আম রপ্তানি বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে : কৃষিমন্ত্রী
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আম রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য উত্তম কৃষি চর্চা (গ্যাপ) অনুসরণ করে দেশে চলছে নিরাপদ আম উৎপাদন। এ কার্যক্রম সরেজমিনে ঘুরে দেখলেন ঢাকায় নিযুক্ত প্রায় ২০টি দেশের রাষ্ট্রদূত/মিশনপ্রধানরা। বাংলাদেশের এ উদ্যোগকে তারা প্রশংসা করেছেন এবং নিরাপদ আম উৎপাদন কার্যক্রম দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার কান্দবোনা গ্রামে উত্তম কৃষি চর্চা (গ্যাপ) অনুসরণ করে পরিচালিত আম চাষি রুহুল আমিনের আম বাগান পরিদর্শন করেন তারা। কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মো. আব্দুল ওয়াদুদ, স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহা. জিয়াউর রহমান, কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার, পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মো. বখতিয়ার এবং ব্রুনাই দারুস সালাম, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, স্পেন, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভুটান, ভিয়েতনাম, শ্রীলংকা, মিয়ানমার ও লিবিয়ার রাষ্ট্রদূতগণ এ পরিদর্শনে অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) এর বাংলাদেশ প্রতিনিধিও এ টিমে ছিলেন। পরিদর্শন শেষে কৃষিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের আম স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় এবং বিদেশেও খুবই জনপ্রিয়। প্রতিবছর দেশ থেকে লক্ষাধিক টন আম রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু আমরা মাত্র তিন হাজার টনের মতো আম রপ্তানি করতে পারি। এক্ষেত্রে মূল প্রতিবন্ধকতা ছিল গ্যাপ অনুসরণ না করা। সেজন্য, গ্যাপ মেনে আমরা নিরাপদ আম উৎপাদন শুরু করেছি। আজকে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা এ কার্যক্রম ঘুরে দেখেছেন।  মন্ত্রী বলেন, আমরা বেশি পরিমাণ আম রপ্তানির চেষ্টা করছি। এ পরিদর্শনের মাধ্যমে রাষ্ট্রদূতদের উৎসাহিত করছি যাতে করে বেশি পরিমাণ আম রপ্তানি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হয়। আমি মনে করি, এ ভিজিটের ফলে আম রপ্তানি বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। এ সময় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, কৃষি, বাণিজ্য এবং পররাষ্ট্র তিন মন্ত্রণালয় মিলে আমরা আমাদের আমকে বিদেশে ব্র্যান্ডিং করব। যাতে বিদেশে রপ্তানি আরও বৃদ্ধি পায়। আম রপ্তানির ক্ষেত্রে আমাদের বহু সমস্যা আছে, থাকতে পারে। এগুলো আমরা সমাধান করব।   তিনি বলেন, গ্যাপ না থাকলে চাইলেই বিদেশে আম রপ্তানি করা যায় না। গ্যাপ বাস্তবায়ন আমরা শুরু করেছি। সামনে কোনো সমস্যা থাকবে না।  কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার বলেন, আমরা উত্তম কৃষি চর্চা শুরু করেছি। এটি সারা বিশ্বের প্রতিনিধিরা দেখল। আমাদের রপ্তানি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমাদের আমের কোয়ালিটি নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে প্রত্যেকটি দেশেই ফাইটোস্যানিটারি ইস্যু আছে, এর একটা নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডার্ড আছে। গ্যাপ মেনে আম উৎপাদন করতে পারলে বিশ্বের সব দেশেই আম রপ্তানি করা যাবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের সুস্বাদু ও সম্ভাবনাময় আম রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে উত্তম কৃষি চর্চা (গ্যাপ) অনুসরণ করে নিরাপদ আমের উৎপাদন কার্যক্রম ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত/মিশনপ্রধানদের নিকট তুলে ধরতে আমবাগান পরিদর্শনের আয়োজন করে মন্ত্রণালয়। উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের ৩৮টি দেশে আম রপ্তানি হচ্ছে; যদিও এর পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম। ২০২১ সালে বিশ্বে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের আম রপ্তানি হয়। আর বাংলাদেশ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ হাজার ৭৫৭ টন আম রপ্তানি এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ হাজার ১০০ টন আম রপ্তানি হয়েছে। 
২৭ জুন, ২০২৪

আম রপ্তানি বাড়াতে ৮ দাবি ব্যবসায়ীদের
