মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১
‘আমাদের বাসা থেকে কেউ ঈদগাহে গেল না’
কলকাতায় চিকিৎসার জন্য গিয়ে হত্যার শিকার হয়েছেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। তার মৃত্যুতে ঈদের দিন সকালে বাবাকে নিয়ে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। এ সময় তিনি চোখে পানি অবস্থায় দুটি ছবিও পোস্ট করেন। সোমবার (১৭ জুন) সকালে নিজের ফেসবুক ভেরিফাইড আইডিতে এ পোস্ট দেন তিনি। ওই পোস্টে আনারকন্যা লিখেন, ‘কে দেখবে আমার কান্না আব্বু? মাঠে ঈদের নামাজ পড়াচ্ছে, আব্বু তুমিতো ভোরে সবার আগে উঠে ঈদগাহতে যাও আব্বু। আজ তুমি নেই আব্বু। তুমি কি জানো, আব্বু সবাই দাড়িয়ে কাঁদছে। আমি ঘুমাতে পারছি না আব্বু। তুমি নেই, আজ কেউ আর আমাদের বাসা থেকে বের হয়ে ঈদগাহে গেল না।’ নিজে ভালো নেই জানিয়ে তিনি আরও লিখেন, ‘আব্বু আজ আমার জীবনে প্রথম তোমাকে ছাড়া ঈদের দিন। আল্লাহ তুমি এমনটা কেন করলে? আমারতো কষ্ট হচ্ছে। সবাই ঈদের নামাজ পড়তে যায়, কিন্তু আমার বাবা যায় না। আমার তো শুধু চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আমি ভালো নেই আব্বু তুমি তো জানো।’ সম্প্রতি আরেক ফেসবুক পোস্টে তিনি বাবা হত্যার বিচারের আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘তোমার হত্যার বিচার আমি করবোই বাবা ইনশাআল্লাহ। চিন্তা করো না তুমি। তোমার ডরিন ভুলে যাবে না কোনদিনও। এতো নিকৃষ্টভাবে হত্যা তোমাকে কষ্ট দিয়েছে বিচার হবেই বাবা আমি ভুলবো না কখনোই। আমি এর শেষ দেখবো বাবা। আমার দীর্ঘশ্বাস আর চোখের পানি উপরে একজন দেখেছেন। বিচার আমি করবোই বাবা। আল্লাহ ভরসা।’ গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান এমপি আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মালপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ ছিলেন আনোয়ারুল আজিম। ২২ মে হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় বহুতল সঞ্জিভা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বি-ইউ ৫৬ নম্বর রুমে খুন হয়েছেন এমপি আনার। এ ঘটনার পর ঢাকায় অপহরণ মামলা ও কলকাতায় হত্যা মামলা হয়েছে। ঢাকায় প্রথমে শিমুল ভূঁইয়া, তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমান গ্রেপ্তার হন। তারা তিনজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে তাদের তথ্যে গ্রেপ্তার হন কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু। তিনিও গতকাল ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এদিকে কলকাতা সিআইডি মুম্বাই থেকে গ্রেপ্তার করেছে জিহাদ হাওলাদারকে আর নেপাল থেকে সিয়ামকে। এমপি আনার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও এমপির বন্ধু আক্তারুজ্জামান শাহীনের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ পেয়েছেন ঢাকা ডিবি ও কলকাতা সিআইডির কর্মকর্তারা। তিনি এমপি আনার হত্যার পর দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়েছেন। তাকে ফিরিয়ে আনতে ভারত ও বাংলাদেশ একযোগে কাজ করছে।
১৮ জুন, ২০২৪

এমপি আনার হত্যা / শিমুল ও তানভীরের জামিন নামঞ্জুর 
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের মামলায় আসামি শিমুল ভূঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভূঁইয়া ওরফে আমানউল্লাহ সাঈদ ও তানভীর ভাইয়ার জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার (১০ জুন) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা হকের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। গ্রেপ্তারের পর গত ২৪ মে আসামি শিমুল ভূঁইয়া, তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমানের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। পরে গত ৩১ মে দ্বিতীয় দফায় তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড করেন। পরে তারা দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। বর্তমানে তারা কারাগারে আটক রয়েছেন। এ ছাড়া এ মামলায় গ্রেপ্তার ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতা কাজী কামাল আহমেদ বাবু সাত দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। গতকাল রোববার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তার এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত ২২ মে শেরেবাংলা নগর থানায় নিহত সংসদ সদস্যের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বাদী হয়ে অপহরণ মামলাটি দায়ের করেন। উল্লেখ্য, গত ১২ মে এমপি আনার চিকিৎসার উদ্দেশে কলকাতায় যান। সেখানে বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাসায় ওঠেন। পর দিন দুপুরে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন বলে ওই বাসা থেকে বের হলেও তিনি যান কলকাতা নিউটাউনের একটি আলিশান ফ্ল্যাটে। সেদিন ওই ফ্ল্যাটে হত্যার শিকার হন এমপি আনার। মরদেহ টুকরো টুকরো করে ট্রলি ব্যাগে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেয় হত্যাকারীরা। ওইদিন ফ্ল্যাটে ছিলেন আমানুল্লাহ সাইদ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভূঁইয়া, তানভীর ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান, জিহাদ হাওলাদার, সিয়াম হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান, ফয়সালসহ অন্যরা। আর এই হত্যার মূল পরিকল্পনা করেন এমপি আনারের বন্ধু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আক্তারুজ্জামান শাহীন। যিনি হত্যার চূড়ান্ত ছক কষে আনার কলকাতা যাওয়ার আগেই দেশে ফিরে আসেন। হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশ থেকে দিল্লি, কাঠমান্ডু, দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান শাহীন। বর্তমানে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন।
১০ জুন, ২০২৪

নেপাল থেকে ফিরে আনার হত্যার নতুন তথ্য দিলেন ডিবিপ্রধান
