ঈদুল আজহার অন্যতম ইবাদত পশু কোরবানি। এটি রাসুল সা. ও তার উম্মতের জন্য বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদার প্রতীক।
কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে রাসুল সা. ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহতায়ালার কাছে কোরবানির দিন মানবজাতির কোরবানি অপেক্ষা অধিকতর পছন্দনীয় কোনো আমল নেই।
বিচার দিনে কোরবানির পশুকে তার শিং, পশম ও খুরসহ উপস্থিত করা হবে। পশুর রক্ত জমিনে পড়ার পূর্বেই আল্লাহতায়ালার কাছে তা বিশেষ মর্যাদায় পৌঁছে যায়, সুতরাং তোমরা আনন্দচিত্তে কোরবানি করো।’ (সহিহ তিরমিজি: ১৩৯১)
আসুন, জেনে নিই কোন কোন পশু কোরবানি করা যাবে আর কোন কোন পশু কোরবানি করা যাবে না।
কোরবানির পশুর ধরন হচ্ছে- উট, গরু, ছাগল, দুম্বা বা মেষ। মহান আল্লাহর বাণী
(وَلِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنسَكاً لِيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ عَلَى مَا رَزَقَهُم مِّن بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ فَإِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَلَهُ أَسْلِمُوا وَبَشِّرِ الْمُخْبِتِينَ)الحج
আমি প্রতিটি সম্প্রদায়ের জন্য কোরবানির নিয়ম করে দিয়েছি। তাদের গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু হতে যে রিজিক দেওয়া হয়েছে সেগুলোর ওপর তারা যেন আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।
কারণ, তোমাদের উপাস্য একমাত্র উপাস্য, কাজেই তার কাছেই আত্মসমর্পণ করো আর সুসংবাদ দাও বিনীতদের।
আর গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু হলো: উট, গরু, ছাগল, দুম্বা বা মেষ। আর কোরবানিতে একটি ছাগল, মেষ বা দুম্বা একজনের পক্ষ হতে যথেষ্ট হবে। পক্ষান্তরে একটি উট বা গরু সাতজনের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে।
হজরত জাবির (রা.) এক বর্ণনায় বলেছেন, আমাদের আল্লাহর রাসুল (সা.) উট ও গরুর ক্ষেত্রে সাতজনকে একটি পশুতে ভাগ নিতে নির্দেশ করেন।
কোরবানির পশুর দুটি গুণ থাকতে হবে।
প্রথমত, পশুর শরিয়ত নির্ধারিত বয়স হওয়া। আর তা হচ্ছে, উটের বয়স পাঁচ বছর সম্পূর্ণ হওয়া, গরুর বয়স দুই বছর সম্পূর্ণ হওয়া, ছাগলের বয়স এক বছর সম্পূর্ণ হওয়া, মেষ বা দুম্বার বয়স ছয় মাস পূর্ণ হওয়া। এর কম বয়সের হলে তা কোরবানিতে যথেষ্ট হবে না। এর দলিল নবী (সা.)-এর হাদিস:
لَا تَذْبَحُوا إِلَّا مُسِنَّةً إِلَّا أَنْ يَعْسُرَ عَلَيْكُمْ فَتَذْبَحُوا جَذَعَةً مِنْ الضَّأْنِ
তোমরা দাঁতা পশু ব্যতীত অন্যকোনো পশু (কোরবানিতে) জবাই করবে না। তবে যদি তোমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ে তাহলে দুম্বা বা মেষের জাজ’আ (যার বয়স ছয় মাস) জবাই করবে।
দ্বিতীয়ত, ৪টি দোষ থেকে কোরবানির পশুর মুক্ত হওয়া, যা থেকে নবী (সা.) কোরবানির পশুর ক্ষেত্রে বেঁচে থাকতে বলেছেন। আর তা হলো-
স্পষ্ট কানা হওয়া। আর দুই চোখের অন্ধ হওয়া আরও বড় দোষ, তাই তা যথেষ্ট হবে না; স্পষ্ট রোগী হওয়া, যেমন চুলকানি-পাচড়া বা অন্যকোনো ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়া; স্পষ্ট খোঁড়া হওয়া এবং এমন অচল হওয়া যা চলতে পারে না। তাই কোনো একটি পা কাটা হওয়া আরও বড় দোষ; আর এমন দুর্বল হওয়া যার শরীরে কোনো মাংস নেই।
তা হলো, কোরবানির পশুর মোটা হওয়া, শক্তিশালী হওয়া, দৈহিক গঠনে বড় হওয়া এবং দেখতে সুন্দর হওয়া। সুতরাং কোরবানির পশু যত ভালো হবে ততই মহান আল্লাহর নিকট তা প্রিয় হবে। আর সহিহ হাদিসে রয়েছে, আল্লাহ সুন্দর ও উত্তম, তাই তিনি সুন্দর ও উত্তম ব্যতীত অন্য কিছু গ্রহণ করেন না।
এ সম্পর্কে আল্লাহতাআলা বলেন,
(فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْبَائِسَ الْفَقِيرَ )الحج
সুতরাং তোমরা (নিজেরা) তা থেকে খাও, আর দুঃস্থ-অভাবীদের খাওয়াও।
আর নবী (সা.) তার হজের অবস্থায় প্রত্যেকটি কোরবানির পশু হতে এক-এক টুকরো মাংস নিয়ে পাত্রে একত্রিত করে রান্না করতে বলেন, অতঃপর তা থেকে কিছু খান এবং তার ঝোল পান করেন।
তাই সুন্নাত হলো, কোরবানির মাংস নিজে খাওয়া এবং তা হতে অন্যদেরও খাওয়ানো। আর কোরবানির মাংস নিজে না খেয়ে এবং অপরকে তা দান না করে শুধু-শুধু জবাই করে ফেলে রেখে দেওয়া যথেষ্ট নয়; কারণ, এটা ধন-সম্পদ বিনষ্ট করার শামিল।
তাই যতক্ষণ এমন স্থানে না জবাই করবে যেখানে নিজের আশপাশে দরিদ্র-অভাবীরা থাকবে, অতঃপর কোরবানির পশু জবাই করে তাদের দান করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোরবানিকারী দায়িত্ব মুক্ত হবে না।
কোরবানি ইহা হচ্ছে মহান আল্লাহর নিয়ামত ও অনুগ্রহ, যার জন্য কোরবানির পশু জবাইয়ের মাধ্যমে বা তার বিকল্প (১০টি সিয়াম) সম্পাদনের মাধ্যমে আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করা আবশ্যক।
তাই এই কোরবানি হচ্ছে শুকরিয়া প্রকাশের কোরবানি, এটা জরিমানা বা ঘাটতি পূরণের কোরবানি নয়। অতএব হাজি সাহেব তা হতে নিজে খাবে, স্বচ্ছলদের উপঢৌকন দিবে এবং অভাবীদের প্রতি সদকা করবে।
মন্তব্য করুন