আম রপ্তানি বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে : কৃষিমন্ত্রী
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আম রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য উত্তম কৃষি চর্চা (গ্যাপ) অনুসরণ করে দেশে চলছে নিরাপদ আম উৎপাদন। এ কার্যক্রম সরেজমিনে ঘুরে দেখলেন ঢাকায় নিযুক্ত প্রায় ২০টি দেশের রাষ্ট্রদূত/মিশনপ্রধানরা। বাংলাদেশের এ উদ্যোগকে তারা প্রশংসা করেছেন এবং নিরাপদ আম উৎপাদন কার্যক্রম দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার কান্দবোনা গ্রামে উত্তম কৃষি চর্চা (গ্যাপ) অনুসরণ করে পরিচালিত আম চাষি রুহুল আমিনের আম বাগান পরিদর্শন করেন তারা। কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মো. আব্দুল ওয়াদুদ, স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহা. জিয়াউর রহমান, কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার, পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মো. বখতিয়ার এবং ব্রুনাই দারুস সালাম, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, স্পেন, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভুটান, ভিয়েতনাম, শ্রীলংকা, মিয়ানমার ও লিবিয়ার রাষ্ট্রদূতগণ এ পরিদর্শনে অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) এর বাংলাদেশ প্রতিনিধিও এ টিমে ছিলেন। পরিদর্শন শেষে কৃষিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের আম স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় এবং বিদেশেও খুবই জনপ্রিয়। প্রতিবছর দেশ থেকে লক্ষাধিক টন আম রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু আমরা মাত্র তিন হাজার টনের মতো আম রপ্তানি করতে পারি। এক্ষেত্রে মূল প্রতিবন্ধকতা ছিল গ্যাপ অনুসরণ না করা। সেজন্য, গ্যাপ মেনে আমরা নিরাপদ আম উৎপাদন শুরু করেছি। আজকে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা এ কার্যক্রম ঘুরে দেখেছেন।  মন্ত্রী বলেন, আমরা বেশি পরিমাণ আম রপ্তানির চেষ্টা করছি। এ পরিদর্শনের মাধ্যমে রাষ্ট্রদূতদের উৎসাহিত করছি যাতে করে বেশি পরিমাণ আম রপ্তানি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হয়। আমি মনে করি, এ ভিজিটের ফলে আম রপ্তানি বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। এ সময় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, কৃষি, বাণিজ্য এবং পররাষ্ট্র তিন মন্ত্রণালয় মিলে আমরা আমাদের আমকে বিদেশে ব্র্যান্ডিং করব। যাতে বিদেশে রপ্তানি আরও বৃদ্ধি পায়। আম রপ্তানির ক্ষেত্রে আমাদের বহু সমস্যা আছে, থাকতে পারে। এগুলো আমরা সমাধান করব।   তিনি বলেন, গ্যাপ না থাকলে চাইলেই বিদেশে আম রপ্তানি করা যায় না। গ্যাপ বাস্তবায়ন আমরা শুরু করেছি। সামনে কোনো সমস্যা থাকবে না।  কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার বলেন, আমরা উত্তম কৃষি চর্চা শুরু করেছি। এটি সারা বিশ্বের প্রতিনিধিরা দেখল। আমাদের রপ্তানি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমাদের আমের কোয়ালিটি নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে প্রত্যেকটি দেশেই ফাইটোস্যানিটারি ইস্যু আছে, এর একটা নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডার্ড আছে। গ্যাপ মেনে আম উৎপাদন করতে পারলে বিশ্বের সব দেশেই আম রপ্তানি করা যাবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের সুস্বাদু ও সম্ভাবনাময় আম রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে উত্তম কৃষি চর্চা (গ্যাপ) অনুসরণ করে নিরাপদ আমের উৎপাদন কার্যক্রম ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত/মিশনপ্রধানদের নিকট তুলে ধরতে আমবাগান পরিদর্শনের আয়োজন করে মন্ত্রণালয়। উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের ৩৮টি দেশে আম রপ্তানি হচ্ছে; যদিও এর পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম। ২০২১ সালে বিশ্বে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের আম রপ্তানি হয়। আর বাংলাদেশ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ হাজার ৭৫৭ টন আম রপ্তানি এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ হাজার ১০০ টন আম রপ্তানি হয়েছে। 
