রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৬ জুন ২০২৪, ০১:১৮ পিএম
আপডেট : ১৬ জুন ২০২৪, ০১:২৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

যেভাবে শুরু হলো কোরবানি

ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

আগামীকাল পবিত্র ঈদুল আজহা, ইসলামের দ্বিতীয় বড় উৎসব। ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত এই উৎসবের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো তাকওয়া তথা আল্লাহভীতির চর্চা। লোক দেখানো বা ব্যক্তিগত অহমিকা প্রদর্শন নয়; আল্লাহর ভয় হৃদয়ে ধারণ করে প্রিয়তম বস্তুটি আল্লাহর পথে বিসর্জন দেওয়াই কোরবানির লক্ষ্য। আল্লাহতা’আলার নির্দেশিত পন্থায় যথাযথভাবে কোরবানি দেওয়াই তাকওয়ার প্রমাণ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কেউ আল্লাহর নিদর্শনাবলিকে সম্মান করলে এ তো তার হৃদয়ের তাকওয়াপ্রসূত।’ (সুরা হজ : ৩২)

কোরবানি শব্দের অর্থ, ত্যাগ, উৎসর্গ, বিসর্জন। কোরবানি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশ্ব মুসলিমদের জন্য একটি মহৎ ইবাদত। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্য আত্মোৎসর্গ করাই কোরবানি। শরিয়তের পরিভাষায় মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্য, নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট ব্যক্তির পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট পশু জবেহ করাকে কোরবানি বলা হয়।

কোরবানি সম্পর্কে পবিত্র কালামে হাকিমে ঘোষিত হয়েছে, প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কোরবানির নিয়ম করে দিয়েছি, যাতে আমি তাদের জীবনোপকরণস্বরূপ, যেসব চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছি সেগুলোর ওপর তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। (সুরা : আল হজ, আয়াত : ৩৪)। আদম (আ.) থেকে শুরু করে মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত, সব নবী-রাসুল ও তাদের অনুসারীরা কোরবানি করেছেন। কোরআনুল কারিম থেকে আমরা জানতে পারি আদম (আ.)-এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিলের মাধ্যমে কোরবানির সূত্রপাত হয়। সে ইতিহাস আমরা কোরআন থেকে জানার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। আল্লাহতায়ালা বলেন, হে রাসুল আপনি তাদের কাছে আদমের দুপুত্রের সংবাদ পাঠ করে, সত্যতার সঙ্গে শুনিয়ে দিন, যখন তারা উভয়ে কোরবানি করল একজনের কোরবানি কবুল করা হয়েছিল, কিন্তু অন্যজনের হয়নি। এক ভাই বলল, আমি অবশ্যই তোমাকে হত্যা করব, অন্য ভাই বলল, আল্লাহতায়ালা মুত্তাকিদের পক্ষ থেকে কোরবানি কবুল করেন। (সুরা আল মায়িদা, আয়াত : ২৭)

আমরা সুরা মায়েদার ২৭ নম্বর আয়াতের তাফসির ও সংশ্লিষ্ট ঘটনা পড়লে বুঝতে পারব, ইতিহাসের প্রথম কোরবানির সঠিক ও বিস্তারিত বিষয় : আদম (আ.)-এর দুপুত্র হাবিল ও কাবিলের ঘটনাটি বিশুদ্ধ ও শক্তিশালী সনদসহ বর্ণিত হয়েছে, ঘটনার বিবরণ হলো যখন হজরত আদম (আ.) পৃথিবীতে আগমন করেন এবং প্রজনন ও বংশবিস্তার আরম্ভ হয় তখন প্রতি গর্ভ থেকে একটি পুত্র ও একটি কন্যা এরূপ জমজ সন্তান জন্মগ্রহণ করত। তখন ভ্রাতা ও ভগিনী ছাড়া আদমের আর কোনো সন্তান ছিল না। অথচ ভ্রাতা ও ভগিনী পরস্পর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না। তাই আল্লাহতায়ালা বাস্তব প্রয়োজনের খাতিরে আদম (আ.)-এর শরিয়তে এ নির্দেশ জারি করেন, একই গর্ভ থেকে যে জমজ পুত্র ও কন্যা জন্মগ্রহণ করবে তারা পরস্পর সহোদর ভ্রাতা-ভগিনী গণ্য হবে। তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম হবে। কিন্তু পরবর্তী গর্ভ থেকে জন্মগ্রহণকারী পুত্রের জন্য প্রথম গর্ব থেকে জন্মগ্রহণকারিনী কন্যা সহোদর ভ্রাতা ভগিনী হিসেবে গণ্য হবে না। তাদের পরস্পর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ হবে।

