ে ফেলা হয়েছে। সরকার যখন ২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন হয়েছিল তখন শিক্ষাখাতে সরকারি ব্যয় ছিল ২.০৪ শতাংশ, যা ধীরে ধীরে বেড়ে ২.৫ শতাংশে পৌঁছেছিল ২০১৬ সালে। তারপর থেকে ক্রমেই এই ব্যয়-বরাদ্দ জিডিপি’র শতাংশ হিসেবে কমছে। ইউনেস্কোর কাছে বাংলাদেশ অঙ্গীকার করেছে শিক্ষা খাতে ব্যয়-বরাদ্দকে ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে জিডিপি’র ৬ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হবে। ভারতে শিক্ষা খাতে সরকারি ব্যয় ইতোমধ্যেই ৪ শতাংশ অতিক্রম করেছে। টাকার অংকে এই দুই খাতের বাজেট-বরাদ্দ গত বছরের চাইতে বেশি দেখানো হলেও মূল্যস্ফীতির বিবেচনায় তা প্রকৃতপক্ষে কম। যোগাযোগ ও পরিবহন খাত, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত এবং পল্লী উন্নয়ন খাতে সরকারি ব্যয়-বরাদ্দ গত বছরের তুলনায় কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে টাকার অংকে।  বাজেটে ব্যাংকের খেলাপিঋণ আদায়ের জন্য কোনো কঠোর পদক্ষেপ খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্বীকার করতে হবে যে দেশের খেলাপি ব্যাংকঋণের পরিমাণ নিশ্চিতভাবে পাঁচ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে, এবং এসব খেলাপিঋণের আশি শতাংশেরও বেশি ‘ইচ্ছাকৃত রাঘববোয়াল ঋণখেলাপিদের’ কাছে বছরের পর বছর ধরে আটকে রয়েছে। এগুলো ব্যাংকে ফেরত আসবে না। এসব রাঘববোয়াল ঋণখেলাপিদেরকে ট্রাইব্যুনালের বিচারের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে না পারলে এই সমস্যার কোন সমাধান পাওয়া যাবে না। এই বিপুল খেলাপিঋণের বেশিরভাগই দেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়ে গেছে, এগুলো কখনোই বর্তমান বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যাংকে ফেরত আনা যাবে না। আইনমন্ত্রী আরও কয়েকটি অর্থঋণ আদালত গঠনের যে প্রস্তাবের কথা বলেছেন সেটা একেবারেই বেফজুল প্রস্তাব। বর্তমান অর্থঋণ আদালত, হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের মামলাগুলোতে তিন লক্ষাধিক কোটি টাকার বেশি খেলাপি ঋণ বছরের পর বছর ধরে ঝুলে রয়েছে, যেগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফাইড লোনে’র হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায় না। ঋণখেলাপিরা তাদের আর্থিক ক্ষমতা ব্যবহার করে এই মামলাগুলোকে বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রাখতে সক্ষম হচ্ছে বলেই এই সমস্যার কোন সমাধান মিলছে না। নতুন আরো কয়েকটি অর্থঋণ আদালত প্রতিষ্ঠা করলে আরও বহুজনের ঘুষ-দুর্নীতির মওকা বাড়বে নিঃসন্দেহে, কিন্তু সমস্যার সমাধানের পথে কোন অগ্রগতি হবে না। অতএব, এই বেফজুল প্রস্তাব থেকে সরে আসাই উত্তম! আমি বুঝি না ট্রাইব্যুনালে বিচারের প্রস্তাবে কোন সরকার রাজি হচ্ছে না কেন? এই প্রস্তাবটি ১৯৯৮ সালে করেছিলেন তদানীন্তন মহামান্য রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন, যিনি এ দেশের প্রধান বিচারপতিও ছিলেন। দেশের বিচার ব্যবস্থার অব্যবস্থা ও দুর্নীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন বলেই তিনি সকল ব্যাংকের শীর্ষ দশ ঋণখেলাপির বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনালের প্রস্তাব করেছিলেন। পাঠকদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে অন্য কোন আদালতে আপিল করা যায় না। ফলে, সাথে সাথে ঐ রায় কার্যকর করা যায়। বছরের পর বছর বিভিন্ন আদালতে ঝুলে থাকা খেলাপিঋণের মামলাগুলো ট্রাইব্যুনালে গেলে রাঘববোয়াল ঋণখেলাপিদের জেলের ভাত খাওয়ানো এবং তাদের সম্পত্তি ক্রোকের পথে আর কোনো বাধা থাকত না। সেক্ষেত্রে ঋণখেলাপিরা হয়তো দেশ থেকে ভেগেই যাবে, কিন্তু ব্যাংকিং খাত লুটপাটের কবল থেকে রক্ষা পেয়ে যাবে।  বর্তমান সরকার যে খেলাপিঋণ সমস্যার কোনো প্রকৃত সমাধান চায় না তার বড় প্রমাণ হলো দেশের সবচেয়ে বড় ঋণখেলাপি এখন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা! একইসাথে, হুন্ডি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোন দমনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণেরও প্রস্তাব করা হয়নি। এটা সকলেরই বোঝা প্রয়োজন যে হুন্ডি ব্যবসাকে দমন না করলে দেশ থেকে বিদেশে পুঁজি পাচার কোনমতেই কমানো যাবে না, যার মানে ফর্মাল চ্যানেলে প্রবাসীদেরকে রেমিট্যান্স প্রেরণে উৎসাহিত করা যাবে না। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের বিপজ্জনক পতনের ধারাকে থামানো যাবে না। এরূপ পদক্ষেপের মধ্যে হুন্ডিওয়ালাদের দেশীয় এজেন্টদেরকে গ্রেফতার, এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো কিছুদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা এবং পাকা বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে ফর্মাল চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণের ব্যাংক-সার্টিফিকেট কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিলের বাধ্য-বাধকতা অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। আরেকটি ব্যাপারে বাজেট-বক্তৃতায় কিছু না পেয়ে হতাশ হয়েছি, সেটা হলো নবায়নযোগ্য সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রণোদনা প্রদানের ব্যবস্থা না করা। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী নবায়নযোগ্য সূত্রগুলো থেকে মোট বিদ্যুতের ৪০ শতাংশ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার কথা বলেছেন। কিন্তু, কত বছরের মধ্যে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে তা বলেননি। এক্ষেত্রে প্রয়োজন হবে সোলার প্যানেল ও ব্যাটারির ভর্তুকি-দাম কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সৌরবিদ্যুতের যন্ত্রপাতির উপর আরোপিত শুল্ক হ্রাস এবং যুগোপযোগী ‘নেট মিটারিং’ পদ্ধতি চালু করা। সম্প্রতি বেশ কয়েকদিন ধরে ভারতের সাধারণ নাগরিকদের বাড়ির ছাদে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপনের জন্য ‘প্রধানমন্ত্রীর সূর্যোদয় যোজনা’ বা ‘পিএম রুফটপ সোলার যোজনা’ চালুর বিস্তারিত বিবরণ সোশ্যাল মিডিয়ার ইউটিউবে প্রচারিত হয়ে চলেছে।  এই বিবরণীতে দেখা যাচ্ছে, ভারতীয় ৪৭,০০০ (সাতচল্লিশ হাজার) রুপি খরচে তিন কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার সোলার প্যানেল বাড়ির ছাদে স্থাপন করতে চাইলে উল্লিখিত যোজনার কাছে আবেদন করার নিয়মগুলো ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই ব্যাখ্যা মোতাবেক মোট সাতচল্লিশ হাজার রুপি খরচের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ১৮,০০০ (আঠার হাজার) রুপি ভর্তুকি প্রদান করা হবে, আর সোলার প্যানেল স্থাপনকারী ভোক্তাকে ব্যয় করতে হবে ২৯,০০০ (উনত্রিশ হাজার) রুপি। মোট এক কোটি পরিবারকে ‘পিএম রুফটপ সোলার যোজনায়’ অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে ভারত। ইউটিউবে যোজনার বিবরণ পাঠ করার পর আমার কাছে মনে হয়েছে এই মডেলটি বাংলাদেশে প্রয়োগযোগ্য।  আমার মতে, ভারতের ‘প্রধানমন্ত্রী সূর্যোদয় যোজনা’র মত একটি কর্মসূচি অবিলম্বে বাংলাদেশে চালু করা প্রয়োজন, যেখানে সরকার রুফটপ সোলার প্যানেল স্থাপনের মোট খরচের এক-তৃতীয়াংশ বা তার-ও বেশি ভর্তুকি প্রদান করবে। বাড়ির মালিকদের জন্য এই ভর্তুকি কর্মসূচি তাদেরকে বাড়ির ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপনে উৎসাহিত করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। সংসদে বাজেট আলোচনায় কোন মাননীয় সংসদ সদস্য বিষয়টি বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করলে বাধিত হবো।  ড. মইনুল ইসলাম: সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়  
২৮ জুন, ২০২৪

৪ শতাংশ সুদে ঋণ মিলবে ছাগল-ভেড়া পালনে
দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঘোষিত ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত এ তহবিল থেকে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাবেন কৃষক। এ তহবিল থেকে ঋণ নিয়ে এখন ছাগল, ভেড়া, গাড়লও পালন করা যাবে। গতকাল বৃহস্পতিবার এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগ। ২০২২ সালের নভেম্বরে বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খাদ্যসংকটের আশঙ্কা আছে উল্লেখ করে ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে সময় ছাগল-ভেড়া ও গাড়ল পালনে এ তহবিল থেকে ঋণ দেওয়া হতো না। গতকাল জারি করা প্রজ্ঞাপনে এ বিধান যোগ করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে গঠিত স্কিমটির চাহিদা থাকায় ব্যাংক থেকে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ বিতরণের সময়সীমা চলতি বছর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হলো। একই সঙ্গে স্কিমটির আওতাভুক্ত খাতগুলোর পাশাপাশি কন্দাল ফসল চাষ এবং ছাগল, ভেড়া, গাড়ল পালনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ তহবিলের অধীনে ব্যাংকগুলো নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করতে পারবে। ক্ষুদ্র, প্রান্তিক, বর্গাচাষি ও ফসল (ধান, শাকসবজি, ফুল ও ফল) চাষের জন্য সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া যাবে। তবে গরু-ছাগল পালনসহ প্রাণিসম্পদ খাতে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। ঋণ পরিশোধে কৃষক বা গ্রাহক তিন মাসের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১৮ মাস সময় পাবেন।
২৮ জুন, ২০২৪

ঋণ সংকট থেকে বেরিয়ে আসছে শ্রীলঙ্কা
বিদেশি ঋণ পরিশোধ নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। সব মিলিয়ে ৫৮০ কোটি বা ৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ পুনর্গঠনে সক্ষম হয়েছে দেশটি। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে গত বুধবার এই ঋণ পুনর্গঠন-সংক্রান্ত চুক্তি হয়েছে। এর মাধ্যমে ঋণ সংকট থেকে বেরিয়ে আসছে শ্রীলঙ্কা। ভারত, জাপান ও ফ্রান্সের কাছ থেকে নেওয়া ঋণ পুনর্গঠন করা হয়েছে। এই চুক্তির পর শ্রীলঙ্কার অর্থমন্ত্রী শিহান সেমাসিংহে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, শ্রীলঙ্কার ঋণ সংকট সমাধানে এ চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে থাকবে। শ্রীলঙ্কার দ্বিপক্ষীয় বিদেশি ঋণের বড় উৎস চীন। দেশটির অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, চীনের এক্সিম ব্যাংকের কাছ থেকে নেওয়া ৪ বিলিয়ন বা ৪০০ কোটি ডলারের ঋণও পুনর্গঠন হওয়ার পথে। শিগগির এ বিষয়ে চুক্তি হবে।
২৮ জুন, ২০২৪

ছাগল পাললেই মিলবে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ
দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঘোষিত পাঁচ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের মেয়াদ ৬ মাস বাড়ানো হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত এ তহবিল থেকে সর্বোচ্চ চার শতাংশ সুদে ঋণ পাবেন কৃষক। একই সঙ্গে এ তহবিল থেকে এখন ছাগল, ভেড়া, গাড়ল পালন করতেও ঋণ নেওয়া যাবে। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। ২০২২ সালের নভেম্বরে বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে খাদ্যপণ্যের বৃদ্ধি পাওয়ায়, খাদ্য সংকটের আশঙ্কা আছে উল্লেখ করে ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে সময় ছাগল-ভেড়া ও গাড়ল পালনের জন্য এ তহবিলের বিধান ছিল না। নতুন জারি করা প্রজ্ঞাপনে এই বিধানটি যুক্ত করা হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কৃষি খাতের জন্য গঠিত পাঁচ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিমটির চাহিদা থাকায় ব্যাংক থেকে গ্রাহকপর্যায়ে ঋণ বিতরণের সময়সীমা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হলো। একই সঙ্গে অধিক সংখ্যক প্রকৃত চাষি ও খামারি যেন উপকৃত হয় সে লক্ষে ইতোমধ্যে স্কিমটির আওতাভুক্ত খাতগুলোর