২৭ জুন, ২০২৪

চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম বাগান পরিদর্শনে যাচ্ছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের সুস্বাদু ও সম্ভাবনাময় আম রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে উত্তম কৃষি চর্চা (গ্যাপ) অনুসরণ করে নিরাপদ আমের উৎপাদন কার্যক্রম ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত অথবা মিশনপ্রধানদের কাছে তুলে ধরতে আমবাগান পরিদর্শনের আয়োজন করেছে মন্ত্রণালয়। কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদের নেতৃত্বে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু এমপি, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মো: আব্দুল ওয়াদুদ এমপি, কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার, পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন; এবং ব্রুনাই দারুস সালাম, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভুটান, ভিয়েতনাম, শ্রীলংকা, মিয়ানমার ও লিবিয়ার রাষ্ট্রদূতগণ এ পরিদর্শনে অংশগ্রহণ করবেন। এ ছাড়া বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর, আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিলের কান্ট্রি ডিরেক্টর, জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থাপ্রধানরাও এ পরিদর্শন টিমে রয়েছেন। সফরকারীরা বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার কান্দবোনা গ্রামে উত্তম কৃষি চর্চা (গ্যাপ) অনুসরণ করে পরিচালিত আম বাগান পরিদর্শন করবেন।
২৬ জুন, ২০২৪

পাহাড়ের সুস্বাদু আম্রপালির কদর দেশজুড়ে
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চলে প্রতিবছর আম্রপালি আমের প্রচুর ফলন হয়ে থাকে। এসব আমের চাহিদা ও কদর রয়েছে দেশজুড়ে। বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলে উৎপাদিত এসব আম স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয়ে থাকে। উপজেলার বিভিন্ন বাগান ও বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাপ্তাইয়ের ঘাগড়া সড়কের আশপাশে গাছে গাছে ঝুলছে আম। গাছ থেকে আম্রপালি সংগ্রহ করে বাজারজাত করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। উপজেলা সদরের বড়ইছড়ি, নতুন বাজারসহ কয়েকটি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, বাজারে আম্রপালি আমের সমারোহ। আম্রপালি আম ছাড়াও রুপালি, রাঙ্গু এবং মল্লিকা জাতের বিভিন্ন ধরনের আম রয়েছে। আম্রপালি আমের বাগান রয়েছে উপজেলার ওয়াগ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা সুজন তঞ্চঙ্গ্যা, যতিন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যাসহ অনেক কৃষকের। তারা জানান, প্রতিবছরের মতো এবারও ভালো ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে বাগানগুলো পাইকাররা কিনে নিয়েছেন। এখন চলছে বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া। কাপ্তাই উপজেলা সদরের মৌসুমি ফল বিক্রেতা মো. দুলাল মিয়ার বলেন, আমি উপজেলায় মৌসুমি ফলের ব্যবসা করে সংসার চালাই। মৌসুমি ফলের মধ্যে আম্রপালি বিক্রয় করেই সবচেয়ে বেশি আয় করি। কারণ কাপ্তাইয়ের আম্রপালি সারা দেশে বেশ পরিচিত। বছরের জুন-জুলাই মাসে প্রচুর আম্রপালি কাপ্তাই থেকে জেলার বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি বলেন, এবারও কাপ্তাইয়ে আম্রপালির ফলন ভালো হওয়ায় অনেক আম সংগ্রহ করেছি বিক্রির জন্য। পাইকারি ৫০-৬০ টাকা ধরে কিনলেও এসব আম ৯০-১০০ টাকা বা তারও বেশি দামে বিক্রি করি। তবে কয়েকজন বিক্রেতা জানান, গতবছরের তুলনায় এখানে দাম কম হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। গতবছর যেখানে প্রতিকেজি আম্রপালি ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এবার একই জাতের দাম ৬০/৭০ টাকা বিক্রয় করছেন। আবার যেসব আমের দাম ৫০ টাকা ছিল এবার তা ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি করছে তারা। অত্যন্ত সু-স্বাদু হওয়ায় আম্রপালির চাহিদা ক্রেতাদের কাছে সবচেয়ে বেশি বলে এ ব্যবসায়ীরা। কাপ্তাই উপজেলা কৃষি অফিসার মো. ইমরান আহমেদ বলেন, গতবছরে তুলনায় এবার কাপ্তাইয়ে আম্রপালির ভালো ফলন হয়েছে। কাপ্তাইয়ের ৫টি ইউনিয়নের প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে ভালো পরিমাণ আম্রপালির চাষ হয়েছে। এসব আমের চাহিদা ও কদর সারা দেশজুড়ে রয়েছে। তিনি বলেন, কাপ্তাইয়ের এসব আম্রপালি স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে বাইরেও বিক্রি হয়ে থাকে। আশা করা যাচ্ছে, এবারও স্থানীয় আম চাষিরাও লাভবান হবেন।
