প্রকল্পের মেয়াদ শেষ / ইভিএম নিয়ে নতুন পরিকল্পনা ইসির
বহুল আলোচিত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রকল্প নিয়ে নতুন চিন্তাভাবনা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বর্তমানে যেসব যন্ত্র সচল রয়েছে সেগুলো আগামীতে অনুষ্ঠিতব্য স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে ব্যবহার করা হবে। পাশাপাশি যন্ত্রটির কারিগরি উন্নয়ন ও উৎপাদন ব্যয় কমানোর দিকেও মনোযোগ দিচ্ছে সংস্থাটি। নির্বাচন কমিশনের একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। গতকাল রোববার আলোচিত এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে ব্যয় না বাড়িয়ে কেবল প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর জন্য এরই মধ্যে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে ইসি। পরিকল্পনা কমিশন থেকে প্রস্তাবনা বিবেচনার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাবও পেয়েছে সংস্থাটি। ফলে এ প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়তে পারে। আর এ সময়ের মধ্যে ইভিএম যন্ত্রটির কারিগরি উন্নয়ন ও তার ব্যবহারের দিকে নজর দিবে ইসি। সেই লক্ষ্যে প্রকল্পের মেয়াদের শেষ দিনে গতকাল দেশসেরা প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনে বৈঠক করেছে সংস্থাটি। বৈঠকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম কায়কোবাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. হায়দার আলী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. মো. মাহফুজুল ইসলামসহ কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র কালবেলাকে জানায়, একেকটি ইভিএমের দাম প্রায় ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। এই ব্যয় কীভাবে কমানো যায়, তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। মেশিনগুলোর ওজন কমানোর কথা হয়েছে বৈঠকে। কারিগরি উন্নয়ন তথা ভিভিপ্যাট (ভোটার ভেরিফাইয়েবল পেপার অডিট ট্রেইল) যুক্ত করারও সিদ্ধান্ত হয়। জানা গেছে, এক এগারোর সরকারের সময় ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন দেশের ভোট ব্যবস্থায় ইভিএমের ব্যবহার শুরু করে। সে সময় তারা বুয়েট থেকে ১২ হাজার টাকা ব্যয়ে মেশিন তৈরি করে নেয়। ওই কমিশনের ধারাবাহিকতায় পরবর্তী সময়ে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশনও ভোটযন্ত্রটি ব্যবহার করে। তবে ২০১৫ সালে রাজশাহী সিটি নির্বাচনে একটি মেশিন অচল হয়ে পড়ায় তা আর ব্যবহার উপযোগী করতে পারেনি রকিব কমিশন। পরবর্তী সময়ে তারা বুয়েটের তৈরি স্বল্প মূল্যের ওই মেশিনগুলো পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় এবং উন্নত মানের ইভিএম তৈরির পরিকল্পনা করে। ২০১৭ সালে কেএম নূরুল হুদার কমিশন এসে বুয়েটের তৈরি ইভিএমের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি দামে মেশিন কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) কাছ থেকে উন্নতমানের ইভিএম তৈরি করে নেয় তারা। এতে মেশিনপ্রতি ব্যয় হয় ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকার মতো। হাতে নেওয়া হয় ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার প্রকল্প। দেড় লাখের মতো ইভিএম কেনে রকিব কমিশন। প্রকল্পের সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের ব্যবস্থা না থাকায় সেই উন্নত মানের ইভিএম মেয়াদ ১০ বছর হলেও পাঁচ বছর যেতে না যেতেই সেগুলো অকেজো হওয়া শুরু করে। ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২৩ সালে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে প্রায় প্রতিটি সেটেই কোনো না কোনো সমস্যা দেখা দেয়। প্রায় ৪০ হাজারের মতো মেশিন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। অবশিষ্ট ১ লাখ ১০ হাজার মেশিনের মধ্যে অধিকাংশগুলোতে ধরা পড়ে নানান ত্রুটি। কিন্তু মেরামতের জন্য ছিল না নতুন কোনো অর্থের জোগান। ফলে হাজার হাজার কোটি টাকার ইভিএম অচল হয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়। অকেজো মেশিন মেরামত, সংরক্ষণ প্রভৃতির জন্য প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব দিলে বৈশ্বিক অর্থ সংকটের কারণ দেখিয়ে সরকার তা নাকচ করে দেয়। এ অবস্থায় ইভিএমের ভবিষ্যৎ চরম অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হয়। একদিকে ইভিএমের ব্যবহার হ্রাস এবং অন্যদিকে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ দিকে হওয়ায় ইভিএম মেশিনগুলো কী করা হবে তা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় পড়ে কমিশন। এমন প্রেক্ষাপটে আবারও ইভিএম নিয়ে নতুন করে পরিকল্পনা সাজাচ্ছে ইসি। জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, এটা (গতকালের বৈঠক) ছিল কেবল প্রাথমিক আলোচনা। এরপর সিরিজ আলোচনা হবে। এজন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হবে। সেই কমিটির পরামর্শক্রমে পরবর্তী সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এক্ষেত্রে স্টেকহোল্ডার বা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসতে পারে কমিশন। সবার মতামত পেলে ইভিএমের কারিগরি উন্নয়নে হাত দেবে ইসি। তিনি বলেন, গতকাল ইভিএম প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে পরিকল্পনা কমিশনে ব্যয় না বাড়িয়ে কেবল প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর জন্য আমরা প্রস্তাব দিয়েছি। হয়তো কয়েকদিনের মধ্যেই তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এ সম্পর্কে আমাদের জানাবে।
০১ জুলাই, ২০২৪

ভোটে হেরে ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন কৃষক লীগ নেতার
ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে হেরে পাবনা জেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম মেছবাহুর রহমান রোজ ফেসবুকে লিখেছেন ‘ইভিএম ভুয়া’। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠনের নেতা হওয়া সত্ত্বেও এমন মন্তব্যে তিনি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন। গত মঙ্গলবার ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দ্বিতীয় ধাপে ভাঙ্গুড়ায় ইভিএমের (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) মাধ্যমে ৪৫ কেন্দ্রে ভোট হয়। এ নির্বাচনে মেছবাহুর রহমান চেয়ারম্যান পদে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২ হাজার ৬৭৯ ভোট। তিনি ২৮ হাজার ৮৮০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী গোলাম হাসনাইন রাসেল মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে ৩১ হাজার ৫৫৯ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। নির্বাচনের পর ভোট গণনা শেষে পরাজিত হওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে ওই দিন রাতেই ইভিএমকে ভুয়া আখ্যা দিয়ে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে পোস্ট করেন কৃষক লীগ নেতা মেছবাহুর রহমান। তিনি লেখেন, ‘ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে পরাজিতের অভিজ্ঞতা থেকে আগামী তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের প্রার্থীদের প্রতি অনুরোধ, ইভিএম (ভুয়া) সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা, পদ্ধতি ও ক্ষমতাশালীদের প্রতি সজাগদৃষ্টি রাখতে অনুরোধ করছি।’ বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। এই নির্বাচনে মেছবাহুর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. বাকি বিল্লাহ (আনারস), উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাসনাইন রাসেলের সঙ্গে। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার ঘোষিত বেসরকারি ফলাফলে নির্বাচনে গোলাম হাসনাইন রাসেল মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন। এ উপজেলায় মোট ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৩ হাজার ১৯১ জন। ভোট পড়েছে ৩৩.৭৯ শতাংশ। মেছবাহুর রহমানের বড় ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম পাকন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। মূলত তার কারণেই তিনি জেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি হয়েছেন। বিতর্কিত মন্তব্যের বিষয়ে এম মেছবাহুর রহমান রোজ নিজেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনৈতিক ব্যক্তি দাবি করে বলেন, সরকার ভুল করলে তার সমালোচনা করা ভিন্ন রকম কিছু নয়। ভাঙ্গুড়ার ইউএনও ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নাজমুন নাহার বলেন, ইভিএমের মাধ্যমে অত্যন্ত সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এ বিষয়ে কোনো প্রার্থীর কোনো অভিযোগ পাইনি।