পাশাপাশি কন্দাল ফসল চাষ এবং ছাগল, ভেড়া, গাড়ল পালন খাত অন্তর্ভুক্ত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই তহবিলের অধীনে ব্যাংকগুলো নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করতে পারবে। ক্ষুদ্র, প্রান্তিক, বর্গাচাষি ও ফসল (ধান, শাকসবজি, ফুল ও ফল) চাষের জন্য সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করতে পারবে। তবে গরু-ছাগল পালনসহ প্রাণিসম্পদ খাতে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। ঋণ পরিশোধে কৃষক বা গ্রাহক তিন মাসের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১৮ মাস সময় পাবেন।
২৭ জুন, ২০২৪

বিদেশি ঋণের ৪৪ শতাংশ গেছে ঋণ পরিশোধে
গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছর বিদেশি ঋণের অর্থছাড় বেড়েছে। তবে যত অর্থ এসেছে, তার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ চলে গেছে ঋণ পরিশোধে। বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছ থেকে চলতি অর্থবছরে যে অর্থ এসেছে, তার প্রায় ৪৪ শতাংশের বেশি গেছে আগের ঋণ পরিশোধে, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি। অর্থনৈতিক সংকটের এ সময়ে সবচেয়ে বেশি চাপ সৃষ্টি করেছে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ। বছরের ব্যবধানে শুধু সুদের ব্যয়ই বেড়েছে ৪২ শতাংশের বেশি। গতকাল বুধবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে ৭০২ কোটি ৫ লাখ ডলারের অর্থছাড় হয়েছে। এর মধ্যে ৬৬১ কোটি ৫৩ লাখ ডলার ঋণ আর বাকি ৪০ কোটি ৫১ লাখ ডলার অনুদান হিসেবে পেয়েছে বাংলাদেশ। গত অর্থবছরের তুলনায় এ অর্থবছর বিদেশি ঋণের অর্থছাড় বেড়েছে। গত বছরের একই সময়ে ঋণের অর্থছাড় হয়েছিল ৬৯৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের। ইআরডির তথ্যানুযায়ী, ১১ মাসে বিদেশি ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে হয়েছে ৩০৬ কোটি ৮১ লাখ ডলার, গত বছরের একই সময়ে ছিল ২৪৬ কোটি ৭১ লাখ ডলার। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে যা অর্থছাড় হয়েছে, তার ৪৩ দশমিক ৭০ শতাংশই পরিশোধ করতে হয়েছে আগের নেওয়া ঋণের অর্থ পরিশোধে। এটি আগের বছরের তুলনায় ২৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। বছরের ব্যবধানে শুধু সুদের ব্যয়ই বেড়েছে ৪২ শতাংশের বেশি। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে টাকার অঙ্কের ঋণ পরিশোধ চাপ অনেকে বেশি। চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে সরকার ঋণ পরিশোধ করেছে ৩৩ হাজার ৮৯৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল ২৪ হাজার ৬২২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে ঋণ পরিশোধ বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। ঋণের বিপরীতে শুধু সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ১৩ হাজার ৮৫০ কোটি ৭১ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরে ছিল ৮ হাজার ৮৯৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। ঋণ পরিশোধ এবং অর্থছাড়ের মতোই চলতি অর্থবছরের উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ প্রতিশ্রুতিও বেড়েছে। এ সময় দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ঋণের প্রতিশ্রুতিও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। এ বছর শুধু বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতিই এসেছে ৭৯২ কোটি ৭৬ লাখ বা প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারের, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৫৯৭ কোটি ৪৬ লাখ বা প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থবছরের ১১ মাসে সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে জাপান। এ পর্যন্ত দেশটি থেকে অর্থছাড় হয়েছে ১৭৬ কোটি ১৮ লাখ ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা এডিবি ছাড় দিয়েছে ১৫৯ কোটি ৯২ লাখ ডলার। বিশ্বব্যাংক ছাড় দিয়েছে ১৪০ কোটি ৮৩ লাখ ডলার। এ ছাড়া রাশিয়া ৮৮ কোটি ৪৮ লাখ ডলার, চীন ৩৬ কোটি ১৭ লাখ ডলার ছাড় দিয়েছে। ভারত দিয়েছে ২৮ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। বাকিগুলো অন্য দাতা সংস্থা থেকে এসেছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধে সরকারের ব্যয় এখন ক্রমেই বাড়ছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ পেতে বিভিন্ন শর্ত মানতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এসব শর্ত অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ আরও বাড়িয়ে তুলছে। সর্বশেষ এক দিনে ডলারের দাম সাত টাকা বাড়ানো হয়েছে। এতে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ। ডলারের এই দর বৃদ্ধিতে চাপ তৈরি হবে বিদেশি ঋণ পরিশোধে। বাড়তি ব্যয় জোগানে ডলার সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা করছে সরকার। এজন্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা পাওয়ার তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।
২৭ জুন, ২০২৪

কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ ৩৩ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা
চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) ৩১ হাজার ২৯৬ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো, যা লক্ষ্যমাত্রার ৮৯ দশমিক ৪১ শতাংশ। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ফসল উৎপাদনে। দেওয়া হয়েছে ১৪ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণের ৪৫ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছর কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, কম সুদে কৃষকদের হাতে ঋণ পৌঁছাতে এবার ক্ষুদ্র ঋণদাতা সংস্থার (এমএফআই) ওপর বেসরকারি ব্যাংকের নির্ভরশীলতা কমানো হচ্ছে। এজন্য ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্তত ৫০ শতাংশ কৃষিঋণ বিতরণ বাধ্যতামূলক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা এতদিন ছিল ৩০ শতাংশ। এ ছাড়া কৃষিঋণের কত অংশ কোন খাতে দিতে হবে, তা-ও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কৃষিনীতিতে মোট ঋণের লক্ষ্যমাত্রার কমপক্ষে ৬০ শতাংশ শস্য ও ফসল খাতে, ১৩ শতাংশ মৎস্য, ১৫ শতাংশ প্রাণিসম্পদ এবং বাকি অর্থ অন্যান্য খাতে বিতরণের লক্ষ্য ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। চলমান ডলার সংকটে আমদানিতেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এজন্য খাদ্যপণ্য আমদানির চেয়ে দেশে উৎপাদনের প্রতি সরকার বেশি মনোযোগী। তাই কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। ফলে ঋণের প্রবৃদ্ধি ভালো। ব্যাংকগুলোকেও সবসময় কৃষিঋণ দিতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। কারণ দেশে খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারের অংশ হিসেবে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ ব্যাংকও সেই লক্ষ্যে কাজ করছে। ব্যাংকগুলোকে কৃষিঋণ বিতরণ বাড়াতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং তা প্রতিনিয়ত তদারকি করা হচ্ছে। প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, অর্থবছরের ১১ মাসে কৃষি খাতে বিতরণ করা ঋণের মধ্যে প্রাণিসম্পদ ও পোলট্রি ফার্ম খাতে গেছে ২৫ শতাংশ। এই খাতে লক্ষ্যমাত্রার ১৫ শতাংশ ঋণ বিতরণের কথা ছিল। মৎস্য খাতে দেওয়া হয়েছে ৪ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা বা বিতরণ করা ঋণের ১৫ শতাংশ। কৃষিনীতিতে খাতটিতে ১৩ শতাংশ ঋণ বিতরণের লক্ষ্য নির্ধারিত ছিল। এ ছাড়া দরিদ্র বিমোচনে ১ হাজার ৮৮১ কোটি, কৃষি যন্ত্রপাতিতে ১৯৪ কোটি, সেচ যন্ত্রপাতিতে ১৯০ কোটি এবং অন্যান্য খাতে বিতরণ করা হয়েছে ২ হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা।
২৭ জুন, ২০২৪
X