বিদেশে আমের রপ্তানি বাড়াতে ৮ দফা দাবি জানিয়েছে আম ব্যবসায়ী ও চাষিরা। সংবাদমাধ্যমে অতিরঞ্জিতভাবে খবরগুলো প্রচারিত করার কারণেই রাজশাহী অঞ্চলের আম ব্যবসায়ী ও চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বক্তারা। সোমবার (২৭ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম, ঢাকা, (সিজেএফডি)’-এর আয়োজনে ‘বাংলাদেশে আম উৎপাদন : সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক জাতীয় আম সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। আম শিল্পে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ অন্যতম আম উৎপাদক দেশ। আবহাওয়া ও মাটি অনুকূল। মৌসুম মে-সেপ্টেম্বর, পিক জুন-জুলাই। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, সাতক্ষীরাসহ সারা দেশে এর উৎপাদন হয়।  সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে আম চাষের এরিয়া ও ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে। আমের জাতগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো গোপালভোগ, খিরসাপাত, হিমসাগর, ল্যাংড়া, ফজলি, আশ্বিনা বারি আম-৩, বারি আম-৪, বারি আম-১১, বারি আম-১২ ইত্যাদি। পুরোনো বয়স্ক বাগানের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। প্রতিবছর প্রায় ২৫ লাখ টন আম উৎপন্ন হয়। সংগ্রহ না করার কারণে ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ। পিক মৌসুমে উৎপাদন প্রাচুর্যে মূল্য হ্রাস পায়, কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।  ফলের গুণমান পরীক্ষার জন্য পূর্ণ সক্ষমতা সম্পন্ন অ্যাক্রিডিটেড ল্যাবরেটরির অভাব, আমের উন্নত সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তি বিষয়ে বিশেষ করে কোয়ারেন্টাইন পেস্ট যেমন ফ্রুট ফ্লাই, অ্যানথ্রাকনোজ ও বোঁটা পচা রোগে (Stem end rot) ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণের জন্য ভ্যাপার হিট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, অবকাঠামো ও উন্নত প্রযুক্তির অভাব। উৎপাদন ও সংগ্রহোত্তর পর্যায়ে ফসলে ব্যবহৃত যাবতীয় উপকরণ ও কার্যক্রম ফার্ম রেকর্ড বইয়ে লিপিবদ্ধ ও সংরক্ষণ না করা ইত্যাদি। বক্তারা রাসায়নিক উপাদানের ব্যবহার সীমিত রেখে যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে আম উৎপাদন করা, প্যাকিং ব্যবস্থার উন্নয়ন করা, পরিবহনের জন্য আধুনিক যানবাহনের ব্যবস্থা করা, বিমানের কার্গোতে পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত ও সহজতর করা, রপ্তানি উপযোগী আমের চাষ সম্প্রসারণ করা, আম চাষি বিশেষ করে রপ্তানির জন্য আম উৎপাদনকারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। আম থেকে উৎপাদিত পণ্য যেমন জুস, জ্যাম, জেলি, আচার, কেন্ডি ইত্যাদির বিদেশে বাজার সম্প্রসারণ করা, আমভিত্তিক শিল্প স্থাপনে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা, জৈব প্রযুক্তিনির্ভর আম উৎপাদন উৎসাহিত করা, আম সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্যাকিং ও পরিবহন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া, আম রপ্তানির জন্য সব রপ্তানিকারকের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা এবং মানদণ্ড ঠিক করে দেওয়ার দাবি জানানো হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম, ঢাকা, (সিজেএফডি) সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মু. জিয়াউর রহমান এমপি, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সমিতি, ঢাকার সভাপতি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ এগ্রো-কেমিক্যাল ম্যানুফাকচারাস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কে এস এম মুস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।  মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রাব্বানী। প্রধান আলোচক ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যান তত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মোখলেসুর রহমান।
২৭ মে, ২০২৪

চলতি মৌসুমে আম রপ্তানি ২৭০০ টন
প্রতিবছর দেশে প্রায় ২৫ লাখ টন আম উৎপাদন হচ্ছে। এর থেকে অল্প কিছু আম বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। তবে গত ৫ বছরে আমের রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে ২ হাজার ৪৬৮ টন। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৩৪টি দেশে ২ হাজার ৭০০ টন আম রপ্তানি হয়েছে। যা ২০১৭-২০১৮ সালে ছিল ২৩২ টন। গত বছর ২৮টি দেশে মোট আম রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ৭৫৭ টন। কৃষি মন্ত্রণালয় দাবি করছে, এ বছর আরও ১৫ থেকে ২০ টন আম রপ্তানি হবে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিশ্ববাজারে দেশের আমের বিপুল চাহিদা থাকলেও উত্তম কৃষি চর্চাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে আম উৎপাদন ও প্যাকেজিং না হওয়ায় রপ্তানি কম হচ্ছে। এ থেকে উত্তরণে কৃষি মন্ত্রণালয় রপ্তানিযোগ্য আমের উৎপাদন বৃদ্ধি শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
০৫ আগস্ট, ২০২৩
X