২৪ মে, ২০২৪

নির্বাচনে হেরে আ.লীগ নেতা বললেন ইভিএম ভুয়া
পাবনার ভাঙ্গুড়ায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পরাজিত হয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা এম মেছবাহুর রহমান রোজ ইভিএমকে (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ভুয়া বলায় চাঞ্চ্যল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি জেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম পাকনের ছোট ভাই। নির্বাচনের পর ভোট গণনা শেষে পরাজিতের অভিজ্ঞতা নিয়ে ইভিএমকে ভুয়া আখ্যা দিয়ে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে বীর মুক্তিযোদ্ধা এম মেছবাহুর রহমান রোজ পোস্ট করে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন। একজন আ.লীগ নেতা হয়ে সরকারের ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণকে কীভাবে ভুয়া বলেন? এমন প্রশ্ন সবার মুখে মুখে। জানা গেছে, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দ্বিতীয় ধাপে সারা দেশের মধ্যে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন মঙ্গলবার (২১ মে) ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) এর মাধ্যমে ৪৫ কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলায় তিনজন উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তারা হলেন, জেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম মেছবাহুর রহমান রোজ ঘোড়া প্রতীক, জেলা আ. লীগের সদস্য মো. বাকি বিল্লাহ আনারস প্রতীক ও উপজেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাসনাইন রাসেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সহকারী রির্টাানিং কর্মকর্তার ঘোষিত বেসরকারিভাবে ফলাফলে নির্বাচনে গোলাম হাসনাইন রাসেল মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে ৩১ হাজার ৫৫৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বীর মুক্তিযোদ্ধা এম মেজবাহুর রহমান রোজ ঘোড়া প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন মাত্র ২ হাজার ৬৭৯ ভোট। যা বিজয়ী প্রার্থীর চেয়ে ২৮ হাজার ৮৮০ ভোট কম। এ উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১০৩১৯১ জন। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫১৭৭৮ জন ও মহিলা ভোটার ৫১৪১২ জন । এ নির্বাচনে এই উপজেলায় ভোট পড়েছে শতকরা ৩৩.৭৯৫ ভাগ। সূত্র জানায়, ফলাফল প্রকাশের পর চেয়ারম্যান প্রার্থী ও জেলা আ.লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম মেছবাহুর রহমান রোজ তার নিজের পরাজয়ের খবর পেয়ে প্রতিক্রিয়ায় তিনি তার ফেসবুক আইডিতে লেখেন ‘৬ষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের ২য় ধাপে পরাজিতের অভিজ্ঞতা থেকে আগামী ৩য় ও ৪র্থ ধাপের প্রার্থীদের প্রতি অনুরোধ, ইভিএম (ভুয়া) সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা, পদ্ধতি ও ক্ষমতাশালীদের প্রতি স্বজাগ দৃষ্টি রাখতে অনুরোধ করছি।’ একজন আ.লীগ নেতা তার সরকারের ইভিএম এ ভোট গ্রহণ কার্যাক্রম নিয়ে এমন মন্তব্য নিয়ে জনসাধাণের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। বীর মুক্তিযোদ্ধা এম মেছবাহুর রহমান রোজ ‘৭৫ এর পর তিনি বিদেশে অবস্থান করেন। সেখানে কর্মজীবন শেষ করে গত কয়েক বছর আগে তিনি দেশে ফিরে ভাঙ্গুড়া উপজেলার পাথর ঘাটা গ্রামে বসবাস করছেন এবং নিরিবিলি পরিবেশে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তার বড় ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম পাকন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। ঘটনার বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা এম মেছবাহুর রহমান রোজ নিজেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে দাবী করে বলেন, সরকার ভুল করলে তার সমালোচনা করা ভিন্ন রকম কিছু নয়। এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী রির্টানিং অফিসার নাজমুন নাহার বলেন, ইভিএম এর মাধ্যমে অত্যন্ত সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এ বিষয়ে কোন প্রার্থীর কোন অভিযোগ পাননি। 