২৬ জুন, ২০২৪

হাঁড়িভাঙা আম সংরক্ষণে হিমাগার নির্মাণ করা হবে
কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুস শহীদ বলেছেন, হাঁড়িভাঙা আম সংরক্ষণের জন্য পদাগঞ্জে হিমাগার নির্মাণ করা হবে। হাঁড়িভাঙা আম বাংলাদেশের গর্ব। সারাদেশে বিভিন্ন জাতের অনেক আম থাকলেও প্রধানমন্ত্রী বিদেশে উপহার হিসেবে হাঁড়িভাঙা আম পাঠিয়ে থাকেন। গতকাল শুক্রবার রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে হাঁড়িভাঙা আম মেলা ও প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। খোড়াগাছ ইউনিয়নের পদাগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান। বিশেষ অতিথি ছিলেন রংপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য জাকির হোসেন সরকার, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাসুদ করিম প্রমুখ।
২২ জুন, ২০২৪

হাঁড়িভাঙা আম দেখলেই মায়া লাগে : কৃষিমন্ত্রী
সুমিষ্ট হাঁড়িভাঙা আম দেখলেই মায়া লাগে। কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে আজকের মেলা সফল হয়েছে। সারা দেশে বিভিন্ন জাতের অনেক আম থাকলেও প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের উপহার হিসেবে হাঁড়িভাঙা আম পাঠান। তিনি কৃষকের জন্য খুবই আন্তরিক। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জ হাটে হাঁড়িভাঙা আম মেলা ও প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ। শুক্রবার (২১ জুন) উপজেলার পদাগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে হাঁড়িভাঙা আমের মেলা ও প্রদর্শনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসানের সভাপতিত্বে এ মেলার আয়োজন করা হয়।  এদিন মেলাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই মেলা প্রাঙ্গণ ভরপুর হয়ে ওঠে। মেলায় বিভিন্ন স্টলে হাঁড়িভাঙা আমসহ বিভিন্ন আম এবং আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি প্রদর্শন করা হয়।  জিআই পণ্য হিসেবে হাঁড়িভাঙা আমকে স্বীকৃতি দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনের সংসদ সদস্য কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য জাকির হোসেন সরকার বলেন, কৃষি সমৃদ্ধ এলাকা মিঠাপুকুর। কৃষকের উৎপাদিত হাঁড়িভাঙা আম দেশে-বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। কৃষকদের সুবিধার্থে আম রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি বিশেষ হিমাগার এবং গবেষণাগারের দাবি জানান। এ ছাড়াও বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন- কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. মাসুদ করিম, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন, রংপুর বিভাগের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক মো. আব্দুল বাতেন, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক একেএম ছায়াদত হোসেন বকুল প্রমুখ। এর আগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন গান ও নৃত্য পরিবেশন করেন আমন্ত্রিত শিল্পীরা।
২১ জুন, ২০২৪

বৃহস্পতিবার বাজারে আসছে হাঁড়িভাঙ্গা আম