ঘটনাক্রমে কাবিলের সহজাত সহোদরা বোন ছিল সুন্দরী, আর হাবিলের সহজাত সহোদরা বোন ছিল কুশ্রী, যা কাবিলের ভাগ্যে পড়ল। এতে কাবিল অসন্তুষ্ট হয়ে হাবিলের শত্রুতে পরিণত হলো। সে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল যে, আমার সহজাত বোনকেই আমার সঙ্গে বিবাহ দিতে হবে, হজরত আদম (আ.) তার শরিয়তের বিধান ঠিক রাখার জন্য প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন। অতঃপর তিনি কাবিল-হাবিলের মধ্যে বিরাজমান বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বললেন তোমরা উভয়ই আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে কোরবানি পেশ করো। যার কোরবানি কবুল হবে সে সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবে। আদম (আ.) নিশ্চিত বিশ্বাস ছিল যে, সত্যপন্থির কোরবানিই গ্রহণযোগ্য হবে। শুধু আদম (আ.) নয়, আল্লাহর নবী হজরত নূহ (আ.), হজরত ইয়াকুব (আ.), হজরত মুসা (আ.) সব নবীর উম্মতের ওপর কোরবানি ছিল। মুসলিম জাতির পিতা ইব্রাহিম আলাইহিস সাল্লাম, আল্লাহর প্রেমে, স্বীয় পুত্রকে কোরবানি করার মহাপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস সৃষ্টি করেন। সাড়ে ৫ হাজার বছর আগে সবচেয়ে প্রিয় বস্তু ত্যাগের জন্য আদিষ্ট হন ইবরাহিম (আ.) আল্লাহতায়ালা বলেন, অতঃপর ইসমাইল (আ.) যখন তার পিতার সঙ্গে কাজ করার মতো বয়স উপনীত হলো তখন ইবরাহিম (আ.) বলল, হে বৎস আমি স্বপ্নে দেখি যে, তোমাকে আমি জবেহ করছি, এখন তোমার অভিমত কী? সে বলল, হে আমার আব্বাজান আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন তাই করুন, আল্লাহ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীল সন্তান হিসেবে দেখতে পাবেন। (সুরা সফফাত আয়াত : ১০৩)

হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম নিজের জানকে আল্লাহর রাহে উৎসর্গ করতে নির্দ্বিধায় সম্মত হয়ে আত্মত্যাগের বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। ইবরাহিম আলাইহিস সালামের প্রতি এটা ছিল আল্লাহর পরীক্ষা, তাই পিতার ধারালো অস্ত্র দিয়ে সন্তান ইসমাইল (আ.)-এর একটি পশমও কাটতে পারেনি, পরে আল্লাহর হুকুমে জান্নাতের একটি দুম্বা জবাই হয়। পৃথিবীর বুকে এটাই ছিল স্রষ্টার প্রেমে সর্বশ্রেষ্ঠ আত্মত্যাগের উদাহরণ। অনুপম দৃষ্টান্তকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য উম্মতি মুহাম্মাদির জন্য কোরবানি করাকে ওয়াজিব করেছেন। পবিত্র কোরআনে হাকিমের রাব্বুল আলামিন বলেন, আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না তোমাদের কোরবানির গোশত এবং রক্ত বরং পৌঁছাই তোমাদের তাকওয়া। (আয়াত নম্বর : ৩৭)

কোরবানির তাৎপর্য ও ফজিলত

রাসুল (সা.) বলেন, কোরবানির দিন রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে প্রিয় কোনো আমল আল্লাহর কাছে নেই, কিয়ামতের দিন কোরবানির পশু প্রত্যেকটি লোম, ক্ষুর, পশম ইত্যাদি নিয়ে আল্লাহর কাছে উপস্থিত। রক্ত জমিনে পতিত হওয়ার আগেই তা আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদায় পৌঁছে যায়। (তিরমিজি) কোরবানির পরিত্যাগকারীর ওপর বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু ওয়াসাল্লাম কঠোর সতর্কবার্তা পেশ করেছেন, বলেন সামর্থ্য আছে তার পরও কোরবানি করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারেকাছেও না আসে। (মিশকাত)

মুসলমানদের শুধু কোরবানির প্রতীক হিসেবে পশু জবাইয়ের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, বিশ্ব মানবতার মুক্তি ও বিশ্ব মুসলমানদের কল্যাণের জন্য সবাইকে নিবেদিতপ্রাণ হতে হবে। মানুষের অন্তর থেকে পাশবিক চিন্তা-চেতনাকে কোরবানি বিসর্জন দিতে হবে।