২৩ মে, ২০২৪

ইভিএম দখলের ভিডিও ধারণের সময় সাংবাদিকদের ওপর হামলা
শরীয়তপুরের জাজিরায় ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের প্রকাশ্যে ভোট দিতে বাধ্য করার অভিযোগ পেয়ে ভিডিও ধারণের সময় হামলার শিকার হয়েছেন ছয় সাংবাদিকসহ অন্তত ১০ জন। মঙ্গলবার (২১ মে) বেলা ১১টার দিকে জাজিরা সেনেরচর ফরাজী দারুস সুন্নাহ নুরানি হাফেজিয়া কওমিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা কেন্দ্রে এ হামলার ঘটনা ঘটে। জাজিরা উপজেলায় মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী ইদ্রিস ফরাজীর কর্মী-সমর্থকরা এ হামলা চালায়। এ সময় স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করেন। পুলিশ, স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে। এই নির্বাচনে ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী এস এম আমিনুল ইসলাম রতন ও মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজীসহ পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। জাজিরা উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি পলাশ খান, সহসভাপতি বরকত মোল্লা, কালবেলার ভেদরগঞ্জ প্রতিনিধি আশিকুর রহমান হৃদয়, সাংবাদিক সানজিদ মাহমুদ সুজন, রুহুল আমিনসহ জেলার সাংবাদিকরা জাজিরা ফরাজী দারুস সুন্নাহ নুরানি হাফেজিয়া কওমিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা কেন্দ্রে সংবাদ সংগ্রহে যান। তখন মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজীর (মোটরসাইকেল প্রতীক) কর্মী-সমর্থকরা ভোটকেন্দ্রের কক্ষের কাপড় সরিয়ে প্রকাশ্যে ভোট দিচ্ছিলেন। এ সময় সাংবাদিকরা ভিডিও ধারণ করতে গেলে ইদ্রিস ফরাজীর সমর্থক বিপ্লবসহ ২৫ থেকে ৩০ জন কর্মী-সমর্থকরা সাংবাদিক পলাশ, বরকত, হৃদয়, সুজন, রুহুল, নুরুল আমিনদের ওপর হামলা চালায়। এসময় ৬ সাংবাদিকসহ ১০ জন আহত হন। হামলায় আহত সাংবাদিক আশিকুর রহমান হৃদয় বলেন, ভোটকেন্দ্রের বাইরে অবস্থান করছিলাম। হঠাৎ জানতে পারি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ভোটারদের প্রকাশ্যে ভোট দিতে বাধ্য করছেন মোটরসাইকেল প্রতীকের সমর্থকরা। পরে আমরা কয়েকজন সাংবাদিক ভিডিও ধারণ করতে গেলে সবুজ শার্ট গায়ে বিপ্লব খা ও মোটরসাইকেলের ব্যাচ পরা এক যুবক আমাদের বাধা দেয় এবং মোবাইল কেড়ে নেয়। পরে আমার সঙ্গে থাকা অন্য সহকর্মীরা আমাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসলে মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থীর ভাই ইমন ফরাজীর নেতৃত্বে অনেক লোক এসে আমাদের ওপর হামলা চালায়। পুলিশের থেকে সাহায্য চাইলে তারাও আমাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। আহত আরেক সাংবাদিক বরকত মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের ওপর যখন হামলা চালানো হয়, আমরা প্রশাসনের কাছে হাতজোড় করে বাঁচাতে অনুরোধ করেছিলাম, তারা তখন সরে যায়। কেউ আমাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। সাংবাদিক পরিচয়পত্র দেখলেই হামলাকারীরা মারধর শুরু করে। জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুল হাসান বলেন, এখানে বেশ কয়েকজনকে আহত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়। এদের মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর। এ ছাড়া একজনের নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে, তার অবস্থার উন্নতি না হলে ঢাকায় পাঠানো হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, বিষয়টি খোঁজখবর নিচ্ছি। এ বিষয়ে আইনিব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে নির্বাচনের সহকারী রিটার্নি কর্মকর্তা ও জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া ইসলাম লুনা বলেন, আমরা খবর পেয়ে জেলা প্রশাসকসহ কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেছি। যারা আহত হয়েছেন তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২১ মে, ২০২৪

অবসানের পথে ইভিএম যুগ