জিআই পণ্য স্বীকৃত স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় রংপুরের মিঠাপুকুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম আনুষ্ঠানিকভাবে বাজারে আসছে ২০ জুন থেকে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারেও আম বাজারে আসার দিন গুনছেন চাষিরা। কয়েক বছরের তুলনায় এবারে আমের ফলন কিছুটা কম হলেও বাজারে চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় খুশি তারা। মিঠাপুকুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, মিঠাপুকুরে ১১শ ৫০ হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙ্গা আমের চাষাবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ২৬ হাজার টন। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রংপুর জেলায় ৩ হাজার ৩৩৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাঁড়িভাঙ্গা আমের চাষাবাদ হয়েছে ১ হাজার ৯০৫ হেক্টর জমিতে। এ বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৯ হাজার ৭১০ টন। মিঠাপুকুর উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ বলছে, চলতি মাসের ২০ তারিখ হবে পরিপক্ব হাঁড়িভাঙ্গা আম বাজারে আসছে। এর আগে বাজারে হাঁড়িভাঙা আম পাওয়া গেলেও তা অপরিপক্ব হবে। একটু বেশি দামের আশায় একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা নিয়ম ভঙ্গ করে বাজারে অপরিপক্ব হাঁড়িভাঙ্গা আম বিক্রি করছেন। হাঁড়িভাঙ্গা প্রকৃত স্বাদ পেতে অপেক্ষা করতে হবে জুনের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত। বর্তমানে বাগানগুলোতে আমের শেষ মুহূর্তের পরিচর্যা চলছে। তবে টানা তাপপ্রবাহের কারণে এবার অনেক আমের গুটি ঝরে পড়েছে। এ ছাড়া বৈরী আবহাওয়ায় আমের আকার এ বছর অনেকটা ছোট হয়েছে। এসব কারণে ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা চাষিদের। এ নিয়ে চাষিদের দুশ্চিন্তার ভার করলেও দাম ভালো পেলে সেটি পুষিয়ে যাবে বলে আশা তাদের। মৌসুমের শুরুতে হাঁড়িভাঙ্গা চাহিদা বেশি থাকায় এর দাম কিছুটা বেশি হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে পাইকারিতে প্রতি কেজি হাঁড়িভাঙ্গা আকারভেদে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে পারে বলে চাষিরা জানান। খুচরা বাজারে দাম পড়বে আরেকটু বেশি। কৃষি বিভাগ ধারণা করছে, এবার ১৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে রংপুরের হাড়িভাঙ্গা আমের বেচাকেনা। গত বছর হয়েছিল প্রায় ২০০ কোটি টাকার ওপরে। মিঠাপুকুরের আমবাগানে সরেজমিনে দেখা যায়, সবুজ পাতার ফাঁকে গাছে গাছে ঝুলছে আম। চাষিরা জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর আমের গুটি কম এসেছে এবং খরায় আমের গোড়া শুকিয়ে ঝরে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে। রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আমের প্রধান বাজার মিঠাপুকুরের খোড়াগাছ ইউনিয়নের পদাগঞ্জ হাট। এটি পাইকারি বাজার। আমচাষিরা জানান, এ বছর পৌষ-মাঘ মাসে আমের মুকুল আসার সময়ে অসময়ের বৃষ্টি হওয়ায় বাগানের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তার ওপর এবার এপ্রিল-মে মাসের টানা তাপপ্রবাহে আমগাছে পোকার আক্রমণ হয়েছে। ফলে ঝরে পড়েছে আমের গুটি। পোকা দমনে কীটনাশক ও চাষিদের সাধ্যমতো সেচ দিয়েও খুব একটা কাজ হয়নি। এর ফলে আম উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন রংপুরের আমচাষিরা। মিঠাপুকুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল আবেদীন বলেন, আমের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষক প্রশিক্ষণ ও পরামার্শ প্রদান করে যাচ্ছে কৃষি অফিস। এ ছাড়াও কৃষকদের বিনামূলে বীজ ও সার এবং অন্যান্য উপকরণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। ইউএনও বিকাশ চন্দ্র বর্মন বলেন, জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর হাঁড়িভাঙ্গা আমের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে কৃষক লাভবান হবে। তবে পরিপক্ব আম বাজারে আসতে ২০ জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে কৃষকদের।  রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, কৃষি বিভাগ ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে ২০ জুন থেকে হাঁড়িভাঙ্গা আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। আমের বাজারজাত করতে যাতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে নিয়মিত মনিটরিং করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
১৬ জুন, ২০২৪

আম কিনে বাড়ি ফেরা হলো না ব্যবসায়ীর