প্রতি বছর কোরবানি পশু হনন করতে আমাদের মধ্যে আসে না, বরং কোরবানির মাধ্যমে পশু প্রবৃত্তিকে বিসর্জন দিয়ে, আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার এটি যে একটি উত্তম মাধ্যম তা পুরো মুসলিম মিল্লাতকে স্মরণ করিয়ে দিতে ঈদুল আজহা প্রতি বছর ফিরে আসে। ঈদুল আজহা আমাদের শেখায়, মালিকের কাছে নিজেকে বিলিয়ে দাও! মাথা নত করে দাও! কোরবান করে দাও সব সাধ-আহ্লাদ! নিজের সুখগুলো ভাগ করে দাও গরিব-অসহায় সব মানুষের হাতে! ঈদুল আজহার আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে, সবার মনে, সবার ঘরে। ঈদ মোবারক। তাকাবালাল্লাহু মিন্না ও মিনকুম।

কোরবানির নিয়ম

রাসুল (সা.) হিজরতের পর প্রতি বছর কোরবানি করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) মদিনায় ১০ বছর অবস্থান করেছেন। প্রতিবছরই তিনি কোরবানি করেছেন।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৪৪৯)

রাসুল (সা.) কীভাবে কোরবানি করতেন এবং করেছেন, এসব বিষয়ে হাদিসে বিভিন্ন বর্ণনা এসেছে। আমরা অতি সংক্ষেপে এই ক্ষেত্রে ৩টি বিষয় জেনে রাখব। তাহলে কোরবানি আদায়ের পাশাপাশি রাসুল (সা.)-এর সুন্নত আদায় আমাদের জন্য সহজ হবে।

ঈদের নামাজের পর কোরবানি করা

জানা না থাকার কারণে- কেউ কেউ ঈদের নামাজের আগেই কোরবানি করে ফেলে। অথচ শরিয়তে এমন কোনো বিধান নেই। উপরন্তু ঈদের নামাজের আগে কোরবানি করলে, কোরবানি হবে না।

জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, নবী করিম (সা.) কোরবানির দিন (প্রথমেই) নামাজ আদায় করেন। তারপর তিনি খুতবা দেন। এরপর (কোরবানির পশু) জবেহ করেন।

তিনি ঘোষণা দেন- নামাজের আগে যে ব্যক্তি পশু জবেহ করবে, তাকে নামাজের পর আরেকটি পশু জবেহ করতে হবে...। (বুখারি, হাদিস : ৯২৮, ৬৮৮৪)

নিজ হাতে কোরবানি করা

কোরবানি নিজ হাতে করা সুন্নত। রাসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম নিজ হাতে কোরবানি করতেন। কোরবানি নিজ হাতে করলে কোরবানির পশুর প্রতি দয়ার্দ্রতা ও নিষ্ঠা বেশি করে প্রকাশ পায়।

আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে তার কোরবানির পশুর ওপর পা দিয়ে চেপে ধরে নিজ হাতে কোরবানি করতে দেখেছি। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩১৫৫)

পশুর প্রতি মানবিকতা দেখানো

আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করাই হলো- কোরবানির মহত্ব। এক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা হলো- পশুর ওপর মানবিকতা ও দয়ার্দ্রতা এবং বিনম্রতা প্রকাশ করতে হবে।

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) (কোরবানির আগে) ছুরি ধারালো করতে এবং তা পশুর দৃষ্টির অগোচরে রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। তোমাদের কেউ জবেহ করার সময় যেন তা দ্রুত সম্পন্ন করে (যাতে পশু অধিক পরিমাণে কষ্ট না পায়)। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩১৭২)

হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) দুটি ভেড়া কোরবানি দিতেন। আর আমিও দুটি ভেড়া কোরবানি দিতাম। (বুখারি, হাদিস : ৫৫৫৩)

অন্য হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন কোরবানি করতে ইচ্ছা করতেন, তিনি চিত্রবিচিত্র, শিংবিশিষ্ট, মোটাতাজা দুটি খাসি-ভেড়া কোরবানি দিতেন।

এর একটি তিনি ওইসব উম্মতের জন্য কোরবানি করতেন, যারা আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য দেবে ও তার দায়িত্ব পালনের কথা স্বীকার করবে। অন্যটি তিনি নিজের ও তার পরিবারের নামে জবেহ করতেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩১২২)