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেছেন, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার সঙ্গে জড়িত সিয়াম কাঠমান্ডু পুলিশের হাতে আটক রয়েছেন। তাকে কোথায় পাঠাবে নেপাল তা এখনই বলা যাচ্ছে না।  সিয়ামকে ভারতে বা বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে বলেও জানান তিনি। মঙ্গলবার (৪ জুন) নেপাল থেকে ফিরে এসে শাহজালাল বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান। ডিবির হারুন বলেন, কিছু বিষয় বিবেচনা করে নেপাল সিদ্ধান্ত নিবে সিয়ামকে কোথায় পাঠানো হবে।  তবে কোথায় অপরাধ সংঘটিত হয়েছে এবং কাকে হত্যা করা হয়েছে, এসব বিষয় বিবেচনা করে আটক সিয়ামকে ভারত বা বাংলাদেশকে নেপাল দিতে পারে। তবে ভারতের সঙ্গে নেপালের চুক্তি রয়েছে। ভারতকে দিলেও আমাদের তদন্তকাজ বাধাগ্রস্ত হবে না। তিনি আরও বলেন, সিয়াম যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এবং এমপি আনারের বন্ধু আখতারুজ্জামান শাহীনের সবচেয়ে কাছের মানুষ। এ অবস্থায় ভারতীয় পুলিশের কাছে সিয়ামকে দিলে তাকে নিয়ে আলামত উদ্ধারসহ তদন্তকাজ এগিয়ে নেওয়া সহজ হবে। সিয়ামের সঙ্গে কোনো কথা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, আমাদেরকে আনঅফিসিয়ালি জানানো হয়েছে। তবে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, সেখানকার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে আমাদের কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। এ ছাড়া সেখানকার যে সব হোটেলে সিয়াম ছিল সে সবের ফুটেজও সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় যান আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। পরে কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে এমপি আনারকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানায় ভারতীয় পুলিশ। তারপর থেকে বেরিয়ে আসছে নানা তথ্য।  
০৪ জুন, ২০২৪

এমপি আনারের হাড় খুঁজতে যা করছে সিআইডি
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের হাড় ও খুলি উদ্ধারে এবার নতুন উদ্যোগ নিয়েছে কলকাতা পুলিশ। রোববার (২ জুন) ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানায়, পশ্চিমবঙ্গের বাগজোলা খালের নোংরা পানিতে ডুবুরিদের কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। তাই নৌসেনা এবং উপকূলরক্ষী বাহিনীর সাহায্য নিতে প্রক্রিয়া শুরু করেছে সিআইডি। আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, এমপি আনারের দেহের হাড় এবং মাথার অংশ টুকরো টুকরো করে ভাঙড়ের পোলেরহাট থানার কৃষ্ণমাটি এলাকার বাগজোলা খালে ফেলা হয়েছে। সন্দেহভাজন খুনি জিহাদ হাওলাদারের এমন দাবির পর সেখানে সাত দিন ধরে তল্লাশি চালিয়েও কিছু পাননি ডুবুরিরা। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করলে হাড় বা মাথার খুলির অংশ উদ্ধার হতে পারে বলে মনে করছেন সিআইডি কর্মকর্তারা। এর আগে কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জিভা গার্ডেনের বিলাসবহুল আবাসনের সেপটিক ট্যাংক থেকে যে মাংসপিণ্ড উদ্ধার হয়েছে, সেগুলো আনারের কি না, তা জানতে ফরেনসিক পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পজিটিভ হলে এমপি আনারের মেয়ে কিংবা তার কোনো আত্মীয় সঙ্গে ডিএনএ প্রোফাইল ম্যাচিংয়ের জন্য পাঠানো হবে ল্যাবরেটরিতে। প্রসঙ্গ, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারত যান সংসদ সদস্য আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পর দিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ আনোয়ারুল আজিম।
০২ জুন, ২০২৪

শিলাস্তিকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর নতুন তথ্য
কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জিভা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে খুন হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার তিন আসামিকে আবারও রিমান্ডে নিয়ে চলছে জিজ্ঞাসাবাদ। এরই মধ্যে ধীরে ধীরে সামনে আসছে চাঞ্চল্যকর সব লোমহর্ষক তথ্য।  জানা যায়, হত্যার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এমপি আনারকে রিসিভের দায়িত্বে ছিলেন শিলাস্তি রহমান।  শুক্রবার (৩১ মে) এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে দেশে গ্রেপ্তার তিন আসামির দ্বিতীয় দফা রিমান্ড আবেদনে এমন তথ্যই উল্লেখ করেন ডিবির সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহফুজুর রহমান। এদিন আট দিনের রিমান্ড শেষে সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমানকে আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের আরও আট দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শান্ত ইসলাম মল্লিকের আদালত তাদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।   এদিকে তিন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিবি জানায়,  এমপি আনারকে হত্যা করার আগে কলকাতার সেই ফ্ল্যাটে ওঠেন শিলাস্তি রহমান। হত্যা করার সময় ফ্ল্যাটে ছিলেন শিলাস্তি। তার দায়িত্ব ছিল এমপি আনারকে রিসিভ করা। সেই অনুযায়ী শিলাস্তি রহমান এমপি আনারকে রিসিভ করেন। এরপর থেকে এমপি আনারকে আর পাওয়া যায়নি। রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, গ্রেপ্তার শিমুল ভূঁইয়া জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তিনি নিষিদ্ধঘোষিত পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল) শীর্ষস্থানীয় নেতা। তিনি খুলনা, ঝিনাইদহ, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে তাদের নিষিদ্ধ দলের কার্যক্রম পরিচালনা করেন। শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে ভুক্তভোগীর আদর্শের বিরোধ ছিল। এ ছাড়া ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী আখতারুজ্জামান ওরফে শাহিনের সঙ্গেও আনারের বিরোধ ছিল। এই দুই বিরোধকে কেন্দ্র করে শাহিন ও শিমুল ভূঁইয়া আনারকে হত্যার জন্য দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করেন। আর আগেও দুবার আনারকে হত্যার পরিকল্পনা করে ব্যর্থ হন। পরে শাহিন ভারতের কলকাতার অভিজাত নিউটাউন এলাকায় ২৫ এপ্রিল একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। পরিকল্পনায় যুক্ত হন শিলাস্তি রহমান। পরে তাদের সঙ্গে হত্যা পরিকল্পনার মিটিং করে শাহিন গত ১০ মে বাংলাদেশে চলে আসেন।   