সাতক্ষীরা থেকে ঢাকাগামী চলন্ত বাসের মধ্যে মো. আসিফ নামে এক ফল ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। স্বজন ও পুলিশের ধারণা, তিনি অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে মারা গেছেন। গতকাল শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আসিফের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায়। স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকার সাভার বাইপাইলে থাকতেন তিনি। সেখানেই ফলের ব্যবসা করতেন। হাসপাতালে নিয়ে আসা মামা শ্বশুর সিরাজুল ইসলাম জানান, গত রোববার আসিফ ঢাকা থেকে সাতক্ষীরা গিয়েছিলেন আম কিনতে। সেখানে গিয়ে আম নিয়ে ট্রাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেন তিনি। এরপর বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে সাতক্ষীরা থেকে মাস্টার পরিবহনের একটি বাসে করে ঢাকায় ফিরছিলেন আসিফ। পথে বাসের মধ্যে স্টাফরা আসিফকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পান। বাসটি যাত্রাবাড়ী এলাকায় এলে তখন তাকে বাস থেকে নামিয়ে ধোলাইরপাড় মর্ডান হাসপাতালে নিয়ে যান বাসের স্টাফরা। এর মধ্যে স্বজনদের খবর দেওয়া হয়। পরে স্বজনরা ধোলাইরপাড় গিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে এলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সিরাজুল আরও জানান, বাসের স্টাফদের সঙ্গে কথা বলে এবং পরিস্থিতি দেখে ধারণা করা হচ্ছে, বাসের ভেতর তিনি অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে থাকতে পারেন। তবে তার সঙ্গে মোবাইল ফোন এবং মানিব্যাগ অক্ষত রয়েছে।
০১ জুন, ২০২৪

রিমালের তাণ্ডব / সাতক্ষীরা-রাজশাহীতে ঝরে পড়েছে শত শত মণ আম
ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে সাতক্ষীরা ও রাজশাহীতে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নামানোর আগ মুহূর্তে ঝড়ে শত শত মণ আম পড়ে যাওয়ায় বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়ছেন চাষি ও বাগানের ক্রেতারা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, সাতক্ষীরা জেলায় ৩২২ টন আমের ক্ষতি হয়েছে, যার মূল্য ২ কোটি টাকা। এদিকে রাজশাহীতে কী পরিমাণ আমের ক্ষতি হয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি। তবে ঝরে পড়া আম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। সেই হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৭ থেকে ১০ টাকা। তার পরও ক্রেতা মিলছে না। সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে তার ২ থেকে ৩ লাখ টাকার আম ঝরে পড়েছে। সেইসঙ্গে লিচু ঝরে ক্ষতি হয়েছে লক্ষাধিক টাকার। স্থানীয় আরেক চাষি বলেন, ‘ঝড়ে গাছের আম প্রায় সব পড়ে গেছে। কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ঝরে পড়া আমের ক্রেতা নেই। এসব আম কী করব, বুঝতে পারছি না। আম বিক্রির টাকাতেই আমাদের সারা বছর সংসারের খরচ চলে।’ তিনি আরও বলেন, কয়েকদিন আগে লিচুগাছের জন্য এক ব্যবসায়ী ৪৫ হাজার টাকা দাম বলেছিলেন; কিন্তু বেচিনি। ভেবেছিলাম আরও বেশি দামে বেচব। কিন্তু ঝড়ে আম-লিচু দুটিরই ক্ষতি হয়ে গেল। এমন ক্ষতির মুখে পড়েছেন জেলার সব আমচাষি ও বাগান ক্রেতা। সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, জেলায় এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১ হাজার ২৩৫ হেক্টর, কলারোয়ায় ৬৫৮ হেক্টর, তালায় ৭১৫ হেক্টর, দেবহাটায় ৩৮০ হেক্টর, কালিগঞ্জে ৮২৫ হেক্টর, আশাশুনিতে ১৪৫ হেক্টর ও শ্যামনগরের ১৬০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। জেলায় সরকারি তালিকাভুক্ত ৫ হাজার ২৯৯টি আমবাগান এবং ১৩ হাজার ১০০ জন আম চাষি রয়েছেন। সবমিলিয়ে এ বছর ৪ হাজার ১১৮ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সাতক্ষীরার উপপরিচালক কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে অনেক আম পড়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, স্থানীয় কয়েকটি জাতের আম দিয়ে মে মাসের ৯ তারিখ থেকে সাতক্ষীরায় আম সংগ্রহ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ২২ মে হিমসাগর, ২৯ মে ল্যাংড়া ও ১০ জুন আম্রপালি জাতের আম সংগ্রহের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এদিকে