কোরবানির গোশত ভাগ করার নিয়ম

আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে কোরবানি করা পশুর মাংস ভাগ করার একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। মহানবী (সা.) কোরবানির পশুর মাংস ভাগ করার নিয়ম সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (সা.) কোরবানির মাংস একভাগ নিজের পরিবারকে খাওয়াতেন, একভাগ গরিব প্রতিবেশীদের দিতেন এবং একভাগ দিতেন গরিব-মিসকিনদের।

কোরবানির গোস্ত কয় ভাগ করতে তার ইঙ্গিত দিয়ে কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেছেন,

وَالْبُدْنَ جَعَلْنَاهَا لَكُم مِّن شَعَائِرِ اللَّهِ لَكُمْ فِيهَا خَيْرٌ فَاذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ عَلَيْهَا صَوَافَّ فَإِذَا وَجَبَتْ جُنُوبُهَا فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْقَانِعَ وَالْمُعْتَرَّ كَذَلِكَ سَخَّرْنَاهَا لَكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

অর্থ- আর কাবার জন্য উৎসর্গীকৃত উটকে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন করেছি। এতে তোমাদের জন্য মঙ্গল রয়েছে। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে বাধা অবস্থায় তাদের জবাই করার সময় তোমরা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করো।

এরপর যখন তারা কাত হয়ে পড়ে যায়, তখন তা থেকে তোমরা আহার করো এবং আহার করাও; যে কিছু চায় না তাকে এবং যে চায় তাকেও। এমনিভাবে আমি এগুলোকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো। (সুরা হজ : আয়াত ৩৬)

উল্লিখিত আয়াতে কারিমা থেকে সুস্পষ্ট, কোরবানির গোশত মোটামুটি ৩টি ভাগে ভাগ করার একটি নির্দেশনা বা ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তাহলো-

এক. কোরবানি দাতা নিজেদের জন্য রাখবে তথা আহার করা।

দুই. আত্মীয়স্বজনদের এক ভাগ দেওয়া, যারা চায় না।

তিন. যারা অভাবি বা গরিব; (যারা চায় এবং না চায়) তাদের এক ভাগ দেওয়া।

অধিকাংশ ইসলামিক স্কলাররাই কোরবানির পশুর গোশতকে উল্লিখিত তিন ভাগে ভাগ করাকে মুস্তাহাব এবং উত্তম বলেছেন।

ঈদুল আজহার নামাজ

ঈদের নামাজের পদ্ধতি স্বাভাবিক নামাজের মতো নয়। ঈদের নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। ঈদের নামাজ ছাদবিহীন খোলা জায়গায় আদায় করা সুন্নাত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খোলা জায়গায় ঈদের নামাজ আদায় করতেন। যদি খোলা স্থানের ব্যবস্থা না থাকে তবে মসজিদেও ঈদের নামাজ পড়া যাবে। ঈদের নামাজের নিয়ম তুলে ধরা হলো-

ঈদের নামাজের নিয়ত

نَوَيْتُ أنْ أصَلِّي للهِ تَعَالىَ رَكْعَتَيْنِ صَلَاةِ الْعِيْدِ الْفِطْرِ مَعَ سِتِّ التَكْبِيْرَاتِ وَاجِبُ اللهِ تَعَالَى اِقْتَضَيْتُ بِهَذَا الْاِمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اللهُ اَكْبَرْ

উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকাআতাইন সালাতিল ইদিল ফিতরি মাআ সিত্তাতিত তাকবিরাতি ওয়াঝিবুল্লাহি তাআলা ইকতাদাইতু বিহাজাল ইমামি মুতাওয়াঝঝিহান ইলা ঝিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।

বাংলা অর্থ : আমি ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ অতিরিক্ত ৬ তাকবিরের সঙ্গে এই ইমামের পেছনে কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য আদায় করছি- ‘আল্লাহু আকবার’।

ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম

ইমামের সঙ্গে তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে উভয় হাত বাঁধা। তাকবিরে তাহরিমার পর ছানা পড়া- ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়াতাআলা যাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।’

এরপর অতিরিক্ত ৩ তাকবির দেওয়া। এক তাকবির থেকে আরেক তাকবিরের মধ্যে তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় বিরত থাকা। প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবিরে উভয় হাত উঠিয়ে তা ছেড়ে দেয়া। তৃতীয় তাকবির দিয়ে উভয় হাত তাকবিরে তাহরিমার মতো বেঁধে নিতে হয়। আউজুবিল্লাহ-বিসমিল্লাহ পড়া। সুরা ফাতেহা পড়া। সুরা মিলানো। এরপর নিয়মিত নামাজের মতো রুকু ও সেজদার মাধ্যমে প্রথম রাকাত শেষ করা।