রিমান্ড আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, পরবর্তী সময়ে শিমুল ভূঁইয়া ও শাহিনের নির্দেশে অন্য আসামিরা ভুক্তভোগীকে কৌশলে ব্যবসার কথা বলে কলকাতার ওই ফ্ল্যাটে নিয়ে যান। পরে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী শিমুল ভূঁইয়া অন্য আসামিদের সহায়তায় আনারকে হত্যা করেন। হত্যার পর তার মরদেহের হাড় মাংস আলাদা করে, মাংসের ছোট ছোট টুকরো করে ফ্ল্যাটের টয়লেটের কমোডে ফেলে ফ্ল্যাশ করা হয়। এ ছাড়া হাড়সহ শরীরের অন্যান্য অংশ ট্রলিব্যাগে করে কলকাতার নিউটাউন থেকে দূরে একটি খালে ফেলে দেয়। রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, শাহিন ভূঁইয়াকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য কলকাতার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি পুলিশকে জানানো হয়। পরে কলকাতার সিআইডি পুলিশ ওই ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাংকে জমা হওয়া মানুষের মাংসসদৃশ কিছু উদ্ধার করে, যা ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে আনোয়ারুল আজিম আনারের কি না, নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে কলকাতার সিআইডি পুলিশের মাধ্যমে মৌখিকভাবে জানানো হয়। এই আলামত উদ্ধারের সময় ডিবি পুলিশের তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিল। আবেদনে আরও বলা হয়, গ্রেপ্তার শিমুল ভূঁইয়া আরও জানান, আনারকে হত্যা করা ও লাশ থেকে হাড় মাংস আলাদা করার কাজে আসামি ফয়সাল, মোস্তাফিজ ও জিহাদ সরাসরি জড়িত ছিলেন। হাড় ও শরীরের অন্যান্য অংশ দূরে ফেলে দেওয়ার কাজে সিয়ামসহ অজ্ঞাতনামা ২-১ জন সরাসরি জড়িত ছিলেন।  
৩১ মে, ২০২৪

‘আনার হত্যার যেসব তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়েছি, তা পেয়েছি’
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার তদন্ত শেষে কলকাতা থেকে দেশে ফিরেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশিদ। দেশে ফিরে তিনি বলেন, ‘আনার হত্যার তদন্তকাজ সফল হয়েছে। যেসব তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে কলকাতা গিয়েছি, তা পেয়েছি।’ বৃহস্পতিবার (৩০ মে) বিকেল ৪টায় ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান ডিবিপ্রধান। এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। হারুন অর রশীদ বলেন, আলামত উদ্ধারসহ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করায় আনার হত্যার তদন্ত অনেকটাই এগিয়েছে। ফরেনসিক রিপোর্ট পেলেই তা নিশ্চিত হওয়া যাবে।   ডিবিপ্রধান বলেন, আনার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আখতারুজ্জামান শাহীন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। আরেকজন অভিযুক্ত নেপালে। ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাদের ফিরিয়ে আনা হবে। আমরা কাঠমান্ডুর সঙ্গে যোগাযোগ করছি।   গত ২৬ মে ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল কলকাতায় যায়। পর দিন ২৭ মে সকালে মামলার অন্যতম আসামি কসাই জিহাদকে সঙ্গে নিয়ে সঞ্জিবা গার্ডেনের আলোচিত সেই ফ্ল্যাটে যায় ডিবির ওই দল। এ ছাড়াও জিহাদকে নিয়ে বাগজোলা খালের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন তারা। পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির হেডকোয়ার্টার অবনীভবনে ভারতীয় গোয়েন্দাদের সাথেও একাধিকবার বৈঠক করেন ডিবি প্রতিনিধিরা। এখন পর্যন্ত সংসদ সদস্য আনার হত্যার ঘটনায় তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। গ্রেপ্তার আসামিরা হলো- আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজি। উল্লেখ্য, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান এমপি আনার। তিনি পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে ওঠেন। সেখানে ১৩ মে তাকে হত্যা করে মরদেহ টুকরো টুকরো করে গুম করা হয়েছে বলে জানায় ডিবি। আনোয়ারুল আজিম আনার ১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মধুগঞ্জ বাজার এলাকায়। পেশায় ব্যবসায়ী আনোয়ারুল আজিম আনার আওয়ামী লীগের কালিগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ঝিনাইদহ-৪ আসন থেকে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে পরপর তিনবার সংসদ সদস্য হন আনার।
৩০ মে, ২০২৪

এমপি আনার হত্যাকাণ্ড / যা বললেন ‘কসাই’ জিহাদের বাবা
সম্প্রতি ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার অভিযোগে ভারতে পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার হয়েছেন জিহাদ হাওলাদার। এ বিষয়ে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর গ্রামে কথা হয় জিহাদের বাবা জয়নাল হাওলাদারের সঙ্গে। তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘জিহাদের সঙ্গে বহুদিন ধরে আমার কথা হয়নি। ঢাকায় একটি ঝামেলার পর জেলে ছিল। তার কারণে আমার পরিবার শেষ হয়ে গেছে। তার এই কর্মকাণ্ডে আমরা হতাশ।’ জয়নাল হাওলাদার আরও বলেন, ‘আমার ছেলে অপরাধী হলে তার বিচার হোক। এমন ছেলে আমি চাই না, যে ছেলের জন্য মা-বাবার মুখ থাকে না। এমন ছেলে না থাকাই ভালো।’ জানা গেছে, জিহাদ হাওলাদার খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর গ্রামের জয়নাল হাওলাদারের ছেলে। পেশায় বাবা ও ছেলে দুজনই রং মিস্ত্রি। খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর গ্রামে জিহাদ হাওলাদারের বাড়িতে থাকেন তার বাবা জয়নাল হাওলাদার, মা, স্ত্রী মুন্নী বেগম ও দেড় বছরের শিশু সন্তান। চেয়ারম্যানের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে হত্যাচেষ্টা, মারামারি, ডাকাতিসহ একাধিক মামলার আসামি তিনি। যশোরের কোনো এক মামলায় তাদের বাড়িতে ডিবি পুলিশের অভিযান চালানোর পর থেকেই আত্মগোপনে ছিলেন জিহাদ। এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যারি ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার (২৩ মে) রাতে ভারতে জিহাদ হাওলাদার নামে এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (সিআইডি)। ভারতের দিল্লীতে অবৈধভাবে জিহাদ থাকতেন এবং সেখানে তিনি কসাই জিহাদ নামেই পরিচিত ছিলেন। সিআইডি জানায়, জিহাদ অবৈধভাবে দিল্লীতে বসবাস করতেন। দুই মাসে আগে সংসদ সদস্য আনারকে হত্যার জন্য তাকে কলকাতায় আনে আখতারুজ্জামান শাহীন। খুনের সময় আরও চার বাংলাদেশি ওই ফ্ল্যাটে ছিলেন। কিলিং মিশন শেষে মরদেহ টুকরো টুকরো করে প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে গুম করা হয় বলে জানান জিহাদ। দিঘলিয়া থানা পুলিশ সূত্র জানা গেছে, জিহাদ হাওলাদারের বিরুদ্ধে দিঘলিয়া থানায় ২০২৩ সালের ৮ জুন অস্ত্র আইন, ২০২০ সালের ২৫ মে মারামারি ও ২০২০ সালের ২২ এপ্রিল মারামারির মামলা রয়েছে। তবে অনেক দিন ধরে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। জিহাদ হাওলাদারের স্ত্রী মুন্নী বেগম জানান, ২০১৯ সালে প্রেমের সম্পর্কের মাধ্যমে জিহাদের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। সেসময় জিহাদ রং মিস্ত্রির কাজ করতেন। ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর তাদের সংসার একটা ছেলের জন্ম হয়। এক বছর আগে ঢাকা ও যশোরের দুটি মামলায় জড়িয়ে পড়ায় তিনি গা ঢাকা দেন। সেই থেকে জিহাদ দেশের মধ্যে কিংবা অন্য দেশে আছে সেটা তারা জানেন না। সর্বশেষ তার সঙ্গে এক দেড় মিনিটের জন্য মোবাইল ফোনে কথা হয়েছিল প্রায় ৯ মাস আগে। শুধু তার আড়াই বছরের ছেলে ও বাবা-মা কেমন আছে সেই বিষয়ে খবর নিয়েছিল। শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক ছিল কিনা অথবা এই ধরনের কোনো অপকর্মে জড়িত ছিল কিনা সেটিও জানেন না তার স্ত্রী। মুন্নি বেগম জানান, তার স্বামীর বিরুদ্ধে ঢাকায় ও যশোরে মামলা রয়েছে। টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রচারের পর তার বাড়িতে সকাল থেকেই এলাকার লোকজন ভিড় করতে শুরু করে। জিহাদের কারণে তার নিজের মা-বাবার সাথে তার সম্পর্ক নেই। জিহাদের বড় দুই ভাইও তাদের সাথে কোনো যোগাযোগ করে না। শ্বশুর জয়নাল হালদারের আয়ে তাদের সংসার চলে। এদিকে এলাকার অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন যে, এমন কাজ জিহাদ কীভাবে ঘটাতে পারে। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকলে এলাকাবাসী শাস্তিও দাবি করেছেন।
২৫ মে, ২০২৪

মদ ও সুন্দরী মেয়েদের নিয়ে আড্ডা হতো শাহীনের বাগানবাড়িতে
পরিকল্পনাকারী হিসেবে উঠে এসেছে তার দীর্ঘদিনের বন্ধু আক্তারুজ্জামান শাহীনের নাম। তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। কোটচাঁদপুরের নির্জন এলাকায় বিলাসবহুল একটি বাগানবাড়ি রয়েছে শাহীনের। সেখানে আনাগোনা ছিল অনেক প্রভাবশালীর। এ বাড়িতেই শাহীনের সঙ্গে একান্তে আলাপ করতেন এমপি আনার। দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ উঠলেও তা অস্বীকার করেছেন শাহীন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে টেলিফোনে সাংবাদিকদের বলেছেন, তাকে ফাঁসানো হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, কোটচাঁদপুর শহর থেকে সাড়ে ৫ কিলোমিটার দূরে এলাঙ্গী গ্রামের নির্জন মাঠ। মাঠ পেরিয়ে চারপাশে জঙ্গল, কাঁটাতার ও ফুলেঘেরা বেড়া। ভেতরের আমবাগানের এক প্রান্তে বিলাসবহুল দ্বিতল বাড়ি, যা দূর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই। বাড়ির দ্বিতীয় তলার বেশিরভাগই কাচঘেরা। ঝুলছে বড় বড় পর্দা। আরেক প্রান্তে দেখা যায়, একটি টিনশেড। যার সামনে ছাউনির নিচে রাখা আছে সাদা রঙের গাড়ি। চার বছর আগে ৩০ বিঘা জমিতে এই বাংলো বাড়িটি গড়ে তুলেছিলেন শাহীন। এলাকার মানুষ জানান, গত এক বছরের মধ্যে শাহীন ছয় মাস নিউইয়র্কে, আর ছয় মাস বাংলাদেশে ছিলেন। গ্রামে এলে তিনি বাগানবাড়িতেই থাকতেন। তবে বাড়ির ভেতরে কী হতো, সেটি কখনো দেখতে পারেনি তারা। তবে মাঝেমধ্যেই রাতের বেলায় বড় বড় গাড়ি ঢুকত সেখানে। বাগানবাড়ি থেকে বেজে উঠত গান। তবে থানা-পুলিশ কিংবা আইনের ভয়ে কেউই কখনো মুখ খোলেননি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এলাঙ্গী গ্রামের আসাদুজ্জামানের তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে চতুর্থ সন্তান শাহীন। তার বাবা আড়তদারি ব্যবসা এবং কৃষিকাজ করতেন। তার বড় ছেলে সহিদুজ্জামান সেলিম থাকেন কোটচাঁদপুর শহরের বাজারপাড়ার বাড়িতে। তিনি কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র। ব্যবসা করেন। আরেক ছেলে মনিরুজ্জামান মনির ১৯৮৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েট শহরে থাকেন, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। মেয়ে খুকু থাকেন কখনো কানাডায়, আবার কখনো ঢাকায়। ছোট ছেলে আক্তারুজ্জামান শাহীন থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী। আরেক মেয়ে এলিন থাকেন ঢাকায়। শাহীন কোটচাঁদপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং কেএমএইজ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোনোর আগেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। কলেজে ভর্তির পর মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েন। পরে চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমি থেকে লেখাপড়া শেষে জাহাজে চাকরি নেন। চাকরির দুই বছরের মাথায় ওপি-ওয়ান ভিসা পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সুযোগ পান। যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭৯ ইস্ট সেভেন্থ স্ট্রিট ব্রুকলিন এলাকায় শাহীনের বাড়ি রয়েছে, সেখানকার নাগরিকও তিনি। তবে তিনি কত সালে আমেরিকায় যান, তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি তার বড় ভাই সেলিম। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর থেকেই শাহীন নানা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হন। এলাকার মানুষ জানত, বাংলাদেশ, ভারত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন পণ্য আমদানি-রপ্তানি করেন। এসব দেশে তার যাতায়াতও ছিল। গত পৌরসভা নির্বাচনের সময় ভাই সেলিমের পক্ষে বেশ সক্রিয় ছিলেন তিনি। ওই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের হুমকি-ধমকি ও হামলা করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন সেলিম। শাহীনের বাগানবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির খয়েরি রঙের গেটটি তালাবদ্ধ। ডানপাশে ওপরে লাগানো রয়েছে দুটি সিসি ক্যামেরা। এ ছাড়া বাগানবাড়ির চারপাশে অনেক সিসি ক্যামেরা রয়েছে। এই বাগানবাড়ির ভেতরে রয়েছে পুকুর, গরুর খামার। রিসোর্ট হিসেবেও এটিকে রূপান্তরের পরিকল্পনা ছিল তার। বাড়ির দারোয়ানকে পাওয়া না গেলেও সফি উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘যাওয়া-আসার পথে দেখি গেটে লেখা, কুকুর হইতে সাবধান। আর ভেতরে কাউকে ঢুকতে দেয় না। তবে কিছু সময় লোকজন আসে, ভেতরে ঢোকে। মাঝে মাঝে রাতে গানবাজনা হয়, মাইক বাজে। প্রায়ই গাড়ি নিয়ে ভেতরে ঢোকে। দিনে ও রাতের বেলায় কেউ মোটরসাইকেল নিয়েও ঢোকে। মোবারকগঞ্জ চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি গোলাম রসুল বলেন, আনার ও শাহীনের বন্ধুত্ব প্রায় ৩০ বছরের। পাশের কোটচাঁদপুর উপজেলার এলাঙ্গী গ্রামে শাহীনের ওই বাংলোয় প্রথমবার তিনি গিয়েছিলেন বছরখানেক আগে। তিন-চার মাস আগে শেষবার এমপি আনার তাকে ওই বাংলোয় নিয়ে গিয়েছিলেন। একদিন দর্শনা থেকে বাড়ি ফেরার পথে আনার তাকে বলেছিলেন, চলো বন্ধু শাহীনের সঙ্গে দেখা করে আসি। এরপর তারা দুজন ওই বাংলোয় যান। আনার একান্তে শাহীনের সঙ্গে কথা বলেন। তবে রসুল বাইরে বাংলোর মধ্যে একটি কক্ষে বসে অপেক্ষা করেছিলেন। রসুল বলেন, বাংলো দেখে তিনি হতবাক হন, এই গ্রামের মধ্যে এত ভিআইপি বাংলো। যেখানে বিদেশি কুকুর, অনেক কর্মচারী, ভিআইপি আসবাবপত্র দিয়ে সাজানো। আনোয়ারুল তাকে বলেছিলেন, শাহীন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার, যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। এখানে বেড়াতে এলে এই বাংলোতে অবস্থান করেন। কোটচাঁদপুরের মানুষ শাহীনের অপকর্মের বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছে। এতদিন মানুষ তার নির্যাতন সহ্য করেছে। দেড় বছর আগে কোটচাঁদপুরে দুটি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এই শাহীন জড়িত বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন। এলাকাবাসী বলছেন, বাগানবাড়িতে বিভিন্ন সময় নামিদামি অনেক লোক আসা-যাওয়া করেন। রাতে সেখানে মদের আড্ডা আর সুন্দরী মেয়েদের নিয়ে আমোদ-প্রমোদ করা হয়। শাহীন নিজেই এলাকায় সালিশ-দরবার করতেন। সেখানে তার রায়ই চূড়ান্ত হতো। কেউ বিরোধিতা করলে পুলিশ দিয়ে তাকে হয়রানি করার অভিযোগও রয়েছে। তবে শাহীন এতটাই প্রভাবশালী ছিলেন, তার বিরুদ্ধে থানা-পুলিশে অভিযোগ দিয়ে লাভ হতো না। শাহীন গত দেড় দশকে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। শাহীনের বড় ভাই পৌর মেয়র সহিদুজ্জামান সেলিম বলেন, শাহীনের সঙ্গে সর্বশেষ ছয় দিন আগে কথা হয় হোয়াটসঅ্যাপে। তবে শাহীন তখন কোন দেশে ছিল জানি না। শাহীনের স্ত্রী-সন্তানরা মাঝেমধ্যে বেড়াতে আসে। শাহীন এলাঙ্গীতে বাগানবাড়ি করার পর আমার বাড়িতেও থাকে না। সর্বশেষ ছয় মাস আগে থেকেছে এক রাত। তিনি বলেন, শাহীন এত বড় একটি হত্যাকাণ্ড ঘটাবে এটা বিশ্বাস হয়নি আমাদের। তবে প্রশাসনের উচিত সঠিক তদন্ত করা। যদি ভাই দোষী হয় তাহলে প্রচলিত আইনে তাকে শাস্তি দেওয়া হোক—এটা আমরা চাই। এমপি আনারের সঙ্গে তার একটা পারিবারিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল, যেটা আমি জানতে পেরেছি গত ৫-৬ বছর আগে। তবে কী ব্যবসা ছিল, তা আমরা কখনো জানতে পারিনি। ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর থানার ওসি সৈয়দ আল মামুন জানান, তিনি নিজেও শাহিনের বাগানবাড়িতে গেছেন, সেখানে সুইমিংপুল থেকে শুরু করে মাছের পুকুর, খেলার মাঠ, চা বাগান, ডুপ্লেক্স বাড়ি এবং বিদেশি কুকুর রয়েছে। সেখানে উঁচুতলার লোকরা আসা-যাওয়া করত বলে শুনেছি। অভিযুক্ত আক্তারুজ্জামান শাহীন দাবি করেন তাকে ফাঁসানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে টেলিফোনে সাংবাদিকদের জানান, ‘আনার হত্যার ঘটনায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। ঘটনার সময় আমি ভারতে ছিলাম না। মানুষ দেশে অনেক কথাই বলে। যদি কোনো প্রমাণ থাকে তাহলে দেখাক। আমার বন্ধু আনার ফ্ল্যাটের চাবি চেয়েছিল। সে আমার সঙ্গে কয়েকবার চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিল। একপর্যায়ে যখন বুঝেছি, বাংলাদেশের পুলিশ আমাকে নিয়ে কথা বলছে। আমার বন্ধু যখন রেসপন্স করছে না, তখন আমি চলে এসেছি যুক্তরাষ্ট্রে। এখন আমাকে বলা হচ্ছে মাস্টারমাইন্ড। বাংলাদেশ সরকার বা পুলিশের কাছে কোনো ডকুমেন্ট থাকলে তারা যুক্তরাষ্ট্রে দিক। এখানে প্রমাণ হলে সেটা হবে।’ ফ্ল্যাটের ভাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি যদি ফ্ল্যাট ভাড়া নিই, আমি কী করেই আমার ফ্ল্যাটে এ ধরনের কাজ করব? আমার পাসপোর্ট রেকর্ড দেখলে দেখা যাবে, আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। এখন বলা হচ্ছে, আমি ৫ কোটি টাকা দিয়েছি। কীভাবে আমি ৫ কোটি টাকা দিয়েছি? কোথা থেকে পেলাম আমি এত টাকা? এখন এগুলো মানুষ বললে আমার শোনা ছাড়া কী করার আছে?’
