ঘূর্ণিঝড়সহ সব ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মহান আল্লাহা সুবহানাহু তায়ালার পরীক্ষা। মানুষের পাপাচারের কারণেই জলে-স্থলে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়।
আল্লাহর পক্ষ থেকে এক ধরনের পরীক্ষা। আর এই পরীক্ষায় আমাদের জীবনে নানা রকম দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
আর দুর্ঘটনা ও বিপদের সময় প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি আমাদের আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করতে হবে।
ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে আল্লাহর রাসুল সা. বিশেষ কিছু দোয়া পড়তেন। এ জন্য যে কোনো ঘূর্ণিঝড়ের আগমনে আমাদেরও ওই দোয়াগুলোর প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত।
‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা, ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহা’
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে এর কল্যাণটাই কামনা করি এবং আপনার কাছে এর অনিষ্ঠ থেকে আশ্রয় চাই। (আবু দাউদ ৪/৩২৬, হাদিস : ৫০৯৯)
‘সুবহানাল্লাজি ইউসাব্বিহুর রা`দু বিহামদিহি ওয়াল মালাইকাতু মিন খিফাতিহি’
অর্থ : পাক-পবিত্র সেই মহান সত্তা- তাঁর প্রশংসা পাঠ করে বজ্র এবং সব ফেরেশতা।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর রা. যখন মেঘের গর্জন শুনতেন, তখন কথা বলা বন্ধ করে দিতেন এবং পবিত্র কোরআনের ওপরের এই আয়াতটি তেলাওয়াত করতেন।
‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন খাইরি হাজিহির রিহি ওয়া খাইরা মা ফিহা ওয়া খাইরা মা উরসিলাত বিহি, ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহা, ওয়া শাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উরসিলাত বিহি’
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করি এর কল্যাণ, এর মধ্যকার কল্যাণ এবং যা এর সঙ্গে প্রেরিত হয়েছে তার কল্যাণ। আর আমি আপনার আশ্রয় চাই এর অনিষ্ঠ থেকে, এর ভেতরে নিহিত অনিষ্ঠ থেকে এবং যা এর সঙ্গে প্রেরিত হয়েছে তার অনিষ্ঠ থেকে। (বুখারি, ৪/৭৬, হাদিস : ৩২০৬ ও ৪৮২৯)
বাংলা উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা সাইয়িবান নাফিআ, আল্লাহুম্মা সাইয়িবান হানিয়া। আল্লাহুম্মা লা তাকতুলনা বি-গদাবিকা, ওয়ালা তুহলিকনা বি-আজাবিকা, ওয়া আ-ফিনা কাবলা যা-লিকা।’
বাংলা অর্থ : ‘হে আল্লাহ, উপকারী বৃষ্টি দিন। হে আল্লাহ সহজ বৃষ্টি দিন। আপনি আপনার গজব দিয়ে আমাদের হত্যা করে দেবেন না এবং আপনার আজাব দিয়ে ধ্বংস করে দেবেন না। এসবের আগেই আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিন।’ (বুখারি, হাদিস : ৭২১)
তওবা-ইস্তিগফারের মাধ্যমে বিপদাপদ থেকে রক্ষা মেলে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আপনি তাদের মাঝে থাকাবস্থায় কিছুতেই আল্লাহ তাদের শাস্তি দেবেন না। আর তারা ক্ষমা প্রার্থনা করাবস্থায়ও তাদের শাস্তি দেবেন না।’ (সুরা আনফাল, হাদিস : ৩৩)
ঝড়-তুফান বা ঘূর্ণিঝড়ের সময় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ছেড়ে নিরাপদ স্থান বা আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে আল্লাহর ওপর ভরসা করতে হবে।
আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, ‘এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞেস করল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি কীভাবে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করব? আমার উটনিটি ছেড়ে দিয়ে নাকি বেঁধে রেখে?’
রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘প্রথমে তোমার উটনিটি বাঁধ, এরপর আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করো।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৫১৭)
আমাদের দেশে প্রচলিত ঝড়ের সময় আজান দেওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত নয়, যদিও যথাস্থানে আজান দেওয়া ইসলামের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি নিদর্শন।
হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে যে কথাটির প্রচলন তার কোনো ভিত্তি নেই; বরং এরূপ সময়ে নামাজে দাঁড়িয়ে, সেজদায় আল্লাহর কাছে দোয়া করাই মুমিনের কাজ। (দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়া, নম্বর : ১৬২৭৬৪)
মন্তব্য করুন