রাজশাহীতে ঝড়ে শত শত মণ অপরিপক্ব আম পড়ে যাওয়ায় আমচাষি ও বাগান মালিকদের বড় ধরনের লোকসান গুনতে হচ্ছে। তারা বলছেন, এবার দীর্ঘ শীত ও তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে বাগানে আম কম। এ অবস্থায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাব পড়ায় তারা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বুধবার রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের মোকাম বানেশ্বর হাটে দেখা যায়, ঝড়ে পড়া আমের মণ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। তারপর তেমন ক্রেতা নেই। হাটের আম ব্যবসায়ীরা জানান, আমগুলো কোনোটা ভালো আছে এবং কোনোটা ফেটে গেছে। আঘাতপ্রাপ্ত আমগুলো পাকার সম্ভাবনা খুব কম। এসব আম দিয়ে আচার তৈরি করা হবে। ব্যবসায়ীরা এসব আম কিনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আচার প্রস্তুতকারক কোম্পানিতে পাঠাবেন। আমবাগান মালিক আরমান হোসেন বলেন, ‘ঝড়ে আমের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। মণকে মণ আম পড়ে গেছে। আম পরিপক্বও হয়নি। তাই ঝড়ে পড়া আম বাজারে নিয়ে এসেছি। এগুলো ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলাম।’ বানেশ্বর হাটে আম ক্রেতা মোস্তাকিন রহমান বলেন, ঝরে পড়া আচার ছাড়া কোনো কিছু হবে না। তারা এসব আম বিভিন্ন আচার কোম্পানিতে সরবরাহ করবেন। রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বিহারীপাড়া গ্রামের আমচাষি আসিফ ইকবাল বলেন, ‘শনিবার গোপালভোগের মৌসুম শুরু হলেও এখনো সব আম পাকেনি। পুরোপুরি পাকতে পাঁচ থেকে ছয় দিন সময় লাগতে পারে। ২ জুন থেকে গোপালভোগ নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু তার আগেই ঝড়-বৃষ্টিতে প্রচুর ক্ষতি হয়ে গেল।’ আরেক চাষি তৌহিদ পারভেজ বলেন, ‘এবার বাগানে ২৭টি গাছের মধ্যে ১৯টিতেই আম নেই। বাকি সাতটি গাছে কিছু আম ছিল। বৈরী আবহাওয়ায় নানা প্রচেষ্টায় কোনো রকমে আমগুলো টিকিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু ঝড়-বৃষ্টিতে অর্ধেক আম ঝরে গেছে। ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়লাম।’ রাজশাহীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) উম্মে ছালমা বলেন, রাজশাহীতে এ বছর ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে জেলায় এবার ২ লাখ ৬০ হাজার ৩১৫ টন আমের উৎপাদন হবে। তিনি বলেন, বৈরী আবহাওয়া এবং ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিরূপণ করা যায়নি। ১৫ মে থেকে রাজশাহীতে গুটি জাতীয় আম নামানো শুরু হয়। এরপর গোপালভোগ নামানো শুরু হয় গত ২৫ মে থেকে। ধাপে ধাপে অন্য আমও নামানোর সময় নির্ধারণ করে ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডারও ঘোষণা করা হয়েছে।
৩১ মে, ২০২৪

আম রপ্তানি বাড়াতে ৮ দাবি ব্যবসায়ীদের
বিদেশে আমের রপ্তানি বাড়াতে ৮ দফা দাবি জানিয়েছে আম ব্যবসায়ী ও চাষিরা। সংবাদমাধ্যমে অতিরঞ্জিতভাবে খবরগুলো প্রচারিত করার কারণেই রাজশাহী অঞ্চলের আম ব্যবসায়ী ও চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বক্তারা। সোমবার (২৭ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম, ঢাকা, (সিজেএফডি)’-এর আয়োজনে ‘বাংলাদেশে আম উৎপাদন : সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক জাতীয় আম সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। আম শিল্পে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ অন্যতম আম উৎপাদক দেশ। আবহাওয়া ও মাটি অনুকূল। মৌসুম মে-সেপ্টেম্বর, পিক জুন-জুলাই। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, সাতক্ষীরাসহ সারা দেশে এর উৎপাদন হয়।  সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে আম চাষের এরিয়া ও ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে। আমের জাতগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো গোপালভোগ, খিরসাপাত, হিমসাগর, ল্যাংড়া, ফজলি, আশ্বিনা বারি আম-৩, বারি আম-৪, বারি আম-১১, বারি আম-১২ ইত্যাদি। পুরোনো বয়স্ক বাগানের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। প্রতিবছর প্রায় ২৫ লাখ টন আম উৎপন্ন হয়। সংগ্রহ না করার কারণে ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ। পিক মৌসুমে উৎপাদন প্রাচুর্যে মূল্য হ্রাস পায়, কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।  