এরপর দ্বিতীয় রাকাতে বিসমিল্লাহ পড়া। সুরা ফাতেহা পড়া। সুরা মিলানো। সুরা মিলানোর পর অতিরিক্ত ৩ তাকবির দেয়া। প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবিরে উভয় হাত উঠিয়ে তা ছেড়ে দেয়া। তৃতীয় তাকবির দিয়ে উভয় হাত তাকবিরে তাহরিমার মতো বেঁধে নিতে হয়। এরপর রুকুর তাকবির দিয়ে রুকুতে যাওয়া। সেজদা আদায় করা। বৈঠকে বসা, তাশাহহুদ, দরূদ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করা।

নামাজের সালাম ফেরানোর পর তাকবির পড়া-

اَللهُ اَكْبَر اَللهُ اَكْبَر لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَر اَللهُ اَكْبَروَلِلهِ الْحَمْد

উচ্চারণ : ‘আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবর ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’

নামাজের পর ইমাম সাহেবের দুটি খুতবা দেওয়া। ঈদের নামাজ পড়ার পর ইমাম খুতবা দেবে আর মুসল্লিরা খুতবা মনোযোগের সঙ্গে শুনবে।

খুতবা

নামাজের পর খুতবা প্রদান করা হয় যা ঈদের নামাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। খুতবায় ইমাম ধর্মীয় উপদেশ দেন এবং কোরবানির গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেন।

খুতবার বিষয়বস্তু

আল্লাহর প্রশংসা : খুতবা শুরু হয় আল্লাহর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে।

ধর্মীয় উপদেশ : ইমাম ধর্মীয় উপদেশ দেন এবং ঈদের তাৎপর্য বর্ণনা করেন।

কোরবানির ফজিলত : কোরবানির গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।

দোয়া : খুতবার শেষে মুসলিম উম্মাহর কল্যাণের জন্য দোয়া করা হয়।

আল্লাহ পাক হজরত ইব্রাহীম (আ.) কে তার প্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.) কে কোরবানি করার আদেশ দিয়েছিলেন। হজরত ইব্রাহীম (আ.), আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাসের সাথে, এই আদেশ পালন করতে প্রস্তুত ছিলেন। ঠিক যখন তিনি হজরত ইসমাইল (আ.) কে কোরবানি করতে যাবেন, তখন আল্লাহ পাক তাকে একটি কোরবানির পশু দিয়ে হজরত ইসমাইল (আ.) কে প্রতিস্থাপন করার নির্দেশ দেন। খুতবায় এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

২৪ চেতনায় সবাইকে জাগ্রত হতে হবে : শামীম

পাওনা টাকা নিয়ে ঝগড়া, ভাতিজাকে খুন করে গ্রেপ্তার চাচা

আর পি সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা

মাছের প্রজননে সময় না দিয়ে মানুষ দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছে : মৎস্য উপদেষ্টা

আজিজুল হক কলেজে কনসার্ট চলাকালে ছুরিকাঘাতে যুবক খুন

বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তাপসসহ ৩০ জনের নামে মামলা

কিছু মানুষের ব্রেইন সিটিস্ক্যান করে দেখার ইচ্ছা, কীভাবে এত ক্রিমিনাল হতে পারে?

কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে তৃণমূলের আস্থা হুদাতে

১ হাজারে দৈনিক সুদ ১০০ টাকা!

বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন ব্রিটেনের রাজা

১০

‘ড্রেসিংয়ে গেলে বলতেন আন্দোলনে গেছিলা ক্যান’

১১

৩১ দফা বাস্তবায়নে বিএনপি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ : যুবদল সম্পাদক

১২

শহীদ শাকিলের কবরে ছাত্র ফেডারেশনের শ্রদ্ধা নিবেদন

১৩

দুই দিনের ব্যবধানে সোনার দাম বৃদ্ধি, ভরি কত?

১৪

সাগরে লুঘচাপের মধ্যেই বৃষ্টি নিয়ে বড় দুঃসংবাদ   

১৫

আ.লীগের ধ্বংসস্তূপ থেকে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ : রাশেদ প্রধান

১৬

সাতছড়ি উদ্যান দখল করে প্রভাবশালীদের লেবু চাষ

১৭

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কমিটি নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সংঘর্ষ

১৮

এবার মারা গেলেন পরীমণির প্রথম সিনেমার পরিচালক

১৯

বিএনপিতে অনুপ্রবেশকারীর ঠাঁই হবে না : আমিনুল হক 

২০
X