২৪ মে, ২০২৪

আজাদ হোসেনের নিবন্ধ / এমপি আনার হত্যা : এবার শাহীনকে ধরে ফেলা হোক
আপনি কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করেন? যদি করে থাকেন তাহলে অবশ্যই ‘শাহীন’ নামটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা বা ট্রল করতে দেখেছেন।  ফেসবুক ব্যবহার না করলেও বাস্তব জীবনে ‘শাহীন’ নামটির অতিব্যবহারের সাক্ষী নিশ্চয়ই হয়েছেন। ২০২৩ সালের শুরুর দিকের ঘটনা। হঠাৎ চারদিকে শাহীন শাহীন রব ওঠে। ভাইরাল হয় শাহীন। দৈনন্দিন জীবনের নানা পরিস্থিতিতে, কথার ছলে মানুষ শাহীন নামটি বলতে শুরু করে।  এখনো যারা বিষয়টি ধরতে পারেননি, তাদের জন্য একটু পরিষ্কার করা যাক। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে সুনামগঞ্জের ছাতকে যুক্তরাজ্য প্রবাসী মাসুক মিয়ার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। তবে প্রবাসীর উপস্থিত বুদ্ধিতে চার ডাকাত ধরা পড়ে। এরপর কীভাবে, কোন কৌশলে ডাকাতদের ধরেছিলেন গণমাধ্যমকে জানাচ্ছিলেন মাসুক মিয়া। ডাকাতদের হামলার একপর্যায়ে এক ডাকাতকে ধরে ফেলেছিলেন তিনি। এরপরই ছোট ভাই শাহীনকে আহ্বান জানান অন্য ডাকাতদের ধরে ফেলতে। মাসুক মিয়া ছোট ভাইকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘শাহীন নটীর পোলাদের ধরে ফ্যাল।’  গণমাধ্যমকে দেওয়া ওই বর্ণনার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে আপলোডও করা হয়। এর দুইমাস পর হঠাৎ ডাকাত ধরার বর্ণনা দেওয়ার সেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়। ভাইরাল হয় শাহীন নামটি। শাহীনকে নিয়ে অনলাইনে শুরু হয় ট্রল, স্যাটায়ার, মিম বানানো। ওই ভিডিও বা স্যাটায়ার, মিমে শাহীন নামের লোকদের মেনশন দেওয়া শুরু হয়। বাস্তব জীবনেও শাহীন নামের লোকেদের নিয়ে শুরু হয় মজা করা।  এতদিন পরে বিষয়টি নতুন করে টেনে আনার একটি কারণ আছে। সেটি হচ্ছে- ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের হত্যাকাণ্ড এবং এর পেছনেও ‘শাহীন’!  চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে খুন হন এমপি আনার। তার মরদেহ টুকরা টুকরা করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গোপন করা হয়। এই নির্মম ঘটনা সামনে আসার পর থেকেই শুরু হয়েছে নানা জল্পনা। একের পর এক বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।   ঘটনা জানাজানি পর থেকেই কাজে লেগে পড়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ভারতের পুলিশও নামে তদন্তে। উভয় তদন্তেই বেশ কয়েক জনের নাম উঠে এসেছে। তবে মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে আক্তারুজ্জামান শাহীন।  আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহীন এমপি আনারের বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার। তিনি মার্কিন পাসপোর্টধারী ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। তার বাড়ি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে। আরও একটি পরিচয় আছে তার, কোটচাঁদপুরের পৌর মেয়র শহিদুজ্জামান সেলিমের ছোট ভাই তিনি।  বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জান যায়, আন্তর্জাতিক স্বর্ণ চোরাকারবারী চক্রের সঙ্গে যুক্ত এই শাহীন। এমপি আনারের সঙ্গে তার সখ্য এবং দুজন মিলেই সীমান্তের চোরাচালান চক্র নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন। সর্বশেষ গত ১০ মে কলকাতা হয়ে বাংলাদেশে আসেন শাহীন।  এমপি আনারের সঙ্গে শাহীনের স্বর্ণের বড় একটি চালানের টাকা নিয়ে ঝামেলা চলছিল। বিষয়টি মীমাংসার জন্য কলকাতা যান এমপি আনার। মূলত এক নারীকে দিয়ে ফাঁদে ফেলে কলকাতায় নেওয়া হয় তাকে। এরপর পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। কালবেলায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, আনারকে যে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে, তার প্রমাণ পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। তবে মরদেহ এখনো পাওয়া যায়নি। এ ঘটনার তদন্ত করছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডির মহাপরিদর্শক অখিলেশ চতুর্বেদী বলেছেন, ‘আমরা কিছু সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছি, যার ভিত্তিতে মনে করা হচ্ছে যে ওনাকে হত্যা করা হয়েছে।’ আবার ডিবির দেওয়া বর্ণনামতে, কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জীবনী গার্ডেনে ট্রিপ্লেক্স ফ্ল্যাট ভাড়া করেন মূল পরিকল্পনাকারী এবং নিহত এমপির বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন। আগে থেকেই ভারতে অবস্থান করা কয়েক সন্ত্রাসীর সঙ্গে চুক্তি করেন তিনি। এরপর বাংলাদেশ থেকে ওই ফ্ল্যাটে নিয়ে যান চরমপন্থি নেতা আমানুল্লাহকে। সবশেষে শিলাস্তি রহমান নামে এক নারীকে দিয়ে ট্রাপ তৈরি করেন শাহীন। শিলাস্তিকে দিয়েই এমপি আনারকে ওই ফ্ল্যাটে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানেই হত্যা করা হয় আনারকে।  