বহুল আলোচিত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রকল্পের মেয়াদ আর বাড়ছে না। চলতি জুনেই এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। নতুন যন্ত্র ক্রয় কিংবা পুরোনোগুলো সংরক্ষণ ও মেরামতের জন্য অর্থ বরাদ্দ না দেওয়ার বিষয়ে এরই মধ্যে সরকারের দিক থেকে নির্বাচন কমিশনকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে এই ইস্যুতে ইসিও একরকম হাল ছেড়ে দিয়েছে। নতুন করে অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার চেষ্টার পরিবর্তে এখন অকেজো ইভিএম যন্ত্রগুলো ধ্বংস করার প্রক্রিয়া নিয়েই বেশি ভাবছে সাংবিধানিক সংস্থাটি। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় আপাতত ইভিএম যুগের অবসান ঘটছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সরকারের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার অন্তত পৌনে তিনশ প্রকল্পের মেয়াদ শিগগির শেষ হতে যাচ্ছে। তবে নানা কারণে এসব প্রকল্পের মেয়াদ আর বাড়ানোর পক্ষে নয় সরকার। সে তালিকায় ইভিএম প্রকল্পটিও রয়েছে। সেজন্য জুনে নির্ধারিত মেয়াদের পর এ প্রকল্প আর না থাকার সম্ভাবনাই বেশি। এরই মধ্যে কমিশনকে সে আভাস দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো বা অর্থ সংস্থানের চেয়ে অকেজো ইভিএম ধ্বংস করার প্রক্রিয়া নিয়েই আগ্রহ বেশি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। সে ক্ষেত্রে সরকার প্রকল্পের মেয়াদ না বাড়ালে জুনের পরেই নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকা ইভিএমগুলো পুড়িয়ে ধ্বংস করার উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে। নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ কালবেলাকে বলেন, ‘ইভিএম প্রকল্পের মেয়াদ আগামী জুনে শেষ হচ্ছে। এরপর আর্থিক জোগান না থাকলে ইভিএমগুলো ধ্বংসের ডিসপোজালের ব্যবস্থা নিতে হবে। এখন আমরা সরকারের কাছে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চেয়ে চিঠি দেব।’ জানা গেছে, ইভিএম যন্ত্রগুলো মেরামত ও সংরক্ষণ নিয়ে অনেক দিন ধরেই মহাবিপাকে রয়েছে নির্বাচন কমিশন। পাঁচ বছর আগে উচ্চমূল্যে কেনা ১ লাখ ৫০ হাজার ইভিএমের মধ্য বর্তমানে মাত্র ৪০ হাজার মেশিন সচল রয়েছে। ইভিএম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) ও ইসির পরীক্ষায় দেখা যায়, অনেক ইভিএম ভাঙা ও ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে যন্ত্রের ভেতর পানি ও কাদামাটি জমে আছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ‘সিকিউরড কানেকটিং কেবল’ নেই। ১০ বছর সচল থাকার কথা থাকলেও মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে অচল হয়ে আছে যন্ত্রগুলো। ইভিএম মেরামত বা সংরক্ষণে কোনো বরাদ্দ না থাকায় এখানে সেখানে অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে। প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা অনেক ইভিএম এখন আবর্জনায় পরিণত হয়েছে। গোডাউন ভাড়া না নিয়ে বিভিন্ন স্থানে রাখা ইভিএমগুলো সরিয়ে নিতে বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও তাতে সাড়া দিচ্ছে না কমিশন। বিষয়টি নিয়ে মাঠ কর্মকর্তারা চরম অস্বস্তিতে পড়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে মাঝেমধ্যে কোনো কোনো সংস্থার সঙ্গে মনোমালিন্য বিবাদে জড়াতে হচ্ছে কর্মকর্তাদের। নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ইভিএম প্রয়োগের শুরু থেকেই এ যন্ত্রটির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় অনেক রাজনৈতিক দল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইভিএমের চাহিদা এখন তলানিতে নেমেছে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে শুরুতে দেড়শ আসন এবং পরে ৭০ থেকে ৮০ আসনে সম্পূর্ণ ইভিএমে ভোট গ্রহণ করার ঘোষণা দেওয়া হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতা এবং পর্যাপ্ত ইভিএমের অভাবে শেষ পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে কমিশন। ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে কোনো আসনেই ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হয়নি। অবশ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাগজের ব্যালটে ভোট হলেও গত ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত ময়মনসিংহ সিটিতে সাধারণ এবং কুমিল্লা সিটির উপনির্বাচনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হয়। আর আগামী ৮ মে প্রথম দফার ১৫২টি উপজেলা নির্বাচনে মাত্র ২২টিতে ইভিএমে ভোট গ্রহণের কথা জানিয়েছে ইসি। ইভিএম নিয়ে জনগণের অনাগ্রহ এবং সচল ইভিএমের অভাবে এসব যন্ত্রের ব্যবহার যেন দিন দিন কমছে। এ অবস্থায় ইভিএমের ভবিষ্যৎ নিয়ে খোদ কমিশনই সন্দিহান। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে কেএম নুরুল হুদা কমিশন দেড় লাখ ইভিএম কিনলেও, সেগুলো সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থাই করা হয়নি। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন ইভিএম কেনা এবং পুরোনো ইভিএম সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নির্বাচন কমিশনের নেওয়া ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার প্রকল্প সরকার স্থগিত করে দেয়। ফলে হাতে থাকা পুরোনো ইভিএমগুলো সচল রাখতে চরম বেগ পেতে হচ্ছে আউয়াল কমিশনকে। সমস্যা সমাধানে মাত্র পাঁচ বছর আগে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার প্রকল্পে ক্রয়কৃত ইভিএমগুলা সচল করতে আরও ১ হাজার ২৫৯ কোটি ৯০ লাখ টাকার চাহিদাপত্র দেয় কমিশন। ইভিএম মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা বরাদ্দ চেয়ে চিঠি চালাচালির পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। বৈঠকে ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে চরম হতাশ সংস্থাটি। ইভিএমের ভবিষ্যত জানতে সম্প্রতি আবারও সরকারকে চিঠি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারের ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্ত পেতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এ চিঠি দেওয়া হবে। ২০১০ সালে ইভিএম চালুর পর স্থানীয় নির্বাচনেই তা ব্যবহার হচ্ছিল। এ টি এম শামসুল হুদা কমিশন ওই ইভিএম সিটি করপোরেশনে বড় পরিসরে ব্যবহার করেছিল, কিন্তু সংসদ নির্বাচনে নিতে পারেনি। ২০১২ সালে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন ইসি আগের ইভিএমকে অনেকটা অকেজো অবস্থায় ফেলে গিয়েছিল। তখন সিটি নির্বাচনেও ইভিএম ব্যবহার হোঁচট খায়। এরপর কে এম নুরুল হুদার কমিশন নতুন করে ইভিএম নিয়ে এগোয়। ৩ হাজার ৮২৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে দেড় লাখ ইভিএম কেনার প্রকল্প অনুমোদন পায়। আইন সংশোধন করে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে ছয়টি সংসদীয় আসনে ইভিএম ব্যবহারও করা হয়। পরে সংসদের উপনির্বাচন, স্থানীয় সরকারের সাধারণ ও উপনির্বাচন মিলে প্রায় ১ হাজার ৪০০টি নির্বাচন হয়েছে ইভিএমে। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, সংরক্ষণে অব্যবস্থাপনা, বিপুলসংখ্যক যন্ত্রাংশ অকেজো, প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না পাওয়া বা বরাদ্দ প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তার কারণে সংকটে পড়েছে নির্বাচন কমিশনের ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রকল্পটি। ইভিএমের প্রকল্প পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান বলেছেন, ‘ইভিএম যন্ত্র সংরক্ষণ, অকেজোগুলো মেরামতসহ প্রকল্পের চলমান কার্যক্রমে আর্থিক সংকট রয়েছে। এসব যন্ত্র মেরামতের জন্য কোনো অর্থের জোগান নেই।’ এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ‘চলমান ইভিএম প্রকল্পের মেয়াদ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সরকার থেকে নতুন বরাদ্দ না দিলে আগামী জুনে এই প্রকল্প বন্ধ করে দিতে হবে। তখন যেসব ইভিএম আছে, সেগুলো সরকারি আইন মেনে স্থায়ীভাবে অকেজো/অপসারণ করা হবে। এ পর্যায়ে আমাদের হাতে থাকা সচল ইভিএম দিয়ে উপজেলা নির্বাচনের ভোট শেষ করা যাবে। আর অর্থ না পেলে উপজেলা নির্বাচনের মাধ্যমেই শেষ হয়ে যাবে আধুনিক প্রযুক্তির এই ভোট ব্যবস্থাপনা।’
০৩ এপ্রিল, ২০২৪

ইভিএম নিয়ে যন্ত্রণায় ইসি