ফলের গুণমান পরীক্ষার জন্য পূর্ণ সক্ষমতা সম্পন্ন অ্যাক্রিডিটেড ল্যাবরেটরির অভাব, আমের উন্নত সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তি বিষয়ে বিশেষ করে কোয়ারেন্টাইন পেস্ট যেমন ফ্রুট ফ্লাই, অ্যানথ্রাকনোজ ও বোঁটা পচা রোগে (Stem end rot) ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণের জন্য ভ্যাপার হিট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, অবকাঠামো ও উন্নত প্রযুক্তির অভাব। উৎপাদন ও সংগ্রহোত্তর পর্যায়ে ফসলে ব্যবহৃত যাবতীয় উপকরণ ও কার্যক্রম ফার্ম রেকর্ড বইয়ে লিপিবদ্ধ ও সংরক্ষণ না করা ইত্যাদি। বক্তারা রাসায়নিক উপাদানের ব্যবহার সীমিত রেখে যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে আম উৎপাদন করা, প্যাকিং ব্যবস্থার উন্নয়ন করা, পরিবহনের জন্য আধুনিক যানবাহনের ব্যবস্থা করা, বিমানের কার্গোতে পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত ও সহজতর করা, রপ্তানি উপযোগী আমের চাষ সম্প্রসারণ করা, আম চাষি বিশেষ করে রপ্তানির জন্য আম উৎপাদনকারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। আম থেকে উৎপাদিত পণ্য যেমন জুস, জ্যাম, জেলি, আচার, কেন্ডি ইত্যাদির বিদেশে বাজার সম্প্রসারণ করা, আমভিত্তিক শিল্প স্থাপনে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা, জৈব প্রযুক্তিনির্ভর আম উৎপাদন উৎসাহিত করা, আম সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্যাকিং ও পরিবহন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া, আম রপ্তানির জন্য সব রপ্তানিকারকের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা এবং মানদণ্ড ঠিক করে দেওয়ার দাবি জানানো হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম, ঢাকা, (সিজেএফডি) সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মু. জিয়াউর রহমান এমপি, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সমিতি, ঢাকার সভাপতি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ এগ্রো-কেমিক্যাল ম্যানুফাকচারাস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কে এস এম মুস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।  মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রাব্বানী। প্রধান আলোচক ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যান তত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মোখলেসুর রহমান।
২৭ মে, ২০২৪

গোপালভোগে জমেছে আমের হাট, দাম চড়া
রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের হাটে উঠেছে গোপালভোগ বা রানিপছন্দ আম। শনিবার (২৫ মে) এই জাতের আম কেনা-বেচা শুরু হয়েছে উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় আমের হাট রাজশাহীর বানেশ্বর হাটে। একইসঙ্গে কেনা-বেচা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের গুটি জাতের আমও। তবে গত মৌসুমের তুলনায় এবার সব আমের দাম বেশি বলেছেন- ক্রেতা-বিক্রেতারা। গত মৌসুমের তুলনায় এবার প্রতি মণ আম ১ হাজার টাকা বেশি দামে কেনা-বেচা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি মৌসুমে গুটি জাতের পরে এই প্রথম সুস্বাদু কোনো আম বাজারে উঠেছে। জেলার পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাটে সব গুটি জাতের আমের মধ্যে গোপালভোগ কেনা-বেচা হয়েছে। এই হাটে প্রকারভেদে প্রতিমণ গোপালভোগ আম বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়। আর গুটি জাতের আম প্রকারভেদে বিক্রি হয়েছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে। দুপুরে হাটে গিয়ে দেখা গেছে, জেলার চরঘাট, বাঘা, মোহনপুর, দুর্গাপুর উপজেলার আম কেনা-বেচা হচ্ছে বানেশ্বর হাটে। হাটে চাষি ও ব্যবসায়ীরা ব্যাটারিচালিত ভ্যান গাড়ি ও ইঞ্জিনচালিত নসিমন-করিমনে করে আম নিয়ে আসছেন। এসব গাড়িতে ৩০ থেকে ৬০টি ক্যারেট (আম রাখার ঝুড়ি) আম