এদিকে আনার হত্যা মিশনে জড়িত কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও হোতা শাহীন এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে।  আমাদের সমাজে এমন শাহীনের অভাব নেই। শাহীনের মতো এমন অনেকেই আছে যারা নানা অপরাধ করেও ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকে। আবার একটি অপরাধ করে এরা থেকে থাকে তেমনটাও নয়। করে চলে একের পর এক অপরাধ। এভাবেই দিনের পর দিন বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা। এর পেছনে বড় কারণ হলো বিচারহীনতা।  পেশাগতভাবে সাংবাদিক হওয়ার প্রায় প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা বা অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু এমন কিছু কিছু ঘটনা থাকে যা অনেক সময় আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। কেন এত বেপরোয়া। একটুতেই বর্বর হয়ে উঠছে একে অন্যের ওপরে। সামান্য কিছু টাকার জন্য ঘটছে খুনের ঘটনা। এ ছাড়াও অনেক হত্যার ঘটনা আছে যার কোনো মোটিভই নেই। শুধু ক্রোধের বশে খুন করে বসেন একে অন্যকে। এ তো গেল হত্যার ঘটনা। এর বাইরে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে যৌন হয়রানি, চাইল্ড অ্যাবিউজ, শিশু হত্যা, সংঘর্ষ ও রাজনৈতিক সংঘর্ষের মতো ঘটনা। পত্রিকার পাতা উল্টালেই এমন খবর চোখে পড়বে। আবার এসব দিন দিন যেন বেড়েই চলেছে। যেন দেখার কেউ নেই। মাঝে মাঝে কিছু ঘটনা নিয়ে তোলপাড় হলেও আড়ালে থেকে যায় অধিকাংশ। যাকে পুঁজি করে ঘটে আরও নানা অপরাধ। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের গত ছয় মাসের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দেখা গেছে, চলতি বছরে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ছয় মাসে দেশে ১৫২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। যেখানে ধর্ষণের পর ৬ জনকে হত্যা করা হয়েছে। যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে ৬১ জন। এ ছাড়াও ১৭৬ জন শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে মামলা হয়েছে মাত্র ৬৩টি। শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ২২৬টি। মামলা হয়েছে ১৩৯টি।  রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন ২৭ জন। এই ছয় মাসে ঘটনা ঘটেছে ২৮৯টি। একই সময়ে বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন করার সময় আরও ২৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এসব ছাড়াও প্রতিনিয়ত নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হচ্ছে যা সবার আড়াইলে থেকে যাচ্ছে। এগুলো দেখে প্রশ্ন আসে এত বর্বরতা-নিষ্ঠুরতা কোথা থেকে আসে। কোথায় এর শেষ?  তবে অন্যান্য ঘটনার তুলনায় এমপি আনার হত্যার তদন্তকাজ হয়তো খুব দ্রুতই এগিয়ে যাচ্ছে। এখন দেখার বিষয় বিচারকাজ কতটা দ্রুত এগিয়ে যায়। আমরা চাই প্রতিটা হত্যা, প্রতিটি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিচার হোক। সব অপরাধী আইনের মুখোমুখী হোক। এমপি আনার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী শাহীনের সঙ্গে সঙ্গে সব অপরাধীকে এবার ধরে ফেলা হোক। লেখক: সাংবাদিক
২৩ মে, ২০২৪

এমপি আনার হত্যার ঘটনায় তদন্ত চলছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ভারতে রহস্যজনকভাবে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্যের মৃত্যুর ঘটনাটি তদন্তাধীন রয়েছে। ঘটনাটি নিয়ে দুই দেশ একযোগে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বৃহস্পতিবার (২৩ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে দেশের নৌপথে নিহত সকল শহীদের স্মরণে ২৩ মে ‘জাতীয় নদী দিবস’ ঘোষণার দাবিতে ‘ঢাকা নদী সম্মেলন’ ২০২৪’ প্রস্তুতি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এমপি আনার হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত নানা তথ্য বেরিয়ে এসছে। আটক হয়েছে মূলহোতাসহ কয়েকজন। নাম উঠে এসেছে মূল পরিকল্পনাকারীরও।  ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, পরিকল্পনা করেই হত্যা করা হয় এমপি আনারকে। ১৩ তারিখে তাকে হত্যা করা হয়। তবে ১৬ মে আনারের ফোন থেকে তার ব্যক্তিগত সহকারীর ফোনে ফোন করা হয়, কিন্তু ব্যক্তিগত সহকারী তার ফোনটি রিসিভ করতে পারেননি। পরে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে সফল হননি। তদন্ত সূত্র বলছে, এমপি আনার নিখোঁজ থাকার পরও তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে ভারতে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের মোবাইল ফোনে একটি বিশেষ বার্তা আসে। তাতে লেখা ছিল যে, তিনি বিশেষ কাজে দিল্লি যাচ্ছেন। তিনি দিল্লি পৌঁছে গোপাল বিশ্বাসকে জানাবেন বলে জানান। তারপর গোপাল বিশ্বাসের মোবাইল ফোনে আরেকটি বার্তা আসে যে, তার সঙ্গে ভিআইপিরা রয়েছেন, ফোন করার দরকার নেই। ঠিক একই রকমের বার্তা এমপি আনারের পরিবার এবং ব্যক্তিগত সহকারী রউফের মোবাইল ফোনে পাঠানো হয়।  