বহুল আলোচিত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এখন গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার কমে আসা এবং দক্ষ জনবল ও অর্থের অভাবে যথাযথ সংরক্ষণ করতে না পারায় এসব অকেজো যন্ত্র নিয়ে মহাযন্ত্রণায় পড়েছে সংস্থাটি। কোথাও কোথাও এসব যন্ত্র রাখা নিয়েও বিবাদে জড়াতে হচ্ছে অন্য কোনো সংস্থার সঙ্গে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতে ইভিএম মেরামত বা নতুন ইভিএম কেনার বদলে প্রকল্পটি বন্ধ করে যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচতে চায় কমিশন। ইসি সূত্রে জানা যায়, পাঁচ বছর আগে উচ্চমূল্যে কেনা দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে বর্তমানে মাত্র ৪০ হাজার মেশিন সচল রয়েছে। ইভিএম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) ও ইসির পরীক্ষায় দেখা যায়, অনেক ইভিএম ভাঙা ও ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে। ইভিএমের ভেতর পানি ও কাদামাটি জমে আছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিরাপদ সংযোগ তার (সিকিউরড কানেকটিং কেবল) নেই। ১০ বছর সচল থাকার কথা থাকলেও মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে অচল হয়ে আছে যন্ত্রগুলো। ইভিএম মেরামত বা সংরক্ষণে কোনো বরাদ্দ না থাকায় এখানে-সেখানে অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে। প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা অনেক ইভিএম এখন আবর্জনা হিসেবে পরিণত হয়েছে। গোডাউন ভাড়া না নিয়ে বিভিন্ন স্থানে রাখা ইভিএমগুলো সরিয়ে নিতে বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও তাতে সাড়া নেই কমিশনের। বিষয়টি নিয়ে মাঠ কর্মকর্তারা অস্বস্তিতে পড়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে মাঝেমধ্যে কোনো কোনো সংস্থার সঙ্গে বিবাদে জড়াতে হচ্ছে কর্মকর্তাদের। এসব ইভিএমের ভবিষ্যৎ কী—তা নিয়ে স্পষ্টভাবে কোনো কিছু বলতে পারছেন না কমিশনের দায়িত্বশীল কেউই। সূত্র জানায়, একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে কেএম নুরুল হুদা কমিশন দেড় লাখ ইভিএম কিনলেও সেগুলা সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নতুন ইভিএম কেনা এবং পুরোনো ইভিএম সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ইসির নেওয়া ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার প্রকল্প সরকার স্থগিত করে দেয়। ফলে হাতে থাকা পুরোনো ইভিএমগুলো সচল রাখতে চরম বেগ পেতে হচ্ছে বর্তমান আউয়াল কমিশনকে। সমস্যা সমাধানে মাত্র পাঁচ বছর আগে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার প্রকল্পে ক্রয়কৃত ইভিএমগুলা সচল করতে আরও ১ হাজার ২৫৯ কোটি ৯০ লাখ টাকার চাহিদাপত্র দেয় কমিশন। ইভিএম মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা বরাদ্দ চেয়ে চিঠি চালাচালির পর অর্থমন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করে ইসি সচিবালয়। বৈঠকে ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে চরম হতাশ সংস্থাটি। ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইভিএমের চাহিদা যেন তলানিতে নামছে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে শুরুতে দেড়শ আসন এবং পরে ৭০ থেকে ৮০ আসনে সম্পূর্ণ ইভিএমে ভোট গ্রহণ করার ঘোষণা দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে কমিশন। গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কোনো আসনেই ইভিএমে ভোট গ্রহণ না করে সব আসনেই ব্যালটে ভোট নেওয়া হয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাগজের ব্যালটে ভোট হলেও গত ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত ময়মনসিংহ সিটিতে সাধারণ এবং কুমিল্লা সিটির উপনির্বাচনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হয়। আর ৮ মে অনুষ্ঠিতব্য প্রথম দফার ১৫২টি উপজেলার মধ্যে মাত্র ২২টিতে ইভিএমে ভোট গ্রহণের কথা জানিয়েছে কমিশন। ইভিএম নিয়ে জনগণের অনাগ্রহ এবং সচল ইভিএমের অভাবে এসব যন্ত্রের ব্যবহার যেন দিন দিন কমছে। এ অবস্থায় ইভিএমের ভবিষ্যৎ নিয়ে খোদ কমিশনই সন্দিহান। সূত্র জানায়, সম্প্রতি চট্টগ্রাম ইনডোর স্টেডিয়ামে রাখা দুই হাজারের ইভিএম সরাতে বলছে স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি ইসির কাছে বারবার জানিয়েছেন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী। তবে গোডাউন ভাড়া না পাওয়া এবং অর্থ বরাদ্দ না থাকায় ইভিএম স্থানান্তর করতে পারছে না ইসি। বিষয়টি নিয়ে ইসি ও স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষের মধ্যে একরকম বিবাদ চলছে। এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ কালবেলাকে বলেন, ইভিএমের জন্য গোডাউন ভাড়া করেও রাখা যাচ্ছে