সারাদেশে চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। এরইমধ্যে বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে। উত্তরের জেলা রাজশাহীও পিছিয়ে নেই। এর ফলে হাঁসফাঁস অবস্থা জনজীবনে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আগামী কয়েকদিন দেশে তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পাবে। আর এই তীব্র গরম নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর হাদিস রয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, জাহান্নাম তার রবের কাছে অভিযোগ করে বলে- হে রব, আমার এক অংশ অন্য অংশকে খেয়ে ফেলেছে। মহান আল্লাহ তখন তাকে দুটি নিঃশ্বাস ফেলার অনুমতি দেন। একটি নিঃশ্বাস শীতকালে, আরেকটি গ্রীষ্মকালে। কাজেই তোমরা গরমের তীব্রতা এবং শীতের তীব্রতা পেয়ে থাকো। (বুখারি: ৩২৬০)
তবে হাদিসের ব্যাখ্যায় উলামায়ে কেরামদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে। কিছু আলেম বলেন- হাদিসের প্রকৃত অর্থ নয়, বরং রূপক অর্থ নিতে হবে। এই মতের স্কলাররা বলেন, জাহান্নাম ও সূর্যের মধ্যে সূক্ষ্ম সংযোগ ও সম্পর্ক সৃষ্টি করে রেখেছেন আল্লাহ। সে অনুযায়ী, জাহান্নাম থেকেই উত্তাপ গ্রহণ করে সূর্য, আর সূর্য তাপ বিকিরণে যন্ত্রের মতো কাজ করে। তাই সূর্যের দূরত্ব অনুপাতে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় গ্রীষ্মকাল বা শীতকাল হয়।
কিছু স্কলার বলেন, জাহান্নামের নিঃশ্বাস গ্রীষ্মকাল বা শীতকাল নয়, বরং নিঃশ্বাস গ্রীষ্ম বা শীতকালে ঘটে। এ বিষয়ে ইমাম ইবনু আব্দিল বার(র.) তার তামহিদ গ্রন্থে এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন—জাহান্নামের নিঃশ্বাস শীতকালে ঘটে; নিঃশ্বাস শীতকাল নয়। জাহান্নামের নিঃশ্বাস গ্রীষ্মকালে ঘটে; নিঃশ্বাস গ্রীষ্মকাল নয়। (আত তামহিদ: ৮/৫)
আবার কিছু স্কলার বলেছেন, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দুটোই সঠিক। তাদের মতে, শীত-গ্রীষ্মের তীব্রতার জন্য প্রত্যক্ষ কারণ হলো পৃথিবীর উপর সূর্যের তীর্যক বা খাড়াভাবে আলো দেওয়া। আর পরোক্ষ কারণ হলো জাহান্নামের নিঃশ্বাস। রাসুল (স.) এখানে পরোক্ষ কারণ উল্লেখ করেছেন। আর প্রত্যক্ষ কারণকে উল্লেখ করেননি অপ্রআসঙ্গিক হওয়ায়। আর সেটা তো মানুষ জ্ঞানবুদ্ধি দ্বারাই বুঝতে সক্ষম। সুতরাং এটা সুনিশ্চিত যে, পরোক্ষ কারণের উল্লেখ প্রত্যক্ষ কারণের অনুপস্থিতিকে আবশ্যক করে না। তাই শীত-গ্রীষ্মকালের তীব্রতার জন্য জাহান্নামের নিঃশ্বাস সূর্যের আলোর তারতম্যের কারণকে বাতিল করে না।
তীব্র গরমে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জোহরের নামাজ কিছুটা বিলম্বে আদায় করতেন। এ জন্য গরম বেশি পড়লে জোহরের নামাজ দেরিতে পড়া সুন্নত।
এ বিষয়ে হযরত আবু যর গিফারী (রা:) বলেন, এক সফরে আমরা আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। একসময় মুয়াজ্জিন জোহরের আজান দিতে চেয়েছিল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, গরম কমতে দাও। কিছুক্ষণ পর আবার মুয়াজ্জিন আজান দিতে চাইলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (পুনরায়) বলেন, গরম কমতে দাও।
এভাবে তিনি (নামাজ আদায়ে) এত বিলম্ব করলেন যে আমরা টিলাগুলোর ছায়া দেখতে পেলাম। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ হতে। কাজেই গরম প্রচণ্ড হলে উত্তাপ কমার পর নামাজ আদায় করো। (বুখারি ৫৩৯)।
মন্তব্য করুন