জানা যায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জীবনী গার্ডেনে ট্রিপ্লেক্স ফ্ল্যাট ভাড়া করেন মূল পরিকল্পনাকারী এমপির বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন। আগে থেকেই ভারতে অবস্থান করা কয়েক সন্ত্রাসীর সঙ্গে চুক্তি করেন তিনি। এরপর ৫ কোটি টাকার চুক্তিতে বাংলাদেশ থেকে ওই ফ্ল্যাটে নিয়ে যান মূল কিলার চরমপন্থি নেতা আমানুল্লাহকে। ঢাকার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, শাহীন কিলার আমানুল্লাহকে নিয়ে কলকাতায় যান গত ৩০ এপ্রিল। সংসদ সদস্য আনার হত্যার ছক কষেন ওই ফ্ল্যাটে বসেই। এরপর সেখান থেকে ১০ মে দেশে ফেরেন শাহীন। তখন ওই ফ্ল্যাটে অবস্থান করেন শাহীনের বান্ধবী শিলাস্তি রহমান, মূল কিলার আমানুল্লাহ, জিহাদ, সিয়াম, মোস্তাফিজ ও ফয়সাল শাহীনের ভাড়া করা ফ্ল্যাটে অবস্থান করেন। ১৩ মে রাতে হত্যা মিশন বাস্তবায়ন করে আমানুল্লাহ, শিলাস্তি ও ফয়সাল দেশে ফেরেন। তাদের আটকের পর হত্যা রহস্য উদ্ঘাটন হয়। তাদের কাছে পাওয়া যায় এমপি আনার হত্যার লোমহর্ষক কাহিনি। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই ফ্ল্যাটে যাওয়ার পর আনারকে শাহীনের টাকার জন্য চাপ দেন আমানুল্লাহ ও তার সহযোগীরা। একপর্যায়ে আনারের গলায় চাপাতি ধরেন আমানুল্লাহ। এ নিয়ে ধস্তাধস্তি হয়। পরে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) এক কর্মকর্তা কালবেলাকে জানিয়েছেন, কলকাতার ওই ফ্ল্যাট থেকে সব তথ্য দেশে অবস্থানকারী মূলহোতা শাহীনকে জানানো হয়। হত্যার পর আমানুল্লাহ ঘটনা জানান শাহীনকে। তখন শাহীন লাশ গুম করার নির্দেশ দেন। আমানুল্লাহকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ডিবির ওই কর্মকর্তা বলেন, শাহীন আমানকে নির্দেশ দেন লাশ গুম করতে। সেই নির্দেশ পেয়ে আমান এমপি আনারের লাশটি কেটে টুকরো টুকরো করেন। এরপর বাইরে থেকে কিনে আনা হয় সাদা পলিথিন, ব্লিচিং পাউডার ও দুটি বড় সাইজের ট্রলি ব্যাগ। লাশ টুকরো করার পর তা ঢোকানো হয় পৃথক দুটি ট্রলিতে। লাশের টুকরোগুলো ব্যাগে ঢোকানোর পর বাইরে থেকে আনা ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ওই ফ্ল্যাটের মেঝে পরিষ্কার করে ফেলা হয়। সূত্র বলছে, এমপি আনোয়ারুল আজিমকে ১৩ মে হত্যা করা হলেও তার মরদেহের টুকরো ভর্তি প্রথম ট্রলিটি ওই বাসা থেকে বের করে সরানো হয় পরদিন ১৪ মে। ফ্ল্যাট কম্পাউন্ডের বাইরে নিয়ে পাশের একটি শপিংমলের সামনে দাঁড়ায় কিলার গ্রুপের দুই সদস্য। এরপর কিলার গ্রুপের সদস্য সিয়ামকে এই ট্রলি তুলে দেওয়া হয়। সিয়াম একটা গাড়িতে উঠে কিছুদূর যাওয়ার পর সেটি নিয়ে নেমে যান। এরপর এই ব্যাগ কোথায় নিয়ে গেছেন, তা আর জানাতে পারেননি আমানুল্লাহ। আরেকটি ব্যাগ ফ্ল্যাটে রেখেই ১৫ মে আমানুল্লাহ ও শাহীনের বান্ধবী শিলাস্তি আকাশপথে ঢাকায় চলে আসেন। অন্য ট্রলি ব্যাগটি মোস্তাফিজ, ফয়সালসহ অন্যরা সরিয়ে ফেলেন। ডিবি সূত্র জানিয়েছে, আমানুল্লাহর নেতৃত্বে কিলার গ্রুপের সদস্য মোস্তাফিজ, ফয়সাল, জিহাদ ও সিয়াম হত্যামিশনে অংশ নেন। আমানুল্লাহ ও শিলাস্তি ঢাকায় ফেরার পর ১৭ মে মোস্তাফিজুর এবং পরের দিন দেশে ফেরেন ফয়সাল। সিয়াম ও জিহাদ অবৈধ পথে বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়েছিল। তাদের অবস্থান শনাক্তের কাজ চলছে। সূত্র জানায়, আমানুল্লাহ, শাহীন ও এমপি আনার পূর্বপরিচিত। তবে আমানুল্লাকে আনার হত্যায় বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কাজে লাগান শাহীন। চুক্তিবদ্ধ হয়ে আমানুল্লাহ ভাড়া করেন মোস্তাফিজুর ও ফয়সাল সাহাজিকে। আর শাহীন আগে থেকেই ভারতে জিহাদ ও সিয়ামকে ভাড়া করে রাখেন। আনোয়ারুল আজিম হত্যার তদন্তের বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ঘটনাটি মর্মান্তিক। তিনি (আনার) ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ এলাকার জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি। তার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এলাকার মানুষ স্তম্ভিত। আমরা গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। এটি নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড, এটা মনে করেই তদন্ত কর্মকর্তারা কাজ করছেন। নিবিড়ভাবে ভারতীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। কয়েকজন আমাদের কাছে আছে, তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচ্ছি। তদন্তের স্বার্থে আমরা সবকিছু বলতে পারছি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি যারা আছে, তাদের প্রত্যেককে আমরা আইনের আওতায় আনব। তদন্তের স্বার্থে নাম প্রকাশ করতে চাচ্ছি না।’ ডিবির অন্য এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আনারের লাশের টুকরোগুলো কোথায়, তা জানার চেষ্টা চলছে। এ জন্য আমানুল্লাহকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তিনি দাবি করেছেন, ফ্ল্যাট থেকে লাশের টুকরো ভর্তি ট্রলি বের করার পর কয়েক ব্যক্তির হাত ঘুরে গুম করা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি জানেন না।
২৩ মে, ২০২৪
X