না। কারণ, গোডাউন ভাড়ার কোনো বরাদ্দ নেই। তবে বিকল্প জায়গা বের করে ইভিএমগুলো সরানোর ব্যবস্থা করছি। স্টেডিয়াম থেকে ইভিএমগুলো পাশের অঞ্চলে সরানোর জন্য আমরা একটা পরিকল্পনা করছি। প্রয়োজন হলে ইভিএমগুলো বিএমটিএফে নিয়ে আসব। ২০১০ সালের ১৭ জুন যন্ত্রের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের প্রচলন শুরু করে ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন। সে সময় তারা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা করে প্রায় সাড়ে ১২শ ইভিএম তৈরি করে নেয়। ওই কমিশন এই যন্ত্রে ভোট নিয়ে সফলও হয়। পরবর্তীকালে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশন রাজশাহী সিটি নির্বাচনে ২০১৫ সালের ১৫ জুন ভোট নিতে গেলে একটি মেশিন বিকল হয়ে পড়ে। সে মেশিনটি পরে আর ঠিক করতে পারেনি কমিশন। ফলে ওই মেশিনগুলো নষ্ট করে নতুন করে আরও উন্নত প্রযুক্তির ইভিএম তৈরির নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় রকিব কমিশন। এরপর ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কেএম নূরুল হুদা কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় বিএমটিএফ থেকে গড়ে প্রতিটি আড়াই লাখ টাকা করে দেড় লাখ ইভিএম ক্রয় করে।
২৫ মার্চ, ২০২৪

ইভিএম নিয়ে ত্রুটির প্রমাণ থাকলে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ সিইসির
ইভিএম নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য না ছড়িয়ে বরং এর কোনো ত্রুটি থাকলে প্রমাণসহ আদালতে তা পেশ করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। আজ বুধবার সকালে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনের প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ পরামর্শ দেন। রাসিক নির্বাচনের প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে সিইসি বলেন, অন্যান্য নির্বাচনের মতো রাজশাহী সিটি নির্বাচনেও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করি। আপনারা ভোটে দাঁড়িয়েছেন, ভোটাররাও ভোট দিতে আসবে। ইভিএম সম্পর্কে আপনাদের ধারণা দিতে হবে। তাহলে নির্বাচন সফল হবে। কিন্তু ইভিএম নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। কেননা ইভিএমে আমরা ভূত-পেত্নী দেখিনি। আপনারা দেখতে পেলে আদালতে যান। ইভিএম নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি ছড়াবেন না। আপনাদের কাছে কোনো প্রমাণ থাকলে সরাসরি আদালতে পেশ করেন। সিইসি বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সংস্থা, এটি সরকারের প্রতিনিধিত্ব করে না জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আমরা এ পর্যন্ত ৭০০ থেকে ৮০০ নির্বাচন করেছি। কেউ আমাদের নামে কোনো অভিযোগ দিতে পারিনি। খুবই স্বচ্ছতার সঙ্গে নির্বাচনগুলো করা হচ্ছে। আমরা সাংবিধানিকভাবে দায়িত্ব পালন করছি। ফলে গাজীপুরের মতো রাজশাহীতেও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।  তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে কেউ অনিয়ম করলে, পেশিশক্তির ব্যবহার করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনেক প্রার্থী আচরণবিধি মানছেন না। আমরা নির্বাচনে খুব কঠোর অবস্থানে রয়েছি। কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ পেলে তার প্রার্থিতা বাতিল করা হবে। ইতোমধ্যে আমরা অনেক প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করেছি। এ ছাড়া কেউ কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করলে আমরা নির্বাচন স্থগিত করে দেব। সবাইকে নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আচরণবিধি বিঘ্ন হলে নির্বাচন কমিশন প্রার্থিতা বাতিল করতে বিন্দুমাত্র দেরি করবে না। রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জি এস এম জাফরউল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন- নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান, নির্বাচন সচিব জাহাংগীর আলম, পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি আব্দুল বাতেন, পুলিশ সুপার মাসুদ হোসেন, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আনিসুর রহমান প্রমুখ। এ ছাড়া, রাসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
০৭ জুন, ২০২৩
X