থাকছে। সড়কের উপরে বসা আমের হাটে কেনা-বেচা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। হাটে শুরু পাকা আমই নয়, আচার তৈরির জন্য অনেক ব্যবসায়ী ও কোম্পানির প্রতিনিধিরা কিনছেন কাঁচা আমও। তবে আচার তৈরির এসব আম প্রতিমণ কেনা-বেচা হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে । ৩৫ টা গাছ নিয়ে আব্দুল হান্নানের গোপালভোগ আমের বাগাম। তিনি ৪টি গাছে আম পেড়ে বানেশ্বর হাটে বিক্রি করতে এসেছেন। আব্দুল হান্নান বলেন, গাছে পাকা আম দেখা দিয়েছে। রাতে পাকা আম গাছ থেকে ঝরে পড়ছে। আজ প্রথম গোপালভোগ জামের আম পাড়া শুরু হয়েছে। চারটি গাছের আম হয়েছে ৭৩ ক্যারেট। বাজারে আমের দাম কেমন মনে হচ্ছে এমন কথার উত্তরে আব্দুল হান্নান বলেন, গতবছরের তুলনায় এবছর আমের দাম ভালো আছে। শেষ পর্যন্ত এমন দাম থাকলে ভালো টাকা পাবেন বলে আশা করেন তিনি। এ বছর গাছে আম কম। তাই চাহিদা বেশি। অনেক ব্যবসায়ী গিয়ে বাগান চুক্তি আম কিনতে চাচ্ছে, দেয়নি। গত বছর মৌসুমের শুরুর এই সময়ে আমের দাম ছিল ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা মণ। কিন্তু এ বছর প্রতি মণে এক হাজার টাকা বেশি।   বানেশ্বর হাটের আম বিক্রেতা রইসুল ইসলাম বলেন, আজকেই প্রথম হাটে গোপালভোগ বা রানিপছন্দ আম বিক্রি হচ্ছে। এর আগে গুটি জাতের আম বিক্রি হয়েছে। তবে গুটি জাতের আমের চাহিদা কম। যারা কিনেছেন তারা আচার করার জন্য কিনেছেন। তবে এখন গোপালভোগ আম কেনা-বেচা হচ্ছে, সেই আম মানুষ পাকা অবস্থায় খাবে। এখন আস্তে আস্তে সব আম পেকে যাবে। চাকরির সুবাদে রাজশাহীতে গত বুধবার এসেছিলে লক্ষ্মীপুর জেলার সাইফুল ইসলাম। বাড়ি ফেরার পথে রাজশাহীর বানেশ্বর হাটে কার থামিয়ে আম কিনতে দেখা গেছে তাকে। এসময় তিনি বলেন, রাজশাহীর আমের সুনাম দেশব্যাপী আছে। রাজশাহীতে এসেই আম খেয়েছি। তবে সেই আম ততটা তার ভালো লাগেনি। তাই বাড়ি ফেরার পথে বানেশ্বর হাট থেকে দুই মণ গোপালভোগ আম কিনেছেন তিনি। তিনি আরো বলেন, বুধবার যে আম খেয়েছিলাম তার থেকে হাটে খাওয়া গোপালভোগ আমের স্বাদ ভাল লেগেছে। এই আম মিষ্টি ভালো। কয়েকটা পাকা ছাড়া সব আম কাঁচা কিনেছি। তার থেকে প্রতিমণ আমের দাম নিয়েছে ২৮০০ টাকা। তিনি বলেন, রাজশাহীতে আসার আগে পরিবারের সদস্যরা তাকে আম নিয়ে যেতে বলেছিল। তাই আরও বেশি করে নিয়ে যেতে হচ্ছে আম।   আড়তে আম বিক্রেতা আরিফুল ইসলাম বলেন, হাটে আম বিক্রি হচ্ছে ঠিক। তবে খুচরা ক্রেতা কম। বেশিরভাগ আম আড়তদাররা কিনে নিচ্ছেন। তারা একসাথে চাষি ও ব্যবসায়ীদের থেকে বেশি করে আম কিনে ট্রাক ভর্তি করে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠায়। তবে সড়কের পাশে খুচরাভাবে আম কেনা-বেচা হচ্ছে। হাটে প্রতিদিন আম কেনা-বেচা হচ্ছে। তারমধ্যে এখন পর্যন্ত হাটের দিন (শনিবার-মঙ্গলবার) বেশি আম কেনা-বেচা হয়। ম্যাংগো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, এ বছর লক্ষ্মণভোগ বা লখনা ৩০ মে এবং একই তারিখে হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাতি গাছ থেকে নামানো যাবে। এ ছাড়া ১০ জুন থেকে ল্যাংড়া ও ব্যানানা আম, ১৫ জুন আম্রপালি এবং ফজলি, ৫ জুলাই বারি-৪ আম, ১০ জুলাই আশ্বিনা, ১৫ জুলাই গৌড়মতি ও ২০ আগস্ট থেকে ইলামতি আম নামানো যাবে। এ ছাড়া কাটিমন ও বারি-১১ আম সারা বছর সংগ্রহ করা যাবে। বানেশ্বর আম হাটের ইজারাদার মাসুদ রানা বলেন, রাজশাহীর সবচেয়ে খেতে ভাল এমন আমগুলোর মধ্যে রয়েছে গোপালভোগ, লক্ষ্মণভোগ, ক্ষীরশাপাতি ও ল্যাংড়া। হাটে গোপালভোগ আম আশা শুরু হয়েছে লক্ষ্মণভোগ, ক্ষীরশাপাতি ও ল্যাংড়া আসতে বাকি। হাটে আমের আমদানি বেড়েছে। এবার তুলনামূলক আমের ফলন কম। তবে ফলন কম হলেও আমের দাম ভালো আছে। গত বছর মৌসুমের শুরুতে গোপালভোগ আমের দাম ছিল ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা মণ। কিন্তু এ বছর একই সময় প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়। প্রসঙ্গত, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজশাহী জেলায় আমের সম্ভাব্য উৎপাদন ২ লাখ ৬০ হাজার ৩১৫ টন। এ বছর আমের আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে। যার গড় ফলন ধরা হয়েছে ১৩ দশমিক ২৮ টন।
২৬ মে, ২০২৪
X